অনেক লিবারেল এবং বামপন্থী পর্যবেক্ষক এক ধরনের ভুল ধারণা প্রচার করেন যে, একজন খলিফা ও একজন স্বৈরশাসক (ডিক্টেটর) একই চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে বাস্তবতায় এ দুটি পরিভাষার মধ্যে মৌলিক তফাৎ বিদ্যমান।
একজন স্বৈরশাসক তখনই স্বৈরশাসক হয়ে ওঠেন যখন সে নিজেকে সকল ধরণের নিয়ন্ত্রণ, সীমাবদ্ধতা ও জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত বলে মনে করে; এমন এক ব্যক্তি যিনি আইন ও জনমতের কাছে দায়বদ্ধ না থেকে এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। তার ক্ষমতা সীমাহীন, আর সে কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহিতা করেনা। এ অবস্থায় রাষ্ট্রব্যবস্থা একটি ব্যক্তিগত সাম্রাজ্যের রূপ নেয়, যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচার ধ্বংস হয়।
অন্যদিকে একজন খলিফা বা আমিরুল মুমিনের চরিত্র, দায়িত্ব ও ক্ষমতার ধারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন। একজন খলিফা বিশ্বাস করেন যে তার শাসনের উৎস একমাত্র আল্লাহতায়ালা। কারণ তিনি সুস্পষ্টভাবে জানেন, তাঁর উপর এমন এক সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ রয়েছেন যিনি সকল ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক, সকল সম্মান ও মর্যাদার উৎস—তিনি হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা। তাঁর কাছে প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি কার্যক্রম, এমনকি অন্তরের অভিপ্রায় সম্পর্কেও চূড়ান্ত জবাবদিহি করতে হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে একজন খলিফা কখনোই নিজের ওপর আইনের সীমাবদ্ধতা অগ্রাহ্য করেন না, বরং তিনি নিজেকে আল্লাহর আইন, কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে পরিচালিত একটি শাসনব্যবস্থার পরিবেশক মনে করেন।
এ কারণে, খলিফার দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে বিচারব্যবস্থার স্বতন্ত্রতা ও স্বাধীনতা রক্ষা করা। ফলে তিনি বিচারকার্যে নিজের ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকেন এবং তা অর্পণ করেন শরীয়তজ্ঞ আলেম, প্রজ্ঞাবান উলামা এবং স্বাধীন বিচারক বা কাজীদের হাতে। কেননা ইসলামী শাসনব্যবস্থায় বিচারিক কর্তৃত্ব খলিফার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল নয়; বরং তা ভিত্তিশীল থাকে কুরআন, সুন্নাহ এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার শাশ্বত নীতিমালার উপর।
এই তাকওয়াই তাকে উদ্বুদ্ধ করে সমাজে নীতি, নৈতিকতা, ইনসাফ ও এহসানের পরিবেশ গড়ে তুলতে। তিনি জানেন, খলাফতের মর্যাদা একটি দাওয়াতি ও নৈতিক দায়িত্ব—যা কেবল আইন প্রয়োগ নয়, বরং মানবিক মর্যাদা রক্ষা, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার সম্পর্ক গড়ে তোলার এক মহাসংগ্রাম।
আরও বিশেষত্ব হলো, একজন খলিফার কাজ কেবল শাসন ও আইন প্রয়োগ নয়, বরং তিনি দুর্বল ও দুঃস্থদের রক্ষা, তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম এবং প্রয়োজন হলে যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত থাকেন।
অতএব, একজন খলিফা কখনোই ডিক্টেটর হতে পারেন না, কারণ তার ক্ষমতা আল্লাহর ন্যায়বিচার ও বিধানের প্রতি জবাবদিহিতার ওপর ভিত্তি করে আবদ্ধ। তিনি মুসলিম উম্মার রক্ষক ও অভিভাবক, যিনি সারাদিন রাখালের মত কঠোর পরিশ্রমে সবাইকে নিরাপদ, ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল রাখার জন্য দায়িত্বরত।
সুতরাং, একটি ইসলামিক শাসনব্যবস্থার ভিত্তিতে খলিফার ধারণা ও স্বৈরশাসকের ধারণার মধ্যে প্রকৃত পার্থক্য অনুধাবন করা অত্যন্ত জরুরি। যেখানে ডিক্টেটর তামাশা করে ক্ষমতার অপব্যবহার, সেখানে খলিফা তার দায়িত্বের পবিত্রতা উপলব্ধি করে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডিক্টেটর ও খলিফার তুলনা করা একটি মৌলিক ত্রুটি এবং এটি মুসলিম শাসনব্যবস্থার প্রকৃত অর্থ ও গুরুত্বকে বিকৃত করে।
একজন স্বৈরশাসক তখনই স্বৈরশাসক হয়ে ওঠেন যখন সে নিজেকে সকল ধরণের নিয়ন্ত্রণ, সীমাবদ্ধতা ও জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত বলে মনে করে; এমন এক ব্যক্তি যিনি আইন ও জনমতের কাছে দায়বদ্ধ না থেকে এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। তার ক্ষমতা সীমাহীন, আর সে কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহিতা করেনা। এ অবস্থায় রাষ্ট্রব্যবস্থা একটি ব্যক্তিগত সাম্রাজ্যের রূপ নেয়, যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচার ধ্বংস হয়।
অন্যদিকে একজন খলিফা বা আমিরুল মুমিনের চরিত্র, দায়িত্ব ও ক্ষমতার ধারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন। একজন খলিফা বিশ্বাস করেন যে তার শাসনের উৎস একমাত্র আল্লাহতায়ালা। কারণ তিনি সুস্পষ্টভাবে জানেন, তাঁর উপর এমন এক সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ রয়েছেন যিনি সকল ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক, সকল সম্মান ও মর্যাদার উৎস—তিনি হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা। তাঁর কাছে প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি কার্যক্রম, এমনকি অন্তরের অভিপ্রায় সম্পর্কেও চূড়ান্ত জবাবদিহি করতে হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে একজন খলিফা কখনোই নিজের ওপর আইনের সীমাবদ্ধতা অগ্রাহ্য করেন না, বরং তিনি নিজেকে আল্লাহর আইন, কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে পরিচালিত একটি শাসনব্যবস্থার পরিবেশক মনে করেন।
এ কারণে, খলিফার দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে বিচারব্যবস্থার স্বতন্ত্রতা ও স্বাধীনতা রক্ষা করা। ফলে তিনি বিচারকার্যে নিজের ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকেন এবং তা অর্পণ করেন শরীয়তজ্ঞ আলেম, প্রজ্ঞাবান উলামা এবং স্বাধীন বিচারক বা কাজীদের হাতে। কেননা ইসলামী শাসনব্যবস্থায় বিচারিক কর্তৃত্ব খলিফার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল নয়; বরং তা ভিত্তিশীল থাকে কুরআন, সুন্নাহ এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার শাশ্বত নীতিমালার উপর।
এই তাকওয়াই তাকে উদ্বুদ্ধ করে সমাজে নীতি, নৈতিকতা, ইনসাফ ও এহসানের পরিবেশ গড়ে তুলতে। তিনি জানেন, খলাফতের মর্যাদা একটি দাওয়াতি ও নৈতিক দায়িত্ব—যা কেবল আইন প্রয়োগ নয়, বরং মানবিক মর্যাদা রক্ষা, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার সম্পর্ক গড়ে তোলার এক মহাসংগ্রাম।
আরও বিশেষত্ব হলো, একজন খলিফার কাজ কেবল শাসন ও আইন প্রয়োগ নয়, বরং তিনি দুর্বল ও দুঃস্থদের রক্ষা, তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম এবং প্রয়োজন হলে যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত থাকেন।
অতএব, একজন খলিফা কখনোই ডিক্টেটর হতে পারেন না, কারণ তার ক্ষমতা আল্লাহর ন্যায়বিচার ও বিধানের প্রতি জবাবদিহিতার ওপর ভিত্তি করে আবদ্ধ। তিনি মুসলিম উম্মার রক্ষক ও অভিভাবক, যিনি সারাদিন রাখালের মত কঠোর পরিশ্রমে সবাইকে নিরাপদ, ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল রাখার জন্য দায়িত্বরত।
সুতরাং, একটি ইসলামিক শাসনব্যবস্থার ভিত্তিতে খলিফার ধারণা ও স্বৈরশাসকের ধারণার মধ্যে প্রকৃত পার্থক্য অনুধাবন করা অত্যন্ত জরুরি। যেখানে ডিক্টেটর তামাশা করে ক্ষমতার অপব্যবহার, সেখানে খলিফা তার দায়িত্বের পবিত্রতা উপলব্ধি করে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ডিক্টেটর ও খলিফার তুলনা করা একটি মৌলিক ত্রুটি এবং এটি মুসলিম শাসনব্যবস্থার প্রকৃত অর্থ ও গুরুত্বকে বিকৃত করে।
Comment