ইলম অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি ধাপ
ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ মিফতাহু দারিস সায়াদাহ গ্রন্থে বলেছেন ইলমের ছয়টি ধাপ রয়েছে। আর এগুলো হচ্ছে জ্ঞানর্জনের সিঁড়ি ।
ইলমের ছয়টি ধাপ সমূহ হলঃ
১.উপযুক্ত প্রশ্ন করা
২.মনযোগ-সহকারে শোনা ও চুপ থাকা
৩.উত্তম ভাবে অনুধাবন
৪.মুখস্থ করা
৫.অপরকে শিক্ষা দেয়া
৬.অর্জিত ইলমের ওপর আমল করা (১)
ইলমের ছয়টি ধাপ সমূহ হলঃ
১.উপযুক্ত প্রশ্ন করা
২.মনযোগ-সহকারে শোনা ও চুপ থাকা
৩.উত্তম ভাবে অনুধাবন
৪.মুখস্থ করা
৫.অপরকে শিক্ষা দেয়া
৬.অর্জিত ইলমের ওপর আমল করা (১)
ইলম অর্জনের প্রথম ধাপ হলো,
উপযুক্ত প্রশ্ন করা এবং সঠিক উপায়ে জ্ঞান অন্মেষণ করা। কিছু লোক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয় কারণ তারা সঠিক প্রশ্ন করা এবং ইলমের অনুসন্ধানের বিষটি আয়ত্ত করা না।কেউ কেউ কোনো প্রশ্ন করে না। কিছু লোকের মনে প্রশ্ন এলেও তারা প্রশ্ন করে না। আবার অনেকে এমন বিষয়ে প্রশ্ন করেন যেগুলোর চেয়ে প্রশ্ন করা কিংবা জানতে চাওয়ার মতো আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ, মৌলিক বিষয় আছে।দ্বীনের জন্য অত্যন্ত জরুরি বিষয়গুলো বাদ দিয়ে কিছু মানুষ পড়ে থাকেন কেবল অহেতুক বিষয়গুলোর পেছনে। যাদের ইলম নেই, কীভাবে জ্ঞানার্জন করতে হবে এই নূন্যতম মৌলিক জ্ঞানটুকু যারা রাখে না এবং নিজে নিজেই দ্বীন শিখতে যান, তাদের অনেকে মধ্যে এ ধরনের সমস্যাগুলো দেখা যায়। তাই সালাফদের কেউ কেউ বলতেন,প্রশ্ন করার ধরন এবং জ্ঞান অন্মেষণের পদ্ধতিই হচ্ছে জ্ঞানের অর্ধেক(২) অর্থ্যাৎ সঠিকভাবে প্রশ্ন করা এবং ইলম অন্মেষণ করা হলো জ্ঞানের
অর্ধেক । তারা যথার্থ বলেছেন। ধরুন কেউ সবেমাত্র দ্বীন সম্পর্কে ইলম অর্জন শুরু করেছে – শুরুতেই যদি সে উত্তরাধিকার আইন (আল-ফারাইদ) বা এ –জাতীয় কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, অথচ সে ফিকহুত ত্বহারাহ – পবিত্র হওয়ার – নিয়মটুকু পর্যন্ত জানে না । তবে কি সেটা গ্রহনযোগ্য হবে? আরও বাস্তব উদাহারণও আছে। অনেক শুরুতেই আকিদাতুত ত্বহাবি পড়া শুরু করেন, বোঝার চেষ্টা করেন। অথচ এটা এতটাই কঠিন একটি কিতাব, যা বুঝতে গিয়ে আলিমরাও হিমশিম খান।
জ্ঞান অর্জনের দ্বিতীয় ধাপ হলো, শোনা এবং চুপ থাকা। বলা হয় যে,আলী ইবনু আবি তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন,
তোমরা যখন কোনো আলিমের কাছে বসবে তখন বলার চেয়ে শোনার জন্য বেশি আগ্রহী হবে। কথা না বলে মনোযোগ দিয়ে শুনবে
জ্ঞান অর্জনের তৃতীয় ধাপ হলো, অনুধাবন । এটা স্পষ্ট বিষয়।
চতুর্থ ধাপ হলো, হিফয অর্থ্যাৎ মুখস্থ করা। দ্বীন ইলম অর্জন এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো আপনাকে মুখস্থ করতে হবে।
পঞ্চম ধাপ হলো,তালিম। শিক্ষা দেয়া।জ্ঞান অর্জনের জন্য আপনাকে শেখাতে হবে।
ষষ্ঠ ধাপ হলো,জ্ঞানর্জনের ফলাফল। আর ইলমের ফলাফল হলো অর্জিত ইলমের ওপর আমল করা, অর্জিত ইলমের সীমারেখা মেনে চলা ও এর হক আদায় করা। আলী (রঃ) বলতেন, ইলম আমলকে ডাকে,যদি আমলের জবাব আসে তবে ইলম স্থায়ী হয়, না হলে মুছে যায়। ইমাম শাবি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ‘ইলমের ওপর আমল করার দ্বারা আমাদের জন্য ইলম মুখস্থ করা সহজ হতো’(৩)
ফুদাইল ইবনু আয়াদ্ব, মুহাম্মাদ ইবনু নাদর,সুফিয়ান ইবনু উইয়ানাহ,উমার ইবনু আলা রাহিমাহুল্লাহ এবং অন্যান্যদের থেকে এ ধরনের উক্তি আছে।
আল খাল্লাল রাহিমাহুল্লাহ তার ব্যাকরন শেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেছেন, আমি ব্যাকরন শিখতে যাবার পর প্রথম বছর চুপ ছিলাম। পরের বছর মনোযোগ দিয়ে ব্যাকারণ নিরীক্ষণ করলাম।তৃতীয় বছর আমি তা গভীরভাবে চিন্তা করলাম আর চতুর্থ বছরে গিয়ে আমি আমার শাইখকে প্রশ্ন করলাম অর্থ্যাৎ প্রশ্ন করতেই তাঁর চার বছর লেগে গিয়েছিল।
আমাদের এমন করার দরকার নেই। কিন্তু এ কথাগুলোর উদ্দেশ্য হলো, সালাফ ও আলিমগণের এ ঘটনাগুলো থেকে আমারা যেন বুঝতে পারি যে,জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে তারা কতটা ধৈয্যশীল ছিলেন। জ্ঞানর্জন মূলত একটি নিয়মতান্তিক, কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়া। কোনো বিক্ষিপ্ত, এলোমেলো ব্যাপার না।
১. মিফতাহু দারিস সায়াদাহ
২. এ মর্মে উমার উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সূত্রে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,’সুন্দরভাবে প্রশ্ন করা হলো ইলমের অর্ধেক। (মুসনাদুশ শিহাবঃ ৩৩, মাজমাউয যাওয়ায়িদঃ ৭২৭,শুয়াবুল ইমানঃ৬৫৬৮)
৩.ইবনু আবদিল বার রাহিমাহুল্লাহ জামিউ বায়ানিল ইলমঃ ২/১৪৮
(সংগ্রহীত)
Comment