মালহামাতুল কোবারার পদধ্বনি সিরিজ
আরবের আকাশ বিস্ফোরণের অপেক্ষায়...
গ্রেটার ইজরায়েল! শব্দটির সাথে মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকদের পরিচয় প্রায় শতাব্দিকাল; কিন্তু সাম্প্রতিক ইজরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে এই কিওয়ার্ডটা রাজনীতি থেকে সমরবিদ্যায় খুবি চর্চিত বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশেষত, রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে এই তত্ত্বের উদৃতি দেওয়া এটাকে আলাদা সিগনিফিকেন্স এনে দিয়েছে।
গ্রেটার ইজরায়েল কি?
জায়নিস্ট আন্দোলনের কল্পিত সাম্রাজ্য, যা গড়ে উঠেছে আরেক অলীক চিন্তাধারা থেকে। অলীক চিন্তাধারাটা কেমন বলি- কোন এক হারানো অতিতে এই ভিটায় আমার পূর্বোত্তর পূর্বপুরুষ বাস করত, যার কিছু বণ্টন হয়ে গেছে আর বাকি বিক্রি হয়ে গেছে; আজ হারানো অতীত থেকে মাপকাঠিতে অনুত্তীর্ণ পুরুষানুক্রমের মালিকানা দেখিয়ে আমার শক্তি আছে বলে আমি কেড়ে নেওয়ার হায়েনাবৃত্তান্তে উপনীত হলাম!
এবার আসি এই গ্রেটার ইজরায়েলের সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি নিয়ে। এটি পশ্চিমে মিশরের নীলনদের তীর থেকে নিয়ে উত্তর ও দক্ষিণে যথাক্রমে ভূমধ্যসাগর ও হেজাজের সীমানা অঞ্চল ঘেষে পূর্বদেশে পারস্যবাসি ইরানের পারস্য উপসাগরের প্রান্ত ঘেঁষে তুরস্কের দক্ষিন-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত।
ম্যাপঃ https://hagadone.media.clients.ellin...er5_t1170.jpeg
এই ম্যাপ দেখলেই যেকোনো মুসলিম ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের গাঁ শিউরে উঠার কথা, কিন্তু সবাই যেন নীরব দর্শক! শরিরের উত্তাপ আরও কয়েক ডিগ্রি বেড়ে যাবে যদি লক্ষ্য করেন, এই জায়নবাদি ইসরায়েল বাসা বেধেছে তাদের এই স্বপ্নের সাম্রাজ্যের ঠিক রাজধানীতে এবং এই স্বপ্নের প্রাণ জেরুজালেমের ঠিক উপকণ্ঠে! তাদের ভুরাজনীতি ও সমরনীতির সাফল্য যে কতো ব্যাপক তা বুঝার জন্য আপনাকে চোখের দৃষ্টি মেলে দেখতে পারতে হবে- আরবের বুকের ঠিক মাঝখানে দাড়িয়ে এক পাশের উপদ্বীপ অঞ্চলকে মিত্ররুপে সঙ্গী বানিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের উপদ্বীপ বহির্ভূত অঞ্চলকে শ্ত্রুরূপে মোকাবিলায় মত্ত হয়েছে! চোখ কপালে উঠবে যখন ভাববেন- তারা তাদের স্বপ্নের সাম্রাজ্যের রাজধানী প্রথম পদক্ষেপেই করায়ত্তের মধ্যে এনেছে!
জায়নবাদি ধ্বংসলীলার সূতিকাগারে আরব জাহানঃ
আজ এতোদিনের স্বপ্ন পানে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলা এই জারজ শয়তান আরব এবং মুসলিমদের মাথা থেকে আমাদের মুকুট কেড়ে নেওয়ার চূড়ান্ত লড়াইয়ে নেমেছে। এই এক বৎসর উত্তীর্ণ লড়াইয়ের খোয়াব কেবল আল-আকসা কম্পাউন্ড দখল নয়; বরং পুরো ফিলিস্তিনসহ এই অঞ্চলের প্রধান সম্মুখ সারির রেজিস্টেন্স হামাস ও হিজবুল্লাহকে গুড়িয়ে লেবানন ও দখল, যা ইজরায়েলকে বিশ্বমঞ্চে তার মুকুটসহ স্বপ্নের পবিত্র ভূমিতে চূড়ান্ত সফল ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাবে। অর্থাৎ, একটি সফল সাস্টেইনেবল ইহুদি স্বপ্ন রাষ্ট্র! আর এ জন্য অত্যাবশ্যকীয় হল ইরানীয় রেজিস্টেন্স এক্সিসকে দুর্বল ও পঙ্গু করে দেওয়া, যেন ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ের মধ্যে ইজরায়েল নিজেকে অত্র অঞ্চলের পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
এই দাবিটির যৌক্তিকতা বুঝার জন্য আমাদের যুদ্ধকালীন সময় থেকে এই ১ বছরের ঘটনা পরিক্রমায় নজর দিতে হবে-
১। অভূতপূর্বভাবে ইজরায়েলের সুস্পষ্ট রাক্ষুসে আচরণ ও গণহত্যার মত অপরাধকে যারা প্রকাশ্য দিবালোকে সমর্থনপুষ্ট জনমত গড়ে তুলার ন্যারেটিভ তৈরিতে বদ্ধপরিকর ছিল সেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ারাই বাক পরিবর্তন করে ইজরায়েলের জনমে এই প্রথমবারের মতো ইজরায়েলকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছে এবং পিশাচ ইজরায়েল বিরুদ্ধে ইরানের নেতৃত্বাধিন বলয়ের অস্তিত্ব রক্ষার প্রতিরোধকে যথেষ্ট সফল হিসেবে দেখাতে তৎপর!
২। বিভিন্ন মিডিয়া এমন একটি ভাইভস দেওয়ার চেষ্টা করে গেছে যে নেতানিয়াহু পাগলা ঘোড়া, মন্ত্রীপরিষদ তাকে একা ছেড়ে দিচ্ছে, যুদ্ধ সংক্রান্ত কর্তা ব্যক্তিরা পদত্যাগ করতেছে, সব কিছু মিলিয়ে নেতানিয়াহুর এমন বোধজ্ঞানহীন পাগলা আচরণে আজ যেন ইজরায়েলের কফিনে মুসলিমরা শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার দ্বারপ্রান্তে! অথচ, এই শয়তান রাষ্ট্রের এই শতাব্দির নেতৃত্বদানকারী নেতা যে শীর্ষ শয়তান এই নেতানিয়াহুই , তা বোধহয় ভুলেই গেছি। আর এই যুদ্ধ যে না নেতানিয়াহুর একক সিদ্ধান্ত, না তার দলের একক সিদ্ধান্ত; বরং এখন পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান সুস্পষ্ট না করা এবং বেন্নি গান্টজের ইরানের হামলার প্রতিক্রিয়া যুদ্ধ প্রসঙ্গে ইজরায়েলের রাজনৈতিক ঐকতানের প্রমাণ! আর এটা নির্দেশ করে যে মিডিয়ার এরূপ মিথ্যা ভাইভস উদ্দেশ্য প্রণোদিত!
৩। ইরানীয় উইং এ ইজরায়েলী ঝড়ঃ
ধারাবাহিকভাবে একের পর এক ইরানের বিভিন্ন উইং এর শক্তির নেতৃবৃন্দকে গুপ্তহত্যা, গোটা দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার মাহসা আমিনি ইস্যু, আর যুদ্ধ শুরুর পর নিজ দেশের বুকে আমন্ত্রিত অতিথি এখন সময়ে অন্যতম মিত্র যারা সম্মুখ সমরে নিয়ত সেই দলের কার্যত প্রধান হানিয়াকে হত্যাকাণ্ড ও ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালি প্রক্সি উইং হিযবুল্লাহর নেতৃস্থানীয় ও সাধারণ সদস্যদের ম্যাসিভ হত্যাকন্ড এবং সবশেষ এই গোষ্ঠীর দীর্ঘসময়ের প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা আর এমনসব উস্কানি প্রচণ্ড সম্ভাবনার সাথেই দাবি করে তাদের এ যাবতকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট(ধারনা করা হত পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা) রাইসি ও তার অন্যতম সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দোল্লাহিয়ানের প্লেন ক্রাশ ইজরায়েলি মোসাদের ই কাজ!
৪। পেঁজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণঃ
যেমনটা বলা হচ্ছে যে গোয়েন্দা সংস্থার সুদীর্ঘ কর্মতৎপরতার সাফল্য, সেটা নিঃসন্দেহে যথেষ্ট ভয়ের কারণ, তবে এটা ট্রেডিশনাল, যার সক্ষমতা অর্জনের কম করে হলেও স্কোপ আছে; কিন্তু যদি এটা তাদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা like IOT tech based weapon এর সাফল্য বা EMP weapon হয়ে থাকে, নিঃসন্দেহে এটা একটা terrifying dynamic threat, যা মোকাবিলা করা আল্লাহর কুদরত ছাড়া অসম্ভব!
প্রশ্ন হল, এমন সব প্রযুক্তি যদি থেকেই থাকে, তাহলে ইজরায়েল এমন মার খাচ্ছে কেন? যদি আসলেই এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থেকে থাকে তাহলে এর উত্তর হবে- ইসরায়েল এমন নাটক করছে কেন?
প্রকৃতপক্ষে এটাকে নাটক ই বলতে হবে। কারণ, আলরেডি কোয়ান্টাম কম্পিউঁটার অফিসিয়ালি IDM ও google এর আছে, mean পশ্চিমা-জায়ন শক্তির হাতে, সাথে AI and HAARP technologyএবং EMP weapon. আসলে, উপরে উল্লিখিত ২ টি অবস্থার উত্তর একটাই। উভয় অবস্থায় তারা নিজেদের দুর্বল, যাদের খুব সহজে মোকাবিলা করে বরং ধ্বংস করে দেওয়া যায়, মাজলুমের প্রতিশোধের উবে যাওয়া সাহস উস্কে দিয়ে প্রতিশোধে অপরিকল্পিতভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়ার দিকে ধাবিত করা, বিশ্বজনমত ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সোচ্চার এমনকি খোদ জাতিসংঘও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে থাকা- এসব দেখিয়ে প্রতিরোধ শক্তিকে তাদেরকে আক্রমণ করার লোভাতুর কৌশলে যুদ্ধে টেনে আনার ফাঁদে ফেলে দেওয়ার নীল নক্সা এঁকেছে। এবং এক পর্যায়ে এই জারজ রাষ্ট্রের অপরাধ সইতে না পেরে তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া যাবে, এমন পরিকল্পনা মাথায় এনে ইরানের দিক থেকে আসা বিশাল কোন প্রতিক্রিয়ামূলক আক্রমণকে পুঁজি করে তাদের সন্ত্রাসী আগ্রাসনকে চূড়ান্ত বিজয়ে গ্রেট রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের অপরিহার্যতায় যুদ্ধের নৈতিক বৈধতাও অর্জন করে ফেলবে। আর অন্যদিকে পরাস্থ হতে থাকা ইসরায়েলকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও স্বার্থকেন্দ্রিক বাধ্যবাধকতা থেকে অ্যামেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোটকে যুদ্ধে নিয়ে আসতে বাধ্য করবে। কিন্তু কথা হচ্ছে, ইরান কি এই প্রবাহপথের গতিবিধি বুঝে না! আসলে বুঝে না, এমন নয়; বরং আমাদের এমন প্রশ্নটাই আসলে অপরিপক্ব, আর তা বুঝার জন্য বনের রাজার একটা উদাহরণ দেখি। বনের এক সিংহ যখন তার প্রতিযোগী আরেক সিংহকে যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ জানায়, তখন যেমন তাকে সমহিমায় থাকতে চ্যালেঞ্জ accept করতে হয় , ইরান তারও অধিক অতিরিক্ত প্রেক্ষাপটের স্বীকার হয়ে সেই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলায় একটা বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এখন চ্যালেঞ্জ accept এর পর ২/১ টা হস্তকৌশলের শৈল্পিক বুনন দেখিয়ে যেমন স্বপদে সমাসীন থেকে বিদায় নেওয়া যায় না, তেমনি এখন ইরান ও ইজরায়েলের চূড়ান্ত একটা রফাদফা ছাড়া অপশন নাই। অনেক চ্যালেঞ্জ ই থাকে, যেখানে প্রতিপক্ষের সাথে ২/১ টা দস্তাদস্তির কসরতের মারপিটের বিদ্যায় একে প্রীতি ম্যাচ বলাই যায়! ইরান হয়তো এমন ই ভেবেছিল, আর এমন না ভাবলেও যে প্রকার ও তবকার উস্কানি তাকে দেওয়া হয়েছে, তাতেও সে মাঠে না নামলে বুড়ো সিংহের মতো কোনমতে সম্মান বাঁচিয়ে সটকে পরার মতো তাকেও সটকে পড়া ছাড়া গত্যন্তর নাই। কাজেই, ইরান যখন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে দেখতে পেলো এটা প্রীতি ম্যাচ নয়, বরং বাস্তবেই চূড়ান্ত রাজা নির্ধারণী এক যুদ্ধ হয়ে গেছে, এক চূড়ান্ত বিজয়ী নির্ধারণ ছাড়া এই খেলার আর ভিন্ন কোনও রেজাল্ট পাবার পথ ও তাই বন্ধ হয়ে গেছে। আর এই ক্ষমতার লড়াই যখন শুরু হয়ে যায়, তখন আরও যারা এই সিংহাসনের দাবিদার আছে, তাদেরও একে একে অংশ নিতে হয় এই রাজত্বের খেলায়। কাজেই, ধীরে ধীরে তুরস্কও সামনে আসবে, সৌদিকেও বাধ্য করা হবে। আর সিরিয়ায় থাকা রাশিয়াকেও এই যুদ্ধে চেপে ধরার লোভ ইউরোপের জন্য এই যুদ্ধে জড়াবার যথেষ্ট রসদ হিসেবে অচিরেই কাজ করবে, যখনই রাশিয়া ইজরায়েলের উস্কানিতে সাড়া দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে! এভাবেই, এই যুদ্ধ আহবান করে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যকে ম্যাসাকার করে দেওয়ার, উল্টেপাল্টে নতুন আবহে গড়ে তোলার! তাহলে, তো এটা বিশ্বযুদ্ধের দিকে ধাবিত হওয়া খুব অস্বাভাবিক কোন বিষয় না; কিন্তু সেক্ষেত্রে তো ইজরায়েল নিজেও ধংস্তুপে পরিণত হবে, যা থেকে আশা করা যায়- বল তাদের কোর্টে থাকা অবধি WW III বাধবে না। কিন্তু, চারদিকে যে ডায়নামিকের সম্ভাবনা, আমরা বিশ্বাস করি না খুব বেশিদূর আগুনের এই খেলায় বল কারো কোর্টে থাকবে, অন্তত বাস্তবতার ডায়নামিক্স এটাই বলে। সুতরাং, এই যুদ্ধ কি মালহামার উপসর্গ?! সম্প্রতি ইরানের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠা প্রতিক্রিয়ার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বিস্ফোরণের অপেক্ষায় আরবের আকাশ- এখনই না কি আরও কিছু পর... !
আরবের আকাশ বিস্ফোরণের অপেক্ষায়...
গ্রেটার ইজরায়েল! শব্দটির সাথে মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকদের পরিচয় প্রায় শতাব্দিকাল; কিন্তু সাম্প্রতিক ইজরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে এই কিওয়ার্ডটা রাজনীতি থেকে সমরবিদ্যায় খুবি চর্চিত বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশেষত, রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে এই তত্ত্বের উদৃতি দেওয়া এটাকে আলাদা সিগনিফিকেন্স এনে দিয়েছে।
গ্রেটার ইজরায়েল কি?
জায়নিস্ট আন্দোলনের কল্পিত সাম্রাজ্য, যা গড়ে উঠেছে আরেক অলীক চিন্তাধারা থেকে। অলীক চিন্তাধারাটা কেমন বলি- কোন এক হারানো অতিতে এই ভিটায় আমার পূর্বোত্তর পূর্বপুরুষ বাস করত, যার কিছু বণ্টন হয়ে গেছে আর বাকি বিক্রি হয়ে গেছে; আজ হারানো অতীত থেকে মাপকাঠিতে অনুত্তীর্ণ পুরুষানুক্রমের মালিকানা দেখিয়ে আমার শক্তি আছে বলে আমি কেড়ে নেওয়ার হায়েনাবৃত্তান্তে উপনীত হলাম!
এবার আসি এই গ্রেটার ইজরায়েলের সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি নিয়ে। এটি পশ্চিমে মিশরের নীলনদের তীর থেকে নিয়ে উত্তর ও দক্ষিণে যথাক্রমে ভূমধ্যসাগর ও হেজাজের সীমানা অঞ্চল ঘেষে পূর্বদেশে পারস্যবাসি ইরানের পারস্য উপসাগরের প্রান্ত ঘেঁষে তুরস্কের দক্ষিন-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত।
ম্যাপঃ https://hagadone.media.clients.ellin...er5_t1170.jpeg
এই ম্যাপ দেখলেই যেকোনো মুসলিম ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের গাঁ শিউরে উঠার কথা, কিন্তু সবাই যেন নীরব দর্শক! শরিরের উত্তাপ আরও কয়েক ডিগ্রি বেড়ে যাবে যদি লক্ষ্য করেন, এই জায়নবাদি ইসরায়েল বাসা বেধেছে তাদের এই স্বপ্নের সাম্রাজ্যের ঠিক রাজধানীতে এবং এই স্বপ্নের প্রাণ জেরুজালেমের ঠিক উপকণ্ঠে! তাদের ভুরাজনীতি ও সমরনীতির সাফল্য যে কতো ব্যাপক তা বুঝার জন্য আপনাকে চোখের দৃষ্টি মেলে দেখতে পারতে হবে- আরবের বুকের ঠিক মাঝখানে দাড়িয়ে এক পাশের উপদ্বীপ অঞ্চলকে মিত্ররুপে সঙ্গী বানিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের উপদ্বীপ বহির্ভূত অঞ্চলকে শ্ত্রুরূপে মোকাবিলায় মত্ত হয়েছে! চোখ কপালে উঠবে যখন ভাববেন- তারা তাদের স্বপ্নের সাম্রাজ্যের রাজধানী প্রথম পদক্ষেপেই করায়ত্তের মধ্যে এনেছে!
জায়নবাদি ধ্বংসলীলার সূতিকাগারে আরব জাহানঃ
আজ এতোদিনের স্বপ্ন পানে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলা এই জারজ শয়তান আরব এবং মুসলিমদের মাথা থেকে আমাদের মুকুট কেড়ে নেওয়ার চূড়ান্ত লড়াইয়ে নেমেছে। এই এক বৎসর উত্তীর্ণ লড়াইয়ের খোয়াব কেবল আল-আকসা কম্পাউন্ড দখল নয়; বরং পুরো ফিলিস্তিনসহ এই অঞ্চলের প্রধান সম্মুখ সারির রেজিস্টেন্স হামাস ও হিজবুল্লাহকে গুড়িয়ে লেবানন ও দখল, যা ইজরায়েলকে বিশ্বমঞ্চে তার মুকুটসহ স্বপ্নের পবিত্র ভূমিতে চূড়ান্ত সফল ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাবে। অর্থাৎ, একটি সফল সাস্টেইনেবল ইহুদি স্বপ্ন রাষ্ট্র! আর এ জন্য অত্যাবশ্যকীয় হল ইরানীয় রেজিস্টেন্স এক্সিসকে দুর্বল ও পঙ্গু করে দেওয়া, যেন ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ের মধ্যে ইজরায়েল নিজেকে অত্র অঞ্চলের পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
এই দাবিটির যৌক্তিকতা বুঝার জন্য আমাদের যুদ্ধকালীন সময় থেকে এই ১ বছরের ঘটনা পরিক্রমায় নজর দিতে হবে-
১। অভূতপূর্বভাবে ইজরায়েলের সুস্পষ্ট রাক্ষুসে আচরণ ও গণহত্যার মত অপরাধকে যারা প্রকাশ্য দিবালোকে সমর্থনপুষ্ট জনমত গড়ে তুলার ন্যারেটিভ তৈরিতে বদ্ধপরিকর ছিল সেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ারাই বাক পরিবর্তন করে ইজরায়েলের জনমে এই প্রথমবারের মতো ইজরায়েলকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছে এবং পিশাচ ইজরায়েল বিরুদ্ধে ইরানের নেতৃত্বাধিন বলয়ের অস্তিত্ব রক্ষার প্রতিরোধকে যথেষ্ট সফল হিসেবে দেখাতে তৎপর!
২। বিভিন্ন মিডিয়া এমন একটি ভাইভস দেওয়ার চেষ্টা করে গেছে যে নেতানিয়াহু পাগলা ঘোড়া, মন্ত্রীপরিষদ তাকে একা ছেড়ে দিচ্ছে, যুদ্ধ সংক্রান্ত কর্তা ব্যক্তিরা পদত্যাগ করতেছে, সব কিছু মিলিয়ে নেতানিয়াহুর এমন বোধজ্ঞানহীন পাগলা আচরণে আজ যেন ইজরায়েলের কফিনে মুসলিমরা শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার দ্বারপ্রান্তে! অথচ, এই শয়তান রাষ্ট্রের এই শতাব্দির নেতৃত্বদানকারী নেতা যে শীর্ষ শয়তান এই নেতানিয়াহুই , তা বোধহয় ভুলেই গেছি। আর এই যুদ্ধ যে না নেতানিয়াহুর একক সিদ্ধান্ত, না তার দলের একক সিদ্ধান্ত; বরং এখন পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান সুস্পষ্ট না করা এবং বেন্নি গান্টজের ইরানের হামলার প্রতিক্রিয়া যুদ্ধ প্রসঙ্গে ইজরায়েলের রাজনৈতিক ঐকতানের প্রমাণ! আর এটা নির্দেশ করে যে মিডিয়ার এরূপ মিথ্যা ভাইভস উদ্দেশ্য প্রণোদিত!
৩। ইরানীয় উইং এ ইজরায়েলী ঝড়ঃ
ধারাবাহিকভাবে একের পর এক ইরানের বিভিন্ন উইং এর শক্তির নেতৃবৃন্দকে গুপ্তহত্যা, গোটা দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার মাহসা আমিনি ইস্যু, আর যুদ্ধ শুরুর পর নিজ দেশের বুকে আমন্ত্রিত অতিথি এখন সময়ে অন্যতম মিত্র যারা সম্মুখ সমরে নিয়ত সেই দলের কার্যত প্রধান হানিয়াকে হত্যাকাণ্ড ও ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালি প্রক্সি উইং হিযবুল্লাহর নেতৃস্থানীয় ও সাধারণ সদস্যদের ম্যাসিভ হত্যাকন্ড এবং সবশেষ এই গোষ্ঠীর দীর্ঘসময়ের প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা আর এমনসব উস্কানি প্রচণ্ড সম্ভাবনার সাথেই দাবি করে তাদের এ যাবতকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট(ধারনা করা হত পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা) রাইসি ও তার অন্যতম সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দোল্লাহিয়ানের প্লেন ক্রাশ ইজরায়েলি মোসাদের ই কাজ!
৪। পেঁজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণঃ
যেমনটা বলা হচ্ছে যে গোয়েন্দা সংস্থার সুদীর্ঘ কর্মতৎপরতার সাফল্য, সেটা নিঃসন্দেহে যথেষ্ট ভয়ের কারণ, তবে এটা ট্রেডিশনাল, যার সক্ষমতা অর্জনের কম করে হলেও স্কোপ আছে; কিন্তু যদি এটা তাদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা like IOT tech based weapon এর সাফল্য বা EMP weapon হয়ে থাকে, নিঃসন্দেহে এটা একটা terrifying dynamic threat, যা মোকাবিলা করা আল্লাহর কুদরত ছাড়া অসম্ভব!
প্রশ্ন হল, এমন সব প্রযুক্তি যদি থেকেই থাকে, তাহলে ইজরায়েল এমন মার খাচ্ছে কেন? যদি আসলেই এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থেকে থাকে তাহলে এর উত্তর হবে- ইসরায়েল এমন নাটক করছে কেন?
প্রকৃতপক্ষে এটাকে নাটক ই বলতে হবে। কারণ, আলরেডি কোয়ান্টাম কম্পিউঁটার অফিসিয়ালি IDM ও google এর আছে, mean পশ্চিমা-জায়ন শক্তির হাতে, সাথে AI and HAARP technologyএবং EMP weapon. আসলে, উপরে উল্লিখিত ২ টি অবস্থার উত্তর একটাই। উভয় অবস্থায় তারা নিজেদের দুর্বল, যাদের খুব সহজে মোকাবিলা করে বরং ধ্বংস করে দেওয়া যায়, মাজলুমের প্রতিশোধের উবে যাওয়া সাহস উস্কে দিয়ে প্রতিশোধে অপরিকল্পিতভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়ার দিকে ধাবিত করা, বিশ্বজনমত ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সোচ্চার এমনকি খোদ জাতিসংঘও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে থাকা- এসব দেখিয়ে প্রতিরোধ শক্তিকে তাদেরকে আক্রমণ করার লোভাতুর কৌশলে যুদ্ধে টেনে আনার ফাঁদে ফেলে দেওয়ার নীল নক্সা এঁকেছে। এবং এক পর্যায়ে এই জারজ রাষ্ট্রের অপরাধ সইতে না পেরে তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া যাবে, এমন পরিকল্পনা মাথায় এনে ইরানের দিক থেকে আসা বিশাল কোন প্রতিক্রিয়ামূলক আক্রমণকে পুঁজি করে তাদের সন্ত্রাসী আগ্রাসনকে চূড়ান্ত বিজয়ে গ্রেট রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের অপরিহার্যতায় যুদ্ধের নৈতিক বৈধতাও অর্জন করে ফেলবে। আর অন্যদিকে পরাস্থ হতে থাকা ইসরায়েলকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও স্বার্থকেন্দ্রিক বাধ্যবাধকতা থেকে অ্যামেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোটকে যুদ্ধে নিয়ে আসতে বাধ্য করবে। কিন্তু কথা হচ্ছে, ইরান কি এই প্রবাহপথের গতিবিধি বুঝে না! আসলে বুঝে না, এমন নয়; বরং আমাদের এমন প্রশ্নটাই আসলে অপরিপক্ব, আর তা বুঝার জন্য বনের রাজার একটা উদাহরণ দেখি। বনের এক সিংহ যখন তার প্রতিযোগী আরেক সিংহকে যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ জানায়, তখন যেমন তাকে সমহিমায় থাকতে চ্যালেঞ্জ accept করতে হয় , ইরান তারও অধিক অতিরিক্ত প্রেক্ষাপটের স্বীকার হয়ে সেই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলায় একটা বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এখন চ্যালেঞ্জ accept এর পর ২/১ টা হস্তকৌশলের শৈল্পিক বুনন দেখিয়ে যেমন স্বপদে সমাসীন থেকে বিদায় নেওয়া যায় না, তেমনি এখন ইরান ও ইজরায়েলের চূড়ান্ত একটা রফাদফা ছাড়া অপশন নাই। অনেক চ্যালেঞ্জ ই থাকে, যেখানে প্রতিপক্ষের সাথে ২/১ টা দস্তাদস্তির কসরতের মারপিটের বিদ্যায় একে প্রীতি ম্যাচ বলাই যায়! ইরান হয়তো এমন ই ভেবেছিল, আর এমন না ভাবলেও যে প্রকার ও তবকার উস্কানি তাকে দেওয়া হয়েছে, তাতেও সে মাঠে না নামলে বুড়ো সিংহের মতো কোনমতে সম্মান বাঁচিয়ে সটকে পরার মতো তাকেও সটকে পড়া ছাড়া গত্যন্তর নাই। কাজেই, ইরান যখন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে দেখতে পেলো এটা প্রীতি ম্যাচ নয়, বরং বাস্তবেই চূড়ান্ত রাজা নির্ধারণী এক যুদ্ধ হয়ে গেছে, এক চূড়ান্ত বিজয়ী নির্ধারণ ছাড়া এই খেলার আর ভিন্ন কোনও রেজাল্ট পাবার পথ ও তাই বন্ধ হয়ে গেছে। আর এই ক্ষমতার লড়াই যখন শুরু হয়ে যায়, তখন আরও যারা এই সিংহাসনের দাবিদার আছে, তাদেরও একে একে অংশ নিতে হয় এই রাজত্বের খেলায়। কাজেই, ধীরে ধীরে তুরস্কও সামনে আসবে, সৌদিকেও বাধ্য করা হবে। আর সিরিয়ায় থাকা রাশিয়াকেও এই যুদ্ধে চেপে ধরার লোভ ইউরোপের জন্য এই যুদ্ধে জড়াবার যথেষ্ট রসদ হিসেবে অচিরেই কাজ করবে, যখনই রাশিয়া ইজরায়েলের উস্কানিতে সাড়া দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে! এভাবেই, এই যুদ্ধ আহবান করে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যকে ম্যাসাকার করে দেওয়ার, উল্টেপাল্টে নতুন আবহে গড়ে তোলার! তাহলে, তো এটা বিশ্বযুদ্ধের দিকে ধাবিত হওয়া খুব অস্বাভাবিক কোন বিষয় না; কিন্তু সেক্ষেত্রে তো ইজরায়েল নিজেও ধংস্তুপে পরিণত হবে, যা থেকে আশা করা যায়- বল তাদের কোর্টে থাকা অবধি WW III বাধবে না। কিন্তু, চারদিকে যে ডায়নামিকের সম্ভাবনা, আমরা বিশ্বাস করি না খুব বেশিদূর আগুনের এই খেলায় বল কারো কোর্টে থাকবে, অন্তত বাস্তবতার ডায়নামিক্স এটাই বলে। সুতরাং, এই যুদ্ধ কি মালহামার উপসর্গ?! সম্প্রতি ইরানের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠা প্রতিক্রিয়ার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বিস্ফোরণের অপেক্ষায় আরবের আকাশ- এখনই না কি আরও কিছু পর... !
Comment