Announcement

Collapse
No announcement yet.

হাসিনার মেগা উন্নয়ন প্রকল্প: বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের জন্য কেন বেশি সুবিধাজনক? || দ্বিতীয় পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • হাসিনার মেগা উন্নয়ন প্রকল্প: বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের জন্য কেন বেশি সুবিধাজনক? || দ্বিতীয় পর্ব

    হাসিনার মেগা উন্নয়ন প্রকল্প: বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের জন্য কেন বেশি সুবিধাজনক?
    দ্বিতীয় পর্ব


    অন্যান্য মেগা প্রকল্প: ভারতের জন্য বিশেষ সুবিধা এবং বাংলাদেশের প্রতি অবহেলা

    আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ প্রকল্প - বাংলাদেশের আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা রেলওয়ে স্টেশনের সাথে সংযুক্ত করেছে। প্রকল্পটির মোট দৈর্ঘ্য ১২.২৪ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৬.৭৮ কিলোমিটার বাংলাদেশে এবং ৫.৪৬ কিলোমিটার ভারতে অবস্থিত। এই রেলপথের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ সহজতর হবে, যা তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আনবে।

    নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মেঘনা সেতু নির্মাণ - মেঘনা নদীর ওপর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটি নতুন সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা ভারতের ট্রানজিট সুবিধা বাড়াতে সহায়ক হবে। এই সেতুর মাধ্যমে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে দ্রুত পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পরিলক্ষিত হবে না।

    যশোর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক এবং রেললাইন - এই প্রকল্প পদ্মা সেতুর সাথে সংযুক্ত। এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে ভারতের পণ্য পরিবহন সহজ হবে, বিশেষ করে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপনে। তবে সমালোচকরা মনে করেন, এই প্রকল্পগুলোর জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, তা জামালপুরে যমুনা সেতু বা চাঁদপুরে মেঘনা সেতু নির্মাণে বিনিয়োগ করা হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় বেশি কার্যকর উন্নয়ন সাধিত হতো।

    উপরের প্রকল্পগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শেখ হাসিনার সরকারের কিছু মেগা প্রকল্প ভারতের ট্রানজিট সুবিধা বৃদ্ধিতে সহায়ক, যা তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতো। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কিছু অঞ্চল উন্নয়নের বাইরে রয়ে গেছে। যদি এসব অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হতো, তাহলে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিকাশ আরও সুদূরপ্রসারী হতো।


    বাংলাদেশের অবহেলিত অঞ্চল

    জামালপুরের উন্নয়নের অভাব - যমুনা নদীর ওপর জামালপুরে একটি সেতু নির্মাণ করা গেলে রংপুর বিভাগের কৃষি এবং শিল্প পণ্য পরিবহন আরও দ্রুত এবং সাশ্রয়ী হতো। এটি সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় সময় ও খরচ কমিয়ে আনতে পারত এবং উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হতো।

    চাঁদপুরে মেঘনা সেতুর প্রয়োজন - চাঁদপুরে একটি সেতু নির্মাণ বরিশাল, খুলনা এবং চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারত। এর ফলে দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত হতো এবং ঢাকার উপর নির্ভরতা কমানো যেত।


    অর্থনৈতিক ভারসাম্যের অভাব

    পদ্মা সেতু এবং এর সাথে সংযুক্ত প্রকল্পগুলোতে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে, তা বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে ব্যবহার করা সম্ভব ছিল। উদাহরণস্বরূপ, পদ্মা রেল প্রকল্পে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু এর থেকে আয় এসেছে মাত্র ৩৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে, এই প্রকল্পের ঋণের কিস্তি বছরে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা।

    এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে ভারতের ট্রানজিট সুবিধা বাড়লেও, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েনি। বরং অভ্যন্তরীণ সেতু ও সংযোগ প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতো।

    শেখ হাসিনার মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ভারতের ট্রানজিট সুবিধা বাড়ানোর দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলো অবহেলিত থেকে গেছে। নারায়ণগঞ্জের মেঘনা সেতু এবং যশোর-বেনাপোল করিডোরের মতো প্রকল্পগুলো ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জন্যেই ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি।

    যদি এসব প্রকল্প পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হতো, তাহলে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হতো এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হতো। তাই হাসিনার মেগা প্রকল্পগুলোর প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি এবং অগ্রাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাই স্বভাবিক।​
Working...
X