হে উম্মাহর 'কল্যাণকামী বন্ধুগন' আপনার গনতন্ত্রের শায়েখ কে?
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। (সুরা বাকারা আয়াত:৮৫)
তারা (মুনাফিকরা) এর মধ্যে দোদুল্যমান, না এদের দিকে আর না ওদের দিকে। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনো তার জন্য কোন পথ পাবে না। (সুরা নিসা আয়াত:১৪৩)
আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।(সুরা আলে ইমরান আয়াত:৮৫)
আল্লাহ বলেছেন- আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধর, বিভক্ত হয়ো না। (সুরা আলে ইমরান আয়াত:১০২)
আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায়। (সুরা সফ আয়াত:৪)
হাদিসে এমনও এসেছে যে, যে ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ উম্মাতের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস চালাবে, তোমরা তরবারি দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দেবে, সে যে কেউ হোক না কেন। (সহিহ মুসলিম হাদিস:১৮৫২)
আমাদের সকলের কাছেই এটা পরিচিত যে রাসুল (ﷺ) সেই ব্যক্তিকে কোন কর্তৃত্ব দেন নি, যে নিজ থেকে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে৷
এক হাদিসে এসেছে রাসুল বলেছেন-“আমরা সেই ব্যক্তিকে কোনো দায়িত্ব দিই না, যে তা প্রার্থনা করে। (সহীহুল বুখারী ৭১৪৯, ২২৬১, ৬৯২৩, ৭১৫৬, ৭১৫৭)
গণতন্ত্র সম্পর্কে উলামায়ে কেরামের অবস্থান:
১. শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন- শহর হল, মানুষের সমাগমের নাম। সুতরাং তাদের সকলের রায় সুন্নত মোতাবেক হওয়া অসম্ভব।
এর দ্বারা প্রমাণিত হল, যে গণতন্ত্র ব্যবস্থা যা অধিকাংশের রায় একমত হওয়ার উপর নির্ভরশীল-এর মধ্যে ইসলাম ও মুসলমানের সফলতা সাব্যস্ত করা ধোঁকা ব্যতীত আর কিছুই না। (সূত্র: হুজ্জাতুল্লাহি বালিগা, সিয়াসাতুল মাদিনাহ অধ্যায়)
২. হাকিমুল উম্মত হযরত থানভী(রহ.) বলেন- ইসলামে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে কিছু নেই। ইসলাম শুধু ব্যক্তিশাসনের কথাই বলে। (সূত্র: তাকলিলুল ইখতিলাত মাআন) তিনি আরো বলেন- এই প্রচলিত গণতন্ত্র সম্পূর্ণরূপে একটি মনগড়া ও মিথ্যা ধারণা। বিশেষত এমন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, যা মুসলিম ও অমুসলিমদের সমন্বয়ে গঠিত, তা তো প্রকৃতপক্ষে একটি অমুসলিম শাসনব্যবস্থাই হবে।” (মালফুজাতে থানভী, পৃষ্ঠা-২৫২; এছাড়াও দেখুন “আহসানুল ফাতাওয়া” কিতাবুল জিহাদ, অধ্যায়: সিয়াসাতে ইসলামিয়া)
৩. আল্লামা সৈয়দ সুলায়মান নদভী (রহ.)-এর বক্তব্য, তিনি “ইসলামী গণতন্ত্র” এর ধারণা খণ্ডন করে লিখেন-
“গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ইসলামের সাথে কী সম্পর্ক? এবং খিলাফতে ইসলামের সাথে এর কী সম্পর্ক? বর্তমান গণতন্ত্র তো সপ্তদশ শতাব্দীর পর সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি গ্রিক গণতন্ত্রও বর্তমান গণতন্ত্রের থেকে আলাদা ছিল। সুতরাং ‘ইসলামী গণতন্ত্র’ একটি অর্থহীন পরিভাষা। আমরা ইসলামি ব্যবস্থায় পশ্চিমা গণতন্ত্রের কোনো রূপই খুঁজে পাইনি, এবং ‘ইসলামী গণতন্ত্র বলে কোনো জিনিসের অস্তিত্বই নেই। গণতন্ত্র একটি নির্দিষ্ট সভ্যতা ও ইতিহাসের ফলাফল। এটি ইসলামের ইতিহাসে খোঁজার চেষ্টা শুধু ব্যর্থতাই নয়, বরং পরাজিত মানসিকতা।”(মাসিক “সনাবিল”, করাচি, মে ২০১৩, খণ্ড-৮, সংখ্যা-১১, পৃষ্ঠা-২৭; সম্পাদক: মাওলানা হাফিজ মুহাম্মদ আহমদ)
৪. মুফতি তাকি উসমানি (হাফি.) বলেন-পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, যার ভিত্তি জনগণের শাসনক্ষমতার চেতনার ওপর, তা সুনিশ্চিতভাবে ইসলাম পরিপন্থী। কেননা, ইসলামের ভিত্তি হলো “আল্লাহ সর্বোচ্চ ক্ষমতার মালিক” এ বিশ্বাসের ওপর। কুরআন মাজিদে যা সংক্ষেপে إن الحكم إلا لله তথা “শাসনক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর-ই জন্য” বলে ইরশাদ হয়েছে। সুতরাং সার্বিক বিবেচনায় পশ্চিমা গণতন্ত্রকে হক মনে করা বর্তমান যুগের জঘন্যতম ভ্রান্তিগুলোর অন্যতম। (ফাতাওয়ায়ে উসমানি: ৩/৫০৭, প্রকাশনী: মাকতাবা মাআরিফুল কুরআন, করাচি)
৫. পাকিস্তানের “বেফাকুল মাদারিস” এর সভাপতি মাওলানা সলীমুল্লাহ খান (রহ.) বলেন- নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় এবং গণতন্ত্রের মাধ্যমেও ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের মূল্য দেওয়া হয়, কিন্তু এই সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকেরা অজ্ঞ, যারা ইসলামের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত নয়। তাদের থেকে কোনো আশা করাও অর্থহীন। (মাসিক “সনাবিল”, করাচি, মে ২০১৩, খণ্ড-৮, সংখ্যা-১১)
৬. মুফতি শামজায়ী শহিদ রহিমাহুল্লাহ বলেছেন- যেমন প্রস্রাবের দ্বারা কখনো অজু হয় না এবং নাপাকের দ্বারা কখনো পবিত্রতা অর্জন হয় না, তেমন ধর্মহীনতা ও পশ্চিমা গণতন্ত্রের মাধ্যমে কখনো ইসলামের বিজয় আসতে পারে না। পৃথিবীতে ইসলামের বিজয় অর্জনের একটিই উপায়, যে উপায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রহণ করেছেন। আর সেটা হলো জিহাদের রাস্তা, যার মাধ্যমে এ পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হবে। তখন তা সেই একটি পদ্ধতিতে হবে, যে পদ্ধতি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রহণ করেছেন। এটাই সেই জিহাদ, যার মাধ্যমে এই দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার দ্বীন কায়েম হবে। (সূত্র-মাসিক সানাবিল, করাচি, মে ২০১৩, ভলিউম ৮, পৃষ্ঠা-৩৩)
উলামায়ে কেরাম নির্বাচন, গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলাম কায়েমের জন্য ৪৮ বছর ব্যয় করেছে, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি এ গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ৪৮ হাজার বছর ব্যয় করলেও ইসলাম কায়েম হবে না। (সূত্র:খুতবাতে শামজায়ী, পৃষ্ঠা-২০৩)
৭. শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন- ইসলাম ও গণতন্ত্র দু’টি বিপরীতমুখী ব্যবস্থা। যা কখনো এক হওয়ার নয়। একটি আল্লাহর উপর ঈমান ও আল্লাহ নির্দেশিত পন্থায় জীবন পরিচালনার নির্দেশ দেয়, অপরটি ত্বাগূতের প্রতি ঈমান ও তদনুযায়ী জীবন পরিচালনার উপর নির্ভরশীল।(সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, রেকর্ড নং-৩৫৩)
৮. শাইখ মুহাম্মদ ইবনে সালিহ আল-উসাইমিন (রহ),বলেন- ব্যক্তিবিশেষ বা দলের জন্য দলাদলি করা মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে, যুবকদের ইলম ও ইবাদত থেকে সরিয়ে দেয়। মুসলিমের উচিত কিতাব ও সুন্নাহর উপর সালাফী হওয়া, কোন দলের অনুসারী হওয়া নয়।(লিকাউল বাবিল মাফতুহ, মিটিং ৬৬, প্রশ্ন:১০)
৯. শাইখ আবদুল আজিজ ইবনে বায (রহ) বলেন- মুসলিমের জন্য দলীয় রাজনীতি বা গণতন্ত্রের রাজনীতিতে ব্যস্ত হওয়া জায়েজ নয়, যা মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে। বরং কর্তব্য হলো উপকারী ইলম অর্জন করা এবং بصيرة (দৃষ্টিশক্তি/জ্ঞান)-এর সাথে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়া।[মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে বায ৯/১৭৪]
১০. শামসুল হক আফগানি (রহ.) বলেন-
ইসলামে গণতন্ত্র বৈধ নয়। গণতন্ত্র একটি মূর্খতা, কখনো কি দেখা গেছে যে কলেজের প্রিন্সিপাল, হাসপাতালের এমএস বা জেলা প্রশাসকের নিয়োগের জন্য রিকশাচালক বা সাধারণ মানুষদের ভোট নেওয়া হয়েছে? তবে কেন একটি রাষ্ট্র বা জাতিকে ধ্বংস করতে মূর্খদের ভোট নেওয়া হয়? গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের উপর নির্ভরশীল, অথচ কোরআন সংখ্যাগরিষ্ঠকে ‘মূর্খ’ বলে অভিহিত করেছে। (নিকাতে আফগানি, পৃষ্ঠা:১২)
১১. মাহমুদ হাসান গাংগুহী (রহ.) বলেন-
“আজকাল গণতন্ত্রের অর্থ হলো যে, প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলা, শিক্ষিত বা অশিক্ষিত, বুদ্ধিমান বা অজ্ঞ সকলকে ভোট দেয়ার অধিকার প্রদান করা হয় এবং তাদের ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে শাসক নির্বাচিত হয়। ইসলামে এ ধরনের গণপতন্ত্রের কোনো অস্তিত্ব নেই এবং একজন সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এটির মধ্যে কোনো উপকারিতা খুঁজে পেতে পারে না। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, খণ্ড ৪, কিতাবুস সিয়াসাহ)
১২. মাওলানা হাকিম আখতার (রহ.) বলেন-“ইসলামে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই, যেখানে বেশি ভোট পড়বে, সেখানেই যেতে হবে। বরং ইসলামের সৌন্দর্য হলো, সারা দুনিয়া একদিকে হলেও মুসলমান শুধু আল্লাহরই অনুসরণ করবে। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ে নবুওয়াতের ঘোষণা দেন, তখন ভোট বা নির্বাচনের দৃষ্টিকোণ থেকে কেউই নবীর পক্ষে ছিল না। নবীর কাছে শুধু নিজের ভোট ছিল। কিন্তু নবী কি আল্লাহর বার্তা থেকে বিরত থেকেছিলেন এই কারণে যে গণতন্ত্র তার বিপক্ষে ছিল, সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট তার বিপক্ষে ছিল? কখনোই নয়। (খাজাইনে মারিফাত ও মুহাব্বাত, পৃষ্ঠা-২০৯)
১৩. কাতাদা ওমর বিন মাহমুদ বলেন-
যে-সব লোক ইসলামকে গণতন্ত্রের সাথে এক করে দেখতে চায়, তাদের প্রচেষ্টা যিন্দীকদের মত, যারা আল্লাহর দ্বীনকে মানুষের প্রবৃত্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য পরিবর্তন করে ফেলে। … ইসলাম জনগণকে বিধানগত ক্ষেত্রে পছন্দ-অপছন্দের স্বাধীনতা দেয়নি; যেহেতু জনগণের জন্য ইসলামি বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া এবং শাসককে মুসলিম হওয়া আবশ্যকীয়। অপরদিকে গণতন্ত্র জনগণকে তাদের উপর প্রযোজ্য বিধি-বিধান প্রণয়নে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। এটাই গণতন্ত্রের মৌলিক তত্ত্ব, যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিনষ্টকারী। (আল-জিহাদ ওয়াল ইজতিহাদ, পৃঃ ১০৩-১০৪)
১৪. শাইখ আবু বাসির মুস্তফা হালিমাহ বলেন- প্রথমতঃ যে নীতির উপর গণতন্ত্র স্থাপিত তা হল ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। এই ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে আইন প্রণয়ন ক্ষমতা, সাধারণ জনগণের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন, যে প্রতিনিধিরা আইন তৈরী ও প্রণয়নের কাজ করবে। অন্য কথায় গণতন্ত্রে যে আইন প্রণয়ঙ্কারী এবং যার আনুগন্য করা হয় আসলে সে আল্লাহ নয় বরং একজন সাধারণ মানুষ। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, আইন প্রণয়ন ও বৈধ-অবৈধ নির্ধারণের ক্ষেত্রে যার ইবাদাত অথবা আনুগত্য করা হয় সেও একজন জনগণ, একজন মানুষ, একজন সৃষ্টি, সে মহান আল্লাহ নয়। এটাই হল কুফর, শিরক এবং পথভ্রষ্টতার মুল অস্তিত্ব এবং দ্বীনের মৌলিক বিষয় সমূহ ও তাওহীদের সাথে সাংঘর্ষিক। এভাবেই দুর্বল এবং অজ্ঞ লোকেরা শাসন-কর্তৃত্ব ও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহর একক ইলাহ্যিয়াতের সাথে শরীক করে”। (হুকুম আল ইসলাম ফী আদ-দিমুক্রাতিয়্যাহ আত-তা’দ্দুদিয়্যাহ আল-হিযবিয়্যাহ;পৃঃ ২৮)
১৫. মুকবিল বিন হাদি আল ওয়াদী (রহ) বলেন- গণতন্ত্র কুফরি (অবিশ্বাস), কারণ এর অর্থ হলো জনগণ নিজেরাই নিজেদের শাসন করে। এর অর্থ হলো কোনো কিতাব (আল্লাহর কিতাব) নেই, কোনো সুন্নাহ নেই, কোনো ইসলাম নেই এবং ব্যভিচার ও সমকামিতার অনুমতি দেয়া হয়…(তুহফাতুল-মুজীব;পৃষ্ঠা:৩০৩)
১৬. শাইখ আবু নাসর মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ আর-রায়মী আল-ইমাম (হাফি) বলেছেন-“নির্বাচনে অংশ নেওয়া আল্লাহর সাথে শরীক (অংশীদার) সাব্যস্ত করার অন্তর্ভুক্ত, এবং তা হলো আনুগত্যের শিরক। কারণ নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ, আর এই ব্যবস্থাটি ইসলামের শত্রুরা মুসলিমদেরকে তাদের দ্বীন থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করেছে। সুতরাং যারা এটি গ্রহণ করে, এতে সন্তুষ্ট হয়, এটি প্রচার করে এবং এটিকে সঠিক বলে বিশ্বাস করে, নিঃসন্দেহে সে আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা করে ইসলামের বিরোধীদের আনুগত্য করল। আর এটাই হলো আনুগত্যের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে শরীক করার মূল সারাংশ। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: তাদের জন্য কি এমন কিছু শরীক আছে, যারা তাদের জন্য দীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? আর ফয়সালার ঘোষণা না থাকলে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েই যেত। আর নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। তুমি যালিমদেরকে তাদের কৃত কর্মের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত দেখতে পাবে। অথচ তা (তাদের কর্মের শাস্তি) তাদের উপর পতিত হবেই। আর যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারা জান্নাতের উদ্যানসমূহে থাকবে। তারা যা চাইবে, তাদের রবের নিকট তাদের জন্য তাই থাকবে। এটাই তো মহাঅনুগ্রহ। (সুরা শুরা আয়াত ২১-২২) (শাইখ মুহাম্মাদ আল-ইমামের কিতাব ‘তানবীরুয-যুলামাত বিকাশফ মাফাসিদ ওয়া শুবুহাত আল-ইন্তিখাবাত’ পৃষ্ঠা ৩৯-৪০)
১৭. শাইখ মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আলে আশ-শাইখ (রহ) বলেন-“গণতন্ত্রের পদ্ধতি আধুনিক যুগের শিরকের একটি রূপ, কারণ এতে আইন প্রণয়নের অধিকার আল্লাহর পরিবর্তে মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। (তাহযিরুল উকালা’মিন মাজালিমিদ-দিমুকরাতিয়্যাহ, পৃষ্ঠা;৭)
১৮. শেখ মুকবিল (রহ) বলেন- এই ভোট প্রদান ও নির্বাচনের মাধ্যমে হারাম কাজগুলো হালাল হয়ে যায়। কুফরি দেশগুলোর জনগণ ব্যভিচারের পক্ষে ভোট দেয় এবং অধিকাংশ মানুষ এতে সম্মত হয়। … … … “…পক্ষান্তরে এই (নির্বাচন) এর ক্ষেত্রে, সেই দুষ্ট ব্যভিচারিণী নারী, মদ বিক্রেতা এবং কমিউনিস্টের মতামতও কুরআনের মতামতের সমান হয়ে যায়। সুতরাং কুরআনকে কেবল একটি মতামত হিসেবে অন্যান্য মতামতের সাথে সমতুল্য করে উপস্থাপন করা হয় এবং তারপর (সেই সমস্ত মতামতের মধ্যে) ভোটগ্রহণের মাধ্যমে মদ ও ব্যভিচারকে বৈধ করা হয়…(নাসাইহ ওয়া ফাদাইহ, পৃষ্ঠা ৫০-৫৩)
১৯. মুফতী হামিদুল্লাহ জান (রহ.)-এই বিষয়টি নিয়ে বলেছে- “প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ থেকে প্রমাণিত যে, বর্তমান পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিজেই অশান্তি, অবৈধতা ও সকল বিপদ-বিপত্তির মূল কারণ, বিশেষত এতে সংসদকে আইন প্রণয়ন (আইন তৈরী) ও শাসন করার অধিকার দেওয়া সম্পূর্ণভাবে কিতাব ও সুন্নাহ এবং ইজমায়ে উম্মতের খেলাফ। আর ভোটদান পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যত মেনে নেওয়া এবং এর সমস্ত মন্দত্বে অংশীদার হওয়া, তাই পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দেওয়া শরীয়ত অনুযায়ী নিষিদ্ধ। (ভোট কা তাহকিকী ওয়া তানকিদী জায়েযা, পৃষ্ঠা ৪৩)
২০. শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহ) বলেছেন-‘ইজমা আছে এমন কোনো বিষয়কে হারাম করা যা হালাল, হালাল করা যা হারাম, অথবা শরীয়াহর যেসব বিষয়ে ইজমা আছে এগুলোর কোনোটির পরিবর্তন বা বিকৃতি করা ফকিহদের ইজমা অনুসারে সুস্পষ্ট কুফুরি যা একজনকে দ্বীন থেকে বের করে দিতে যথেষ্ট। (মাজমুউল ফাতওয়া ৩/২৬৭) সুতরাং আল্লাহর আইন দ্বারা শাসন করা ব্যতিত অন্য আইন দ্বারা শাসন কার্য চালানোর ভয়াবহতা কতটুকু তা এ বিষয়ে ইজমা দ্বারা উপলব্ধি করা যেতে পারে।
২১. ইবনুল কায়্যিম (রহ.)-ও আলোচনা করেছেন যে, ‘কুরআনে এবং বিশুদ্ধ সূত্রে আলিমদের ইজমা রয়েছে, 'দ্বীন ইসলাম' পূর্ববর্তী সকল ধর্মের রহিতকারী। তাই এখন তাওরাত, ইনজিলের বিধি-বিধান আঁকড়ে থাকা এবং কুরআন অনুসরণ কর না করা সুস্পষ্ট কুফুরি। (আহকামু আহলিয যিম্মাহ ১/২৫৯)
২২. ইবনু কাসীর (রহ) এই ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট করে বলেছেন-‘যে ব্যক্তি নবীদের সিলমোহর (খাতামুন্নাবিয়্যিন) মুহাম্মাদ ইবনু আব্দিল্লাহ-এর প্রতি নাযিলকৃত বিধিবিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং (পূর্ববর্তী নবীদের) রহিত হয়ে যাওয়া কোনো আইনকানুনের মাধ্যমে বিচার প্রার্থনা করবে, সে একজন কাফির। সুতরাং, যে ব্যক্তি শরীয়াহর পরিবর্তে ইয়াসিকের বিধানকে প্রাধান্য দেবে, এর মাধ্যমে বিচার প্রার্থনা করবে তার ওপর কী হুকুম প্রযোজ্য হবে তা সহজেই অনুমেয়। যে এটা করবে, মুসলিমদের ঐকমত্য অনুসারে সে কাফির সাব্যস্ত হবে। (আল হিদায়া ওয়ান নিহায়া ১৩/১১৯)
২৩. শেখ ইয়াহিয়া আল-হাজুরী (রহ)-কে; ভোটদান ও নির্বাচনের বিধান কী প্রশ্ন করা হয় তখন তিনি উত্তর দেন- এটি সেই সকল গণতান্ত্রিক আইনের অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহর সত্য বিধানকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে পরিচালিত। এগুলোকে কাফিরদের অন্ধ অনুসরণও গণ্য করা হয়, আর তাদের অনুসরণ করা জায়েয নয়। এতে অত্যন্ত ক্ষতিকর দিক রয়েছে এবং মুসলমানদের জন্য এতে কোন উপকার বা লাভ নেই।
তন্মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ক্ষতিসমূহ হলো:
১। (এটি) সত্য ও মিথ্যার মধ্যে এবং সত্যনিষ্ঠ মানুষ ও মিথ্যার অনুসারীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সমতা স্থাপন করে।
২। আল-ওয়ালা ওয়াল বারা বিলুপ্ত করে, মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট করে।
৩। এটি এরূপ বিষয় ডেকে আনে – ঘৃণা, শত্রুতা, গোষ্ঠীবাদ, উগ্রতা মুসলমানদের মধ্যে।
৪। এটি আরও কারণ হয় প্রতারণা, কপটতা, জালিয়াতি, মিথ্যা এর।
৫। এটি সময় ও অর্থের অপচয় করে।
৬। নারীর লজ্জাস্থান উন্মুক্ত করে এবং পাশাপাশি।
৭। ইসলামী জ্ঞান ও তার ধারক-বাহক (উলামায়ে কেরাম) এর প্রতি একজন মুসলিমের আস্থাকেও বিনষ্ট করে।(আল-মাবাদী আল-মুফীদাহ ফী আত-তাওহীদ ওয়াল ফিকহ ওয়াল-আকীদাহ, নতুন আরবী সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২৯, প্রশ্ন নং ৪৮।)
২৪. মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদুদী (রহ) বলেন,-“ইসলাম মূলত এ জন্য দুনিয়ায় আসেনি যে, কুফরী ব্যবস্থার অধীনে দেশ শাসিত হবে এবং মুসলমানরা এ বাতিল শাসন ব্যবস্থার পদানত হয়ে থাকবে। ইসলাম এসেছে এ জন্যে যে, পৃথিবীতে কর্তৃত্ব ও প্রভুত্বের চাবিকাঠি মুসলমানদের হাতেই নিবদ্ধ থাকবে আর অমুসলিমরা তার অধীন হয়ে থাকবে। এ দিক থেকে ইসলামী রাষ্ট্র মূলত একটি প্রচার ও দাওয়াত সর্বস্ব রাষ্ট্র। দুনিয়ায় আল্লাহর কালেমাকে সমুন্নত করাই তার কাজ। আর জিহাদেরও প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে কুফরের উপর ইসলামকে জয়যুক্ত করা। (জামায়াতে ইসলামির উনত্রিশ বছর পৃষ্ঠা ১৩-১৪)
২৫. দেশের খ্যাতনামা আহলেহাদীছ বিদ্বান মাওলানা আব্দুল্লাহিল কাফী আল-কোরায়শী বলেছেন- ইসলামী দলগুলোর গণতন্ত্র নিয়ে শিথিলতার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, (পাকিস্তানের প্রস্তাবিত ‘ইসলামের নির্দেশিত গণতন্ত্র’ সম্পর্কে) বর্তমান সময়ে ওয়াইন এন্ড ফুডের হোটেল, রেস্তোরাঁ, বিড়ি, সূদী লেনদেনের প্রতিষ্ঠান … থেকে আরম্ভ করিয়া ন্যাশনালিজম ও সোশিয়ালিজম পর্যন্ত ‘ইছলামি’ সাইনবোর্ড ও লেবেলে সুশোভিত হইয়া উঠিয়াছে। ফলে ইসলামী ও কুফরী ব্যভিচার, ইসলাম ও কুফরী ন্যাশনালিজম ও সোশিয়ালিজমের মধ্যে প্রভেদ করা যেরূপ অসম্ভব, সেইরূপ ইছলামি ও কুফরী গণতন্ত্রের আকৃতি ও প্রকৃতি সম্বন্ধে সম্যক ধারণা সুগঠিত না হওয়া পর্যন্ত ইছলামি গণতন্ত্রের স্বরূপ উপলব্ধি করা কাহারো সাধ্যায়াত্ম নয়’।(গণতন্ত্রের প্রকৃতি ও আকৃতি, তর্জুমানুল হাদীছ ১/২ সংখ্যা, ১৯৪৯ইং, পৃ. ৮৫।) তিনি আরো বলেন-,‘দুনিয়ার বাযারে গণতন্ত্রের যে বেসাতির তেজারৎ চলিতেছে, ইছলামের সহিত তাহার আপোষহীন বৈষম্যের জন্য তাহাকে ইছলামি মার্কা দিয়া স্বতন্ত্র করিয়া দেখাইবার প্রয়োজন, উদ্দেশ্য প্রস্তাবের রচয়িতাগণ বোধ করিয়া থাকিলে, সেরূপ গণতন্ত্রকে টানিয়া হেঁচড়াইয়া শুদ্ধি করাইবার আবশ্যক কি ছিল? প্রকৃত প্রস্তাবে রাষ্ট্রসমূহ কেবল গণতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র, পুরোহিততন্ত্র ও রাজতন্ত্রে বিভক্ত নয়, পঞ্চমশ্রেণীর আর এক প্রকার রাষ্ট্র আছে যাহার নাম ইছলামি রাষ্ট্র। ইছলামি রিয়াছৎ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন, উহা রাজতান্ত্রিক, সামন্ততান্ত্রিক ও পুরোহিত তান্ত্রিক নয়, এই পঞ্চবিধ রাষ্ট্রের মিশ্রযোগের প্রচেষ্টা নিরর্থক’। (গণতন্ত্রের প্রকৃতি ও আকৃতি, তর্জুমানুল হাদীছ ১/২ সংখ্যা, ১৯৪৯ইং, পৃ. ৮৬)
২৬. শায়খ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ আর-রাইমী আল-ইমামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কিছু লোকের এই বক্তব্য সম্পর্কে: “গণতন্ত্র এবং ভোটদান ইসলামী শূরার (পরামর্শ) সমতুল্য।” শায়খ উত্তর দিলেন: আল্লাহর কসম, যদি আমাদের এই ভয় না থাকতো যে অজ্ঞরা এই ধরনের কথার দ্বারা প্রভাবিত হবে, তবে এই (বক্তব্যের) উত্তর দেওয়াও বাধ্যতামূলকভাবে এড়িয়ে যাওয়া উচিত ছিল। যাই হোক, গণতন্ত্র এবং ভোটদান ইসলামী শূরার সাথে মিলিত নয়, যা আল্লাহ বিধান করেছেন, না ধর্মের মূলনীতিতে, না এর শাখাগুলোতে, না সম্পূর্ণভাবে, না আংশিকভাবে, না অর্থে, না ভিত্তিতে।তারপর শায়খ—আল্লাহ তাকে উম্মাহর কল্যাণের জন্য হিফাজত করুন—এই বক্তব্যের খণ্ডনের জন্য আটটি বিস্তারিত প্রমাণ উপস্থাপন করেন, যার শীর্ষে ছিল যে আল্লাহ ইসলামী শূরা বিধান করেছেন, যেখানে অবিশ্বাসী, অপরাধী এবং অজ্ঞ লোকেরা গণতন্ত্র বিধান করেছে।(শায়খ মুহাম্মাদ আল-ইমামের বই তানউইরুদ্ধ-ধুলামাত বিব কাশফ মাফাসিদ ওয়া শুবুহাত আল-ইন্তিখাবাত, পৃষ্ঠা ৩১-৩৫)
২৭. মাউসূআতুল আদইয়ান ওয়াল মাযাহিব আল-মুআসিরা’ গ্রন্থে;( ২/১০৬৬-১০৬৭) এসেছে- কোন সন্দেহ নেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর প্রতি নতি শিকার কিংবা আইন প্রণয়নের অধিকারের ক্ষেত্রে নব্য শিরকের একটি রূপ। এ পদ্ধতিতে মহামহিম স্রষ্টার কর্তৃত্বকে বাতিল করে দেয়া হয়; অথচ আইন প্রণয়নের একচ্ছত্র অধিকার হচ্ছে- স্রষ্টার; কিন্তু সে অধিকার তাঁর থেকে ছিনিয়ে মাখলুককে প্রদান করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে নিছক কতগুলো নামের (প্রতিমার) ইবাদত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পূর্বপুরুষগণ ও তোমরা রেখেছ; এর পক্ষে কোন প্রমাণ আল্লাহ অবতীর্ণ করেননি। বিধান দেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র আল্লাহর। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন শুধুতাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করতে। এটাই শাশ্বত ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৪০] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “বিধান দেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র আল্লাহর।” [সূরা আনআম, আয়াত: ৫৭]
হাকিমিয়্যার সাথে সাংঘর্ষিক:
গণতন্ত্র আমাদেরকে কুফুরি আইন দিয়ে শাসন এবং সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংসদ পরিবর্তন, আইন প্রণয়ন ও পরিবর্ধন, সংশোধন করার সুযোগ দিয়ে রেখেছে। অথচ আল্লাহ আইন পরিবর্তন, পরিবর্ধন, প্রতিস্থাপন, বাতিল করা সুস্পষ্ট কুফুরি। আল্লাহর আইনের বিপরীতে আইন তৈরি সরাসরি শিরক। (কোরআনের সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৩১ (তিরমিযী, হাদীস নং ৩০৯৫, সনদ হাসান), আয়াত: ২৯, সূরা ইউনুস, আয়াত ৫৯, সূরা আল মায়িদা, আয়াত ৮৭ তে এই বিষয়ে আলোচনা রয়েছে।)
উলামায়ে কেরামের মতাদর্শে আমাদের করণীয়:
আমাদের মুসলিমদের নিকট শরিয়াহ অনুসারে চালিত হওয়া, শরিয়া অনুযায়ী বিচার ও ফয়সালা করা, দেশ চালানো, সমরনীতি প্রণয়ন, অর্থনীতির ভিত্তি করা ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
✓✓শাহ ওলিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবি (রহ) বলেন,- আল্লাহ তাআলা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘খিলাফতে আম্মাহ’ (ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করা) দিয়ে প্রেরণ করেছেন। (এবং পুরো দুনিয়ার সকল জীবনব্যবস্থার উপর খেলাফতকে প্রতিষ্ঠা করা) আল্লাহর দীনকে সকল দীনের উপর বিজয় করা শুধু মাত্র জিহাদ ও জিহাদের হাতিয়ার প্রস্তুত করার মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হবে। আর যখন তোমরা জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন লাঞ্চনা তোমাদের ঘিরে ফেলবে এবং সকল ধর্ম তোমাদের উপর বিজয়ী হয়ে যাবে।(হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ২/২৬৭)
✓✓ইবনে তাইমিয়া বলেছেন-
জনগণের যাবতীয় ব্যাপার সুসম্পন্ন করা-রাষ্ট্র কায়েম করা দীনের সর্বপ্রধান দায়িত্ব। বরং রাষ্ট্র ছাড়া দীন প্রতিষ্ঠা হতেই পারে না। আরো কথা এই যে, আল্লাহ তায়ালা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ এবং নিপীড়িতদের সাহায্য করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এভাবে তিনি জিহাদ, ইনসাফ ও আইন-শাসন প্রভৃতি যেসব কাজ ওয়াজিব করে দিয়েছেন তা রাষ্ট্রশক্তি ও রাষ্ট্র কর্তৃত্ব ছাড়া কিছুতেই সম্পন্ন হতে পারে না। (আস-সিযাসাতুশ শরইয়্যাহ, পৃষ্ঠা-১৭২-১৭৩; এছাড়া উনার একটি কিতাব রয়েছে ‘আল খিলাফতু ওয়াল মুলক’ যার বাংলা অনুবাদ হয়েছে ‘খিলাফত ও রাজতন্ত্র’ নামে, সেখানেও এই বিষয়ে আলাপ আলোচনা রয়েছে)
তিনি আরো বলেন-দ্বীন কায়েম হবে কেবল কিতাব, ইনসাফ ও তরবারির দ্বারা। সুতরাং কিতাব দিয়ে জ্ঞান ও দ্বীন প্রতিষ্ঠা পায়। মিজান বা ইনসাফ দিয়ে অর্থনৈতিক চুক্তি ও অধিগ্রহণের অধিকার সাব্যস্ত হয়। আর তরবারি দিয়ে হুদুদ কায়েম হয় কাফির ও মুনাফিকদের ওপর। (খিলাফত ও রাজতন্ত্র, পৃষ্ঠা ৬৪-৬৫)
✓✓মুফতি সাইদ আহমদ পালনপুরি (রহ) বলেছেন- “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ দুনিয়াতে ইসলামি খিলাফত ও শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য পাঠিয়েছেন। আর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস্লাম কর্তৃক এই দীনের বিজয় শুধুই জিহাদের দ্বারাই বাস্তবায়িত হবে। আর জিহাদ আসবাব ও উপকরনের উপর নির্ভরশীল, আর ঘোড়া হলো জিহাদের অন্যতম একটি বাহন, তাই তা প্রস্তুত করার ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহিত করেছেন।(রহমাতুল্লাহিল ওয়াসিয়াহ ৫/৩৯৪)
✓✓সালাফি আলেম আসাদুল্লাহ আল গালিব (হাফি)-ও এই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন- ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার উপায় হ’ল দু’টি : দাওয়াত ও জিহাদ। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোন বিপ্লব সংগঠিত করতে হলে উদ্দিষ্ট বিষয়ের জোরালো প্রচার-প্রচারণা চালানের কোন বিকল্প নেই। নীতি, আদর্শ আর কর্মসূচী অক্ষুণ্ণ রেখে জনমত সৃষ্টি করতে হয়। যাতে করে মানুষের চিন্তা জগতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)ও তার আদর্শ প্রচার করে যিন্দাদিল মর্দে মুজাহিদরূপী একদল নিবেদিতপ্রাণ কর্মীবাহিনী তৈরী করেছিলেন। তাদের ত্যাগপুত মানসিকতায় ইসলাম একদিন মক্কা-মদীনার গন্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মুসলমানদের কাংখিত খেলাফত। আজকের দিনেও ঐ একই পদ্ধতি অনুসরণ করলে আবারও খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং প্রথমোক্তটির মাধ্যমে ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করতে হবে। তাদের চিন্তাধারায় বিপ্লব আনতে হবে। দ্বিতীয়টির জন্য ব্যাপক বস্ত্তগত যোগ্যতা ও ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এজন্য ইসলাম বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে প্রথমে সীসাঢালা সাংগঠনিক শক্তি অর্জন করতে হবে। এটাই হবে জিহাদের সর্বপ্রধান হাতিয়ার। (ইসলামী খেলাফত ও নেতৃত্ব নির্বাচন ১৮-১৯ পৃঃ)
✓✓সৌদির সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ লিল-বুহূছ আল-ইলমিইয়া ওয়াল-ইফতা থেকে একটি প্রশ্নের বলা হয়েছে, যে সব দেশে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক শাসনব্যবস্থা চালু নাই সেসব দেশের মুসলমানদের উপর ফরজ ইসলামী হুকুমত ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা নিয়োজিত করা এবং যে দল ইসলামী হুকুমত বাস্তবায়ন করবে বলে তারা ধারনা করেন সে দলকে একজোটে সবাই মিলে সহযোগিতা করা। পক্ষান্তরে, যে দল ইসলামী শরিয়া বাস্তবায়ন না করার প্রতি আহ্বান জানায় সে দলকে সহযোগিতা করা নাজায়েয। বরং এ ধরনের সহযোগিতা ব্যক্তিকে কুফরের দিকে ধাবিত করে। দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণী: “আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের মাঝে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী বিধান দিন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, যাতে করে আল্লাহ আপনার প্রতি যা নাযিল করেছেন তারা এর কোন কিছু হতে আপনাকে বিচ্যুত করতে না পারে। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের কিছু পাপের শাস্তি দিতে চান। নিশ্চয় মানুষের মধ্যে অনেকেই ফাসেক। তারা কি জাহেলিয়াতের বিধান কামনা করে? যারা (আল্লাহর প্রতি) একীন রাখে তাদের কাছে আল্লাহর চেয়ে উত্তম বিধানদাতা কে?”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৪৯-৫০] এ কারণে যারা ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে না আল্লাহ তাদেরকে কাফের হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের সাথে সহযোগিতা করা থেকে, তাদেরকে মিত্র হিসেবে গ্রহণ করা থেকে সাবধান করেছেন। যদি মুমিনগণ প্রকৃত ঈমানদার হয় তাদেরকে তাকওয়া অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন: “হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করেতাদেরকে এবং অন্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।”।[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৫৭] আল্লাহই তাওফিকদাতা, আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।(গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি
শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল্লাহ গুদইয়ান। – স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১/৩৭৩) থেকে সমাপ্ত)
✓✓ মুফতি নিজামুদ্দিন শামজায়ি শহিদ (রহ.) এর বক্তব্য, যেখানে তিনি বলেছেন,- পৃথিবীতে ইসলামের বিজয় অর্জনের একটিই উপায়, যে উপায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রহণ করেছেন। আর সেটা হলো জিহাদের রাস্তা, যার মাধ্যমে এ পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হবে।(গণতন্ত্রের প্রকৃতি ও আকৃতি, তর্জুমানুল হাদীছ ১/২ সংখ্যা, ১৯৪৯ইং, পৃ. ৮৬)
তাই আমাদের কর্তব্য হল শরিয়া শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রচেষ্টা চালানো। হে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, মুসলিম উম্মাহর সকল সন্তানদের শরিয়া শাসন প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে সক্ষমতা দান করুন-আমীন
সংগৃহীত:
Comment