Announcement

Collapse
No announcement yet.

এক পলাতক বাবার ট্র্যাজেডি!!!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • এক পলাতক বাবার ট্র্যাজেডি!!!

    একজন সাধারণ মানুষ তার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছিলেন। প্রতিদিনের মতো একদিন অফিস শেষে বাড়ি ফিরে এসে তিনি একটি বিভীষিকাময় দৃশ্য দেখলেন—কয়েকজন দুর্বৃত্ত মিলে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করছে। মুহূর্তেই তার ভেতরের মানুষটি জেগে উঠল। স্ত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে তিনি নিঃসংকোচে ওই লোকদের ওপর আক্রমণ করলেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে কয়েকজন দুষ্কৃতকারী নিহত ও আহত হয়।

    পরে যখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হল, তখন তিনি উপলব্ধি করলেন—যে কাজটা তিনি করেছেন, তা ন্যায়ের পক্ষে হলেও আইনের চোখে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তিনি জানতেন, পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে তাকেই গ্রেফতার করবে, কোনো ব্যাখ্যা-তর্ক-প্রমাণই তাকে রক্ষা করতে পারবে না। একজন নারীকে রক্ষা করার জন্য স্বামী হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করলেও, তার কাঁধে এখন খুনের অভিযোগের দাগ। এই ভয় ও শঙ্কা থেকে তিনি সেদিন ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান—চিরদিনের জন্য।

    বছরের পর বছর কেটে যায়। তিনি ছায়ার মতো বেঁচে থাকেন—এক পলাতক হিসেবে। কিন্তু একসময় তার হৃদয় ভেঙে পড়ে। বহু বছর নিজের ছেলেকে দেখেননি। সন্তান স্নেহে উদ্বেল হয়ে, অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন—ছেলের সঙ্গে দেখা করবেন। যেদিন বহু প্রতীক্ষার পরে তিনি ছেলের সামনে দাঁড়ালেন, সেদিন ছেলেটি তাকে বুকে টেনে নেয়নি, বরং মুখ ফিরিয়ে বলল, "তুমি আমার বাবা নও। তুমি একজন খুনি, একজন পলাতক। আমার ছোটবেলায়, যখন সবচেয়ে বেশি তোমার দরকার ছিল, তখন তুমি পাশে ছিলে না।"

    বাবা অসহায়ভাবে বললেন, "আমি তো তোমার মায়ের সম্মানের জন্যই সেই কাজ করেছিলাম। অন্য কোনো উপায় ছিল না আমার!" কিন্তু ছেলের চোখে তাতে কোনো মূল্য ছিল না। "তুমি নিজের নামের আগে 'খুনি', 'পলাতক' এসব তকমা লাগিয়ে নিলে কেন? তুমি যদি নিজেকে এসবভাবে দেখাতে না, তাহলে তো আমাকে সময় দিতে পারতে। আমি হয়তো আজ একজন ভালো মানুষ হতে পারতাম!"

    আজকের দিনে ‘কিতাল’-এর সাথে যুক্ত অনেক সংগঠনকে এই কথাটিই শুনতে হয়: "তোমরা নিজেদের নামের সঙ্গে কেন 'হত্যা', 'সন্ত্রাস', বা 'পলাতক' এর মতো তকমা লাগিয়ে নিলে? তোমরা যদি এই পথ না বেছে নিতে, তাহলে আমরা অনেক সহজেই দাওয়াতের কাজ করতে পারতাম, সমাজকে পরিবর্তন করতে পারতাম, মানুষকে মানুষ বানাতে পারতাম। তোমাদের কার্যক্রম আমাদের দাওয়াতি পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে!"

    একজন ছেলে যদি তার বাবাকে দোষারোপ করে এই বলে যে—“তুমি আমার পাশে ছিলে না, তুমি আমাকে মানুষ হতে দাওনি”—তাহলে প্রশ্ন করা যায়: তুমি যাকে “মানুষ” বলা চাচ্ছো, সে মানুষ হওয়ার শর্ত কী? তুমি কি এমন এক ‘মানবতা’র কথা বলছো, যেটা মায়ের সম্ভ্রমকেও মূল্যহীন মনে করে? যদি মায়ের ইজ্জত রক্ষায় পিতা রক্ত ঢেলে দেয়, আর সেই কাজের জন্য সন্তান তাকে পরিত্যাগ করে—তবে প্রশ্নটা শুধু আবেগের নয়, এটা এক নৈতিক ও দর্শনগত বিভাজন।

    আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে “ভালো মানুষ” হওয়া মানে প্রায়শই নিরপেক্ষ থাকা, নিরাপদ থাকা, এবং ক্ষমতার সামনে মাথা নিচু রাখা। এই "মানবতা" আজ এমন এক আদর্শ দাঁড় করিয়েছে যেখানে সত্যের জন্য, সম্মানের জন্য, বা রাসূল ﷺ–এর জন্য যদি কেউ দাঁড়ায়, তবে তাকে “সহিংস”, “পলাতক”, “সন্ত্রাসী” তকমা দিয়ে সমাজচ্যুত করা হয়। অথচ ইসলাম আমাদের শেখায়—ইজ্জত এবং ঈমান একই সুতোয় গাঁথা।

    আজ দাওয়াতের কথা বলা হয়, বিপ্লবের কথা বলা হয়—এটি একটি ইতিবাচক দিক। আমরা সবাই চাই সমাজে সুবিচার আসুক, মানুষের মধ্যে হিদায়াহ ছড়িয়ে পড়ুক। কিন্তু যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর অপমান করা হয়, তখন এই বিপ্লব কোথায় যায়? সেই দাওয়াত কি থেমে যায় না? তখন কি শুধু বক্তব্যে ক্ষোভ জানানোই যথেষ্ট?

    যারা তখন কলম ফেলে অস্ত্র তুলে নেন, যারা নফসের আরামের বদলে অপবাদ সহ্য করেন, যারা “পলাতক” নাম নিয়ে বাঁচেন, তারা নিছক বিদ্রোহী নন—তারা সেই ভালোবাসার মানুষ, যারা রাসূল ﷺ–এর সম্মানকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি মূল্য দেন। এই কারণে তাদের “পলাতক” থাকা, “আন্ডারগ্রাউন্ড” থাকা, সমাজের চোখে “অপরাধী” পরিচিত হওয়া—এসব কিছুর মাঝেও আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত থাকে। কারণ তারা আমাদের মনে করিয়ে দেন, কাকে ভালোবাসা উচিত, কাকে রক্ষা করা উচিত, কাকে মর্যাদা দেওয়া উচিত।

    সমসাময়িক মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের একাংশ আজ যে ধরনের সমালোচনা করে থাকেন, তা গভীরভাবে চিন্তা করলে এক বিপজ্জনক দ্বিচারিতার ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে তারা যখন পলাতক বা আন্ডারগ্রাউন্ড অবস্থানে থাকা কিছু সংগঠন বা ব্যক্তিকে নিয়ে বলেন—"এদের কোনো পরিকল্পনা ছিল না, কোনো স্টাডি ছিল না; এরা কেবল আবেগের বশে কিছু কাজ করে বসেছে, যা নিজেদের বিপদ যেমন ডেকে এনেছে, তেমনি দাওয়াতি কাঠামোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে"—তখন প্রশ্ন জাগে: এই সমালোচনার উৎস কি বুদ্ধিবৃত্তিক সততা, নাকি রাজনৈতিক সুরক্ষার মোড়কে ইমানি তাপকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা?

    এই কথাগুলো মুখে বলার সময় তারা অনেক সময় নিজেই আবার বলেন—"যদি আল্লাহর রাসূল ﷺ–কে অসম্মান করা হয়, তাহলে আমাদের বেঁচে থাকার মধ্যে আর কী কল্যাণ আছে?" কিন্তু এ কথা বলার পর, তারা আদৌ কি সেই অসম্মান প্রতিরোধের জন্য কোনো প্রস্তুতি নেন? কোনো রূপরেখা দাঁড় করান? কোনো কৌশলগত প্রতিক্রিয়া তৈরির চিন্তা করেন? বরং তারা এই তীব্র আবেগকে গিলে ফেলেন ‘পরিকল্পনার ঘাটতি’ তত্ত্ব দিয়ে, যেন রাসূল ﷺ–এর সম্মান রক্ষার প্রথম শর্তই হলো স্ট্র্যাটেজি, রিপোর্ট, ও একাডেমিক প্রেস রিলিজ!

    এখানে আবার লক্ষ্য করা যায়, এই সমালোচকদের কেউ কেউ এমন ঘটনা নিয়ে আবেগে আপ্লুত হন, যখন আমিরুল মোমেনিন মোল্লা উমার রাহিমাহুল্লাহ এক মুজাহিদ মেহমান— শায়খ উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ—কে শত্রুর হাতে তুলে না দিয়ে নিজেদের রাষ্ট্রকেই ধ্বংস হতে দেন। তারা একে 'ইজ্জতের রাজনীতি', 'বীরত্বের কাহিনি' বলে দেখেন। অথচ সেই একই মানদণ্ড তারা প্রয়োগ করেন না তাদের সমসাময়িক ভাইদের বেলায়—যারা রাসূল ﷺ–এর অবমাননা শুনে নিজেকে বিসর্জন দিয়েছেন। তাঁদের ওপর তখন চাপিয়ে দেওয়া হয় “সন্ত্রাসী”, “অভিযুক্ত”, “খেয়ালী” ইত্যাদি অপবাদ।

    এই বাস্তবতা থেকে স্পষ্ট হয়—দ্বিচারিতার মূল শিকার সেই ভাইয়েরা নন, যারা অপবাদ নিয়ে বাঁচছেন। বরং ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে—যারা সম্মান করেছিল রাসূল ﷺ–কে, তারা সম্মানের আসনে থাকবে; আর যারা তাঁকে সম্মান করার সাহস হারিয়ে ফেলেছিল, তারা হয়তো বুদ্ধিজীবী থাকবে, কিন্তু ইতিহাসে তাদের ঠাঁই হবে না।​
    فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

  • #2
    আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের পথভ্রষ্টতা থেকে হিফাজত করার সাথে সাথে পথভ্রষ্ট ব্যক্তি ও দল থেকেও হিফাজত করুন, আমীন

    আল্লাহ্‌ তাআলা Ibnul Irfan ভাইকে দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন, আমীন
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

    Comment

    Working...
    X