অতীত কালে একত্ববাদীরা যখনই আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে নাফরমানিতে লিপ্ত হতো তখনই আল্লাহ দৃশ্যমান কোনো গজব দিয়ে তাদেরকে শায়েস্তা করতেন। বুদ্ধিমানরা এতে দ্বীনে ফিরে আসত। নাদানরা ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হতো। কিন্তু উম্মাতে মুহাম্মদির বেলায় এই প্যাটার্নে কিছুটা ভিন্নতা এসেছে। মুসলমানরা যখনই বন্দেগি ছেড়ে ভণ্ডামিতে লিপ্ত হয়েছে তখনি মহান আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ইসলাহস্বরূপ বিপদ দিয়েছেন, লাঞ্চিত করেছেন। তবে সরাসরি প্লাবন, ঘুর্ণিঝড় কিংবা পঙ্গপাল পাঠান নি, বরং তাদেরকে রক্তের সাগরে চুবিয়েছেন। যারা ছিলেন বুদ্ধিমান, তারা আগে থেকেই নৌকা তৈরি করে রেখেছিলেন। ফলে বীরত্বের সাথে সাগর পাড়ি দিয়ে তটে পৌঁছে গেছেন। যাদের বুদ্ধি ছিল একটু কম, যারা প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার আগ পর্যন্ত সতর্ক হয় না, প্রচলিত সিস্টেমের বাহিরে গিয়ে কিছু চিন্তা করতে পারে না, দ্বীনের শত্রুদের বেঁধে দেওয়া সীমানার বাহিরে দ্বীনকে কল্পনা করতে পারে না, তবে দ্বীনের ব্যাপারে কিছুটা আন্তরিক— তারা নাকের ডগায় বিপদ চলে আসার পর বাস্তবতা অনুধাবন করে হাবুডুবু খেয়ে কোনরকম তীরে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। আর যারা ছিল একেবারেই জাহেল, নিজেদের দ্বীনের ব্যাপের সন্দিহান, কুফফারদেরকে তেল মারায় কেটেছে যাদের জীবন, তারা শাহ রগে শত্রুর তরবারি চলে আসার পরও সতর্ক হয় নি। ফলস্বরুপ রক্তের দরিয়ায় নিমজ্জিত হয়ে কালের গর্বে বিলীন হয়ে গেছে।
চলমান শতাব্দীতে দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় একই দৃশ্যপট পরিলক্ষিত হচ্ছে। যারা বুদ্ধিমান তারা ঠিকই পরিত্রাণের সঠিক পথ খুঁজে নিয়ে বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে আনছে। আর বাকিরা দিন দিন শুধু বিপদের জালে ফেঁসেই যাচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সম্ভবত এখন বাঙ্গালিদের পরীক্ষা দেওয়ার সময় এসেছে। এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার বর্গ মাইলের ছোট্ট একটি ভূখণ্ড। যার দিকে উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে আছে হিন্দুত্ববাদী শকুনেরা । সুযোগ পেলেই বসাবে ভয়াল থাবা।
দিবালোকে জনসম্মুখে একজন মুসলিমকে জবাই করে হত্যা করা কোনো চাট্টিখানি কথা নয়। এটি তাদের দীর্ঘদিনের প্লানিং ও প্রস্তুতির ফল। হত্যাকাণ্ডটি লোমহর্ষক হলেও বিচ্ছিন্ন কোনো কিছু না। অনেক বছর আগে থেকেই তারা এরকম ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। কিন্তু অলসতা ও বিলাসিতায় নিমজ্জিত বাঙ্গালি মুসলিমরা সেগুলো আঁচ করতে পারে নি। সাময়িক কিছু প্রতিক্রিয়া দেখালেও নতুন নতুন ইস্যুর আড়ালে সেগুলোকে হারিয়ে ফেলেছে।
বহুকাল থেকেই হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন সম্পর্কে দেশকে সতর্ক করে আসছিলেন কিছু মানুষ। কিন্তু তাদেরকে পাত্তা দেওয়া হয় নি। উল্টো জঙ্গি, চরমপন্থি কিংবা মৌলবাদী ট্যাগ লাগিয়ে তাদেরকে সমাজ ও দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। চালান করা হয়েছে আয়না ঘরে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এই গুরাবাদের কথাগুলোই প্রভাতের আলোর ন্যায় বাস্তব হয়ে যাচ্ছে।
রাসূল (ﷺ) এর ভবিষ্যদবাণীকৃত বহুল প্রতীক্ষিত সেই ‘গাযওয়াতুল হিন্দ’ কড়া নাড়ছে আমাদের দুয়ারে। যা হবে এই উপমহাদেশের তাওহিদ ও শিরকের মধ্যকার চূড়ান্ত ফয়সালাকারী। নবী (ﷺ) এই যুদ্ধে তাওহিদবাদীদের চূড়ান্ত বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছেন। তবে শুধু এই সুসংবাদ নিয়ে পড়ে থাকাটা হবে চরম বোকামো। আমাদের ভালো করে মনে রাখতে হবে— চূড়ান্ত বিজয় লাভ করতে হলে কয়েক সাগর রক্ত পাড়ি দিতে হয়। ‘গাযওয়াতুল হিন্দ’ নসিম হিজাযীর কোনো উপন্যাস কিংবা তুর্কির কোনো ড্রামা সিরিয়াল নয়। এটা এমন এক ভয়ানক সংঘাত যাতে রীতিমতো রক্তের প্লাবন বয়ে যাবে। শুধুমাত্র সেক্যুলার কিংবা মডারেইট মুসলিমরাই না, পাক্কা দ্বীনদার লোকেরাও যুদ্ধের ভয়াবহতায় পা পিছলে পড়ে যাবে।
সুতরাং গাযওয়াতুল হিন্দ নিয়ে অতিরিক্ত ফ্যান্টাসি ও রোমান্টিকতায় না ভুগে তার বাস্তবতা অনুধাবনের চেষ্টা করা উচিৎ। সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত আবেগ না দেখিয়ে ময়দানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
এখন যদি কেউ গাযওয়ার বিভীষিকা আন্দাজ করতে পেরে ভয়ে কাঁথার তলে লুকিয়ে পড়েন, নিস্তার পাবেন না। মালাউনরা ঐ কাঁথায় আগুন লাগিয়ে আপনাকে পুড়িয়ে মারবে। যদি সুউচ্চ দালানের কোনো এক নির্জন কক্ষে দরজা বন্ধ করে লুকিয়ে থাকেন তবুও বাঁচার উপায় নেই। ওরা বোমা মেরে পুরো বিল্ডিং গুড়িয়ে দিবে। আর যদি জিহাদের পথে আসেন তাহলে অবশ্যই কিছুটা রক্তাক্ত হবেন, তবে চূড়ান্ত বিজয় আপনারই হবে ইনশাআল্লাহ।
রক্ত সাগর যতই গভীর হোক, তা মুমিনদের ইমানের গভীরতার তুলনায় কিছুই না। দিল্লি কিংবা ওয়াশিংটন যতই শক্তিশালী হোক, মহান আল্লাহর কুদরতের সামনে এগুলোর অবস্থান মাছির ডানার সমানও না। তাই সবর, ইয়াক্বিন ও বিচক্ষণতার সাথে আমাদেরকে অগ্রসর হতে হবে। চূড়ান্ত বিজয় আমাদেরই হবে ইনশাআল্লাহ।
গো-মূত্র খোররা চায় রাম রাজ্য, গো-গোস্ত খোররা চায় রহমানের সাম্রাজ্য। আখেরে কাদের চাওয়া পূর্ণতা পায় সেটা সময়ই বলে দিবে ইনশাআল্লাহ।
حسبنا الله و نعم الوكيل - نعم المولى و نعم النصير
২৫ জুমাদাল উলা, ১৪৪৬ হি.
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ইংরেজি
Comment