]আজ আমরা কিয়ামতের আলামতসমূহ নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
কিয়ামতের আলামতসংক্রান্ত আলোচনাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়।
এক : ছোট আলামত ও বড় আলামত হিসেবে।
দুই : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত হিসেবে।
আমরা বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধটিতে দু’আঙ্গিকেই আলোচনা করার চেষ্টা করব।
কিয়ামতের পূর্বে কিয়ামতের নিকটবর্তিতার প্রমাণস্বরূপ যে আলামতগুলো প্রকাশ পাবে সেগুলো ছোট আলামত ও বড় আলামত—এ দু’ভাগে বিভক্ত।
ছোট আলামতগুলো কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই প্রকাশ হতে থাকে।
ছোট আলামতগুলো শেষ হলে এরপর শুরু হবে বড় আলামতগুলোর প্রকাশ।
এখন পর্যন্ত বড় কোনো আলামত প্রকাশ হয়নি; বরং ছোট আলামত শেষ হওয়ার পর সত্ত্বরই তা প্রকাশ পাবে ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং আমরা যদি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ হিসেবে কিয়ামতের আলোচনা করি তাহলে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে শুধু ছোট আলামতগুলোর আলোচনা থাকবে।
আর ভবিষ্যতের মধ্যে কিছু ছোট ও বাকিগুলো বড় আলামতের আলোচনায় করা হবে। কেননা, ছোট আলামতের মধ্যে কোনো কোনো আলামত ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়ে অতীত হয়ে গেছে। কোনো কোনো আলামত অতীত হয়ে পুনঃপ্রকাশ হচ্ছে।
আর কিছু আলামত প্রকাশিত হয়েছে এবং অব্যাহতভাবে প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে।
বাকি কিছু আলামত এখনও প্রকাশ পায়নি।
কিন্তু নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসের ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী অচিরেই সেগুলো প্রকাশ পাবে।
## কিয়ামতের যেসব আলামত অতীত হয়ে গেছে ##
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :
قَالَ أَبُو حَازِمٍ: سَمِعْتُهُ مِنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ، صَاحِبِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةَ كَهَذِهِ مِنْ هَذِهِ، أَوْ: كَهَاتَيْنِ " وَقَرَنَ بَيْنَ السَّبَّابَةِ وَالوُسْطَى.
‘সাহল রা. সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত,
তিনি ইরশাদ করেন, আমি ও কিয়ামত এ দুটির মতো একসাথে প্রেরিত হয়েছি।
এ বলে তিনি শাহাদত আঙুল ও মধ্যমা আঙুলকে একসাথে মিলিয়ে দেখালেন।’
(সহিহুল বুখারি : ৭/৫৩, হা. নং ৫৩০১, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিশর)
২. চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়া।’
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
اقتربت الساعة وانشق القمر
‘কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে।’ (সুরা আল-কামার : ১)
নোট : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় থাকাকালীন কাফিরদের মুজিজা দেখাতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছিল। এর কারণে কাফিররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জাদুকর বলে মিথ্যারোপ করেছিল।
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যু।
নোট : ১১ হিজরি মোতাবেক ৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যু হয়।
৪. মুসলমানদের বাইতুল মাকদিস বিজয়।
নোট : ১৭ হিজরি মোতাবেক ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে উমর রা.-এর খিলাফত আমলে এটা বিজিত হয়।
৫. ব্যাপক মহামারি, যাতে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটবে।
নোট : উমর রা.-এর সময় সিরিয়াতে আমওয়াসের প্লেগে শীর্ষস্থানীয় বড় বড় সাহাবিসহ অসংখ্য মুসলমান শাহাদাতবরণ করেন।
৬. সম্পদের প্রাচুর্য।’
নোট : রোম-পারস্য বিজয়ের পর মুসলমানদের অভাবনীয় আর্থিক প্রাচুর্য এসেছিল।
৭. ব্যাপক ফিতনা, যা পুরো আরবকে গ্রাস করে নেবে।’
নোট : উসমান রা.-এর শাহাদাতের পর যে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছিল;
বিশেষত আলি রা. ও মুআবিয়া রা.-এর মাঝে ইজতিহাদি (চিন্তাগত) মতানৈক্যের কারণে জঙ্গে জামাল, জঙ্গে সিফফিন, হাররার যুদ্ধ, খারিজিদের আবির্ভাবের
পাশাপাশি যে বিভক্তি ও ফিতনা শুরু হয়েছিল,
আরবের প্রায় প্রত্যেকেই এর সাথে কমবেশি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :
عَوْف بْنَ مَالِكٍ، قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ وَهُوَ فِي قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ، فَقَالَ: "اعْدُدْ سِتًّا بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ: مَوْتِي، ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ المَقْدِسِ، ثُمَّ مُوْتَانٌ يَأْخُذُ فِيكُمْ كَقُعَاصِ الغَنَمِ، ثُمَّ اسْتِفَاضَةُ المَالِ حَتَّى يُعْطَى الرَّجُلُ مِائَةَ دِينَارٍ فَيَظَلُّ سَاخِطًا، ثُمَّ فِتْنَةٌ لاَ يَبْقَى بَيْتٌ مِنَ العَرَبِ إِلَّا دَخَلَتْهُ، ثُمَّ هُدْنَةٌ تَكُونُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ بَنِي الأَصْفَرِ، فَيَغْدِرُونَ فَيَأْتُونَكُمْ تَحْتَ ثَمَانِينَ غَايَةً، تَحْتَ كُلِّ غَايَةٍ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا"
‘আউফ বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এলাম।
তিনি তখন একটি চামড়ার তৈরি তাঁবুতে ছিলেন।
আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কিয়ামাতের আগে ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো।
আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মাকদিস বিজয়, অতঃপর বকরির পালের মহামারীর মতো তোমাদেরকে মহামারী আক্রমণ করবে, সম্পদের প্রাচুর্য; এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দেওয়ার পরও সে অসন্তুষ্ট থাকবে।
অতঃপর এমন এক ফিতনা আসবে, যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে।
অতঃপর যুদ্ধ বিরতির চুক্তি, যা তোমাদের ও বনি আসফার বা রোমকদের মাঝে সম্পাদিত হবে।
অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে।
তাদের প্রত্যেক পতাকার অধীনে বারো হাজার করে সৈন্য থাকবে।
’ (সহিহুল বুখারি : ৪/১০১, হা. নং ৩১৭৬, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিশর)
নোট : উল্লিখিত হাদিসে বর্ণিত ছয়টি আলামতের মধ্য হতে পাঁচটিই ঘটে গেছে।
আর ষষ্ঠটি তথা খ্রিস্টানদের সাথে সন্ধিচুক্তি ও তাদের বিশ্বাসঘাতকতা—এটা ইমাম মাহদির সময়ে ঘটবে ইনশাআল্লাহ;
যেমনটি নুআইম বিন হাম্মাদ রহ.-এর ‘আল-ফিতান’ গ্রন্থের বর্ণনা থেকে জানা যায়।
৮. আরব উপদ্বীপ, পারস্য ও রোম জয়।
যেমন সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে :
عَنْ نَافِعِ بْنِ عُتْبَةَ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فِي غَزْوَةٍ..... قَالَ: تَغْزُونَ جَزِيرَةَ الْعَرَبِ فَيَفْتَحُهَا اللهُ، ثُمَّ فَارِسَ فَيَفْتَحُهَا اللهُ، ثُمَّ تَغْزُونَ الرُّومَ فَيَفْتَحُهَا اللهُ، ثُمَّ تَغْزُونَ الدَّجَّالَ فَيَفْتَحُهُ اللهُ.
‘নাফি বিন উতবা রা. থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমরা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে এক যুদ্ধে ছিলাম। ...
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
তোমরা আরব উপদ্বীপে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ তাআলা তাতে তোমাদের বিজয় দান করবেন। অতঃপর পারস্যের সঙ্গে যুদ্ধ করবে, সে যুদ্ধেও আল্লাহ তোমাদের বিজয় দান করবেন। অতঃপর তোমরা রোমের সাথে যুদ্ধ করবে সে যুদ্ধেও আল্লাহ তোমাদের বিজয় দান করবেন। অতঃপর তোমরা দাজ্জালের সাথে লড়াই করবে সেখানেও আল্লাহ তোমাদের বিজয় দান করবেন।’
(সহিহু মুসলিম : ২/২২২৫, হা. নং ২৯০০, প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)
নোট : এ তিনটি অঞ্চল তৎকালীন বিশ্বের প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময় থেকে নিয়ে উমর রা.-এর খিলাফতের সময়ের মধ্যেই বিজিত হয়ে গিয়েছিল।
৯. নবুয়তের মিথ্যা দাবিদারদের আত্মপ্রকাশ।’
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَقْتَتِلَ فِئَتَانِ فَيَكُونَ بَيْنَهُمَا مَقْتَلَةٌ عَظِيمَةٌ، دَعْوَاهُمَا وَاحِدَةٌ، وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ، قَرِيبًا مِنْ ثَلاَثِينَ، كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ.
‘আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত,
নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত না দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ হবে।
তাদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হবে; অথচ তাদের উভয় দলের দাবি হবে এক।
আর কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত না প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাচারী দাজ্জাল তথা চরম মিথ্যুকের আবির্ভাব ঘটে, যাদের প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর রাসুল বলে দাবি করবে।’ (সহিহুল বুখারি : ৪/২০০, হা. নং ৩৬০৮, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিশর)
নোট : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিদের যুগে মুসাইলামাতুল কাজ্জাব, আসওয়াদ আনাসি, তুলাইহা বিন খুওয়াইলিদ আসাদি, সাজ্জাহ এবং পরবর্তী কালে মুখতার কাজ্জাব, হারিস কাজ্জাব, নিকট অতীতে মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানিসহ বিভিন্ন যুগে অসংখ্য মিথ্যা নবি আত্মপ্রকাশ করেছে।
১০. হিজাজের ভূমিতে আগুন বের হওয়া।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :
أَخْبَرَنِي أَبُو هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَخْرُجَ نَارٌ مِنْ أَرْضِ الحِجَازِ تُضِيءُ أَعْنَاقَ الإِبِلِ بِبُصْرَى.
‘আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না হিজাজের ভূমি থেকে এমন আগুন বের হবে,
যা বসরার উটগুলোর গর্দান আলোকিত করে দেবে।
’ (সহিহুল বুখারি : ৯/৫৮, হা. নং ৭১১৮, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিশর)
নোট : হিজরি সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি ৬৫৪ সালে এই আগুন প্রকাশিত হয়েছে।
এটা ছিল এক মহাঅগ্নি।
তৎকালীন ও তৎপরবর্তী আলিমগণ এই আগুনের বিবরণ দিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
ইমাম নববি রহ. লিখেছেন, আমাদের যুগে ৬৫৪ হিজরিতে মদিনাতে আগুন বেরিয়েছে। মদিনার পূর্বপার্শ্বস্থ কংকরময় এলাকাতে প্রকাশ পাওয়া এটা ছিল এক মহাঅগ্নি।
সকল সিরিয়াবাসী ও অন্য সকল শহরের মানুষ নিরবচ্ছিন্ন নিশ্চিত সংবাদের ভিত্তিতে তা অবহিত হয়েছে।
মদিনাবাসীদের মধ্যে এক ব্যক্তি আমাকে এ বিষয়টি সুনিশ্চিত করেছেন, যিনি নিজে সে আগুন প্রত্যক্ষ করেছেন।
১১. তাতার বা মোঙ্গলীয়দের বিরূদ্ধে যুদ্ধ।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوا قَوْمًا نِعَالُهُمُ الشَّعَرُ، وَحَتَّى تُقَاتِلُوا التُّرْكَ، صِغَارَ الأَعْيُنِ، حُمْرَ الوُجُوهِ، ذُلْفَ الأُنُوفِ، كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ المَجَانُّ المُطْرَقَةُ،
‘আবু হুরাইরা রা. সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্নিত,
তিনি বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না;
যতক্ষণ না তোমরা এমন এক জাতির সাথে যুদ্ধ করবে,
যাদের পায়ের জুতা হবে পশমের এবং যতক্ষণ না তোমরা তাতারিদের সাথে যুদ্ধ করবে,
যাদের চক্ষু হবে ছোট, চেহারা লাল ফর্সা, নাক চেপ্টা, তাদের চেহারা যেন পেটানো ঢাল।’ (সহিহুল বুখারি : ৪/১৯৬, হা. নং ৩৫৮৭, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিশর)
নোট : হাদিসে তুর্ক বলে যে জাতির সাথে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে,
ইতিহাসে তারা মোঙ্গল বা তাতার জাতি নামে প্রসিদ্ধ।
বর্তমানের তুরস্কের অধিবাসীদের কথা বলা হয়নি;
যেমনটি কারও কারও ভ্রম হয়েছে।
হাদিসে বর্ণিত সবগুলো বৈশিষ্ট্যই তাতারিদের মাঝে বিদ্যমান ছিল।
ইমাম নববি রহ. বলেন, আমাদের যুগে তাদের দেখা মিলেছে।
তিনি বলেন, এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুজিজা যে, চক্ষু ছোট, চেহারা লাল ফর্সা, নাক চেপ্টা, চেহারা যেন পেটানো ঢাল বলে যেসব বৈশিষ্টের কথা বলেছেন, হুবহু সেসব বৈশিষ্টমণ্ডিত জাতির সাথে মুসলমানরা ইতিমধ্যেই কয়েকবার যুদ্ধ করেছে এবং এখনও যুদ্ধ চলছে।
মোটকথা এদের সাথে যুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।
বিখ্যাত আইনে জালুতের যুদ্ধে মুসলমানরা তাদেরকে চুড়ান্তভাবে পরাজিত করেছে।
চলবে ইনশাআল্লাহ
সংগৃহীত
কিয়ামতের আলামতসংক্রান্ত আলোচনাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়।
এক : ছোট আলামত ও বড় আলামত হিসেবে।
দুই : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত হিসেবে।
আমরা বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধটিতে দু’আঙ্গিকেই আলোচনা করার চেষ্টা করব।
কিয়ামতের পূর্বে কিয়ামতের নিকটবর্তিতার প্রমাণস্বরূপ যে আলামতগুলো প্রকাশ পাবে সেগুলো ছোট আলামত ও বড় আলামত—এ দু’ভাগে বিভক্ত।
ছোট আলামতগুলো কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই প্রকাশ হতে থাকে।
ছোট আলামতগুলো শেষ হলে এরপর শুরু হবে বড় আলামতগুলোর প্রকাশ।
এখন পর্যন্ত বড় কোনো আলামত প্রকাশ হয়নি; বরং ছোট আলামত শেষ হওয়ার পর সত্ত্বরই তা প্রকাশ পাবে ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং আমরা যদি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ হিসেবে কিয়ামতের আলোচনা করি তাহলে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে শুধু ছোট আলামতগুলোর আলোচনা থাকবে।
আর ভবিষ্যতের মধ্যে কিছু ছোট ও বাকিগুলো বড় আলামতের আলোচনায় করা হবে। কেননা, ছোট আলামতের মধ্যে কোনো কোনো আলামত ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়ে অতীত হয়ে গেছে। কোনো কোনো আলামত অতীত হয়ে পুনঃপ্রকাশ হচ্ছে।
আর কিছু আলামত প্রকাশিত হয়েছে এবং অব্যাহতভাবে প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে।
বাকি কিছু আলামত এখনও প্রকাশ পায়নি।
কিন্তু নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসের ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী অচিরেই সেগুলো প্রকাশ পাবে।
## কিয়ামতের যেসব আলামত অতীত হয়ে গেছে ##
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :
قَالَ أَبُو حَازِمٍ: سَمِعْتُهُ مِنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ، صَاحِبِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةَ كَهَذِهِ مِنْ هَذِهِ، أَوْ: كَهَاتَيْنِ " وَقَرَنَ بَيْنَ السَّبَّابَةِ وَالوُسْطَى.
‘সাহল রা. সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত,
তিনি ইরশাদ করেন, আমি ও কিয়ামত এ দুটির মতো একসাথে প্রেরিত হয়েছি।
এ বলে তিনি শাহাদত আঙুল ও মধ্যমা আঙুলকে একসাথে মিলিয়ে দেখালেন।’
(সহিহুল বুখারি : ৭/৫৩, হা. নং ৫৩০১, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিশর)
২. চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়া।’
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
اقتربت الساعة وانشق القمر
‘কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে।’ (সুরা আল-কামার : ১)
নোট : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় থাকাকালীন কাফিরদের মুজিজা দেখাতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছিল। এর কারণে কাফিররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জাদুকর বলে মিথ্যারোপ করেছিল।
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যু।
নোট : ১১ হিজরি মোতাবেক ৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যু হয়।
৪. মুসলমানদের বাইতুল মাকদিস বিজয়।
নোট : ১৭ হিজরি মোতাবেক ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে উমর রা.-এর খিলাফত আমলে এটা বিজিত হয়।
৫. ব্যাপক মহামারি, যাতে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটবে।
নোট : উমর রা.-এর সময় সিরিয়াতে আমওয়াসের প্লেগে শীর্ষস্থানীয় বড় বড় সাহাবিসহ অসংখ্য মুসলমান শাহাদাতবরণ করেন।
৬. সম্পদের প্রাচুর্য।’
নোট : রোম-পারস্য বিজয়ের পর মুসলমানদের অভাবনীয় আর্থিক প্রাচুর্য এসেছিল।
৭. ব্যাপক ফিতনা, যা পুরো আরবকে গ্রাস করে নেবে।’
নোট : উসমান রা.-এর শাহাদাতের পর যে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছিল;
বিশেষত আলি রা. ও মুআবিয়া রা.-এর মাঝে ইজতিহাদি (চিন্তাগত) মতানৈক্যের কারণে জঙ্গে জামাল, জঙ্গে সিফফিন, হাররার যুদ্ধ, খারিজিদের আবির্ভাবের
পাশাপাশি যে বিভক্তি ও ফিতনা শুরু হয়েছিল,
আরবের প্রায় প্রত্যেকেই এর সাথে কমবেশি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :
عَوْف بْنَ مَالِكٍ، قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ وَهُوَ فِي قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ، فَقَالَ: "اعْدُدْ سِتًّا بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ: مَوْتِي، ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ المَقْدِسِ، ثُمَّ مُوْتَانٌ يَأْخُذُ فِيكُمْ كَقُعَاصِ الغَنَمِ، ثُمَّ اسْتِفَاضَةُ المَالِ حَتَّى يُعْطَى الرَّجُلُ مِائَةَ دِينَارٍ فَيَظَلُّ سَاخِطًا، ثُمَّ فِتْنَةٌ لاَ يَبْقَى بَيْتٌ مِنَ العَرَبِ إِلَّا دَخَلَتْهُ، ثُمَّ هُدْنَةٌ تَكُونُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ بَنِي الأَصْفَرِ، فَيَغْدِرُونَ فَيَأْتُونَكُمْ تَحْتَ ثَمَانِينَ غَايَةً، تَحْتَ كُلِّ غَايَةٍ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا"
‘আউফ বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এলাম।
তিনি তখন একটি চামড়ার তৈরি তাঁবুতে ছিলেন।
আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কিয়ামাতের আগে ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো।
আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মাকদিস বিজয়, অতঃপর বকরির পালের মহামারীর মতো তোমাদেরকে মহামারী আক্রমণ করবে, সম্পদের প্রাচুর্য; এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দেওয়ার পরও সে অসন্তুষ্ট থাকবে।
অতঃপর এমন এক ফিতনা আসবে, যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে।
অতঃপর যুদ্ধ বিরতির চুক্তি, যা তোমাদের ও বনি আসফার বা রোমকদের মাঝে সম্পাদিত হবে।
অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে।
তাদের প্রত্যেক পতাকার অধীনে বারো হাজার করে সৈন্য থাকবে।
’ (সহিহুল বুখারি : ৪/১০১, হা. নং ৩১৭৬, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিশর)
নোট : উল্লিখিত হাদিসে বর্ণিত ছয়টি আলামতের মধ্য হতে পাঁচটিই ঘটে গেছে।
আর ষষ্ঠটি তথা খ্রিস্টানদের সাথে সন্ধিচুক্তি ও তাদের বিশ্বাসঘাতকতা—এটা ইমাম মাহদির সময়ে ঘটবে ইনশাআল্লাহ;
যেমনটি নুআইম বিন হাম্মাদ রহ.-এর ‘আল-ফিতান’ গ্রন্থের বর্ণনা থেকে জানা যায়।
৮. আরব উপদ্বীপ, পারস্য ও রোম জয়।
যেমন সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে :
عَنْ نَافِعِ بْنِ عُتْبَةَ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فِي غَزْوَةٍ..... قَالَ: تَغْزُونَ جَزِيرَةَ الْعَرَبِ فَيَفْتَحُهَا اللهُ، ثُمَّ فَارِسَ فَيَفْتَحُهَا اللهُ، ثُمَّ تَغْزُونَ الرُّومَ فَيَفْتَحُهَا اللهُ، ثُمَّ تَغْزُونَ الدَّجَّالَ فَيَفْتَحُهُ اللهُ.
‘নাফি বিন উতবা রা. থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমরা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে এক যুদ্ধে ছিলাম। ...
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
তোমরা আরব উপদ্বীপে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ তাআলা তাতে তোমাদের বিজয় দান করবেন। অতঃপর পারস্যের সঙ্গে যুদ্ধ করবে, সে যুদ্ধেও আল্লাহ তোমাদের বিজয় দান করবেন। অতঃপর তোমরা রোমের সাথে যুদ্ধ করবে সে যুদ্ধেও আল্লাহ তোমাদের বিজয় দান করবেন। অতঃপর তোমরা দাজ্জালের সাথে লড়াই করবে সেখানেও আল্লাহ তোমাদের বিজয় দান করবেন।’
(সহিহু মুসলিম : ২/২২২৫, হা. নং ২৯০০, প্র. দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)
নোট : এ তিনটি অঞ্চল তৎকালীন বিশ্বের প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময় থেকে নিয়ে উমর রা.-এর খিলাফতের সময়ের মধ্যেই বিজিত হয়ে গিয়েছিল।
৯. নবুয়তের মিথ্যা দাবিদারদের আত্মপ্রকাশ।’
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَقْتَتِلَ فِئَتَانِ فَيَكُونَ بَيْنَهُمَا مَقْتَلَةٌ عَظِيمَةٌ، دَعْوَاهُمَا وَاحِدَةٌ، وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ، قَرِيبًا مِنْ ثَلاَثِينَ، كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ.
‘আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত,
নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত না দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ হবে।
তাদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হবে; অথচ তাদের উভয় দলের দাবি হবে এক।
আর কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত না প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাচারী দাজ্জাল তথা চরম মিথ্যুকের আবির্ভাব ঘটে, যাদের প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর রাসুল বলে দাবি করবে।’ (সহিহুল বুখারি : ৪/২০০, হা. নং ৩৬০৮, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিশর)
নোট : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিদের যুগে মুসাইলামাতুল কাজ্জাব, আসওয়াদ আনাসি, তুলাইহা বিন খুওয়াইলিদ আসাদি, সাজ্জাহ এবং পরবর্তী কালে মুখতার কাজ্জাব, হারিস কাজ্জাব, নিকট অতীতে মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানিসহ বিভিন্ন যুগে অসংখ্য মিথ্যা নবি আত্মপ্রকাশ করেছে।
১০. হিজাজের ভূমিতে আগুন বের হওয়া।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :
أَخْبَرَنِي أَبُو هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَخْرُجَ نَارٌ مِنْ أَرْضِ الحِجَازِ تُضِيءُ أَعْنَاقَ الإِبِلِ بِبُصْرَى.
‘আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না হিজাজের ভূমি থেকে এমন আগুন বের হবে,
যা বসরার উটগুলোর গর্দান আলোকিত করে দেবে।
’ (সহিহুল বুখারি : ৯/৫৮, হা. নং ৭১১৮, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিশর)
নোট : হিজরি সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি ৬৫৪ সালে এই আগুন প্রকাশিত হয়েছে।
এটা ছিল এক মহাঅগ্নি।
তৎকালীন ও তৎপরবর্তী আলিমগণ এই আগুনের বিবরণ দিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
ইমাম নববি রহ. লিখেছেন, আমাদের যুগে ৬৫৪ হিজরিতে মদিনাতে আগুন বেরিয়েছে। মদিনার পূর্বপার্শ্বস্থ কংকরময় এলাকাতে প্রকাশ পাওয়া এটা ছিল এক মহাঅগ্নি।
সকল সিরিয়াবাসী ও অন্য সকল শহরের মানুষ নিরবচ্ছিন্ন নিশ্চিত সংবাদের ভিত্তিতে তা অবহিত হয়েছে।
মদিনাবাসীদের মধ্যে এক ব্যক্তি আমাকে এ বিষয়টি সুনিশ্চিত করেছেন, যিনি নিজে সে আগুন প্রত্যক্ষ করেছেন।
১১. তাতার বা মোঙ্গলীয়দের বিরূদ্ধে যুদ্ধ।
যেমন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوا قَوْمًا نِعَالُهُمُ الشَّعَرُ، وَحَتَّى تُقَاتِلُوا التُّرْكَ، صِغَارَ الأَعْيُنِ، حُمْرَ الوُجُوهِ، ذُلْفَ الأُنُوفِ، كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ المَجَانُّ المُطْرَقَةُ،
‘আবু হুরাইরা রা. সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্নিত,
তিনি বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না;
যতক্ষণ না তোমরা এমন এক জাতির সাথে যুদ্ধ করবে,
যাদের পায়ের জুতা হবে পশমের এবং যতক্ষণ না তোমরা তাতারিদের সাথে যুদ্ধ করবে,
যাদের চক্ষু হবে ছোট, চেহারা লাল ফর্সা, নাক চেপ্টা, তাদের চেহারা যেন পেটানো ঢাল।’ (সহিহুল বুখারি : ৪/১৯৬, হা. নং ৩৫৮৭, প্র. দারু তাওকিন নাজাত, মিশর)
নোট : হাদিসে তুর্ক বলে যে জাতির সাথে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে,
ইতিহাসে তারা মোঙ্গল বা তাতার জাতি নামে প্রসিদ্ধ।
বর্তমানের তুরস্কের অধিবাসীদের কথা বলা হয়নি;
যেমনটি কারও কারও ভ্রম হয়েছে।
হাদিসে বর্ণিত সবগুলো বৈশিষ্ট্যই তাতারিদের মাঝে বিদ্যমান ছিল।
ইমাম নববি রহ. বলেন, আমাদের যুগে তাদের দেখা মিলেছে।
তিনি বলেন, এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুজিজা যে, চক্ষু ছোট, চেহারা লাল ফর্সা, নাক চেপ্টা, চেহারা যেন পেটানো ঢাল বলে যেসব বৈশিষ্টের কথা বলেছেন, হুবহু সেসব বৈশিষ্টমণ্ডিত জাতির সাথে মুসলমানরা ইতিমধ্যেই কয়েকবার যুদ্ধ করেছে এবং এখনও যুদ্ধ চলছে।
মোটকথা এদের সাথে যুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।
বিখ্যাত আইনে জালুতের যুদ্ধে মুসলমানরা তাদেরকে চুড়ান্তভাবে পরাজিত করেছে।
চলবে ইনশাআল্লাহ
সংগৃহীত
Comment