الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على رسوله الكريم، وعلى آل وصحبه أجمعين، ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين۔
ধরুন, আব্দুল্লাহ সাহেবকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে তারই প্রতিবেশী আবদুর রহমান। ঘটনাটি পরিষ্কার: একজন নিরপরাধ মানুষ নিহত হয়েছেন, আরেকজন তাকে হত্যা করেছে। স্বাভাবিকভাবে, ইসলামি শরিয়া অনুসারে এই মামলা শরিয়া আদালতে গড়ায়। সেখানে তদন্ত-সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যদি অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে কেসটি কিসাস বা শরয়ী মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত গড়াতে পারে। শরিয়া আদালত আবদুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দিলো এবং তা কার্যকর হলো। ব্যস, বিষয়টা এখানেই শেষ।
কিন্তু এই দৃশ্যটি এখনকার লিবারেল সমাজের চোখে এক প্রকারের ‘বর্বরতা’। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলবে—“এটা কি কোনও সভ্য সমাজে সম্ভব?” কিংবা “এটা তো মধ্যযুগীয় বর্বরতা!” তারা চোখ বন্ধ করে পাশ্চাত্যের আইনকে ‘আদর্শ’ ধরে নেয় আর ইসলামী শরিয়াকে সন্দেহের চশমায় দেখে। অথচ সেই লিবারেল দৃষ্টিভঙ্গির রঙিন মোড়কের নিচে যে কতটা নির্মমতা লুকিয়ে আছে—তাদের হিমশীতল মানবতা কি সেটা দেখে?
আসুন, এখনকার ‘সভ্য’ বিচার ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র দেখি।
আবদুর রহমান যদি আজকের সেক্যুলার ব্যবস্থায় একই অপরাধ করতো, তাহলে সে জেলখানায় বন্দি হতো। বিচার শুরু হতে হতে দুই বছর, নিম্ন আদালতে ফাঁসির রায় আসতে পাঁচ বছর। এরপর হাইকোর্টে আপিল—নতুন করে শুরু কাগজপত্র, টাকা, সময়। জেলখানার খরচ, কোর্ট-কাছারি, উকিলের ফি, জামিনের চেষ্টা—এসবের পেছনে খরচ হবে হাজার হাজার টাকা। সেই টাকা আসবে কোথা থেকে? খুনির পরিবার থেকে। এভাবেই বিচার চলতে চলতে বছরের পর বছর পার হয়ে যাবে। আর এই দীর্ঘসূত্রিতা পরিবারটিকে করে ফেলবে নিঃস্ব, রিক্ত, বিধ্বস্ত। শুধু খুন হওয়া পরিবারের নয়, খুনির পরিবারেরও জীবন হয়ে যাবে বিভীষিকাময়।
বোনেরা স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির অপমান এড়াতে ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবে, বাবা-মা এক সময় নীরব কাঁদবে, পরিবার ভেঙে পড়বে। বিচার মিলবে কিনা, তাও অনিশ্চিত। বছরের পর বছর ধরে শুধু মামলা চালানো আর মুক্তির আশায় বুক বাঁধা—এটাই হয়ে দাঁড়াবে পরিবারটির জীবনের নিয়তি।
এই কি সভ্যতা?
ইসলাম কি করে? সে অপরাধ প্রমাণ হলে সোজা সোজি বিচার দেয়। এক হাত, এক রায়, এক সমাধান। অপরাধীর শাস্তি, অপরাধীর জন্যই। তার পরিবার যেন পুনরায় একজনের গুনাহে চিরতরে ধ্বংস না হয়। এখানেই তো মানবতা। এখানে প্রতিশোধ নয়, আছে ন্যায়বিচার। আর পাশ্চাত্য ব্যবস্থা? সেটি শাস্তি না দিয়ে দেয় এক দীর্ঘ, অমানবিক, ব্যয়বহুল ট্রমা, যা পরিবারকে গিলে খায়।
ব্রিটিশরা যখন আমাদের সমাজে এই আইন চাপিয়ে দিল, তখন তাদের উদ্দেশ্য একটাই ছিল—শাসন করা, প্রতিরোধ দমন করা, ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা। বিচার এমনই দীর্ঘ, এমনই জটিল করো যাতে জনগণ রাজা বা শাসকের বিরুদ্ধে মুখ না তোলে। খুনির পরিবারও যাতে দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে—“দেখো, কী ভয়ঙ্কর শাস্তি অপেক্ষা করছে!”
আজও সেই আইন, সেই কোর্ট, সেই কাঠামো আমরা চোখে চোখ রেখে মেনে চলছি। আর আমরা গর্ব করে বলছি—“এই তো মানবতা!” অথচ, এই মানবতার নিচে কত মা-বাবার দীর্ঘশ্বাস চাপা পড়ে আছে, কত ভাই বোন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, কত পরিবার রাস্তায় নেমেছে।
এখন বলুন—নির্মমতা আসলে কোথায়?
যেখানে বিচার দ্রুত, সংক্ষিপ্ত, ন্যায়নিষ্ঠ এবং পরিবার ধ্বংস হয় না—না অপরাধীর, না নিহতের—সেই ব্যবস্থা বর্বর?
না যে ব্যবস্থায় একটি গোনাহ পরিবারের শতাধিক সদস্যের জীবনের গতি স্তব্ধ করে দেয়, বছরের পর বছর?
বর্বরতা যদি কিছু থাকে, তবে তা ইসলামের শাস্তিতে নয়। বর্বরতা হলো সেই কাঠামো, যেখানে ন্যায়বিচারকে এমন দুর্লভ করে তোলা হয় যে, মানুষ ধৈর্য হারিয়ে নিজ হাতে বিচার করতে বাধ্য হয়।
আর আমরা—তথাকথিত শিক্ষিত মুসলিমরা—তাদের কাছ থেকেই মানবতা শিখতে চাই?
আসুন, চোখ মেলি। ভাবি। প্রশ্ন করি—এই বিচারব্যবস্থা কার জন্য, কাদের স্বার্থে, এবং আমাদের কী মূল্য দিয়ে তা বহন করতে হচ্ছে?