অনেক দিন থেকে একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করছিলাম।বিষয়টা হলো অনেক দ্বীনি ভাইকে দ্বীনের পথে আসার প্রথম দিকে দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা, ইমানী শক্তি থাকে খুব বেশি। কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে যখন দ্বীন বুঝে,হক্বের সন্ধান পায় আস্তে আস্তে দ্বীনের কাজ করার আগ্রহ কমে যায়।আগের মত আগ্রহ থাকে না।কেউ কেউ তে পুরোই দূরে সরে যায়।
প্রায় চিন্তা করি এটা থেকে উত্তরন হওয়া জন্য কিভাবে চেষ্টা করতে পারি।
এটা থেকে উত্তরনের জন্য একটা বিষয় খুজে বের করেছি।
আমি প্রথমে একটা উদাহরনের মাধ্যমে বিষয়টা তুলে ধরবো।ইনশাআল্লাহ
একটি বট গাছ যখন আস্তে আস্তে বড় হয় তখন বটগাছটির শিকড় মাটির গভীরে যেতে থাকে। মাটি যত শক্তই হোক শিকড় খুব নরম ও চিকন হয়ে মাটি গভীর চলে যায়। বট গাছের জন্য শক্তি জোগাড় করে উপরে পাঠায়।অথচ মানুষ শুধু জানে বটগাছটির নীচে অনেক শিকড় আছে। কিন্তু মানুষ সেই শেকড় দেখে না।আস্তে আস্তে বটগাছটির মাটির উপরের মুল কান্ড বড় থাকে। কান্ড যত মোটা ও শক্ত হয় ততই গাছের জন্য ভালো হয়।মুল কান্ড থেকে প্রথম স্তরে কিছু ডাল বের হয়।প্রথম স্তরের ডালগুলো কান্ড থেকে অনেকটাই কম মোটা হয়।মনে করুন কান্ড যদি পাঁচ ফুট হয় তাহলে প্রথম স্তরের ডাল হয়ত তিন ফুট হবে।আর যদি কান্ড ছয় ফুট হয় তাহলে প্রথম স্তরের ডাল চার ফুট হতে পারে।প্রথম স্তরের ডাল যতটুকু মোটা হয় দ্বীতিয় স্তরের ডাল আরো একটু চিকন হয় এভাবে ক্রমান্বয়ে ডাল ছোট হতে থাকে। এক পর্যায়ে কিছু ডাল সামান্য বাতাসে ভেঙ্গে যায়।এতে গাছের তেমন কোন ক্ষতি হয় না। গাছ হতাশ হয় না বরং গাছ নতুন ডাল জন্ম নেয়।
লক্ষনীয় বিষয় হলো, প্রথম স্তরের ডালগুলো মুল কান্ডের কাছাকাছি থাকে বলেই দ্বীতিয় ও তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরের ডাল থেকে অনেকটা বড় হয় এবং মূল কান্ড থেকে কিছুটা ছোট হয়।আরেকটা লক্ষনীয় বিষয় হলো মুল কান্ড যত বড় হবে প্রথম স্তরের ডাল মূল কান্ডের মত তত মোটা না হলেও মুল কান্ড মোটার কারনে তুলনা মুলক একটু মোটা বেশিই হবে।
তৃতীয় লক্ষনীয় বিষয় হলো গাছের শিকড় যদি মাটির গভীরে না যেতে পারে তাহলে পুরো গাছটি হুমকির মুখে থাকে।
এটা থেকে আমাদের শিক্ষা হলো আল্লাহর জমীনে এমন কিছু মানুষ থাকে যারা দ্বীনের জন্য গোপনে অনেক কষ্ট করে।শিকড় যেমন খুব নরম হয়ে মাটির গভীরে যায় এবং আস্তে আস্তে মোটা হয় ও শক্ত হয় তেমনি কিছু মানুষ খুব সুক্ষ্ম ভাবে দ্বীনের জন্য গভীরে গিয়ে কষ্ট করে।
আরেক শ্রেনির দ্বীনদার হলো গাছের মুলকান্ডের ন্যায় যারা অনেক বেশি দ্বীনদার হবে। গাছের মূল কান্ড উপরে যেমন গাছের অন্যান্য ডাল পালা ভর করে থাকে। তেমনি মুল কান্ডের ন্যায় উচু মাপের দ্বীনদ্বাররা অন্যান্য কম দ্বীনদ্বান দের দুঃখসুখের ভার বহন করার চেষ্টা করবে।
সমাজে কিছু দ্বীনদার থাকবে বড় ডালের ন্যায়। আবার কিছু থাকবে ছোট ডালের ন্যায়। কিছু থাকবে পাতার ন্যায় যারা সামান্য বাতাশে ঝরে পড়বে।কিন্তু যতই ছোট ডাল ঝরে পড়ুক বা পাতা ঝরে পড়ুক মুল কান্ড যদি খুব মোটা হয় থাহলে মুলকান্ড কিন্তু সামান্যও নড়াচড়া করে না।বরং সে স্থীর থেকে নতুন ডালের জন্ম দিবে।
আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করুন একজন মানুষ যখন ভালোবেসে কোন গাছ লাগায় তখন গাছটি বড় হলে এক সময় কাছটি কাটে।যখন গাছটি কাটে তখন ছোট ডালগুলোকে এত কোপ বা দুই কোপেই কেটে যায়। ছোট গুলো থেকে একটু বড়গুলো যখন কাটে তখন আরও বেশি কোপাতে হয়।আর যখন মুল কান্ড কাটে তখন আঘাতের পর আঘাত করে।এরপর গাছটি যখন পড়ে যায় তখন গাছটিকে কেটে কেটে টুকরো টুকরো করে কাঠ বানায় এবং সেটা দিয়ে ঘর বা অন্য কিছু তৈরি করে। এভাবে গাছটি সফল হয়।
যারা গাছের ডালপালার ন্যায় দ্বীনদার তারা অনেকে খুব সহজেই শহীদ হোন বা দ্বীনের উপরে অটল থেকে সাধারন মৃত্যু বরন করেন। কিন্তু যারা গাছের মুল কান্ডের কাছাকাছি ডালগুলোর ন্যায় দ্বীন দ্বার তারা তুলনা মুলক বেশি কষ্ট সহ্য করতে হয়।আর যারা
মুল কান্ডের ন্যায় তারা অনেক বেশি কষ্ট শিকার হতে হয়। তাদের কারো শরির টুকরা টুকরা হয়।কারো শরীর মাহমুদ হাসান দেহবন্দীর মত আগুনে পুড়তে হয়।
কে হবে মুলকান্ড?
গাছের মুল কান্ড যতমোটা হয় প্রথম স্তরের ডালগুলো ততমোটা হয়।
প্রতি গ্রামে এমন কিছু মুলকান্ড থাকার প্রয়োজন যাদের জীবনের সব কিছু হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। যাদের নিজেদের কোন লক্ষ্য থাকবে না।যারা দুনিয়াতে থাকবে কিন্তু দুনিয়া তাদের অন্তরে থাকবে না।গ্রামের যুবক তরুনরা তাদের কাছে আসলে পাশে বসলে ইমান বাড়বে। তারা এত বেশি দ্বীনদার হবে যে,যে কথা দিয়ে তারা দাওয়া দিবে সে কথার দ্বারা প্রথমে নিজেরা প্রভাবিত হবে।যেমন জাহান্নামের আলোচনা করলে প্রথমে নিজের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরবে। প্রিয় নবী (সাঃ)নিয়ে আলোচনা করলে প্রথমে নিজেদের চোখে অশ্রু পড়বে।
এভাবে তাদের দ্বারা পুরো সমাজে তাদের ডালপালা গুলো বিস্তার করবে।কিন্তু বর্তমান সমস্যা হলো মুলকান্ডের ন্যায় দ্বীনদার খু্বই কম। যার দরুন সাধারন দ্বীনদাররা এমন কাউকে খুজে পান খুবই কম। যার কাছে আসলে কথা শুনলে তাদের ইমান বাড়বে।
দেখুন আমাদের মাঝে পুরো কোরআন ও হাদিস আছে। অথচ সাহাবীদের মাঝে কোন কোন সাহাবী ইমান আনার পর এত ওয়াজ নসীহাহ শুনার সুযোগ পান নি বা হয়ত কোরআনের দুই একটি আয়াত শুনেছেন।এমনকি অনেকে বিপদ ও সবর ফজিলত সম্পর্কে তেমন জানার সুযোগ হয় নি।ইমান আনার পরেই কঠিন নির্যাতন সহ্য করেছেন।এত কঠিক নির্যাতন সহ্য করেও তারা একচুলও পিছপা হন নি দ্বীন থেকে। তারা অটল ছিলেন।কিন্তু কিভাবে তারা এমন হযেছেন?
কারন তারা এমন এক ব্যক্তির সাহাবী হয়েছেন যিনি পৃথিবীর সর্বশেষ্ঠ মানুষ। যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়।তাই ওনার সাহাবীরাও হয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ সাহাবী।
আজকেও কোন ব্যক্তি যদি এমন লোকের সাথী হয় যিনি প্রিয় নবী (সাঃ) কে বেশি ভালোবাসেন বেশি অনুসরন করেন।তাহলে ওই ব্যাক্তি (সাথী)ও অনেক বেশি দ্বীনদার হয়ে যান।
আজ আমরা এরকম ভালো মানুষের সাথী হওয়া যদি কঠিন হয় ভাল মানুষ খুজে পাওয়া যদি কঠিন হয়।তাহলে আমাদের নিজেদেরকেই এমন হতে হবে যেন আমরাই নিজের থেকেই অনেক চেষ্টা করে গাছের মুল কান্ডের ন্যায় দ্বীনদার হতে পারি। যেন আমাদের কথা শুনলে মানুষের ইমান বাড়ে।যে ছেলেটা একটা সময় দ্বীনের পথে খুব কষ্ট করত আর এখন ইমান দুর্বল হয়ে গেছে সে যেন আমাদের কাছে আসলে আবার তার ইমান বাড়ে দ্বীনের কাজ করতে উৎসাহিত হয়।
মনে রাখবেন প্রতিটি গ্রামেই এমন একজন মুলকান্ড থাকা প্রয়োজন।যাতে গ্রামের সব যুবকের প্রয়োজন হলেই মুলকান্ডের কান্ডের কাছে আসতে পারে।
আর সেই ব্যক্তি আপনি নিজেই হওয়ার চেষ্টা করুন।দ্বীনের জন্য যদি আপনার ক্যারিয়ার বা স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয় তাহলে দিয়ে দিন।আপনি একজন যদি ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন বাদ দিয়ে দ্বীনের জন্য কাজ করে জান। তাহলে সমাজে ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ারের অভাবে হবে না।বরং আপনার কারনে এমন অনেক ডাক্তার হবে যারা হবে সমাজের সেবক। আপনি যদি অনেক টাকা ওয়ালা হয়ে সমাজে দান সাদকার করার স্বপ্ন বাদ দিয়ে ভালো দায়ী হন তাহলে এমন অনেক লোক তৈরি হবে যারা নিজেদের যাকাতের অংশ দিয়ে সমাজের দারিদ্র বিমোচন করবে।
উচু মাপের দ্বীনদার হওয়ার উপায়ঃ
যদি কোন ভাই চান একজন ভালো মানের দ্বীনদার হতে। যদি চান এমন দ্বীনদার হতে যারা কথা শুনলে মানুষের ইমান বাড়বে। তাহলে আপনি এমন কোথাও কিছুদিন থাকুন যেখানে আপনার দ্বারা একটি ছোট গুনাহও হবে না। আপনি সারাদিন রোযা,তেলোয়াত, ইলম অর্জন সহ আরো অনেক ইবাদাতে মনোনিবেশ করতে পারবেন।আপনি দ্বীনের প্রতিটি সময় ইবাদাতে কাটাতে পারবেন।নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়তে পারবেন।যদি কোন ভালো নেককার আলেমের সংস্পর্শে থাকতে পারেন তাহলেতো আরো অনেক ভালো।
আপনি যত বেশি ইবাদাত করবেন আল্লাহ সাথে সম্পর্ক তত বাড়তে থাকবে।আপনি চোখ দিয়ে পানি ঝরাতে পারবেন।আপনার অন্তরে নুর বাড়বে।ইবাদাতের পাশাপাশি আপনি ইলম অর্জন করবেন।বিশেষ করে রাসুল সাঃ এর উপর মাক্কী যুগে যে আয়াত গুলো নাযিল হয়েছে সেগুলো মুখস্ত করতে পারেন এবং তাফসীর ভালোভাবে পড়ে নিতে পারেন। তাহলে আপনার দ্বারা দাওয়াতি কাজ হবে খুবই বেশি।আপনিও হতে পারবেন গাছের মুলকান্ডের ন্যায় ইমানদ্বার।ইনশাআল্লাহ
যখন আপনার গ্রামের কারো ইমান কমবে, তখই আপনার কাছে এসে বসলে ওয়াজ নসিহাহ শুনলে ইমান বাড়বে।
আমাদের উচিত নিজেদেরকে নিজেদের গ্রাম, শহর, পরিবার, পরিজনের জন্য এমন বন্ধু হওয়া, এমন সঙ্গী হওয়া, এমন ছেলে হওয়া, যেন আমাদের কথা শুনলেই মরা গাছে আবার শাখা মেলে এবং সতেজ হয়ে উঠে।
আজ এমন দ্বীনদারের খুবই অভাব। যার ফলে সাধারন বা সাধারন থেকে একটু ভালো দ্বীনদার যারা আছেন তারা একটা সময় ভালো দ্বীন পালন করলেও খুব ভালো পর্যায়ের দ্বীনদারের সংস্পর্শের অভাবে আস্তে আস্তে দ্বীনি কাজ থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান।
আমার অভিজ্ঞতাঃ
আমি কিছু দিন(হয়ত দশ বা এগারো)একটা জায়গায় আবদ্ব ছিলাম।যেখানে আমি অনেক বেশি ইবাদাত করতাম।প্রায় নয় থেকে দশটার মত রোযা রেখেছি।প্রায় প্রতিদিন তাহাজ্জুদ পড়েছি।
কুরআন তেলোয়াত, চাশতের নামায,ও ইলম অর্জনে প্রায় ব্যাস্ত থাকতাম।
এরপরে কয়েক দিন আমার এমন অবস্থা হয়েছিলো যে,আমি বড় বড় যত আলেম ও ইমাম আছেন যেমন ইমাম আবু হানিফা, ইবনে তাইমিয়া, ও বর্তমানের অনেক আলেমের ত্যাগ ও কষ্টের কথা চিন্তা করতাম। তারা আল্লাহকে কত সন্তুষ্ট করেছে এটা ভেবে কাদতাম। আর ভাবতাম যদি আমিও তাদের মত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারতাম।
দ্বীনের ব্যাপারে আমার মাথায় নানা পরিকল্পনা আসতো।কিন্তু একটা পর্যায়ে এসব আস্তে আস্তে কমে গেছে।
আমি এখন ভাবি যদি আর কিছু দিন এভাবো থাকতাম কতই না উত্তম হতো।
প্রিয় ভাই, আপনার যদি দ্বীনি কাজ করার আগ্রহ থাকে তাহলে আপনিও পারবেন দ্বীনের জন্য অনেক বড় কিছু করতে।আর এ আগ্রহ আনার জন্য আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা প্রয়োজন। যদি আল্লাহর ভালোবাসা লাভের আগ্রহ না থাকে তাহলে আপনি যদি যতই জ্ঞানী হন না কেন এটা দ্বারা তেমন ফায়দা হবে না।তাই আগ্রাহ আনার জন্য অবশ্যই কোন বড় আলেমের বা ভালো কোন পরিবেশে থেকে প্রচন্ড ইবাদাত করার প্রতি মনোনিবেশ করুন।
আপনি মুল কান্ড হওয়ার চেষ্টা করুন।
সবাই ভালো পরিবেশে যাওয়ার সুযোগ হবে না। সবাই ভালো আমলদ্বার আলেমের সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ হবে না। তবে আপনি যদি আপনার গ্রামের জন্য ভালো আমলদার হতে পারেন তাহলে গ্রামের যুবক খুব সহজে আপনার সান্নিধ্যে লাভ করে আখেরাতের জন্য লাভবান হবে।আপনি নিজেকে একজন ভালো দ্বীনদার বন্ধু হিসেবে গ্রামের যুবকদেরকে উপহার দিন।আপনি হয়ে গ্রামের যুবকদের জন্য অক্সিজেনের মত হয়ে যান।অক্সিজেন মানুষের জন্য খাদ্য ও পানীয়র চেয়ে বেশি প্রয়োজন। অথচ যেট বেশি প্রয়োজন সেটা মানুষ খুব সহজে লাভ করতে পারে।আপনি এমন বন্ধু হোন যেন যুবকদের দুঃখ কষ্টে আপনাকে বেশি প্রয়োজন মনে করে। আপনার নিকট পরামর্শের জন্যে আসে এবং আপনাকে খুব সহজে পেয়ে যায়।।
সবাই কুরআন ও হাদিস শিখার সুযোগ হয়ত পাবে না।কারন অনেকেরই বিভিন্ন পারিবারিক জামেলা থাকে বা অন্য সমস্যা থাকে। তাই আপনি কুরআন ও হাদিসে বিষদ ইলম অর্জন করুন যেন যুবকরা আপনার দ্বারা জ্ঞান তৃষ্ণা মেটাতে পারে।
বিষেশ করে আপনি কোথাও কিছু দিন থেকে কুরআনের সেই আয়াত গুলো মুখস্ত করুন যেগুলো মাক্কী জীবনে নাযিল হয়েছে।
মনে রাখবেন,আপনি যতই নিজের জ্ঞান ও গভেষনার আলোকে ওয়াজ করুন না কেন। কুরআন দিয়ে ওয়াজ করার মত ফলফসু হবে না।কারন কুরআন তার কালাম যিনি আপনাকে জ্ঞান দিয়েছেন।
যুগে যুগে মুলকান্ডঃ
আপনি যদি ইতিহাসের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন যুগে যুগে যখনই মুসলিমদের অবস্থা খুবই নাজুক হয়েছিলো।তখন এমন কিছু মুজাহিদ মুজাদ্দিদ তৈরি হয়েছেন যারা পরবর্তীকালে মুসলিমদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনেছেন।
আপনি যদি এই বড় বড় দ্বীনদারদের অবস্থা খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন এই বড় বড় দ্বীনদাররা কোন মারাত্মক পরিস্থিতি,বা কোন বড় আলেমের সংস্পর্শে এসে ভালো দ্বীনদার হয়েছেন।
এরাই হয়েছেন যুগের মুলকান্ড। এদের প্রথম স্তরের যে ডাল বের হয়েছে এ ডালগুলো তুলনা মুলক দ্বীতিয় তৃতীয় স্তরের ডাল থেকে অনেক চিকন ছিলো।
যখন তাতারীদের নির্যাতনে মুসলিম বিশ্বের অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। ঠিক তখনই মিশরে এমন কিছু লোক তৈরি হলো যাদের বলা হতো মামলুক। তারা তাতারীদের হাতে নির্যাতিত মুসলিমদের সন্তান। যাদের কে তাতারীরা দাশ হিসেবে বিক্রি করেছে। এই দাসেরাই বিভিন্ন মারাত্নক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে এমন ইমানদার হয়েছেন।যাদের দ্বারা আল্লাহ তাতারীদের পতনের সুচনা করিয়েছে।এই ইমানদাররা ছিলো মুলকান্ড।
আপনি উসমানিয় খেলাপতের দিকে তাকান।যখন জুলুম নির্যাতনে ভরে গেছে তখন উসমানীয় খেলাপতের প্রথমদিকে এমন সুলতান তৈরী হয়েছে যাদের থেকে পরবর্তীতে অনেক ভালো সুলতান এসেছেন।কিন্তু আস্তে আস্তে শেষের দিকে সুলতানরা আগেরদের চেয়ে দুর্বল ইমানদ্বার হয়ে যান।
আপনি বালাকোট শহীদ সাইয়্যেদ আহমদ বেরেলবির রহঃ দিকে তাকিয়ে দেখুন। যখন তিনি অনুভব করলেন জালিম দের শোষন থেকে উপমহাদেশ মুক্ত করতে হবে।তখন তিনি চলে গেলেন এমন একজনের কাছে যিনি ছিলেন বিখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালিওল্লাহ দেহলবীর নিকট।তার সান্নিধ্যে দীর্ঘদিন থেকে ইলম অর্জন করেছেন।তার সান্নিধ্যে থেকে এমন এক মুলকান্ড হয়েছে যারা শাখাপ্রশাখা সারা উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এভাবে দেওবন্দ মাদরাসার প্রথম দিকের আলেমদের নিয়ে চিন্তা করুন। তারা দ্বীনের জন্য কি পরিমান কষ্ট, নির্যাতন সহ্য করেছেন!কিন্তু পরবর্তীতে তাদের মত ইমানদার কি তৈরী হয়েছে? দেহবন্দ থেকে ভালো ভালো আলেম গড়ে উঠলেও তাদের মত বড় আলেম গড়ে উঠে নি।এখনতো অনেকে খুব ভালো আলেম না।
পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় যখনই কোন জালেমের আবির্ভাব হয়েছে মুসলিমদের নাজুক অবস্থা হয়েছে। তখন এমন কিছু মুসলিম তৈরি হয়েছেন যারা নির্যাতন ও কষ্ট সহ্য করে এমন ইমানদার হয়েছেন যারা যুগের মুলকান্ড রুপান্তরিত হয়েছে।
কিন্তু আজকে কোন ভাই দ্বীনের পথে আসলে আরেক রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।যদিও আগের মত ওরকম নির্যাতন সবার আসে না।কিন্তু সুখের ও স্বাধীনতার ফেতনা এমন ভাবে আমাদের গ্রাস করে। আমরা একটা সময় বিভিন্ন অশ্লীলতা ও বেহায়াপনায় জড়িয়ে যাই।আমরা এসবের কারনে দ্বীন থেকে দুরে সরে যাই।তাই আমাদেরকে কোথাও কোন ভালো জায়গায় ভালো মানুষের সান্নিধ্যে থেকে এমন হতে হবে যেন আমরা দ্বীনের অটল থাকতে পারি আমরা এক মুল কান্ডে রুপান্তরিত হতে পারি।আমদের কে আমাদের গ্রামের জন্য একেকটা সূর্য্য ☀ হতে হবে।যেন আমাদের দ্বারা পুরো গ্রাম আলোকিত হয়।
সুর্য্য শুধু দিনে আলো দেয় না।বরং রাতে যত বাতি জ্বলে সব বাতি জ্বলার পেছনে সূর্য্যর হাত থাকে।এমনকি সূর্য্যর মাঝে আল্লাহ এত শক্তি দিয়ে রেখেছেন যে,মানুষ, গাছপালার সব শক্তি আসে সূর্য্য থেকে।তাই আমদেরকেও আমাদের গ্রামের জন্য একটা সূর্য্য হতে হবে।যেন আমাদের দ্বারা গ্রামে হাজারো প্রদীপ জ্বলে উঠে।
প্রায় চিন্তা করি এটা থেকে উত্তরন হওয়া জন্য কিভাবে চেষ্টা করতে পারি।
এটা থেকে উত্তরনের জন্য একটা বিষয় খুজে বের করেছি।
আমি প্রথমে একটা উদাহরনের মাধ্যমে বিষয়টা তুলে ধরবো।ইনশাআল্লাহ
একটি বট গাছ যখন আস্তে আস্তে বড় হয় তখন বটগাছটির শিকড় মাটির গভীরে যেতে থাকে। মাটি যত শক্তই হোক শিকড় খুব নরম ও চিকন হয়ে মাটি গভীর চলে যায়। বট গাছের জন্য শক্তি জোগাড় করে উপরে পাঠায়।অথচ মানুষ শুধু জানে বটগাছটির নীচে অনেক শিকড় আছে। কিন্তু মানুষ সেই শেকড় দেখে না।আস্তে আস্তে বটগাছটির মাটির উপরের মুল কান্ড বড় থাকে। কান্ড যত মোটা ও শক্ত হয় ততই গাছের জন্য ভালো হয়।মুল কান্ড থেকে প্রথম স্তরে কিছু ডাল বের হয়।প্রথম স্তরের ডালগুলো কান্ড থেকে অনেকটাই কম মোটা হয়।মনে করুন কান্ড যদি পাঁচ ফুট হয় তাহলে প্রথম স্তরের ডাল হয়ত তিন ফুট হবে।আর যদি কান্ড ছয় ফুট হয় তাহলে প্রথম স্তরের ডাল চার ফুট হতে পারে।প্রথম স্তরের ডাল যতটুকু মোটা হয় দ্বীতিয় স্তরের ডাল আরো একটু চিকন হয় এভাবে ক্রমান্বয়ে ডাল ছোট হতে থাকে। এক পর্যায়ে কিছু ডাল সামান্য বাতাসে ভেঙ্গে যায়।এতে গাছের তেমন কোন ক্ষতি হয় না। গাছ হতাশ হয় না বরং গাছ নতুন ডাল জন্ম নেয়।
লক্ষনীয় বিষয় হলো, প্রথম স্তরের ডালগুলো মুল কান্ডের কাছাকাছি থাকে বলেই দ্বীতিয় ও তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরের ডাল থেকে অনেকটা বড় হয় এবং মূল কান্ড থেকে কিছুটা ছোট হয়।আরেকটা লক্ষনীয় বিষয় হলো মুল কান্ড যত বড় হবে প্রথম স্তরের ডাল মূল কান্ডের মত তত মোটা না হলেও মুল কান্ড মোটার কারনে তুলনা মুলক একটু মোটা বেশিই হবে।
তৃতীয় লক্ষনীয় বিষয় হলো গাছের শিকড় যদি মাটির গভীরে না যেতে পারে তাহলে পুরো গাছটি হুমকির মুখে থাকে।
এটা থেকে আমাদের শিক্ষা হলো আল্লাহর জমীনে এমন কিছু মানুষ থাকে যারা দ্বীনের জন্য গোপনে অনেক কষ্ট করে।শিকড় যেমন খুব নরম হয়ে মাটির গভীরে যায় এবং আস্তে আস্তে মোটা হয় ও শক্ত হয় তেমনি কিছু মানুষ খুব সুক্ষ্ম ভাবে দ্বীনের জন্য গভীরে গিয়ে কষ্ট করে।
আরেক শ্রেনির দ্বীনদার হলো গাছের মুলকান্ডের ন্যায় যারা অনেক বেশি দ্বীনদার হবে। গাছের মূল কান্ড উপরে যেমন গাছের অন্যান্য ডাল পালা ভর করে থাকে। তেমনি মুল কান্ডের ন্যায় উচু মাপের দ্বীনদ্বাররা অন্যান্য কম দ্বীনদ্বান দের দুঃখসুখের ভার বহন করার চেষ্টা করবে।
সমাজে কিছু দ্বীনদার থাকবে বড় ডালের ন্যায়। আবার কিছু থাকবে ছোট ডালের ন্যায়। কিছু থাকবে পাতার ন্যায় যারা সামান্য বাতাশে ঝরে পড়বে।কিন্তু যতই ছোট ডাল ঝরে পড়ুক বা পাতা ঝরে পড়ুক মুল কান্ড যদি খুব মোটা হয় থাহলে মুলকান্ড কিন্তু সামান্যও নড়াচড়া করে না।বরং সে স্থীর থেকে নতুন ডালের জন্ম দিবে।
আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করুন একজন মানুষ যখন ভালোবেসে কোন গাছ লাগায় তখন গাছটি বড় হলে এক সময় কাছটি কাটে।যখন গাছটি কাটে তখন ছোট ডালগুলোকে এত কোপ বা দুই কোপেই কেটে যায়। ছোট গুলো থেকে একটু বড়গুলো যখন কাটে তখন আরও বেশি কোপাতে হয়।আর যখন মুল কান্ড কাটে তখন আঘাতের পর আঘাত করে।এরপর গাছটি যখন পড়ে যায় তখন গাছটিকে কেটে কেটে টুকরো টুকরো করে কাঠ বানায় এবং সেটা দিয়ে ঘর বা অন্য কিছু তৈরি করে। এভাবে গাছটি সফল হয়।
যারা গাছের ডালপালার ন্যায় দ্বীনদার তারা অনেকে খুব সহজেই শহীদ হোন বা দ্বীনের উপরে অটল থেকে সাধারন মৃত্যু বরন করেন। কিন্তু যারা গাছের মুল কান্ডের কাছাকাছি ডালগুলোর ন্যায় দ্বীন দ্বার তারা তুলনা মুলক বেশি কষ্ট সহ্য করতে হয়।আর যারা
মুল কান্ডের ন্যায় তারা অনেক বেশি কষ্ট শিকার হতে হয়। তাদের কারো শরির টুকরা টুকরা হয়।কারো শরীর মাহমুদ হাসান দেহবন্দীর মত আগুনে পুড়তে হয়।
কে হবে মুলকান্ড?
গাছের মুল কান্ড যতমোটা হয় প্রথম স্তরের ডালগুলো ততমোটা হয়।
প্রতি গ্রামে এমন কিছু মুলকান্ড থাকার প্রয়োজন যাদের জীবনের সব কিছু হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। যাদের নিজেদের কোন লক্ষ্য থাকবে না।যারা দুনিয়াতে থাকবে কিন্তু দুনিয়া তাদের অন্তরে থাকবে না।গ্রামের যুবক তরুনরা তাদের কাছে আসলে পাশে বসলে ইমান বাড়বে। তারা এত বেশি দ্বীনদার হবে যে,যে কথা দিয়ে তারা দাওয়া দিবে সে কথার দ্বারা প্রথমে নিজেরা প্রভাবিত হবে।যেমন জাহান্নামের আলোচনা করলে প্রথমে নিজের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরবে। প্রিয় নবী (সাঃ)নিয়ে আলোচনা করলে প্রথমে নিজেদের চোখে অশ্রু পড়বে।
এভাবে তাদের দ্বারা পুরো সমাজে তাদের ডালপালা গুলো বিস্তার করবে।কিন্তু বর্তমান সমস্যা হলো মুলকান্ডের ন্যায় দ্বীনদার খু্বই কম। যার দরুন সাধারন দ্বীনদাররা এমন কাউকে খুজে পান খুবই কম। যার কাছে আসলে কথা শুনলে তাদের ইমান বাড়বে।
দেখুন আমাদের মাঝে পুরো কোরআন ও হাদিস আছে। অথচ সাহাবীদের মাঝে কোন কোন সাহাবী ইমান আনার পর এত ওয়াজ নসীহাহ শুনার সুযোগ পান নি বা হয়ত কোরআনের দুই একটি আয়াত শুনেছেন।এমনকি অনেকে বিপদ ও সবর ফজিলত সম্পর্কে তেমন জানার সুযোগ হয় নি।ইমান আনার পরেই কঠিন নির্যাতন সহ্য করেছেন।এত কঠিক নির্যাতন সহ্য করেও তারা একচুলও পিছপা হন নি দ্বীন থেকে। তারা অটল ছিলেন।কিন্তু কিভাবে তারা এমন হযেছেন?
কারন তারা এমন এক ব্যক্তির সাহাবী হয়েছেন যিনি পৃথিবীর সর্বশেষ্ঠ মানুষ। যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়।তাই ওনার সাহাবীরাও হয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ সাহাবী।
আজকেও কোন ব্যক্তি যদি এমন লোকের সাথী হয় যিনি প্রিয় নবী (সাঃ) কে বেশি ভালোবাসেন বেশি অনুসরন করেন।তাহলে ওই ব্যাক্তি (সাথী)ও অনেক বেশি দ্বীনদার হয়ে যান।
আজ আমরা এরকম ভালো মানুষের সাথী হওয়া যদি কঠিন হয় ভাল মানুষ খুজে পাওয়া যদি কঠিন হয়।তাহলে আমাদের নিজেদেরকেই এমন হতে হবে যেন আমরাই নিজের থেকেই অনেক চেষ্টা করে গাছের মুল কান্ডের ন্যায় দ্বীনদার হতে পারি। যেন আমাদের কথা শুনলে মানুষের ইমান বাড়ে।যে ছেলেটা একটা সময় দ্বীনের পথে খুব কষ্ট করত আর এখন ইমান দুর্বল হয়ে গেছে সে যেন আমাদের কাছে আসলে আবার তার ইমান বাড়ে দ্বীনের কাজ করতে উৎসাহিত হয়।
মনে রাখবেন প্রতিটি গ্রামেই এমন একজন মুলকান্ড থাকা প্রয়োজন।যাতে গ্রামের সব যুবকের প্রয়োজন হলেই মুলকান্ডের কান্ডের কাছে আসতে পারে।
আর সেই ব্যক্তি আপনি নিজেই হওয়ার চেষ্টা করুন।দ্বীনের জন্য যদি আপনার ক্যারিয়ার বা স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয় তাহলে দিয়ে দিন।আপনি একজন যদি ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন বাদ দিয়ে দ্বীনের জন্য কাজ করে জান। তাহলে সমাজে ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ারের অভাবে হবে না।বরং আপনার কারনে এমন অনেক ডাক্তার হবে যারা হবে সমাজের সেবক। আপনি যদি অনেক টাকা ওয়ালা হয়ে সমাজে দান সাদকার করার স্বপ্ন বাদ দিয়ে ভালো দায়ী হন তাহলে এমন অনেক লোক তৈরি হবে যারা নিজেদের যাকাতের অংশ দিয়ে সমাজের দারিদ্র বিমোচন করবে।
উচু মাপের দ্বীনদার হওয়ার উপায়ঃ
যদি কোন ভাই চান একজন ভালো মানের দ্বীনদার হতে। যদি চান এমন দ্বীনদার হতে যারা কথা শুনলে মানুষের ইমান বাড়বে। তাহলে আপনি এমন কোথাও কিছুদিন থাকুন যেখানে আপনার দ্বারা একটি ছোট গুনাহও হবে না। আপনি সারাদিন রোযা,তেলোয়াত, ইলম অর্জন সহ আরো অনেক ইবাদাতে মনোনিবেশ করতে পারবেন।আপনি দ্বীনের প্রতিটি সময় ইবাদাতে কাটাতে পারবেন।নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়তে পারবেন।যদি কোন ভালো নেককার আলেমের সংস্পর্শে থাকতে পারেন তাহলেতো আরো অনেক ভালো।
আপনি যত বেশি ইবাদাত করবেন আল্লাহ সাথে সম্পর্ক তত বাড়তে থাকবে।আপনি চোখ দিয়ে পানি ঝরাতে পারবেন।আপনার অন্তরে নুর বাড়বে।ইবাদাতের পাশাপাশি আপনি ইলম অর্জন করবেন।বিশেষ করে রাসুল সাঃ এর উপর মাক্কী যুগে যে আয়াত গুলো নাযিল হয়েছে সেগুলো মুখস্ত করতে পারেন এবং তাফসীর ভালোভাবে পড়ে নিতে পারেন। তাহলে আপনার দ্বারা দাওয়াতি কাজ হবে খুবই বেশি।আপনিও হতে পারবেন গাছের মুলকান্ডের ন্যায় ইমানদ্বার।ইনশাআল্লাহ
যখন আপনার গ্রামের কারো ইমান কমবে, তখই আপনার কাছে এসে বসলে ওয়াজ নসিহাহ শুনলে ইমান বাড়বে।
আমাদের উচিত নিজেদেরকে নিজেদের গ্রাম, শহর, পরিবার, পরিজনের জন্য এমন বন্ধু হওয়া, এমন সঙ্গী হওয়া, এমন ছেলে হওয়া, যেন আমাদের কথা শুনলেই মরা গাছে আবার শাখা মেলে এবং সতেজ হয়ে উঠে।
আজ এমন দ্বীনদারের খুবই অভাব। যার ফলে সাধারন বা সাধারন থেকে একটু ভালো দ্বীনদার যারা আছেন তারা একটা সময় ভালো দ্বীন পালন করলেও খুব ভালো পর্যায়ের দ্বীনদারের সংস্পর্শের অভাবে আস্তে আস্তে দ্বীনি কাজ থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান।
আমার অভিজ্ঞতাঃ
আমি কিছু দিন(হয়ত দশ বা এগারো)একটা জায়গায় আবদ্ব ছিলাম।যেখানে আমি অনেক বেশি ইবাদাত করতাম।প্রায় নয় থেকে দশটার মত রোযা রেখেছি।প্রায় প্রতিদিন তাহাজ্জুদ পড়েছি।
কুরআন তেলোয়াত, চাশতের নামায,ও ইলম অর্জনে প্রায় ব্যাস্ত থাকতাম।
এরপরে কয়েক দিন আমার এমন অবস্থা হয়েছিলো যে,আমি বড় বড় যত আলেম ও ইমাম আছেন যেমন ইমাম আবু হানিফা, ইবনে তাইমিয়া, ও বর্তমানের অনেক আলেমের ত্যাগ ও কষ্টের কথা চিন্তা করতাম। তারা আল্লাহকে কত সন্তুষ্ট করেছে এটা ভেবে কাদতাম। আর ভাবতাম যদি আমিও তাদের মত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারতাম।
দ্বীনের ব্যাপারে আমার মাথায় নানা পরিকল্পনা আসতো।কিন্তু একটা পর্যায়ে এসব আস্তে আস্তে কমে গেছে।
আমি এখন ভাবি যদি আর কিছু দিন এভাবো থাকতাম কতই না উত্তম হতো।
প্রিয় ভাই, আপনার যদি দ্বীনি কাজ করার আগ্রহ থাকে তাহলে আপনিও পারবেন দ্বীনের জন্য অনেক বড় কিছু করতে।আর এ আগ্রহ আনার জন্য আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা প্রয়োজন। যদি আল্লাহর ভালোবাসা লাভের আগ্রহ না থাকে তাহলে আপনি যদি যতই জ্ঞানী হন না কেন এটা দ্বারা তেমন ফায়দা হবে না।তাই আগ্রাহ আনার জন্য অবশ্যই কোন বড় আলেমের বা ভালো কোন পরিবেশে থেকে প্রচন্ড ইবাদাত করার প্রতি মনোনিবেশ করুন।
আপনি মুল কান্ড হওয়ার চেষ্টা করুন।
সবাই ভালো পরিবেশে যাওয়ার সুযোগ হবে না। সবাই ভালো আমলদ্বার আলেমের সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ হবে না। তবে আপনি যদি আপনার গ্রামের জন্য ভালো আমলদার হতে পারেন তাহলে গ্রামের যুবক খুব সহজে আপনার সান্নিধ্যে লাভ করে আখেরাতের জন্য লাভবান হবে।আপনি নিজেকে একজন ভালো দ্বীনদার বন্ধু হিসেবে গ্রামের যুবকদেরকে উপহার দিন।আপনি হয়ে গ্রামের যুবকদের জন্য অক্সিজেনের মত হয়ে যান।অক্সিজেন মানুষের জন্য খাদ্য ও পানীয়র চেয়ে বেশি প্রয়োজন। অথচ যেট বেশি প্রয়োজন সেটা মানুষ খুব সহজে লাভ করতে পারে।আপনি এমন বন্ধু হোন যেন যুবকদের দুঃখ কষ্টে আপনাকে বেশি প্রয়োজন মনে করে। আপনার নিকট পরামর্শের জন্যে আসে এবং আপনাকে খুব সহজে পেয়ে যায়।।
সবাই কুরআন ও হাদিস শিখার সুযোগ হয়ত পাবে না।কারন অনেকেরই বিভিন্ন পারিবারিক জামেলা থাকে বা অন্য সমস্যা থাকে। তাই আপনি কুরআন ও হাদিসে বিষদ ইলম অর্জন করুন যেন যুবকরা আপনার দ্বারা জ্ঞান তৃষ্ণা মেটাতে পারে।
বিষেশ করে আপনি কোথাও কিছু দিন থেকে কুরআনের সেই আয়াত গুলো মুখস্ত করুন যেগুলো মাক্কী জীবনে নাযিল হয়েছে।
মনে রাখবেন,আপনি যতই নিজের জ্ঞান ও গভেষনার আলোকে ওয়াজ করুন না কেন। কুরআন দিয়ে ওয়াজ করার মত ফলফসু হবে না।কারন কুরআন তার কালাম যিনি আপনাকে জ্ঞান দিয়েছেন।
যুগে যুগে মুলকান্ডঃ
আপনি যদি ইতিহাসের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন যুগে যুগে যখনই মুসলিমদের অবস্থা খুবই নাজুক হয়েছিলো।তখন এমন কিছু মুজাহিদ মুজাদ্দিদ তৈরি হয়েছেন যারা পরবর্তীকালে মুসলিমদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনেছেন।
আপনি যদি এই বড় বড় দ্বীনদারদের অবস্থা খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন এই বড় বড় দ্বীনদাররা কোন মারাত্মক পরিস্থিতি,বা কোন বড় আলেমের সংস্পর্শে এসে ভালো দ্বীনদার হয়েছেন।
এরাই হয়েছেন যুগের মুলকান্ড। এদের প্রথম স্তরের যে ডাল বের হয়েছে এ ডালগুলো তুলনা মুলক দ্বীতিয় তৃতীয় স্তরের ডাল থেকে অনেক চিকন ছিলো।
যখন তাতারীদের নির্যাতনে মুসলিম বিশ্বের অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। ঠিক তখনই মিশরে এমন কিছু লোক তৈরি হলো যাদের বলা হতো মামলুক। তারা তাতারীদের হাতে নির্যাতিত মুসলিমদের সন্তান। যাদের কে তাতারীরা দাশ হিসেবে বিক্রি করেছে। এই দাসেরাই বিভিন্ন মারাত্নক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে এমন ইমানদার হয়েছেন।যাদের দ্বারা আল্লাহ তাতারীদের পতনের সুচনা করিয়েছে।এই ইমানদাররা ছিলো মুলকান্ড।
আপনি উসমানিয় খেলাপতের দিকে তাকান।যখন জুলুম নির্যাতনে ভরে গেছে তখন উসমানীয় খেলাপতের প্রথমদিকে এমন সুলতান তৈরী হয়েছে যাদের থেকে পরবর্তীতে অনেক ভালো সুলতান এসেছেন।কিন্তু আস্তে আস্তে শেষের দিকে সুলতানরা আগেরদের চেয়ে দুর্বল ইমানদ্বার হয়ে যান।
আপনি বালাকোট শহীদ সাইয়্যেদ আহমদ বেরেলবির রহঃ দিকে তাকিয়ে দেখুন। যখন তিনি অনুভব করলেন জালিম দের শোষন থেকে উপমহাদেশ মুক্ত করতে হবে।তখন তিনি চলে গেলেন এমন একজনের কাছে যিনি ছিলেন বিখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালিওল্লাহ দেহলবীর নিকট।তার সান্নিধ্যে দীর্ঘদিন থেকে ইলম অর্জন করেছেন।তার সান্নিধ্যে থেকে এমন এক মুলকান্ড হয়েছে যারা শাখাপ্রশাখা সারা উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এভাবে দেওবন্দ মাদরাসার প্রথম দিকের আলেমদের নিয়ে চিন্তা করুন। তারা দ্বীনের জন্য কি পরিমান কষ্ট, নির্যাতন সহ্য করেছেন!কিন্তু পরবর্তীতে তাদের মত ইমানদার কি তৈরী হয়েছে? দেহবন্দ থেকে ভালো ভালো আলেম গড়ে উঠলেও তাদের মত বড় আলেম গড়ে উঠে নি।এখনতো অনেকে খুব ভালো আলেম না।
পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় যখনই কোন জালেমের আবির্ভাব হয়েছে মুসলিমদের নাজুক অবস্থা হয়েছে। তখন এমন কিছু মুসলিম তৈরি হয়েছেন যারা নির্যাতন ও কষ্ট সহ্য করে এমন ইমানদার হয়েছেন যারা যুগের মুলকান্ড রুপান্তরিত হয়েছে।
কিন্তু আজকে কোন ভাই দ্বীনের পথে আসলে আরেক রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।যদিও আগের মত ওরকম নির্যাতন সবার আসে না।কিন্তু সুখের ও স্বাধীনতার ফেতনা এমন ভাবে আমাদের গ্রাস করে। আমরা একটা সময় বিভিন্ন অশ্লীলতা ও বেহায়াপনায় জড়িয়ে যাই।আমরা এসবের কারনে দ্বীন থেকে দুরে সরে যাই।তাই আমাদেরকে কোথাও কোন ভালো জায়গায় ভালো মানুষের সান্নিধ্যে থেকে এমন হতে হবে যেন আমরা দ্বীনের অটল থাকতে পারি আমরা এক মুল কান্ডে রুপান্তরিত হতে পারি।আমদের কে আমাদের গ্রামের জন্য একেকটা সূর্য্য ☀ হতে হবে।যেন আমাদের দ্বারা পুরো গ্রাম আলোকিত হয়।
সুর্য্য শুধু দিনে আলো দেয় না।বরং রাতে যত বাতি জ্বলে সব বাতি জ্বলার পেছনে সূর্য্যর হাত থাকে।এমনকি সূর্য্যর মাঝে আল্লাহ এত শক্তি দিয়ে রেখেছেন যে,মানুষ, গাছপালার সব শক্তি আসে সূর্য্য থেকে।তাই আমদেরকেও আমাদের গ্রামের জন্য একটা সূর্য্য হতে হবে।যেন আমাদের দ্বারা গ্রামে হাজারো প্রদীপ জ্বলে উঠে।
Comment