কালবোশেখের রাতে নিস্তব্ধ নীরবতার প্রহরে...
ইরান প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হল, প্রায় অর্ধমাস......। ইজরায়েল অনেক লম্ফ জম্ফ করল; কিন্তু শেষে কি তাহলে তারা ভয় পেয়ে গেল, নাকি সত্যিই তারা নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকার চর্চা করতে ব্রত, তাহলে কি এই যুদ্ধ ইজরায়েল কর্তৃক আরবের উপর চাপিয়ে দেওয়া কোন যুদ্ধ নয়! প্রথমে তারা সভ্যতার জন্য অনিরাপদ মাত্রেই মুসলিম ভূমিতে পারমানবিক প্রকল্প ধ্বংসের ফন্দি আঁটল, কূটনীতিতে ব্যর্থ হয়ে তেলক্ষেত্রে হামলার প্রকল্প সামনে আনল! বলতেই হবে ইরান খুব ইন্টেলেকচুয়াল একটা কূটনৈতিক কৌশলী চাপ সৃষ্টি করতে সমর্থ হল! কিন্তু তাতেই কি চালে ইজরায়েলের পরাজয় নিশ্চিত হল? ইরান হামলা করে কি কি সফলতা অর্জন করল; আর ইজরায়েল হামলা না করতে পেরে কি কি ব্যর্থতা অর্জন করল, যা বলে দিবে তারা কতটুকু পারে নাই, আর কতটুকু বিরত ছিল। আর এটা বুঝার জন্য আমাদের বর্তমানে তাদের কর্মযজ্ঞ এবং ফিউচারের তাদের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনায় আনতে হবে।
হায়েনার থাবাঃ স্বীকার পানে ছুটে চলা হায়েনা পরিপার্শ্বের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাড়া দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে না। স্বীকারী প্রাণী মাত্রেই এই স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আর এর প্রতিপাদ্য বোঝার জন্য পিপীলিকা ও ঘুঘুর গল্পের সারমর্মের দিকে চোখ বুলালেই যথেষ্ট। আবার, ভয়ঙ্কর এক রাক্ষস শয়তান যখন ধ্বংসলীলা চালাতে চালাতে কোন আবাসস্থল অভিমুখে আসতে থাকে, তখন এর প্রথম স্বীকারে পরিণত হতে যাওয়া ঘোষ্ঠির সতর্কীকরণ আহবানে কেবল বুদ্ধিমানেরাই একযোগে সাড়া দিতে রাজি হয়; কিন্তু দুখের বিষয় জনবসতির বেশিরভাগই থাকে হেলায় মত্ত! তাই, আগ্রাসী রাক্ষসের প্রলয়ের স্বীকার ফিলিস্তিনের ডাকে পারস্য বিপদ আচ করতে পেরে সেও এই আগ্রাসনের ফ্রন্ট লাইনে পরে গেছে, সাম্প্রতিক বয়ানে তুরস্ককেও সাবধানী বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে, তবে আফসোস! উপদ্বীপীয় অঞ্চল যেন আমুদে ঘোমে, বুঝি তারা চিন্তা করতেছে- শান্তিপ্রিয় মোরা শান্তির খোজে বিজিতের সেবক হব! তাই, ভূমি রক্ষায় রাক্ষসের বিরুদ্ধে একতা আর হল না। ২/১ টা ঢিল সেই সুদূর পারস্য থেকে আসা, তার প্রতিক্রিয়ায় তাই রাক্ষসের লক্ষ্যভ্রষ্ট করা আর হল না! সে ২/১ টা জখমে একটু মাথা তুলে তর্জন-গর্জন করে দূরের শ্ত্রুকে তটস্থ করে দিয়ে আবার আপন গতিতে অবিচল, লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে স্বীকার হাতছড়া! সে একটার পর একটা তার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে, অবিরত। অর্থশক্তি আর সামরিক শক্তি যাই বলি, ২ দিন বাদেই পুষিয়ে নেওয়া যায়; কিন্তু শত বছরের আল্লাহর রহমত শত বছরের আগে কিন্তু পূরণ হয় না! তাই, ইয়াহিয়া সিনওয়ারের (র.) মতো নেতাকে হারানো হাজারটা তেলক্ষেত্র যেন একমুঠো বালি! শুধু কি ইয়াহিয়া সিনওয়ার? শহিদ ইসমাঈল হানিয়া অতঃপর একে একে মর্তলোকে চলে গেলেন আরও কতো বীর! খোমেনির স্থলাভিষিক্ত হতে চলা প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা প্রেসিডেন্ট রাইসি থেকে নিয়ে নাসরুল্লাহ, এই শতাব্দির সফলতম পারসিয়ান পররাষ্ট্র কূটনীতিক মন্ত্রী আব্দোল্লাহিয়ান বা এই দূরদেশে বসে আমাদের কাছে অপরিচিত কত বড় বড় রেজিস্টেন্স যারা নিজেরাই ছিলেন এক একটি শক্তিশালি বুহ্য, যাদের উপর ভর করেই দাড়িয়ে আছে আজকের এই রেজিস্টেন্স! আচ্ছা, বলুন তো, আপনার জানা এই যুগের কোন কোন নেতা আর অবশিষ্ট আছেন, যাদের আপনি এই প্রজন্মে ঐ ভূমে প্রচলিত যুদ্ধে রেজিস্টিভ নেতা হিসেবে জানতেন? বাঙ্গালি ইতিহাসে আমরা বুদ্ধিজীবী দিবস নামক একটি দিন দেখতে পাই, যা সেকুলার দর্শন তৈরি করেছে এই দিনটি দিয়ে একটি ঘটনাকে তাৎপর্যপূর্ণ করে রাখতে, আমরা এই ধরনের দিবসের বিরোধী নিঃসন্দেহে; কিন্তু এই তাৎপর্যের গুরুত্ব যে কত অসীম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই ছকই কষেছে শয়তানের দোসর জায়নরা। তারা একে একে শেষ করে দিয়েছে- পারমানবিক প্রথম সারির কুশলীদের, কাশেম সোলাইমানিদের (ইজরায়েলের সফলতা সাপেক্ষে) মতো কমান্ডার যাদের হাতে জাতির ভাগ্য বদলে যায়(রূপক)। প্রসঙ্গত, উল্লেখ না করলেই নয়- অ্যামেরিকার মুখে, এখন থেকে আমরা সরাসরি কোন যুদ্ধে সৈন্য নামাবো না, ঘরে বসেই আমাদের শ্ত্রুদের শেষ করব নামায় শাইখ আইমান(র.) নাকি (হাফি.) নিয়ে আমাদের অনিশ্চয়তা! সুতরাং, তারা এক এক করে আমাদের নেতাদের শেষ করে যাচ্ছে, তাদের রেজিস্টেন্সের নেতাদের দুনিয়ার জমিন থেকে মিটিয়ে দিচ্ছে। আমরা কি হিসেব করে বলে দিতে পারি, এইসব ক্ষতি আমাদের কত যুগ নাকি কত শতাব্দি পিছিয়ে দিচ্ছে? আচ্ছা, আয়াতুল্লাহ খোমেনি ছাড়া এই প্রজন্মের আর কোন নেতা কি আপনাদের মাথায় আছে যিনি সর্বসাধারণ মুসলিমদের পরিচিত নেতা? সুতরাং, খোমেনির গুপ্তহত্যার পর আপনি কি এই রেজিস্টেন্স আর কোন কার্যত শক্তিশালি রেজিস্টেন্স থাকবে বলে মনে করেন? খোমেনি সাহেব রাজি থাকলেই আজ পারস্যের নেতা হতেন আহমেদিনেজাদ, যার চোখে তাকিয়ে পারস্যবাসি স্বপ্ন দেখতে পারত! কিন্তু আজকের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের মতো মধ্যপন্থি নেতা কি খোমেনির শুন্যতায় পারস্যের স্বীকৃতির নিরাপত্তায় নিজেকে যুদ্ধ থেকে ঘুটিয়ে নেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আপনি দেখেন না। কাজেই, ইজরায়েল তার পরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হচ্ছে, আশপাশের জোয়ারের টানে সাড়া দিলে তো লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে, তাই রাক্ষস চলেছে তার লোভাতুর চোখের আপন গতিতে(ইনশাল্লাহ, অতি লোভে তাতি নষ্টের প্রবাদের বাস্তবতা আল্লাহ অবশ্যই আমাদের অতি শিগ্রই দেখাবেন, যখন আমরা শরত পূরণ করব)।
শ্ত্রুকে পরাজিত করতে গেলে তাকে মিসগাইড করা যুদ্ধকৌশলের সর্বকালের স্বীকৃত সফলতম নীতি, তেমনি যুদ্ধক্ষেত্রের অপেক্ষাকৃত কৌশলগত ফিল্ড নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে শ্ত্রুর দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করা অপরিহার্য। ইজরায়েল তাই করল! শত চেষ্টার পরেও যখন সে গাজার মতো ছোট্ট অঞ্চল দখলে বারংবার ব্যর্থ হল, বিশ্ব জনমত এমনকি খোদ তার পরিপোষক স্বয়ং ইউরোপের জনমতই বিরোধিতায় ফেটে পড়ল, তখন তার চির আকাঙ্ক্ষিত এই স্বপ্ন বিজয়ে সে এই কৌশলই প্রয়োগ করল। বিশ্বমঞ্চের সর্বজনের দৃষ্টি এখন উদ্বিগ্ন, ইজরায়েল ইরানে হামলা করল বলে- কি হবে বিশ্বের! আর সাথে লেবাননে আগ্রাসন, বিশ্বমঞ্চ খুবি উদ্বিগ্ন- রেড লাইন! খুবি বিস্ময়কর! তাও আবার ইউরোপের মুখে, দরদ যেন উপচে পড়তেছে, আর অতি ভক্তি চোরের লক্ষণে তাই অনুমান করতেই হয়, এটা তাদের কৌশল- বিশ্বমঞ্চের দৃষ্টি গাজা থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া। আর এই সুযোগেই ইজরায়েল সিনওয়ার (র.) এর রেজিস্টেন্স মীমাংসা করে দিল, আর গাজাকে ভাগ ভাগ করে ধ্বংস করতে ব্রত- যার উদাহরণ এখনকার উত্তর গাজার পরিস্থিতি! কাজেই যা আছে তা নিয়ে চেষ্টা করাই তো বীরের প্রতীক তবে সামান্য ২/১ টা ক্ষত তো তাদের মহান উদ্দেশ্যের সামনে নিছক ই কাঠির খোঁচা! তাই, ২/১ টা খোঁ চা র লো ক দে খা নো আ স্ফা ল ন ন য়, চা ই স ত্য-মি থ্যা র এ ই যু দ্ধে কো ন র ক ম ছল চা তু রী তা না হোক, বন্ধ হোক যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার প্রদর্শনী। তবে কেও যখন কিছুই করে না, তখন এই যৎসামান্যতেই আ মা দে র তু ষ্ট থা ক তে হয় । জা লি ম রয়ে যা য় ব হা ল ত বি য় তে, আ র মঞ্চস্থ খে লা র প্র দর্শ নী তে ই আ মাদের প্রতিশোধের আগুন নিভুতে হয়। কত যে খেলা! তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে আসবে, নির্বাচনী কৌশল, প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের খেলার উদ্ভূত মৌসুম!
আসন্ন মার্কিন নির্বাচনঃ ইরান হামলার জন্য খুবি পারফেক্ট একটা টাইমলাইন নির্ধারণ করেছে। ঠিক এক মাস পরেই অ্যামেরিকার নির্বাচন! তুলনামুলকভাবে কামালা লিবারেলদের ভোট অউন করে, কাজেই ইজরায়েলের প্রতিক্রিয়া থেকে অন্তত মুসলিম ও এজেন্ডার সাথে জড়িত নয় এমন লিবারেলদের ভোট বাক্সে নীরবে বড় পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে। আর অর্থনৈতিক অস্থিরতার চাপ, আর সেই হামলায় বিশ্বরাজনিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে যেতে চলার ব্যর্থতার দায় নিয়ে কামালার পক্ষে জয়লাভ প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। কাজেই, ইজরায়েল প্রকাশ্যে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ থেকে মুক্ত থাকতে নির্বাচনের আগে যে হামলা হচ্ছে না, তা নিশ্চিত! কিন্তু, ইজরায়েলের ও তো নির্বাচন আসন্ন, আর সেই নির্বাচনে জয় লাভে অবশ্যই একটা প্রতিক্রিয়া অত্যবশ্যকিয় ছিল, যা না করার ধারাবাহিকতা নেতানিয়াহু প্রশাসনে পরাজয় এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কাজেই, মার্কিন নির্বাচনের স্বার্থে এবং নেতানিয়াহুকে নিরাপদ রাখার কৌশলে ইরানে হামলার তথ্য ফাঁস করে দেওয়া একটা পরিকল্পিত বিষয় হিসেবেই দৃষ্টিগোচর হয়। নেতানিয়াহু পাল্টা হামলা কেন করা হল না জনমনের প্রশ্নে, সময়ের সেই অজুহাত দিতে পারবে; আর এরই সাথে ২ কুলই রক্ষা পেল! তবে, পরিকল্পিত নাই বা হোক, কিন্তু এটা সুনিশ্চিতভাবেই প্রতিক্রিয়া দীর্ঘ একটা সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেল, আর সময়ক্ষেপণ মানেই এখানে আগুন প্রশমিত হয়ে যাওয়া। তবে যেহেতু যুদ্ধটা ধারাবাহিক, তাই নতুন ঘটনা পুরনোকে ছেয়ে ফেলার আগ পর্যন্ত তা প্রাসঙ্গিক ই থাকবে। আর তাই, ইজরায়েল থেকেও অকল্পনীয় পাল্টা হামলার হুংকার আসতেই থাকবে।আর জায়নবাদি উভয়পক্ষের মাঝে নিজের নিরপেক্ষ ধারা বজায় রাখার স্বার্থে একটা আইওয়াস ইজরায়েলী প্রতিক্রিয়া তো স্বাভাবিক! আবার একই সাথে ইরানের দিক থেকে মার্কিন স্বার্থের উপর কোন আঘাত না আসার নিশ্চয়তাও। প্রশ্ন হল- ইরান কেন মার্কিনীদের সেই সুবিধা দিবে, এর জবাব আবারও মার্কিন নির্বাচন, আর সেই নির্বাচনে নিঃসন্দেহেই ট্রাম্প ইরানের জন্য প্রতিকুল! সুতরাং, পাল্টা হামলা হবে না এবং হতে পারে ইরানীয় অক্ষকে ঠান্ডা রাখার কৌশল হিসেবেও হামলার গোপন নথি প্রকাশ হয়ে থাকতে পারে। সে যাইহোক, স্তব্ধ এই যুদ্ধ নতুন হালে নতুন পরিকল্পনায়, নতুন উদ্যমে সজ্জিত হবে, অ্যামেরিকার নির্বাচনের পর। স্পষ্টতই, জায়নবাদিদের পরাশক্তি হতে হলে, অ্যামেরিকাকে ধংস্তুপ হতে হবে, যেন পাওয়ার ভ্যাকুয়াম তো বটেই সাথে এক্সিস্টিং পশ্চিমের নেতৃত্বেটাও smoothly গ্রেটার ইজরায়েলের কাছে ট্রান্সফারড হবে। অ্যামেরিকাকে এমন ধ্বংসের দিকে নিতে হলে নিশ্চয় ট্রাম্পের মতো প্রেসিডেন্ট লাগবে। আবার যুদ্ধ তো হঠাৎ করে লেগে যাওয়ার বিষয় নয়, অনেক প্ল্যান ও হিসাবনিকাশ করে বাধাতে পারলে লাভজনক ইনভেস্ট, আর বাধানোও সময়সাপেক্ষ, কেননা যারা যুদ্ধ লাগবে তাদেরকেও ফুয়েলিং এন্ড ডাইভারট করে যুদ্ধে আনতে হবে। এই কাজগুলাতে ট্রাম্প ভালো মানায় না, তাই নারী মাত্রেই অ্যামেরিকাতে দুর্বল প্রতিপক্ষ হলেও একই সাথে নারী মাত্রেই নিজেকে যত শক্তিশালি দেখানোর চেষ্টা করুক তাদের উপর অনেক কিছুই কৌশলে চাপিয়ে দেওয়া যায় যা তারা বুঝেও না (বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে) বলে কামালাকে কামনা করাই যায় পরবর্তী অ্যামেরিকা হিসেবে। আর কামালার আগমন নির্ধারণ করবে এটা অ্যামেরিকার পতনলগ্ন নয়, চারদিকে আগুন লাগতে সময় আরও বাকি আছে। যদিও সম্ভাব্য সব স্পটে কম বা বেশি বিস্ফোরণের রসদ যথেষ্টই সরবরাহ করা হয়ে গেছে, তবে প্ল্যানমাফিক সবাইকে নিয়ে আসা এবং একটা একটা করে নিয়ন্ত্রিত কাষ্ঠদাহে সময়ের ছন্দ মিলাতে হবে, যা পশ্চিমের স্বার্থ রক্ষা করে চলবে। আর যদি ট্রাম্প বিজয়ী হয়, তাহলে যুদ্ধ বিশ্বের দোরগোড়ায় দাড়িয়ে, চারদিকে আগুন লাগলো বলে। সৌদ প্রিন্স ট্রাম্পের শখ্যতায় ভেজায় খুশি হয়ে প্রবাহমান ইরান-উপদ্বীপ মিত্রতাও নিমেষেই জমে বরফ হয়ে যাবে। কে জানে আরও কয়টা কতো ধরনের একরডস হয়! মধ্যপ্রাচ্যের যে অবস্থা, ফুল স্কেল যুদ্ধের জন্য আরও অনেক সময় অপেক্ষা করাও কঠিন, আর এটাই যদি সত্য হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে ট্রাম্প আসতেছে। এখন আগ্রহভরে দেখার বিষয়, ইউরোপের অভ্যন্তরে পশ্চিমি নেতৃত্বই থাকে নাকি জায়নবাদের কাছে নতি স্বীকার করে। তবে যেই আসুক, মধ্যপ্রাচ্য প্রহর গুনতেছে বিস্ফোরণের!
ইউরোপিয়ান নেতৃত্বের আইওয়াস এজেন্ডাঃ
শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে, ইতালিসহ আরও কিছু সেকেন্ড স্টেজ ইউরোপীয় নেতৃত্ব ইজরায়েলের সমালোচনা করে আসতেছে। লেবাননে ফরাসি স্বার্থে ফরাসি প্রেসিডেন্টও হঠাৎ উচ্চকণ্ঠ হয়ে উঠেছে। ব্রিটিশ দপ্তরও তাদের উষ্মা প্রকাশ করেছে; অথচ, অস্ত্র সরবরাহ যে প্রবাহমান থাকবে তাও নিশ্চিত করেছে। এসব আসলে কি ইঙ্গিত দেয়? ইউরোপ কি ভেঙ্গে যাচ্ছে নাকি এতো দিনে তাদের ইতিহাস একপাশে ঠেলে তারা তাদের মানবতার মুখোশ ছুড়ে ফেলে কেও কেও সত্যিকার মানবতাবাদী সুপুরুষ হয়ে যাচ্ছে? আসলে এমন কিছুই না। এটা একটা কৌশল, একটা টিম হিসেবে নিজেরা নিজেদের গোপনে হওয়া বণ্টনকৃত দায়িত্ব পালন করতেছে। ফ্রান্সের উদ্বেগ লেবাননে তাদের স্বার্থে, যা সুনিশ্চিত হয়ে গেলে তারাও চুপ মেরে যাবে। এই প্রসঙ্গে হাজারটা উদাহরণ টানা যাবে, তবে মধ্যপ্রাচ্যের অধুনার কালের সূচনালগ্নে জর্ডানের আব্দুল্লাহ I সিরিয়া অভিমুখী মিশনে ব্রিটিশ রাজপক্ষ থেকে মিশরে ডেকে নিয়ে তাকে ব্রিটিশ বন্ধু ফ্রান্সের স্বার্থ ক্ষুণ্ণে না জড়ানোর নির্দেশনার অনুরূপে ফ্রান্সের স্বার্থ লেবাননে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলেই আজ তাদের যত অনুযোগ, খুব দ্রুতই তাদের স্বার্থের একটা স্থিতিশীল সমাধান হয়ে যাবে। আর ফ্রান্স আমাদের পক্ষবাদি একটা শক্তি হিসেবে কৌশলগত দিক থেকেও উভে যাবে। বাকি রাষ্ট্ররাও তাদের ইউরোপীয় নৈতিক বৈধতায় কৌশলী পন্থা অবলম্বন করতেছে, যখনই টারন করার সুযোগ আসবে, তখনই তারা ইউরোপীয় জনমত ঘোরানোর কারিঘর হয়ে উঠবে। ইজরায়েল বিরোধী ইউরোপীয় জনগণের কাছে এসব নেতারাই একমাত্র আকর্ষণ, কাজেই তারা যখন নৈতিকতার এক ন্যরেটিভে বিরুদ্ধ অবস্থানে চলে যাবে, জনমতও ব্যপকভাবে উল্টে যাবে, প্রভাবিত হবে, বিপুলসংখ্যক ধোঁয়াশায় পরে যাবে। সুতরাং, তাদের ইউরোপীয় জনমতকে বিলং করে লিড & ওয়াস করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলাই যায়। আর জাতিসংঘের বসনিয়ার ভূমিকা কি আমরা ভুলে গেছি! প্রবল আশংকা জাতিসংঘ এই আচরণের জন্যই নিজেকে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করে তুলতেছে কি না…
আর এমন গেম হলে, ইতালির মতো যে ইউরোপীয়রা ইজরায়েলী বর্বরতার সমালোচনায় সরব ছিল, তারা এই গেমের সিগ্নিফিক্যান্ট স্টেকহোল্ডার হবে। হয়তো একদিন দেখা যাবে, তারা বিশ্বকে বলবে ইজরায়েলের আগ্রাসন মোকাবিলায় আমরা মুসলিমদের পাশে আছি বলে তাদের সেনা মোতায়েন করল, মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষায়! আমরা মানহাজিক্ষেতরা তো বুঝি শিয়ালের কাছে মুরগি বাগির তত্ত্ব; কিন্তু আমাদের মুল ধারার মুসলিম ও তাদের নেতারা কি সেটা বুঝে? শত্রুর নাড়িতে নিজের স্টেক, এর চেয়ে সফলতম কৌশল আর কয়টা আছে? গতকাল নিউজ আসল, অ্যামেরিকার আহবানে ইতালি লেবাননে তাদের ট্রুপ্স নামাতে যাচ্ছে, লেবাননের প্রতিরক্ষায়............…
এই যে ইউরোপের না চাওয়া সত্ত্বেও ইজরায়েলী আগ্রাসনের ভাইভস, অথচ হিলারি থেকে শলৎজ, ব্রিটেনের আগাগোড়া থেকে মার্কিন ২ প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় চলছে কে কার চেয়ে বেশি জায়নবাদি তার প্রতিযোগিতা; তাও কি মনে হওয়ার কারণ আছে পশ্চিম রাজি তো নয়ই বরং বিরোধী! খেয়াল করলেই দেখতে পাই, কিভাবে একের পর এক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে শয়তানের বন্ধুবর কুচক্রীরা।
কাজেই পর্যবেক্ষণ শেষে এই কি মনে হয় না, তাহলে কি ইজরায়েল-ফিলিস্তিন এই যুদ্ধ প্রিপ্ল্যান্ড প্রজেক্টের এক্সিকিউশন ছিল! কি তাহলে সেই প্রজেক্ট আর এই কালঝড়ের শেষ ই বা কোথায়............? উল্লেখ্য, আমাদের হামাস ভাইয়েদের পক্ষ থেকে সামরিক মুখপাত্র আবু উবায়দা কিন্তু প্রথমেই উনাদের এই তাৎক্ষনিক সর্বাত্মক যুদ্ধের সিদ্ধান্তে বর্ণনা করেছিলেন- জায়নবাদিদের জেরিজালেম দখলের চূড়ান্ত কুচক্র রুখতে এই লড়াই কতটা অপরিহার্য ছিল! এটা কি কেবল বাইতুল মুক্কাদাসের ইতিহাস পরিবর্তনের নেপথ্য ছিল নাকি ছিল গ্রেটার ইজরায়েল? যদি তাই হয় তাহলে তা হবে শত বছরের জায়নদের স্বপ্ন পূরণের প্রচেষ্টার চূড়ান্ত পর্যায়ের অভিলক্ষ্য। যা শুরু হয়েছিল, ইহুদিদের এই অঞ্চলে অভিবাসনেরও আগে, গোড়াপত্তন সে তো খেলাফতে উসমানিয়ার পতনেরও বহু আগে, স্বার্থক নামকরণে নাম হবে যার গ্রেটার ইজরায়েল প্রজেক্ট- ইহুদি জাতির বিশ্বশাসনের স্বপ্ন!
ইরান প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হল, প্রায় অর্ধমাস......। ইজরায়েল অনেক লম্ফ জম্ফ করল; কিন্তু শেষে কি তাহলে তারা ভয় পেয়ে গেল, নাকি সত্যিই তারা নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকার চর্চা করতে ব্রত, তাহলে কি এই যুদ্ধ ইজরায়েল কর্তৃক আরবের উপর চাপিয়ে দেওয়া কোন যুদ্ধ নয়! প্রথমে তারা সভ্যতার জন্য অনিরাপদ মাত্রেই মুসলিম ভূমিতে পারমানবিক প্রকল্প ধ্বংসের ফন্দি আঁটল, কূটনীতিতে ব্যর্থ হয়ে তেলক্ষেত্রে হামলার প্রকল্প সামনে আনল! বলতেই হবে ইরান খুব ইন্টেলেকচুয়াল একটা কূটনৈতিক কৌশলী চাপ সৃষ্টি করতে সমর্থ হল! কিন্তু তাতেই কি চালে ইজরায়েলের পরাজয় নিশ্চিত হল? ইরান হামলা করে কি কি সফলতা অর্জন করল; আর ইজরায়েল হামলা না করতে পেরে কি কি ব্যর্থতা অর্জন করল, যা বলে দিবে তারা কতটুকু পারে নাই, আর কতটুকু বিরত ছিল। আর এটা বুঝার জন্য আমাদের বর্তমানে তাদের কর্মযজ্ঞ এবং ফিউচারের তাদের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনায় আনতে হবে।
হায়েনার থাবাঃ স্বীকার পানে ছুটে চলা হায়েনা পরিপার্শ্বের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাড়া দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে না। স্বীকারী প্রাণী মাত্রেই এই স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আর এর প্রতিপাদ্য বোঝার জন্য পিপীলিকা ও ঘুঘুর গল্পের সারমর্মের দিকে চোখ বুলালেই যথেষ্ট। আবার, ভয়ঙ্কর এক রাক্ষস শয়তান যখন ধ্বংসলীলা চালাতে চালাতে কোন আবাসস্থল অভিমুখে আসতে থাকে, তখন এর প্রথম স্বীকারে পরিণত হতে যাওয়া ঘোষ্ঠির সতর্কীকরণ আহবানে কেবল বুদ্ধিমানেরাই একযোগে সাড়া দিতে রাজি হয়; কিন্তু দুখের বিষয় জনবসতির বেশিরভাগই থাকে হেলায় মত্ত! তাই, আগ্রাসী রাক্ষসের প্রলয়ের স্বীকার ফিলিস্তিনের ডাকে পারস্য বিপদ আচ করতে পেরে সেও এই আগ্রাসনের ফ্রন্ট লাইনে পরে গেছে, সাম্প্রতিক বয়ানে তুরস্ককেও সাবধানী বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে, তবে আফসোস! উপদ্বীপীয় অঞ্চল যেন আমুদে ঘোমে, বুঝি তারা চিন্তা করতেছে- শান্তিপ্রিয় মোরা শান্তির খোজে বিজিতের সেবক হব! তাই, ভূমি রক্ষায় রাক্ষসের বিরুদ্ধে একতা আর হল না। ২/১ টা ঢিল সেই সুদূর পারস্য থেকে আসা, তার প্রতিক্রিয়ায় তাই রাক্ষসের লক্ষ্যভ্রষ্ট করা আর হল না! সে ২/১ টা জখমে একটু মাথা তুলে তর্জন-গর্জন করে দূরের শ্ত্রুকে তটস্থ করে দিয়ে আবার আপন গতিতে অবিচল, লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে স্বীকার হাতছড়া! সে একটার পর একটা তার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে, অবিরত। অর্থশক্তি আর সামরিক শক্তি যাই বলি, ২ দিন বাদেই পুষিয়ে নেওয়া যায়; কিন্তু শত বছরের আল্লাহর রহমত শত বছরের আগে কিন্তু পূরণ হয় না! তাই, ইয়াহিয়া সিনওয়ারের (র.) মতো নেতাকে হারানো হাজারটা তেলক্ষেত্র যেন একমুঠো বালি! শুধু কি ইয়াহিয়া সিনওয়ার? শহিদ ইসমাঈল হানিয়া অতঃপর একে একে মর্তলোকে চলে গেলেন আরও কতো বীর! খোমেনির স্থলাভিষিক্ত হতে চলা প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা প্রেসিডেন্ট রাইসি থেকে নিয়ে নাসরুল্লাহ, এই শতাব্দির সফলতম পারসিয়ান পররাষ্ট্র কূটনীতিক মন্ত্রী আব্দোল্লাহিয়ান বা এই দূরদেশে বসে আমাদের কাছে অপরিচিত কত বড় বড় রেজিস্টেন্স যারা নিজেরাই ছিলেন এক একটি শক্তিশালি বুহ্য, যাদের উপর ভর করেই দাড়িয়ে আছে আজকের এই রেজিস্টেন্স! আচ্ছা, বলুন তো, আপনার জানা এই যুগের কোন কোন নেতা আর অবশিষ্ট আছেন, যাদের আপনি এই প্রজন্মে ঐ ভূমে প্রচলিত যুদ্ধে রেজিস্টিভ নেতা হিসেবে জানতেন? বাঙ্গালি ইতিহাসে আমরা বুদ্ধিজীবী দিবস নামক একটি দিন দেখতে পাই, যা সেকুলার দর্শন তৈরি করেছে এই দিনটি দিয়ে একটি ঘটনাকে তাৎপর্যপূর্ণ করে রাখতে, আমরা এই ধরনের দিবসের বিরোধী নিঃসন্দেহে; কিন্তু এই তাৎপর্যের গুরুত্ব যে কত অসীম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই ছকই কষেছে শয়তানের দোসর জায়নরা। তারা একে একে শেষ করে দিয়েছে- পারমানবিক প্রথম সারির কুশলীদের, কাশেম সোলাইমানিদের (ইজরায়েলের সফলতা সাপেক্ষে) মতো কমান্ডার যাদের হাতে জাতির ভাগ্য বদলে যায়(রূপক)। প্রসঙ্গত, উল্লেখ না করলেই নয়- অ্যামেরিকার মুখে, এখন থেকে আমরা সরাসরি কোন যুদ্ধে সৈন্য নামাবো না, ঘরে বসেই আমাদের শ্ত্রুদের শেষ করব নামায় শাইখ আইমান(র.) নাকি (হাফি.) নিয়ে আমাদের অনিশ্চয়তা! সুতরাং, তারা এক এক করে আমাদের নেতাদের শেষ করে যাচ্ছে, তাদের রেজিস্টেন্সের নেতাদের দুনিয়ার জমিন থেকে মিটিয়ে দিচ্ছে। আমরা কি হিসেব করে বলে দিতে পারি, এইসব ক্ষতি আমাদের কত যুগ নাকি কত শতাব্দি পিছিয়ে দিচ্ছে? আচ্ছা, আয়াতুল্লাহ খোমেনি ছাড়া এই প্রজন্মের আর কোন নেতা কি আপনাদের মাথায় আছে যিনি সর্বসাধারণ মুসলিমদের পরিচিত নেতা? সুতরাং, খোমেনির গুপ্তহত্যার পর আপনি কি এই রেজিস্টেন্স আর কোন কার্যত শক্তিশালি রেজিস্টেন্স থাকবে বলে মনে করেন? খোমেনি সাহেব রাজি থাকলেই আজ পারস্যের নেতা হতেন আহমেদিনেজাদ, যার চোখে তাকিয়ে পারস্যবাসি স্বপ্ন দেখতে পারত! কিন্তু আজকের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের মতো মধ্যপন্থি নেতা কি খোমেনির শুন্যতায় পারস্যের স্বীকৃতির নিরাপত্তায় নিজেকে যুদ্ধ থেকে ঘুটিয়ে নেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আপনি দেখেন না। কাজেই, ইজরায়েল তার পরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হচ্ছে, আশপাশের জোয়ারের টানে সাড়া দিলে তো লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে, তাই রাক্ষস চলেছে তার লোভাতুর চোখের আপন গতিতে(ইনশাল্লাহ, অতি লোভে তাতি নষ্টের প্রবাদের বাস্তবতা আল্লাহ অবশ্যই আমাদের অতি শিগ্রই দেখাবেন, যখন আমরা শরত পূরণ করব)।
শ্ত্রুকে পরাজিত করতে গেলে তাকে মিসগাইড করা যুদ্ধকৌশলের সর্বকালের স্বীকৃত সফলতম নীতি, তেমনি যুদ্ধক্ষেত্রের অপেক্ষাকৃত কৌশলগত ফিল্ড নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে শ্ত্রুর দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করা অপরিহার্য। ইজরায়েল তাই করল! শত চেষ্টার পরেও যখন সে গাজার মতো ছোট্ট অঞ্চল দখলে বারংবার ব্যর্থ হল, বিশ্ব জনমত এমনকি খোদ তার পরিপোষক স্বয়ং ইউরোপের জনমতই বিরোধিতায় ফেটে পড়ল, তখন তার চির আকাঙ্ক্ষিত এই স্বপ্ন বিজয়ে সে এই কৌশলই প্রয়োগ করল। বিশ্বমঞ্চের সর্বজনের দৃষ্টি এখন উদ্বিগ্ন, ইজরায়েল ইরানে হামলা করল বলে- কি হবে বিশ্বের! আর সাথে লেবাননে আগ্রাসন, বিশ্বমঞ্চ খুবি উদ্বিগ্ন- রেড লাইন! খুবি বিস্ময়কর! তাও আবার ইউরোপের মুখে, দরদ যেন উপচে পড়তেছে, আর অতি ভক্তি চোরের লক্ষণে তাই অনুমান করতেই হয়, এটা তাদের কৌশল- বিশ্বমঞ্চের দৃষ্টি গাজা থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া। আর এই সুযোগেই ইজরায়েল সিনওয়ার (র.) এর রেজিস্টেন্স মীমাংসা করে দিল, আর গাজাকে ভাগ ভাগ করে ধ্বংস করতে ব্রত- যার উদাহরণ এখনকার উত্তর গাজার পরিস্থিতি! কাজেই যা আছে তা নিয়ে চেষ্টা করাই তো বীরের প্রতীক তবে সামান্য ২/১ টা ক্ষত তো তাদের মহান উদ্দেশ্যের সামনে নিছক ই কাঠির খোঁচা! তাই, ২/১ টা খোঁ চা র লো ক দে খা নো আ স্ফা ল ন ন য়, চা ই স ত্য-মি থ্যা র এ ই যু দ্ধে কো ন র ক ম ছল চা তু রী তা না হোক, বন্ধ হোক যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার প্রদর্শনী। তবে কেও যখন কিছুই করে না, তখন এই যৎসামান্যতেই আ মা দে র তু ষ্ট থা ক তে হয় । জা লি ম রয়ে যা য় ব হা ল ত বি য় তে, আ র মঞ্চস্থ খে লা র প্র দর্শ নী তে ই আ মাদের প্রতিশোধের আগুন নিভুতে হয়। কত যে খেলা! তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে আসবে, নির্বাচনী কৌশল, প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের খেলার উদ্ভূত মৌসুম!
আসন্ন মার্কিন নির্বাচনঃ ইরান হামলার জন্য খুবি পারফেক্ট একটা টাইমলাইন নির্ধারণ করেছে। ঠিক এক মাস পরেই অ্যামেরিকার নির্বাচন! তুলনামুলকভাবে কামালা লিবারেলদের ভোট অউন করে, কাজেই ইজরায়েলের প্রতিক্রিয়া থেকে অন্তত মুসলিম ও এজেন্ডার সাথে জড়িত নয় এমন লিবারেলদের ভোট বাক্সে নীরবে বড় পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে। আর অর্থনৈতিক অস্থিরতার চাপ, আর সেই হামলায় বিশ্বরাজনিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে যেতে চলার ব্যর্থতার দায় নিয়ে কামালার পক্ষে জয়লাভ প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। কাজেই, ইজরায়েল প্রকাশ্যে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ থেকে মুক্ত থাকতে নির্বাচনের আগে যে হামলা হচ্ছে না, তা নিশ্চিত! কিন্তু, ইজরায়েলের ও তো নির্বাচন আসন্ন, আর সেই নির্বাচনে জয় লাভে অবশ্যই একটা প্রতিক্রিয়া অত্যবশ্যকিয় ছিল, যা না করার ধারাবাহিকতা নেতানিয়াহু প্রশাসনে পরাজয় এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কাজেই, মার্কিন নির্বাচনের স্বার্থে এবং নেতানিয়াহুকে নিরাপদ রাখার কৌশলে ইরানে হামলার তথ্য ফাঁস করে দেওয়া একটা পরিকল্পিত বিষয় হিসেবেই দৃষ্টিগোচর হয়। নেতানিয়াহু পাল্টা হামলা কেন করা হল না জনমনের প্রশ্নে, সময়ের সেই অজুহাত দিতে পারবে; আর এরই সাথে ২ কুলই রক্ষা পেল! তবে, পরিকল্পিত নাই বা হোক, কিন্তু এটা সুনিশ্চিতভাবেই প্রতিক্রিয়া দীর্ঘ একটা সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গেল, আর সময়ক্ষেপণ মানেই এখানে আগুন প্রশমিত হয়ে যাওয়া। তবে যেহেতু যুদ্ধটা ধারাবাহিক, তাই নতুন ঘটনা পুরনোকে ছেয়ে ফেলার আগ পর্যন্ত তা প্রাসঙ্গিক ই থাকবে। আর তাই, ইজরায়েল থেকেও অকল্পনীয় পাল্টা হামলার হুংকার আসতেই থাকবে।আর জায়নবাদি উভয়পক্ষের মাঝে নিজের নিরপেক্ষ ধারা বজায় রাখার স্বার্থে একটা আইওয়াস ইজরায়েলী প্রতিক্রিয়া তো স্বাভাবিক! আবার একই সাথে ইরানের দিক থেকে মার্কিন স্বার্থের উপর কোন আঘাত না আসার নিশ্চয়তাও। প্রশ্ন হল- ইরান কেন মার্কিনীদের সেই সুবিধা দিবে, এর জবাব আবারও মার্কিন নির্বাচন, আর সেই নির্বাচনে নিঃসন্দেহেই ট্রাম্প ইরানের জন্য প্রতিকুল! সুতরাং, পাল্টা হামলা হবে না এবং হতে পারে ইরানীয় অক্ষকে ঠান্ডা রাখার কৌশল হিসেবেও হামলার গোপন নথি প্রকাশ হয়ে থাকতে পারে। সে যাইহোক, স্তব্ধ এই যুদ্ধ নতুন হালে নতুন পরিকল্পনায়, নতুন উদ্যমে সজ্জিত হবে, অ্যামেরিকার নির্বাচনের পর। স্পষ্টতই, জায়নবাদিদের পরাশক্তি হতে হলে, অ্যামেরিকাকে ধংস্তুপ হতে হবে, যেন পাওয়ার ভ্যাকুয়াম তো বটেই সাথে এক্সিস্টিং পশ্চিমের নেতৃত্বেটাও smoothly গ্রেটার ইজরায়েলের কাছে ট্রান্সফারড হবে। অ্যামেরিকাকে এমন ধ্বংসের দিকে নিতে হলে নিশ্চয় ট্রাম্পের মতো প্রেসিডেন্ট লাগবে। আবার যুদ্ধ তো হঠাৎ করে লেগে যাওয়ার বিষয় নয়, অনেক প্ল্যান ও হিসাবনিকাশ করে বাধাতে পারলে লাভজনক ইনভেস্ট, আর বাধানোও সময়সাপেক্ষ, কেননা যারা যুদ্ধ লাগবে তাদেরকেও ফুয়েলিং এন্ড ডাইভারট করে যুদ্ধে আনতে হবে। এই কাজগুলাতে ট্রাম্প ভালো মানায় না, তাই নারী মাত্রেই অ্যামেরিকাতে দুর্বল প্রতিপক্ষ হলেও একই সাথে নারী মাত্রেই নিজেকে যত শক্তিশালি দেখানোর চেষ্টা করুক তাদের উপর অনেক কিছুই কৌশলে চাপিয়ে দেওয়া যায় যা তারা বুঝেও না (বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে) বলে কামালাকে কামনা করাই যায় পরবর্তী অ্যামেরিকা হিসেবে। আর কামালার আগমন নির্ধারণ করবে এটা অ্যামেরিকার পতনলগ্ন নয়, চারদিকে আগুন লাগতে সময় আরও বাকি আছে। যদিও সম্ভাব্য সব স্পটে কম বা বেশি বিস্ফোরণের রসদ যথেষ্টই সরবরাহ করা হয়ে গেছে, তবে প্ল্যানমাফিক সবাইকে নিয়ে আসা এবং একটা একটা করে নিয়ন্ত্রিত কাষ্ঠদাহে সময়ের ছন্দ মিলাতে হবে, যা পশ্চিমের স্বার্থ রক্ষা করে চলবে। আর যদি ট্রাম্প বিজয়ী হয়, তাহলে যুদ্ধ বিশ্বের দোরগোড়ায় দাড়িয়ে, চারদিকে আগুন লাগলো বলে। সৌদ প্রিন্স ট্রাম্পের শখ্যতায় ভেজায় খুশি হয়ে প্রবাহমান ইরান-উপদ্বীপ মিত্রতাও নিমেষেই জমে বরফ হয়ে যাবে। কে জানে আরও কয়টা কতো ধরনের একরডস হয়! মধ্যপ্রাচ্যের যে অবস্থা, ফুল স্কেল যুদ্ধের জন্য আরও অনেক সময় অপেক্ষা করাও কঠিন, আর এটাই যদি সত্য হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে ট্রাম্প আসতেছে। এখন আগ্রহভরে দেখার বিষয়, ইউরোপের অভ্যন্তরে পশ্চিমি নেতৃত্বই থাকে নাকি জায়নবাদের কাছে নতি স্বীকার করে। তবে যেই আসুক, মধ্যপ্রাচ্য প্রহর গুনতেছে বিস্ফোরণের!
ইউরোপিয়ান নেতৃত্বের আইওয়াস এজেন্ডাঃ
শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে, ইতালিসহ আরও কিছু সেকেন্ড স্টেজ ইউরোপীয় নেতৃত্ব ইজরায়েলের সমালোচনা করে আসতেছে। লেবাননে ফরাসি স্বার্থে ফরাসি প্রেসিডেন্টও হঠাৎ উচ্চকণ্ঠ হয়ে উঠেছে। ব্রিটিশ দপ্তরও তাদের উষ্মা প্রকাশ করেছে; অথচ, অস্ত্র সরবরাহ যে প্রবাহমান থাকবে তাও নিশ্চিত করেছে। এসব আসলে কি ইঙ্গিত দেয়? ইউরোপ কি ভেঙ্গে যাচ্ছে নাকি এতো দিনে তাদের ইতিহাস একপাশে ঠেলে তারা তাদের মানবতার মুখোশ ছুড়ে ফেলে কেও কেও সত্যিকার মানবতাবাদী সুপুরুষ হয়ে যাচ্ছে? আসলে এমন কিছুই না। এটা একটা কৌশল, একটা টিম হিসেবে নিজেরা নিজেদের গোপনে হওয়া বণ্টনকৃত দায়িত্ব পালন করতেছে। ফ্রান্সের উদ্বেগ লেবাননে তাদের স্বার্থে, যা সুনিশ্চিত হয়ে গেলে তারাও চুপ মেরে যাবে। এই প্রসঙ্গে হাজারটা উদাহরণ টানা যাবে, তবে মধ্যপ্রাচ্যের অধুনার কালের সূচনালগ্নে জর্ডানের আব্দুল্লাহ I সিরিয়া অভিমুখী মিশনে ব্রিটিশ রাজপক্ষ থেকে মিশরে ডেকে নিয়ে তাকে ব্রিটিশ বন্ধু ফ্রান্সের স্বার্থ ক্ষুণ্ণে না জড়ানোর নির্দেশনার অনুরূপে ফ্রান্সের স্বার্থ লেবাননে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলেই আজ তাদের যত অনুযোগ, খুব দ্রুতই তাদের স্বার্থের একটা স্থিতিশীল সমাধান হয়ে যাবে। আর ফ্রান্স আমাদের পক্ষবাদি একটা শক্তি হিসেবে কৌশলগত দিক থেকেও উভে যাবে। বাকি রাষ্ট্ররাও তাদের ইউরোপীয় নৈতিক বৈধতায় কৌশলী পন্থা অবলম্বন করতেছে, যখনই টারন করার সুযোগ আসবে, তখনই তারা ইউরোপীয় জনমত ঘোরানোর কারিঘর হয়ে উঠবে। ইজরায়েল বিরোধী ইউরোপীয় জনগণের কাছে এসব নেতারাই একমাত্র আকর্ষণ, কাজেই তারা যখন নৈতিকতার এক ন্যরেটিভে বিরুদ্ধ অবস্থানে চলে যাবে, জনমতও ব্যপকভাবে উল্টে যাবে, প্রভাবিত হবে, বিপুলসংখ্যক ধোঁয়াশায় পরে যাবে। সুতরাং, তাদের ইউরোপীয় জনমতকে বিলং করে লিড & ওয়াস করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলাই যায়। আর জাতিসংঘের বসনিয়ার ভূমিকা কি আমরা ভুলে গেছি! প্রবল আশংকা জাতিসংঘ এই আচরণের জন্যই নিজেকে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করে তুলতেছে কি না…
আর এমন গেম হলে, ইতালির মতো যে ইউরোপীয়রা ইজরায়েলী বর্বরতার সমালোচনায় সরব ছিল, তারা এই গেমের সিগ্নিফিক্যান্ট স্টেকহোল্ডার হবে। হয়তো একদিন দেখা যাবে, তারা বিশ্বকে বলবে ইজরায়েলের আগ্রাসন মোকাবিলায় আমরা মুসলিমদের পাশে আছি বলে তাদের সেনা মোতায়েন করল, মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষায়! আমরা মানহাজিক্ষেতরা তো বুঝি শিয়ালের কাছে মুরগি বাগির তত্ত্ব; কিন্তু আমাদের মুল ধারার মুসলিম ও তাদের নেতারা কি সেটা বুঝে? শত্রুর নাড়িতে নিজের স্টেক, এর চেয়ে সফলতম কৌশল আর কয়টা আছে? গতকাল নিউজ আসল, অ্যামেরিকার আহবানে ইতালি লেবাননে তাদের ট্রুপ্স নামাতে যাচ্ছে, লেবাননের প্রতিরক্ষায়............…
এই যে ইউরোপের না চাওয়া সত্ত্বেও ইজরায়েলী আগ্রাসনের ভাইভস, অথচ হিলারি থেকে শলৎজ, ব্রিটেনের আগাগোড়া থেকে মার্কিন ২ প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় চলছে কে কার চেয়ে বেশি জায়নবাদি তার প্রতিযোগিতা; তাও কি মনে হওয়ার কারণ আছে পশ্চিম রাজি তো নয়ই বরং বিরোধী! খেয়াল করলেই দেখতে পাই, কিভাবে একের পর এক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে শয়তানের বন্ধুবর কুচক্রীরা।
কাজেই পর্যবেক্ষণ শেষে এই কি মনে হয় না, তাহলে কি ইজরায়েল-ফিলিস্তিন এই যুদ্ধ প্রিপ্ল্যান্ড প্রজেক্টের এক্সিকিউশন ছিল! কি তাহলে সেই প্রজেক্ট আর এই কালঝড়ের শেষ ই বা কোথায়............? উল্লেখ্য, আমাদের হামাস ভাইয়েদের পক্ষ থেকে সামরিক মুখপাত্র আবু উবায়দা কিন্তু প্রথমেই উনাদের এই তাৎক্ষনিক সর্বাত্মক যুদ্ধের সিদ্ধান্তে বর্ণনা করেছিলেন- জায়নবাদিদের জেরিজালেম দখলের চূড়ান্ত কুচক্র রুখতে এই লড়াই কতটা অপরিহার্য ছিল! এটা কি কেবল বাইতুল মুক্কাদাসের ইতিহাস পরিবর্তনের নেপথ্য ছিল নাকি ছিল গ্রেটার ইজরায়েল? যদি তাই হয় তাহলে তা হবে শত বছরের জায়নদের স্বপ্ন পূরণের প্রচেষ্টার চূড়ান্ত পর্যায়ের অভিলক্ষ্য। যা শুরু হয়েছিল, ইহুদিদের এই অঞ্চলে অভিবাসনেরও আগে, গোড়াপত্তন সে তো খেলাফতে উসমানিয়ার পতনেরও বহু আগে, স্বার্থক নামকরণে নাম হবে যার গ্রেটার ইজরায়েল প্রজেক্ট- ইহুদি জাতির বিশ্বশাসনের স্বপ্ন!