যুদ্ধ মানব ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ; তবে, যদি আমরা ইতিহাস পর্যালোচনা করি—তাহলে দেখব, যুদ্ধের ধরন সব সময় একইরকম ছিল না। সময়ের পরিবর্তনে যুদ্ধ যেমন প্রযুক্তিগত ও সাংগঠনিকভাবে উন্নত হয়েছে, তেমনি বদলেছে যুদ্ধের উদ্দেশ্য, পক্ষ এবং নৈতিক কাঠামোও।
বিগত তিন শতকের যুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অধিকাংশ যুদ্ধই ঘটেছে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সংঘর্ষ হিসেবে। ফলে মানুষের চিন্তায় যুদ্ধ বলতে যা গেঁথে আছে, তা হলো—এক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরেক রাষ্ট্রের লড়াই। কিন্তু একবিংশ শতকে এসে যুদ্ধের এই চেনা ছবিটা বদলে গেছে। এখন যুদ্ধের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রবহির্ভূত শক্তি—অর্থাৎ, যুদ্ধের চরিত্র এখন আর শুধু রাষ্ট্রীয় নয়, বরং অনেক বেশি জটিল, বিভ্রান্তিকর ও বহুমাত্রিক। আর এই নতুন যুদ্ধধারাকে বলা হয় চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ (Fourth Generation Warfare – 4GW)।
অনেকের কাছে মনে হতে পারে, চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ হয়তো যুদ্ধের সম্পূর্ণ নতুন এক ধরন, কিন্তু আদতে তা না; ধারণাগত দিক থেকে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ বলতে যেরকম যুদ্ধকে বোঝানো হয়, সেরকম যুদ্ধ ইতিহাসে এর আগেও সংঘটিত হয়েছে। পার্থক্য শুধু ফলিত দিকে; অর্থাৎ, ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে (উদাহরণস্বরপ - অস্ত্র এবং এর প্রয়োগ)।
আধুনিক যুদ্ধের সূচনা হয় (ধরা হয়) ১৬৪৮ সালের ওয়েস্টফালিয়া শান্তিচুক্তির মাধ্যমে, যা দীর্ঘ ত্রিশ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটায়। এই চুক্তির সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল যুদ্ধের ওপর রাষ্ট্রের একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এর ফলে যুদ্ধ হয়ে ওঠে একটি কাঠামোবদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ড—যার উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রের সীমানা, নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষা। ওয়েস্টফালিয়ার পরবর্তী প্রায় ৩৫০ বছরজুড়ে যুদ্ধ মানেই ছিল এক রাষ্ট্রের বাহিনীর সঙ্গে আরেক রাষ্ট্রের বাহিনীর সংঘর্ষ।
তবে যুদ্ধের এই রাষ্ট্রকেন্দ্রিক কাঠামোই ইতিহাসের একমাত্র ধারা ছিল না, সময়ের পরিক্রমায় যুদ্ধের ধরনে বিচিত্র ধরনের পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। যেমন, ওয়েস্টফালিয়ার পূর্ববর্তী যুগে যুদ্ধ ছিল অনেক বেশি বিচিত্র ও বহুমাত্রিক। সে সময় যুদ্ধ করত জাতিগোষ্ঠী, উপজাতি এমনকি ব্যবসায়ী শক্তি। যুদ্ধের উদ্দেশ্যও ছিল নানা রকম—ক্ষমতা দখল, সম্পদ লুণ্ঠন কিংবা নিছক প্রতিশোধ। এসব সংঘর্ষে অংশগ্রহণকারী শক্তিগুলো কোনো কাঠামো মানত না। ফলে যুদ্ধের সীমানা, নিয়ম কিংবা নৈতিকতা ছিল অস্পষ্ট ও অস্থির।
আজকের চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধের বাস্তবতায় আমরা যেন ইতিহাসের সেই পুরনো পর্যায়ে ফিরে যাচ্ছি, যেন আবার ফিরে যাচ্ছে সেই প্রাক-ওয়েস্টফালিয়ান যুগে—যেখানে যুদ্ধ কেবল রাষ্ট্রের আওতাধীন বিষয় ছিল না, যেখানে রাষ্ট্র ছাড়াও নানা ধরনের শক্তি যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হচ্ছে। ফলে যুদ্ধের ধরন হয়ে উঠছে আগের মতোই জটিল, অস্থির ও বহুমুখী।
আমার মতে, যুদ্ধের ময়দানে রাষ্ট্রের এরকম গৌণ চরিত্রে পরিণত হয়ে যাওয়ার পিছেনে মূল কারণ হলো রাষ্ট্রের আদর্শিক পতন। যদিও আলাদা করে আদর্শিক পতন ঘটার কোনো অর্থ নেই; কেননা, এই আদর্শটাই তো বিকৃত আদর্শ। এর পাশাপাশি আরেকটা কারণ দ্বায়ী সেটা হলো, নিওকলোনিয়ালিজম। মূলত রাষ্ট্রের বিকৃত আদর্শ ও নিওকলোনিয়ালিজম একটা আরেকটার পরিপূরক। আর এসব কিছুর সমন্বিত ফলাফল হলো রাষ্ট্রের যুদ্ধক্ষমতা হারিয়ে যাওয়া।
যে কারণে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত হোক কিংবা ভারত-পাকিস্তান সংঘাত; উভয় ক্ষেত্রেই এই উত্তেজনা সংঘাত থাকাকালীন সময়েই সীজফায়ারের আওতায় আসতে বাধ্য, এই উত্তেজনা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ানোর সক্ষমতা রাখে না।
ইরান-ইসরায়েল এবং ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ মুজাহিদদের খুব তুচ্ছতাচ্ছিল্য, বদনাম, ট্রল করলো। বাস্তবতা হচ্ছে এমনটা হওয়ারই ছিলো, আর সেজন্যই ঐ অগ্রগামী বাহিনীর একটা বিশেষ গুণ হলো তারা নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করেন না। যারা সমালোচনা করেছে তাদের অধিকাংশই না বুঝে সমালোচনা করেছে আর কিছু মানুষ সমালোচনা করেছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে আমরা অনেক নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হয়েছি; তার মধ্যে একটা হলো "ট্রেন্ড" বা "ট্রেন্ডিং"। এই শব্দের অর্থ আপনারা ভালো মতোই জানেন, তো বলুন তো—যুদ্ধের কোন ধরন এখন ট্রেন্ডিং এ আছে? আর কার সেই ট্রেন্ডকে ফলো করছে?
বিগত তিন শতকের যুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অধিকাংশ যুদ্ধই ঘটেছে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সংঘর্ষ হিসেবে। ফলে মানুষের চিন্তায় যুদ্ধ বলতে যা গেঁথে আছে, তা হলো—এক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরেক রাষ্ট্রের লড়াই। কিন্তু একবিংশ শতকে এসে যুদ্ধের এই চেনা ছবিটা বদলে গেছে। এখন যুদ্ধের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রবহির্ভূত শক্তি—অর্থাৎ, যুদ্ধের চরিত্র এখন আর শুধু রাষ্ট্রীয় নয়, বরং অনেক বেশি জটিল, বিভ্রান্তিকর ও বহুমাত্রিক। আর এই নতুন যুদ্ধধারাকে বলা হয় চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ (Fourth Generation Warfare – 4GW)।
অনেকের কাছে মনে হতে পারে, চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ হয়তো যুদ্ধের সম্পূর্ণ নতুন এক ধরন, কিন্তু আদতে তা না; ধারণাগত দিক থেকে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ বলতে যেরকম যুদ্ধকে বোঝানো হয়, সেরকম যুদ্ধ ইতিহাসে এর আগেও সংঘটিত হয়েছে। পার্থক্য শুধু ফলিত দিকে; অর্থাৎ, ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে (উদাহরণস্বরপ - অস্ত্র এবং এর প্রয়োগ)।
আধুনিক যুদ্ধের সূচনা হয় (ধরা হয়) ১৬৪৮ সালের ওয়েস্টফালিয়া শান্তিচুক্তির মাধ্যমে, যা দীর্ঘ ত্রিশ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটায়। এই চুক্তির সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল যুদ্ধের ওপর রাষ্ট্রের একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এর ফলে যুদ্ধ হয়ে ওঠে একটি কাঠামোবদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ড—যার উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রের সীমানা, নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষা। ওয়েস্টফালিয়ার পরবর্তী প্রায় ৩৫০ বছরজুড়ে যুদ্ধ মানেই ছিল এক রাষ্ট্রের বাহিনীর সঙ্গে আরেক রাষ্ট্রের বাহিনীর সংঘর্ষ।
তবে যুদ্ধের এই রাষ্ট্রকেন্দ্রিক কাঠামোই ইতিহাসের একমাত্র ধারা ছিল না, সময়ের পরিক্রমায় যুদ্ধের ধরনে বিচিত্র ধরনের পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। যেমন, ওয়েস্টফালিয়ার পূর্ববর্তী যুগে যুদ্ধ ছিল অনেক বেশি বিচিত্র ও বহুমাত্রিক। সে সময় যুদ্ধ করত জাতিগোষ্ঠী, উপজাতি এমনকি ব্যবসায়ী শক্তি। যুদ্ধের উদ্দেশ্যও ছিল নানা রকম—ক্ষমতা দখল, সম্পদ লুণ্ঠন কিংবা নিছক প্রতিশোধ। এসব সংঘর্ষে অংশগ্রহণকারী শক্তিগুলো কোনো কাঠামো মানত না। ফলে যুদ্ধের সীমানা, নিয়ম কিংবা নৈতিকতা ছিল অস্পষ্ট ও অস্থির।
আজকের চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধের বাস্তবতায় আমরা যেন ইতিহাসের সেই পুরনো পর্যায়ে ফিরে যাচ্ছি, যেন আবার ফিরে যাচ্ছে সেই প্রাক-ওয়েস্টফালিয়ান যুগে—যেখানে যুদ্ধ কেবল রাষ্ট্রের আওতাধীন বিষয় ছিল না, যেখানে রাষ্ট্র ছাড়াও নানা ধরনের শক্তি যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হচ্ছে। ফলে যুদ্ধের ধরন হয়ে উঠছে আগের মতোই জটিল, অস্থির ও বহুমুখী।
আমার মতে, যুদ্ধের ময়দানে রাষ্ট্রের এরকম গৌণ চরিত্রে পরিণত হয়ে যাওয়ার পিছেনে মূল কারণ হলো রাষ্ট্রের আদর্শিক পতন। যদিও আলাদা করে আদর্শিক পতন ঘটার কোনো অর্থ নেই; কেননা, এই আদর্শটাই তো বিকৃত আদর্শ। এর পাশাপাশি আরেকটা কারণ দ্বায়ী সেটা হলো, নিওকলোনিয়ালিজম। মূলত রাষ্ট্রের বিকৃত আদর্শ ও নিওকলোনিয়ালিজম একটা আরেকটার পরিপূরক। আর এসব কিছুর সমন্বিত ফলাফল হলো রাষ্ট্রের যুদ্ধক্ষমতা হারিয়ে যাওয়া।
যে কারণে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত হোক কিংবা ভারত-পাকিস্তান সংঘাত; উভয় ক্ষেত্রেই এই উত্তেজনা সংঘাত থাকাকালীন সময়েই সীজফায়ারের আওতায় আসতে বাধ্য, এই উত্তেজনা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ানোর সক্ষমতা রাখে না।
ইরান-ইসরায়েল এবং ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ মুজাহিদদের খুব তুচ্ছতাচ্ছিল্য, বদনাম, ট্রল করলো। বাস্তবতা হচ্ছে এমনটা হওয়ারই ছিলো, আর সেজন্যই ঐ অগ্রগামী বাহিনীর একটা বিশেষ গুণ হলো তারা নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করেন না। যারা সমালোচনা করেছে তাদের অধিকাংশই না বুঝে সমালোচনা করেছে আর কিছু মানুষ সমালোচনা করেছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে আমরা অনেক নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হয়েছি; তার মধ্যে একটা হলো "ট্রেন্ড" বা "ট্রেন্ডিং"। এই শব্দের অর্থ আপনারা ভালো মতোই জানেন, তো বলুন তো—যুদ্ধের কোন ধরন এখন ট্রেন্ডিং এ আছে? আর কার সেই ট্রেন্ডকে ফলো করছে?
Comment