Announcement

Collapse
No announcement yet.

অনুযোগ ও অনুরোধ!!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • অনুযোগ ও অনুরোধ!!

    বাংলাদেশের বহু ফোরাম রয়েছে, যেগুলো বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ব্যবহার করে থাকেন। এই ফোরামগুলোতে লেখালেখির মাধ্যমে অনেকেই নিজেদের চিন্তা, ভাবনা, মতামত ও সৃজনশীলতা প্রকাশ করে থাকেন। কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবী, নাস্তিকসহ নানা চিন্তাধারার মানুষ এসব প্ল্যাটফর্মে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

    ফোরামগুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো এক ধরনের মুক্তমঞ্চ হিসেবে কাজ করে, যেখানে যে কেউ নিজের মত প্রকাশ করতে পারে। এই ফোরামগুলো শুধু আলোচনা ও মতবিনিময়ের জন্যই নয়, বরং আইডিয়া জেনারেট করার ক্ষেত্রেও খুবই কার্যকর। যেকোনো বিষয়ে লেখালেখি শুরুর আগে বা নতুন কিছু ভাবার প্রক্রিয়ায় এই প্ল্যাটফর্মগুলো অনেকের কাছে হয়ে ওঠে এক ধরনের রিসোর্স সেন্টার।

    বিভিন্ন কারণে কেউ কেউ সরাসরি অংশগ্রহণ না করেও এসব ফোরাম থেকে ধারণা সংগ্রহ করেন, এমনকি তাদের লেখার মূল উৎস হিসেবেও এসব ফোরাম কাজ করে। ফোরামের ভেতরের কথাবার্তা, ট্রেন্ড, বিতর্ক, কিংবা সাধারণ মানুষের মতামত থেকে জন্ম নেয় নতুন চিন্তা, নতুন বক্তব্য। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ফোরামের আলোচনাগুলো একজন লেখক বা চিন্তাশীল ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে অনুপ্রাণিত করে।

    ফোরামগুলো তাই কেবলমাত্র মত প্রকাশের জায়গা নয়, বরং একেকটি চিন্তার খনি, যেখানে মেধা, মতবিনিময়, এবং সৃজনশীলতা একত্রে মিশে যায়।

    আমাদের এটা জানা উচিত যে মুজাহিদদের জন্য জিহাদকে ভালোবাসেন, তাদের চিন্তা, অনুভব এবং সংগ্রামের ভাষা ধারণ করার জন্য একটিমাত্র ফোরাম দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় আছে—দাওয়াহ ইল্লাহ ফোরাম। এটি শুধু একটি নিউস পোর্টাল হিসেবে নয়, বরং একটি আদর্শিক প্ল্যাটফর্ম, একটি মানসিক আশ্রয়স্থল, যেখানে জিহাদের পথে চলতে ইচ্ছুক হৃদয়গুলো তাদের চিন্তা, জিজ্ঞাসা এবং দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা পাওয়ার কথা ছিল। এই ফোরাম ছিল একধরনের চেতনার কেন্দ্রবিন্দু—যেখানে ত্যাগ, তাকওয়া, এবং তাওহিদের ব্যাখ্যা কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব জীবনের কৌশলে রূপ নেওয়া জন্য ব্যবহার হওয়ার।

    কিন্তু এখন যেন এক ধরনের অচলাবস্থা বিরাজ করছে। আমরা এই ফোরামকে সঞ্চয় হিসেবে ব্যবহার করতে পারছি না—অর্থাৎ এটি আমাদের চিন্তা ও দাওয়াহ প্রচেষ্টার জন্য একটি কার্যকর রিসোর্স হয়ে উঠতে পারছে না। যেটি একসময় মুজাহিদদের মেধা ও প্রজ্ঞার সংলাপভিত্তিক কেন্দ্র ছিল, সেটি এখন অনেকাংশে একটি তথ্য সংরক্ষণাগারে রূপ নিচ্ছে। অধিকাংশ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন কেবল নিউজ, অনুবাদ বা কোনো শায়খের বক্তব্যের পুনঃপ্রকাশ দেখা যায়। এতে চিন্তার গভীরতা হারিয়ে যাচ্ছে, বিশ্লেষণ সীমিত হয়ে পড়ছে, এবং সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো—নতুন নতুন ঘর, চিন্তাধারা বা আলাপের সূচনা খুব কমই হচ্ছে।

    ফোরামের প্রাণ হচ্ছে আলোচনা, প্রশ্ন, জিজ্ঞাসা এবং দ্বিমত। আজ সেই প্রাণশক্তির জায়গায় এসেছে নীরবতা ও পুনরাবৃত্তি। নতুন ঘর মানে শুধুই নতুন থ্রেড নয়—বরং এমন চিন্তা, এমন দৃষ্টিভঙ্গি, যা পূর্ববর্তী আলোচনাকে চ্যালেঞ্জ করে, পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে, কিংবা পুরো কথোপকথনের ধারা বদলে দেয়। এই ধরনের আলাপের অভাবের কারণে ফোরামটি যেন নিজেকে পুনরাবিষ্কার করতে পারছে না। অথচ সময়ের দাবি ছিল, এটি হতো এমন এক প্ল্যাটফর্ম, যা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নতুন প্রজন্মকে চিন্তা করতে শেখায়, শোনার সাহস দেয় এবং রচনার উৎসাহ জোগায়।

    আমরা যদি সত্যিকার অর্থে এই ফোরামকে একটি সঞ্চয় হিসেবে ব্যবহার করতে চাই, তবে দরকার তা-কে কেবল তথ্য ভাণ্ডার না বানিয়ে, একে ভাবনা চর্চার জীবন্ত মঞ্চে পরিণত করা। যেখানে প্রশ্ন উঠবে, দ্বিমত আসবে, আত্মসমালোচনা হবে—আর সেখান থেকেই জন্ম নেবে এক নতুন বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ।

    আমাদের উচিত নতুন আইডিয়া জেনারেট করা—তা দাওয়াতের ক্ষেত্রে হোক, অপারেশনের ক্ষেত্রে হোক, লজিস্টিক বা কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রেই হোক। কারণ বর্তমান বাস্তবতা আমাদের যেভাবে ঘিরে ফেলেছে, তাতে আগের চিন্তা আর আগের কাঠামো দিয়ে এগোনো সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের সামনে আজ যে চ্যালেঞ্জগুলো এসেছে, সেগুলো অনেক বেশি জটিল, বহুমাত্রিক এবং ছদ্মবেশী। তাই প্রতিক্রিয়াও হতে হবে নতুন, সৃজনশীল এবং প্রাসঙ্গিক। কেবল অতীত অভিজ্ঞতা বা পুরনো মডেলগুলো বারবার টেনে আনা বা পুনরাবৃত্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চিন্তার ভিতরে একধরনের স্থবিরতা জন্ম নেয়, যা আমাদের পেছনে টেনে ধরে রাখে।

    আমরা আজ এমন এক সময়ে আছি, যেখানে দাওয়াতের ভাষা, ভঙ্গি, মাধ্যম—সবকিছুই বদলে গেছে। মানুষ কীভাবে চিন্তা করে, কী শোনে, কোন প্রশ্নগুলো তাদের মনে চলে আসে, এসব সবই এক নতুন বাস্তবতার ছায়া ফেলে আমাদের দাওয়াতের উপর। সেখানে যদি নতুন চিন্তা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও নতুন রচনাশৈলী না আসে, তবে দাওয়াত কেবল একটি আত্মতুষ্টির কার্যক্রমে পরিণত হয়। অপারেশনের ক্ষেত্রেও আমরা দেখতে পাই, শুধু সাহস বা আত্মত্যাগ দিয়ে নয়, বরং সূক্ষ্ম পরিকল্পনা, বহুমুখী স্ট্র্যাটেজি ও কার্যকর ম্যানেজমেন্ট ছাড়া আজকের বাস্তবতায় কিছু করা সম্ভব নয়।

    লজিস্টিকের দিক থেকে শুরু করে নেটওয়ার্কিং, রিসোর্স ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগের সুরক্ষা, এবং ইনফরমেশন ফ্লো—সবকিছুতে এক নতুন ধরনের বাস্তবতা কাজ করছে, যা আগের চিন্তা দিয়ে ধরা যায় না। কমিউনিকেশন এখন আর শুধু বার্তা পাঠানোর বিষয় নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে প্রভাব বিস্তারের একটি কৌশলগত অস্ত্র। এর প্রতিটি স্তরে দরকার গভীর পর্যবেক্ষণ, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাহসী ভাবনা।

    তেমনি আমাদের সায়খদের আলোচনা, বক্তব্য, ফতোয়া কিংবা চিন্তার স্রোতকে আমরা কেবল একরকম পাঠ করলেই চলবে না, বরং সেগুলোকে বর্তমান বাস্তবতা, পরিস্থিতি, এমনকি রাষ্ট্র কাঠামোর প্রসঙ্গে দাঁড় করিয়ে, প্রশ্ন করে, আলোচনার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করতে হবে। হ্যাঁ, সেটা করতে গিয়ে আমরা ভুল করতেই পারি। কিন্তু সেই ভুল তো চিন্তারই অংশ, উন্নয়নেরই ধাপ। যদি চিন্তার জগতে ভুল করা না যায়, তবে শুদ্ধতা কোথা থেকে আসবে?

    আজকের সময়ে চিন্তা মানে শুধু অনুসরণ নয়, বরং তা দাঁড় করানো, চ্যালেঞ্জ করা, এবং পরিপ্রেক্ষিতভিত্তিক রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় টেনে আনা। চিন্তা যেন বাস্তবতায় শ্বাস নিতে পারে, চিন্তা যেন কেবল কাগজে না থেকে জীবনে প্রবেশ করে, তার জন্য দরকার নতুন আইডিয়া, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, নতুন সাহস।


    আমাদের উচিত ফোরামের ভেতরে এক ধরনের বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু করা, যাতে চিন্তা আরও কেন্দ্রীভূত হয়, আরও গভীরে প্রবেশ করে এবং সময়ের দাবির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। এখন যেটা হচ্ছে, তা অনেকটাই এলোমেলো, বিচ্ছিন্ন, আর ক্ষণস্থায়ী। কোথাও আলোচনা শুরু হয়, কিন্তু তার কোনো শেষ নেই; কোথাও প্রশ্ন আসে, কিন্তু উত্তরটা ঝুলে থাকে; কোথাও ভাবনা জন্ম নেয়, কিন্তু তা আর বিকশিত হয় না। এই ছেঁড়াখোঁড়া ধারার ভেতরে ধারাবাহিক বুদ্ধিবৃত্তিক প্রবাহ তৈরি করা অসম্ভব। অথচ চিন্তার আসল কাজ শুরু হয় ধারাবাহিকতা থেকে—যেখানে একদিনের চিন্তা পরের দিনের আলোচনার ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

    আমরা চাইলে প্রতিদিন বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর জামাতভিত্তিক কনটেন্ট ভাগ করে নিতে পারি—লেকচার, তাদাব্বুর, গবেষণাভিত্তিক লেখা, কিংবা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা শুরু করা যায়। একটা বিষয়ে আলোচনা শুরু হলে সেটাকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নেওয়া যায়, যাতে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে, প্রশ্ন করতে পারে, নিজস্ব মত দিতে পারে, এবং ধীরে ধীরে একটি চিন্তার গহ্বরে প্রবেশ করতে পারে। আলোচনার মধ্যে এমন এক ধরণ তৈরি করা দরকার, যা শুধু "কে কী বলল" তার ভিত্তিতে নয়, বরং "কেন বলল, কী বুঝিয়ে বলল, তার পেছনের যুক্তি কী"—এই প্রশ্নগুলোর জবাব খোঁজে।

    ভয় ধরে ধরে আলোচনা শুরু করা মানে, আমরা আর কেবল আবেগের আশ্রয়ে থেমে থাকব না, বরং যুক্তির আলোয় প্রতিটি জায়গা বিশ্লেষণ করব, প্রতিটি বক্তব্যের ভেতরে কী পর্যালোচনা লুকিয়ে আছে তা উন্মোচন করব। এখানে দরকার এক ধরনের পদ্ধতিগত ধৈর্য—একটা আলোচনার থ্রেডকে ছেড়ে না দেওয়া, বরং সেটাকে ক্রমশ গভীরতর করে তোলা। চিন্তার আলোচনার ভেতরে ধারাবাহিকতা না থাকলে, তা যেমন দ্রুত ভুলে যাওয়া যায়, তেমনি এর প্রভাবও দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

    তাই আমাদের প্রয়োজন ফোরামকে কেবল মত প্রকাশের জায়গা হিসেবে না দেখে, একে এক ধরনের চিন্তা চর্চার স্কুলে রূপান্তর করা—যেখানে বিষয়ভিত্তিক আলোচনার ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে একটি মতবাদ, একটি দৃষ্টিভঙ্গি, এবং একটি কৌশল জন্ম নিতে পারে। আর সেই কৌশলই একদিন বাস্তবতার ময়দানে রূপ নেবে, যদি আমরা আজকের চিন্তাগুলোকে যত্ন নিয়ে ধারণ করি।

    فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

  • #2
    ফোরামের প্রাণ হচ্ছে আলোচনা, প্রশ্ন, জিজ্ঞাসা এবং দ্বিমত। আজ সেই প্রাণশক্তির জায়গায় এসেছে নীরবতা ও পুনরাবৃত্তি।

    জাযাকাল্লাহ আখি!
    একদম মনের গহীনের কথাগুলো বলে দিয়েছেন। কিন্তু আমার কাছে ব্যক্ত করার মত কোন ভাষা ছিল না।

    আল্লাহ তাআলা আপনাদের প্রচেষ্টা কবুল করুন!
    আমীন! ইয়া রব্বানা রব্বাল মুজাহিদীন
    রব্বান-নাসি ওয়া রব্বা-ফিলিস্তিন!

    Comment


    • #3
      কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মুক্ত ও স্বাধীন চিন্তাভবনার শক্তি আমরা হারিয়ে ফেলেছি, অন্য কারো চিন্তাধারার উপর অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে চলতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি, অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি, তাই হয়তো ফোয়ম ঝিমিয়ে পড়েছে।
      তাই আত্মসমালচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে আমাদের ফোরামকে আরো সতেজ করে তোলার জন্য আমাদের সকলেরই চেষ্টা করা উচিত ইনশাআল্লাহ

      Comment


      • #4
        যেখানে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও জানার আগ্রহ বাড়ার কথা ছিলো তা হচ্ছে না। দিন দিন যেন অবনতি হচ্ছে। মনের কথা গুলো গুছিয়ে লিখেছেন, ধন্যবাদ।

        Comment


        • #5
          জী ভাই সঠিক বলেছেন।

          Comment

          Working...
          X