দাজ্জালের জন্ম হয়েছে অনেক আগেই। রাসুলুল্লাহ সা.-এর সময়েই সে ছিল বর্তমান। দাজ্জাল এই পৃথিবীতেই রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে তার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। এর আগে সে ঘুমিয়ে থাকবে বা হাত-পা গুটিয়ে নিভৃতে বসে থাকবে, এমন কোনো প্রমাণ নেই। চূড়ান্ত আত্মপ্রকাশের আগে নেপথ্যে থেকে খলনায়কের ভূমিকা পালন করা খুবই স্বাভাবিক বিষয়।
ফিরআউনও নিজেকে রব দাবি করেছিল। দাজ্জালও নিজেকে রব দাবি করবে। পার্থক্য হলো, ফিরআউন নিজে সেহের (জাদু) জানত না। মুসা আ.-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সে বিভিন্ন শহর থেকে জাদুকর আনিয়েছিল। পক্ষান্তরে দাজ্জাল নিজেই হবে জাদুকর। এ ছাড়াও ফিরআউন দাজ্জালের মতো অলৌকিক ক্ষমতার আধার ছিল না। আর প্রকাশ থাকে যে, দাজ্জালের জাদু হবে ভয়াবহ, ক্ষমতা হবে অনন্য। সাধারণ রাকিরা কিছুতেই রুকইয়াহ করে তা প্রতিরোধ করতে না পারারই কথা। দাজ্জাল সরাসরি নিজে কারও ওপর সেহের করলে তাকে বাঁচানো আদতে দুরূহই মনে হয়।
ইসলামগ্রহণের পূর্বে দাজ্জালের সঙ্গে সাহাবি তামিম দারি রা.-এর সাক্ষাৎ হয়েছিল। এ থেকে অনুমেয় যে, দাজ্জালের সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্ভব। হ্যাঁ, সে কার সঙ্গে দেখা দেবে, সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। তামিম দারি রা. ও তার সঙ্গীরা দাজ্জালের পূজারী ও অনুসারী ছিলেন না। এতদসত্ত্বেও তাদের সঙ্গেই যখন দাজ্জাল সাক্ষাৎ করেছে, আর যেই দুর্যোগে পড়ে তাদের নৌকা সেই দ্বীপে গিয়ে উঠেছিল, সেই দুর্যোগও যে দাজ্জাল কর্তৃক সৃষ্ট ছিল না, তা-ও নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। তো অন্যদের সঙ্গেই যদি সে সাক্ষাৎ করতে পারে তাহলে তার অনুসারী ও অনুচর যারা, যারা দুনিয়াতে দাজ্জালি মিশন বাস্তবায়ন করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে দাজ্জালের নিয়মিত বা অনিয়মিত সাক্ষাৎ বা অন্তত যোগাযোগ মোটেও অসম্ভব কিছু নয়।
নির্দিষ্ট সময়ে তার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তার আত্মপ্রকাশ ঘটবে প্রচণ্ড রাগ থেকে। এ থেকেও অনুমান করা যায়, কুফরের ধ্বজাধারী এই ইহুদি দাজ্জাল আগে থেকেই পৃথিবীর খবরাখবর সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট থাকবে। সে গায়েব জানে না। কোনো মাধ্যম ব্যবহার করেই তাকে আপডেট থাকতে হবে। এবং এর মাধ্যমেই সে তার আত্মপ্রকাশের ক্ষণ জানতে পারবে। অবশেষে ইমান ও কুফরের সংঘাতে মুমিনদের প্রতি চরম ক্রোধ থেকে সে আর আপন অবস্থায় স্থির থাকতে পারবে না; বরং গোপন ষড়যন্ত্রের ইতি টেনে এই পৃথিবীতে সরাসরি আত্মপ্রকাশ করবে।
দাজ্জাল প্রকাশ্যভাবে কাজ করবে নির্ধারিত সময়ে। কিন্তু সে তার অনুসারী মানুষ ও জিনদের দ্বারা, সেহের ও শয়তানি শক্তির দ্বারা পূর্ব থেকেই হয়তো মুমিন সৈনিকদের বিরুদ্ধে তার অদৃশ্য লড়াই চালিয়ে যাবে। আমার ধারণা, আল্লাহর দলের সৈনিকরা লড়াইয়ের ময়দানে হয়তো এর কিছু কিছু বিষয় প্রত্যক্ষভাবে আঁচ করতে পারেন। আর অনুমিত হয় যে, শয়তানের পূজারীরা দাজ্জাল কর্তৃক বিভিন্ন মদদ লাভ করে থাকে।
বর্তমান পৃথিবীতে শুধু যে রণাঙ্গনে লড়াই হয় বা বসতিতে এসে অতর্কিত আক্রমণ চালানো হয়, বিষয়টা এমন নয়। বরং ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে পরিচালিত বর্তমানকালের লড়াইসমূহকে আমরা মৌলিক তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।
(ক) দৃশ্যমান লড়াই। যার মধ্যে সম্মুখযুদ্ধ, গণহত্যা, গেরিলা এটাক, গুপ্তহত্যা, আত্মঘাতী হামলা, আকাশপথে বা নৌপথে আঘাত থেকে শুরু করে সবকিছু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
(খ) সাইবার এটাক। এই এটাক সরাসরি দৃশ্যমান না হলেও এর প্রভাব সুগভীর। এই যুগে এই উভয় প্রকার এটাকের সঙ্গে সবাই মোটামুটি পরিচিত। সুতরাং এ নিয়ে আমাদের নতুন করে আলোচনা করার কিছু নেই।
(গ) জাদু ও শয়তানের অদৃশ্য আক্রমণ। বর্তমান বিশ্বে জাদুর চর্চা অনেক। শয়তানপূজারীরা শয়তানের সাহায্যে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভয়াবহ আক্রমণ চালায়। তাদের এসকল আক্রমণের ঝুঁকি থেকে কেউই মুক্ত নয়। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সা.-এর ওপর গুরুতর জাদু করা হয়েছিল; যার প্রভাবে তাঁকে অনেক কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সিরাতের গ্রন্থাদিতে এর বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়।
জাদুকর ও শয়তানপূজারীরা তাগুতের পক্ষে লড়াই করে। কেউ করে অর্থের লোভে, আর কেউ করে আদর্শগত কারণে। তবে এ লড়াই নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলমান। বিশেষ করে উম্মাহর জন্য চিন্তাশীল আলিমগণ ও আল্লাহর পথের বীর শার্দূলগণ তাদের বিশেষ টার্গেট। বিভিন্ন দেশ সরকারিভাবে এসকল জাদুকরের পৃষ্ঠপোষকতা করে; যাতে করে তারা তাগুতের সুরক্ষা দেয় এবং তাওহিদপন্থীদেরকে ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে। সৌদির কারাগারে থাকা আলিমগণের জীবনী বা সাক্ষাৎকার জানতে পারলে এ বিষয়টি আরও অধিক স্পষ্ট হবে। সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাহিরদের মাধ্যমে তাওহিদবাদী শাইখগণ ও তাদের অনুসারীদের ওপর ব্ল্যাক ম্যাজিক প্রয়োগ করা হয়; যাতে করে নির্যাতনের প্রভাবে আদর্শ ত্যাগ না করলেও এই গোপন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তারা যেন আদর্শ ত্যাগ করে এবং সৌদি হুকুমতের আজ্ঞাবহ হয়ে যায়।
আমাদের এই সমস্ত দেশে স্বল্প পরিসরে হলেও এই ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চা রয়েছে। এখানেও আল্লাহর পথের সৈনিকদের ওপর যথারীতি এই সেহের প্রয়োগ করা হয়। হাতে মারতে না পেরে ভাতে মারার চেষ্টা আর কি। এভাবে তারা পৃথিবী থেকে আল্লাহর নুরকে নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর বাহিনীকে পরাজিত করে ইবলিসের বাহিনীকে বিজয়ী করতে চায়।
ইহুদিরা জাদুবিদ্যায় বেশ পারঙ্গম। এদের ধর্মের একজন অনুসারীই তো প্রিয়নবি সা.-কে জাদু করেছিল। দাজ্জালি মিশনের বাস্তবায়নে সারা দুনিয়ার ওপর জাদুবিদ্যা প্রয়োগ করে তারা ভালোই খেলছে। হয়তো-বা পরোক্ষভাবে দাজ্জালের থেকেও তারা সহযোগিতা পাচ্ছে। আর এটা কোনোই অসম্ভব ব্যাপার নয়। এ ছাড়াও খ্রিষ্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধরাও এই জাদুবিদ্যাকে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়ে থাকে। ভারতের কথাই বলি কিংবা বলি চীন বা বার্মার কথা, কোথায় তারা এই শয়তানি শক্তিকে প্রয়োগ করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে না? কোনো কোনো রাকিও তাদের জাদু রোধের অদৃশ্য লড়াইয়ে নেমে অবশেষে শাহাদাত বরণ করেছেন। যদিও এ বিষয়গুলো পৃথিবীবাসীর অগোচরেই থেকে যাচ্ছে প্রায়শই।
কেউ জাদু প্রয়োগ করছে পুরো এশিয়ার ওপর। কেউ করছে আরাকান বা বাঙাল মুলকের ওপর। কেউ করছে গোটা হিন্দুস্তানের ওপর। কারও উদ্দেশ্য হিন্দুত্ববাদের বিজয়। কারও উদ্দেশ্য ক্ষমতা রক্ষা। একেকজন একেক উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তবে সবগুলোর ফায়দাই চূড়ান্ত পরিণামে দাজ্জাল ভোগ করবে। খোদ ভ্যাটিকান সিটি থেকেই যখন সেহের প্রয়োগ করা হয় তখন এর দৌড় কতটুকু, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
বিদআতিরাও জাদুবিদ্যার চর্চা করে। সরাসরি নিজেরা বা কাফির তান্ত্রিকের সহযোগিতা নিয়ে হকপন্থী আলিম ও ব্যক্তিগণকে জাদু করে। কখনো তা করে কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর। আশঙ্কা করা হয়, খতিবে আজম হাবিবুল্লাহ মিসবাহ রহ.-এর ওপর এই বিদআতিরাই জাদু করেছিল; যার প্রভাবে অল্প বয়সেই তার ইনতিকাল হয়ে যায়। বর্তমানে শাইখুল হাদিস ইমরান মাজহারি (শাফাহুল্লাহ)-ও জাদুর প্রভাবে মারাত্মক অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জাদুতে আক্রান্ত হয়ে বিরাট ঝক্কির মধ্য দিয়ে দিন গুজরান করছে। দেখা যাচ্ছে, অনেক মেহনত সত্ত্বেও সেখান থেকে আলিম বেরোচ্ছে না। অথবা মাদরাসার আয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে না। ইত্যাদি।
জাদু করা হয় কতকিছুর ওপর! সব জাদুর প্রকাশ একভাবে ঘটে না। কারও খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কারও স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। কারও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কে ভাটা পড়ে। এমনকি কেউ-বা সহবাসের সামর্থ্য পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে। দুনিয়ার ডাক্তাররা যার কোনো কার্যকর সমাধানই বলতে পারে না, আর না পারে কোনো রোগ চিহ্নিত করতে। সবকিছু ঠিক থাকার পরও বিভিন্ন মিশন ব্যর্থ হয়ে যায়। বিজয়ের পরিবর্তে কোমর ভাঙার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে যায়। এমনকি কখনো-বা পারস্পরিক কোন্দল সৃষ্টি হয় নিজেদের প্রতাপ হারিয়ে যায়। কেউ যদি এভাবে ভাবে যে, বৌদ্ধদের পক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ শয়তানকে রোহিঙ্গা মুকাতিলদের বিরুদ্ধে অদৃশ্য লড়াই করার জন্য পাঠানো হয়েছে তাহলে সে সহজেই উপলব্ধি করতে পারবে রোহিঙ্গা মুহাজিরগণের ব্যর্থতা, গাদ্দারি, অনৈক্য ও চূড়ান্ত পরাজয়ের একটি কারণ।
যে উম্মাহর নবিকেই গুরুতর জাদু করা হয়েছিল, সেই উম্মাহ জাদুর ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক হবে—এটাই স্বাভাবিক যুক্তির দাবি ছিল। কিন্তু হয়েছে তার পুরো উল্টো। মিডিয়া সন্ত্রাস সম্পর্কে এই উম্মাহ মোটামুটি সচেতন হলেও জাদু সম্পর্কে একেবারেই যেন গাফেল ও বেখবর। এটা বড়ই হতাশা ও দুঃখের কথা।
(সংগ্রহিত।)
ফিরআউনও নিজেকে রব দাবি করেছিল। দাজ্জালও নিজেকে রব দাবি করবে। পার্থক্য হলো, ফিরআউন নিজে সেহের (জাদু) জানত না। মুসা আ.-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সে বিভিন্ন শহর থেকে জাদুকর আনিয়েছিল। পক্ষান্তরে দাজ্জাল নিজেই হবে জাদুকর। এ ছাড়াও ফিরআউন দাজ্জালের মতো অলৌকিক ক্ষমতার আধার ছিল না। আর প্রকাশ থাকে যে, দাজ্জালের জাদু হবে ভয়াবহ, ক্ষমতা হবে অনন্য। সাধারণ রাকিরা কিছুতেই রুকইয়াহ করে তা প্রতিরোধ করতে না পারারই কথা। দাজ্জাল সরাসরি নিজে কারও ওপর সেহের করলে তাকে বাঁচানো আদতে দুরূহই মনে হয়।
ইসলামগ্রহণের পূর্বে দাজ্জালের সঙ্গে সাহাবি তামিম দারি রা.-এর সাক্ষাৎ হয়েছিল। এ থেকে অনুমেয় যে, দাজ্জালের সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্ভব। হ্যাঁ, সে কার সঙ্গে দেখা দেবে, সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। তামিম দারি রা. ও তার সঙ্গীরা দাজ্জালের পূজারী ও অনুসারী ছিলেন না। এতদসত্ত্বেও তাদের সঙ্গেই যখন দাজ্জাল সাক্ষাৎ করেছে, আর যেই দুর্যোগে পড়ে তাদের নৌকা সেই দ্বীপে গিয়ে উঠেছিল, সেই দুর্যোগও যে দাজ্জাল কর্তৃক সৃষ্ট ছিল না, তা-ও নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। তো অন্যদের সঙ্গেই যদি সে সাক্ষাৎ করতে পারে তাহলে তার অনুসারী ও অনুচর যারা, যারা দুনিয়াতে দাজ্জালি মিশন বাস্তবায়ন করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে দাজ্জালের নিয়মিত বা অনিয়মিত সাক্ষাৎ বা অন্তত যোগাযোগ মোটেও অসম্ভব কিছু নয়।
নির্দিষ্ট সময়ে তার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তার আত্মপ্রকাশ ঘটবে প্রচণ্ড রাগ থেকে। এ থেকেও অনুমান করা যায়, কুফরের ধ্বজাধারী এই ইহুদি দাজ্জাল আগে থেকেই পৃথিবীর খবরাখবর সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট থাকবে। সে গায়েব জানে না। কোনো মাধ্যম ব্যবহার করেই তাকে আপডেট থাকতে হবে। এবং এর মাধ্যমেই সে তার আত্মপ্রকাশের ক্ষণ জানতে পারবে। অবশেষে ইমান ও কুফরের সংঘাতে মুমিনদের প্রতি চরম ক্রোধ থেকে সে আর আপন অবস্থায় স্থির থাকতে পারবে না; বরং গোপন ষড়যন্ত্রের ইতি টেনে এই পৃথিবীতে সরাসরি আত্মপ্রকাশ করবে।
দাজ্জাল প্রকাশ্যভাবে কাজ করবে নির্ধারিত সময়ে। কিন্তু সে তার অনুসারী মানুষ ও জিনদের দ্বারা, সেহের ও শয়তানি শক্তির দ্বারা পূর্ব থেকেই হয়তো মুমিন সৈনিকদের বিরুদ্ধে তার অদৃশ্য লড়াই চালিয়ে যাবে। আমার ধারণা, আল্লাহর দলের সৈনিকরা লড়াইয়ের ময়দানে হয়তো এর কিছু কিছু বিষয় প্রত্যক্ষভাবে আঁচ করতে পারেন। আর অনুমিত হয় যে, শয়তানের পূজারীরা দাজ্জাল কর্তৃক বিভিন্ন মদদ লাভ করে থাকে।
বর্তমান পৃথিবীতে শুধু যে রণাঙ্গনে লড়াই হয় বা বসতিতে এসে অতর্কিত আক্রমণ চালানো হয়, বিষয়টা এমন নয়। বরং ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে পরিচালিত বর্তমানকালের লড়াইসমূহকে আমরা মৌলিক তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।
(ক) দৃশ্যমান লড়াই। যার মধ্যে সম্মুখযুদ্ধ, গণহত্যা, গেরিলা এটাক, গুপ্তহত্যা, আত্মঘাতী হামলা, আকাশপথে বা নৌপথে আঘাত থেকে শুরু করে সবকিছু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
(খ) সাইবার এটাক। এই এটাক সরাসরি দৃশ্যমান না হলেও এর প্রভাব সুগভীর। এই যুগে এই উভয় প্রকার এটাকের সঙ্গে সবাই মোটামুটি পরিচিত। সুতরাং এ নিয়ে আমাদের নতুন করে আলোচনা করার কিছু নেই।
(গ) জাদু ও শয়তানের অদৃশ্য আক্রমণ। বর্তমান বিশ্বে জাদুর চর্চা অনেক। শয়তানপূজারীরা শয়তানের সাহায্যে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভয়াবহ আক্রমণ চালায়। তাদের এসকল আক্রমণের ঝুঁকি থেকে কেউই মুক্ত নয়। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সা.-এর ওপর গুরুতর জাদু করা হয়েছিল; যার প্রভাবে তাঁকে অনেক কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সিরাতের গ্রন্থাদিতে এর বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়।
জাদুকর ও শয়তানপূজারীরা তাগুতের পক্ষে লড়াই করে। কেউ করে অর্থের লোভে, আর কেউ করে আদর্শগত কারণে। তবে এ লড়াই নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলমান। বিশেষ করে উম্মাহর জন্য চিন্তাশীল আলিমগণ ও আল্লাহর পথের বীর শার্দূলগণ তাদের বিশেষ টার্গেট। বিভিন্ন দেশ সরকারিভাবে এসকল জাদুকরের পৃষ্ঠপোষকতা করে; যাতে করে তারা তাগুতের সুরক্ষা দেয় এবং তাওহিদপন্থীদেরকে ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে। সৌদির কারাগারে থাকা আলিমগণের জীবনী বা সাক্ষাৎকার জানতে পারলে এ বিষয়টি আরও অধিক স্পষ্ট হবে। সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাহিরদের মাধ্যমে তাওহিদবাদী শাইখগণ ও তাদের অনুসারীদের ওপর ব্ল্যাক ম্যাজিক প্রয়োগ করা হয়; যাতে করে নির্যাতনের প্রভাবে আদর্শ ত্যাগ না করলেও এই গোপন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তারা যেন আদর্শ ত্যাগ করে এবং সৌদি হুকুমতের আজ্ঞাবহ হয়ে যায়।
আমাদের এই সমস্ত দেশে স্বল্প পরিসরে হলেও এই ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চা রয়েছে। এখানেও আল্লাহর পথের সৈনিকদের ওপর যথারীতি এই সেহের প্রয়োগ করা হয়। হাতে মারতে না পেরে ভাতে মারার চেষ্টা আর কি। এভাবে তারা পৃথিবী থেকে আল্লাহর নুরকে নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর বাহিনীকে পরাজিত করে ইবলিসের বাহিনীকে বিজয়ী করতে চায়।
ইহুদিরা জাদুবিদ্যায় বেশ পারঙ্গম। এদের ধর্মের একজন অনুসারীই তো প্রিয়নবি সা.-কে জাদু করেছিল। দাজ্জালি মিশনের বাস্তবায়নে সারা দুনিয়ার ওপর জাদুবিদ্যা প্রয়োগ করে তারা ভালোই খেলছে। হয়তো-বা পরোক্ষভাবে দাজ্জালের থেকেও তারা সহযোগিতা পাচ্ছে। আর এটা কোনোই অসম্ভব ব্যাপার নয়। এ ছাড়াও খ্রিষ্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধরাও এই জাদুবিদ্যাকে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়ে থাকে। ভারতের কথাই বলি কিংবা বলি চীন বা বার্মার কথা, কোথায় তারা এই শয়তানি শক্তিকে প্রয়োগ করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে না? কোনো কোনো রাকিও তাদের জাদু রোধের অদৃশ্য লড়াইয়ে নেমে অবশেষে শাহাদাত বরণ করেছেন। যদিও এ বিষয়গুলো পৃথিবীবাসীর অগোচরেই থেকে যাচ্ছে প্রায়শই।
কেউ জাদু প্রয়োগ করছে পুরো এশিয়ার ওপর। কেউ করছে আরাকান বা বাঙাল মুলকের ওপর। কেউ করছে গোটা হিন্দুস্তানের ওপর। কারও উদ্দেশ্য হিন্দুত্ববাদের বিজয়। কারও উদ্দেশ্য ক্ষমতা রক্ষা। একেকজন একেক উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তবে সবগুলোর ফায়দাই চূড়ান্ত পরিণামে দাজ্জাল ভোগ করবে। খোদ ভ্যাটিকান সিটি থেকেই যখন সেহের প্রয়োগ করা হয় তখন এর দৌড় কতটুকু, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
বিদআতিরাও জাদুবিদ্যার চর্চা করে। সরাসরি নিজেরা বা কাফির তান্ত্রিকের সহযোগিতা নিয়ে হকপন্থী আলিম ও ব্যক্তিগণকে জাদু করে। কখনো তা করে কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর। আশঙ্কা করা হয়, খতিবে আজম হাবিবুল্লাহ মিসবাহ রহ.-এর ওপর এই বিদআতিরাই জাদু করেছিল; যার প্রভাবে অল্প বয়সেই তার ইনতিকাল হয়ে যায়। বর্তমানে শাইখুল হাদিস ইমরান মাজহারি (শাফাহুল্লাহ)-ও জাদুর প্রভাবে মারাত্মক অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জাদুতে আক্রান্ত হয়ে বিরাট ঝক্কির মধ্য দিয়ে দিন গুজরান করছে। দেখা যাচ্ছে, অনেক মেহনত সত্ত্বেও সেখান থেকে আলিম বেরোচ্ছে না। অথবা মাদরাসার আয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে না। ইত্যাদি।
জাদু করা হয় কতকিছুর ওপর! সব জাদুর প্রকাশ একভাবে ঘটে না। কারও খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কারও স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। কারও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কে ভাটা পড়ে। এমনকি কেউ-বা সহবাসের সামর্থ্য পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে। দুনিয়ার ডাক্তাররা যার কোনো কার্যকর সমাধানই বলতে পারে না, আর না পারে কোনো রোগ চিহ্নিত করতে। সবকিছু ঠিক থাকার পরও বিভিন্ন মিশন ব্যর্থ হয়ে যায়। বিজয়ের পরিবর্তে কোমর ভাঙার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে যায়। এমনকি কখনো-বা পারস্পরিক কোন্দল সৃষ্টি হয় নিজেদের প্রতাপ হারিয়ে যায়। কেউ যদি এভাবে ভাবে যে, বৌদ্ধদের পক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ শয়তানকে রোহিঙ্গা মুকাতিলদের বিরুদ্ধে অদৃশ্য লড়াই করার জন্য পাঠানো হয়েছে তাহলে সে সহজেই উপলব্ধি করতে পারবে রোহিঙ্গা মুহাজিরগণের ব্যর্থতা, গাদ্দারি, অনৈক্য ও চূড়ান্ত পরাজয়ের একটি কারণ।
যে উম্মাহর নবিকেই গুরুতর জাদু করা হয়েছিল, সেই উম্মাহ জাদুর ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক হবে—এটাই স্বাভাবিক যুক্তির দাবি ছিল। কিন্তু হয়েছে তার পুরো উল্টো। মিডিয়া সন্ত্রাস সম্পর্কে এই উম্মাহ মোটামুটি সচেতন হলেও জাদু সম্পর্কে একেবারেই যেন গাফেল ও বেখবর। এটা বড়ই হতাশা ও দুঃখের কথা।
(সংগ্রহিত।)
Comment