বিছমিল্লাহির রহমানির রহিম
ইতিপূর্বে যত ধরণের প্রশংসা করা হয়েছে,বর্তমানে হচ্ছে এবং ভবিষ্যাতে হবে সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট ৷ অতঃপর,রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারের সকল সদস্যগণের উপর এবং সকল সাহাবি রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর উপর দূরূদ ও সালাম প্রেরণ করছি ৷কিছু নিয়ম-নীতির উপর আল্লাহ তা'আলা দুনিয়াকে পরিচালনা করেন ৷ তার মধ্যে একটা হল,যেকোন অবস্থাকে পরিবর্তন করা ৷ আল্লাহ তা'আলা বলেন :-
وَتِلكَ الأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاس
আর আমি দিবস সমূহকে অদল-বদল করতে থাকি লোকদের মধ্যে ৷ সূরা ইমরান-১৪০
সুতরাং বর্তমান জয়-পরাজয়ের পরিবর্তনের সময় ৷ সময় কখনো আমাদের পক্ষে আসবে আবার কখনো বিপক্ষে যাবে ৷ পরিস্থিতি খারাপ হওয়া,দুনিয়া বদলে খারাপ হয়ে যাওয়া এবং জগতের সবকিছু বিরুদ্ধে গেলেও আল্লাহ তা'আলা চোখের পলকে মূহুর্তের মধ্যে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তন করে দিতে পারেন ৷ ধনীলোক ফকির এবং ফকির ধনীলোক হওয়া,সম্মানিত ব্যক্তি অপমানিত হওয়া এবং অপমাণিত ব্যক্তি সম্মাণিত হওয়া,কঠিণ পরিস্থিতি থেকে সহজের দিকে যাওয়া এবং সহজ থেকে কঠিণের দিকে যাওয়া,সুস্থ ব্যক্তি অসুস্থ হওয়া এবং অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যাওয়া অর্থাৎ এক অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ বিপরিত অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়ার এরকম উদাহরণ অসংখ্য রয়েছে ৷ সুতরাং,এ পরিবর্তনের মূলনীতিটা মুসলিম উম্মাহর প্রতিও আল্লাহ তা'আলা প্রয়োগ করবেন ৷ বিধায় যদি আমরা এ উম্মাহর পিছে সময় ব্যয় করি তাহলে অচিরেই আমরা উম্মাহর পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে সক্ষম হব ৷ এবং উম্মাহর এক সোলালী যুগ বা সময় দেখতে পারব (ইন শা আল্লাহ) ৷
ইতিহাস পৃষ্ঠা খুললে আমরা দেখতে পাই,পৃথিবীতে পূর্বের শাসনামলে বিভিন্ন সভ্যতার প্রচালন ছিল:-ফেরাউনি,আশূরী,ব্যাবিলনি,কালদিয়ানি,ফিনীসিয়া,পারস্যি য়ান,হিন্দুয়ানি এবং চাইনিজি এরপর এরপর এগুলো বিদায় নিয়ে ইউনানি এবং রোমানি সভ্যতা আসল ৷ এরপর আসল ইসলামের সোনালী যুগ ৷ কিন্তু দিন-দিন ইসলামের সঠিক ভাবে পরিচর্যার অভাবে এ সভ্যতার বাতি নিভু-নিভু অবস্থায় আছে ৷ আমাদের ভারতবর্ষেরও একই অবস্থা, প্রথমে খারাপ সভ্যতার প্রচালন ছিল এরপর মুহাম্মদ বিন কাসিম আর সুলতাম মুহাম্মাদ গজনভীর সহ বিভিন্ন মুসলিম শাসকদের প্রচেষ্টায় সভ্যতার পরিবর্তন ঘটলেও ইসলামের সঠিক পরিচর্যার অভাবে সেটা বিলীন হয়ে যায় ৷ আমাদের চেষ্টা, আমরা অচিরেই ইসলামের সোনালী যুগ আবার ফিরিয়ে আনব (ইন শা আল্লাহ) ৷
আল্লাহ তা'আলা বলেন :-
عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُهْلِكَ عَدُوُّكُمْ وَ يَسْتَخْلِفَكُمْ فِى الأَرْضِ
অতি সত্বরই আল্লাহ দুশমনকে ধ্বংস করবেন,এবং তাদের স্থলে তোমাদেরকে এই ভূখণ্ডের অধীকারী করে দিবেন ৷ সূরা আ'রাফ-১২৯
আল্লাহ তা'আলা অন্য এক জায়গায় বলেন :-
ذٰلِكَ بِأَنَّ اللّٰهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِعْمَةً أنْعَمَهَا عَلٰى قَوْمٍ حَتّٰى يُغَيِّرُوْا مَا بِأنْفُسِهِمْ
এটা এই কারণে যে,আল্লাহ তা'আলা এমন কোনো নিয়ামতকে যা কোন জাতিকে দিয়েছেন,পরিবর্তন করেন না,যে পর্যন্ত না তারা নিজেদের কার্যকলাপকে পরিবর্তন করে ফেলে ৷ সূরা আনফাল-৫৩
অনুরূপভাবে পরিস্থিতির সাথে মানুষের অভ্যাস,অবস্থা এমনকি চরিত্রকেও আল্লাহ তা'আলা বদলে দেন ৷ এ সুযোগে যারা খারাপ থেকে ভাল,পদস্খলন থেকে দৃঢ়পদ,নিকৃষ্ট থেকে উৎকৃষ্ট এবং গোমরাহী থেকে হেদায়েতের পথে আসে,আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ভালবাসেন এবং তারা শক্তিশালি,বিজয়ী ও সম্মানিত হয় ৷ আল্লাহ তা'আলা বলেন :-
وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِى الزَّبُوْرِ مِنْ بَعْدِ الذِّكْرِ أنَّ الْأرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِىَ الصّٰلِحُوْنَ
আর আমি (আসমানি) কিতাবসমূহে লিপিবদ্ধ করে রেখেছি,লওহে মাহফুজে লিখার পরে-এজমিনের মালিক আমার নেক বান্দাগণ হবে ৷ সূরা আম্বিয়া-১০৫
আর যারা ভাল থেকে খারাপের দিকে গিয়ে পদস্খলিত হল তারা অপমানিত ও পরাজয় বরণ করে ৷ এবং আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ঘৃণা করেন ৷ আল্লাহ তা'আলা বলেন :-
إنَّ اللّٰهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتّٰى يُغَيِّرُوْا مَا بِأنْفُسِهِمْ
নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না,যে পর্যন্ত তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করেন না ৷ সূরা রা'দ-১১
সফলকাম ব্যক্তিরা অনেক ক্ষতির সম্মুখিন হন শারিরিক কষ্ট,জমিন প্রকম্পিত হওয়া,ধন-সম্পাদ সহ সকল জিনিসের ক্ষতির সম্মুখিন হন ৷ বাহ্যত দৃষ্টিতে যদিও দেখা যায় তাঁরা অনেক কষ্টে আছেন ৷ কিন্তু এই কষ্ট দ্বারা তাকে পরীক্ষা করা হয় ৷ এবং মরতবা বাড়ানো হয় ও চিরস্থায়ী শান্তি এবং বিজয়ের সন্ধান দেওয়া হয় ৷ আল্লাহ তা'আলা বলেন :-اَمْ حَسِبْتُمْ اَنْ تَدْخُلُوا الجَنَّةَ وَلَمَّا يَاْتِكُمْ مَّثَلُ الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَاْسآءُ وَ الضَّرَّآءُ وَ زُلْزِلُوْا حَتّٰى يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مَعَه مَتٰى نَصْرُ اللّٰهِ اَلَآ اِنَّ نَصْرَ اللّٰهِ قَرِيْبٌ
তোমরা কি মনে কর যে,(বিনা শ্রমে) বেহেশতে প্রবেশ করবে?অথচ এখনো তাদের ন্যায় তোমাদের সম্মুখে কোনো আশ্চার্যজনক ঘটনা ঘটেনি,যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে,তাদের উপর (বিরোধীদের কারণে) এমন এমন অভাব ও বিপদ-আপদ এসেছিল এবং তারা এমন প্রকম্পিত হয়েছিল যে,স্বয়ং রাসূল ও তাঁর মুমিন সাথীগণও বলে উঠেছিলেন, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? স্বরণ রেখ!নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য আসন্ন ৷ সূরা বাকারা-২১৪
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিগণ আল্লাহর সাহায্য আসতে দেরি হওয়াতে একথা বলেছিলেন যে,আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে?তখন আল্লাহ তা'আলা সান্তনা দেওয়ার জন্য বলেছিলেন "আল্লাহর সাহায্য অতি সন্নিকটে" ৷ আল্লাহ তা'আলা অপর এক স্থানে বলেন :-حَتّٰى إذَا اسْتَيْئَسَ الرُّسُلُ وَ ظَنُّوْا أنَّهُمْ قَدْ كُذِبُوْا جَاءَهُمْ نَصْرُنَا فَنُجِّىَ مَنْ نَّشَاء وَلَا يُرَدُّ بَأسُنَا عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِيْنَ
অবশেষে যখন রাসূলগণ নিরাশ হয়ে পড়লেন এবং (আজাবের প্রতিশ্রুত সময় নির্ধারণের ব্যাপারে) তাঁদের ধারণা জন্মিল যে,আমাদের বুঝের ভুল হয়েছে,(তখন) তাঁদের নিকট আমার সাহায্য এসে পৌঁছল,অনন্তর আমি যাকে বাঁচাতে ইচ্ছা করলাম,সে রক্ষা পেল,আর আমার আজাব অপরাধীদের থেকে সরে যায় না ৷ সূরা ইউসুফ-১১০
মনোযোগ দিয়ে শুনুন
استيأس الرسلরাসূলগণ নিরাশ হয়ে পড়লেন সাহায্য আসতে দেরি হওয়াতে ৷
এজন্য আমাদের উপর সময়মত সাহায্য না আসলে নৈরাশ হওয়া যাবে না ৷ আমাদের সাহায্য আসতে অনেক সময় লাগবে যেমন সাহায্য আসতে দেরি হয়েছিল নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামগণের উপর ৷ এমনকি সাহায্য আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ হওয়াতে তাঁরা ভেবেছিলেন وظنوا انهم قد كذبوا তাদের ধারণা জন্ম নিল যে,তাদের বুঝের মধ্যে ভুল হয়েছে ৷ আমাদেরকে এরকম সাহায্য করতে বিলম্ব করে আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে পরীক্ষা নিবেন ৷ এতে হতাশা প্রকাশ করা যাবে না ৷ কারণ তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে :-جَآءَهُمْ نَصْرُنَا فَنُجِّىَ مَنْ نَّشَآءْ(তখন) তাদের নিকট আমার সাহায্য এসে পৌছাল,অনন্তর আমি যাকে বাঁচাতে ইচ্ছা করলাম সে রক্ষা পেল ৷
আল্লাহ তা'আলা অপর এক স্থানে বলেন :-وَ هُوَ الّذِىْ يُنَزِّلُ الْغَيْثَ مِنْ بَعْدِ مَا قَنَطُوْا
এবং তিনি এমন (দয়ালু যে,মানুষ নিরাশ হওয়ার পর বৃষ্টি বর্ষণ করেন ৷ অর্থাৎ মানুষ নৈরাশ হওয়ার পর যখন দুনিয়া সংকীর্ণ হয়ে আসে এবং আশার আলো চোখে দেখা যায় না তখন আল্লাহর রহমাত আসে ৷
সুতরাং,মুমিনদের জন্য জরুরি হল;নৈরাশ না হওয়া এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা ৷ কারণ যখন আমাদের সামনে পরীক্ষা আসবে,ধন-সম্পাদ নষ্ট হবে,শারিরিক-মানসিক ও পারিবারিক ভাবে সমস্যার সম্মুখীন হব তখনই আল্লাহর সাহায্য আসবে ৷ আমাদেরকে মনে রাখতে হবে; "রাত যতই গভীর হয় প্রভাত ততই নিকটবর্তী হয়" ৷
Comment