Announcement

Collapse
No announcement yet.

মার্কিন কারাগারে ড. আফিয়া সিদ্দীকী - উম্মাহর অক্ষমতা, অকর্মণ্যতা ও গাফেলতি

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মার্কিন কারাগারে ড. আফিয়া সিদ্দীকী - উম্মাহর অক্ষমতা, অকর্মণ্যতা ও গাফেলতি

    ৩০শে মার্চ ২০০৩, পাকিস্তান। করাচী এয়ারপোর্টের দিকে ছুটে চলা ট্যাক্সিটার পেছনে বসা চারজন যাত্রী। একজন মা এবং তাঁর তিন সন্তান। তিন জনের মধ্যে সবচেয়ে বড় ৬ বছর বয়েসী আহমাদ, তারপর ৪ বছরের মারইয়াম, সবার ছোট সুলাইমান। ওর বয়স ছয় মাস।
    .
    ট্যাক্সির ভেতর মা-র সাথে আহমাদের তুমুল তর্ক চলছে। আহমাদের ইচ্ছে ছিল ট্রেনে চড়ে করাচী থেকে ইসলামাবাদ যাবার। এই ইচ্ছার পেছনে থমাস দা ট্যাংক কার্টুনের একনিষ্ঠ ভক্ত হওয়াটা সম্ভবত বড় একটা কারণ। কিন্তু মা ঠিক করেছেন ইসলামাবাদ যাওয়া হবে প্লেনে করে। তাই আহমাদ বেশ ক্ষুব্ধ।
    .
    তর্ক চলার সময় হঠাৎ ভোজবাজির মতো ওদের ট্যাক্সিকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরলো কয়েকটা গাড়ি। টেনেহিচড়ে ওদের নামানো হল ট্যাক্সি থেকে। সুলাইমান ওর মা-র কোলে। আহমাদ আর মারইয়াম তখন চিৎকার করে কান্না করছে। জোর করে ওদের বসানো হল একটা গাড়ির ব্যাকসিটে। গাড়িটা চলতে শুরু করার পর পেছনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে আহমাদ দেখলো সুলাইমানের ছোট্ট শরীরটা মাটিতে পড়ে আছে। ওর চারপাশে রক্ত।
    .
    এই চারজন মানুষের কোন খোঁজ পাওয়া যাবে না পরের পাঁচ বছর। তারপর কাবুলের এক কিশোর সংশোধানাগারে পাওয়া যাবে আহমাদকে। গলায় রহস্যময় কলার লাগানো অবস্থায় এক নির্জন ভোরে মরিয়মকে পাওয়া যাবে করাচীর রাস্তায়। ওদের হতবিহবল, বিধ্বস্ত ও মূমুর্ষু মা নিজেকে আবিস্কার করবেন টেক্সাসের ফোর্ট ওয়ার্থের এক জেলে। যেখানে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তাকে। আর ঘটনার ২০ বছর পরও খোঁজ পাওয়া যাবে না ছোট্ট সুলাইমানের। ফোর্ট ওয়ার্থের জেলে বন্দী তিন সন্তানের এই মায়ের নাম ড. আফিয়া সিদ্দীকী।
    .
    আফিয়ারা তিন ভাইবোন। বড় ভাই মুহাম্মাদ আর্ক্টিটেক্ট। হিউস্টনের বেশিরভাগ মসজিদের ডিসাইন তাঁর করা। বোন ফৌজিয়া পড়াশোনা করেছেন হার্ভাডে। একসময় ছিলেন জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির নিউরোবায়োলজির হেড। সবার ছোট আফিয়া গ্র্যাজুয়েট করেছেন এমআইটি থেকে, তারপর ব্র্যান্ডেইস ইউনিভার্সিটি থেকে নিউরোসায়েন্সের ওপর পিএইচডি। এমআইটি থাকা অবস্থায় কাজ করেছেন বিখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ ও বুদ্ধিজীবি নৌম চমস্কির সাথে। তবে আফিয়ার মূল আগ্রহ ছিল শিক্ষা নিয়ে। বিশেষ করে পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে নিজ উদ্যোগে ভালোরকমের গবেষণা করেছিলেন তিনি।
    .
    ওয়ার অফ টেররের সেই দিনগুলোতে সন্দেহভাজন ‘সন্ত্রাসীদের’ ধরিয়ে দেয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ পুরস্কার ঘোষণা করে মার্কিনীরা। সেই সুযোগে পাকিস্তানের ‘মহান ইসলামী’ শাসকগোষ্ঠী ও আর্মি বিভিন্ন আরব ও পাকিস্তানী নাগরিকদের ধরে মার্কিনীদের কাছে বিক্রি করতে থাকে। এগুলো কোন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব না কিন্তু। খোদ পারভেজ মোশাররফ, সেই সময়কার পাক প্রেসিডেন্ট, নিজের আত্মজীবনীতে মার্কিনীদের কাছে মুসলিমদের বিকিকিনির বিষয়টা স্বীকার করেছে গর্বের সাথে।
    .
    এই বিকিকিনির ফাঁদে পড়ে যান আফিয়া। ‘সন্ত্রাসী’ হবার অভিযোগে তাঁকে খুজতে শুরু করে অ্যামেরিকা। যেহেতু আফিয়া উচ্চশিক্ষিত এবং দীর্ঘ সময় অ্যামেরিকাতে থাকার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্র্যাকটিসিং মুসলিম; তাই মার্কিনিদের ধারণা হয় আফিয়া নিশ্চয় অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের ‘সন্ত্রাসী’দের সাথে মিলে কাজ করছে। পুরস্কারের কথা শোনামাত্র লোভে উদগ্রীব হয়ে ছুটে আসে পাক শাসকগোষ্ঠী এবং আর্মি।
    .
    বলা হয়ে থাকে ৫০ হাজার ডলারের বিনিময়ে আফিয়াকে মার্কিনীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ টাকার প্রায় পুরোটাই যায় পাকিস্তানের ‘মহান ইসলামী’ আর্মির পকেটে। যাদের মতো ভালো মুসলিম বাহিনী পৃথিবীতে নাকি আর একটাও নেই।
    .
    করাচী থেকে কিডন্যাপ করার পর আফিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয়ে আফগানিস্তানের কুখ্যাত বাগরাম কারাগারে। পৃথিবীর বুকে প্রায় এক টুকরো নরকে পরিণত হওয়া বাগরামে বন্দীদের ওপর চালানো হতো চরম পর্যায়ের টর্চার। সেই বাগরামেও আফিয়ার জন্য ছিল ‘বিশেষ ট্রিটমেন্ট’। বাগরাম থেকে মুক্ত হওয়া অনেকে পরে জানাবে প্রতি রাতে এক নারীর আর্তচিৎকার শোনার কথা, এই নারীই ছিলেন আফিয়া সিদ্দিকী।
    .
    আফিয়া যখন বাগরামে নির্যাতিত হচ্ছেন ঠিক সেই সময়টাতে আহমাদকে কাবুলের এক কিশোর সংশোধনাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ৬ বছরের আহমাদকে বলা হয়, এখন থেকে ওর নাম ‘আলী’। নিজের আসল পরিচয় কাউকে জানালে, ওকে স্রেফ মেরা ফেলা হবে। অন্যদিকে ৪ বছরের মারইয়ামকে দুই মার্কিন নাগরিকের কাছে দত্তক হিসেবে দেয় মার্কিন সরকার।
    .
    ২০০৮ সালে আফিয়াকে বাগরাম থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। বলা হয় গজনীতে গেলে মেয়ে মারইয়ামকে তিনি পাবেন। ৫ বছরের ভয়ঙ্কর নির্যাতন সহ্য করা, সন্তান হারানোর ভয়ে পাগলপারা আফিয়া ঐ অবস্থাতেই ছুটে যান গজনীতে। কিন্তু তাঁকে কিডন্যাপ ও বিক্রি করা ‘মহান পাক’ আর্মি, সেই সময়কার আফগান গোয়েন্দাবাহিনীর সাথে মিলে শেষ একটা চাল চালে। তারা অ্যামেরিকানদের জানায় খুব শীঘ্রই আফিয়া নাকি গজনীর গভর্নরের ওপর আত্মঘাতী হামলা চালাতে যাচ্ছেন।
    .
    একে তো নাচুনে বুড়ি, তার ওপর ঢোলের বাড়ি…এ খবর পাবার পর মার্কিনীরা পারলে রেড অ্যালার্ট জারি করে। দেখামাত্র তারা গুলি চালায় আফিয়ার ওপর। কিন্তু তারপর হতাশ হয়ে আবিস্কার করে আফিয়ার কাছে অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ কিছুই নেই। ‘দুঃখজনক’ভাবে গুলি খাবার পরও বেঁচে গিয়ে মার্কিনীদের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলেন আফিয়া।
    .
    মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের মহান অগ্রপথিক অ্যামেরিকা তখন নতুন এক গল্প ফাঁদে। বলে: ‘সন্দেহভাজন’ আফিয়াকে মার্কিনীরা গজনীতে বন্দী করে। সুস্থ অবস্থায়। ভয়ঙ্কর বন্দী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়নি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক সেনার বন্দুক কেড়ে নিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করে পালানোর চেষ্টা করেন তিনি। তাঁকে থামাতে বাধ্য হয়ে মার্কিনীরাও গুলি করে। এতেই আফিয়া আহত হন। তবে ‘সৌভাগ্যবশত’ আফিয়ার ‘এলোপাথাড়ি’ গুলিতে কোন মার্কিনী আহত হয়নি।
    .
    আফিয়ার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। আর এ অভিযোগেই নিউইয়র্কের এক কোর্টের রায়ে তাঁকে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। সেই থেকে ড. আফিয়া সিদ্দীকী বন্দী টেক্সাসের ফোর্ট ওয়ার্থে। মজার ব্যাপার হল এ মামলায় আফিয়ার বিরুদ্ধে আগেকার সেই ‘সন্ত্রাসবাদ’-এর কোন অভিযোগ আনা হয়নি। হয়তো অভিযোগ আনা হলে তা প্রমান করতে হবে, আর এসব অভিযোগ প্রমান করা সম্ভব না জেনেই এমন সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন সরকার।
    .
    বহু কাঠখড় পুড়িয়ে, কিডন্যাপ হবার বিশ বছর পর অল্প কিছুদিন আগে আফিয়ার সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন তাঁর বোন ড. ফৌজিয়া এবং আইনজীবি ক্লাইভ স্মিথ। ক্লাইভ স্মিথ সম্প্রতি একটি পডক্যাস্ট ড আফিয়া সিদ্দীকীর কেইস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ওপরের লেখার তথ্যগুলো সেই আলোচনার থেকে নেয়া।
    .
    আফিয়ার আইনজীবি ক্লাইভ স্মিথ এর আগে গুয়ানতানামো বে-র অনেক বন্দীদের নিয়ে কাজ করেছেন এবং এসব বন্দীদের অনেকে আলহামদুলিল্লাহ মুক্তি পেয়েছেন। তিনি আশাবাদী এক সময় না এক সময় আফিয়াও মুক্তি পাবেন। আমরা আশা করি আল্লাহ অতি দ্রুত সেই দিনটি নিয়ে আসবেন। মহান আল্লাহ মুসলিম বন্দীদের কল্যাণময় মুক্তি ত্বরান্বিত করুন। আমাদের অক্ষমতা, অকর্মণ্যতা ও গাফেলতি ক্ষমা করুন।


    সংগৃহীত ও ঈষৎ পরিবর্তিত
    Last edited by Rakibul Hassan; 3 days ago.

  • #2
    মহান আল্লাহ মুসলিম বন্দীদের কল্যাণময় মুক্তিকে ত্বরান্বিত করুন। আমাদের অক্ষমতা, অকর্মণ্যতা ও গাফলতিকে ক্ষমা করুন।​ আমীন
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment


    • #3
      আল্লাহ তাআলা আমাদের এই দ্বীনি বোনকে তার সন্তানদের সহ সকল বন্দি ভাইবোনদের কল্যাণের সাথে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।

      Comment


      • #4
        আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীনি সকল বন্দি ভাইবোনদের অতি দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করুন। আমীন

        Comment


        • #5
          প্রিয় ভাইয়েরা! বোন আফিয়া সিদ্দিকীর জন্য দুআ ও দাওয়া উভয়ভাবে চেষ্টা করা আবশ্যক নয় কি?
          আল্লাহ তাআলার উক্ত বাণী আমাদের স্বরণ আছে কি?
          আল্লাহ তাআলা বলেন
          আন নিসা, আয়াতঃ ৭৫

          وَمَا لَکُمۡ لَا تُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَالۡمُسۡتَضۡعَفِیۡنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَآءِ وَالۡوِلۡدَانِ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَخۡرِجۡنَا مِنۡ ہٰذِہِ الۡقَرۡیَۃِ الظَّالِمِ اَہۡلُہَا ۚ وَاجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ وَلِیًّا ۚۙ وَّاجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ نَصِیۡرًا ؕ

          অর্থঃ
          মুফতী তাকী উসমানী
          (হে মুসলিমগণ!) তোমাদের জন্য এর কী বৈধতা আছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে সেই সকল অসহায় নর-নারী ও শিশুদের জন্য লড়াই করবে না, যারা দু‘আ করছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা জালিম অন্যত্র সরিয়ে নাও এবং আমাদের জন্য তোমার পক্ষ হতে একজন অভিভাবক বানিয়ে দাও এবং আমাদের জন্য তোমার পক্ষ হতে একজন সাহায্যকারী দাঁড় করিয়ে দাও? ৫৬

          মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
          আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।

          ইসলামিক ফাউন্ডেশন
          তোমাদের কী হল যে, তোমরা যুদ্ধ করবে না আল্লাহ্ র পথে আর অসহায় নরনারী ও শিশুগণের জন্যে, যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এই জনপদ-যার অধিবাসী জালিম, তা হতে আমাদেরকে অন্যত্র নিয়ে যাও; তোমার নিকট হতে কাউকেও আমাদের অভিভাবক কর এবং তোমার নিকট হতে কাউকেও আমাদের সহায় কর।’

          ---------------------

          তাফসীর (মুফতী তাকী উসমানী) (Bangla)

          ৫৬. মদীনায় হিজরতের পরও কিছুসংখ্যক মুসলিম নর-নারী ও শিশু মক্কা মুকাররমায় রয়ে গিয়েছিল। মুশরিকদের বাধার কারণে তারা হিজরত করতে পারেনি। ফলে তারা সেখানে লাঞ্ছিত ও নিপীড়িত অবস্থায় জীবন যাপন করছিল। তারা সে অবস্থা থেকে মুক্তিলাভের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দু‘আ করছিল। আল্লাহ তাআলা সে লক্ষে জিহাদ করার জন্য মুসলিমদেরকে উদ্বুদ্ধ করছেন। পরিশেষে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে সে লক্ষ অর্জিত হয়। -অনুবাদক​

          Comment


          • #6
            প্রিয় বোন! তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও।
            হে আল্লাহ! তুমি বোন আফিয়া সিদ্দিকীর মুক্তির ব্যবস্থা করে দাও।
            আমাদেরকে কুফফার জমদুত হিসেবে কবুল কর। সকল বন্দীদের মুক্তির জন্য আমাদের পূর্ণ শক্তি ব্যয়ের তাওফিক দাও। আমীন। আমীন।

            Comment

            Working...
            X