Announcement

Collapse
No announcement yet.

সেক্যুলার ভান আর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন: শাহবাগীদের ছলচাতুরি

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সেক্যুলার ভান আর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন: শাহবাগীদের ছলচাতুরি

    সেক্যুলার ভান আর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন: শাহবাগীদের ছলচাতুরি


    আজকের আলোচনায় আমরা বাংলাদেশের শাহবাগ-আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে "সেক্যুলার" দাবি করা গোষ্ঠীগুলোর আচরণ এবং তাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতি নিপীড়নমূলক নীতির সাথে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করবো। ইতিহাস, গবেষণা এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আমরা দেখবো কীভাবে এই সেক্যুলার গোষ্ঠী সরকারব্যবস্থার অনিয়ম এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে নয়, বরং সরাসরি সমর্থন করেছে। এর ফলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে গড়ে ওঠা “শাহবাগ-আন্দোলন” নিজেদের বাংলাদেশের নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।

    শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতা হিসেবে পরিচালিত এই সময়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল এবং রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা কঠোর ছিল। সমালোচকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ শুরুতেই শাহবাগী আন্দোলনকে সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে সহায়তা করে, যা তাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। আন্দোলনকারীরা যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি করলেও, মূলত তারা ইসলামপন্থী দলগুলোকেই লক্ষ্য করে, যেখানে সরকারের অন্যায় বা দুর্নীতি নিয়ে তারা কোনো অবস্থান নেয়নি।

    সেক্যুলারিজম সাধারণত রাষ্ট্র ও ধর্মকে আলাদা করার, ধর্মীয় বৈষম্যহীনতা নিশ্চিত করার এবং বাকস্বাধীনতার কথা বলে থাকে। কিন্তু শাহবাগীরা আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকে ধরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। সেক্যুলার মানবাধিকার সংস্থা যেমন Human Rights Watch এবং Amnesty International বিভিন্ন রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন বেড়েছে (Human Rights Watch Report, 2017; Amnesty International, 2019)। কিন্তু এ অবস্থাতেও শাহবাগীদের ভূমিকায় কোন পরিবর্তন আসে নাই।

    শাহবাগীরা সেক্যুলারিজমের কথা বললেও, তারা আসলে সরকারের সকল দমন নীতিকে সমর্থন করেছে সব সময়। এর ফলে, যখন রাষ্ট্র বিরোধী মতামত বা ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়, শাহবাগীরা নীরব থাকে বা এমনকি আনন্দিত হয়। সরকার পুলিশ ও র‍্যাবের মাধ্যমে যে দমন নিপীড়ন চালায়, তার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমালোচনা থাকলেও, এই তথাকথিত সেক্যুলার গোষ্ঠীর বড় একটি অংশ কখনোই এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেনি। বরং, সরকার ধর্মীয় দমন ঘোষণা করে সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতাকেও দমন করেছে (Amnesty, “Muzzling Dissent in Bangladesh,” 2019)।

    শাহবাগীরা একদিকে অভিযোগ করে যে, “মুসলিমরা রিয়েকশনারি,” অন্যদিকে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে চরম প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ দেখায়, যেমন: ভিন্নমতকে সহ্য না করা, রাষ্ট্রের অন্যায়কে উপেক্ষা করা, এবং বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন উপভোগ করা। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে নাগরিকদের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ ব্যাপকভাবে উঠেছে (Human Rights Watch, 2017 Report)। International Federation for Human Rights (FIDH) এর পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরাসরি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে র‍্যাব দ্বারা আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করছে। অথচ শাহবাগী সেক্যুলার গোষ্ঠী এই ক্রমবর্ধমান ফ্যাসিবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করে না। বরং বেশিরভাগ সময় তারা সরকারের কথা পুনরুল্লেখ করে অথবা নীরব থাকে।

    ইসলামী যে কোনো সংগঠনের সামান্য কার্যক্রমকে তারা তীব্রভাবে খারাপ হিসেবে দেখাতে খুব উৎসাহী, অথচ সরকারের নানা খারাপ কাজ নিয়ে তারা কিছুই বলে না। এটা দেখাচ্ছে যে, তাদের আসল আদর্শ ঠিক নেই বা সেক্যুলারিজমের মতো কিছুই আসলে দুনিয়াতে নেই, এটা শুধু বইয়ের পাতায়ই আছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সেক্যুলারিজমের নামে রাজনীতিকে একপাক্ষিকভাবে সমর্থন করা আসলে প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করা।

    কিছু পর্যবেক্ষক অভিযোগ করেন যে, এই “শাহবাগী” গোষ্ঠী ইসলাম এবং ইসলামপন্থীদের প্রতি অতিরিক্ত বিদ্বেষ দেখায়। মুক্তমনা ব্লগারদের লেখায় প্রায়ই দেখা যায়, মুসলিম রীতিনীতি, কুরআন-হাদিস, এবং নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে অসম্মানজনক মতামত প্রকাশের সময় তারা চরম উল্লাস প্রকাশ করে (সূত্র: বিভিন্ন মুক্তমনা ব্লগ আর্কাইভ, ২০১৩-২০১৫)।

    দেশের বৃহত্তর মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুভূতিকে আঘাত করা হলো বাংলাদেশের “সেক্যুলারিজমের” মূল চেতনা। শাহবাগীরা ইসলামী দল বা ইসলামপন্থী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে “রিয়েকশনারি” বা প্রতিক্রিয়াশীল বলে অভিযোগ করে। কিন্তু আসলে তাদের নিজের রাজনৈতিক অবস্থান খুবই রিয়েকশনারি। তারা ক্ষমতাসীন দলের বর্বরতা ও নিজস্ব স্বার্থকে সব সময়ই সমর্থন করে এসেছে। সুতরাং, রাষ্ট্রক্ষমতার সমর্থনে থাকা একদল “সেক্যুলার” মানুষ, যারা মৌলিক মানবাধিকারের মূল্যবোধকে সম্মান দেয় না এবং দলীয় পরিচয়ে অন্যায়কে মেনে নেয়, এরা হলো বাংলাদেশের সেক্যুলার শাহবাগি।

    আমরা অনেকেই শাহবাগীদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানি না এবং এদের মূল ভূমিকায় কে ছিলেন, সেটা খুঁজে দেখি না। শুধু দুইজন – সলিমুল্লাহ খান এবং ফরহাদ মজহার – নাম বললেই বোঝা যায় আমরা কতটা অজানা। এখন আপনি বলুন, এই দুইজন সম্পর্কে আপনারা কী জানেন?

    “শাহবাগী সেক্যুলার” ধারণাটি আদর্শিকভাবে দ্বিমুখী অবস্থায় আটকে আছে। একদিকে তারা দাবি করে, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষ এবং উদারপন্থী রাখা; কিন্তু অন্যদিকে, বাস্তবে তারা সরকারের ফ্যাসিবাদী দমন, গুম-খুনসহ অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনকে প্রশ্নাতীতভাবে মেনে নেয়। কেউ রাজনৈতিক অন্ধ সমর্থন বা নিপীড়নের সঙ্গে আপোষ করলে সেটাকে কোন আদর্শ বলা যায় না। বর্তমানে অনেক যায়গায় সেক্যুলারিজমের এমনই রূপই দেখা যাচ্ছে। এরা রাষ্ট্রশক্তির স্বৈরতন্ত্রকে সহায়তা করে, যা মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করে।




  • #2
    জাযাকাল্লাহ খাইরান,, ভাইজান গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল পোস্ট।
    وَلَوْ أَرَادُوا الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُ عُدَّةً وَلَٰكِن كَرِهَ اللَّهُ انبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُوا مَعَ الْقَاعِدِينَ
    سورة توبة ٤٦

    Comment


    • #3
      বাংলার তাওহীদি জনতাকে শাহবাগীদের ছলচাতুরি বুঝা ও নিজেদের করণীয় ঠিক করতে আপনার লেখা সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ
      জাযাকাল্লাহু খাইরান

      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment

      Working...
      X