এই তাগুতি রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থা
কনকনে শীতের গভীর রাতে আপনি যদি হাইকোর্টের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন, তাহলে দারিদ্র্যপীড়িত নিঃস্ব মানুষগুলোর হৃদয়বিদারক রাত্রিযাপন আপনার চক্ষুদ্বয়কে অশ্রুসিক্ত করবে।
কেউ শুয়েছে একটিমাত্র কাঁথা গায়ে জড়িয়ে। কারো গায়ে আছে স্রেফ একটি চট। হাড়কাঁপুনি শীতের রাতে কাউকে দেখবেন পড়ে আছে খালি গায়ে।
অথচ পাশেই হলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। এখানে বসেই জ্ঞানের ফেরিওয়ালারা টাকার পাহাড় গড়েছে। ঢাকার অলিতেগলিতে সুরম্য অট্টালিকা নির্মাণ করেছে। গরিবের রক্তচোষা টাকা দিয়ে তারা বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করে। কিন্তু পাশেই শীতের প্রকোপে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। এই হলো বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্টের একটি চিত্র।
আমরা শুধু একটি আদালতের কথা বলছি না; রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন আদালত পর্যন্ত সর্বত্রই আজ একই চিত্র বিরাজ করছে। সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি-দুঃশাসন, অন্যায়-অবিচারের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে দেশের বিচার বিভাগগুলো।
জুলুমের শিকার হয়ে অসহায় মানুষ যখন আদালতে হাজির হয় সুষ্ঠু বিচারের আশায়, তখন তাদের উপর শুরু হয় জুলুমের নতুন অধ্যায়। বছরের পর বছর চলতে থাকে মামলা মুকাদ্দামা। শুনানির পর চলতে থাকে শুনানি। কিন্তু মাজলুমের পক্ষে কোনো রায় আসে না। একটি মামলা চালাতে চালাতে দেখা যায় ভিটা মাটি সব বিক্রি করতে হয়, তারপরও সে তার ন্যায্য অধিকার ফিরে পায়না। তবে যারা মোটা অঙ্কের ঘুষের টাকা ঢালতে পারে তারা অপরাধী হয়েও ছাড়া পেয়ে যায়। সমাজে তারা বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করে।
বিচারকরা হক্ব দেখে ফায়সালা করে না, ফায়সালা করে টাকা এবং দল দেখে। আপনি তাদের পিছনে অগণিত টাকা উড়াতে পারবেন বা আপনি আওয়ামীলীগ করবেন তাহলে আপনি অপরাধী হয়েও বে-কসুর মুক্তি পাবেন। অন্যথায় নিরপরাধ হওয়া সত্বেও আপনাকে জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ধুকে ধুকে জীবন বিসর্জন দিতে হবে।
আল্লাহ তা'আলার শরীয়ত এদের কাছে এক পয়সার মূল্যও রাখে না। এরা বিচার ফায়সালা করে নিজ দলের নেতা বা নেত্রীর নির্দেশে। হোক তা কুরআনের পক্ষে বা বিপক্ষে।
নিরপরাধ মানুষগুলোর দীর্ঘ নিঃশ্বাস এবং বুকফাটা আর্তনাদের নির্বাক সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জেলখানার উঁচু উঁচু দালানগুলো।
প্রিয় ভাই! গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন, আমরা এক জাহিলিয়্যাতের মধ্যে আছি। আওয়ামী জাহিলিয়্যাত। জাহেলি যুগে যেমন বিত্তশালী ও প্রভাবশালীদের ক্ষমতা চলতো বর্তমানেও ঠিক তাই চলছে। এমন যুগে অপরাধীদের কোনো শাস্তি হয় না, শাস্তি হয় নিরপরাধ গরীবদের।
একবার ভেবে দেখুন তো,
ছোট বোনের ধর্ষণের বিচার চাইতে থানায় গিয়ে ওসির হাতে বড় বোনের ধর্ষণের শিকার হবার ঘটনা কি বাংলাদেশে ঘটেনি?
শিশু রাজনকে জনসম্মুখে পিটিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনা কি এদেশের ঘটনা না?
চার সন্তানের জননীও কি ধর্ষণের শিকার হয়নি এই ক্ষমতাসীনদের হাতে?
আবরার ফাহাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড তো আমাদের চোখের সামনেই হয়েছে!
আমরা এর কোনটির বিচার পেয়েছি? তাগুত প্রশাসন আমাদেরকে প্রত্যেকবার ধোঁকা দিয়েছে। কাউকে কাউকে হয়তো লোক দেখানো গ্রেফতার করেছে ঠিক; কিন্তু জেলখানায় তাদেরকে রাজার হালতে রেখেছে এবং কিছুদিন পর তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে। বুক ফুলিয়ে তারা আবারও সমাজে অত্যাচার করে চলেছে!
প্রত্যেকটি ইস্যুতেই আমরা অনলাইনে সরগরম হয়েছি। কিছুদিন পর অন্য একটি ইস্যু তৈরী হলে পূর্বেরটি ভুলে গেছি। এভাবেই চলছে যুগের পর যুগ।
প্রিয় উম্মাহ! এভাবে আর কতদিন ধোঁকা খেতে থাকবো আমরা? এখনো কি বোঝার সময় আসেনি? আর কবে বুঝবো আমরা? এই তাগুতি রাষ্ট্রব্যবস্থা কী চায় তা কি এখনো স্পষ্ট হয়নি আমাদের সামনে?
বিচার ফায়সালার প্রশ্নে এই তাগুত কুরআনকে পিছনে ছুড়ে ফেলেছে। রাসূলের ইজ্জতের প্রশ্নে এই তাগুত, নাস্তিক-মুরতাদদের পক্ষ নিয়েছে।
তারপরও কি আমরা বুঝবো না যে, এই তাগুত ভারতের দালাল হয়ে বাংলাদেশে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে?
এরা মূলত চায় বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানিয়ে হিন্দুত্ববাদি শক্তির কাছে এদেশের মুসলিমদের জিম্মি করতে।
এরা চায় এ দেশের মসজিদগুলো গুড়িয়ে দিয়ে তার স্থানে মন্দির নির্মাণ করতে।
এখনো যদি আমরা সচেতন না হই তাহলে আমাদের ভাগ্যেও নেমে আসবে আরাকান বা দিল্লির ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ!
আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে বোঝার তাওফীক দান করেন, আমীন!
- সংগৃহিত
Comment