"রাশিয়ান জগত" বনাম "অখন্ড ভারত"
সম্প্রতি ইউক্রেন এর উপর রাশিয়ার আগ্রাসন সম্পর্কে কম বেশি সবাই জানি। এ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এর সাথে তালমিলিয়ে পুরো বিশ্বও তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু দেশ নিরব ভূমিকা বা বলা যায় পরোক্ষ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চিন, ভারত। এই আর্টিকেলে আমরা দেখানোর চেস্টা করব কেন রাশিয়া আগ্রাসন চালাচ্ছে, ভারত কেন নিরব, এবং এই পরিস্থিতি মুসলিম উম্মাহ প্রতি বিশেষত কি বার্তা দেয় এবং "ভারতের নিরব অবস্থান" বাংলাদেশের প্রতি কি বার্তা দেয়।
"রাশিয়ান জগত"-;
রাশিয়া কেন আগ্রাসন চালাচ্ছে এটা বুঝার জন্য একটু পিছনে যেতে হবে৷ আমরা সবাই জানি যে, রাশিয়া এক সময় সুপার পাওয়ার ছিল৷ তাদের রাষ্ট্র তথা সোভিয়েত ইউনিয়ন আরো বড় ছিল। আফগানিস্তানে তাদের পরজায়ের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়৷ এরপর থেকে আর জোড়া লাগাতে পারেনি, তবে তারা থেমেও থাকেনি। যেকোন ধরণের আধিপত্য, শাসন-শোষন নীতি তারা রীতিমত চালিয়ে আসছে। এবং ধীরে ধীরে তাদের পুরনো সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করার চেস্টা করে যাচ্ছে। যার নাম দিয়েছে "রাশিয়ান জগত"। তাদের এই "রাশিয়ান জগত" প্রতিষ্ঠার জন্য সবচে বড় ভূমিকা রেখেছে পুতিন৷ সে লক্ষ্যে সে ২০০৮ সালে জর্জিয়া আক্রমণ করে দক্ষিন ওতেশিয়া স্বাধীন করেছে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে দখল করে নিয়েছে ক্রিমিয়া। একই টার্গেটে আছে কাজাকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও তাজিকিস্তান। এসব রাষ্ট্রের জন্য অপেক্ষা করছে ইউক্রেন পরিণতি। অতএব সময় থাকতে সাবধান।
"অখন্ড ভারত" -;
ভারত কেন নিরব এটা বুঝতেও একটু পিছনে যেতে হবে৷ ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ শাসন শেষ হওয়ার পর অস্তিত্ব লাভ করে পাকিস্তান ও ভারত নামে পৃথক দুটি রাষ্ট্র। সেটা ভেঙে আবার বাংলাদেশ। তার মানে ১৯৪৭ সালের আগে এসব এক রাষ্ট্র ছিল। এছাড়া নেপাল, ভুটান ও অখন্ড ভারতের অংশ। হিন্দুরা এসবগুলো রাষ্ট্রকে নিজেদের রাষ্ট্র মনে করে। তাই তারা পুনরায় "অখন্ড ভারত" প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। ভারত এই পৃথক হওয়া রাষ্ট্রগুলোর উপর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক সব ধরণের আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। দখলে নেওয়ার জন্য বৈধ ক্ষমতা দরকার, সেই লক্ষ্যে জাতি সংঘের স্থায়ী সদস্য হতে আরো বেশি মরিয়া হয়ে উঠেছে। এসব কিছুও আমাদের জানা। কিন্তু সাম্প্রতিক রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় সবাই অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু চিন, ভারত নিরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়াকে৷ গত ২৫ তারিখ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদের সাধারণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৫ সদস্য অংশগ্রহণ করে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভোটি হয়। ১১ দেশ নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দিলেও ভারত, চিন কোন ভোট দেয়নি। কারণ অনেক, আমরা সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ তুলে ধরছিঃ
ভারতের নিরব দর্শক হয়ে থাকার পিছনে কয়েকটি কারনের মধ্যে উল্লেখ্য দুটি কারন হচ্ছে, ভারতের রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক সার্থ্য রক্ষা ও অপরটি হলো ভারতের অখণ্ড হিন্দুত্যবাদ কায়েমে সমর্থক না হারানো।
#ভারত ও রাশিয়ার মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্কঃ
ভারতের সাথে রাশিয়ার সুসম্পর্ক বহুদিনের,তাদের মধ্যে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে, রাশিয়া পরমাণু শক্তিতে ভারতের দীর্ঘদিনের অংশীদার, উভয় দেশই un, brics, g20 এবং sco সহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য,7 নভেম্বর 2009-এ, ভারত রাশিয়ার সাথে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করে যা আগে দুই দেশের মধ্যে সম্মত হয়েছিল।রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার, 2017 সালে, ভারতীয় সামরিক বাহিনীর হার্ডওয়্যার আমদানির প্রায় 68% রাশিয়া থেকে এসেছিল, যা রাশিয়াকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের প্রধান সরবরাহকারী করে তোলে, মস্কো-ভিত্তিক বেসরকারী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক লেভাদা-সেন্টারের 2017 সালের জনমত জরিপ বলছে যে রাশিয়ানরা ভারতকে তাদের শীর্ষ পাঁচটি "বন্ধু" হিসাবে চিহ্নিত করেছে, অন্যরা হল বেলারুশ, চীন, কাজাখস্তান এবং সিরিয়া।
# ভারতের অখণ্ড হিন্দুত্যবাদ কায়েমের প্রেক্ষিতে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যকার সুসম্পর্কঃ
রাশিয়া কাশ্মীর নিয়ে ভারতের পদক্ষেপকে (অনুচ্ছেদ 370 বাতিল এবং রাজ্যের বিভাজন) সম্পূর্ণরূপে একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে বর্ণনা করে এবং 1972 সালের সিমলা চুক্তি এবং 1999 সালের লাহোর ঘোষণার অধীনে সমাধানের আহ্বান জানায়। ভারতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলে কুদাশেভ দিল্লিতে কাশ্মীর সংক্রান্ত বিষয়ে বলেছিলেন, "কাশ্মীরে আমার ভ্রমণের কোনও কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। এটি ভারতের সংবিধানের অন্তর্গত একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়,এটি রাশিয়ার জন্য কোনো সমস্যা নয়। যারা বিশ্বাস করেন যে এটি একটি ইস্যু, যারা কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা কাশ্মীরে ভারতীয় নীতি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন তারা ভ্রমণ করে নিজেরাই দেখতে পারেন।অর্থাৎ কাশ্মীর ইস্যুতে রাশিয়া ভারতকে পরোক্ষ ভাবে সমর্থন দিচ্ছে।তাই ভবিষ্যতে কাশ্মীরের মতো বাংলাদেশেও ভারতের আগ্রাসনে, ভারত রাশিয়াকে পাশে চাইবে।
#ভারত ও ইউক্রেনের মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্কঃ
ভারত সরকার 1991 সালের ডিসেম্বরে ইউক্রেন প্রজাতন্ত্রকে একটি সার্বভৌম দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং 1992 সালের জানুয়ারিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে রাশিয়ার পর ইউক্রেন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ভারত ও ইউক্রেনের মধ্যে 17টিরও বেশি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সহযোগিতা, পররাষ্ট্র দফতরের পরামর্শ, মহাকাশ গবেষণায় সহযোগিতা, দ্বৈত ট্যাক্সেশন পরিহার এবং বিনিয়োগের প্রচার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। মার্চ, 1992 সালে ভারত ও ইউক্রেনের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা ভারত-ইউক্রেন বাণিজ্য সম্পর্কের একটি বড় উৎসাহ প্রদান করে। ভারতে ইউক্রেনের প্রধান রপ্তানি ছিল উদ্ভিজ্জ চর্বি এবং তেল (73.3%), সার (10.6%), পারমাণবিক চুল্লি, বয়লার এবং যন্ত্রপাতি (5.2%)। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য (32.7%), বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি (7.8%) এবং অন্যান্য আইটেমগুলি ইউক্রেন দ্বারা সর্বাধিক সাধারণ ভারতীয় আমদানি ছিল। 2020 সালে ইউক্রেনে ভারতের রপ্তানি ছিল us$438.25 মিলিয়ন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত জাতিসংঘের কমট্রেড ডেটাবেস অনুসারে।
# ভারতের অখণ্ড হিন্দুত্যবাদ কায়েমের প্রেক্ষিতে ভারত ও ইউক্রেনের মধ্যকার সম্পর্কঃ
ইউক্রেনের সাথে ভারতের পূর্ব থেকেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ইউক্রেন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ভারতের সাথে ইতিবাচক সহযোগিতা করছে।তবে ইউক্রেন সিমলা চুক্তির ভিত্তিতে জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যার সমাধানকে সমর্থন করে। ইউক্রেন 370 অনুচ্ছেদ বাতিলের পরে জম্মু ও কাশ্মীরে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের চাওয়া সহ ধারাবাহিকভাবে ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়েছিল।তাই এখন মনে হতে পারে ভারত রাশিয়ার পক্ষে এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে,কিন্তু এটি ভারত নাও করতে পারে,হতে পারে সেটা অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক কারনে,তবে আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারন রয়েছে সেটি হলো মুসলিম বিদ্বেষী আরেক দেশ ইজরায়েল,যা এখন আলোচনা করা দরকার,
ইহুদি পরিবারে জন্ম বর্তমান ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির, জেলেনস্কি মধ্য ইউক্রেনের প্রধানত ইউক্রেনীয়-ভাষী অঞ্চলের একটি প্রধান শহর ক্রিভি রিহ-তে বেড়ে ওঠেন। তার অভিনয় জীবনের আগে, তিনি কিয়েভ ন্যাশনাল ইকোনমিক ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন,অভিনয় জীবনে জেলেনস্কি ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির ভূমিকায় একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।তারপর সেটিই বাস্তবে রুপ নেয়,এবং অবাক করা বিষয় শুরু থেকেই তিনি মস্কোর বিরুদ্ধচারন করে আসছিলেন,এবং রাশিয়ার মতের বিরুদ্ধে আমেরিকার মদদে নেটোর অন্তরভূক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন,এ যেনো রাশিয়ার পায়ে পারা দিয়ে যুদ্ধ লাগানোর চেষ্টা,হয়েছে ও তাই এবং এই যুদ্ধ যে ইহুদিদের পূর্ব পরিকল্পনার ফসল নয় তাও বলা যাচ্ছে না।এই যুদ্ধের প্রভাবে পৃথিবীর সুপারপাওয়ার দেশ গুলো দুটি দলে ভাগ হয়ে যেতে পারে এবং একটি নতুন দেশ মাথাচারা দিয়ে উঠতে পারে সে দেশটি ইজরায়েল ও হতে পারে।
#ভারত, ইউক্রেন,ইজরায়েল সম্পর্কঃ-
উপরের আলোচনা থেকে বর্তমান ইউক্রেন ও ইজরায়েলের মধ্যকার সম্পর্ক অনুমান করা যায়,ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে ইউক্রেন ইজরায়েল কে সমর্থন দেয়,পাশাপাশি ভারত ও তখন ইজরায়েল কে সমর্থন দেয়, আবার কাশ্মীর ইস্যূতে ইজরায়েল পাকিস্তান কে সমর্থন না দিয়ে ভারতকে সমর্থন করে,এবং ভারতকে সব রকম সহায়তা দিতে রাজি হয় সেটা হতে পারে সামরিক ভাবে বা টেকনিক্যাল ভাবে।তাই কাশ্মীর,বাংলাদেশ বা অন্নান্য অঞ্চলে ভারতের হিন্দুত্যবাদী আগ্রাসনের চালানোর জন্য ভারত ইজরায়েল কেও তার পাশে চাইবে,আর তাই বর্তমান রাশিয়া- ইউক্রেন সংঘর্ষে ইজরায়েল সমর্থনপুষ্ট ইউক্রেন এর পক্ষে ভারতের সমর্থন না থাকাটাই অসামঞ্জস্যপূর্ন।
আমাদের করণীয়ঃ
১- উপরের আলোচনা থেকে এটা ক্লিয়ার যে রাশিয়া ধীরে ধীরে "রাশিয়ান জগত" প্রতিষ্ঠার দিকে এগুবে, অতএব রাশিয়ার পাশ্ববর্তী মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আগ থেকেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে।
২- ভারত "অখন্ড ভারত" প্রতিষ্ঠায় আগ্রাসন চালাতে আন্তর্জাতিক সকল আয়োজন সম্পন্ন করতেছে, অতএব বাংলার মুসলিম সাবধান। সময় থাকতে ইদাদের কাজ শেষ করা আবস্যক।
৩- রাশিয়া কিংবা ভারত, ইউক্রেন কিংবা পশ্চিমা কেউ আমাদের বন্ধু নয়। তাই আগপিছ না দেখে অতিউৎসাহী হওয়া উচিত নয়।
৪- গ্রেটার ইসরাইল, গ্রেটার ইন্ডিয়া, গ্রেটার রাশিয়া এই তিনটি মুসলিম বিশ্বের জন্য চলমান হুকমি। এদের প্রতিটি প্রদক্ষেপ সতর্ক দৃষ্টিতে দেখা জরুরি।
///
রাজনৈতিক বিশ্লেষক, হাসান আল-হিন্দ।
সম্প্রতি ইউক্রেন এর উপর রাশিয়ার আগ্রাসন সম্পর্কে কম বেশি সবাই জানি। এ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এর সাথে তালমিলিয়ে পুরো বিশ্বও তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু দেশ নিরব ভূমিকা বা বলা যায় পরোক্ষ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চিন, ভারত। এই আর্টিকেলে আমরা দেখানোর চেস্টা করব কেন রাশিয়া আগ্রাসন চালাচ্ছে, ভারত কেন নিরব, এবং এই পরিস্থিতি মুসলিম উম্মাহ প্রতি বিশেষত কি বার্তা দেয় এবং "ভারতের নিরব অবস্থান" বাংলাদেশের প্রতি কি বার্তা দেয়।
"রাশিয়ান জগত"-;
রাশিয়া কেন আগ্রাসন চালাচ্ছে এটা বুঝার জন্য একটু পিছনে যেতে হবে৷ আমরা সবাই জানি যে, রাশিয়া এক সময় সুপার পাওয়ার ছিল৷ তাদের রাষ্ট্র তথা সোভিয়েত ইউনিয়ন আরো বড় ছিল। আফগানিস্তানে তাদের পরজায়ের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়৷ এরপর থেকে আর জোড়া লাগাতে পারেনি, তবে তারা থেমেও থাকেনি। যেকোন ধরণের আধিপত্য, শাসন-শোষন নীতি তারা রীতিমত চালিয়ে আসছে। এবং ধীরে ধীরে তাদের পুরনো সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করার চেস্টা করে যাচ্ছে। যার নাম দিয়েছে "রাশিয়ান জগত"। তাদের এই "রাশিয়ান জগত" প্রতিষ্ঠার জন্য সবচে বড় ভূমিকা রেখেছে পুতিন৷ সে লক্ষ্যে সে ২০০৮ সালে জর্জিয়া আক্রমণ করে দক্ষিন ওতেশিয়া স্বাধীন করেছে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে দখল করে নিয়েছে ক্রিমিয়া। একই টার্গেটে আছে কাজাকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও তাজিকিস্তান। এসব রাষ্ট্রের জন্য অপেক্ষা করছে ইউক্রেন পরিণতি। অতএব সময় থাকতে সাবধান।
"অখন্ড ভারত" -;
ভারত কেন নিরব এটা বুঝতেও একটু পিছনে যেতে হবে৷ ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ শাসন শেষ হওয়ার পর অস্তিত্ব লাভ করে পাকিস্তান ও ভারত নামে পৃথক দুটি রাষ্ট্র। সেটা ভেঙে আবার বাংলাদেশ। তার মানে ১৯৪৭ সালের আগে এসব এক রাষ্ট্র ছিল। এছাড়া নেপাল, ভুটান ও অখন্ড ভারতের অংশ। হিন্দুরা এসবগুলো রাষ্ট্রকে নিজেদের রাষ্ট্র মনে করে। তাই তারা পুনরায় "অখন্ড ভারত" প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। ভারত এই পৃথক হওয়া রাষ্ট্রগুলোর উপর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক সব ধরণের আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। দখলে নেওয়ার জন্য বৈধ ক্ষমতা দরকার, সেই লক্ষ্যে জাতি সংঘের স্থায়ী সদস্য হতে আরো বেশি মরিয়া হয়ে উঠেছে। এসব কিছুও আমাদের জানা। কিন্তু সাম্প্রতিক রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় সবাই অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু চিন, ভারত নিরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়াকে৷ গত ২৫ তারিখ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদের সাধারণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৫ সদস্য অংশগ্রহণ করে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভোটি হয়। ১১ দেশ নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দিলেও ভারত, চিন কোন ভোট দেয়নি। কারণ অনেক, আমরা সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ তুলে ধরছিঃ
ভারতের নিরব দর্শক হয়ে থাকার পিছনে কয়েকটি কারনের মধ্যে উল্লেখ্য দুটি কারন হচ্ছে, ভারতের রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক সার্থ্য রক্ষা ও অপরটি হলো ভারতের অখণ্ড হিন্দুত্যবাদ কায়েমে সমর্থক না হারানো।
#ভারত ও রাশিয়ার মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্কঃ
ভারতের সাথে রাশিয়ার সুসম্পর্ক বহুদিনের,তাদের মধ্যে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে, রাশিয়া পরমাণু শক্তিতে ভারতের দীর্ঘদিনের অংশীদার, উভয় দেশই un, brics, g20 এবং sco সহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য,7 নভেম্বর 2009-এ, ভারত রাশিয়ার সাথে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করে যা আগে দুই দেশের মধ্যে সম্মত হয়েছিল।রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার, 2017 সালে, ভারতীয় সামরিক বাহিনীর হার্ডওয়্যার আমদানির প্রায় 68% রাশিয়া থেকে এসেছিল, যা রাশিয়াকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের প্রধান সরবরাহকারী করে তোলে, মস্কো-ভিত্তিক বেসরকারী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক লেভাদা-সেন্টারের 2017 সালের জনমত জরিপ বলছে যে রাশিয়ানরা ভারতকে তাদের শীর্ষ পাঁচটি "বন্ধু" হিসাবে চিহ্নিত করেছে, অন্যরা হল বেলারুশ, চীন, কাজাখস্তান এবং সিরিয়া।
# ভারতের অখণ্ড হিন্দুত্যবাদ কায়েমের প্রেক্ষিতে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যকার সুসম্পর্কঃ
রাশিয়া কাশ্মীর নিয়ে ভারতের পদক্ষেপকে (অনুচ্ছেদ 370 বাতিল এবং রাজ্যের বিভাজন) সম্পূর্ণরূপে একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে বর্ণনা করে এবং 1972 সালের সিমলা চুক্তি এবং 1999 সালের লাহোর ঘোষণার অধীনে সমাধানের আহ্বান জানায়। ভারতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলে কুদাশেভ দিল্লিতে কাশ্মীর সংক্রান্ত বিষয়ে বলেছিলেন, "কাশ্মীরে আমার ভ্রমণের কোনও কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। এটি ভারতের সংবিধানের অন্তর্গত একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়,এটি রাশিয়ার জন্য কোনো সমস্যা নয়। যারা বিশ্বাস করেন যে এটি একটি ইস্যু, যারা কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা কাশ্মীরে ভারতীয় নীতি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন তারা ভ্রমণ করে নিজেরাই দেখতে পারেন।অর্থাৎ কাশ্মীর ইস্যুতে রাশিয়া ভারতকে পরোক্ষ ভাবে সমর্থন দিচ্ছে।তাই ভবিষ্যতে কাশ্মীরের মতো বাংলাদেশেও ভারতের আগ্রাসনে, ভারত রাশিয়াকে পাশে চাইবে।
#ভারত ও ইউক্রেনের মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্কঃ
ভারত সরকার 1991 সালের ডিসেম্বরে ইউক্রেন প্রজাতন্ত্রকে একটি সার্বভৌম দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং 1992 সালের জানুয়ারিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে রাশিয়ার পর ইউক্রেন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ভারত ও ইউক্রেনের মধ্যে 17টিরও বেশি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সহযোগিতা, পররাষ্ট্র দফতরের পরামর্শ, মহাকাশ গবেষণায় সহযোগিতা, দ্বৈত ট্যাক্সেশন পরিহার এবং বিনিয়োগের প্রচার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। মার্চ, 1992 সালে ভারত ও ইউক্রেনের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা ভারত-ইউক্রেন বাণিজ্য সম্পর্কের একটি বড় উৎসাহ প্রদান করে। ভারতে ইউক্রেনের প্রধান রপ্তানি ছিল উদ্ভিজ্জ চর্বি এবং তেল (73.3%), সার (10.6%), পারমাণবিক চুল্লি, বয়লার এবং যন্ত্রপাতি (5.2%)। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য (32.7%), বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি (7.8%) এবং অন্যান্য আইটেমগুলি ইউক্রেন দ্বারা সর্বাধিক সাধারণ ভারতীয় আমদানি ছিল। 2020 সালে ইউক্রেনে ভারতের রপ্তানি ছিল us$438.25 মিলিয়ন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত জাতিসংঘের কমট্রেড ডেটাবেস অনুসারে।
# ভারতের অখণ্ড হিন্দুত্যবাদ কায়েমের প্রেক্ষিতে ভারত ও ইউক্রেনের মধ্যকার সম্পর্কঃ
ইউক্রেনের সাথে ভারতের পূর্ব থেকেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ইউক্রেন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ভারতের সাথে ইতিবাচক সহযোগিতা করছে।তবে ইউক্রেন সিমলা চুক্তির ভিত্তিতে জম্মু ও কাশ্মীর সমস্যার সমাধানকে সমর্থন করে। ইউক্রেন 370 অনুচ্ছেদ বাতিলের পরে জম্মু ও কাশ্মীরে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের চাওয়া সহ ধারাবাহিকভাবে ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়েছিল।তাই এখন মনে হতে পারে ভারত রাশিয়ার পক্ষে এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে,কিন্তু এটি ভারত নাও করতে পারে,হতে পারে সেটা অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক কারনে,তবে আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারন রয়েছে সেটি হলো মুসলিম বিদ্বেষী আরেক দেশ ইজরায়েল,যা এখন আলোচনা করা দরকার,
ইহুদি পরিবারে জন্ম বর্তমান ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির, জেলেনস্কি মধ্য ইউক্রেনের প্রধানত ইউক্রেনীয়-ভাষী অঞ্চলের একটি প্রধান শহর ক্রিভি রিহ-তে বেড়ে ওঠেন। তার অভিনয় জীবনের আগে, তিনি কিয়েভ ন্যাশনাল ইকোনমিক ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন,অভিনয় জীবনে জেলেনস্কি ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির ভূমিকায় একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।তারপর সেটিই বাস্তবে রুপ নেয়,এবং অবাক করা বিষয় শুরু থেকেই তিনি মস্কোর বিরুদ্ধচারন করে আসছিলেন,এবং রাশিয়ার মতের বিরুদ্ধে আমেরিকার মদদে নেটোর অন্তরভূক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন,এ যেনো রাশিয়ার পায়ে পারা দিয়ে যুদ্ধ লাগানোর চেষ্টা,হয়েছে ও তাই এবং এই যুদ্ধ যে ইহুদিদের পূর্ব পরিকল্পনার ফসল নয় তাও বলা যাচ্ছে না।এই যুদ্ধের প্রভাবে পৃথিবীর সুপারপাওয়ার দেশ গুলো দুটি দলে ভাগ হয়ে যেতে পারে এবং একটি নতুন দেশ মাথাচারা দিয়ে উঠতে পারে সে দেশটি ইজরায়েল ও হতে পারে।
#ভারত, ইউক্রেন,ইজরায়েল সম্পর্কঃ-
উপরের আলোচনা থেকে বর্তমান ইউক্রেন ও ইজরায়েলের মধ্যকার সম্পর্ক অনুমান করা যায়,ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে ইউক্রেন ইজরায়েল কে সমর্থন দেয়,পাশাপাশি ভারত ও তখন ইজরায়েল কে সমর্থন দেয়, আবার কাশ্মীর ইস্যূতে ইজরায়েল পাকিস্তান কে সমর্থন না দিয়ে ভারতকে সমর্থন করে,এবং ভারতকে সব রকম সহায়তা দিতে রাজি হয় সেটা হতে পারে সামরিক ভাবে বা টেকনিক্যাল ভাবে।তাই কাশ্মীর,বাংলাদেশ বা অন্নান্য অঞ্চলে ভারতের হিন্দুত্যবাদী আগ্রাসনের চালানোর জন্য ভারত ইজরায়েল কেও তার পাশে চাইবে,আর তাই বর্তমান রাশিয়া- ইউক্রেন সংঘর্ষে ইজরায়েল সমর্থনপুষ্ট ইউক্রেন এর পক্ষে ভারতের সমর্থন না থাকাটাই অসামঞ্জস্যপূর্ন।
আমাদের করণীয়ঃ
১- উপরের আলোচনা থেকে এটা ক্লিয়ার যে রাশিয়া ধীরে ধীরে "রাশিয়ান জগত" প্রতিষ্ঠার দিকে এগুবে, অতএব রাশিয়ার পাশ্ববর্তী মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আগ থেকেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে।
২- ভারত "অখন্ড ভারত" প্রতিষ্ঠায় আগ্রাসন চালাতে আন্তর্জাতিক সকল আয়োজন সম্পন্ন করতেছে, অতএব বাংলার মুসলিম সাবধান। সময় থাকতে ইদাদের কাজ শেষ করা আবস্যক।
৩- রাশিয়া কিংবা ভারত, ইউক্রেন কিংবা পশ্চিমা কেউ আমাদের বন্ধু নয়। তাই আগপিছ না দেখে অতিউৎসাহী হওয়া উচিত নয়।
৪- গ্রেটার ইসরাইল, গ্রেটার ইন্ডিয়া, গ্রেটার রাশিয়া এই তিনটি মুসলিম বিশ্বের জন্য চলমান হুকমি। এদের প্রতিটি প্রদক্ষেপ সতর্ক দৃষ্টিতে দেখা জরুরি।
///
রাজনৈতিক বিশ্লেষক, হাসান আল-হিন্দ।
Comment