ড. মুহাম্মদ ইউনুস যে বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে—তা নিঃসন্দেহে একটি বড় রাজনৈতিক ঘটনা। অনেকেই এটিকে "জনগণের বিজয়", "পরিবর্তনের সূচনা", কিংবা "নতুন যুগের দ্বারোদ্ঘাটন" বলছে। কিন্তু আমাদের, বিশেষ করে সচেতন মুসলিমদের, এই বিপ্লবকে চোখ বুজে উদযাপন করার আগে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত—এই বিপ্লব আদতে কিসের জন্য, এবং কাদের দ্বারা ও কাদের স্বার্থে পরিচালিত হয়েছে?
প্রথমত, এটা স্পষ্টভাবে বলা দরকার—এই বিপ্লব কোনোভাবেই ইসলামী বিপ্লব নয়। এটিকে ইসলামী মূল্যবোধ, শরীয়াহ বা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শে পরিচালিত কোনো পরিবর্তন বলা যাবে না। বরং এই বিপ্লব একটি ধর্মনিরপেক্ষ, পশ্চিমা ধারায় প্রভাবিত, তথাকথিত উদারপন্থী (liberal) রূপান্তরের অংশ। এখানে ইসলামকে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় মূল্যবোধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কোনো লক্ষণ নেই—বরং রয়েছে ধর্মীয় বিষয়গুলোকে নীরবে কোণঠাসা করে দেওয়ার এক সুপরিকল্পিত ধারা।
দ্বিতীয়ত, যে ব্যক্তি আজ বিপ্লবের ফল ভোগ করছেন, তিনি নিজেই সেই বিপ্লবের সময় দেশে ছিলেন না। ড. ইউনুস সরাসরি বিপ্লবের মাঠে নামেননি, রক্তপাত বা ত্যাগের কোনো অংশে তার সম্পৃক্ততা ছিল না। যিনি বিপ্লবের আগুনে ঘি ঢালেননি, তিনিই আজ বিপ্লবের আগুনে নিজের হাত সেঁকছেন। প্রশ্ন হলো—এই ক্ষমতা কি তার প্রাপ্য ছিল? নাকি তাকে পরিকল্পিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এক “নিরপেক্ষ মুক্তিদাতা” হিসেবে, যাকে সামনে রেখে বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়ন সহজ হয়?
তৃতীয়ত, ড. ইউনুস বহু আগে থেকেই পশ্চিমা লিবারেল শক্তির ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বিশেষ করে মার্কিন ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে তার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তার অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী হলেন হিলারি ক্লিনটন—একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক, যিনি সমকামী বিয়ে ও সম্পর্কের পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলেন। হিলারির মতো একজনের সঙ্গে তার সখ্যতা কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আদর্শিক ঘনিষ্ঠতারও প্রতিচ্ছবি। এখন প্রশ্ন হলো, এমন একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে কি আমরা আমাদের সমাজকে নিরাপদ রাখতে পারবো? যে নিজে ইসলামী আদর্শের পক্ষে অবস্থান নেয় না, বরং এমন শক্তির সাথে যুক্ত, যারা বিশ্বব্যাপী ইসলামী মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিকৃত করতে সচেষ্ট?
এই বাস্তবতা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—এই বিপ্লবের ফসল আসলে কারা ভওগ করছে? জনগণ, না কি একটি বহিরাগত ও আদর্শিক আগ্রাসনের ঝান্ডাবাহী কিছু মানুষ, যাদের মাধ্যমে আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও চিন্তাধারাকে বদলে ফেলার নীরব প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে?
আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের তথাকথিত "মাস্টার স্ট্রোক"—তা হলো ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন’। এই একটি দলিলের মাধ্যমেই সে তার প্রকৃত অভিসন্ধি সামনে এনেছে। এই প্রতিবেদন কেবল কিছু সামাজিক প্রস্তাবনা নয়—এটি মূলত একটি আদর্শিক রূপান্তরের ঘোষণা, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ধর্মীয় আইন ও নৈতিকতার বিচারে গঠিত সমাজ কাঠামোকে ভেঙে ফেলে একটি সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ “nation-state” কনসেপ্ট প্রতিষ্ঠা করা।
ড. ইউনুসের এজেন্ডা স্পষ্ট: সকল ধর্মীয় আইনকে বাতিল করে, বা অন্ততপক্ষে রাষ্ট্রীয় প্রভাব থেকে আলাদা করে, রাষ্ট্রকে এমন এক কাঠামোতে রূপ দেওয়া—যেখানে “সব নাগরিক সমান” এই অজুহাতে ধর্মীয় বিশ্বাস, বিধান ও নৈতিকতাকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই তথাকথিত সমতা আদতে এক ধরনের জবরদস্তি—যেখানে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমানকেও এমন এক আইনের অধীন হতে হবে, যা তার ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী হতে পারে।
এটি নিছক আইনি সমতা নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ও বিশ্বাসগত সমতা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। যে সমতায় কোনো ব্যক্তি যদি সমকামিতাকে অনৈতিক বলে, তাহলে সে "ঘৃণা ছড়ানো"র অপরাধে অভিযুক্ত হয়। যে সমতায় শরীয়াহ অনুযায়ী নারীর ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে চায়, সে হয়ে যায় পশ্চাৎপদ ও ‘গণতন্ত্রবিরোধী’। এই রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে প্রতিটি নাগরিককে এক কৃত্রিম, ধর্মবিচ্ছিন্ন, মূল্যবোধহীন সমতার কাঠামোয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়—যা আদতে মুসলিম পরিচয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত উপায়।
এই ধারণা—nation-state—যেখানে ধর্মীয় পরিচয় নয়, বরং কাগজে লেখা ‘নাগরিকত্ব’ই একমাত্র পরিচয়, এটা ইসলামের মৌলিক রূপরেখার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইসলাম ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র—সব পর্যায়ে একটি ঈমানভিত্তিক ন্যায়বিচারের কথা বলে, যেখানে আল্লাহর বিধানই সর্বোচ্চ। কিন্তু এই নতুন কাঠামোতে আল্লাহর বিধান নয়, মানুষের বানানো আইনই হবে সর্বোচ্চ মাপকাঠি—সেটি আপনি চান কি না, বিশ্বাস করেন কি না, তা অবান্তর।
ড. ইউনুস সেই পথেই হাঁটছেন—যেখানে ধর্ম থাকবে ব্যক্তিগত কক্ষে, আর রাষ্ট্র চলবে এমন এক নীতিতে, যা ধর্মকে ‘সহনশীলতা’র নামে নিষ্ক্রিয় করে দেবে। এই যে ন্যাশন-স্টেটের পূর্ণ বাস্তবায়ন, তা এক দৃষ্টিতে দেখতে গেলে আধুনিকীকরণ, কিন্তু মূলত এটি ইসলামকে সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত রাখার কৌশলী উপায়। এই বিপজ্জনক রূপান্তর যদি আমরা সময় থাকতে বুঝতে না পারি, তাহলে সেটা ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে, শাসনব্যবস্থা ও রাষ্ট্রকাঠামো সবকিছু আগের মত পূর্ণ সেক্যুলার-লিবারেল ফ্রেমওয়ার্কের হওয়া সত্ত্বেও একটা বিশাল জনগোষ্ঠী এটা নিয়ে পরিতৃপ্ত থাকবে। মডার্ন নেশন স্টেটের প্রতি ব্যপক পরিসরে সম্মতি উৎপাদন হবে।
৫ তারিখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর অনেকেই বলেছেন যে, জিহাদি সংগঠনের কাজ অনেক পিছিয়ে গেছে কারণ হাসিনা এত দিন তাদের শত্রু ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ব্যক্তি হাসিনা আমাদের শত্রু ছিল ঠিক আছে, কিন্তু আমাদের জন্য এর চেয়েও বড় শত্রু ছিল এই nation-state সিস্টেম, ধর্মনিরপেক্ষতা (secularism), গণতন্ত্র (democracy)—এগুলো ছিল এবং এখনও রয়েছে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়।
আমরা জানি, রাজনৈতিক লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে কখনো কখনো আমাদের ভুল হতে পারে, কখনো কখনো মূল লক্ষ্য থেকে কিছুটা বিচ্যুতি ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে দ্রুতই আত্মপর্যালোচনা এবং সংশোধন করে নেওয়া জরুরি। এখন সময় এসেছে, যখন হাসিনা পতনের পর যারা আত্মতৃপ্তির শিকার হয়েছেন তাদের সেই ভুলগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। ইসলামী শরিয়াহ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত যে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারিনি সেটা সবার সামনে পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরতে হবে। আমরা যদি ভুল করি তাহলে আমাদের কাজ হবে ভুল পথ থেকে ফিরে আসা এবং জনগণের সামনে ইসলামী শাসনব্যবস্থার যে বাস্তবতা আছে, তা তুলে ধরা।
প্রথমত, এটা স্পষ্টভাবে বলা দরকার—এই বিপ্লব কোনোভাবেই ইসলামী বিপ্লব নয়। এটিকে ইসলামী মূল্যবোধ, শরীয়াহ বা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শে পরিচালিত কোনো পরিবর্তন বলা যাবে না। বরং এই বিপ্লব একটি ধর্মনিরপেক্ষ, পশ্চিমা ধারায় প্রভাবিত, তথাকথিত উদারপন্থী (liberal) রূপান্তরের অংশ। এখানে ইসলামকে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় মূল্যবোধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কোনো লক্ষণ নেই—বরং রয়েছে ধর্মীয় বিষয়গুলোকে নীরবে কোণঠাসা করে দেওয়ার এক সুপরিকল্পিত ধারা।
দ্বিতীয়ত, যে ব্যক্তি আজ বিপ্লবের ফল ভোগ করছেন, তিনি নিজেই সেই বিপ্লবের সময় দেশে ছিলেন না। ড. ইউনুস সরাসরি বিপ্লবের মাঠে নামেননি, রক্তপাত বা ত্যাগের কোনো অংশে তার সম্পৃক্ততা ছিল না। যিনি বিপ্লবের আগুনে ঘি ঢালেননি, তিনিই আজ বিপ্লবের আগুনে নিজের হাত সেঁকছেন। প্রশ্ন হলো—এই ক্ষমতা কি তার প্রাপ্য ছিল? নাকি তাকে পরিকল্পিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এক “নিরপেক্ষ মুক্তিদাতা” হিসেবে, যাকে সামনে রেখে বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়ন সহজ হয়?
তৃতীয়ত, ড. ইউনুস বহু আগে থেকেই পশ্চিমা লিবারেল শক্তির ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বিশেষ করে মার্কিন ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে তার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তার অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী হলেন হিলারি ক্লিনটন—একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক, যিনি সমকামী বিয়ে ও সম্পর্কের পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলেন। হিলারির মতো একজনের সঙ্গে তার সখ্যতা কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আদর্শিক ঘনিষ্ঠতারও প্রতিচ্ছবি। এখন প্রশ্ন হলো, এমন একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে কি আমরা আমাদের সমাজকে নিরাপদ রাখতে পারবো? যে নিজে ইসলামী আদর্শের পক্ষে অবস্থান নেয় না, বরং এমন শক্তির সাথে যুক্ত, যারা বিশ্বব্যাপী ইসলামী মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিকৃত করতে সচেষ্ট?
এই বাস্তবতা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—এই বিপ্লবের ফসল আসলে কারা ভওগ করছে? জনগণ, না কি একটি বহিরাগত ও আদর্শিক আগ্রাসনের ঝান্ডাবাহী কিছু মানুষ, যাদের মাধ্যমে আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও চিন্তাধারাকে বদলে ফেলার নীরব প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে?
আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের তথাকথিত "মাস্টার স্ট্রোক"—তা হলো ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন’। এই একটি দলিলের মাধ্যমেই সে তার প্রকৃত অভিসন্ধি সামনে এনেছে। এই প্রতিবেদন কেবল কিছু সামাজিক প্রস্তাবনা নয়—এটি মূলত একটি আদর্শিক রূপান্তরের ঘোষণা, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ধর্মীয় আইন ও নৈতিকতার বিচারে গঠিত সমাজ কাঠামোকে ভেঙে ফেলে একটি সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ “nation-state” কনসেপ্ট প্রতিষ্ঠা করা।
ড. ইউনুসের এজেন্ডা স্পষ্ট: সকল ধর্মীয় আইনকে বাতিল করে, বা অন্ততপক্ষে রাষ্ট্রীয় প্রভাব থেকে আলাদা করে, রাষ্ট্রকে এমন এক কাঠামোতে রূপ দেওয়া—যেখানে “সব নাগরিক সমান” এই অজুহাতে ধর্মীয় বিশ্বাস, বিধান ও নৈতিকতাকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই তথাকথিত সমতা আদতে এক ধরনের জবরদস্তি—যেখানে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমানকেও এমন এক আইনের অধীন হতে হবে, যা তার ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী হতে পারে।
এটি নিছক আইনি সমতা নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ও বিশ্বাসগত সমতা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। যে সমতায় কোনো ব্যক্তি যদি সমকামিতাকে অনৈতিক বলে, তাহলে সে "ঘৃণা ছড়ানো"র অপরাধে অভিযুক্ত হয়। যে সমতায় শরীয়াহ অনুযায়ী নারীর ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে চায়, সে হয়ে যায় পশ্চাৎপদ ও ‘গণতন্ত্রবিরোধী’। এই রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে প্রতিটি নাগরিককে এক কৃত্রিম, ধর্মবিচ্ছিন্ন, মূল্যবোধহীন সমতার কাঠামোয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়—যা আদতে মুসলিম পরিচয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত উপায়।
এই ধারণা—nation-state—যেখানে ধর্মীয় পরিচয় নয়, বরং কাগজে লেখা ‘নাগরিকত্ব’ই একমাত্র পরিচয়, এটা ইসলামের মৌলিক রূপরেখার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইসলাম ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র—সব পর্যায়ে একটি ঈমানভিত্তিক ন্যায়বিচারের কথা বলে, যেখানে আল্লাহর বিধানই সর্বোচ্চ। কিন্তু এই নতুন কাঠামোতে আল্লাহর বিধান নয়, মানুষের বানানো আইনই হবে সর্বোচ্চ মাপকাঠি—সেটি আপনি চান কি না, বিশ্বাস করেন কি না, তা অবান্তর।
ড. ইউনুস সেই পথেই হাঁটছেন—যেখানে ধর্ম থাকবে ব্যক্তিগত কক্ষে, আর রাষ্ট্র চলবে এমন এক নীতিতে, যা ধর্মকে ‘সহনশীলতা’র নামে নিষ্ক্রিয় করে দেবে। এই যে ন্যাশন-স্টেটের পূর্ণ বাস্তবায়ন, তা এক দৃষ্টিতে দেখতে গেলে আধুনিকীকরণ, কিন্তু মূলত এটি ইসলামকে সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত রাখার কৌশলী উপায়। এই বিপজ্জনক রূপান্তর যদি আমরা সময় থাকতে বুঝতে না পারি, তাহলে সেটা ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে, শাসনব্যবস্থা ও রাষ্ট্রকাঠামো সবকিছু আগের মত পূর্ণ সেক্যুলার-লিবারেল ফ্রেমওয়ার্কের হওয়া সত্ত্বেও একটা বিশাল জনগোষ্ঠী এটা নিয়ে পরিতৃপ্ত থাকবে। মডার্ন নেশন স্টেটের প্রতি ব্যপক পরিসরে সম্মতি উৎপাদন হবে।
৫ তারিখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর অনেকেই বলেছেন যে, জিহাদি সংগঠনের কাজ অনেক পিছিয়ে গেছে কারণ হাসিনা এত দিন তাদের শত্রু ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ব্যক্তি হাসিনা আমাদের শত্রু ছিল ঠিক আছে, কিন্তু আমাদের জন্য এর চেয়েও বড় শত্রু ছিল এই nation-state সিস্টেম, ধর্মনিরপেক্ষতা (secularism), গণতন্ত্র (democracy)—এগুলো ছিল এবং এখনও রয়েছে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়।
আমরা জানি, রাজনৈতিক লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে কখনো কখনো আমাদের ভুল হতে পারে, কখনো কখনো মূল লক্ষ্য থেকে কিছুটা বিচ্যুতি ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে দ্রুতই আত্মপর্যালোচনা এবং সংশোধন করে নেওয়া জরুরি। এখন সময় এসেছে, যখন হাসিনা পতনের পর যারা আত্মতৃপ্তির শিকার হয়েছেন তাদের সেই ভুলগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। ইসলামী শরিয়াহ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত যে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারিনি সেটা সবার সামনে পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরতে হবে। আমরা যদি ভুল করি তাহলে আমাদের কাজ হবে ভুল পথ থেকে ফিরে আসা এবং জনগণের সামনে ইসলামী শাসনব্যবস্থার যে বাস্তবতা আছে, তা তুলে ধরা।
Comment