"হক্ক দল" যাচাইয়ের কষ্টিপাথর।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার যিনি সকল জগতের পালনকর্তা। শান্তি ও দরুদ বর্ষিত হোক সেই নবীর প্রতি, যিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমতরূপে প্রেরিত হয়েছেন—আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর পরিবার ও সমস্ত সাহাবায়ে কিরামের ওপর।
আমাদের মাদখালীরা একটা হাদীস দিয়ে নিজেদেরকে নবী (ﷺ) এর বলা সেই হক্ক দল দাবী করেন। হাদীসটা, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন,-
لاَ تَزَالُ طَائِـفَةٌ مِنْ أُمَّتِى ظَاهِرِيْنَ عَلَى الْحَقِّ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِىَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَالِكَ-
‘চিরদিন আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল হক-এর উপরে বিজয়ী থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা ঐভাবে থাকবে’।এখানে ‘বিজয়ী’ অর্থ আখেরাতে বিজয়ী। এটা একটা ব্যাপক হাদীস। অন্যন্য হাদীস এবং ইমামদের বক্তব্য আনলে অর্থ দাড়ায় — যারা প্রথম যুগের আকিদা মানহাজের উপরে আছেন তারাই হক্ক। তারা বাতিলের বিরুদ্ধে থাকবেন। এদের মধ্যে আহলুল হাদীস অর্থাৎ হাদীস বিশারদ উম্মতের মুহাদ্দীসীন, আলিমটাও অন্তর্ভুক্ত। এটা সকলেই জানেন। সকলেই নিজেদের তাই মনে করেন। চাইলে দাবীর বিপক্ষে অনেক পয়েন্ট এনে আলোচনা করা যাবে। তবে চলুন তাদের এই দাবীর কেবল একটা স্পেসেফিক আমলি পয়েন্টে বাস্তবতা যাচাই করি।
আর নবী (ﷺ) কেবল তাদের দেয়া এই এক হাদীসই বলেননি। আরো হাদীস আছে। জাবির ইবন সামুরা (রাঃ) সূত্র থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,
“لن يبرح هذا الدين قائما يقاتل عليه عصابة من المسلمين حتى تقوم الساعة”
এ দ্বীন (ইসলাম) সর্বদা কায়েম থাকবে। মুসলমানদের একটি দল এর পক্ষে (ক্বিতাল) লড়তে থাকবে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত। (সহিহ মুসলিম ৪৮৪৭, মান: সহিহ) ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
لا تزال طائفة من أمتي يقاتلون على الحق ظاهرين على من ناوأهم حتى يقاتل آخرهم المسيح الدجال ” . আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা সত্যের পক্ষে ক্বিতাল করতে থাকবে এবং তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হবে। অবশেষে তাদের সর্বশেষ দলটি ঈসা (আঃ) এর নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে ক্বিতাল করবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৪৮৪, মান: সহিহ) এসকল হাদীসে ক্বিতাল শব্দ এসেছে।
ক্বিতাল বলা হয় জিহাদের মারামারি করার পার্টটুকু। যেখানে কতল করা হয়, নিজেও শহীদ হওয়া হয়। আশা করছি ব্যাখ্যা করারও প্রয়োজন হবে না। সুস্পষ্ট। তাহলে যারা তাদের মানহাজে ক্বিতালকে জায়গা দেয়নি। যারা জিহাদ এবং মুজাহীদদের কথা শুনলেই কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষন না শুনে কপাল কুচকে সরাসরি খারেজি বলে! অবৈধ শর্ত দিয়ে যে কোন উপায়ে এ থেকে দূরে থাকতে চায়! যারা বর্তমানে জিদাদ ফরজে আইন হওয়াকে অস্বীকার করে! এরা যদি এসে দাবী করে সেই হক্ক দল তারা এটা কি হাস্যকর দাবী নয়? হাদীস থেকে জানা যায় শেষ জামানার দিকে মুসলিমরা প্রচুর দলে বিভক্ত হবে এবং এর মধ্যেও একটি দল হক্কের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। — তিরমিজি, হাসান।
আল্লাহ আমাদেরকে মৌলিক কিছু বিষয় জানিয়ে দিচ্ছেন যা দ্বারা খুব সহজেই আমরা হক্ক-নাহক্ক পার্থক্য করতে পারবো, যাচাই করতে পারবো কারা হক্ক পথে আছে। যখনই কেও নিজেকে সহীহ হওয়ার ভান্ডার বলে দাবী করবে আমরা এই লিটমাস পেপার দিয়ে আগে চেক করবো তার দাবীতে সে কতটা সত্যবাদী,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مَن
يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِۦ فَسَوْفَ يَأْتِى ٱللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُۥٓ أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلْكَٰفِرِينَ يُجَٰهِدُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَآئِمٍۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ ٱللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ
“হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দীন থেকে ফিরে যাবে তাহলে অচিরেই আল্লাহ এমন কওমকে আনবেন,
১) যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং
২) তারা তাঁকে ভালবাসবে।
৩) তারা মুমিনদের উপর বিনম্র এবং
৪) কাফিরদের উপর কঠোর হবে।
৫) আল্লাহর রাস্তায় তারা জিহাদ করবে এবং
৬) কোন কটাক্ষকারীর কটাক্ষকে ভয় করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” (সূরা মায়িদাহ্ ০৫:৫৪)
এ আয়াতটি হক্ক যাচাইয়ের কষ্টিপাথর। একটু মনোযোগী হয়ে খেয়াল করুন। আল্লাহ এই আয়াতে প্রথমে বলেছেন যদি আপনি হক্ক পথ থেকে সরে যান অর্থাৎ বেহক্ক হয়ে যান তবে তিনি হক্ক কাওকে আনবেন যার মধ্যে এই ৬টি গুন থাকবে। এবং আল্লাহ বলছেন- এটি আল্লাহর অনুগ্রহ তিনি যাকে ইচ্ছা হক্ক পথে পরিচালিত করেন। অর্থাৎ হক্ক জামাতের মাঝে অবশ্যই এ ৬ টি বৈশিষ্ট্য থাকবে। ঐ জামাত অবশ্যই জিহাদ ক্বিতালের পক্ষে থাকবে।
হাদীসেও এমনটা আছে। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “
لا تزال طائفة من أمتي يقاتلون على الحق ظاهرين إلى يوم القيامة — قال — فينزل عيسى ابن مريم صلى الله عليه وسلم فيقول أميرهم تعال صل لنا . فيقول لا . إن بعضكم على بعض أمراء . تكرمة الله هذه الأمة ” কিয়ামাত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একদল সত্য দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে ক্বিতাল করতে থাকবে এবং অবশেষে ‘ঈসা (‘আঃ) অবতরণ করবেন। মুসলিমদের আমীর বলবেন, আসুন সালাতে আমাদের ইমামাতি করুন। তিনি বলবেন না, আপনাদেরই একজন অন্যদের জন্য ইমাম নিযুক্ত হবে। এ হলো আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত এ উম্মাতের সম্মান। (সহিহ মুসলিম ২৮৬, মান: সহিহ হাদিস) সালামা ইব্ন নুফায়ল কিন্দী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদিন) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), লোকেরা ঘোড়ার মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করেছে, অস্ত্রসস্ত্র রেখে দিয়েছে এবং তারা বলছেঃ যুদ্ধ তার অস্রসস্ত্র রেখে দিয়েছে (এখন আর জিহাদ নেই, জিহাদ শেষ হয়ে গেছে)।
এ কথা শুনে তিনি তার প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ «كذبوا الآن، الآن جاء القتال، ولا يزال من أمتي أمة يقاتلون على الحق، ويزيغ الله لهم قلوب أقوام، ويرزقهم منهم حتى تقوم الساعة، وحتى يأتي وعد الله، والخيل معقود في نواصيها الخير إلى يوم القيامة، وهو يوحى إلي أني مقبوض غير ملبث، وأنتم تتبعوني أفنادا، يضرب بعضكم رقاب بعض، وعقر دار المؤمنين الشام» ‘
তারা মিথ্যা বলছে। এখনই জিহাদের আদেশ এসেছে। আর সর্বদা আমার উম্মতের একদল দ্বীনের জন্য যুদ্ধ (ক্বিতাল) করতে থাকবে। এখনই আল্লাহ্ তাদের জন্য লোকের অন্তর ঘুরিয়ে দেবেন। আর আল্লাহ্ তাদেরকে ওদের দ্বারা রিযিক দান করবেন কিয়ামত পর্যন্ত। আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার ললাটের সাথে কল্যাণ ও মঙ্গলকে সন্পৃক্ত করে রেখেছেন। আমাকে এ কথা ওহী দ্বারা জনানো হয়েছে যে, অচিরেই আমাকে তুলে নেয়া হবে (ইন্তিকাল হবে); (চিরদিন) আমাকে রাখা হবে না। আর তোমরা আমার পরে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। তোমরা একে অন্যের সাথে মারামারি কাটাকাটি করবে, আর ঈমানদারদের নিরাপদ ঠিকানা হবে শামে (সিরিয়ায়)।’ (সুনানে আন-নাসায়ী ৩৫৬১, মান: সহিহ)
যঈফ আরেকটি। যেহেতু সহীহও আছে তাই এটাও উল্লেখ করছি, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “
ثلاثة من أصل الإيمان
: الكف عمن قال لا إله إلا الله ولا تكفره بذنب ولا تخرجه من الإسلام بعمل، والجهاد ماض منذ بعثني الله إلى أن يقاتل آخر أمتي الدجال لا يبطله جور جائر ولا عدل عادل، والإيمان بالأقدار ” .
তিনটি বিষয় ঈমানের মূলের অন্তর্ভুক্ত।
(এক) যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ পড়বে তার ক্ষতি করা হতে বিরত থাকা, কোন গুনাহের কারণে তাকে কুফরির দিকে ঠেলে না দেয়া এবং (শরী’আতের বিরোধী) কোন কাজের কারণে তাকে ইসলাম থেকে বহিস্কার না করা।
(দুই) আমাকে (রাসূল করে) প্রেরনের সময় থেকে জিহাদ চালু রয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। অবশেষে উম্মাতের জিহাদকারী সর্বশেষ দল দাজ্জালের বিরুদ্ধে (ক্বিতাল) যুদ্ধে লিপ্ত হবে। কোন অত্যাচারী শাসকের অত্যাচার অথবা কোন ন্যায়পরায়ণ শাসকের ইনসাফ এটাকে রহিত করতে পারবে না।
(তিন) তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস রাখা। (সুনানে আবু দাউদ ২৫৩২, মান: যঈফ)
হে আমাদের রব, ধোঁকাবাজ রাহবার, ধর্মনিরপেক্ষবাদ, গণতন্ত্রবাদ নামক জঘন্য নাপাকী-শিরকী ধর্ম, মতবাদ, জীবনাদর্শ, রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং তাগুতী শাসকগোষ্ঠী ও তার অনুসারী থেকে মুসলিম উম্মাহর ঈমান কে হিফাজত করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত "হক দল" এর সঙ্গী হওয়ার তাওফীক দান করুন -আমীন
(সংগৃহীত)
Comment