Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইমাম মাহমুদের ফিতনা পর্ব-১ : মুজাদ্দিয়াতের অন্তড়ালে নবুওয়াতের দাবি

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইমাম মাহমুদের ফিতনা পর্ব-১ : মুজাদ্দিয়াতের অন্তড়ালে নবুওয়াতের দাবি

    ইমাম মাহমুদের ফিতনা পর্ব-১ : মুজাদ্দিয়াতের অন্তড়ালে নবুওয়াতের দাবি

    ভূমিকা :

    সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর যিনি মুমিনদের সম্মানিত করেন এবং মুনাফিক ও কাফিরদের লাঞ্ছিত করেন। সমস্ত শক্তি ও ক্ষমতা কেবল তাঁরই। একত্ববাদীদের নেতা ও খাতামুন নাবিয়্যিন মুহাম্মাদ , তাঁর পরিবারবর্গ ও সমস্ত সাহাবাদের প্রতি দরূদ ও সালাম।

    হামদ ও সালাতের পর,

    ইসলাম হল আল্লাহ তাআলার মনোনীত একমাত্র পরিপূর্ণ দ্বীন, যা সমগ্র মানবতার জন্য চিরন্তন হিদায়াত ও জীবন বিধান। সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ -এর মাধ্যমে আল্লাহ এই দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছেন, যেমন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

    "আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম" (সূরা আল-মায়িদাহ, ৫:৩)।

    এই ঘোষণা থেকে এটা স্পষ্ট যে, নবুওয়াতের ধারা মুহাম্মাদ -এর মাধ্যমেই চূড়ান্তভাবে সমাপ্ত হয়েছে। তাঁর পরে আর কোনো নতুন নবী আসবেন না, নতুন কোনো দ্বীন বা আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হবে না। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই চূড়ান্ত ঘোষণা ও স্পষ্ট বাণীর পরেও বিভিন্ন যুগে কতিপয় ধূর্ত ও বিভ্রান্ত মানুষ নিজেকে নবী দাবি করে মুসলমানদের ঈমান ও সমাজে ফিতনা সৃষ্টি করেছে। কেউ সরাসরি নবুওয়াতের দাবিদার হয়েছে, আবার কেউ সূক্ষ্মভাবে, নিজেদেরকে "জামানার মুজাদ্দিদ", কিংবা "মুহাদ্দাস" বলে আখ্যায়িত করে ক্রমান্বয়ে নবুয়াতের দাবির দিকে অগ্রসর হয়েছে। অবশ্য এ ব্যাপারে রাসুল তার উম্মতকে পূর্বেই স্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন, তিনি বলেন:

    لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِي بِالْمُشْرِكِينَ وَحَتَّى يَعْبُدُوا الْأَوْثَانَ وَإِنَّهُ سَيَكُونُ فِي أُمَّتِي ثَلَاثُونَ كَذَّابُونَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لَا نَبِيَّ بَعْدِي

    “আমার উম্মতের একদল লোক মুশরিকদের সাথে মিলিত হওয়ার পূর্বে এবং মূর্তি পূজায় লিপ্ত হওয়ার পূর্বে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। আর আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যুকের আগমণ ঘটবে। তারা সকলেই নবুওয়াতের দাবী করবে। অথচ আমি সর্বশেষ নবী। আমার পর কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবী আসবেনা”। (আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং- ৫৪০৬।)

    যুগে যুগে কিছু পথভ্রষ্ট ব্যক্তি সরাসরি নবুওয়াতের দাবি না করলেও নিজেদের “শতাব্দীর মুজাদ্দিদ” কিংবা “আল্লাহর মনোনীত ইমাম” হিসেবে পরিচয় দিয়ে পরোক্ষভাবে মিথ্যা নবুওয়াতের বিষাক্ত আক্বীদা সমাজে ছড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছে। উপমহাদেশে এর সবচেয়ে ভয়াবহ দৃষ্টান্ত হলো গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী। ১৮৮৫ সালে গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী সর্বপ্রথম নিজেকে “মুজাদ্দিদ” হিসেবে দাবি করে। পরবর্তীতে সে কখনো নিজেকে “নাজির” (সতর্ককারী), কখনো “মুলহাম মিনাল্লাহ” (আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহামপ্রাপ্ত) বলে দাবি করতে থাকে এক পর্যায়ে গিয়ে স্পষ্টভাবে নবুওয়াতের দাবি করে।

    কাদিয়ানী মতবাদের অনুরূপ বিশ্বাস ও আদর্শে গড়ে ওঠা এমন একটি নতুন গোষ্ঠী বর্তমানে বাংলার মাটিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে যাদের নাম ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’। এই দলের আদর্শিক চিন্তাধারা ও কর্মকাণ্ডে কাদিয়ানী মতবাদের স্পষ্ট মিল লক্ষ্য করা যায়। তারা বিশ্বাস করে, ইমাম মাহমুদ হচ্ছেন এই শতাব্দির মুজাদ্দিদ এবং শেষ জামানার প্রতিশ্রুত গাজওয়াতুল হিন্দের মনোনীত আমীর। মুজাদ্দিদ কেন্দ্রিক বিভ্রান্তির আশ্রয় নিয়ে প্রকৃতপক্ষে তারাও গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর অনুরূপ নবুওয়াতের দাবিদার হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে।


    ইমাম মাহমুদের কাফেলার আবির্ভাব :

    ২০১৭ সালে নাটরের জুয়েল মাহমুদ এবং পাবনার শামিম রেজার হাত ধরে গড়ে ওঠে ইমাম মাহমুদের কাফেলা। শামিম রেজার স্থানীয় জামে মসজিদে ইমামতির সুবাদে জুয়েল মাহমুদের সাথে পরিচয় হয় শামিমের। পরিচয়ের এক পর্যায়ে তারা এই দাবি করে যে, জুয়েল মাহমুদ কে আল্লাহ শতাব্দির মুজাদ্দিদ হিসেবে মনোনীত করেছেন, আর শামিম রেজা তার নিযুক্ত সহকারী, 'নায়েব'। এরই ধারাবাহিকতায় তারা দাবি করে, ভারতবর্ষে গাজওয়াতুল হিন্দ সংঘটিত হবে এই দুই ব্যক্তির নেতৃত্বেইমাম মাহমুদ ও সাহেবে কিরান (শামিম রেজার উপাধি)এর মাধ্যমে।

    অত:পর তাদের এই দাবির ভিত্তি প্রমাণে শুরু হয় হাদিস বিকৃতি ও জালিয়াতির এক অভিনব প্রচেষ্টা। বানোয়াট হাদিস রচনার সূচনালগ্নে যে কথিত হাদিসটি সর্বাধিক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল, তা ছিল “শেষ জামানায় পাঁচ শাসকের আগমন” যা সেই সময়ে অনেক আলোচনাতে এসেছিলো, এমনকি বাংলাদেশের কিছু বক্তারাও এই হাদিসগুলো নিয়ে ওয়াজ মাহফিল এবং মসজিদের মেম্বারে আলোচনা করেছিলেন।

    হাদিস জালিয়াতির পর, অনলাইনে নিজেদের বিষয়ে নানা ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী ছড়াতে শুরু করে। তাদের কল্পিত মুজাদ্দিদিয়াতের পরিচয় গোপন রেখে, এমনভাবে দাওয়াতি ভূমিকা পালন করে যেন তারা কেবল একটি মহৎ সত্যের বার্তাবাহক। এর প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের লেখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই “আখীরুজ্জামান গবেষণা ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ”এর প্রথম সংস্করণে, যা লিখেছেন স্বয়ং ইমাম মাহমুদের নায়েব, শামিম রেজা ওরফে সাহেবে কিরান। লেখক হিসেবে, তিনি নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যেন তার সঙ্গে ইমাম মাহমুদ বা সাহেবে কিরানের কোনো সম্পর্ক নেই; বরং তিনি তাদের আগমনের অপেক্ষায় থাকা একজন সাধারণ অনুসারী, বিভিন্ন ভিত্তিহীন তথ্য ও যুক্তি দিয়ে ইমাম মাহমুদ এবং সাহেবে কিরানের আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করে। অথচ, লেখক নিজেই সাহেবে কিরান। এই কৌশল অবলম্বন করার পেছনে উদ্যেশ্য ছিলোসাধারণ মানুষের অবচেতন মনে ইমাম মাহমুদের আগমনের এক পূর্বপ্রস্তুত ধারণা গেঁথে দেওয়া। যেন সময়ের ব্যবধানে সেই ধারণা বিশ্বাসে পরিণত হয়, এবং যখন তারা নিজেদের মুজাদ্দিয়াতের দাবিতে প্রকাশ্যে আবির্ভূত হবে, তখন জনগণ সেই দাবিকে আর নতুন বা অচেনা বলে মনে না করে সহজে গ্রহণ করে নেয়।

    এরপরের বছর, ২০১৮ সালে, এই দাবিকে আরও শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে শামিম রেজা ‘আগামী কথন’ নামে একটি ভবিষ্যদ্বাণীমূলক কবিতা রচনা করেন। কবিতাটি শাহ নিয়ামতুল্লাহর নামে প্রচলিত বানোয়াট ভবিষ্যদ্বাণীর ধাচে লেখা হয়। এতে ২০১৮ সাল থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যেসব ঘটনা সংঘটিত হবে, সেগুলো নির্দিষ্ট সাল ধরে ধরে তুলে ধরা হয়কবিতার চরণ এবং তার ব্যাখ্যার মাধ্যমে। এই কবিতাটিতেও বরাবরের মতই পরিচয় গোপন রেখে নিজেদের পক্ষে ভবিষ্যদ্বাণী করে। কবিতাটি অনলাইনে ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে সেই সময়ে ইমাম মাহমুদের ধারণা তুলনামূলকভাবে আরো বেশি পরিচিতি লাভ করে।



    সাধারণ মুসলিমদের যেভাবে মাহমুদের ফাদে আটকানো হয় :

    তারা দাওয়াতের ক্ষেত্রে কিছু ছক ব্যবহার করে, এর মাধ্যমে সাধারণ মুসলিমরা তাদের পাতানো ফাদে নিজ অজান্তেই আটকে যায়, যা থেকে বেড় হতে পারে না। তাই শুরুতে তাদের ছকগুলো আগে ভাঙতে হবে, তাহলে চিন্তার বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে মনে করি ইনশাআল্লাহ।

    » মুজাদ্দিদ বিষয়ক বিভ্রান্তি

    শুরুতে তারা এভাবে সূত্র মেলায়

    হাদিসে এসেছে, "আল্লাহ তা'আলা এ উম্মাতের (কল্যাণের) জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর শেষে এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন যিনি তাদের দ্বীনকে সংস্কার করবেন।" (আবু দাউদ)
    এরপরে.. হাদিসের সূত্রের নামে দাবি করে “যখনি ইসলামের বড় কোন ক্ষতি হবে, তার ১০০ বছরের মাথায় আল্লাহ প্রদত্ত বা মনোনীত একজন ব্যক্তির আগমন ঘটবে।”

    এই সূত্রের উপর ভিত্তি করে বর্তমান শতাব্দির মুজাদ্দিদের আগমণ কখন হবে তার একটা হিসাব মেলানো হয় যেমন, ইসলামের সর্বশেষ বড় ক্ষতি হয় ১৯২৪ সালে উসমানী সালতানের পতনের মাধ্যমে। ১৯২৪ সাল থেকে নিয়ে ১০০ বছর হিসেব করলে দাড়ায় ২০২৪ সাল। তাই ২০২৪ সালেই কোন একজন মুজাদ্দিদের আগমন হওয়ার কথা। তারপরে ইমাম মাহমুদ সংক্রান্ত সদ্য বানোয়াট হাদিস দ্বারা প্রমাণ করে যে, ২০২৪ সালের শতবর্ষী মুজাদ্দিদ হলো ইমাম মাহমুদ।

    [খন্ডন]
    শুরুতে তারা আবু দাউদের যে হাদিসটি উল্লেখ করেছে তা নিম্নরূপ
    রাসুলুল্লাহ বলেন

    إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ لِهٰذِهِ الْأُمَّةِ عَلٰى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِينَهَا

    “নিশ্চয়ই আল্লাহ এই উম্মতের জন্য প্রতি একশো বছরের মাথায় এমন একজনকে পাঠাবেন, যিনি তাদের জন্য দ্বীনের সংস্কার করবেন।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪২৯১)

    এই হাদিসের কোথাও বলা নেই, ইসলামের বড় কোন ক্ষতি হওয়ার ১০০ বছরের মাথায় আল্লাহ মুজাদ্দিদ পাঠাবেন। হাদিসের ব্যাখ্যায় কোন উলামায়ে কিরামও এমনটি দাবি করেননি। হাদিসের ভাষা স্পষ্ট। এখানে رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَة দ্বারা “প্রত্যেক একশত বছরের মাথায়” বলা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, প্রত্যেক শতাব্দিতে আল্লাহ মুজাদ্দিদ পাঠাবেন, ইসলামের বড় কোন ক্ষতি হওয়ার পরে নয়। “ইসলামের বড় কোন ক্ষতি হওয়ার পর” এই কথার কোন ভিত্তি নেই, এমন কথা কোন হাদিসেও নেই। হাদিসের স্পষ্ট বক্তব্যকে বিকৃত করে ২০২৪ সালকে মুজাদ্দিদের আগমনের সময় প্রমাণ করার একটা বড়সড় প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে মাত্র। যদি মুজাদ্দিদ এর আগমনকে হিজরি শতাব্দির হিসাব অনুযায়ীও ধরে নেই, সেক্ষেত্রে বর্তমান ২০২৪ সাল কে মুজাদ্দিদ আগমনের সময়কাল মেলানো সম্ভব হবেনা, ফলে ২০২৪ এ মাহমুদকে শতবর্ষী মুজাদ্দিদ হিসাবে দাবি করার কোন বাস্তবসম্মত প্রমাণ তারা হাজির করতে পারবে না। তারা যেই গোলাম আহমাদের নব-উদ্ভাবিত নীতি অনুসরণ করে শতাব্দির মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবি করে, সেই মীর্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী ১৪শ হিজরি শতাব্দির শুরু ভাগে তার মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবি উত্থাপন করেছিল। কিন্তু মাহমুদের ক্ষেত্রে এই হিসাব মেলানো যায় না, কারণ আমরা এখন ১৫শ হিজরি শতাব্দির একদম মাঝামাঝি অবস্থান করছি অর্থাৎ বর্তমান ১৪৪৬ হিজরি সন চলছে। এ কারণেই তারা শতাব্দির গণনার জন্য উসমানী সালতানের পতন কে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে। ফলশ্রুতিতে কল্পিত সূত্র মেলানোর জন্য হাদিস জালিয়াতির মতই “ইসলামের বড় কোন ক্ষতি হওয়ার পর” এমন মনগড়া কথা বানিয়ে সেটাকে হাদিসের ভাষ্য বলে চালিয়ে দেয়। এই জালিয়াতি থেকেই তাদের অসৎ উদ্যেশ্যের ব্যাপারে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

    এছাড়াও মুজাদ্দিদের আগমনের সময় নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। উক্ত হাদিসের ব্যাখায় প্রতি ১০০ বছর হিজরতের সাল থেকে গণনা করা হবে, নাকি নবুওয়াতের বছর থেকে, নাকি রাসুলুল্লাহ এর ওফাতের সময় থেকে এ নিয়ে মুহাদ্দিসগণ মতভেদ করেছেন। এরপরে رَأْسِ (মাথা) দ্বারা শতাব্দির শুরু বোঝানো হয়েছে নাকি, মাথা দ্বারা শেষ বোঝানো হয়েছে এ নিয়েও আমীলমগণ মতভেদ করেছেন। সুতরাং কেউই নিশ্চিতরূপে বলতে পারেন না মুজাদ্দিদের আগমন কখন হবে। হাদিসে ব্যবহৃত مَنْ শব্দ দ্বারা একবচন এবং বহুবচন উভয়টিই ব্যবহার হয়। তাই মুহাদ্দিসগণ একজন মুজাদ্দিদ না বলে একাধিক মুজাদ্দিদ থাকবেন বলেই মত দিয়েছেন।

    ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেন

    “মুজাদ্দিদ একজন হবেন মনে না করে একাধিক হবেন বলে মনে করাই বেশি জোড়ালো মত।” (আল-মাউযূআত, পৃ: ৪৯)

    মোল্লা আলী কারী (রহ.) লিখেছেন
    “উলামায়ে কেরাম এ হাদিসের অর্থ নিয়ে অনেক আলোচনা করেছেন। প্রত্যেকে নিজ নিজ পছন্দসই ও নিজের মাযহাবের আলেম বা নেতাগণকে মুজাদ্দিদ বলে দাবি করেছেন। সঠিক কথা হলো مَنْ যেহেতু একবচন ও বহুবচনের সমষ্টি, কাজেই এ হাদিসের অর্থ করা উচিত বহুবচনের। সকল আলিম, মুহাদ্দিস, ফকীহ, ওয়ায়িজ, দরবেশ, রাষ্ট্রনেতা যে ব্যক্তিই দ্বীনের সংরক্ষণ ও সংস্কারে অবদান রাখবেন তাদের সকলকেই সেই যামানার মুজাদ্দিদ বলে গণ্য করতে হবে। এজন্য আমার কাছে সঠিক মত হলো, مَنْ يُجَدِّدُ বলতে একক ব্যক্তিকে বোঝানো হয়নি। বরং বোঝানো হয়েছে সম্মিলিত জনগোষ্ঠী, অনেক ব্যক্তিকে, যারা সবাই মিলে সংস্কারের কাজ করবেন। প্রত্যেক দেশ, প্রত্যেক বিষয়ে, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক মুজাদ্দিদ থাকবেন। এছাড়া সংস্কার, নবায়ন, তাজদীদ আপেক্ষিক বিষয়। আংশিকও হতে পারে পূর্ণাঙ্গও হতে পারে। (আল-মাউযূআত, পৃ: ৫০)

    জুয়েল মাহমুদ এবং শামিম রেজার স্বঘোষিত মুজাদ্দিদ দাবি বিভ্রান্তিকর ও স্পষ্ট ধোকাবাজি। যদি কেউ নিজে থেকে মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবি করে, সে নিঃসন্দেহে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে অথবা শয়তানের প্ররোচনায় পরে এমন দাবি করেছে। ইসলামের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা যাঁদের মাধ্যমে দ্বীনের সংস্কার ও পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছেন, তাঁদের কেউই কখনও নিজেকে ‘মুজাদ্দিদ’ বলে দাবি করেননি। ইসলামের ইতিহাসে যাঁদের মুজাদ্দিদ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে কিংবা যাঁদের সম্পর্কে এমন ধারণা পোষণ করা হয়েছেতাঁদের কেউই নিজে থেকে মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবি করেননি। উদাহরণস্বরূপ, উলামায়ে কিরামের সর্বসম্মত মত হলোউমর ইবনু আবদুল আযীয (রহ.) ছিলেন প্রথম হিজরি শতকের মুজাদ্দিদ। কিন্তু তার জীবদ্দশায় তিনি কখনও নিজেকে মুজাদ্দিদ বলে ঘোষণা দেননি, তাঁর সমসাময়িক যুগের কেউও তাঁকে মুজাদ্দিদ বলে আখ্যায়িত করেননি।

    প্রত্যেক মুজাদ্দিদ এর ক্ষেত্রেই তাদের যুগ অতিবাহিত হওয়ার পরবর্তীকালে আলিম সমাজ, তাঁদের জীবনে ইসলামী সংস্কার ও নবজাগরণের বহুমুখী অবদান বিশ্লেষণ করে, মুজাদ্দিদ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন। অর্থাৎ, মুজাদ্দিদ হওয়ার বিষয়টি স্বঘোষিত হয়নি; বরং তা ছিল পরবর্তী প্রজন্মের আলিমগণের পরিপক্ব মূল্যায়নের দ্বারা। এভাবে একেকজন একেক আলিম, মুহাদ্দিস, রাষ্ট্রনেতা কে মুজাদ্দিদ বলে দাবি করেছেন। ইতিহাসে প্রথমবারের মত নিজে থেকে মুজাদ্দিদ দাবির বিষয়টি আবিস্কার করে মীর্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী। এবং এই দাবির মাধ্যমেই তার গোমড়াহির যাথা শুরু করেছিলো। এখন যারা কাদিয়ানীর অনুকরণ করছে তাদের উদ্যেশ্যও এক ও অভিন্ন।

    সারকথা, মুজাদ্দিদের পরিচয় জানা কিংবা তাঁদের আগমনের সময় নির্ধারণ করা মুমিনদের জন্য কোনো দ্বীনি দায়িত্ব নয়, বরং তা জানাও অসম্ভব (হাদিসে যে সকল মুজাদ্দিদের নাম এসেছে তাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা)। কেননা দ্বীনের হিফাযত ও সংস্কার যার মাধ্যমে সংঘটিত হবে, তা একান্তই আল্লাহর ইচ্ছাধীন বিষয়। তিনি যাঁকে উপযুক্ত মনে করবেন, তাকেই এ মহান দায়িত্বে অভিষিক্ত করবেনএ সিদ্ধান্ত কেবল তাঁরই এখতিয়ারে।

    » মাহদির পূর্বে মাহমুদের আগমন

    বিজাতীদের আগ্রাসনে মুসলিম উম্মাহ দীর্ঘ এক শতাব্দি বিপর্যস্ত। তাই সকলেই মাহদির অপেক্ষা করছে। মাহদির বিষয়টি কম বেশি সকলেই যানে। ভবিষ্যতে মুসলিমদের নেতৃত্বের প্রশ্ন উঠলেই সবাই এক বাক্যে মাহদির নাম উচ্চারণ করে। মাহদির আগমন সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, অপরদিকে মাহমুদের তত্ব আবিস্কারই হয়েছে আনুমানিক সাত বছর আগে, মাহমুদের বিষয়ে না আছে কোন হাদিস, না আছে কোন ভিত্তি একারণে মাহমুদের বিষয়টি কারো কাছে প্রাধান্য পাবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই মাহদির পূর্বে মাহমুদ আসবেন এমন এক ছক তৈরী করা হয়। সেই সাথে পূর্বের ন্যায় ২০২৪ কে মুজাদ্দিদ আগমনের সময় নির্ধারন করার বৃথা চেষ্টা করা হয়।

    সূত্র এভাবে মেলানো হয় :

    শামিম রেজা তার বইয়ে লিখেছে “অনেকেই বলছেন, এবারের ১০০ বছরের মাথায় ইমাম মাহদি আসবেন। কিন্তু অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, হযরত আবু কুবাইল (রহ.) বলেন, খিলাফত ধ্বংষের ১০৪ বছরের মাথায় ইমাম মাহদির উপরে মানুষ ভির করবে। ইবনে লাহিয়াহ বলেন, উক্ত খিলাফতটি অনারবীয়। (আল-ফিতান, নুয়াঈম ইবনে হাম্মাদ, ৯৬২)

    এরপরে... দাবি করা হয় যেহেতু উসমানী খিলাফত ছিলো আযমী তথা অনারবীয়, আর এই খিলাফত ধ্বংষ হয়েছে ১৯২৪ সালে। ১৯২৪ থেকে ১০৪ যোগ করলে দাঁড়ায় ২০২৮ সাল। তাই মাহদি ১০০ বছরে আসবেন না, ১০৪ বছর পর আসবেন অর্থাৎ ২০২৮ সালে। মাহদি যদি ১০৪ বছরে আসেন তাহলে ১০০ বছরের মাথায় একজন মুজাদ্দিদের আসার কথা, আর তাদের সদ্য বানোয়াট হাদিসেও লেখা আছে মাহদির পূর্বে আরেকজন ইমাম আসবেন যার নাম হবে মাহমুদ।

    [খন্ডন]
    আল-ফিতান থেকে উদ্ধৃত হাদিস নিয়ে তারা শুধু অপব্যাখ্যায় করেনি; বরং জঘণ্যভাবে হাদিস বিকৃত করেছে। হাদিসের আরবি ইবারত নিম্নরূপ

    আবু কাবিল (রহ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,

    "اجتماع الناس على المهدي سنة أربع ومائتين، قال ابن لهيعة: بحساب العجم، ليس بحساب العرب"
    দুইশত চাঁর বছর/সন মাহদির উপর মানুষ ভীড় করবে। ইবনু লাহিয়া বলেন, উক্ত হিসাবটি আযমী তথা অনারবীয় হিসাব মতে। আরবি হিসাব মতে নয়। (আল-ফিতান, নুয়াইম বিন হাম্মাদ, সনদ : মাকতু, যঈফ। সনদে দুইজন দূর্বল রাবি আছেন, রিশদিন ইবনু সা'দ এবং ইবনু লাহিয়া)

    উল্লেখিত হাদিসে কোথাও বলা হয়নি “খিলাফত ধ্বংষের ১০৪ বছর পর”। হাদিসে শুধু سنة বছর বা সালের কথা বলা হয়েছে। তারা হাদিসের অর্থ বিকৃত করে “খিলাফত ধ্বংষের পর” অতিরিক্ত কথাটি যুক্ত করে দিয়েছে যা স্পষ্ট জালিয়াতি। পূর্বেও তারা মুজাদ্দিদ বিষয়ক হাদিসে ঠিক একইরকম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে হাদিসের মূল বক্তব্য কে বিকৃত করে উপস্থান করেছিলো, এখানেও সেই একই কাজটা করেছে। মূলত তারা বরাবরের মত উসমানী খিলাফত ধ্বংষের পর থেকে মুজাদ্দিদ আগমনের ১০০ বছরের হিসাব বের করে ২০২৪ কে মুজাদ্দিদ আগমনের ১০০ বছর প্রমাণ করার জন্য বারংবার চেষ্টা করেছে। এরপরে, سنة أربع ومائتين দুইশত চার বছরের অর্থ করেছে একশত চার বছর, এখানেও যঘণ্যভাবে জালিয়াতি করেছে।

    হাদিসের ২০৪ বছর দ্বারা মূলত কয়েকটি ব্যাখ্যা মেলে, হয়তো বর্ণনাকারীর যুগ থেকে নিয়ে খ্রিষ্টীয় বৎসর হিসেবে ২০৪ বছর পর বুঝিয়েছেন। অথবা বর্তমান সময়ে কেউ কেউ এভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, ২০০+৪ যোগ না করে (Posisional form) পর পর সংখ্যা বসিয়ে ২০০,৪ = ২০০৪ সাল। কিন্তু মূল অনুবাদ হয়, ২০৪ বছর মানুষ মাহদির উপর ভীর করবে। তবে কোনটাই সঠিক নয় এবং বাস্তবে কোনটাই সংঘটিত হয়নি। উক্ত হাদিসটি মাকতু সূত্রে বর্ণিত অর্থাৎ এটা রাসুল সা: এর কথা নয়, তাবেঈন এর বর্ণনা, সনদও দূর্বল।

    » আগামী কথন ও শাহ নিয়ামতুল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণী

    উপরে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটি পয়েন্টকে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে সদ্য তৈরি করা জাল হাদিসের পাশাপাশি দুটি কবিতার ভবিষ্যদ্বাণীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে:
    ১. “আগামী কথন”
    ২. “শাহ নিয়ামতুল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণী”।

    প্রথম কবিতা “আগামী কথন” এটি জুয়েল মাহমুদের নায়েব শামিম রেজার হাতে লেখা, যা শুরুতেই উল্লেখ করেছি। এটি যে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি উপযোগী হাতিয়ার ছিল, সেটিও পরিষ্কার। মূলত, নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবে রূপদানের উদ্দেশ্যেই তারা নিজেরাই নিজেদের পক্ষে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। এই কবিতাগুলোর ঐতিহাসিক পটভূমি, নির্ভরযোগ্যতা এবং প্রাসঙ্গিক প্রমাণাদি নিয়ে আমরা পরবর্তীতে বিশদ আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। আপাতত, আমরা তাদের ছকগুলো উপস্থাপন করবো এবং বাস্তবতার আলোকে সেগুলোর খণ্ডন করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।

    গাজওয়াতুল হিন্দের আমীর ও সেনাপতি ইমাম মাহমুদ এবং সাহেবে কিরান হবেন এই দাবিকে প্রমাণ করার জন্য তারা ‘শাহ নিয়ামতুল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণী’ থেকে একটি পংক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলে

    “কাসীদায়ে শাহ্ নিয়ামাতুল্লাহ (রহঃ) তে হিন্দুস্তানের ফিতনা নিয়ে বলার সময়ে সেই ফিতনার অবসান করবেন যিনি তার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
    “সাহেবে কিরান” ও “হাবীবুল্লাহ” হাতে নিয়ে শমসের।
    খোদায়ী মদদে ঝাঁপিয়ে পড়িবে ময়দানে যুদ্ধের।
    এই প্যারাতে বলা দুইজন ব্যক্তি যারা হিন্দুস্তানে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে তাদের মধ্যে যাকে হাবীবুল্লাহ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে তিনিই হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যাকে ইমাম মাহমুদ বলা হয়। যার মাধ্যমে হিন্দুস্তান বিজয়ী হবে। হাদিসেও সরাসরি বলা হয়েছে যে, ইমাম মাহমুদ এর উপনাম হবে হাবীবুল্লাহ।” (আখীরুজ্জামান গবেষণা ও তাত্বিক বিশ্লেষণ, পৃ: ২৩৮)

    [খন্ডন]
    শাহ নিয়ামতুল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণী থেকে তারা যেই পংক্তির উদ্বৃতি দিয়েছে তা নিম্নরূপ

    نیز آں حبیب الله صاحبقراں من الله - گیرد نصرت الله شمشیر از میانه.“
    অর্থ : “আর হাবিবুল্লাহ সাহেবে কিরান নামক একজন ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ হতে আল্লাহর সাহায্যে তলোয়ার নিয়ে অগ্রসর হবেন।”

    এই পংক্তিতে সরাসরি কোথাও ‘ইমাম মাহমুদ’ বা ‘জুয়েল মাহমুদ’-এর নাম নেই। পংক্তিটি গাজওয়াতুল হিন্দ নিয়ে লেখা, আর যাঁরা এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন, তাদের কথাই বলা হয়েছে। জুয়েল মাহমুদ নিজেকে এই যুদ্ধের আমীর দাবি করলেও, তার নাম এতে নেই। ফলে, ভবিষ্যদ্বাণীর "হাবীবুল্লাহ" চরিত্রকে নিজের ক্ষেত্রে খাটাতে, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাদের তৈরী করা জাল হাদিসগুলো তে লিখে দেওয়া হয় যে, ইমাম মাহমুদের উপাধি হবে “হাবীবুল্লাহ”। সুতরাং জাল হাদিস, ভিত্তিহীন কবিতা ও কবিতার অপব্যাখ্যার দ্বারা কোনভাবেই প্রমাণিত হয়না জুয়েল মাহমুদই হাবিবুল্লাহ বা গাজওয়াতুল হিন্দের আমীর।

    দ্বিতীয় জালিয়াতি হলো তারা “হাবীবুল্লাহ” ও “সাহেবে কিরান” দ্বারা দুইজন পৃথক ব্যক্তি বোঝায়, যেখানে জুয়েল মাহমুদের সহকারী শামিম রেজা কে সাহেবে কিরান বলে দাবি করা হয়। এ বিষয়ে একাধিক জাল হাদিসও রচনা করা হয়েছে, যেখানে শামিম রেজাকে সাহেবে কিরান বলা হয়েছে। অথচ, উক্ত কবিতায় সাহেবে কিরান হলো হাবীবুল্লাহ নামক ব্যক্তির উপাধি এটি কোনো আলাদা ব্যক্তি নয়। বিষয়টি শাহ নিয়ামতুল্লাহর নামে প্রচলিত অপর একটি কবিতা থেকেও স্পষ্ট। এমদাদিয়া লাইব্রেরি প্রকাশিত “হযরত শাহ নে’য়মাতুল্লাহ (রহঃ) এর ভবিষ্যদ্বাণী” বইয়ে শাহ নিয়ামতুল্লাহর নামে সংকলিত পাঁচটি কবিতার মধ্যে প্রথমটির শুরুতেই বলা হয়েছে

    راست گویم بادشاھی در جھاں پیدا شود ۔ نام او تیمور شاہ صاحبقراں پیدا شود
    অর্থ : আমি ঠিকই বলিতেছি যে, পৃথিবীতে তৈমুর নামক একজন প্রতাপশালী বাদশাহ জন্মগ্রহণ করিবেন। (শাহ নে'য়মাতুল্লার ভবিষ্যদ্বাণী, পৃ: ১০)

    এখানে দেখা যাচ্ছে, সাহেবে কিরান উপাধিটি দেওয়া হয়েছে আমীর তৈমুরকে। ফারসীতে تیمور شاہ صاحبقراں (তিমুর শাহ সাহেবে কিরা) এসেছে। প্রকৃতপক্ষে, সাহেবে কিরান উপাধির উৎপত্তিই হয়েছে তার মাধ্যমে। সাহেবে কিরান (صاحبقران) মানে হলো “নক্ষত্রের সৌভাগ্যময় মিলনের অধিকারী”। জ্যোতিষশাস্ত্রের বিশ্বাস অনুযায়ী, যখন বৃহস্পতি ও শনি গ্রহ একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই অবস্থানে আসে, এই সময় জন্ম নেওয়া বা রাজত্ব শুরু করা কোনো শাসক অত্যন্ত সৌভাগ্যমান ও বিজয়ী হয়। আমীর তৈমুরের দীর্ঘ রাজত্ব এবং তার জশ খ্যাতির কারণে তার রাজ্যের জ্যোতিষিরা তাকে এই উপাধি দিয়েছিলো, আর সেখান থেকেই এই উপাধির ব্যবহার শুরু হয়। এভাবে তার পরবর্তী বাদশারাও নিজেদের ক্ষেত্রে এই উপাধির ব্যবহার শুরু করে যেমন, মুঘল সম্রাট শাহ জাহান এবং সম্রাট আকবর (দ্বিতীয়) নিজেদের ক্ষেত্রে “সাহেবে কিরান সানি” অর্থাৎ দ্বিতীয় সাহেবে কিরান উপাধি গ্রহণ করে। সেই আমলের মুদ্রার কয়েনেও “সাহেব কিরান সানি” সিল ব্যবহৃত হত। এছারাও “শাহ নে'য়মাতুল্লার ভবিষ্যদ্বাণী” বইয়ের ১৯৩ পৃষ্ঠায় সাহেবে কিরানের ব্যাখ্যার টীকায় বলা হয়েছে “মুসলিম ফৌজের সেনাপতিত্ব গ্রহণ করবেন এমন এক সাহেবে কিরান যার নাম হবে হাবিবুল্লাহ”। এথেকে স্পষ্ট হয় যে, ভবিষ্যদ্বাণীতে “হাবীবুল্লাহ সাহেবে কিরান” দ্বারা একজন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে, কোন সহচর বা অন্য কাউকে নয়। যেমন,
    ১। নাম: তৈমুর
      উপাধি: সাহেবে কিরান।

    ২। নাম: খুররম (শাহ জাহান)
      উপাধি: সাহেবে কিরান সানি।

    ৩। নাম: আকবর (দ্বিতীয়)
      উপাধি: সাহেবে কিরান।

    ৪। নাম: হাবিবুল্লাহ
      উপাধি: সাহেবে কিরান।

    তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের নিজস্ব প্রকাশনী থেকে নিজেদের মনগড়া অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করেছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় অনুবাদের গরমিলে। যেমন, তারা যেই কবিতার উদ্বৃতি দিয়েছে সেই কবিতার দ্বিতীয় পংক্তিতেই বলা হয়েছে “দ্বিতীয় সাহেবে কিরান এবং গুরগান বংষীয় বাদশাহগন এই দেশে রাজত্ব করবে তবে, তারা জালিমদের মত ব্যবহার করবে”। এখানে তারা দ্বিতীয় সাহেবে কিরানের অনুবাদ করেছে “দ্বিতীয় দাওর”। কারণ, এই পঙক্তিতে “দ্বিতীয় সাহেবে কিরান” কে স্পষ্টভাবে “জালিম” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা যেহেতু সাহেবে কিরান দ্বারা আল্লাহর মনোনীত বান্দা বোঝায়, তাই যেখানে সাহেবে কিরান কে জালিম বলা হয়েছে সেটা ঢাকতেই কৌশলে অনুবাদ পাল্টে দিয়েছে। আর যেখানে “হাবিবুল্লাহ সাহেবে কিরান” এসেছে সেখানে অনুবাদের কোন পরিবর্তন করেনি। এ থেকে স্পষ্ট হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে অনুবাদ পরিবর্তন করে এবং কবিতার অপব্যাখ্যার মাধ্যমে জুয়েল মাহমুদ কে হাবিবুল্লাহ এবং শামিম রেজা কে সাহেবে কিরান প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। অথচ জুয়েল মাহমুদ কে দিয়ে কোনভাবেই হাবিবুল্লাহ সাহেবে কিরান সাব্যস্ত করা যায় না এবং এটা অসম্ভব। অনুরূপভাবে হাবিবুল্লাহ এবং সাহেব কিরান দ্বারা আলাদা আলাদা ব্যক্তির দাবিও একদম ভিত্তিহীন এবং অযৌক্তিক।

    » গাজওয়াতুল হিন্দের আমীর বিষয়ক সংশয়

    গাজওয়াতুল হিন্দের আমীর কে হবেন, এ নিয়েও জনমনে নতুন এক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা যেভাবে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের অন্তরে সংশয় তৈরী করে তা নিম্নরূপ

    - গাজওয়াতুল হিন্দের এতবড় ফযিলতপূর্ণ জিহাদে নেতা বা আমীরের নাম অজ্ঞাত থাকতে পারে না।
    - এই যুদ্ধের আমীর সাধারণ কেউ হবে না, আমীর হতে হলে আল্লাহর মনোনীত হতে হবে।

    এ বিষয়ে তাদের বইয়ে স্পষ্টভাবে লিখেছে

    “গাজওয়াতুল হিন্দ বা হিন্দের যুদ্ধ কখন হবে এটা আমরা জানতে পারলেও সেই যুদ্ধের নেতা বা আমীর বা সেনাপতি কে বা কারা হবেন সেটাই শেষ প্রশ্ন থেকে যায়। আমরা এই বিষয়ে গত সব পরিচ্ছেদে হিন্দের যুদ্ধ নিয়ে যত হাদিস বর্ণনা করেছি, তাতেই এ বিষয়ের উত্তর মোটামুটি পাওয়া যায় কোন সময়ের যুদ্ধে কে বা কারা নেতৃত্ব দিবে। একটি সাধারণ বিষয় ভাবুন। যেই যুদ্ধের ভবিষ্যৎবাণী ১৪০০ বছর আগেই করা হয়েছে, যার মর্যাদার কারণে রসূল অনুপস্থিত থেকেও নামকরণে গাজওয়া বলা হয়েছে এবং তাতে আগাম বিজয়ের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। যেই যুদ্ধের মর্যাদার কারণে রসূল এর সাহাবারাও অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিল, আর আফসোস করেছিল। যেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য আবু হুরাইরাহ (রা.) তার সকল সম্পদ ব্যয় করে করতে হলেও রাজি ছিল। যেই যুদ্ধের শহীদরা হবে উত্তম শহীদ, যেই যুদ্ধের গাজী তথা বিজয়ীরা হবে জাহান্নাম থেকে মুক্ত, সেই যুদ্ধের আমীর বা নেতা কি সাধারণ কেউ হবেন? আর তার পরিচয়ও কি অজ্ঞাত থাকতে পারে? এমনকি সেই যুদ্ধে মুসলিমদের দলে যারা থাকবে তারাও যেখানে সৌভাগ্যবান কারণ তারা এই মর্যাদার অধিকারী হচ্ছেন, সেখানে আমীর বা নেতা কি সাধারণ কেউ হতে পারে? অবশ্যই না। আল্লাহ তা’আলা সেই যুদ্ধের আমীরকে মনোনীত করে, নির্দেশনা দিয়েই এই যুদ্ধ পরিচালনা করবেন, যার মাধ্যমে এই যুদ্ধে বিজয় আসবে। তাই এটা সাধারণভাবেই বোঝা যায় যে, সেই যুদ্ধের আমীর বা নেতা বা ইমাম আল্লাহ তায়ালা হতে মনোনীত হবেন। আখীরুজ্জামান গবেষনা ও তাত্বিক বিশ্লেষণ, পৃষ্ঠা: ২৩০

    [সংশয় নিরসন]
    গাজওয়াতুল হিন্দ সম্পর্কে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোর একটিতেও এই যুদ্ধের নেতৃত্ব কে দিবেন, বা আমীরের নাম কী হবে সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। রাসূলুল্লাহ শুধুমাত্র এ যুদ্ধের সংঘটিত হওয়া এবং অংশগ্রহণকারী মুসলিমদের মর্যাদা, যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন। কাজেই নবী যে বিষয়ে স্বয়ং নিরব থেকেছেন, সে বিষয়ে বাড়তি প্রশ্ন তোলা কিংবা “নেতৃত্ব কে দিবেন?” বলে বিতর্ক সৃষ্টি করা নিঃসন্দেহে বাড়াবাড়ি।

    গাজওয়াতুল হিন্দ আলাদা কোন বিষয় নয়, বরং এটা ইসলামের জিহাদের বিধানেরই অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু এটি শেষ জামানার একটি জিহাদ, সেহেতু এর ক্ষেত্রেও শরীয়তের জিহাদের নীতিমালাই প্রযোজ্য হবে। শরীয়ত এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেআমীর কিভাবে নির্ধারিত হবে এবং মুসলমানদের দায়িত্ব কী হবে এসব সবকিছুই ইসলামের মূলনীতি দ্বারা সুনির্ধারিত।

    জিহাদ মৌলিকভাবে একটি জামায়াতবদ্ধ আমল। আর ইসলামের যেকানো ইজতেমায়ি আমল আদায়ের জন্য একজন আমীর থাকা জরুরী। রাসুলুল্লাহ বলেছেন

    لا يحل لثلاثة يكونون بفلاة من الأرض إلا أمروا عليهم أحدهم

    “যেকোনো তিন ব্যক্তির জন্য কোনো মরু ময়দানে অবস্থান করা জায়েয নয়, যতক্ষণ না তারা তাদের একজনকে নিজেদের আমীর বানিয়ে নেয়।” মুসনাদে আহমদ: ১১/২২৭, হাদীস নং: ৬৬৪৭

    আমীর কিভাবে নিযুক্ত করা হবে এটা যানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে খিলাফাতে রাশিদিনের যুগে, কেননা আল্লাহর রাসুল বলেছেন

    وَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اختِلافاً كَثيراً فَعَليْكُمْ بسُنَّتِي وسُنَّةِ الخُلَفاءِ الرَّاشِدِينَ المَهْدِيِيِّنَ عَضُّوا عَلَيْهَا بالنَّواجِذِ

    তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত ক’রে ধরে থাকবে।

    এই হাদিসে রাসুল তার সুন্নাহ এবং তার খুলাফায়ে রাশিদাহর সুন্নাহ আকরে ধরার আদেশ করেছেন। খুলাফায়ে রাশিদাহর নির্বাচনপদ্ধতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ

    ১. আবু বকর (রা.) মুসলিম সমাজের শীর্ষস্থানীয় সাহাবিদের মধ্যে যারা আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ হিসেবে পরিচিত, তাদের পরামর্শ ও সমর্থনের ভিত্তিতে সর্বসম্মতভাবে খলীফা নির্বাচিত হন।

    ২. উমর (রা.) আবু বকর (রাযি.) মৃত্যুর আগে তাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মনোনয়ন দেন, এবং সাহাবায়ে কেরাম এই মনোনয়ন গ্রহণ করে তাকে খলীফা হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

    ৩. উসমান (রা.) উমর (রা.) তাঁর শাহাদাতের পূর্বে ছয়জন বিশিষ্ট সাহাবাকে নিয়ে একটি শূরা পরিষদ গঠন করেন। এই পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে উসমান (রা.)-কে খলীফা হিসেবে মনোনীত করে, এবং পরে মুসলিম জনসাধারণ তার হাতে বাই‘আত করে।

    ৪. আলী (রা.) উসমান (রা.)-এর শাহাদাতের পর মুসলিম জনসাধারণ এবং আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ সাহাবিদের সম্মতিক্রমে বাই‘আত গ্রহণ করে তিনি খলীফা নির্বাচিত হন। তার এই নির্বাচনপদ্ধতি ছিল আবু বকর (রা.)-এর পদ্ধতির অনুরূপ।

    এটা ছিলো খলিফা নির্বাচনপদ্ধতি। যদি খলিফা উপস্থিত থাকে সেক্ষেত্রে জিহাদের জন্য খলিফাই আমীর নিযুক্ত করবেন। আর যদি খলিফা বা ইসলামি সাশন না থাকে, সেক্ষেত্রে মুসলিমদের করণীয় হলো, নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক পরামর্শ ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে কোনো একজনকে আমির হিসেবে নিযুক্ত করা এবং তার আনুগত্য মেনে জিহাদের কাজ পরিচালনা করা। খলিফা বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সরাসরি উপস্থিতি না থাকলেও মুসলিম জামাআতের পক্ষে নিজ উদ্যোগে একজন আমির বা সেনাপতি নিযুক্ত করে দীনি কার্যক্রম ও জিহাদ পরিচালনা করা শরীয়তসম্মত এর সবচেয়ে উতকৃষ্ট প্রমাণ হলো মুতার যুদ্ধ। রাসুলুল্লাহ এই যুদ্ধে প্রাথমিকভাবে তিনজন সাহাবিকে পর্যায়ক্রমে সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন

    ১. যায়দ ইবনে হারিসা (রা.)
    ২. জাফর ইবনে আবি তালিব (রা.)
    ৩. আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.)

    তাঁরা একে একে শহিদ হন। এরপর যখন আর পূর্বনির্ধারিত কোনো সেনাপতি বেঁচে ছিলেন না, তখন সাহাবায়ে কেরাম নিজেরা পরামর্শ করে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-কে আমির হিসেবে মনোনীত করেন। তাঁর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে।
    হাদীসের বর্ণনা:

    عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَى زَيْدًا، وَجَعْفَرًا، وَابْنَ رَوَاحَةَ لِلنَّاسِ قَبْلَ أَنْ يَأْتِيَهُمْ خَبَرُهُمْ فَقَالَ: «أَخَذَ الرَّايَةَ زَيْدٌ فَأُصِيبَ، ثُمَّ أَخَذَ جَعْفَرٌ فَأُصِيبَ، ثُمَّ أَخَذَ ابْنُ رَوَاحَةَ فَأُصِيبَ - وَعَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ: «حَتَّى أَخَذَ الرَّايَةَ سَيْفٌ مِنْ سُيُوفِ اللَّهِ، حَتَّى فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ

    আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কোনো সংবাদ আসার আগেই সাহাবিদের সামনে ঘোষণা দেন "যায়দ (রা.) পতাকা বহন করেন, এবং তিনি শহিদ হন। এরপর জাফর (রা.) পতাকা গ্রহণ করেন, তিনিও শহিদ হন। তারপর ইবনু রাওয়াহা (রা.) পতাকা ধারণ করেন, তিনিও শাহাদত বরণ করেন।" এ কথা বলার সময় রাসুলুল্লাহ - এর চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল। তারপর তিনি বললেন "অবশেষে আল্লাহর তরবারিদের একজন তরবারি (খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রা.) পতাকা হাতে নিলেন। আল্লাহ তার মাধ্যমে মুসলমানদের বিজয় দান করলেন।"
    সহিহ বুখারি : ৪২৬২

    জিহাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কাউকে বিশেষভাবে মনোনীত করা বা ঐশী দিকনির্দেশনা প্রাপ্ত হওয়াকে শর্তারোপ করা একটি স্পষ্ট বিভ্রান্তি। কুরআনের বহু আয়াত ও রাসুলুল্লাহ -এর হাদিসে আল্লাহর পথে জিহাদের ব্যাপক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেখানে এ ধরনের কোনো শর্ত আরোপ করা হয়নি। বরং জিহাদের নির্দেশনাগুলো শর্তমুক্ত। অতএব, জিহাদের জন্য আমীরের আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত হওয়া কিংবা হাদিসে আমীরের নাম থাকাকে শর্ত বানানোর কোন ভিত্তি ইসলামে নেই। ইসলামের কোন যুগেই জিহাদের আমির কিংবা উলিল আমর নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন ভিত্তিহীন শর্ত আরোপ করা হয়নি। এই ধরনের চিন্তার উৎপত্তি হয়েছে শিয়া মতবাদ থেকে। শিয়াদের মতে "উলিল আমর" বলতে কেবল নির্বাচিত বারোজন ইমাম (আহলে বাইতের সদস্য)কে বোঝানো হয়। আব্দুল কাদের জিলানি রহিমাহুল্লাহ (৫৬১ হি.) বলেন

    فقد شبهت مذاهب الروافض باليهودية، قال الشعبي: محبة الروافض محبة اليهود، قالت اليهود: لا تصلح الإمامة إلا لرجل من آل داود، وقالت الروافضة: لا تصلح الإمامة إلا لرجل من ولد على بن أبي طالب؛ وقالت اليهود: لا جهاد في سبيل الله حتى يخرج المسيح الدجال، وينزل بسبب من السماء، وقالت الروافض: لا جهاد في سبيل الله حتى يخرج المهدي وينادي مناد من السماء.

    “রাফেজিদের মাযহাব ইহুদী ধর্মের সদৃশ। শাবি রহিমাহুল্লাহ বলেন, রাফেজিদেরকে ভালোবাসা ইহুদীদেরকে ভালোবাসার নামান্তর। কারণ ইহুদীরা বলে, ইমামত একমাত্র দাউদের বংশধর কোনো ব্যক্তির জন্যই প্রযোজ্য। আর রাফেজিরা বলে ইমামত একমাত্র আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর বংশধর কোনো ব্যক্তির জন্যই প্রযোজ্য। এমনিভাবে ইহুদীরা বলে, আল্লাহর রাস্তায় কোনো জিহাদ নেই, যতক্ষণ না মাসিহে দাজ্জাল আকাশ থেকে একটি মাধ্যম ব্যবহার করে অবতরণ করবে। আর রাফেজিরা বলে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ নেই, যতক্ষণ না ইমাম মাহদি বের হবেন এবং আকাশ থেকে একজন আহ্বায়ক আহ্বান করবেন।” ‘আলগুনইয়াহ লিতালিবি তারিকিল হাক, আবু আব্দুর রহমান সালাহ কৃত টীকাসহ: ১/১৮৪



    কাদিয়ানী মতবাদ বনাম ইমাম মাহমুদের কাফেলার সামঞ্জস্যতা :


    ১। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মীর্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীই নিজেকে মুজাদ্দিদ দাবি করে। মীর্যা গোলাম বলেছে

    پھر جب تیرھویں صدی کا اخیر ہوا اور چودھویں صدی کا ظہور ہونے لگا، تو خدا نے الہام کے ذریعہ مجھے خبر دی کہ تو اس صدی کا مجدد ہے
    অতপর যখন তেরশ শতাব্দী শেষ হয়েছে ৷ এবং চৌদ্দশ শতাব্দী শুরু হতে চলছে ৷ তখন আল্লাহ তা’লা ইলহাম দ্বারা আমাকে খবর দিয়েছেন যে, তুমি এই শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ৷ (রুহানী খজায়েন খ. ১৩ পৃষ্টা. ২০১)

    - জুয়েল মাহমুদও একইভাবে নিজেকে মুজাদ্দিদ দাবি করে। তার কথিত ইলহামে বলা হয়েছে
    “হে মুজাদ্দিদ, আপনি ও আপনার রবের শুকরিয়া আদায় করুন ও ছালাত কায়েম করুন।” (পুরাতন ইলহাম, পৃ: ১০)

    ২। কাদিয়ানীরা বিশ্বাস করে যারা, যে ব্যক্তি গোলাম আহমাদকে বিশ্বাস করবে না তারা জাহান্নামি। জনৈক কাদিয়ানী আলিম তার গ্রন্থে লিখেছে

    আল্লাহ তায়ালা গোলাম আহমাদ কে বললেন, “যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসে ও আমার আনুগত্য স্বীকার করে তার কর্তব্য হলো তোমার অনুসরণ করা এবং তোমার উপর ঈমান আনা। অন্যথায়, সে আমার বন্ধু নয় বরং সে আমার শক্রু। আর তোমার অস্বীকারকারীরা যদি তা গ্রহণ না করে বরং তোমাকে অবিস্বাস করে ও কষ্ট দেয়, তবে আমি তাদেরকে কঠোর শাস্তি দিব এবং এ সকল কাফিরদের জন্য কারাগার হিসাবে জাহান্নামকে তৈরী করে রেখেছি।” (নবুয়্যত ফিল ইলহাম, পৃ: ৪০)

    - জুয়েল মাহমুদও একই বিশ্বাস প্রচার করে, যদি কেউ তাকে অস্বীকার করে তবে সে জাহান্নামি। ইলহামে বলা হয়েছে
    “আর যে আপনাকে........অস্বীকার করবে সে জাহান্নামি এটা আপনার রবের শাস্তি। (পুরাতন ইলহাম, পৃ: ১২)



    মুজাদ্দিয়াতের অন্তড়ালে নবুওয়াতের দাবি :

    জুয়েল মাহমুদ নিজেকে জামানার মুজাদ্দিদ বলে দাবি করলেও তার প্রকৃত লক্ষ্য হচ্ছে নিজেকে নবুওয়াতের দাবিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং মুসলিম উম্মাহকে খতমে নবুওয়াতের সুস্পষ্ট আক্বীদা থেকে বিচ্যুত করা। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে সে তো কখনো স্পষ্টভাবে নিজেকে নবী বলেনি, বা কোনো নতুন শরীআত প্রাপ্তির দাবিও করেনি, তাহলে কীভাবে তাকে নবুওয়াতের দাবিদার বলা হচ্ছে? এর সহজ উত্তর হচ্ছে বর্তমানে যদি কেউ সরাসরি নিজেকে নবী বলে দাবি করে অথবা তার কাছে ওহী আসে এমন দাবি করে, তাহলে সে খুব সহজেই মুসলিম সমাজে প্রতারক বলে বিবেচিত হবে। কেননা মুসলিম মাত্রই এই আক্বীদা পোষন করে যে, মুহাম্মাদ এর পরে আর কোন নবী-রাসুল আসবেন না। কুরআন এবং হাদিসে স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে এই বিষয়ে। তাই সরাসরি নবুওয়াতের দাবি না করে সুকৌশলে বিভিন্ন প্রতারণা এবং ধোকাবাজির মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হবে। মিথ্যা এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ধাপে ধাপে মিথ্যা নবুওয়াতের বিষাক্ত আক্বীদাহ ঢুকিয়ে দিবে। এই বিষয়টির প্রতিই সম্ভবত আল্লাহর রাসুল ইঙ্গিত করে বলেছেন

    لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ قَرِيبٌ مِنْ ثَلَاثِينَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ

    “ত্রিশজন মিথ্যুক আগমণের পূর্বে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। তারা সকলেই দাবী করবে যে, সে আল্লাহর রাসূল”।

    এই হাদিসে আল্লাহর রাসুল সেই সকল ভন্ড নবুওয়াত এবং রিসালাতের দাবীদারদের ক্ষেত্রে “দাজ্জাল” এবং “কাজ্জাব” শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছেন, দাজ্জাল অর্থ প্রতারক, আর কাজ্জাব অর্থ মহা মিথ্যুক। অর্থাৎ তারা মিথ্যা এবং প্রতারণার মাধ্যমে নবুওয়াত এবং রিসালাতের দাবি করবে যার ফলে সাধারন মানুষ খাতামুন নাবিয়্যিন এর আক্বীদাহ পোষন করার পরেও তাদের প্রতারনার ফাদে পরে দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে।

    এভাবেই জুয়েল মাহমুদ প্রতারণার মাধ্যমে মিথ্যা নবুওয়াত ও রিসালাতের মিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সক্রিয় হয়েছে। মীর্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী যেভাবে মুজাদ্দিদ দাবির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে নবুওয়াতের দাবি করেছিল, একইভাবে জুয়েল মাহমুদ মুজাদ্দিদের দাবির মাধ্যমেই তার কার্যক্রম শুরু করেছে। পার্থক্য শুধু এই যে, কাদিয়ানী প্রকাশ্যে নবী হওয়ার দাবি করেছিল, আর জুয়েল মাহমুদ প্রকাশ্যে এই দাবি করে না; তবে কার্যত নবুওয়াত ও রিসালাতের দাবির জন্য যে বিষয়গুলো থাকা প্রয়োজন, তার প্রায় সবই তার দাবিতে বিদ্যমান।

    এ পর্যায়ে জুয়েল মাহমুদের মিথ্যা নবুওয়াত দাবির প্রমাণগুলো উপস্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ।

    জুয়েল মাহমুদের কথিত ইলহাম অনুযায়ী তার প্রতি আল্লাহ তা'য়ালা এক মহা সত্য কিতাব নাযিল করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। কথিত ইলহামগুলো নিম্নরূপ

    “আমি আপনাকে দান করেছি মহা সত্য গ্রন্থ। যা কুরআনকে প্রাধান্য দেয়।” (পুরাতন ইলহাম, পৃ: ২১)

    হে মুজাদ্দিদ, আমি আপনাকে এমন একটা গ্রন্থ দিলাম। যা এ সময়ের জ্ঞানীদের কল্পনার বাহিরে। (পুরাতন ইলহাম, পৃ: ১১)

    শপথ মহা সত্য গ্রন্থের যা আপনার উপর নাযিল হয়েছে। (পুরাতন ইলহাম, পৃ: ১৫)

    নিঃসন্দেহে আপনার নিকট নাযিলকৃত সত্যকে স্থান দিয়েছি কুরআনের নিচে। (পুরাতন ইলহাম, পৃ: ১৬)

    হে মুজাদ্দিদ, আপনাকে দান করলাম মহা সত্য। এটা এ যুগের মু'মিনদের জন্য নিদর্শন। (পুরাতন ইলহাম, পৃ: ১৭)


    [নবুওয়াত দাবির প্রমাণ-১]

    উপর্যুক্ত বক্তব্যসমূহ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে “আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব পাওয়া” এটি কেবল নবীদের জন্যই নির্ধারিত বৈশিষ্ট্য। কুরআনে আল্লাহ বলেন:

    "كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللَّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ"
    “মানবজাতি ছিল এক উম্মত, অতঃপর আল্লাহ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে নবীদেরকে প্রেরণ করলেন এবং সত্যসহ তাদের সাথে কিতাব নাযিল করলেন।” (সূরা বাকারা: ২১৩)

    এই আয়াত স্পষ্ট করে দেয় যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব নাযিল হওয়ার বিষয়টি কেবল নবী, রাসুলদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অতএব, কেউ যদি বলে “আমার উপর আল্লাহর কিতাব নাযিল হয়েছে” তাহলে সে সুস্পষ্টভাবে মিথ্যা নবুওয়াত এবং রিসালাতের দাবিদার বলে গণ্য হবে, যদিও সে মুখে নবী হওয়ার কথা অস্বীকার করে।

    জুয়েল মাহমুদ বারবার তার কথিত ইলহামের মাধ্যমে যে শব্দচয়ন করেছে “আপনাকে এমন একটা গ্রন্থ দিলাম”, “শপথ মহা সত্য গ্রন্থের” এগুলো ইসলামি পরিভাষায় ওহি ও নবুওয়াতের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ফলে এখানে "ইমামত", "মুজাদ্দিদিয়াত" কিংবা "ইলহাম"এর আবরণে লুকালেও মূলত তার দাবির অন্তঃসার হচ্ছে নবুওয়াত।

    [নবুওয়াত দাবির প্রমাণ-২]

    ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস অনুযায়ী, কিতাব হলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত ঐশীবাণী, যা শুধুমাত্র ওহীর মাধ্যমেই অবতীর্ণ হয়। ওহী হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী-রাসূলদের প্রতি প্রেরিত বিশেষ যোগাযোগ পদ্ধতি, যা ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে অথবা সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে আসে। এই ওহীর মাধ্যমেই কুরআন, তাওরাত, যাবুর ও ইঞ্জিলের মতো আসমানী কিতাবসমূহ নাযিল হয়েছে। এগুলো সম্পূর্ণ নির্ভুল, অকাট্য, সুনিশ্চিত, শরিয়তের ভিত্তি এবং সকল মুসলমানের জন্য মান্য করা বাধ্যতামূলক।

    অন্যদিকে ইলহাম হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো ব্যক্তির হৃদয়ে প্রেরিত বিশেষ অনুপ্রেরণা বা জ্ঞান। এটি সাধারণত কোনো মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি হৃদয়ে আসে। ইলহামের উৎস অনিশ্চিত, অস্পষ্ট, এটি নফসের কুমন্ত্রণা বা শয়তানের প্ররোচনা দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। তাই ইলহামের মাধ্যমে কখনোই সুস্পষ্ট আহকাম, বিধিনিষেধ বা শরিয়তের বিধান নির্ধারিত হয় না। ইলহাম যদি শরিয়তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে, কিন্তু তা কখনোই ওহীর মতো প্রামাণ্য বা সর্বজনীনভাবে মান্য করার বিষয় নয়। ইলহাম মূলত ব্যক্তিগত উপলব্ধির বিষয়। এটি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য বিশেষ হিদায়াত বা সতর্কতা হিসেবে কাজ করতে পারে, কিন্তু তা কখনোই সমগ্র উম্মাহর জন্য দলিল হিসেবে গণ্য হয় না। কেউ যদি ইলহামের মাধ্যমে কিতাব নাযিল হওয়ার দাবি করে, তাহলে তা মূলত ওহীর দাবিরই সমতুল্য। কারণ কিতাব শুধুমাত্র ওহীর মাধ্যমেই নাযিল হয় এবং তা শুধুমাত্র নবী-রাসূলদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সুতরাং, ইলহামের নামে কিতাব নাযিলের দাবি করা আসলে পরোক্ষভাবে ওহীর দাবিরই কৌশলগত পন্থা। এর প্রমাণ হচ্ছে জুয়েল মাহমুদ তার কথিত ইলহাম দ্বারা সুস্পষ্টভাবে সমগ্র মানব জাতির উদ্যেশ্যে নতুন বিধান বর্ণনা করছে। যেমন বলা হয়েছে “আর যে আপনাকে ও আপনার উপর নাযিলকৃত গ্রন্থকে অস্বীকার করবে সে জাহান্নামি এটা আপনার রবের শাস্তি।” (পুরাতন ইলহাম, পৃ: ১২)

    তাওহিদ ও ঈমানের পর ইসলাম যে কয়টি মৌলিক বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তার মধ্যে অন্যতম ও অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো খতমে নবুওয়তের আকিদা। এর অর্থ এই যে, নবুওয়ত ও রিসালাতের ধারাবাহিকতা শেষ হয়ে গেছে মুহাম্মদ -এর আগমনের মাধ্যমে। তিনি হলেন শেষ নবী। তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না, আর কারো ওপর অহি বা নতুন কোনো কিতাব নাযিল হবে না, যা দ্বীনের ক্ষেত্রে প্রমাণ বা দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।

    এই বিশ্বাস ইসলামের এমন একটি স্তম্ভ, যা তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, সালাত, সিয়াম, হজ, যাকাত ও কুরআনের মতোই প্রামাণ্য ও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। যেমন কেউ যদি আল্লাহর একত্ব, রাসুলের সত্যতা, আখিরাত বা নামাজ-রোজাকে অস্বীকার করে, তাহলে সে যেমন দ্বীন থেকে বের হয়ে যায়, তেমনি কেউ যদি খতমে নবুওয়তের আকিদাকে অস্বীকার করে কিংবা তা বিকৃত ব্যাখ্যার মাধ্যমে অস্বীকার করার চেষ্টা করে, সেও ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত বলে গণ্য হবে। এটা শুধু বিশ্বাসের বিষয় নয়, বরং ইসলামি আকিদার কেন্দ্রবিন্দু। মুহাম্মদ কেবলমাত্র আল্লাহর রাসুল হিসেবেই নয়, বরং তিনি শেষ নবী এ বিশ্বাসও ঈমানের অপরিহার্য অংশ। তাঁর পরে কেয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নবী আসবেন না এটা চূড়ান্ত ও অপরিবর্তনীয় সত্য। যে ব্যক্তি সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে এই সত্য অস্বীকার করে, সে স্পষ্টভাবে দ্বীন থেকে বহিস্কৃত হবে।


    আবু আম্মার সাইফুল্লাহ

    ২৩ যুল-হিজ্জাহ ১৪৪৬ _ ১৯ জুন ২০২৫

  • #2
    জাযাকাল্লাহ খাইরান ভাই, নব্য এই ফিতনার মূলোৎপাটনে আপনার প্রচেষ্টাকে আল্লাহ তাআলা কবুল করুন, আমীন
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

    Comment

    Working...
    X