Announcement

Collapse
No announcement yet.

জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ ২

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ ২

    সাংবাদিক এড়িয়ে চলুন। তারা আপনার নাম-ঠিকানা সব রাখবে। আর পুলিশ বিভিন্ন সংবাদপত্রের কার্যালয়ের ডাটাবেজ থেকে আপনার ব্যাপারে তথ্য নিবে।
    এতকিছু করেও লাভ না হলে আপনার নামে সার্চ ওয়ারেন্ট আনবে। বাংলাদেশে অবশ্য এসব কিছু লাগে না। আইন অনুযায়ী, পর্দানশীন নারীর কক্ষে প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশের র্যাব নিয়মিত এই আইন অমান্য করে।

    অনেক সময় আপনার বাসার কোথায় কোন কক্ষ রয়েছে ইত্যাদি জানা পুলিশের জন্য জরুরি হয়। সেক্ষেত্রে পুলিশ আপনার ফ্ল্যাট বরাবর উপরে বা নিচের ফ্ল্যাট কৌশলে দেখতে যাবে। যেমনঃ আমরা বাসা ভাড়া নিতে এসেছি, আপনার রুমগুলো দেখা যাবে? কতজন মানুষ এই বাসায় থাকে জানার জন্য এনজিও বা মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে দাবি করবে।

    এই অধ্যায়ের কিছু শিক্ষা-
    ১। মোবাইলে কোন জরিপের তথ্য চাইলে দিবেন না।
    ২। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, পছন্দ- অপছন্দ কাউকে বলবেন না।
    ৩। আপনার ব্যাপারে পুলিশ যত জানবে তত ক্ষতি।

    অধ্যায় ২
    থানার পরিচিত কোন বন্ধুসুলভ (!!!) পুলিশ আপনার জন্য ক্ষতিকর । এই স্তর থেকেই যেকোনো তদন্ত শুরু হন। আপনার নিকটতম থানার কেউ আপনাকে চেনে কিনা সেটা চেক করা হয় । এরকম পরিচিত পুলিশ ২ ভাবে তৈরি হয়-
    ১। আপনি কোন অসুবিধায় পড়ে তার শরণাপন্ন হয়েছিলেন।
    ২। সে আপনাকে কোন অসুবিধা মনে করে আপনার কাছে এসেছিল।

    ১ম ক্ষেত্রে পরিচিত হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক । এতে ঝুঁকি তেমন নেই। তবে আপনার নামে কোন গ্রেফতারি পরওয়ানা, লাইসেন্স জনিত সমস্যা, মামলা ইত্যাদি থাকলে সেসব তাকে জানাবেন না। শুধু যতটুকু ঘটেছে ততটুকু বলবেন। ভদ্র ব্যবহার করবেন ও সম্মান দিবেন। নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করবেন যেন সে আপনাকে দ্রুতই ভুলে যায়। যদি পুলিশকে বাসায় ডাকেন (এদেশে এমন সাধারণত হয় না) তাহলে বেআইনি কিছু থাকলে আগেই লুকিয়ে রাখুন। যদি আপনার ব্যাপারে কোন স্পর্শকাতর তথ্য সে জানতে চায়, কৌশলে এড়িয়ে যান।

    ২য় ক্ষেত্রে বিষয়টা ঝুঁকিপূর্ণ । যদি আপনার বাসায় গিয়ে আপনাকে না পায়, ফোন দিলে বলবেন যে, আমি তো বাইরে আছি। কোথায় আছেন, কি করছেন এত কথা বাড়াবেন না। সব প্রশ্নের উত্তর ১-২ শব্দে দিন। যদি রাস্তায় আপনাকে আটকানো হয়, তাহলে ব্যস্ততা থাকলেও ক্রুদ্ধ হবেন না। বাংলাদেশে পুলিশের কাজে অসহযোগিতার অপরাধে গ্রেফতার করা যায়। এখন আপনি দোকানে বসে চা খেলেও পুলিশ দাবি করতেই পারে আপনি তাকে বাধা দিয়েছেন। এই আইন দিয়ে সবাইকে গ্রেফতার করা যায়। তারপর মামলা চলতেই থাকে।

    ২য় প্রকারের পুলিশ সাধারণত কাউকে জেলে ভরে দায়মুক্ত হতে চায়। কারণ সেও একটা চাকরি করে, বেতন পায়, ব্যস। এত ঝামেলায় অতিষ্ট হবার ইচ্ছা নেই। আপনি তার বিরক্তির কারণ হলে ফেসে যাবেন। বহু নিরপরাধ ব্যক্তি এজন্য জেলে আছেন; মানে, মামলা চলছে। আদালত হয়তো ছেড়ে দিবে, কিন্তু হয়রানি তো হলেন।

    পুলিশ কিসের ভিত্তিতে গ্রেফতার করে?
    যখন তার boss একটা কেস ফাইল তার উপর চাপিয়ে দেয়, তখন দায়মুক্ত হতে সে ঐ এলাকায় ঘুরতে থাকে। আপনি যদি ঐ এলাকায় আগন্তুক হন, তাহলে গ্রেফতার হবেন। যেমনঃ কিছুদিন আগে অভিনেতা সাইফ আলী খান আক্রমণের শিকার হলে একজন বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যদিও সে অপরাধী বলে কোন প্রমাণ ছিল না। তার অপরাধ সে বহিরাগত এবং ঐ সময়ে নিকটবর্তী এলাকায় উপস্থিত ছিল।

    আপনি ঐ এলাকার হলে পুলিশ কি দেখবে? গায়ের রঙ। জ্বী, হ্যাঁ । দেখতে রাজপুত্রের মত হলে সহজে ইয়াবা ব্যবসা করা যায়। কারণ পুলিশ তাকে সন্দেহ করে না। এরপর রয়েছে চুলের দৈর্ঘ্য । লম্বা চুল হলে আপনি সন্দেহভাজন । আর সুন্নাতি বাবরি চুল হলে জঙ্গি।
    এছাড়া আপনার চেহারা আর পোশাক যদি ব্যাচেলর পয়েন্টের মারজুক রাসেল, মিশু আর জিয়াউল পলাশের মত হয়। তাহলে আপনি সন্দেহভাজন ; দাড়ি-টুপি থাকলে জঙ্গি।

    পাতা ৬৮, I cannot change the way you dress and wear your hair, because most of you would be unwilling to do so. In addition, changing your skin and sex is a little far-fetched. Nevertheless, if you want to fit a cop's preconceived image of a dirt bag, you have chosen your road.
    আমি আপনার পোশাক-পরিচ্ছদ ও চুল পরিবর্তন করতে পারব না, কারণ আপনাদের মধ্যে অধিকাংশই তা করতে অনিচ্ছুক হবে। তবুও, আপনি যদি নিজেকে পুলিশের মানসপটে চিত্রিত ময়লার ব্যাগ হয়ে থাকেন তাহলে আপনি দায়ী। সুন্দর পরিপাটি পেশাদার পোশাক পরুন।

    রাস্তায় পুলিশের মুখে পড়লে কি করবেন?
    আমরা দ্বিতীয় ক্ষেত্রের পুলিশকে নিয়ে আলোচনা করব, অর্থাৎ পুলিশ আপনাকে অসুবিধা মনে করে আপনার কাছে এসেছিল। এ ধরনের সাক্ষাৎ যেন বিপদের কারণ না হয় এজন্য আপনাকে যে কাজটা করতে হবে তা হচ্ছে, আপনার থানার সবচেয়ে প্রভাবশালী অ্যাডভোকেট খুঁজে বের করতে হবে। ছোটখাটো উকিলকে পুলিশ কোন পাত্তা দেয় না। সাধারণত এরকম প্রভাবশালী অ্যাডভোকেট রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে থাকে। আপনার থানার মাফিয়া টাইপের রাজনৈতিক নেতা কোন এডভোকেটের শরণাপন্ন হন সেটা জানতে পারলে আপনার জন্য এই সমস্যার সমাধান করা সহজ হবে। সাধারণত বড় রাজনৈতিক দলের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত থাকা এডভোকেটরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাদের শিকড় বিছিয়ে রাখে।

    এবার আপনি সেই এডভোকেটের অফিসে যান। তাকে বলুন যে, অতি শীঘ্রই আপনার হয়তো একটি আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। আর এ কারণে আপনি আগে থেকেই একজন ভালো এডভোকেট খোঁজার চেষ্টা করছেন। তবে তাকে বিস্তারিত কিছু বলার কোন প্রয়োজন নেই। তারপর তার সাথে গল্প গুজব করুন এবং তার ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য জেনে নিন। যেমন: তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, তার ক্ষমতা, তার প্রভাব ইত্যাদি। ফিরে আসার সময় তার কাছ থেকে তার "অনেকগুলো" ভিজিটিং কার্ড নিয়ে আসুন।

    এবার আপনি কি করবেন?
    আপনি যেকোনো কারণেই হোক, অতি শীঘ্রই বা অদূর ভবিষ্যতে কোন অপারেশন সংগঠন করবেন; এর আগে রাস্তায় কিংবা থানায় কিংবা আপনার বাড়িতে পুলিশ এল বা আপনাকে পুলিশের সাথে দেখা করতে যেতে হল; এরকম ক্ষেত্রে কি কি হতে পারে?
    - হয়তো আপনি গাড়িতে আছেন; তখন স্বাভাবিক থাকুন; ভদ্র ভাষায় কথা বলুন; রাগান্বিত হবেন না।
    - যদি রাতের বেলা হয়, তাহলে গাড়ির ভেতরের বাতি জ্বালান। হাত স্টিয়ারিং হুইলের উপরে রাখুন যেন পুলিশ তা দেখতে পারে এবং বন্ধুসুলভ কন্ঠে কথা বলুন।
    - যদি আপনি হাটা অবস্থায় মুখোমুখি হন তাহলে কাধ সোজা রাখুন হাত কোমরের ওপরে রাখুন যেন হাতের তালু পরিষ্কার দেখা যায়। চোখে চোখ রেখে কথা বলুন, কথায় আত্মবিশ্বাস ফুটিয়ে তুলুন, মাঝে মাঝে চোখ অন্যদিকে ঘোরান, তবে একবারের বেশি নয়। মাথা হালকা কাত করে রাখুন, এতে বিনয় প্রকাশ পাবে। তার কথায় সম্মতিসূচক উত্তর দিন।

    পুলিশ আপনার সাথে তার প্রাথমিক কথাবার্তা; যেমন : আপনার পরিচয়, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি জানা শেষ হলে আপনার বক্তব্য শুরু করুন । জিজ্ঞাসা করুন, কেন আপনাকে থামানো হলো ? তার পক্ষ থেকে ইতস্তত বোধ প্রকাশ পায় কিনা তা লক্ষ্য করার চেষ্টা করুন । সে কি জবাব দেয় তা গুরুত্বের সাথে স্মরণ রাখুন।
    তাকে জিজ্ঞাসা করুন যে, আপনি এখন যেতে পারবেন কিনা। যদি সে বলে যে, আপনি ইচ্ছা করলে যেতে পারেন। তাহলে আপনি বলুন যে, তাহলে বিদায় নিচ্ছি । তার সাথে বেশি সময় থাকার চেষ্টা করবেন না।

    যদি সে আপনার পকেট কিংবা আপনার গাড়ি তল্লাশি চালাতে চায়। তাহলে বলুন যে, আপনার কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। আপনি এই মুহূর্তে সময় দিতে পারবেন না। কারণ যদি আপনার উপর জবরদস্তি করার ক্ষমতা তার থাকতো তাহলে সে তল্লাশি চালানোর জন্য অনুমতি চাইতো না।

    আপনার যদি কপাল খারাপ হয়; আর পুলিশ আপনাকে তল্লাশি চালাতে চায় । তাহলে এখনই মোক্ষম সময় আপনি সেই অ্যাডভোকেটের ভিজিটিং কার্ডটি বের করবেন এবং তাকে দিয়ে বলবেন যে, আমার উকিল আমাকে বলেছে যেন কোন সমস্যা হলে, আমি আপনাকে আমার সাথে যোগাযোগের নাম্বার এবং ঠিকানা ছাড়া আর অতিরিক্ত কথা না বলি। বিশেষ কোনো প্রয়োজন হলে, আপনি আমার উকিলের থেকে যেকোন তথ্য নিতে পারবেন। কথাগুলো যতটা নম্রতা ও ভদ্রতা বজায় রেখে বলা যায় সেভাবে বলুন।

    এই পর্যায়ে পুলিশ আপনার সাথে কথা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল ও প্রশ্ন করা শুরু করতে পারে। আপনি কোথায় গিয়েছিলেন, কোথায় যাচ্ছেন ইত্যাদি। কোনভাবেই তার টোপ গেলা যাবে না। সে আরও বিভিন্ন কৌশল খাটাতে পারে। যেমন- সে রাস্তাতেই একজন সাক্ষী হাজির করতে পারে । সে এসে বলবে, হ্যাঁ আমি তাকে চিনি এবং সে অমুক স্থানে অমুক অপরাধ সংঘটিত করেছে। এতে ঘাবড়ানো যাবে না। আপনি শুধু একটি কথাই বলবেন, আমি সত্যিই আপনাদের তথ্য এবং সহযোগিতা দ্বারা সাহায্য করতে ইচ্ছুক। কিন্তু আমার উকিল আমাকে কঠিনভাবে কথা বলতে নিষেধ করেছে । তাই আমি দুঃখিত। তবে আমার উকিল অবশ্যই আপনাদের সাথে কথা বলবে এবং যেকোনো বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা করবে।

    আপনাকে কথা চালিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশ আরো নানা কৌশল ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে এবং কোনভাবেই মিথ্যা বলা যাবে না। মিথ্যা বললে সে অবশ্যই আজ বা কাল সেটা ধরে ফেলবে এবং আদালতে এটাকে ইস্যু বানিয়ে আপনার গুরুদন্ড দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।

    Nine times out ten, the conversation will stop there and Officer Friendly will be glad to get rid of you.
    ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ আপনাকে ছেড়ে দেবে এবং ছেড়ে দিতে পেরে খুশি হবে। কারণ তাকে এখন আপনাকে নিয়ে অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হবে না।

    লেখক এমন অনেক লোককে দেখেছেন, যারা কোনো কারণ ছাড়াই অহেতুক কোন গাড়ির মামলা খেয়েছে কিংবা জেলে গিয়েছে। কিন্তু অনেকেই যথাযথ অপরাধ করার পরেও এবং প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র পুলিশের মনে হুঁশিয়ারি সংকেত না জাগিয়ে পার পেয়ে গিয়েছে।
    কারণ পুলিশ সাধারণত সহজ সমাধান খুঁজে থাকে । কোনভাবে আপনার থেকে পরিত্রাণ পেয়ে নিকটে চায়ের দোকানে গিয়ে বসতে পারলেই; মন ফ্রেশ করার সুযোগ পেলেই; সন্তুষ্ট।

    পাশাপাশি আপনি অসহযোগিতা করার পিছনে একজন তৃতীয় পুরুষকে যুক্ত করেছেন; একজন উকিলকে। আর প্রায় সব পুলিশই জানে যে, বড় বড় অ্যাডভোকেটরা তাদের মক্কেলদের সরাসরি পুলিশের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেন। পাশাপাশি পুলিশ এটাও জানে যে, আপনার নামে মামলা হলে মামলার একদম শুরু থেকেই একজন এডভোকেট জড়িত থাকবে। আর এসব এডভোকেট তখন শুরু থেকেই নানা প্রকারের এজহার, স্বাক্ষ্য, শুনানি, পদচ্যুতি ইত্যাদি নিয়ে লেগে যায়। আর এ সমস্ত কাজ পুলিশকে তার ছুটির দিনে করতে হয়। এই ঝামেলা কোন পুলিশ পোহাতে চায় না।

    ছুটির দিনে পুলিশ হয়তো ওভারটাইম পায় , কিন্তু এসব অ্যাডভোকেটরা পুলিশের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে। তাই ওভারটাইমের টাকায় পোষায় না। এ কারণে পুলিশ এসব ঝামেলায় জড়ায় না। যে ১০% ক্ষেত্রে আপনাকে জেলে যেতে হবে, সেক্ষেত্রে আপনার জন্য ভালো এবং খারাপ উভয় সংবাদ রয়েছে।

    দুঃসংবাদ হল, আপনাকে এমনিতেও জেলে যেতে হতো। কারণ নিশ্চয়ই পুলিশ শুরু থেকেই আপনাকে টানা হেচড়া করে জেলে নিতে আগ্রহী ছিল।
    সুসংবাদ হলো, বাকি বইটাতে আমি কিভাবে এই পরিস্থিতি থেকেও বের হয়ে আসা যায় তা আলোচনা করব।​


    প্রথম পর্ব - https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/মানহায/204791-জিজ্ঞাসাবাদ-কক্ষ-১
    Last edited by Rakibul Hassan; 1 week ago.

  • #2
    অধ্যায় ৩

    যদি আপনাকে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে ভয় পাবেন না। আপনাকে গ্রেফতার করার দুটি চিত্র হতে পারে : ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার, মানে পুলিশ স্বয়ং আপনাকে অপরাধী সন্দেহ করেছে; ওয়ারেন্টসহ গ্রেফতার , মানে আদালত আপনাকে সন্দেহজনক মনে করেছে উভয় গ্রেফতারের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
    সাধারণত আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করার সময় এই শর্ত দেয়া হয় যে, আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী না দিলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে না। সুতরাং বুঝতেই পারছেন , কোন প্রকারের স্বীকারোক্তি দেয়া যাবে না ।
    গ্রেফতারের পর পুলিশ নানা প্রকারের কৌশল ব্যবহার করে, যেমন : সার্চ করার সময়- ভয়ের কিছু নেই আমরা একটু দেখে চলে যাব। গ্রেফতারের সময়- আমাদের সঙ্গে আসুন চিন্তার কারণ নেই । জবানবন্দীর সময়: এভাবে বলুন তাহলে আপনার কিছু হবে না কিংবা আপনাকে আটকে রাখার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই। আপনি এভাবে বলে দিন আপনাকে ছেড়ে দেব।
    আইন অনুযায়ী আপনার যতটুকু তথ্য পুলিশ বৈধভাবে নিতে পারে তার চেয়ে বেশি কথা বলবেন না । কারো সাথেই কোন কথা বলবেন না। মামলা সংক্রান্ত কথা শুধুমাত্র উকিলের সাথেই বলবেন। নিজের স্ত্রীকেও কিছু জানাবেন না। এমনকি আপনি অপরাধ করে থাকলে উকিলকেও সেটা বলবেন না। কারণ কোন বুদ্ধিমান উকিল তার ক্যারিয়ার নষ্ট করে কোন আসামীকে অপরাধীকে মুক্ত করার চেষ্টা করবে না । বরং আইন অনুযায়ী সে এমন কোন তথ্য জানতে পারলে পুলিশকে জানাতে বাধ্য।
    পুলিশের ভ্যানে নিয়ে যাওয়ার সময় কারো সাথে কোন কথা বলবেন না। কারণ খুব সম্ভবত আপনাকে ভিডিও করা হচ্ছে। এমনকি পুলিশ আপনার থেকে দূরে অবস্থান করলেও কোন ক্যামেরা আপনার দিকে তাক করা থাকতে পারে।

    থানায় নেয়ার পর কিছু নিয়ম আপনাকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে- যেমন: থানায় অবস্থানকারী প্রত্যেকটি লোক পুলিশের সদস্য; সে থানার দেয়ালের বাইরের সিগারেট বিক্রেতা হলেও। এমনকি জেলের ভেতরে লুঙ্গি পরে শুয়ে থাকা বখাটে ছেলেটাও। লেখক এমন অনেক ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন, যেখানে লেখক কোন একজন চোর কিংবা সন্ত্রাসী ছদ্মবেশ নিয়েছেন এবং তার সহকর্মী পুলিশেরা তাকে হাত করা পরা অবস্থায় থানায় নিয়ে এসেছে; তারপর বেধড়ক পিটিয়েছে; এরপর অপরাধীর সাথে একই সেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এরকম করা হয় যেন আপনার বিশ্বাস লাভ করা যায়।
    কেউ যদি পুলিশের সদস্য নাও হয়ে থাকে অন্ততপক্ষে সে একজন ইনফর্মার।
    থানার প্রতিটি কোনা নজরদারির ভেতরে রাখা হয় । আসামির জন্য প্রাইভেসি বলে কিছু থাকে না । সুতরাং টয়লেটে বসেও অপরাধের ব্যাপারে কোন আলোচনা করা যাবে না । বাইরের দেশে উকিলের সাথে কথা বলার বিশেষ কক্ষ সকল প্রকারের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন মুক্ত থাকলেও বাংলাদেশ এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ।

    থানার ভেতরে স্বাভাবিক এবং আত্মবিশ্বাসী থাকুন। বারবার নিজেকে নির্দোষ বলে প্রতিবাদ করুন। দাবি করুন যে, আপনার উকিলের সাথে কথা বলবেন। এ ছাড়া আর কোন কথা আপনার মুখ থেকে যেন বের না হয়। এমনকি কোন প্রকারের মিথ্যা এলিবাই বা অজুহাত দেখানোর চেষ্টা করবেন না । আপনি যদি এভাবে চালিয়ে যেতে থাকেন তাহলে যখন উকিল থানায় এসে পৌঁছাবে , তখন পুলিশ উকিলের হাতে শুধু এই রিপোর্ট জমা দিতে পারবে যে, আপনি কোন স্বীকারোক্তি দেননি। এবং বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। ব্যাস ! এটুকুই আপনাকে বের হয়ে আসতে রাস্তা করে দিবে। কারণ রাষ্ট্রপক্ষ সহজে মামলা থেকে বের হয়ে আসতে পারলে বাঁচে। কারণ হাজার হাজার মামলা পড়ে আছে , এরকম কয়েকটা খারিজ করে দিতে পারলে তাদের জন্য ভালো।
    থানায় আপনার আঙ্গুলের ছাপ , ছবি ইত্যাদি রাখা হতে পারে । মেডিকেল টেস্ট করা হতে পারে। কাপড় খুলে দেখা হতে পারে। এসমস্ত কাজে বাধা দেবেন না। নতুবা এগুলোকে পুঁজি করে আবার নতুন মামলা দেওয়া হবে।

    পৃষ্ঠা ১০১, মনে রাখবেন, যদি আপনি কোন অপরাধের সাক্ষী হয়ে থাকেন, সেই ক্ষেত্রে আপনার কোন আইনি নিরাপত্তা নেই । আপনি যদি এই জাতীয় মামলায় মুখ খুলতে না চান , আর নিজের উকিল ছাড়া অন্য কারো সাথে কথা বলতে না চান, তাহলে আদালত অবমাননার অভিযোগে আপনাকে সাজা খাটতে হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ তাই আপনাকে এই জাতীয় ফাঁদে ফেলে জব্দ করতে চাইতে পারে। তবে সুখবর হচ্ছে এই জাতীয় মামলায় সাজা অন্তত মূল অপরাধে জড়িত থাকার সাজার চাইতে কম।
    আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করলে অফিসারের পোশাকের ব্যাপারে খুব বেশি মনোযোগ দিবেন না। কারণ সাধারণত তারা এমন পোশাক পড়ে আসে, যাতে করে তাদের বোকাসোকা মনে হয় । এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক খেলা কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ খেলে থাকে। এতে করে আপনাকে কিছুটা অসতর্ক অবস্থায় ফেলে দেওয়া যায়।
    পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে এমন অগোছালো পোশাক পরিহিত জিজ্ঞাসাকারীরা উচু পর্যায়ের গোয়েন্দা হয়ে থাকে। অযথা একজন পাকা গোয়েন্দার সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার কোন মানে হয় না।
    দক্ষ অফিসাররা সাধারণত একাই জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকে । তবে প্রয়োজন বিশেষে সে সাথে আর একজন সহকারী নিয়ে আসতে পারে। এই সহকারী সাধারণত শুরুর দিকে আপনার সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করবে এবং সময়ের প্রয়োজনে তার আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে।

    সাধারণত জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে একটি টেবিল এবং দুটি চেয়ার থাকে। কক্ষটি ১০ ফুট বাই ১০ ফুট হয়। কক্ষে আর কোন কিছু আপনার নজরে নাও আসতে পারে; কিন্তু তার মানে এই না যে আপনাকে রেকর্ড করা হচ্ছে না । এখানে অডিও কিংবা ভিডিও কিংবা উভয় একই সাথে রেকর্ড করা হতে পারে। যদিও প্রশ্নকর্তা মাঝে মাঝে একথা বলে থাকে যে, এই মুহূর্তে আমি ক্যামেরা বন্ধ রেখেছি। আপনি আমাকে মন খুলে বলতে পারেন কিংবা এই রুমটায় কোন ক্যামেরা নেই। এগুলো সবই ধোঁকা।
    কক্ষগুলো সাধারণত একটু প্রশস্ত হয় যেন প্রশ্নকর্তা রুমের ভেতরে প্রয়োজনে হাঁটাচলা করতে পারেন। দাম্ভিক ভঙ্গিতে হাঁটাচলা করে সে আপনার ওপর মনস্তাত্ত্বিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে পারে । আবার প্রশ্নকারীর চেয়ার সাধারণত চাকাযুক্ত হয় এবং সে তার প্রয়োজনমতো চেয়ার সামনে পিছনে নিয়ে আপনার কাছে কিংবা আপনার থেকে দূরে সরে যেতে পারে। কিন্তু আপনার চেয়ার মেঝের সাথে যুক্ত থাকবে। দেয়ালে উজ্জ্বল রং করা থাকে; যেন লাইটের আলো ভালোভাবে প্রতিফলিত হয়; আর আপনার চেহারার অনুভূতি ও অভিব্যক্তি স্পষ্ট ভাবে প্রশ্নকারী দেখতে পারে।
    অতঃপর প্রশ্নকর্তা প্রশ্ন করা শুরু করে । সাধারণত প্রথম দিকের প্রশ্নগুলো স্বাভাবিক প্রশ্ন উত্তর হয়ে থাকে এবং পরবর্তী প্রশ্নগুলো মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে থাকে। দ্বিতীয় ধাপের এই প্রশ্নগুলোকে ক্রিটিক্যাল রেসপন্স বলা হয়। প্রশ্নগুলো এমন ভাবে সাজানো থাকে যেন আপনার প্রথম অবস্থা এবং দ্বিতীয় অবস্থা তুলনা করা যায়। সাধারণত মিথ্যা বলতে গেলে একটা মানসিক চাপ তৈরি হয়, একজন দক্ষ প্রশ্ন করতে খুব সহজেই সেগুলো খুঁজে বের করতে পারেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজন না হলেও পরবর্তীতে আপনার ভিডিও রেকর্ডিং বেশ কয়েকবার তারা রিপ্লে করবে এবং সেখান থেকেও ভুলক্রমে ছুটে যাওয়া আপনার অভিব্যক্তিগুলো পুনরায় পাঠ করা হবে। এই পদ্ধতি কথিত মিথ্যা ধরার যন্ত্র পলিগ্রাফে ব্যবহার করা হয়।

    পুলিশ সাধারণত আপনার দেহভঙ্গি বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কিংবা আপনার স্বর পরিবর্তন বা ভারবাল কিউ লক্ষ্য করবে। এসব দ্বারা সম্ভব না হলে আপনার উপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হবে । বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা স্বাভাবিক। এই পর্যায়ে আপনি কোন কৌশল করার চেষ্টা করলে ধরা পড়ে যাবেন । কিন্তু সেগুলো আপনার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করানো যাবে না। শুধু এটা বলা যাবে যে, আপনি ছলচাতুরি আশ্রয় নিচ্ছেন।
    তাই জিজ্ঞাসাকারীকে আপনার স্বাভাবিক ও উত্তেজিত অবস্থা বুঝতে দিবেন না। কখনো চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। কখনো চোখ ঘুরান। কখনো সামনে বা পিছনে ঝুকে। জবাব একটু থেমে অথবা প্রশ্নের সাথেসাথে দিয়ে; কাধ বাকিয়ে, ঝাকিয়ে ইত্যাদি যত উপায়ে সম্ভব সেভাবে করতেই থাকুন। কিন্তু যা বলবেন, সত্য বলুন। এতে সে আপনার স্বাভাবিক আচরণ আন্দাজ করতে পারবে না। এক পর্যায়ে প্রশ্নকারী আপনাকে বিরক্ত করতে মামলার স্পর্শকাতর তথ্য আপনাকে বলবে।
    আপনার স্বাভাবিক আচরণ এবং উত্তেজিত অবস্থায় আচরণ পার্থক্য করতে না পারলে প্রশ্নকর্তা এবার তৃতীয় পর্যায়ে যাবে। এই পর্যায়ের প্রশ্নগুলোকে আমরা কাইনেসিক ইন্টারভিউ বলি। এ প্রশ্নগুলো করা হয়, যেন আপনি নিরপরাধ কিনা সেটা যাচাই করা যায় এবং এই প্রশ্নগুলো এমনভাবে করা হয় যেন এরা জবাবগুলো এর জন্য নিরাপরাধ ব্যক্তি যেভাবে দিত, তেমন হয়। নিচের উদাহরণ দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন।
    বলে রাখা ভালো, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার সময় প্রশ্নকারীর দিকে তাকিয়ে কথা বলতে হবে। প্রশ্ন করার সাথে সাথে উত্তর দিবেন, থমকে যাবেন না, ইতস্তত বোধ করবেন না। হাত যথাসম্ভব দূরে ছড়িয়ে রাখুন, যেকোনো কথোপকথনে এটা শ্রোতার উপর আধিপত্য প্রকাশ করে এবং পুরোটা সময় জুড়ে একটি নির্দিষ্ট দেহভঙ্গি ও কণ্ঠস্বর বজায় রাখবেন। এবার প্রশ্নগুলোর কিছু নমুনা দেখুন -

    -আপনি কি জানেন কেন আপনাকে এখানে আনা হয়েছে? জবাব- হ্যাঁ আমাকে আনা হয়েছে অমুক স্থানে বা ব্যক্তিকে হামলার সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে। (অযথা আমি জানিনা বলে ভাব ধরার কোন কারণ নেই )
    - আমরা তদন্ত করছি যে অমুক কাজটাকে করেছে। সরাসরি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি, আপনি কি এটা করেছেন? জবাব- না। ( এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় প্রশ্নকারীর চোখের দিকে নজর রাখবেন। কন্ঠঃস্বর স্থির রাখবেন। গলা যেন কেঁপে না ওঠে, ভেঙে না যায়। খুব উঁচু বা নিচু স্বরে কথা বলবেন না। স্বাভাবিকভাবে বলবেন।)
    - আপনি কি এমন কাউকে চিনেন যে এই কাজটা করতে পারে? জবাব- হ্যাঁ। অমুক লোক এই কাজ করতে পারে। সে সুবিধার মানুষ না। ( নির্দিষ্ট কারো নাম বলুন। নিরপরাধ ব্যক্তিরা সাধারণত কারো না কারো নাম বলে। কখনো কখনো তারা এটাও বলে যে, হতেও পারে ওই ব্যক্তি আসলে এ অপরাধটা করেনি।)
    - আপনি কি এমন কোন ব্যক্তির কথা বলতে পারেন, যে অবশ্যই এই অপরাধটি করেনি? আপনার চেনাজানা সবচেয়ে নির্দোষ ব্যক্তির নামটি বলুন। অপরাধিরা সাধারণত কারো নাম দিতে পারেনা। কখনো কখনো তারা আরো নির্বোধের মতো জবাব দেয়, 'যে কেউ এই কাজটা করতে পারে"।)
    - জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে অনুভূতি কেমন? জবাব- আমি চাই যেন অপরাধী দ্রুত ধরা পড়ে। আমার পক্ষে সম্ভব হলে আমি সর্বোচ্চ সাহায্য করতাম। কিন্তু আমি জানিনা আপনারা আমার সাথে কেন কথা বলছেন। ( রেগে যাবেন না কিংবা কোন নেতিবাচক কাজ করে বসবেন না। এই কাজগুলো সাধারণত অপরাধীরা করে থাকে।)
    - আপনার কি মনে হয় এই ঘটনা আসলেই ঘটেছে? এটা একটা ফাঁদ। অধিকাংশ অপরাধীরা এই ফাঁদে পা দেয়। বিশেষ করে, হারানো টাকা কিংবা দুর্ঘটনা জনিত কারণে সম্ভাব্য মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে। আপনার উত্তর হবে, অবশ্যই এরকম হয়েছে। (কারণ যদি এই ঘটনা এভাবেই না হয়ে থাকতো, তাহলে আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কোন কারণ ছিল না)
    - আপনার কি মনে হয়, এই কাজ কার করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি? আবার আগের জবাব দিন। এটা মূলত একটা ফাঁদ যে, আপনি উত্তর পরিবর্তন করেন কিনা। পূর্বের লোকের নাম আবার একইভাবে বলুন।
    - আপনার কি মনে হয়, কেউ এমন কাজ কেন করবে? জবাব- তারা সম্ভবত মরিয়া হয়ে গিয়েছিল। ( অপরাধীরা সাধারণত এই প্রশ্নের উত্তরে বলে যে, কেউ সম্ভবত আমাকে ফাঁসাতে চায়। এই জাতীয় উত্তর দিলেই আপনাকে সাথে সাথে মিথ্যুক হিসাবে সন্দেহ করা হবে)
    - আপনি কি কখনো এরকম কাজ করার কথা ভাবেন? জবাব- কখনোই না, স্বপ্নেও না।
    - এই অপরাধীর কেমন শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন? জবাব- সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া উচিত। (অপরাধিরা সাধারণত বলিষ্ঠ কন্ঠে শাস্তির দাবি করতে পারে না)
    - আপনার ব্যাপারে তদন্তের ফলাফল কি হবে বলে মনে করেন? প্রশ্নকারীর দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট করে বলুন, আমি দ্রুতই মুক্তি পাবো।
    - অপরাধীকে কি ভালো হওয়ার একটা সুযোগ দেওয়া উচিত? জবাব- এই অপরাধের কোন ক্ষমা নেই। সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া উচিত।
    - নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে পারবেন কি? এটাও একটা ফাঁদ। সে যাচ্ছে আপনি একটি alibi দাড় করান। তাহলে সে আপনাকে মিথ্যাবাদী বানানোর সুযোগ পাবে। সাধারণত নিরপরাধ ব্যক্তিরা নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে পারেনা। বলুন, না।
    - আপনি কি পলিগ্রাফ পরীক্ষায় অংশ নিবেন? জবাব- অবশ্যই। কোন অসুবিধা নেই।
    - পলিগ্রাফ পরীক্ষায় আপনার ফলাফল কেমন আসবে? একদম পানির মত। আমি মুক্তি পেয়ে যাব। (আত্মবিশ্বাসের সাথে কথাগুলো বলুন)
    - আমাদের তদন্ত কি দেখাবে যে, আপনার আঙুলের ছাপ, পায়ের ছাপ কিংবা ডিজিটাল পদচিহ্ন ঐ ঘটনাস্থলে পাওয়া গেছে? জবাব- না।

    এই শেষ প্রশ্নটা বেশ ঝামেলার হতে পারে। এই পর্যায়ে প্রশ্নকারী এমন কোন মজবুত প্রমাণ নিয়ে আসবে যে, আপনি সেখানে ছিলেন অথবা গিয়েছিলেন। এতে ঘাবড়ে যাবার কোন কারণ নেই। আগের মতই চেহারায় আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন। যদি এই প্রমাণ আপনার বিরুদ্ধে যথেষ্ট হত, তাহলে সে কখনোই আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে আনতো না। আপনি ঘটনার স্থলে উপস্থিত ছিলেন বলেই অপরাধ করেছেন বলে প্রমাণ হয় না। যেভাবেই হোক, চেহারা ও স্বর স্বাভাবিক রাখুন। অস্বস্তি ঢেকে রাখুন। আপনি যদি এখন কথা বলেন, তাহলে আরও ফেসে যেতে পারেন।

    এমতাবস্থায় উত্তম হল, প্রশ্নের জবাবে প্রশ্ন করা। এতে প্রশ্নকারী অপ্রস্তুত হয়ে যাবে। আপনি বলুন, আপনার কি মনে হয় আমার একজন ভাল উকিল রাখা দরকার?
    আরও সুন্দর করে এভাবে বলা যায়, "আমার বিরুদ্ধে যদি কোন প্রমাণ থাকে তাহলে আমি তা এখনই দেখতে চাই। কারণ আমি আপনাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু আমার মনে হয় আমার থেকে এমন অপরাধের স্বীকারোক্তি বের করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যা আমি করি নি। আমি কি আমার উকিলকে ডাকবো? আমি তো কোন মিথ্যা তথ্য দেই নি (যা কিনা সত্য। কারণ এই বইয়ের কোথাও মিথ্যা বলার পরামর্শ দেয়া হয় নি। মিথ্যা যা বলার আপনার উকিল বলবে), আপনারা কেন আমাকে মিথ্যা ফাদে ফেলতে চাচ্ছেন? আমি একজন সাধারণ নিরীহ মানুষ, কোন অপরাধী না; আমি অবশ্যই ডিসি, মেয়র সবাইকে জানাবো; প্রয়োজনে সাংবাদিক আনাবো; সবাইকে বলব যে, আপনি একটি মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য কিভাবে ফাদ তৈরি করেন।"

    কথাগুলো মুখস্থ করে নিন। মনে রাখবেন, জিজ্ঞাসাবাদ একটি মনস্তাত্ত্বিক খেলা। আপনি যদি আপনার প্রশ্নকারীর মনোবল ভেঙে দেন, তাহলে সে ধরে নিবে, আপনাকে অন্য কেউ ফাসিয়েছে। একারনে আমরা উপরে বলে এসেছি যে, আপনি নিজে থেকে এই কথা বলবেন না যে, আপনার শত্রুরা আপনাকে ফাসাতে পারে। পুলিশকে আপনার পছন্দ মতো ভাবতে সাহায্য করুন, আপনার পছন্দের সিদ্ধান্তে উপনীত করুন।
    এই পর্যায়ে প্রশ্নকারী আপনাকে রুমে রেখে বাইরে চলে যাবার কথা কারণ সে রাজনৈতিক ও মিডিয়ার চাপ থেকে মুক্ত থাকতে চাইবে।​

    Comment

    Working...
    X