চলমান বৈশ্বিক অস্থিরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে যুদ্ধের দামামা বাজছে। অনেকদিন পর হঠাৎ করেই বিশ্ব আজ ভারী সব রণসাজে সজ্জিত। চারিদিকে আজ কেবল শোনা যায় বিশ্বসন্ত্রাসী ও দাম্ভিকদের রণহুংকার। এগুলো নিছক খেলা বা উপহাস নয়। সত্যিসত্যিই আজ পৃথিবী বিপর্যয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। পারমাণবিক বোমাগুলো সব প্রস্তুত করা হচ্ছে। সাবমেরিনগুলো গোপন অভিযানে সাগরে ডুব দিচ্ছে। রণতরীগুলো সব নোঙর খুলে মহাসাগরগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ যেন এক প্রলয়ংকর বিপর্যয়ের পূর্বাভাস। পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা একসময় অনেক দূরবর্তী মনে করা হতো। কিন্তু অল্পকিছু সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের তাবৎ বিশ্লেষকদের মতামত আমূল পাল্টে গেছে। বেশিরভাগ গবেষকরাই এখন পারমাণবিক যুদ্ধের বাস্তবতা স্বীকার করছে। চরম উদ্বেগের বিষয় হলো, ক্রমশ এ আশঙ্কা বৃদ্ধিই পাচ্ছে। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ সিআইএ বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে এবং মার্কিন প্রশাসন অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় রেড আ্যলার্টও জারি করেছে। মোটকথা, এটা এখন কেবল হুমকি-ধমকিতেই সীমাবদ্ধ নেই। এটার জন্য বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো এখন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
যাই হোক, পারমাণবিক যুদ্ধ আদৌ হবে কি-না এবং হলে কবে হবে, কীভাবে হবে, এ নিয়ে আমাদের বিশেষ কোনো মাথাব্যথা নেই। কেননা, আমাদের চিন্তাভাবনার কারণে এতে কোনোই প্রভাব পড়বে না। আমাদের মূল চিন্তা হলো, নিজেদের অস্তিত্ব ও ইমান রক্ষা নিয়ে। অনেকেই হয়তো লক্ষ করেছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্বের অনেক দেশের প্রেসিডেন্ট ও রাষ্ট্রপ্রধানরা আশু দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে পরিষ্কার ভাষায় কথা বলছে। খাদ্যসংকটের বিষয়টি তো বর্তমানে সবার চোখের সামনেই। সামনে বৃহতাকারের যুদ্ধ শুরু হলে এ সংকট কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, তা কি কেউ কখনো কল্পনা করে দেখেছে? আর পারমাণবিক যুদ্ধ হলে যত মানুষ বোমার আঘাতে মারা যাবে, তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যাবে কেবল খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের কারণে। জানি না, এগুলো সব দাজ্জাল আসার পূর্বলক্ষণ কি-না। কিছু হাদিসে পাওয়া যায়, দাজ্জাল আসার আগে মানুষ মহা দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করবে। আর অভাব-অনটনের সময় ত্রাণ ও সাহায্যের নামেই সে অসংখ্য মানুষের ইমান হরণ করে ফেলবে। খুব কম মানুষই তার ধোঁকা ও প্রতারণার জাল ভেদ করে নিজের ইমান রক্ষা করতে সক্ষম হবে। আল্লাহ আমাদের দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করুন।
অনেকেই জানতে চান, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমাদের করণীয় কী এবং আশু সংকট মোকাবেলায় আমরা কী করতে পারি। এ ব্যাপারে আমাদের পরামর্শ হলো :
প্রথমত, আশু বিপর্যয়ের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। যেমন, শহরকেন্দ্রিক জীবনব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। যথাসম্ভব গ্রামকে মূল আবাসস্থল বানাতে হবে। কেননা, যুদ্ধের প্রভাব সবচে বেশি পড়বে শহরে। চাকরি বা ব্যবসার প্রয়োজনে বর্তমানে শহরে থাকলেও গ্রামের বাড়িকে ফেলে রাখা যাবে না। খুব দ্রুত সেখানে বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেন প্রয়োজন হলে দ্রুতই সেখানে গিয়ে সেটেল হওয়া যায়।
দ্বিতীয়ত, বিপর্যয় আসলে সবচে বেশি সংকট তৈরি হবে খাদ্য নিয়ে। তাই নিজের কৃষি জমি থাকলে সেখানে ফসল ফলানোর জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। কৃষকদের থেকে এসংক্রান্ত নানা তথ্য ও অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করতে হবে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ফসলের বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বাড়ির আঙিনায় বিভিন্ন ফল-ফসলের গাছ লাগাতে হবে। আর্থিক সামর্থ্য থাকলে ঘরে অপচনশীল বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাবার মজুত রাখার ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।
তৃতীয়ত, ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎনির্ভর জীবনব্যবস্থাকে অস্থায়ী ধরে আগের যুগের মতো ন্যাচারাল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কেননা, বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে পুরো দুনিয়াজুড়ে ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎব্যবস্থা ধ্বংস বা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হবে। আর এ দুটি জিনিস না থাকলে মানুষের জীবনযাত্রা কেমন হবে, সেটা হয়তো বর্তমান প্রজন্ম কল্পনাও করতে পারবে না। তাই এ বিষয়টি মাথায় রেখে এখন থেকেই মানসিক ও সার্বিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থত, জাগতিক প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি দ্বীনিভাবেও প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। ইসলামের মৌলিক আকিদার জ্ঞান, দ্বীনের বেসিক নলেজ ও শেষ জমানার ইমানবিধ্বংসী ফিতনাগুলো সঠিকভাবে জানতে হবে। সামনে হয়তো এ সুযোগ আর নাও পাওয়া যেতে পারে। সুরা কাহফ পুরোটা বা কমপক্ষে প্রথম ও শেষ দশ আয়াত মুখস্ত এবং বিপর্যয়কালের বিভিন্ন দুআ-আমল ও এসংক্রান্ত যাবতীয় করণীয় বিজ্ঞ আলিমদের থেকে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
পঞ্চমত, এগুলো বলার উদ্দেশ্য হলো, যেকোনো বিপর্যয়ের জন্য আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা। তাই এগুলো নিয়ে কিছুতেই প্যানিকড হওয়া যাবে না। সারাদিন এ চিন্তা করে সব কাজকাম ফেলে ঘরে বসে থাকা যাবে না। স্বাভাবিকভাবেই জীবনকে তার পথে চলতে দিতে হবে। পাশাপাশি নিজের করণীয় কাজগুলোও যথাসময়ে করে রাখলে পরে হয়তো আর আফসোস করতে হবে না, যখন অনেকেই নিজের মাথা চাপড়াবে আর হা-হুতাশ করে বেড়াবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন এবং সব ধরনের প্রান্তিকতা পরিহার করে অবশ্যপালনীয় করণীয় ও কর্তব্যগুলো যথাযথ সময়ে সম্পাদন করার তাওফিক দান করুন।
—সংগৃহীত
Comment