Announcement

Collapse
No announcement yet.

জিব্রাল্টার এখনও আমাদের দিকে চেয়ে আছে—নতুন ইতিহাস লেখার অপেক্ষায়

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • জিব্রাল্টার এখনও আমাদের দিকে চেয়ে আছে—নতুন ইতিহাস লেখার অপেক্ষায়

    "যদি তোমাদেরকে আঘাত স্পর্শ করে, অনুরূপ আঘাত তো অপর পক্ষকেও স্পর্শ করেছিল। (জয়-পরাজয়ের) এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে আবর্তিত করে থাকি যাতে আল্লাহ মু’মিনদেরকে চিনে নিতে পারেন এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন, বস্তুতঃ আল্লাহ যালিমদেরকে ভালবাসেন না।"
    .
    (সূরা আলে ইমরান: ১৪০)
    ...
    ইতিহাস কখনো নিছক স্মৃতির ধূলিধূসর গৌরব নয়; এটি সময়ের নির্মম আয়নায় উদ্ভাসিত এক আত্মপরিচয়ের আর্তনাদ। আধুনিক জীবনের যান্ত্রিক কোলাহল আর প্রযুক্তিনির্ভর বিভোরতায় আমরা এতটাই ডুবে গেছি যে, নিজের ইতিহাস, শেকড় আর আত্মপরিচয়ের স্মৃতিও ক্রমশ মুছে যেতে বসেছে। তবুও, এই কৃত্রিম জীবনের ঠিক মাঝপথেই কখনো কখনো সামনে আসে এক বিস্মৃত অতীত—যেখানে গৌরব ছিল, ছিল সেই হারানো সত্তা, যা একদিন আমাদের সত্যিকারের পরিচয় ছিল।

    যখন যুক্তরাষ্ট্রের B-2 বোমারু বিমান ‘Operation Midnight Hammer’ শেষে জিব্রাল্টার প্রণালী অতিক্রমকালীন সময়ে, পথনির্দেশ পায় সেই সেভিল শহর থেকে—যা একদিন ছিল মুসলিম আন্দালুসের রক্তজাগা রাজধানী। যে প্রণালী একসময় ছিল মুসলিম নৌশক্তির গৌরবময় প্রতীক, আজ তা পরিণত হয়েছে মুসলিম ভূমির বিরুদ্ধে পরিচালিত আগ্রাসনের নির্বাক পথঘাটে। ইতিহাস যেন করুণ এক চিৎকারে প্রতিধ্বনিত হয়, "তোমাদের পরাজয় কখনোই অস্ত্রের ঘাতে নয়, বরং তা আত্মবিস্মৃতি, বিভ্রান্তি এবং আত্মপরিচয়ের চূড়ান্ত ধ্বংসের অমোঘ পরিণতি।"

    জিব্রাল্টার প্রণালী—প্রাকৃতিকভাবে আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরের সংযোগস্থল—তবে এটি শুধু একটি ভৌগোলিক পথ নয়, বরং মুসলিম ইতিহাসের এক মহাকাব্যিক অধ্যায়ের প্রবেশদ্বার। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে এখান দিয়েই উত্তর আফ্রিকা থেকে তারিক ইবনে জিয়াদ পা রাখেন ইউরোপে, শুরু হয় আন্দালুসের সেই বিস্ময়কর অধ্যায়। তাঁর নামেই স্থানটি পরিচিত হয় ‘জাবাল আত-তারিক’—তারিকের পাহাড়—যা রূপান্তরিত হয়ে আজ পরিচিত জিব্রাল্টার প্রণালী নামে।

    এই প্রণালী কেবল একটি সামুদ্রিক রুট ছিল না; এটি ছিল মুসলিম সভ্যাতার উত্থানের সেতুবন্ধ, যেখানে যুগ যুগ ধরে মুসলিমদের নৌবাহিনীর অপ্রতিরোধ্য বহর প্রহরায় থাকত। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকতেন আল-মুরাবিতিন সাম্রাজ্যের সেনানায়ক (আমীর) ইউসুফ বিন তাশফিন, অন্য প্রান্তে কর্ডোভা থেকে সেভিল পর্যন্ত শাসন করতেন উমাইয়া খলিফা আবদুর রহমান—যাঁদের অধীনে গড়ে উঠেছিল এক সোনালি সভ্যতা। শক্তি ও সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের পাশাপাশি এই অঞ্চল ছিল জ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন, চিকিৎসা, ও গণিতের এক আলোকোজ্জ্বল কেন্দ্র।

    ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—কোনো জাতির পতন বাইরের আগ্রাসনে নয়, ঘটে তাদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও আত্মবিচ্যুতিতে। আন্দালুসের মুসলিম রাজ্যগুলো এক সময় নিজেদের স্বার্থে একে অপরের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান বাহিনীকে আমন্ত্রণ জানাতে দ্বিধা করেনি। আজও সেই নিষ্ঠুর পুনরাবৃত্তি চলমান—মুসলিম রাষ্ট্রগুলো পরাশক্তির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, নিজেদের অস্তিত্বের বিনিময়ে সাময়িক প্রভাব কেনার ব্যর্থ প্রয়াসে। আর তাই, যখন সেভিল থেকে আকাশচিরে পথনির্দেশ পাঠানো হয় মুসলিম ভূখণ্ডে বোমাবর্ষণে ব্যবহৃত বোমারু বিমান সমূহের জন্য, তখন তার শব্দ শুধু মাটি কাঁপায় না—তা বিদীর্ণ করে জাতির স্মৃতি, সম্মান আর স্বকীয়তা।
    ...

    “আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরাই তাদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” (সূরা আর-রা’দ: ১১)
    ...
    “তারা কি যমীনে ভ্রমণ করে না? তাহলে তারা হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারত, আর তাদের কান শুনতে পারত।” (আল-হাজ্জ: ৪৬)
    ...
    ইসলাম আমাদের ইতিহাস পাঠে আহ্বান জানায় উপলব্ধির জন্য, কেবল গর্বের জন্য নয়। যদি ইতিহাস পাঠ করে আমরা সত্যকে উপলব্ধি পারি, তবে বুঝবো—আমাদের গৌরব কেবল পরাশক্তির আগ্রাসনে বিলীন হয়নি, তা মুছে গেছে আমাদেরই গাফিলতিতে। আজ আমরা উম্মাহ হলেও উম্মাহর চেতনায় বিভ্রান্ত; রাষ্ট্র হয়েও পরস্পরের সঙ্গবদ্ধতায় ব্যর্থ; মুসলিম হয়েও মুসলিম ভাইয়ের বেদনায় নিঃসঙ্গ, নির্বাক।

    জিব্রাল্টার আজও অবিচল দাঁড়িয়ে—একজন নিঃশব্দ সাক্ষী, এক প্রতিফলক দর্পণ হয়ে—যেখানে ভেসে ওঠে আমাদের অতীতের গৌরব, বর্তমানের বিভ্রান্তি, আর ভবিষ্যতের অনিবার্য প্রশ্ন—আমরা কি কখনো আবার ফিরে পাবো সেই পথ, যে পথ একদা ইতিহাস গড়েছিল?

    আজ মুসলিম ভূখন্ডের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো বোমারু বিমানসমূহকে যখন সেভিল থেকে পথনির্দেশ দেওয়া হয়, তখন জিব্রাল্টার যেন ফিসফিস করে বলে—"তোমরা শুধু ভূখণ্ড হারাওনি, হারিয়েছ আত্মপরিচয়, আত্মমর্যাদা, চেতনা।"

    তবে ইতিহাস কখনো নীরব থাকে না। সে আজও আমাদের আহ্বান জানাচ্ছে, আমাদের রবের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে—“তোমরাই সর্বোত্তম উম্মাত, মানবজাতির (সর্বাত্মক কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভুত করা হয়েছে” (সূরা আলে ইমরান: ১১০)

    এই ডাকে সাড়া দিতে হলে চাই—চেতনার পুনর্জাগরণ, আত্মসমালোচনার শক্তি এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার গভীর উপলব্ধি। আমরা ইতিহাসে গৌরব খুঁজি, কিন্তু ইতিহাস আমাদের সামনে আয়না ধরে রাখে—জিজ্ঞেস করে, “তোমরা এখন কোথায়?” তাই বলি—উঠে দাঁড়াও, উম্মাহ! জিব্রাল্টার এখনও আমাদের দিকে চেয়ে আছে—নতুন ইতিহাস লেখার অপেক্ষায়।

  • #2
    আন্দালুসের মুসলিম রাজ্যগুলো এক সময় নিজেদের স্বার্থে একে অপরের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান বাহিনীকে আমন্ত্রণ জানাতে দ্বিধা করেনি। আজও সেই নিষ্ঠুর পুনরাবৃত্তি চলমান—মুসলিম রাষ্ট্রগুলো পরাশক্তির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, নিজেদের অস্তিত্বের বিনিময়ে সাময়িক প্রভাব কেনার ব্যর্থ প্রয়াসে।
    আল্লাহ রব্বুল আলামিন ইতিহাসের এই পুনরাবৃত্তি বন্ধ করে উম্মাহকে সঠিক পথের উপর এনে দিন

    Comment


    • #3
      বাস্তবতা তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
      এখন আমাদের জন্য করনীয় হলো বারবার চিন্তা ভাবনা করা, কিভাবে নিজেদের ঐক্য তৈরি করা যায়।
      তবে
      ঐক্য তৈরির মানদণ্ড হলো তিনটি

      হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন এক কথার দিকে এসে যাও, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই রকম। (আর তা এই যে,)
      ১) আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না।
      ২)তাঁর সঙ্গে কোনও কিছুকে শরীক করব না

      ৩)এবং আল্লাহকে ছেড়ে আমরা একে অন্যকে ‘রব্ব’ বানাব না।

      আল্লাহ তাআলার উক্ত বাণী
      আল্লাহ তাআলা বলেন
      আলে ইমরান, আয়াতঃ ৬৪

      قُلۡ یٰۤاَہۡلَ الۡکِتٰبِ تَعَالَوۡا اِلٰی کَلِمَۃٍ سَوَآءٍۢ بَیۡنَنَا وَبَیۡنَکُمۡ اَلَّا نَعۡبُدَ اِلَّا اللّٰہَ وَلَا نُشۡرِکَ بِہٖ شَیۡئًا وَّلَا یَتَّخِذَ بَعۡضُنَا بَعۡضًا اَرۡبَابًا مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ ؕ فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَقُوۡلُوا اشۡہَدُوۡا بِاَنَّا مُسۡلِمُوۡنَ

      অর্থঃ
      মুফতী তাকী উসমানী
      (ইয়াহুদী ও নাসারাদের) বলে দাও যে, হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন এক কথার দিকে এসে যাও, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই রকম। (আর তা এই যে,) আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না। তাঁর সঙ্গে কোনও কিছুকে শরীক করব না এবং আল্লাহকে ছেড়ে আমরা একে অন্যকে ‘রব্ব’ বানাব না। তথাপি যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলে দাও, সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম।

      মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
      বলুনঃ ‘হে আহলে-কিতাবগণ! একটি বিষয়ের দিকে আস-যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান-যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না। তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও যে, ‘সাক্ষী থাক আমরা তো অনুগত।

      ইসলামিক ফাউন্ডেশন
      তুমি বল, ‘হে কিতাবীগণ ! আস সে কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে এক; যেন আমরা আল্লাহ্ ব্যতীত কারও ‘ইবাদত না করি, কোন কিছুকেই তাঁর শরীক না করি আর আমাদের কেউ কাউকেও আল্লাহ্ ব্যতীত রব হিসেবে গ্রহণ না করে।’ যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল, ‘তোমরা সাক্ষী থাক, অবশ্যই আমরা মুসলিম।’

      ---------------------



      ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—কোনো জাতির পতন বাইরের আগ্রাসনে নয়, ঘটে তাদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও আত্মবিচ্যুতিতে। আন্দালুসের মুসলিম রাজ্যগুলো এক সময় নিজেদের স্বার্থে একে অপরের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান বাহিনীকে আমন্ত্রণ জানাতে দ্বিধা করেনি। আজও সেই নিষ্ঠুর পুনরাবৃত্তি চলমান—মুসলিম রাষ্ট্রগুলো পরাশক্তির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, নিজেদের অস্তিত্বের বিনিময়ে সাময়িক প্রভাব কেনার ব্যর্থ প্রয়াসে।

      Comment

      Working...
      X