উচু দেয়ালে ঘেরা একটি টিনশেডের পাকা বাসা। উঠানের কোণে একটি মেহেদি গাছ। তার পাশে তুলসি গাছ আর সদর দরজার দুই পাশে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়ানো দুটি ডাব গাছ। গ্রাম ঘেষা মফস্বলের সাধারন দু-চারটি বাড়ির মতই উঠানের একপাশে একটি রান্না ঘর আর বাড়ির দেয়ালের চারদিকে হরেক রকমের ফলের গাছ দিয়ে আরেকটি প্রাকৃতিক দেয়াল তৈরী করা। একটি সুখী পরিবারের জন্য যা যা লাগে সবই আছে। শুধু খালিদ নেই, যাও বা আছে সেটিও শুধু স্মৃতি হিসেবে।
খালিদ আর উম্মু মিকদাদের ভালোবাসার স্মৃতি হিসেবে আজ তিনটি সন্তান। মিকদাদ, মুহাম্মাদ আর মারিয়াম।
খালিদের শাহাদাতের ১৭ বছর পরেও নিঃসঙ্গতা উম্মু মিকদাদের ভালো সঙ্গী হয়ে আছে। কেন জানি এই নিঃসঙ্গতাই তার পছন্দ। হয়তো খালিদের স্মৃতিগুলোকে বেশি সময় দেয়া যায় এই জন্যই কিনা!!
প্রিয় মানুষের স্মৃতিগুলোকে মাঝে মাঝে মনে করে সেই চাদরে নিজেকে জড়িয়ে নেয়া উচিত। এতে প্রিয়জনের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। অন্তর থেকে অনেক দুয়াও আসে।
টিনের চালে কবুতর পালের ফিরে আসা আর তাদের মৃদু গুঞ্জন সব মিলেই এক প্রশান্তিদায়ক পরিবেশে চোখ বুঝে রান্নাঘরের সামনেই একটি মাদুরে বসে সন্ধ্যার আযকার করছে উম্মু মিকদাদ।
যেভাবেই হোক তাকে জীবিত ধরতে হবে। প্রায় ১০-১৫ জন লোকের সাথে একা কতক্ষন মারামারি করা যায়! তবুও আহত বাঘের মতই হাতে একটি গুলি ও মাথায় লাঠির আঘাত নিয়ে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে খালিদ, আর একসময় দূর্বল হয়ে যায় এবং তারা গ্রেফতার করে নিয়ে যায়... আর ৪ মাস অপেক্ষার পর খালিদের খবর আসে। আর তা হল তাকে তারা ক্রস ফায়ারে দিয়েছে।
১৭ বছর... আজো স্মৃতিগুলো উম্মু মিকদাদের মনে তাজা হয়ে আছে...।
"খালাম্মা, চা খাবেন"? বারংবার মানা করার পরেও একদম কানের কাছে এসে কথাটি জিজ্ঞেস করলো কাজের মেয়ে দিনা।
"না, তোমার খেতে ইচ্ছে হলে গিয়ে খাও।" চরম বিরক্তি নিজের মাঝে গোপন করে সহনশীলতার পরিচয় দিল উম্মু মিকদাদ।
স্বামীর শাহাদাতের ৮ বছরের মাথায় মিকদাদের দাদা-দাদিও ইন্তেকাল করেন। তখন খুবই চিন্তায় পরে গিয়েছিল মিকদাদের আম্মু। মিকদাদের বড় চাচা তখন থেকেই সংসারের হাল ধরে আছেন। তিনিই তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানদের পরিপূর্ণ পর্দার সাথে দেখ ভাল করে এসেছেন। আজ প্রায় বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এক বৃদ্ধ। ভাতিজা-ভাতিজিদের কখনো বাবার অভাব বুঝতে দিতে চান নি।
"আল্লাহ তায়ালা কাউকে ফেলে রাখেন না। আর একজন মুজাহিদের পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিয়েছেন। আর আমি আপনাদেরকে আমার আল্লাহর কাছে অনেক আগেই ন্যস্ত করে দিয়েছি। আমার আল্লাহ আমার চক্ষু অবশ্যই শীতল করবেন। আমি এই পৃথিবীতে থাকি বা না থাকি" কথাগুলো খালিদের ছিল, আর তার কথায় দৃঢ় বিশ্বাস ছিল মিকদাদের আম্মুর।
আল্লাহ তায়ালা এই মাজলুম শহীদের কথা ফেলে দেন নি। তাই তো আজ মিকদাদ খিলাফাহর (যা খালিদের শাহাদাতের সময় ছিল ইসলামিক আমিরাত অফ আফগানিস্তান) বাংগালি রেজিমেন্ট এর কমান্ডো ফোর্স এর কমান্ডার, মুহাম্মাদও গিয়েছে এবং এই রেজিমেন্ট এর ইনফেন্ট্রিতে চান্স পেয়েছে। আর মারিয়ামের বিয়ে হয়েছে স্থানীয় একজন তাওহীদবাদী আলিম এর সাথে।
এই হল শহীদ খালিদের আমানতগুলোর অবস্থা। যা সে তার শাহাদাতের অনেক আগেই তার রবের কাছে আমানত রেখে এসেছিল।
দূর থেকে আজানের সুমধুর আওয়াজ ভেসে আসছে।
"খালাম্মা, আপনার ঠান্ডা লাগবো। শীত আয়া পড়তাসে। চলেন রুমে যাই গা"-দিনার ডাকে মাদুর থেকে উঠে রুমের দিকে হাটা দিলেন এক শহীদের স্ত্রী আর দুই মুজাহিদের সবর করনে ওয়ালি এক মা।
(আজকের এই পর্ব আমাদের জমিনে বিভিন্ন তানজীমের পতাকাতলে শাহাদাৎ প্রাপ্ত সেই সকল সম্মানিত মুজাহিদিন এবং মুজাহিদিন শাইখ রাহিঃ গণের পরিবারবর্গের উদ্দেশ্যে।
যার মাঝে অগ্রগণ্য হলেন মুফতি সাহেব রাহিঃ এবং উনার সাথীরা,
শাইখ আব্দুর রহমান রাহিঃ এবং উনার সাথীরা
হজরত মুকুল রানা রাহিঃ এবং উনার সাথীরা... যাদের নাম কিছু কারণে উল্লেখ করা যাচ্ছে না।
হাসিমুখে ফাসীর রায় বরণকারী আমাদের ভাইয়েরা। আল্লাহ তায়ালা উনাদের সবাইকে কবুল করুন।
-সেই সকল সম্মানিতা বোন এই গল্পের উদ্দেশ্য যারা নিজের স্বামির সাথে বিপদসংকুল কাট-অফ জীবন বেছে নিয়েছেন। যাদের স্বামী বাসা থেকে কোন কাজে বের হলে বোনেরা এই আশংকায় ভুগেন হয়তো প্রিয় মানুষটির সাথে এটিই শেষ দেখা।
- সেই সকল সম্মানিতা বোনদের উদ্দেশ্যে যাদের স্বামীর শাহাদাতের পর দুনিয়া তাদের সামনে হাজির হলেও উনারা বেছে নিয়েছেন সবরের মারহালাকে।
- সেই সকল সম্মানিতা বোনদের উদ্দেশ্যে যাদের স্বামীরা বিগত প্রায় ৫ বছর ধরে তাগুতের কারাগারে বন্দি থেকে এখন ফাসীর রায় মাথায় নিয়ে তাকদির এর ফয়সালার জন্য অপেক্ষমান।
এই গল্পগুলোর মাকসাদ হল আমাদের জিহাদের পথিক ভাইদের সামনে মুজাহিদিন এর জীবনের বিভিন্ন অংশের অনূভুতিগুলো তুলে ধরা। যাতে করে উনারা এমন সিচুয়েশনে নিজেকে একা ফিল না করেন।
হে আমার প্রিয় ভাই মনে রাখবেন, "অনূভুতি গুলো একই শুধু ব্যক্তি আলাদা"।....)
খালিদ আর উম্মু মিকদাদের ভালোবাসার স্মৃতি হিসেবে আজ তিনটি সন্তান। মিকদাদ, মুহাম্মাদ আর মারিয়াম।
খালিদের শাহাদাতের ১৭ বছর পরেও নিঃসঙ্গতা উম্মু মিকদাদের ভালো সঙ্গী হয়ে আছে। কেন জানি এই নিঃসঙ্গতাই তার পছন্দ। হয়তো খালিদের স্মৃতিগুলোকে বেশি সময় দেয়া যায় এই জন্যই কিনা!!
প্রিয় মানুষের স্মৃতিগুলোকে মাঝে মাঝে মনে করে সেই চাদরে নিজেকে জড়িয়ে নেয়া উচিত। এতে প্রিয়জনের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। অন্তর থেকে অনেক দুয়াও আসে।
টিনের চালে কবুতর পালের ফিরে আসা আর তাদের মৃদু গুঞ্জন সব মিলেই এক প্রশান্তিদায়ক পরিবেশে চোখ বুঝে রান্নাঘরের সামনেই একটি মাদুরে বসে সন্ধ্যার আযকার করছে উম্মু মিকদাদ।
যেভাবেই হোক তাকে জীবিত ধরতে হবে। প্রায় ১০-১৫ জন লোকের সাথে একা কতক্ষন মারামারি করা যায়! তবুও আহত বাঘের মতই হাতে একটি গুলি ও মাথায় লাঠির আঘাত নিয়ে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে খালিদ, আর একসময় দূর্বল হয়ে যায় এবং তারা গ্রেফতার করে নিয়ে যায়... আর ৪ মাস অপেক্ষার পর খালিদের খবর আসে। আর তা হল তাকে তারা ক্রস ফায়ারে দিয়েছে।
১৭ বছর... আজো স্মৃতিগুলো উম্মু মিকদাদের মনে তাজা হয়ে আছে...।
"খালাম্মা, চা খাবেন"? বারংবার মানা করার পরেও একদম কানের কাছে এসে কথাটি জিজ্ঞেস করলো কাজের মেয়ে দিনা।
"না, তোমার খেতে ইচ্ছে হলে গিয়ে খাও।" চরম বিরক্তি নিজের মাঝে গোপন করে সহনশীলতার পরিচয় দিল উম্মু মিকদাদ।
স্বামীর শাহাদাতের ৮ বছরের মাথায় মিকদাদের দাদা-দাদিও ইন্তেকাল করেন। তখন খুবই চিন্তায় পরে গিয়েছিল মিকদাদের আম্মু। মিকদাদের বড় চাচা তখন থেকেই সংসারের হাল ধরে আছেন। তিনিই তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানদের পরিপূর্ণ পর্দার সাথে দেখ ভাল করে এসেছেন। আজ প্রায় বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এক বৃদ্ধ। ভাতিজা-ভাতিজিদের কখনো বাবার অভাব বুঝতে দিতে চান নি।
"আল্লাহ তায়ালা কাউকে ফেলে রাখেন না। আর একজন মুজাহিদের পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিয়েছেন। আর আমি আপনাদেরকে আমার আল্লাহর কাছে অনেক আগেই ন্যস্ত করে দিয়েছি। আমার আল্লাহ আমার চক্ষু অবশ্যই শীতল করবেন। আমি এই পৃথিবীতে থাকি বা না থাকি" কথাগুলো খালিদের ছিল, আর তার কথায় দৃঢ় বিশ্বাস ছিল মিকদাদের আম্মুর।
আল্লাহ তায়ালা এই মাজলুম শহীদের কথা ফেলে দেন নি। তাই তো আজ মিকদাদ খিলাফাহর (যা খালিদের শাহাদাতের সময় ছিল ইসলামিক আমিরাত অফ আফগানিস্তান) বাংগালি রেজিমেন্ট এর কমান্ডো ফোর্স এর কমান্ডার, মুহাম্মাদও গিয়েছে এবং এই রেজিমেন্ট এর ইনফেন্ট্রিতে চান্স পেয়েছে। আর মারিয়ামের বিয়ে হয়েছে স্থানীয় একজন তাওহীদবাদী আলিম এর সাথে।
এই হল শহীদ খালিদের আমানতগুলোর অবস্থা। যা সে তার শাহাদাতের অনেক আগেই তার রবের কাছে আমানত রেখে এসেছিল।
দূর থেকে আজানের সুমধুর আওয়াজ ভেসে আসছে।
"খালাম্মা, আপনার ঠান্ডা লাগবো। শীত আয়া পড়তাসে। চলেন রুমে যাই গা"-দিনার ডাকে মাদুর থেকে উঠে রুমের দিকে হাটা দিলেন এক শহীদের স্ত্রী আর দুই মুজাহিদের সবর করনে ওয়ালি এক মা।
(আজকের এই পর্ব আমাদের জমিনে বিভিন্ন তানজীমের পতাকাতলে শাহাদাৎ প্রাপ্ত সেই সকল সম্মানিত মুজাহিদিন এবং মুজাহিদিন শাইখ রাহিঃ গণের পরিবারবর্গের উদ্দেশ্যে।
যার মাঝে অগ্রগণ্য হলেন মুফতি সাহেব রাহিঃ এবং উনার সাথীরা,
শাইখ আব্দুর রহমান রাহিঃ এবং উনার সাথীরা
হজরত মুকুল রানা রাহিঃ এবং উনার সাথীরা... যাদের নাম কিছু কারণে উল্লেখ করা যাচ্ছে না।
হাসিমুখে ফাসীর রায় বরণকারী আমাদের ভাইয়েরা। আল্লাহ তায়ালা উনাদের সবাইকে কবুল করুন।
-সেই সকল সম্মানিতা বোন এই গল্পের উদ্দেশ্য যারা নিজের স্বামির সাথে বিপদসংকুল কাট-অফ জীবন বেছে নিয়েছেন। যাদের স্বামী বাসা থেকে কোন কাজে বের হলে বোনেরা এই আশংকায় ভুগেন হয়তো প্রিয় মানুষটির সাথে এটিই শেষ দেখা।
- সেই সকল সম্মানিতা বোনদের উদ্দেশ্যে যাদের স্বামীর শাহাদাতের পর দুনিয়া তাদের সামনে হাজির হলেও উনারা বেছে নিয়েছেন সবরের মারহালাকে।
- সেই সকল সম্মানিতা বোনদের উদ্দেশ্যে যাদের স্বামীরা বিগত প্রায় ৫ বছর ধরে তাগুতের কারাগারে বন্দি থেকে এখন ফাসীর রায় মাথায় নিয়ে তাকদির এর ফয়সালার জন্য অপেক্ষমান।
এই গল্পগুলোর মাকসাদ হল আমাদের জিহাদের পথিক ভাইদের সামনে মুজাহিদিন এর জীবনের বিভিন্ন অংশের অনূভুতিগুলো তুলে ধরা। যাতে করে উনারা এমন সিচুয়েশনে নিজেকে একা ফিল না করেন।
হে আমার প্রিয় ভাই মনে রাখবেন, "অনূভুতি গুলো একই শুধু ব্যক্তি আলাদা"।....)
Comment