Announcement

Collapse
No announcement yet.

ভারতের বিজেপি-আরএসএস বনাম বাংলার মডারেইট ইসলামি দল—ভোট ও নোটের রাজনীতিতে কারা সবচেয়ে বেশি সফল?

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ভারতের বিজেপি-আরএসএস বনাম বাংলার মডারেইট ইসলামি দল—ভোট ও নোটের রাজনীতিতে কারা সবচেয়ে বেশি সফল?

    হিন্দু সমাজকে সংগঠিত ও শক্তিশালী করে অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে ১৯২৫ সালে আরএসএস এর যাত্রা শুরু হয়। যার রাজনৈতিক ফ্রন্ট বিজেপি এখন টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের রাষ্ট্র-ক্ষমতায়। তারা কিন্তু হাসিনার মতো রাতের ভোটে জয়ী হয় নি। সেখানে মোটামুটি ফেয়ার ইলেকশনই হয়েছে। তাহলে কীভাবে তারা বারবার জিতে যাচ্ছে?

    তারা মূলত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। ধর্মকে অস্ত্র বানিয়ে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগোষ্ঠীর আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সমর্থন লাভ করে।

    কয়েকদিন পরপর মসজিদের নিচে মন্দির খুঁজে পাওয়া, মুসলিমদের ঘরবাড়ি নির্বিচারে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া, টুনকো অজুহাতে নিরপরাধ মুসলিমদেরকে গণহারে হত্যা করাসহ শত শত অন্যায় অনাচারের মাধ্যমে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগোষ্ঠীকে এই মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করে যে, ‘বহিরাগত’ মুসলিমদের হাত থেকে এই ভারতকে কেবল তারাই রক্ষা করতে পারবে। হিন্দুরা কেবল তাদের হাতেই নিরাপদ। অচিরেই তারা ভারতবর্ষ থেকে মুসলিমদের বিতাড়ন করে একটি অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করবে। ব্যস, এতেই হিন্দুরা মহা খুশি। তারা ধরে নিয়েছে—এই বিজেপিই পারবে তাদের ভাগ্য ফিরাতে, মুসলিমদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে। সুতরাং ভোট বিজেপিকেই দিতে হবে। এতে যদি চিরকালও তাদেরকে নদীর পাড়ে আর রেল লাইনের ধারে বসে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয় তাতে কোনো অসুবিধা নেই।

    যাইহোক, এগুলোর মূল কথাটি হলো—হিন্দুধর্মের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই সংগঠনগুলো খুব ভালো ভাবেই তাদের ধর্মকে কাজে লাগাচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন জয় করতে তারা যেকোনো কুটচাল বা অপকর্ম করতে দ্বিধাবোধ করে না। এবং তাদের এসব কৌশল অনেকাংশেই সফল।

    অপরদিকে বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারটি চিন্তা করুন। তারাও কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসলামি আকায়েদ ও তাহজিব-তামাদ্দুনকে সংরক্ষণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু তারা এর কতটুকু অর্জন করতে পেরেছে?

    শুরুর দিকে কিছুকাল তারা তাদের লক্ষ্যের উপর অবিচল থাকলেও বর্তমানে তাদের মধ্যে এক ধরণের দেউলিয়াত্ব দেখা দিয়েছে। শুধুমাত্র রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারা তাদের আসল উদ্দেশ্য থেকে অনেকটাই সরে এসেছে।

    তারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মুসলমানসদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য। কিন্তু নিজেকে সুশীল প্রমাণ করতে গিয়ে তারা এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাদেরকে ইদানীং অমুসলিম আর তথাকথিত সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়েই সবচেয়ে বেশি চিন্তিত দেখা যায়।

    কয়েক সপ্তাহ আগে (২৯ জুন ২০২৫) কুমিল্লার একটি জায়গায় একজন হিন্দু নারীকে কয়েকজন লোক সঙ্ঘবদ্ধভাবে নির্যাতন ও ধর্ষণ করে। পুরো দেশে এ নিয়ে প্রতিবাদ হয়। কয়েকটি ইসলামি দলের প্রধান ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বেশ ভালো। আমরাও এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং সঠিক বিচার চাই। নারীরা আমাদের মায়ের জাতি। তারা যে ধর্মেরই হোক না কেন, আমরা তাদের সর্বোচ্চ সম্মান ও নিরাপত্তা প্রত্যাশী।

    কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, ঐ ধর্ষিতা নারী নাকি ২/৩ দিন পরে লাইভে এসে বলেছেন, তিনি ধর্ষকদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। মামলাও নাকি উঠিয়ে নিচ্ছেন। এটা কেমন কথা? উনি কি আসামিদেরকে ভয় পেয়েছেন? পুরো দেশ যেহেতু উনার পক্ষেই ছিল, তাহলে তো এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

    পরে কয়েকটি সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি যে, পরকীয়া সংক্রান্ত একটি বিরোধের জের ধরে নাকি ঐ নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছিল। পুরো দেশে যখন এর বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছিল এবং মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল, তখন ওই নারী আসল ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। তাই দুই দিন পরেই তিনি ইউ-টার্ন নিয়ে নেন।

    যাইহোক, এসব বেহুদা বকওয়াস বাদ দেই। আমি এখনো এর নির্ভরযোগ্য কোনো সোর্স পাই নি। তাই ধরে নেই ঘটনার পরের অংশ গুজব। ঐ মহিলা আসলেই অন্যায়ভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন। তাই সবাই প্রতিবাদ করেছে।

    কিন্তু এর অল্প কয়েকদিন আগে (২২ জুন ২০২৫) আরো একটি ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছিল। জানেন?

    নোয়াখালীতে একজন মাদ্রাসা ছাত্রীকে এক মালাউন প্রেমের ফাঁদে ফেলে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে, অতঃপর একটি পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়। অনেকগুলো মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতেও নিউজটি এসেছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো—ঐ ইসলামি দলগুলোর প্রধান কিংবা উচু পর্যায়ের কোনো নেতাকর্মী এর নূন্যতম কোনো প্রতিবাদ করেন নি। ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দেন নি। (আমার নজরে পড়ে নি। আপনারা কেউ পেয়ে থাকলে জানাবেন। আমি আমার কথা প্রত্যাহার করে নিব ইনশাআল্লাহ।)

    এরকম অসংখ্য জঘন্য ভাগওয়া সন্ত্রাস চলছে পুরো দেশ জুড়ে। নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশেও মুসলিম নারীদের ইজ্জত আজ হুমকির মুখে। কিন্তু মুসলিমদের অভিভাবক সেজে বসে থাকা মডারেইট দলগুলো এগুলো নিয়ে কথা বলে না। ভাবসাবে মনে হয় তারা এগুলো জানেই না। আমি শুধু ভাগওয়া লাভ ট্র্যাপের একটি উদাহরণ এখানে উল্লেখ করলাম, কারণ এটি প্রতিবাদে জ্বলে উঠা ঐ হিন্দু নারীর ঘটনার সমসাময়িক। একটিতে সবাই প্রতিবাদ জানালেও অপরটির বেলায় সবাই নীরব। যেন সুশীল সাজার প্রতিযোগিতা চলছে। লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!

    ইসলাম ধর্মের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা এই দলগুলো কীসের ভয়ে স্বজাতির নারীদের নির্যাতনে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে? তাদেরকে জঙ্গি কিংবা সাম্প্রদায়িক ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হবে এই ভয়ে? এম্বাসিগুলো তাদের উপর নাখোশ হয়ে যাবে এই আশঙ্কায়?

    সম্প্রতি চলছে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খুলার বিরুদ্ধে আন্দোলন। পুরো দেশের তৌহিদি জনতা এ নিয়ে প্রতিবাদ ও মিছিল মিটিং করলেও কতিপয় ‘স্মার্ট’ ইসলামিস্টরা এই ইস্যুতে পুরোপুরি নিশ্চুপ। বরং বলা যায়, অন্যরা প্রতিবাদ করছে দেখে তারা কিছুটা অস্বস্তিতেই আছে। কেননা এর ফলে হয়ত পরবর্তী কোনো সাক্ষাৎকারে বড় ভাইদের দেশের এম্বাসিগুলো এ নিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞসাবাদ করবে। তারা মহা সমাবেশ করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দেওয়ার দাবির পক্ষে তুফান তুলতে পারে, কিন্তু মুসলিম উম্মাহের প্রকাশ্য শত্রু ও মানবতা বিধ্বংসী জাতিসংঘের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটিও করতে পারে না।

    এই হলো মডারেইট ডেমোক্রেটিক ইসলামি দলগুলোর অবস্থা। তারা আল্লাহকে খুশি করতে চায়, আবার আমেরিকাকেও নাখোশ করতে ভয় পায়। মাঝে মধ্যে তাদের জন্য আমার খুব মায়া হয়। কেননা বেচারারা ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু আমেরিকার অধীনে থেকে ইসলাম কায়েম করতে এসে ভালোই মাইনকা চিপায় পড়েছে। একদিকে তারা কথিত হিকমাহ এর অনুসরণ, গ্লোবাল পলিসির সাথে তাল মিলানো ও কুফফার পরাশক্তিদের খুশি করতে গিয়ে এক এক করে ইসলামি মূল্যবোধগুলোকে বিসর্জন দিয়ে দিচ্ছে। অপরদিকে তারা মুসলিম হওয়ায় তাগুত বিশ্ব মোড়লরাও তাদের উপর ঠিকমতো ভরসা করতে পারছে না। ফলে ক্ষমতার বন্দোবস্ত হয়েও হচ্ছে না। এটাই তো হওয়ার কথা। কেননা পবিত্র কুরআন যে কখনো মিথ্যা বলে না।

    সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমার কাছে মনে হয়, কৌশলগতভাবে ধর্মীয় রাজনীতির মাঠে বাংলাদেশের ইসলামি দলগুলোর চাইতে ভারতের বিজেপি-আরএসএস বেশি সফল। কেননা তারা জানে কীভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে খুশি রাখতে হয়।

    এখন হয়ত অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে—আমি কি এটাই বুঝাতে চাচ্ছি যে, ইসলামি দলগুলো হিন্দুত্ববাদিদের মতো উগ্রতা দেখাক? বাংলাদেশের হিন্দুদের বাড়িঘর ভেঙ্গে দিক এবং মন্দিরগুলোকে মসজিদে পরিণত করুক? নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। আমি কখনো এরকমটা চাই না। ইসলামি শরিয়াহ কোনোভাবেই এগুলোকে অনুমোদন দেয় না। আমি শুধু চাই, ইসলামি নেতৃবৃন্দ যেভাবে এখন সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে সরব সেভাবে যেন কথিত এইসব সংখ্যালঘু কর্তৃক স্বজাতির কেউ নির্যাতিত হলে ঠোঁট দুটোকে একটু নাড়াচাড়া করান। এতে করে হয়ত তারা ট্যাগিং এর ঝামেলায় পড়ে যাবেন, এম্বাসিগুলো নাখোশ হয়ে যাবে। তবে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর সমর্থন ও ভালোবাসা পাবে। মনে রাখবেন, ১০% জনগোষ্ঠীর কাছে ভালো সাজতে গিয়ে ৯০% জনগোষ্ঠীকে অবহেলা করা চরম বোকামি হবে।




    ০৩ সফর, ১৪৪৭ হিজরি
    ২৯ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ​

  • #2
    আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের জাতির রাহবারগণকে সঠিক পথে চালিত করুন, আমীন
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

    Comment

    Working...
    X