Announcement

Collapse
No announcement yet.

নব্য ফিতনা ইমাম মাহমুদ। ইমামতের অন্তরালে নবুওয়াতের দাবী

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • নব্য ফিতনা ইমাম মাহমুদ। ইমামতের অন্তরালে নবুওয়াতের দাবী

    বর্তমানে আখিরুজ্জামান নিয়ে গবেষণা করা এমন কিছু ভাইদের মাঝে ইমাম মাহমুদ সম্পর্কে সীমাহীন কৌতুহল দেখা যায়। অনেকে তো আবার তাদের প্রচার করা কিছু ভবিষ্যদ্বানী কোনো প্রকার তাহকীক ছাড়াই ওহীর মত সেগুলো বিশ্বাস করছে। আবার কেউ কেউ ধোয়াশার বেড়াজালে আটকে আছে। এসকল বিষয় মাথায় রেখে সংকল্প করি তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ইমাম মাহমুদ দাবীর সত্যতা নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখবো৷ যাতে করে ভাইদের সকল প্রকার ধোয়াশার কালো গিট খুলে যায়। চলুন যানার চেষ্টা করি কে এই ইমাম মাহমুদ।

    ২০১৮ সালের শেষের দিকে অনলাইন বিভিন্ন প্লাটফর্ম ফেইসবুক, ইউটিউব, গুগল ওয়েবসাইটে ইমাম মাহমুদ সম্পর্কিত ভিডিও, আর্টিকে, পিডিএফ প্রকাশিত হয়। সবকিছু বিচার বিশ্লেষণের পরে যেটা বেড়িয়ে আসে তাদের মূল বার্তা হলো, শেষ জামানার প্রতিশ্রুত গাজও|য়াতুল হিন্দের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আল্লাহ তা'য়ালা তাকে মনোনীত করেছেন এবং তিনিই হলেন হাদিসে বর্ণিত ১২ ইমামদের ১১তম ইমাম। আর তার সহচর বন্ধু 'সাহেবে কিরান' কে এই যুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। এছাড়াও আরো যানা যায় যেমন, (ক) তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম প্রাপ্ত, (খ) খোরাসানের কালো পতাকাবাহীর নেতৃত্ব দানকারী, (গ) তিনি পিতার দিক থেকে কুরাইশি এবং মাতার দিক থেকে কাহতানি, (ঘ) গাজওয়াতুল হিন্দ ২০২৪ সালে সংঘটিত হবে, আর ইমাম মাহদি ২০২৮ সালে আবির্ভূত হবেন, (ঙ) বাংলাদেশে ২য় কারবালা সংগঠিত হবে ইত্যাদি। তাদের এই সমস্ত দাবীর স্বপক্ষে কিছু হাদিস এবং ভবিষ্যদ্বাণীর কবিতা উপস্থাপন করা হয়। এগুলো নিয়ে আমরা সামনে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।

    আশ্চর্যের বিষয় হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'য়ার ইমামগণ এবং আসলাফদের কোনো কিতাবাদী তে 'ইমাম মাহমুদ' সংক্রান্ত কোনো হাদিসের সন্ধান পাওয়া যায় না। এমনকি বাংলাদেশে ২০১৮ এর আগে ইমাম মাহমুদ প্রসঙ্গে কেউ কিছুই যানতো না। চলমান ফিতনার জামানায় নিত্যদিনই বিভিন্নধরনের ফিতনা প্রকাশিত হচ্ছে কেউ নিজেকে নবী দাবী করছে, কেউ ইমাম মাহদি, কেউ তো আবার ঈসা ইবনে মারয়াম। যেহেতু পূর্বে কেউ নবী, মাহদি ইত্যাদি দাবী করে বেশি একটা সুবিধা করতে পারেনি সচেতন মুসলিম সমাজ খুব সহজেই তাদের ষড়যন্ত্র ধরে ফেলেছে। তাই নতুন করে ভিন্নরূপে অভিন্ন ষড়যন্ত্রের সূচনা করে এই কথিত মাহমুদ এবং তার বাহিনী। তাদের এই ষড়যন্ত্রের স্বরূপ সন্ধানে বেড়িয়ে আসে তাদের আসল পরিচয় এবং লক্ষ্য উদ্যেশ্য।

    ইমাম মাহমুদের পরিচয়

    নাটোর জেলার মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে "জুয়েল" ওরফে হাবিবুল্লাহ ওরফে মাহমুদ ওরফে ইমাম মাহমুদ।

    সাহেবে কিরানের পরিচয়

    পাবনা জেলার সাথীয়া থানার দারামুধা গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে "শামিম" ওরফে সাহেবে কিরান, ওরফে আস-শাহরান, ওরফে নাবহান হামীম, ওরফে শামীম হামীম কিরন।

    ২০১৭ সালে তারা অফলাইনে সক্রিয়ভাবে তাদের দাওয়াতি কাজ পরিচালনা করে এবং সংগঠিত হয়। অনলাইনে তারাই সর্বপ্রথম এই বিষয়ের প্রচার প্রচারণা আরম্ভ করে। দাওয়াতের কাজে মূল ভূমিকায় থাকে শামিম ওরফে সাহেবে কিরান 'সত্যের সৈনিক' ফেইসবুক আইডির মাধ্যমে লেখালেখির কাজ অব্যাহত রাখে। এর পরে তারা রাজশাহীতে তাদের ঘাটি গেড়ে দূরদূরান্ত থেকে আসা সদস্যদের থেকে বাইয়াত নিয়ে তাদের বিভিন্ন কর্মসুচিতে বহাল রাখে। এভাবে চলতে থাকে তাদের যাত্রা। এরপর শামিম ওরফে সাহেবে কিরান ওরফে আস-শাহরান নিজেদের দাবীকে মজবুত ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে "আগামী কথন" শিরোনামে একটি ভবিষ্যদ্বাণীর কবিতা লিখে পিডিএফ প্রকাশ করে। কবিতাটি একশত প্যারা বিশিষ্ট, ২০২০ সাল থেকে কিয়ামত পর্যন্ত কি কি ঘটবে তা সাল ধরে ধরে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। পাশাপাশি শাহ নেয়ামতুল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণীর কবিতা 'কাসীদায়ে সাওগাত' এবং তাদের স্বপক্ষে কিছু হাদিস প্রচারের মাধ্যমে লোকজন কে তার নিকট বাইয়াত হওয়ার আহবান করে। ২০১৯ সালে জুয়েল ওরফে ইমাম মাহমুদ কে গ্রেপ্তার করে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর জামিনে মুক্তি পেয়ে পূনরায় ২০২০ সালে র‍্যাবের হাতে মাহমুদ সহ তার কতিপয় সাথি গ্রেপ্তার হয়।

    কাসিদায়ে শাহ নেয়ামতুল্লাহ বা কাসিদায়ে সওগাত

    মাহমুদ এবং তার সাথীরা দাওয়াতের ক্ষেত্রে সহসাই বলে থাকে, কাসিদায়ে সওগাত ভারত উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত বুজর্গ নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওয়ালী কাশ্মীরি আজ থেকে প্রায় ৯৫০ বছর আগে লিখে গেছেন। যা যুগে যুগে বাস্তবায়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস খুজলে এই নামে কেবল একজন কেই পাওয়া যায় যিনি এই ভবিষ্যদ্বাণীর কবিতা লিখেছিলেন তিনি হলেন ইরানের নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওয়ালী। যিনি সিরিয়ান জাতিভুক্ত, সিরিয়ার আলেপ্পোতে ১৩৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ইরানের কিরমান নামক শহরে তিনি ১৪৩১ সালে ইন্তেকাল করেন। তার জীবনীকার আব্দ আল-রাজ্জাক কিরমানি এবং আব্দ আল আযিয ওয়াইজের গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায় যে, নিমাতুল্লাহর বংশ পরম্পরা শি'য়াদের সপ্তম ইমাম ইমাম মুসা কাজিম এর থেকে শুরু হয়েছে। [উইকিপিডিয়া]

    প্রাচ্যবীদ এডওয়ার্ড ব্রাউন ১৮৩৩ সালে তার মাজার ভ্রমনে যান, সেখানের মুতাওয়াল্লীর কাছ থেকে তিনি এই সূফী সাধকের কাব্য গ্রন্থ উদ্ধার করেন। তার 'A literary History of Persia' গ্রন্থে এই কাব্যের উল্লেখ করেন এবং তার কিছু কবিতার অনুবাদ প্রকাশ করেন। তার কাব্যগ্রন্থে একটা ক্বাসীদা বা কবিতার সন্ধান পাওয়া যায় যেটাতে তিনি তার জন্মের পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত ঘটতে পারে এমন কিছু বিষয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন।[ সূত্রঃ শায়েখ ডক্টর আব্দুস সালাম আজাদী, নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওয়ালীর ভবিষ্যদ্বাণী ও গা*জওয়া-ই হিন্দ শির্ষক আর্টিকেল থেকে সংগৃহীত।]

    ইরান থেকে নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওয়ালীর নামে মোট তিনটি ভবিষ্যদ্বানীর কবিতা প্রকাশিত হয়। তন্মধ্যে প্রথম কবিতাটির ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়, যা উনার মাজার থেকে উদ্ধার করা হয়েছিলো। বাকি দুইটা কবিতা ভারতবর্ষে প্রসিদ্ধ (যা বর বাংলাদেশে কাসিদায়ে সওগাত ইত্যাদি নামে পরিচিত) হলেও এর কোনো ঐতিহাসিক সনদ নেই। এগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে প্রকাশ পেয়েছে। [লেখক]

    প্রথম কবিতা শুরু হয়েছে

    "কুদরাতে কিরদিগার মিবিনাম
    হালাতে রোযগার মিবিনাম"

    অর্থাৎ আমি স্রষ্টার শক্তি দেখি, আমি দেখি সময় কিভাবে চলে যায়। এই কবিতাটি তার লেখা এই ব্যপারে তেমন কোন সন্দেহ নেই। এটা তার পাণ্ডুলিপিতে আছে। এখানে আছে ৫০টা লাইন। এর পরে ইন্ডিয়ার শাবিস্তান নামক পত্রিকায় এটা ছাপানো হয় ১৯৭২ সালে, ৫৭ লাইনে। পরে পাকিস্তান থেকে কামার ইসলামপূরী ৫৫ লাইন সম্বলিত করে প্রকাশ করেন। পরে প্রকাশিত হয় ইরান থেকে ৫৭ লাইনে। এই কবিতায় ভারত নিয়ে মাত্র এক লাইন কবিতা আছে। যেখানে বলা হয়েছে,

    "হাল-ই-হিন্দু খারাব মিয়াবাম
    জাওরে তুরক ও তাতার মিবানাম"

    অর্থাৎ "আমি দেখি ভারতের ধ্বংস, দেখি তুরকি ও তাতারদের জুলুম ও অত্যাচার।" যেহেতু এতে ভারতবর্ষ নিয়ে আর কোন কথা নেই, কাজেই এর মূল্য ভারতে ঐ রকম নেই, যে রকম আর দুটি কবিতার আছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় কবিতা দুটি শাহ নি’মাতুল্লাহর না হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ঠ কারণ আছে। এর প্রমান আমরা দেখতে পাই ভারতীয় মুসলমানদের একেক সমস্যার সময় কবিতায় চরণ সংখ্যা বেড়েছে। তুর্কি খেলাফাত ভেঙে যায় ১৯২৩ সালে। সে সময় খেলাফত আন্দোলন দানা বাঁধে ভারতে। এই সময়ে নি’মতুল্লাহর কবিতায় আসে প্রায় ১১টা অতিরিক্ত চরণ। ১৯৪৭-৪৮ এ ভারত স্বাধীন হয়, দুইভাগ হয়, মুসলমানদের রক্তে ভারতের মাটি লাল হয়। সে সময়ের কবিতায় ও নি’মাতুল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণীর লাইন ও বেড়ে যায়। এই সময়েই প্রাকশিত কবিতা “জং” এ, “মাআরিফ” এ, “ইমরোজে” দেখা যায়।

    যেহেতু আযমগড়ের “মাআরিফ” হলো গবেষণা জার্ণাল, ফলে এই কবিতা গুলো অথেন্টিসিটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তারা প্রথম কবিতাটার বিশ্বস্ততা খুঁজে পায়, কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় কবিতা দুটো জাল, ও অন্যের কবিতা নি’মাতুল্লাহর নামে চালিয়ে দেয়া বলে প্রমান পায়। তারা একে বানানো ও রাজনৈতিক প্রচারণার হাতিয়ার বলে গণ্য করে। (মাআরিরফ, ভলিউম ৬১, নং২, ফেব্রু ১৯৪৮)।

    ক্বামার ইসলামপুরীর ভাষায়ঃ ভারত বর্ষে গত ১০০ বছরে শায়খ নি’মাতুল্লাহের নামের কবিতা দুটিতে ৮০টা লাইন বানিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানে ২৫ বছরে বানানো হয়েছে ৫৮টি লাইন। (ইসলামপুরী, হাযরাত মাহদী, ৫৭)।

    এই সব গুলো বিস্তারিত আলোচনার পর ডঃ চৌধুরি মুহাম্মাদ নাইম বলেনঃ আমি ১৯৭১ সালে মাশরিক (লাহোর), চাটান (লাহোর) এ ১৯৭২ সালে এই কবিতা প্রকাশ হতে দেখেছি। এব্যাপারে ইহসান কুরাইশি সাবিরি একটা আর্টকেল লেখেন, তিনি বলেনঃ নি’মাতুল্লাহর প্রথম কবিতা ছাড়া আর দুইটি কবিতা ছিলো বানানো, জালিয়াত। (চাটান, ১০ জানুয়ারী ১৯৭২, পৃ ১৩)।

    [শায়েখ ডক্টর আব্দুস সালাম আজাদী]

    উপরিউক্ত আলোচনা এবং দলিল প্রমাণের ভিত্তিতে যানা গেলো ইরানের শাহ নেয়ামতুল্লাহর লেখা একটি কাব্য গ্রন্থ তার মৃত্যুর প্রায় পাচশত বছর পর, এডওয়ার্ড ব্রাউন তার মাজার থেকে উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত কাব্যগ্রন্থ থেকে মাত্র একটি ভবিষ্যদ্বাণীর কবিতা পাওয়া যায়। যেটাতে তার জন্মের পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তাই বলা যায় এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। কিন্তু এই কবিতাটিতে ভারত নিয়ে এক লাইনের বেশি কিছু বলা হয়নি। আর বাকি দুইটা ভারত নিয়ে লেখা হলেও এগুলোর কোন নুসখা বা মূল পান্ডুলিপির হদিস পাওয়া যায় না, ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত নয়। অথচ বাংলাদেশের প্রচলিত কাসিদার প্যারাগুলো অধিকাংশই ভারত নিয়ে। এগুলো বিভিন্ন পরিকল্পনাকারীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতার একটি রূপ 'কাসিদায়ে সওগাত'। প্রশ্ন জাগতে পারে ভবিষ্যত বাণীগুলো তো বাস্তবতার সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে সুতরাং তা থেকে সতর্কবানী নিতে সমস্যা কোথায়? উত্তরে তাদের কে বলবো, দেখুন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তার বান্দাদের জন্য যতটুকু যানা প্রয়োজন তা কুরআন এবং রাসুল সা. এর মাধ্যমে যানিয়ে দিয়েছেন। এর বেশি কিছু আমাদের যানার প্রয়োজন নেই। কবিতার এতো বিস্তারিত এবং সূক্ষ্ম ভবিষ্যতের বর্ণনা গায়েব যানা আর না যানার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকেনা। ইলহাম হতে পারে সেটা অস্বীকার করছিনা কিন্তু তা খুব সীমিত। যা ওমর রা. এর ঘটনা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। সারকথা আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের জন্য আমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন সুতরাং আমাদের কোনো কবিতার প্রয়োজন নেই শরীয়তের দলিল হিসেবে কুরআন সুন্নাহই যথেষ্ট এবং চূড়ান্ত।

    আগামী কথন

    শামীম ওরফে সাহেবে কিরন ওরফে আশ-সাহরানের লেখা 'আগামী কথন' বর্তমানে আখিরুজ্জামান গবেষণা প্রিয় ভাইদের মাঝে ব্যাপকভাবে সারা ফেলেছে। সাল ধরে ধরে ভবিষ্যতে কি কি সংঘটিত হবে তা বর্ণনা করেছেন। তবে অনেকেই আবেগের বশবতী হয়ে বইটির জালিয়াতিগুলো ধরতে ব্যার্থ হয়েছে। অপরিনত বয়সে মেধার অপব্যবহার করতে গিয়ে শামীম নামের এই যুবক পদে পদে অজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে গেছে। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাদের অজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে তাদের করা ষড়যন্ত্রের ঢাকনা উন্মোচন করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,

    وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ ۚ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا

    বলুন, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ৮১)

    এবার বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।

    আগামী কথনের শুরুতেই রয়েছে চোখে পড়ার মত সব ভূল, একটু মনোযোগ সহকারে বিশ্লেষণ করলেই খুব সহজে ভুলগুলো চোখে পরবে।

    (১) আগামী কথনের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্যারায় আশ-সাহরান লিখেছে,

    বিংশ শতাব্দীর বিংশ সনে,
    কিছু করে হের ফের।
    প্রকাশ ঘটিবে ভ*ন্ড মাহাদী
    ভুখন্ড তুরষ্কের।

    স্বপ্ত বর্ণে নামের মালা
    'হা'দিয়ে শুরু তার,
    খতমে থাকিবে 'ইয়া'সে
    মাহাদী'র মি*থ্যা দাবিদার।

    • লেখক তার ভবিৎষত বাণিতে বর্ণনা করেছেন, ২০২০ সালের কিছু সময় হের ফের করে- (হতে পারে তা ২০১৯ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে ২০২১ সালের শেষ সময় পর্যন্ত। আল্লাহ আলিম এ সময়ের মধ্যেই একজন ভন্ড নিজেকে ইমাম মাহদী বলে দাবি করবে। সেই ভন্ড তুরষ্ক ভুখন্ডের অধিবাসি হবে।
    • তার নাম আরবিতে ৭ টি হরফতে হবে। যার প্রথম হরফ টি হবে "হা" এবং শেষের হরফ টি হবে "ইয়া"। আর সেই ব্যাক্তিটি যদিও নিজেকে "ইমাম মাহদী" বলে দাবী করবে, প্রকৃত পক্ষে সে হলো একজন, মিথ্যুক, জালিয়াত, প্রতারক, শয়তান। সে প্রকৃত ইমাম মাহদী নয়। [আগামী কথন]


    দেখুন কথিত আশ-সাহরান দ্বিতীয় প্যারায় বলেছে, বিংশ শতাব্দির বিংশ সনে অর্থাৎ ২০২০ সাল। কিছু করে হের ফের মানে কিছু কম বেশ করে তুরস্ক থেকে এক ভন্ড ইমাম মাহদি দাবীদারের আবির্ভাব ঘটবে। তাদের অন্যান্য আর্টিকেল এবং মৌখিক বর্ণনা মতে এই ভন্ড মাহদি দাবীদার মূলত তুরস্কের 'হারুন ইয়াহ ইয়া'।
    বড়ই আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আশ-সাহরান আগামীর কথা বলতে গিয়ে অতীতের ভবিষ্যদ্বাণী করে বসে আছেন। কেননা আমরা এখন একবিংশ শতাব্দীতে অবস্থান করছি, বিংশ শতাব্দির গণনা ধরা হয় ১৯০১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত। আর ২০০১ সাল থেকে ২১০০ সাল কে একবিংশ শতাব্দী বলা হয়। বিংশ শতাব্দির বিংশ সন হিসেব করলে ১৯২০ সাল হয়। এখন কি আশ-সাহরানের থেকে নতুন করে শতাব্দীর ব্যখ্যা শিখতে হবে? যদি আমরা এক মুহুর্তের জন্য ধরেও নেই যে বিংশ শতাব্দির বিংশ সন মানে ২০২০ সাল তবুও তার করা ভবিষ্যদ্বাণীর সময় অতিক্রম হয়ে গিয়েছে কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। সে ব্যাখ্যায় বলেছে ২০১৯ এর শেষের দিক থেকে শুরু করে ২০২১ এর শেষ এর মধ্যেই তুরস্ক থেকে কেউ নিজেকে মাহদি দাবী করবে। কিন্তু ২০২১ শেষ হয়ে ২০২২ এখন প্রায় শেষের দিকে। [এখন ২০২৩ সাল এর অর্ধেক অতিক্রান্ত হয়ে গেছে]

    (২) আশ-সাহরান আগামী কথনের ৮ম প্যারায় লিখেছে,

    একটি 'শীন' দুইটি 'আলিফ'
    তিন ভুখন্ডেই হবে ঝড়।
    বিদায় জানালো মহাদূত
    তার তের-নব্বই- এক পর।

    এই পর্বে লেখক আস- শাহরান,, একটু অস্পস্ট ভাবে বাক্য উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন যে, সেই ফুরাত নদীর স্বর্নের পাহাড় দখলে আনার জন্য তিনটি রাষ্ট্র যুদ্ধে জরিয়ে পরবে। সেই ৩ টি দেশের নামের প্রথম হরফ এখানে লেখক উল্লেখ করছেন।
    (১) শীন। (২) আলিফ এবং (৩) আলিফ।
    যেহেতু ফুরাত নদি তুরষ্ক থেকে উৎপন্ন হয়ে আরবের পাশ দিয়ে শিরিয়া দিয়ে ইরাক পর্যন্ত বৃস্তিত। তাই সহযেই অনুধাবন করা যায় যে, (১) 'শীন' হলো শিরিয়া। এবং (২) আলিফ হলো ইরাক। (৩) নং আলিফ কোন দেশ?{ পরবর্তি প্যারায় প্রকাশিত}
    [ আগামী কথন ]

    এখানে আশ-সাহরান ফুরাত নদীর স্বর্নের পাহাড়কে কেন্দ্র করে যুদ্ধে জরানো তিনটি রাষ্ট্রের উল্লেখ করেছে এবং সেই রাষ্ট্রের প্রথম হরফগুলো প্রকাশ করেছে। তিনি 'শীন' দ্বারা সিরিয়া কে বুঝিয়েছেন অথচ সিরিয়ার প্রথম হরফ 'ছীন' যেমন (سوريا)।
    অতঃপর 'আলিফ' দ্বারা ইরাক কে বুঝিয়েছেন অথচ ইরাকের প্রথম হরফ হবে 'আইন' যেমন (عراق)। এরপর ২য় 'আলিফ' দ্বারা ৯ম প্যারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে 'আরব' অথচ আরবের প্রথম হরফ হলো 'আইন' যেনন (عرب)। এভাবে আশ-সাহরান পদে পদে তার অজ্ঞতার নিশান ছেড়ে গিয়েছে যা খুবই হাস্যকর।

    ইমাম মাহমুদ সম্পর্কিত হাদিস

    এখন আমরা পর্যায়ক্রমে ইমাম মাহমুদের প্রচারিত হাদিসগুলোর বিশ্লেষণ করবো ইনশাআল্লাহ।

    (১) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)বলেন, রছুল (ছ).বলেছেনঃ
    ইমাম মাহদীর পূর্বে এক জন ইমামের আর্বিভাব হবে আর তার নাম হবে "মাহমুদ। তার পিতার নাম হবে আব্দুল। সে দেখতে হবে খুবই দুর্বল। তার চেহারায় আল্লাহ মায়া দান করবেন। আর তাকে সে সময়ের খুব কম লোকই চিনবে। অবশ্যেই আল্লাহ সেই ইমাম ও তার বন্ধু যার উপাধি হবে "সাহেবে কিরাণ" তাদের মাধ্যমে মুমিনদের একটা বড় বিজয় আনবেন।(ইলমে রাজেন,৩৪৭.
    কিতাবুল ফিরদাউস,৭৫৪. ইলমে তাসাউফ,১২৫৩)

    (২) হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, অচিরেই হিন্দুস্তানের মুশরিকরা মুসলিমদের প্রতি নির্যাতন বৃদ্ধি করবে। সে সময়ে হিন্দুস্তানের পূর্বাঞ্চল থেকে একজন নেতার প্রকাশ ঘটবে। যার নাম হবে মাহমুদ। পিতার নাম ক্বাদির। সে দেখতে খুবই দূর্বল হবে। তার মাধ্যমে আল্লাহ হিন্দুস্তানের মুসলিমদের বি(জয়) দান করবেন। (আখিরুজ্জামানা আল মাহদি ফিল আলামাতিল কিয়ামা, ২৩০, কাশফুল কুফা, ২৬১)

    হাদিস দুটি খেয়াল করুন, প্রথমটিতে বলা হয়েছে মাহমুদের পিতার নাম 'আব্দুল' দ্বিতীয় হাদিসটিতে বলা হয়েছে 'ক্বাদীর'
    অর্থাৎ দুইটি সনদ মিলিয়ে পূর্ণাঙ্গ নাম এসেছে আব্দুল কাদ্বির। বিষয়টি অদ্ভুত।
    প্রথমত, আব্দুল কোনো নাম নয় আব্দুলের সাথে কোনো কিছু যুক্ত না করলে সেটি অসম্পূর্ণ নাম, শুধুমাত্র একটি শব্দ বলে বিবেচিত হবে।
    দ্বিতীয়ত, অজ্ঞতার কারণে ভারত উপমহাদেশে আব্দুর রহমান কিংবা আব্দুল্লাহ নামের ক্ষেত্রে শুধু আব্দুল ডাকার প্রথা প্রচলিত থাকলেও আরবে এগুলোর প্রচলন ছিলোনা এখনও নেই।
    তৃতীয়ত, রাসুল সা. আবু হুরায়রা রা. কে কখনো আবু, আবার কখনো হুরায়রা বলেছেন বলে সীরাত থেকে কিছু পাওয়া যায় না। আব্দুল্লাহ কে কখনো আব্দুল আবার কখনো আল্লাহ বলেছেন (নাউজুবিল্লাহ) বলে প্রমান পাওয়া যায় নায়া। সুতরাং আপনারাই বিচার করে দেখুন এগুলো কি রাসুল সা. এর হাদিসের ভাষাগত মানের দিক থেকে যায়?।

    (৩) আবু বকর সিদ্দিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রছুল ছঃ বলেছেন,শেষ জামানায় ইমাম মাহমুদ ও তার বন্ধু সাহেবে কিরান বারাহর প্রকাশ ঘটবে।আর তাদের মাধ্যমে মুসলমানদের বড় বি)জয় আসবে। আর তা যেন মাহদীর আগমনের সময়।
    (কিতাবুল ফিরদাউস,৮৭২)

    এই হাদিসে বলা হয়েছে শেষ জামানায় ইমাম মাহমুদ ও তার বন্ধু সাহেবে কিরান বারাহের প্রকাশ ঘটবে। এখানে সাহেবে কিরান তো বুঝলাম কিন্তু 'বারাহ' উপাধিটা কিসের? এই বারাহ দ্বারা মূলত তারা বিলাল রা. এর পিতা কে বুঝিয়েছে, সাহেবে কিরান বিলাল রা. এর বংশধর থেকে হবে তাই তার নামের শেষে বিলাল রা. এর পিতার নামে উপাধি দেওয়া হয়েছে তাদের অন্য একটি হাদিস থেকে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

    হযরত আনাস রাঃ বলেন, একদা রছুল ছঃ এর এক মজলিসে আমি আর বিলাল রাঃ বসা ছিলাম। সে সময়ে আল্লাহর রছুল ছঃ বিলাল রাঃ এর কাধে তার ডান হাত রেখে বললেন, হে বিলাল! তুমি কী জানো তোমার বংশে আল্লাহ এক উজ্জল তারকার জন্ম দিবেন? যে হবে সে সময়ের সবচেয়ে সভাগ্যবান ব্যাক্তি (সাহেবে কিরান, প্রজন্মের সৌভাগ্যবান)। অবশ্যেই সে একজন ইমামের সহচর হবে (ইমাম মাহমুদের)
    রাবি বলেন,রছুল ছঃ বলেছেন, সেই ইমামের আগমন, ইমাম মাহদীর পূর্বেই ঘটবে। (আসারুস সুনান, ৩২৪৮)

    এমন মুসলমান খুব কমই পাওয়া যাবে যিনি রাসুল সা. এর বিশিষ্ট সাহাবী বিলাল রা. এর পিতার নাম যানেন না। কথিত ইমাম মাহমুদ এবং তার মুফতিরা হয়তো সঠিকভাবে ইসলাম নিয়ে গবেষণা করার সময় টুকুও পায়নি যার ফলে বিলাল ইবনে রাবাহ কে বিলাল ইবনে বারাহ সাব্যস্ত করেছেন। প্রশ্ন আসতে পারে এটা হয়তো লেখার ক্ষেত্রে ভূল হয়ে গেছে। উত্তর হলো এটা তাদের লেখার কোনো মিস্টেক নয় তারা যতগুলো বই বা আর্টিকেল প্রকাশ করেছে প্রত্যেকটি স্থানে অনুরূপ ভুল নামটাই বসিয়েছে। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো তারা মুখেও এটাই বলে বেড়ায়। সীরাত থেকে বিলাল নামে এমন কোনো সাহাবীকে পাওয়া যায় না যার পিতার নাম'বারাহ'। এমন তথ্যগত এবং গুণগত ক্রুটি পাওয়ার পরে এগুলো যে বানোয়াট তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যদি তারা সত্যবাদী হয় তবে আরবী মূল গ্রন্থ থেকে হাদিসগুলো কে সঠিক প্রমানিত করুক।

    কথিত ইমাম মাহমুদ যে নিজেকে জামানার মুজাদ্দিদ এবং আল্লাহর মনোনীত ইমাম দাবী করছে তার এই দাবী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অবান্তর। ইতিহাস কারো অজানা নয় বহু মুজাদ্দিদ এসেছেন দ্বীনের তাজদীদ করেছেন কেউ নিজেকে ইমাম বা মুজাদ্দিদ দাবী করেন নি। যদি তাই হত তবে আহলুস সুন্নাহর চার ইমামগণ এই দাবীর যোগ্য হক্বদার ছিলেন, সালাহউদ্দিন আইয়ুবি যিনি ক্রুসেডারদের থেকে মুসলিমদের প্রথম ক্বিবলা বায়তুল মাক্বদিস মুক্ত করেছিলেন তিনি ছিলেন এই দাবীর যোগ্য হক্বদার। প্রত্যেক শতাব্দীতে এমন একজন করে মুজাদ্দিদ এসেছেন আল্লাহ তা'য়ালা তাদের দ্বারা দ্বীনের কাজ সম্পাদন করেছেন কিন্তু কেউ নিজেকে আল্লাহর মনোনীত ইমাম দাবী করেনি। এমনকি শেষ জামানার মাহদি মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ তিনিও নিজেকে মাহদি দাবী করবেন না বরং লোকেরা তার আলামত দেখে তাকে চিনতে সক্ষম হবেন। অথচ ইমাম মাহমুদ যে কিনা নিজেই নিজ ইমামতের পক্ষে প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে লোকদের আহবান করছে। এ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকেনি আগ বাড়িয়ে আরোও দাবী করছে তার নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম আসে। মূলত ইমামতের অন্তরালে নবুওয়াতের দাবী। নিম্নে তার কিছু বিবরণ দেওয়া হলোঃ

    (ক) হে আল্লাহর হাবীব! তাদেরকে বলুন, তোমাদের কি হয়েছে? তোমরা তোমাদের রবের সত্য দাওয়াত কেন পৌছাচ্ছোনা অন্যদের কাছে?
    বলুন, তিনিই আল্লাহ সকল ক্ষমতার মালিক, তিনিই পাঠিয়েছেন মাহমুদ কে যখন মানুষ অন্ধকারে ডুবে আছে, তখন তাদেরকে আলোর পথ দেখাতে। [ইমাম মাহমুদের ইলহামগুলী, পৃঃ ০১, ইলহামঃ ১-২]

    (খ) হে মাহমুদ! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং শান্তি বর্ষিত হোক আপনার অনুসারীদের প্রতিও, যারা আপনার মাধ্যমে রবের হুকুমের আনুগত্য করে। [পৃঃ ০৩, ইলহামঃ ০১]

    (গ) নিশ্চয় আমি আপনাকে ঊর্ধ্ব আকাশে আমার বার্তাবাহক ফেরেস্তা রুহুল কে দেখিয়েছি।
    যখন আপনি ভীতু কণ্ঠে কম্পিত অবস্থায় বার বার বলেছিলেন, হে আমার রব আমাকে উঠিয়ে নাও, আমি এই দায়িত্ব নিতে ভয় পাচ্ছি।
    অতঃপর আমি বললাম, আমিই তো সেই রব, যিনি আসমান ও জমিনের শ্রষ্টা। [পৃঃ ০৫, ইলহাম ১-৩]

    আশা করছি পাঠকবৃন্দ বুঝতে সক্ষম হয়েছেন এই ইলহামগুলো দ্বারা মূলত তাদের কি উদ্যেশ্য। এমনকি তারা ইলহামগুলো কে লিপিবদ্ধ করে। এ পর্যন্ত যুগে যুগে পৃথিবীর বুকে অনেক মানুষই নিজেকে ইমাম মাহদি হিসেবে দাবী করেছে। অনেক মানুষ অজ্ঞতাবশত তাদের অনুসরণ করে বিভ্রান্ত হয়েছে। তারা সাধারণত ইলহামের নামে নিজেদের নফসের ধোকা ও শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং মিথ্যা স্বপ্নকে ভিত্তি বানিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছে এবং করেছে। বস্তুত সত্য প্রমানে শরীয়তে এগুলোর কোনো স্থান নেই।
    -
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

    لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِي بِالْمُشْرِكِينَ وَحَتَّى يَعْبُدُوا الْأَوْثَانَ وَإِنَّهُ سَيَكُونُ فِي أُمَّتِي ثَلَاثُونَ كَذَّابُونَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لَا نَبِيَّ بَعْدِي

    আমার উম্মতের একদল লোক মুশরিকদের সাথে মিলিত হওয়ার পূর্বে এবং মূর্তি পূজায় লিপ্ত হওয়ার পূর্বে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। আর আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যুকের আগমণ ঘটবে। তারা সকলেই নবুওয়াতের দাবী করবে। অথচ আমি সর্বশেষ নবী। আমার পর কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবী আসবেনা। (আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন)

    সাধারণত তারা ওহীর দাবি করে না; কারণ তাতে মুসলিম সমাজে তারা ভণ্ড নবী বলে গণ্য হবে। এজন্য তারা স্বপ্ন বা কাশফের মাধ্যমে তা জানার দাবি করে। সরলপ্রাণ মুসলিমগণ এতে প্রতারিত হন। অথচ স্বপ্ন বা কাশফের মাধ্যমে কারো ইমাম বা মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবি করা আর ওহী লাভের দাবি একই। কারণ যে ব্যক্তি তার স্বপ্ন বা কাশফের বিষয়কে নিজের বা অন্যের বিশ্বাসের বিষয় বানিয়ে নিয়েছে তিনি নিঃসন্দেহে তার স্বপ্ন বা কাশফকে নবীদের স্বপ্নের মত ওহীর সম-পর্যায়ের বলে দাবি করেছে। শোনা যায় একটি মসজিদ নির্মান করে সেটাকে "মাকামে মাহমুদ" নামকরণ করেছে নবুওয়াতের মি/থ্যা দাবীদার কথিত এই ইমাম মাহমুদ। কুরআনে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
    عَسَىٰ أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا
    হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মাকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন। (বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ৭৯)

    আলোচ্য আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাকামে মাহমুদের ওয়াদা দেয়া হয়েছে। মাকামে মাহমুদ শব্দদ্বয়ের অর্থ, প্রশংসনীয় স্থান। এই মাকাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্যেই বিশেষভাবে নির্দিষ্ট অন্য কোন নবীর জন্যে নয়। এর তাফসীর প্রসঙ্গে বিভিন্ন উক্তি বর্ণিত আছে। সহীহ হাদীস সমূহে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, এ হচ্ছে “বড় শাফাআতের মাকাম”। [ফাতহুল কাদীর]

    আসলে তারা ইলহামের নামে যা প্রচার করছে সেগুলো মূলত শ/য়/তানের পক্ষ থেকে এসেছে, তারা তা উপলব্ধি করতে পারে না।
    ইতিহাসে এমন দাবী একমাত্র বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এবং বিভ্রান্ত ব্যাক্তিরাই করেছে যাদের কাছে শয়তানের পক্ষ থেকে ইলহাম আসতো। তারা নিজেরাও ধোকাগ্রস্থ ও বিভ্রান্ত হতো এবং মানুষদেরকে ও বিভ্রান্ত করতো। উল্লেখযোগ্য সাকীফ গোত্রের মুখতার ইবনে আবু উবাইদ সাকাফী। সে দাবী করতো তার কাছে ওহী আসে, এরপর সৈয়্যদ মুহাম্মাদ আল মাহদি (১৮৪৫-১৯০২) নিজেকে মাহদি দাবী করতো, ভারতের গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছু নেই।

    শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, আমি এ যুগের একাধিক শায়েখ কে চিনি যারা আবেদ ও যাহেদ। তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে মাহদী মনে করে। অনেক সময় তাদের কাউকে এই নামে সম্বোধন করা হয়। আর সে নামে সম্বোধনকারী হলো শয়তান। [মিনহাযুস সুন্নাহ]

    আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেন,

    فَرِيقًا هَدَىٰ وَفَرِيقًا حَقَّ عَلَيْهِمُ الضَّلَالَةُ ۗ إِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ مُهْتَدُونَ
    একদলকে পথ প্রদর্শন করেছেন এবং একদলের জন্যে পথভ্রষ্টতা অবধারিত হয়ে গেছে। তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছে এবং ধারণা করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে।
    (আল আ'রাফ, আয়াতঃ ৩০)

    তিনি আরও বলেন,

    وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ قَالَ أُوحِيَ إِلَيَّ وَلَمْ يُوحَ إِلَيْهِ شَيْءٌ
    ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় জালেম কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা বলেঃ আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে। অথচ তার প্রতি কোন ওহী আসেনি।
    (আল আনআম, আয়াতঃ ৯৩)

    শাইখ সুলাইমান আল-আলওয়ান বলেন,
    নিত্যদিনই শুনি বুদ্ধি প্রতিবন্ধিরা মাহদি হওয়ার দাবী করছে। বলছে আমিই প্রতিশ্রুত মাহদি। মূলত এ বিষয়ে শয়তান তাদের ওহী করে তাকে ধোকা গ্রস্ত করে, ধ্বংষ করে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, "নিশ্চয় শয়তান তার বন্ধুদের নিকট ওহী প্রেরণ করে" (আন'আমঃ আয়াত- ৬)
    [আন নাযা'য়াত ফিল-মাহদি]

    সর্বোপরি যারা সুনির্দিষ্ট করে দিনক্ষণ ও দেশের নাম সহ বলে, তাদের এসব কথার নির্ভরযোগ্য কোনো ভিত্তি নেই। আর মু'মিনের জন্য তা এভাবে জানার প্রয়োজনও নেই। প্রয়োজন থাকলে শরীয়ত অবশ্যই তা সুনির্দিষ্ট করেই জানিয়ে দিতো। নির্ভর‍যোগ্য সূত্র ছাড়া এমন বিষয়ের পেছনে ছুটোছুটি করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বাড়াবাড়ির অন্তর্ভুক্ত। যা ইসলামে পছন্দনীয় নয়। আমাদের করনীয় হলো, গাজওয়াতুল হিন্দ, ইমাম মাহদি, ঈসা (আ.) সম্পর্কে যতটুকু তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিদ্যমান ততটুকু বিশ্বাস করা। তারপর শরীয়ত কোন পরিস্থিতিতে আমাদের উপর কি বিধান আরোপ করেছে সেগুলো যেনে আমল করা এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যত পরিস্থিতি ও পরকালের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা।

    আবু কাতাদা আহমাদ বিন হাসান আল-মুওয়াল্লিম বলেনঃ

    প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য জরুরি হলো নবী সা. এর ভবিষ্যদ্বাণী সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে পূর্ণ বিশ্বাস রাখা, এর প্রতিক্ষায় থাকা এবং এর মাধ্যমে সুসংবাদ গ্রহণ করা যদি সেটা কল্যাণকর হয়। অন্যথায় তা ভয় করা। পাশাপাশি জি হাদ ও দাওয়াহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া। আল্লাহর কিতাব এবং তার রাসুল সা. এর সুন্নাহ শিক্ষা করা এবং বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি পরিহার করে মধ্যমপন্থায় জিহাদের জন্য সামর্থ অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

    আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সবাইকে সীরাতুল মুস্তাকিমের উপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুক। আমিন ইয়া রব্বাল আলামীন।

    - আবু আম্মার সাইফুল্লাহ
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 07-22-2023, 04:15 PM.

  • #2
    । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এক স্ত্রী থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,

    من أتى عرافا فسأله عن شيئ فصدقه لم تقبل له صلاة أربعين يوما

    ‘‘যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে আসল, তারপর তাকে [ভাগ্য সম্পর্কে] কিছু জিজ্ঞাসা করলো, অতঃপর গণকের কথাকে সত্য বলে বিশ্বাস করল, তাহলে চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবে না। (মুসলিম)

    ২। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,

    من أتى كاهنا فصدقه بما يقول كفر بما أنزل على محمد. (رواه ابو داود)

    ‘‘যে ব্যাক্তি গণকের কাছে আসলো, অতঃপর গণক যা বললো তা সত্য বলে বিশ্বাস করলো, সে মূলতঃ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর যা নাযিল করা হয়েছে তা অস্বীকার করলো। (সহীহ বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক হাদীসটি সহীহ। আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ী ইবনে মাজা ও হাকিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)।

    আবু ইয়ালা ইবনে মাসউদ থেকে অনুরূপ মাউকুফ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

    ৩। ইমরান বিন হুসাইন থেকে মারফু’ হাদীসে বর্ণিত আছে,

    ليس منا من تطير أو تطير له، أوتكهن أو تكهن له أو سحر أو سحرله ومن أتى كاهنا فصدقه بما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد صلى الله عليه وسلم. (رواه البزار بإسناد جيد)

    ‘‘যে ব্যক্তি পাখি উড়িয়ে ভাগ্যের ভাল-মন্দ যাচাই করলো, অথবা যার ভাগ্যের ভাল-মন্দ যাচাই করার জন্য পাখি উড়ানো হল, অথবা যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করলো, অথবা যার ভাগ্য গণনা করা হলো, অথবা যে ব্যক্তি যাদু করলো অথবা যার জন্য যাদু করা হলো অথবা যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে আসলো অতঃপর সে [গণক] যা বললো তা বিশ্বাস করলো সে ব্যক্তি মূলতঃ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর যা নাযিল করা হয়েছে তা [কুরআন] অস্বীকার করল। (বায্যার)
    পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

    Comment


    • #3
      ২০২০ এ কোন এক কারাগারে সে দাবী করত যে তার কাছে ওহী আসে এবং জিবরীল (আঃ) অবতরণ করে তার কাছে, (নাউযুবিল্লাহ)
      তার ঐ কথিত ওহী সংগ্রহ করা হয়। তাকে সবার সামনে উপস্থিত করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে সবার সামনে কিছু স্বীকার করলেও অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেয় ।
      পরবর্তীতে উলামায়ে কিরাম তার ব্যাপারে রিদ্দার ফতোয়া আরোপ করে ।
      প্রশাসন এর পরোক্ষ্য মদদ এবং তার মুরিদদের থেকে প্রচুর যাকাতের টাকা দিয়ে ভিতরে ফিতনা করত , অনেক ভাইকে বিভিন্ন রকম অফার করত যেমন অর্থ, মোবাইল, টিভি ইত্যাদি।
      একজন দুনিয়ালোভী আলেমও নাকি তার ফাঁদে পা দেয় । আল্লাহ তাকে মাফ করুক।

      Last edited by Munshi Abdur Rahman; 07-25-2023, 02:49 PM.

      Comment


      • #4
        শয়তান এদের উপর ভর করে, তারপর শয়তানের ওয়াসওয়াসাকেই এরা অহি মনে করে। সাথে তাদের নিজস্ব খায়েশ তো আছেই, বিখ্যাত হওয়ার, প্রভাবশালী হওয়ার।

        আল্লাহ তাআলা এই উম্মতকে এসকল বিভ্রান্ত ব্যক্তি এবং দল থেকে হিফাজত করুন। আমীন
        Last edited by Munshi Abdur Rahman; 07-26-2023, 11:05 AM.

        Comment

        Working...
        X