তবে কি চূড়ান্ত মালহামা অত্যাসন্ন?
জীবন ও জীবিকার আপেক্ষিক তুলনার প্রশ্নে জীবন অধিক গুরুত্বপূর্ণ। জীবন রক্ষার্থে মানুষ জীবিকার গলায় ছুড়ি চালিয়েছে। এর প্রভাবে করোনার প্রকোপ কেটে গেলে হয়তো খুব শীঘ্রই দেখা মিলবে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার। অক্সফ্যাম জানিয়েছে, বিশ্বের ৫০ কোটি মানুষ হতদরিদ্র অবস্থায় নিপতিত হবে। পৃথিবীর গতিপথ বদলে যাবে। ইতিহাস বলে, প্রত্যেক বড় বড় পরিবর্তনের আগে এ ধরনের ব্যাপক দুর্যোগ দেখা দিয়েছিল। মহামারির ছোবলে অনেক কিছু রাতারাতি বদলে গিয়েছিল।
এ শহর নিস্তব্ধ। গোটা দেশ নিস্তব্ধ। থমকে গেছে মানবসভ্যতা। নগর ও মফস্বলের প্রভেদরেখাও যেন মুছে গেছে। কোলাহলে মুখরিত হচ্ছে না তিলোত্তমা শহর। সড়কে বাজছে না ভেঁপু। আকাশে মানুষের বাহন মেলছে না ডানা। নদী সন্তরণে নামছে না নৌকা-জাহাজ। কেবলই শার্সিতে মুখ রেখে লাখো কোটি মানুষ অপেক্ষা করছে, মুক্তি আসবে কবে; ভাবছে, এভাবে আর কতদিন? করোনার থাবায় থমকে গেছে বিশ্ব। এ যেন সেই কবিতার বাস্তব রূপ :
‘এতটা নিঃশব্দে জেগে থাকা যায় না,
তবু জেগে আছি…
আরও কত শব্দহীন হাঁটবে তুমি,
আরও কত নিভৃত চরণে!
আমি কি কিছুই শুনব না—
আমি কি কিছুই জানব না!’
করোনা সংক্রমণের অবসানের পর যে পৃথিবী আমরা দেখব, সে পৃথিবী এখনকার পৃথিবী নয়। দেশে দেশে রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। পরিবর্তন ঘটবে বিশ্বব্যবস্থারও। যত দিন যাচ্ছে, বিশ্বের গোটা অর্থনীতি ক্রমশ হ-য-ব-র-ল হয়ে যাচ্ছে। করোনা যতটা দীর্ঘ হতে থাকবে, চূড়ান্ত মালহামার আগমনও হয়তো ততটা এগোতে থাকবে।
করোনা এ যাবত প্রায় ৩৮৪ বার তার রকম পরিবর্তন করেছে। ভাইরাস পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই প্রথম নয়। ইতিপূর্বে কলেরা, বসন্ত, প্লেগ ইত্যাদি অনেক জনপদকে জনশূন্য করে দিয়েছে, ইতিহাস যা আজও সংরক্ষিত রেখেছে। কিন্তু কোনো ভাইরাস এত বেশি রকম পরিবর্তন করার ইতিহাস সম্ভবত দ্বিতীয় নেই।
এক গবেষণায় দেখলাম, প্রতি শতাব্দী অর্থাৎ প্রতি ১০০ বছর পরপর অনিয়ন্ত্রিত মহামারি নাকি পৃথিবীতে প্রকাশ পায় এবং এটাও প্রমাণিত যে, অন্যের অধিকার হরণ, অত্যাচার, অনাচার, অবিচার, অশ্লীলতা প্রভৃতি যখন সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে। তবে এবারের বিপর্যয় ভিন্নতর। কারণ, এ বিপর্যয় নির্দিষ্ট কোনো এলাকাভিত্তিক নয়; বরং এর ব্যাপ্তি বিশ্বজুড়ে। বিশেষ করে তাগুত রাষ্ট্রগুলো এর নির্মম আঘাতে একেবারেই লুটিয়ে পড়েছে ধ্বংসের মুখে। জানি না, আগামীর দিনগুলোতে আদতে কী ঘটতে যাচ্ছে। তবে কিসের যেন ইঙ্গিত অনুভব হয় দৃশ্য জগতের ওপার থেকে।
লেখকঃ বিশিষ্ট আলেম ও দাঈ
সংগৃহীত
Comment