১. তালেবান বনাম আল-কায়দা
আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন চলাকালীন সময়ে তালেবান ও আল-কায়দা সম্মিলিতভাবে তাগুত আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। দীর্ঘ বিশ বছরের ব্যর্থ যুদ্ধের পর অবশেষে ২০২১ সালের আগস্টে সুপার পাওয়ার আমেরিকা লেজ গুটিয়ে পলায়ন করে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুসলিম নামধারী লিবার্যাল সেক্যুলাররা তাদের পশ্চিমা আব্বুদের সুরে সুর মিলিয়ে তালেবান ও আল-কায়দা উভয় দলকেই জঙ্গি সংগঠন বলে আখ্যায়িত করত। তাদের বিরুদ্ধে নানা অপবাদ আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে মেতে উঠত। অনেক শায়েখ তো বুঝে কিংবা না বুঝে একথাও বলেছিলেন—‘বিল ক্লিনটন আবিষ্কার করেছে তালেবান, জর্জ ডাব্লিউ বুশ আবিষ্কার করেছে আল কায়দা।’
যাই হোক, অবশেষে আল্লাহ তাআলা আফগান ভূমিতে মুজাহিদের নিরঙ্কুশ বিজয় দান করলেন। আমেরিকাকে অপদস্ত করলেন। তখন সবার সুর পালটে গেল। সবাই বলা শুরু করল—তালেবান ভালো, আফগানি মোল্লারা হিরো, তারা মুক্তিযুদ্ধা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে আল-কায়দা খারাপ। তারা জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি। এরপর থেকে সবাই উঠেপড়ে লাগল এই কথা প্রমাণ করার জন্য যে, তালেবানদের সাথে আল কায়দার কোনো সম্পর্ক নেই। আফগানিস্তানে আল-কায়দা একটি অশুভ ও অনাহুত শক্তি। তারা তালেবানদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে অবস্থান নিয়েছে। মোল্লা উমরের সাথে শায়েখ উসামার নাকি অনেক বিরোধ হয়েছে। যত্তসব হাস্যকর কথাবার্তা!
২. পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বনাম তালেবান
আগ্রাসনের পুরোটা সময়েই মুজাহিদদের বিরুদ্ধে আমেরিকাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে গাদ্দার পাকিস্তান সরকার। তারা মুজাহিদদের পিঠে ছুরি মেরেছে অনবরত। সম্প্রতি তালিবদের সাথে পাকিস্তানি সরকার ও সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর আবারো সেক্যুলাঙ্গারদের স্বর পাল্টে গেছে। এখন তারা তালেবান মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যাচ্ছেতাই অপবাদ আরোপ করা শুরু করেছে। কেননা তারা ‘মহা পবিত্র’ পাকিস্তানি ফৌজের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। পাকিস্তান নাকি তালেবানদের বিজয়ে অনেক সহযোগিতা করেছে। কিন্তু তালেবানরা এই সহযোগিতার বদলা না দিয়ে উলটো গাদ্দারি করছে। সুতরাং তালেবান ইন্ডিয়ার দালাল, খারেজি, মুসলিম উম্মাহ এর শত্রু। আরো কত কি!
৩. জামাত ইসলামি
এবার আরেক ধাপ নিচে আসি। তালেবানদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধায় পাকিস্তানি নাপাক আর্মিদের জন্য মায়াকান্না করা সেক্যুলার গোষ্ঠীর যখন বাংলাদেশের জামাত ইসলামিকে সাইজ করার ইচ্ছা জাগে তখন আবার তারা পাকিস্তান-বিদ্বেষী হয়ে উঠে। একাত্তরের চেতনা জাগিয়ে তুলে পাকিস্তানকে আচ্ছামতো ধোলাই করে। দাড়ি-টুপিওয়ালাদের পাকিস্তানি বলে টিটকারি মারে। সেমিনারে ভাষণ দেয়—আমরা ভারতপন্থি রাজনীতি চাই না, পাকিস্তানপন্থি রাজনীতিও চাই না।
৪. জামাত বনাম তাওহিদবাদী
আবার সেক্যুলাররা যখন কোনো ইস্যুতে বাংলার তাওহিদবাদী আলেম ও দা'ইয়ীদের মুখোমুখি হয় তখন আবার তারা জামায়াত-প্রেমী হয়ে উঠে। তখন তারা বলে—জামাত শিবিরসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক ইসলামি দলগুলো ভালো। তারা বাস্তবতা বুঝে। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়। তবে মানহাজিরা ভালো না। এরা আবেগী ও চরমপন্থি। এদের কারণে বিদেশে (পশ্চিমা আব্বুদের কাছে) বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। সুতরাং এদেরকে দমন করতে হবে। এদের সাথে কোনো ঐক্য হবে না। ঐক্য হবে কেবল এমন ইসলামপন্থীদের সাথে যারা গণতন্ত্রের কথা বলে। যারা স্মার্ট ও আধুনিক। (অর্থাৎ যারা হেকমতের অজুহাতে আল্লাহর কিতাবের উপর গ্লোবাল পলিসিকে প্রাধান্য দেয়।)
এই হলো লর্ড ম্যাকলের সন্তানদের অবস্থা। তারা কখনো ইসলামি অনুশাসন ও মূলধারার মুসলিমদের নামগন্ধও সহ্য করতে পারে না। মাঝে মধ্যে কেবল সুবিধা হাসিলের জন্য স্বর পাল্টিয়ে এক পক্ষের প্রশংসা করে অপরপক্ষকে ঘায়েল করে। প্রয়োজন শেষে সবাইকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে।
৩০ শাউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ