Announcement

Collapse
No announcement yet.

নিজের ইসমাঈলকে উৎসর্গ করুন!

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • নিজের ইসমাঈলকে উৎসর্গ করুন!

    নিজের ইসমাঈলকে উৎসর্গ করুন!



    আলা আল-নাজ্জারকে চেনে না এমন কে আছে? তিনি সেই মা, যিনি হারিয়েছেন তাঁর নয়জন সন্তানকে—যাদের বয়স ছিল মাত্র ছয় মাস থেকে বারো বছরের মধ্যে। তিনি হামদি নাজ্জারের স্ত্রী, একজন কুরআনের হাফিজা, শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, আর এই যুগের খাঁনসা।

    তিনি উম্মাহর ক্ষতবিক্ষত শিশুদের জন্য ওষুধ আর সেবা নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময়, পুড়ে যাওয়া নয়টি শিশু আনা হলো তাঁর হাসপাতাল ‘আন্-নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স’-এ। বলা ভালো, ওগুলো আর শিশু নয়, যেন পুড়ে যাওয়া নয়টি নিথর দেহ। সঙ্গে আরও দু’জন—আলাআর এগারো বছরের ছেলে আদম আর তাঁর স্বামী হামদি নাজ্জার। আঘাতে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন আলাআ। কোনো কথা বের হচ্ছিল না তাঁর মুখ দিয়ে। ইয়াহইয়া, রাকান, রসলান, জিবরান, আইউ, রাইওয়ান, সাইদান, লুকমান, সিদরাহ— আলা আল-নাজ্জার একে একে সব নাম ধরে ডাকলেন। কিন্তু কোথাও কোনো সাড়া নেই। তিনি ডাকলেন হামদিকেও। কিন্তু হামদিও তখন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে।

    একবার চোখ দুটো বন্ধ করে ভাবুন, আপনি-ই আলা আল-নাজ্জার। আপনারই সন্তানেরা আপনার চোখের সামনে পড়ে আছে—নিঃস্পন্দ, নিঃশব্দ। আপনি যদি কঠোর হৃদয়েরও হন, তবু শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে নিশ্চয়ই। আর যদি একটু হলেও অনুভূতি থেকে থাকত, তাহলে এই কয়েক মুহূর্তের কল্পনাতেই আপনার জিভ নিশ্চুপ হয়ে যেত, মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিত, আর হৃদয় থেমে থেমে ধুকপুক করত।

    আলা আল-নাজ্জার এসব একবার নয়, বারবার সহ্য করেছেন। এখনো সহ্য করছেন। এই লেখা পর্যন্তও তিনি সেই দুঃসহ আঘাত থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। শোনা যায়, তিনি এখন আর কিছু খান না, কিছু বলেন না—শুধু এক মনে তসবিহ পড়েন। আর যদি আপনি-আমি তার জায়গায় থাকতাম? আমাদের তো তসবিহ পড়া তো দূরের কথা, নিজেকে সামলানোই সম্ভব হতো না। বুক ফেটে যেত, হৃদয় ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত।

    যিলহজ্ব মাস চলছে। আপনি যখন এই লাইনগুলো পড়ছেন, হয়তো এক-দু’দিনের মধ্যেই আপনি ইবরাহিমী (علیہ وعلیٰ نبینا ألف صلاۃ وسلام) সুন্নাহ পালন করতে যাচ্ছেন, অথবা করে ফেলেছেন।

    খলিলুল্লাহ (علیہ صلاۃ اللّٰہ وسلام​)-এর কাছে স্বপ্নের মাধ্যমে এক বিস্ময়কর নির্দেশ এসেছিল—তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু, তাঁর সবচেয়ে দামী সন্তান, বার্ধক্যে প্রাপ্ত সন্তান, তাঁর প্রিয় ইসমাঈল (علیه السلام)-কে আল্লাহর রাহে কুরবান করে দিতে হবে। সর্ম্পূণ আত্মসমর্পণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জীবন্ত প্রতীক ইবরাহিম (علیه السلام) এক মুহূর্তও দেরি করেননি, একটুও দ্বিধা করেননি।

    আর এই সন্তান—ইসমাঈল (علیه السلام)—যিনি বাবা-মায়ের বৃদ্ধ বয়সে আসা প্রতীক্ষিত আশীর্বাদ, যাঁকে একান্ত মমতায় বড় করা হয়েছে, এবং যিনি এখন দৌঁড়ে দৌঁড়ে বাবা-মায়ের কাজে সাহায্য করছে—ঠিক তাকেই কুরবানির আদেশ এসেছে!

    যখন ইবরাহিম (علیه السلام) ইসমাঈল (علیه السلام)-কে জানালেন সেই স্বপ্নের কথা, তখন ইসমাঈল (علیه السلام) কী বললেন?
    يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ
    “আব্বা, আপনি যা আদেশ পেয়েছেন, তাই করে ফেলুন।”
    কি আত্মসমর্পণ! কী অনুপম দৃশ্য এক পিতা ও পুত্রের!


    “এটা কি কোনো বুযুর্গের নজরের বরকত ছিল, না কি কাবার পাশে গড়ে ওঠা সেই মক্তবের শিক্ষা?
    কে শেখাল ইসমাঈলকে পিতৃভক্তির এমন সুন্দর আদব?”



    এটা দুটোই ছিল—একদিকে নবী ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর সান্নিধ্যের ফয়জ, অন্যদিকে কাবার ছায়ায় গড়ে ওঠা সেই ঘরের শিক্ষার কারামত।

    খলিলুল্লাহ (আলাইহিস সালাম) তাঁর হৃদয়ের টুকরাকে আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিলেন, ছুরি চালিয়ে দিলেন। এ এমন কুরবানি, যা রক্তে না, আত্মসমর্পণে লেখা হয়েছিল।

    এই ছিল সেই জীবন দর্শন, যা ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর কুরবানি থেকে রক্তের মতো ঝরল—

    আল্লাহর কালামে যাকে এভাবে প্রকাশ করা হয়েছে:

    قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ◌ لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
    (সূরা আল-আন‘আম: ১৬২–১৬৩)

    বলুন: "নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু—সবই আল্লাহর জন্য, যিনি সকল জগতের পালনকর্তা। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আমি এ আদেশই পেয়েছি এবং আমিই সর্বপ্রথম আত্মসমর্পণকারী।"

    এই আয়াত যেন ইবরাহিম ও ইসমাঈলের ঐ মুহূর্তের সারসংক্ষেপ। এক জীবনের সবটুকু—ইবাদত থেকে মৃত্যু অবধি—আল্লাহর নামে সমর্পিত। এটাই কুরবানি, এটাই মুসলমানি।

    ছুরি ছিল, রক্তের ধারা ছিল, আর ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর হৃদয় আল্লাহর দরবারে নতজানু ছিল। তাঁর সমগ্র অস্তিত্ব, তাঁর প্রতিটি রেশা, প্রতিটি ধমনী সিজদার অবস্থায় ছিল। ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম) তখন আল্লাহর জন্য কুরবানি হয়ে যেতে প্রস্তুত ছিলেন।

    এই খলিলুল্লাহর সুন্নত হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে। এখানে কুরবানি হয় সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসের। আল্লাহর নির্দেশ পালনই এই কুরবানি। গত দেড় বছর ধরে গাজার মানুষ যিলহজ্ব মাসের শর্ত ছাড়াই দিনের চব্বিশ ঘণ্টা এই কুরবানি দিয়ে চলেছে। আলা আল-নাজ্জার এই খলিলুল্লাহর ধারাবাহিকতারই এক অংশ।

    আমাদের আর কিছু বলার নেই। আলা আল-নাজ্জারের জন্য এটি তার ঈমানের সুরক্ষার প্রশ্ন, আর আমাদের জন্য এটি ঈমান, ইসলাম, এবং ইজ্জত ও হামিয়তের প্রশ্ন। এটি খলিলুল্লাহর ধারার সঙ্গে সম্পর্ক এবং কুরবানির তৌফিকের প্রশ্ন। আলা আল-নাজ্জারের মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দ্বীনের জন্য কুরবানি দেখো, তারপর নিজের আমলের হিসাব নাও—কী আশা নিয়ে বসে আছো!?
    আমাদের কাছে শুধু একটিই দাবি:
    নিজের ইসমাঈলকে উৎসর্গ করুন!


    হে আল্লাহ! আমাদেরকে তাদের সাথে হিদায়াত দাও যাদের তুমি হিদায়াত দিয়েছ, আমাদেরকে তাদের সাথে ক্ষমা কর যাদের তুমি ক্ষমা করেছ, আমাদেরকে তাদের সাথে দায়িত্ব নাও যাদের তুমি দায়িত্ব নিয়েছ, এবং তুমি আমাদের যা দিয়েছ তাতে বরকত দাও। তুমি যা ফায়সালা করেছ তার অনিষ্ট থেকে আমাদের রক্ষা কর। নিশ্চয় তুমি ফায়সালা কর, কিন্তু তোমার উপর কেউ ফায়সালা করে না। যাকে তুমি বন্ধু কর তাকে কেউ হীন করে না, আর যার সাথে তুমি শত্রুতা কর তাকে কেউ সম্মানিত করে না। হে আমাদের রব! তুমি পবিত্র ও মহান!

    হে আল্লাহ! আমাদেরকে তাই করার তৌফিক দাও যা তুমি পছন্দ কর এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও। আমাদের রক্ত থেকে নাও যতক্ষণ না তুমি সন্তুষ্ট হও। হে আল্লাহ! সত্যের ব্যাপারে যেখানে মতভেদ হয়েছে, তোমার অনুমতিক্রমে আমাদেরকে তাতে হিদায়াত দাও। হে আল্লাহ! আমাদেরকে বাড়িয়ে দাও, কমিয়ে দিও না; আমাদেরকে সম্মান দাও, অপমান করো না; আমাদেরকে দান কর, বঞ্চিত করো না; আমাদেরকে প্রাধান্য দাও, আমাদের উপর অন্যকে প্রাধান্য দিও না; আমাদেরকে সন্তুষ্ট কর এবং আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হও। হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে বিষয়ে অবিচলতা, সঠিক পথের দৃঢ় সংকল্প, তোমার নিয়ামতের শুকরিয়া এবং তোমার উত্তম ইবাদতের জন্য প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ! যে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দ্বীনের সাহায্য করে তাকে বিজয়ী কর এবং আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর। আর যে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দ্বীনকে হতাশ করে তাকে পরাভূত কর এবং আমাদেরকে তাদের মধ্যে গণ্য করো না। আমিন, ইয়া রাব্বাল আলামিন।

    ভাবানুবাদ
    মূল আর্টিকেল: اپنا اپنا اسماعیل پیش کرو!
    সাইট: نوائے غزوۂ ہِند (নাওয়ায়ে গাজওয়ায়ে হিন্দ)
    তারিখ: ৪ জুন, ২০২৫
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 3 days ago.
    فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

  • #2
    আল্লাহ তাআলা উম্মাহর মা-বোনদেরকে এই যুগের খাঁনসা হিসাবে কবুল করুন। ​আমীন
    জাযাকাল্লাহু খাইরান Ibnul Irfan ভাই।
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment

    Working...
    X