যারা দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্ক করে আসুন তাদের মুহাব্বাত করি
যারা দাজ্জাল, দাজ্জালি ফিতনা ও আধুনিক দাজ্জালি বিশ্ব নিয়ে কথা বলেন এবং উম্মাহকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেন, অন্যদের চেয়ে তারা একটু বেশি মুহাব্বাত পাওয়ার হকদার।
এক হাদিসে এসেছে,
عن أبي هريرة قال: ما زلت أحب بني تميم منذ ثلاث، سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول فيهم، سمعته يقول: «هم أشد أمتي، على الدجال»، قال: وجاءت صدقاتهم، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «هذه صدقات قومنا»، وكانت سبية منهم عند عائشة، فقال: «أعتقيها فإنها من ولد إسماعيل». -صحيح البخاري (3/ 148)، ط. دار طوق النجاة، كتاب العتق، باب: من ملك من العرب رقيقا، فوهب وباع وجامع وفدى وسبى الذرية، رقم الحديث: 2543 و كتاب المغازي، باب: وفد بني تميم، رقم الحديث: 4366
আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, বনু তামিম গোত্রের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেদিন থেকে তিনটি কথা বলতে শুনেছি, সেদিন থেকে তাদের মুহাব্বাত করে আসছি: ১. শুনেছি তিনি বলেছেন, তারা –বনু তামিম- আমার উম্মতের মধ্যে দাজ্জালের ব্যাপারে সবচেয়ে কঠোর; ২. তাদের সাদাকা রাসূলের কাছে আসার পর তিনি বলেছেন, এ সাদাকা আমার নিজের কওমের সাদাকা; ৩. তাদের বংশের এক যুদ্ধবন্দী মেয়ে আয়েশা রাদি.র কাছে ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আয়েশা রাদি.কে বললেন, একে আযাদ করে দাও, সে ইসমাইল আলাইহিস সালামের বংশের মানুষ। -সহীহ বোখারি: ২৫৪৩, কিতাবুল ইতক অন্য বর্ণনায় এসেছে,
قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: مَا كَانَ قَوْمٌ مِنَ الْأَحْيَاءِ أَبْغَضُ إِلَيَّ مِنْهُمْ، فَأَحْبَبْتُهُمْ مُنْذُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ هَذَا. -مسند أحمد ط الرسالة (15/ 31): 9068، قال المحققون: حديث صحيح. اهـ
আবু হুরায়রা রাদি. বলেন, তাদের চেয়ে বেশি বিদ্বেষ অন্য কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি আমার ছিল না। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা বলতে শুনার পর থেকে তাদেরকে মুহাব্বাত করতে থাকি। -মুসনাদে আহমাদ: ৯০৬৮হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেন,
وكان ذلك لما كان يقع بينهم وبين قومه في الجاهلية من العداوة. –فتح الباري لابن حجر (5/ 172)
জাহিলি যামানায় তাদের ও আবু হুরায়রা রাদি.র কওমের মাঝে যে দুশমনি চলে আসছিল, মূলত সে কারণেই বিদ্বেষ ছিল। -ফাতহুল বারি: ৫/১৭২অর্থাৎ জাহিলি যামানায় বনু তামিম গোত্রের সাথে আবু হুরায়রা রাদি.র গোত্রের দ্বন্দ্ব-দুশমনি ছিল বিধায় একে অপরকে বিদ্বেষের দৃষ্টিতে দেখতো। কিন্তু পরে যখন বনু তামিমের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ভাল বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা বললেন, তখন থেকে আবু হুরায়রা রাদি. সকল বিদ্বেষ ঝেড়ে ফেলে তাদের মুহাব্বাত করতে শুরু করেন।
(১) বনু তামিম গোত্র ইসমাইল আলাইহিস সালামের বংশধর । (২) অধিকন্তু তাদের ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিতৃবংশ এক জায়গায় (ইলিয়াস বিন মুদার-এ) গিয়ে মিলিত হয়। এ হিসেবেই রাসূল তাদেরকে ‘আমার নিজের কওম’ বলেছেন ।
(৩) তৃতীয় যে বিশেষ গুণটির কারণে আবু হুরায়রা রাদি. তাদের মুহাব্বাত করতেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন, দাজ্জালের প্রতি এরাই হবে সবচেয়ে কঠিন।
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
هم أشد الناس قتالا في الملاحم. -صحيح مسلم (4/ 1957)؛ رقم الحديث: 198؛ كتاب: 44 - فضائل الصحابة رضي الله تعالى عنهم؛ باب: 47 - من فضائل غفار، وأسلم، وجهينة، وأشجع، ومزينة، وتميم، ودوس، وطيئ؛ ط. دار إحياء التراث العربي – بيروت
মালহামা তথা যুদ্ধের সময় এরা কঠিন যোদ্ধা। -সহীহ মুসলিম: ১৯৮, কিতাবু ফাজায়িলিস সাহাবাঅর্থাৎ দাজ্জালের বিরুদ্ধে তারা অত্যন্ত কঠোর হবে এবং অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে দাজ্জালের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আবু হুরায়রা রাদি. এ কথা শুনার পর তাদের মুহাব্বাত করতে শুরু করেছেন, অথচ এর আগে তার কাছে তারাই ছিল সবচেয়ে বড় বিদ্বেষের পাত্র।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,
وَنَالَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا، فَقَالَ: " لَا تَقُلْ لِبَنِي تَمِيمٍ إِلَّا خَيْرًا، فَإِنَّهُمْ أَطْوَلُ النَّاسِ رِمَاحًا عَلَى الدَّجَّالِ ". -مسند أحمد ط الرسالة (29/ 74): 17533، قال المحققون: إسناده صحيح. اهـ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে একদিন এক লোক বনু তামিম গোত্রের ব্যাপারে মন্দ কিছু বললো। রাসূল তখন তাকে উপদেশ দিলেন, বনু তামিমের ব্যাপারে ভাল বৈ (মন্দ কিছু) বলো না। কারণ, দাজ্জালের বিরুদ্ধে এদের বর্শাই সবচেয়ে লম্বা। -মুসনাদে আহমাদ: ১৭৫৩৩অর্থাৎ দাজ্জালের বিরুদ্ধে কিতালে এরাই সবচেয়ে বেশি কঠোর ও অগ্রগামী, যেমনটা শুরুর হাদিসে গেছে।
আমরা দেখলাম,
- দাজ্জালের বিরুদ্ধে কঠোর বিধায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সমীহের দৃষ্টিতে দেখতে এবং তাদের ব্যাপারে ভাল মন্তব্য করতে উপদেশ দিয়েছেন।
- একই কারণে আবু হুরায়রা রাদি. তাদের মুহাব্বাত করেছেন, অথচ এর আগে তাদের প্রতি বিদ্বেষ ছিল।
বুঝা গেল দাজ্জাল ও দাজ্জালি ফিতনা নিয়ে কথা বলা, এ ব্যাপারে উম্মাহকে সতর্ক করা এবং দাজ্জালের মোকাবেলায় রুখে দাঁড়ানো ও কিতাল করা- এ বিষয়গুলো রাসূল ও তার সাহাবাদের দৃষ্টিতে এমনই মহৎ গুণ, যেগুলোর কারণে ব্যক্তিকে মুহাব্বাত করতে হয়। পূর্ব শত্রুতা থাকলে তা ঝেড়ে ফেলে তাকে কাছে টানতে হয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন। বর্তমানে আমাদের অবস্থায় হয়ে গেছে, সামান্য এদিকে সেদিক হলেই কোমর বেঁধে সমালোচনায় লেগে পড়ি। অথচ ভুলগুলো অন্যভাবেও শুধরানো যেতো। একটু ভেবে দেখি না, আমার এমন ওপেন সমালোচনার দ্বারা উম্মাহর একটা খায়রের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কি’না। এ যামানায় হকের পক্ষে এমনিতেই লোক পাওয়া যায় না। কেউ হিম্মত করে কিছু করতে চাইলে আমাদের উচিত ওপেন সমালোচনা না করে বরং সহযোগিতা করা। ভুল কিছু হয়ে গেলে দরদ ও হিকমার সাথে সংশোধন করা।
***
উল্লেখ্য, বনু তামিম গোত্র ইয়ামান ও সৌদি আরবে বিপুল পরিমাণে এবং এছাড়াও ছড়িয়ে ছিটিয়ে অন্যান্য অনেক এলাকায় বসবাস করে।
***
أما الأولى: فهم أشد الأمة على الدجال، فهذا يدل على شجاعتهم، وثبات إيمانهم في آخر الزمان عند تزلزل إيمان الناس. -الإفصاح عن معاني الصحاح لابن هبيرة (ت 560هـ): (7/ 6)(هم أشد أمتي على الدجال) أي: إنكارا وتجنبا، أو جدلا ونزاعا. -لمعات التنقيح في شرح مشكاة المصابيح للشيخ عبد الحق الدهلوي (ت1052هـ): (9/ 565)
قوله: (هم أشد أمتي على الدجال) . أي: حين ظهوره، وفيه إشعار بوجودهم إلى زمانه بكثرة. -مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح (9/ 3866)
و(قوله - صلى الله عليه وسلم - في بني تميم: هم أشد أمتي على الدجال) تصريح بأن بني تميم لا ينقطع نسلهم إلى يوم القيامة، وبأنهم يتمسكون في ذلك الوقت بالحق، ويقاتلون عليه، وفي الرواية الأخرى: هم أشد الناس قتالًا في الملاحم يعني: الملاحم التي تكون بين يدي الدجال، أو مع الدجال. -المفهم لما أشكل من تلخيص كتاب مسلم للقرطبي (ت 656هـ): (6/ 476)
(هم أشد أمتي على الدجال) من طرائف المناسبات أن الشيخ محمد بن عبد الوهاب النجدي رحمه الله كان من تميم، وكان هو وأتباعه أشد الناس على دجالي زمانهم من عُبَّاد القبور والمتاجرين بها. -منة المنعم في شرح صحيح مسلم لصفي الرحمن المباركفوري (ت 1427هـ): (4/ 154)
Comment