লেভ তাহোর: ধর্মের নামে নিষ্ঠুরতা ও শিশুদের নিপীড়নের ইহুদি নেটওয়ার্ক
সম্প্রতি ইন্টারপোল ইসরায়েলি নাগরিক ইয়োয়েল আল্টারকে গ্রেফতার করেছে, যে ইহুদি গোষ্ঠী "লেভ তাহোর"-এর অন্যতম সদস্য। গুয়াতেমালায় তাকে আটক করা হয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, তাকে মেক্সিকোতে বিচারের সম্মুখীন করা হবে। "লেভ তাহোর" নামের এই কাল্টকে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শিশু পাচারকারী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখান থেকে ১৬০টিরও বেশি শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ৪০ জন নারীকে সহিংসতা থেকে মুক্ত করা হয়েছে।
এই চরমপন্থী ইহুদি সংগঠনটি কেবল শিশু পাচার নয়, বরং নির্যাতন, জোরপূর্বক বিয়ে, যৌন নির্যাতন এবং নারীদেরকে বিক্রি করার মতো গুরুতর অপরাধের সাথে জড়িত। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, বিশ্ব মিডিয়া এই ঘটনাগুলোকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না! কেন? কারণ অপরাধীরা মুসলিম নয়! মুসলিমদের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগ হলে বিশ্ব মিডিয়ার হেডলাইনে তা আসে, কিন্তু ইহুদি, খ্রিস্টান বা অন্যান্য সম্প্রদায়ের অপরাধীরা ধরা পড়লে সেটিকে ধামাচাপা দেওয়া হয় বা গুরুত্ব কমিয়ে দেখানো হয়।
লেভ তাহোর: কিভাবে এই চরমপন্থী গোষ্ঠীর উত্থান?
"লেভ তাহোর" (হিব্রু ভাষায় অর্থ: "বিশুদ্ধ হৃদয়") প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৮ সালে ইসরায়েলে। এটি মূলত উগ্রপন্থী ইহুদি গোষ্ঠী "হাসিদিক" ধারার অনুসারী। সংগঠনটি প্রথমে ইসরায়েলেই সক্রিয় ছিল। পরে তারা কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, গুয়াতেমালা ও অন্যান্য দেশে গোপনে স্থানান্তরিত হয়।
মূল অপরাধসমূহ:
✔ শিশু পাচার: কম বয়সী শিশুদের অপহরণ করে গোপন লোকেশনে নিয়ে যাওয়া।
✔ জোরপূর্বক বিয়ে: ১২-১৩ বছর বয়সী কিশোরীদের ৪০-৫০ বছরের বৃদ্ধদের সাথে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া।
✔ যৌন নির্যাতন: লেভ তাহোরের নেতা এবং সদস্যরা সংগঠনের এবং অপহরন করা মেয়েদের উপর যৌন নির্যাতন চালাতো।
✔ শিশু এবং নারীদের বিক্রি করা: বিভিন্ন পতিতালয় সহ বিভিন্ন যায়গায় নারী এবং শিশুদের বিক্রি করা।
এত ভয়াবহ অপরাধের পরও বিশ্ব মিডিয়া কেন এদের বিরুদ্ধে এত নীরব?
পশ্চিমা মিডিয়ার দ্বৈতনীতি: মুসলিম হলে সন্ত্রাসী, ইহুদি-খ্রিস্টান হলে ‘মানসিক রোগী’!
আমরা লক্ষ্য করি, যদি কোনো মুসলিম ব্যক্তি বা সংগঠন কোনো সরকার বিরোধী কাজে জড়িত হয় বা অন্য কোন কাজ যা পশ্চিমাদের পছন্দ নয়, তবে পশ্চিমা মিডিয়া সেটিকে "ইসলামিক চরমপন্থা" বলে প্রচার করে এবং পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে দায়ী করে। কিন্তু যখন কোনো ইহুদি বা খ্রিস্টান গোষ্ঠী জঘন্য অপরাধ করে, তখন সেটাকে "বিচ্ছিন্ন ঘটনা" বা "মানসিক সমস্যার কারণে সংঘটিত অপরাধ" বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।
যখন কোনো অপরাধকে "মানসিক সমস্যা" বা "বিচ্ছিন্ন ঘটনা" বলা হয়, তখন সেটি ব্যক্তিগত বলে ধরা হয়, যার ফলে পুরো গোষ্ঠী বা আদর্শকে দায়ী করা হয় না। কিন্তু যদি সেটাকে "ধর্মীয় উগ্রবাদ" বলে প্রচার করা হয়, তখন তা পুরো সম্প্রদায় বা ধর্মের ওপর দায় চাপায়। ফলে, ইহুদি বা খ্রিস্টান অপরাধীদের ক্ষেত্রে "মানসিক সমস্যা" বা "বিচ্ছিন্ন ঘটনা" বলে বিষয়টি হালকা করা হয়, কিন্তু মুসলিমদের ক্ষেত্রে পুরো ইসলামকে দায়ী করে মিডিয়া ও রাজনীতি এটাকে বড় করে উপস্থাপন করে। এভাবেই পশ্চিমা শক্তিগুলো মুসলিমবিরোধী প্রচারণা চালায় এবং ইহুদি-খ্রিস্টান অপরাধীদের দায়মুক্তি দেয়।
উদাহরণ হিসেবে দেখুন:
📌 ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে এক খ্রিস্টান সন্ত্রাসী মসজিদে ঢুকে ৫১ জন মুসল্লিকে হত্যা করে, কিন্তু মিডিয়া কখনো তাকে "খ্রিস্টান সন্ত্রাসী" বলেনি, বরং তাকে "একজন মানসিকভাবে অসুস্থ যুবক" হিসেবে দেখানো হয়।
📌 যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা যখন স্কুলে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালায়, তখন এটাকে "Mental Health Issue" বলে ধামাচাপা দেওয়া হয়।
📌 কিন্তু মুসলিম কেউ কিছু করলে সাথে সাথে তাকে ‘সন্ত্রাসী’, বা ‘চরমপন্থী’ বলে ঘোষণা করা হয়।
এই দ্বৈত নীতি প্রমাণ করে, পশ্চিমা মিডিয়া মুসলিমদের ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করে এবং অন্যান্য ধর্মীয় চরম অপরাধকেও ঢেকে রাখে।
ইহুদিদের মধ্যে চরমপন্থা ও অপরাধের ইতিহাস
বহু ইহুদি সংগঠনই দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে, কিন্তু বিশ্ব মিডিয়া এ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করে না। নিচে কয়েকটি বড় অপরাধমূলক ইহুদি গোষ্ঠীর উদাহরণ দেওয়া হলো:
১. লেভ তাহোর (Lev Tahor)
- বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শিশু পাচারকারী সংগঠন।
- মেক্সিকো ও গুয়াতেমালায় ভয়ংকর কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিল।
- গোপনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
২. কাহানিস্ট উগ্রপন্থীরা (Kahanist Extremists)
- ইসরায়েলের উগ্র ইহুদি দল, যারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নৃশংস হামলা চালায়।
- ১৯৯৪ সালে আমেরিকান-ইহুদি বারুচ গোল্ডস্টেইন ফিলিস্তিনিদের মসজিদে ঢুকে ২৯ জনকে শহীদ করে।
৩. ইসরায়েলি মানবপাচার চক্র
- ২০০০ সাল থেকে বহু ইসরায়েলি নাগরিক যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মানবপাচার ও দাসত্বের সাথে যুক্ত।
- এদের কারনে বিভিন্ন দেশের নারী ও শিশুরা প্রায়ই দাসত্বের শিকার হয়, কিন্তু বিশ্ব মিডিয়া একে বড় করে তুলে ধরে না।
৪. ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও গণহত্যা
- গাজার বিক্ষোভে ২০০+ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করে IDF (২০১৮)।
- ২০২৩ সালে গাজায় মাত্র তিন মাসে ১০,০০০+ ফিলিস্তিনি নিহত, যার অর্ধেকই শিশু।
- পশ্চিমা বিশ্ব এটাকে ‘আত্মরক্ষা’ বলে প্রচার করে, যা চরম অসভ্যের মতো কথাবার্তা।
- বন্দিশালায় হাজারো ফিলিস্তিনিকে বছরের পর বছর আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।
- ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা "ডেথ টু আরবস" স্লোগান দিয়ে প্রকাশ্যে মুসলিম হত্যার ডাক দেয় কিছু দিন পরে পরে।
- ফিলিস্তিনিদের জমি দখল, ফসল নষ্ট করা, ঘরবাড়ি ধ্বংস করা ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ।
👉 এত বড় বড় অপরাধের পরও পশ্চিমারা ইসরায়েলের গণহত্যাকে যুদ্ধনীতি বা আত্মরক্ষা হিসেবে প্রচার করে, কিন্তু মুসলমানদের ক্ষুদ্রতম প্রতিরোধকেও ‘সন্ত্রাসবাদ’ বলে চালিয়ে দেয়! এটাই তাদের প্রকৃত চেহারা। মুসলিমরা কি এমন জঘন্য অপরাধ করেছে? উত্তর হলো – না!
ইসলামকে দোষারোপ করা হয়, অথচ এ ধরনের বর্বর কর্মকাণ্ড ইসলামিক কোন সংগঠনের মধ্যে দেখা যায় না। মুসলিমরা শিশু পাচার, জোরপূর্বক বিয়ে, অর্গান ট্রাফিকিং, যৌন দাসত্বের মতো জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত নয়।
➡ ইসলামিক দেশ (যেমন আফগানিস্থান) এবং সংগঠনগুলোতে শিশু পাচারকারী ও যৌন অপরাধীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
➡ ইসলাম শিশু নির্যাতন ও জোরপূর্বক বিয়েকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে।
➡ ইসলাম নারীর সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করে, যেখানে লেভ তাহোরের মতো সংগঠন নারীদের পণ্য বানিয়ে ফেলে।
এটা পরিষ্কার যে, বিশ্ব মিডিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিমদের সন্ত্রাসী ও অপরাধী বানানোর চেষ্টা করে, অথচ ইহুদি ও খ্রিস্টানদের অপরাধ চেপে যায়।
ইহুদি সংগঠন "লেভ তাহোর" এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী ইহুদি গোষ্ঠীগুলোর ভয়ংকর অপরাধ আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, কীভাবে ধর্মের নামে বিকৃত আদর্শ প্রচার করা হয়। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব। মুসলিমদের ছোট কিছুকেও বড় করে দেখানো হয়। এরচেয়েও বড় সমস্যা মুসলিমদের সব কিছুকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। ইহুদি-খ্রিস্টানদের ভয়ংকর অপরাধগুলোকেও ধামাচাপা দেওয়া হয়। তথ্য এবং সত্য কখনো লুকিয়ে রাখা যায় না। তাই লেভ তাহোরের মতো গোষ্ঠীগুলোর মুখোশ উন্মোচন করা, প্রচার করা আমাদের সবার দ্বীনি ও নৈতিক দায়িত্ব!
Comment