সিরিয়া মহাযুদ্ধের কাল ৩য় পর্ব
জসীমউদ্দীন আহমদ
দাজ্জাল তৈরি?
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘নিশ্চয় দাজ্জালের আর্বিভাবের পূর্বে ধোঁকাবাজির বেশ কিছু বছর অতিক্রান্ত হবে। তখন মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী আর সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করা হবে। বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে খেয়ানতকারী আর খেয়ানতকারীকে বিশ্বস্ত আখ্যায়িত করা হবে।’
ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.) এর ঘোষককে ঘোষণা দিতে শুনলাম, ‘সালাতের জন্য মসজিদে যাও।’ ঘোষণা শুনে আমি মসজিদে গেলাম এবং রাসুল (সা.) এর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে তিনি মিম্বরে উঠে বসলেন এবং মৃদু হেসে বললেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ সালাতের স্থানে বসে থাক।’
তারপর বললেন, ‘তোমরা কি জান, আমি তোমাদেরকে কেন একত্র করেছি?’
সাহাবিগণ বললেন, ‘আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-ই ভাল জানেন।’
তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের কিছু দেওয়ার জন্য বা কোনো ভীতি প্রদর্শনের জন্য সমবেত করিনি, বরং তামিম দারির একটি ঘটনা শোনানোর জন্য তোমাদেরকে একত্র করেছি। তামিম দারি ছিল খৃস্টান। সে আমার নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করেছে। সে আমাকে এমন একটি ঘটনা শুনিয়েছে, তা ওই কথার সঙ্গে মিল রাখে, যা দাজ্জাল সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে বলেছিলাম।’
সে বলল, ‘একদা সে ‘লাখাম’ ও ‘জুজাম’ গোত্রের ত্রিশজন লোকের সঙ্গে একটি সামুদ্রিক জাহাজে সফরে বের হয়েছিল। সমুদ্রের তরঙ্গমালা একমাস পর্যন্ত তাদের অজনা পথে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। তারপর সূর্যাস্তের সময় তারা একটি দ্বীপে নোঙ্গর করল। জাহাজের সঙ্গে বেঁধে রাখা ছোট নৌকায় করে তারা ওই দ্বীপে অবতরণ করল। তখন অস্বাভাবিক লোমবিশিষ্ট একটি প্রাণীর সাক্ষাৎ মিলল, যার লোমের আধিক্যের কারণে আগ-পিছ বোঝা যাচ্ছিল না। প্রাণীটি তাদের সঙ্গে কথা বলল। তারা অবাক হয়ে গেল, মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণী কীভাবে কথা বলতে পারে?
তারা ওই প্রাণীটিকে লক্ষ্য করে বলল, ‘তোর অমঙ্গল হোক, তুই কে?’
প্রাণীটি বলল, ‘আমি জাসসাসা।’
তারা বলল, ‘জাসসাসা’ কী?
সে বলল, আমি ‘গুপ্তসংবাদ’ অন্বেষণকারী। প্রাণীটি তাদের বলল, ‘ওই যে গির্জা দেখা যাচ্ছে, সেখানে একজন লোককে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সে তোমাদের খবর জানতে উদগ্রীব।’
তামিম দারি বলেন, ‘প্রাণীটির নিকট লোকটির কথা শুনে আমাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার হল, আমরা ভাবলাম, সে কি তবে শয়তান? তখন আমরা দ্রুত সেখানে গেলাম এবং ওই গির্জায় প্রবেশ করলাম। সেখানে বিশালাকৃতির এক লোককে দুই হাত ঘাড়ের সঙ্গে পেচিয়ে পায়ের গোছা ও গোড়ালির মাঝ দিয়ে বুক পর্যন্তÍ শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।’
আমরা তাকে দেখে বললাম, ‘ছি, তোর একি অবস্থা?’
লোকটি বলল, ‘তোমরা আমার খবর জানতে পারবে। আগে বল, তোমরা কারা?’
আমরা বললাম, ‘আমরা আরবের লোক। একটি সামুদ্রিক যানে আমরা সফর করছিলাম। হঠাৎ সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গমালার মধ্যে পড়ে গেলাম। সেই তরঙ্গ আমাদেরকে ক্রমাগত একমাস ভাসিয়ে নিয়ে চলল। তারপর আমরা এই দ্বীপে নোঙ্গর করলাম এবং ছোট নৌকায় করে এখানে অবতরণ করলাম। এখানে আমরা বহুলোম বিশিষ্ট এক প্রাণীর সাক্ষাৎ পেলাম, লোমের আধিক্যে যার অগ্র-পশ্চাৎ চেনা যায় না। সে বলল, সে জাসসাসা। সে আমাদেরকে, তোমার সংবাদ বলল।’
লোকটি বলল, ‘বিসানের খেজুর বাগানের কী অবস্থা। তা কি এখনো ফল দেয়?’ (বিসান ফিলিস্তিনের একটি অঞ্চল)
আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ, এখনো ফল দেয়।’
সে বলল, ‘শোন, শীঘ্রই তা ফল দেবে না।’
সে বলল, ‘তাবরিয়া’ (সি অব গ্যলিলি) সাগরের অবস্থা কী? তা কি শুকিয়ে গেছে?’
আমরা বললাম, ‘না তা শুকায়নি।’
সে বলল, ‘শীঘ্রই তা পানিশূন্য হয়ে যাবে।’
এরপর সে বলল, ‘তোমরা আমাকে ‘জুর’ ঝর্ণার খবর দাও। তাতে কি পানি আছে?’ (জুর সিরিয়ার একটি অঞ্চল)
আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ, তাতে প্রচুর পানি আছে। মানুষ ওই পানি দিয়ে চাষাবাদ করে।’
সে বলল, ‘তোমরা আমাকে উম্মি নবির খবর বল। তিনি কি করছেন?’
আমরা বললাম, ‘তিনি মক্কায় আর্বিভূত হয়েছেন। এবং সঙ্গীদের নিয়ে মদীনায় হিজরত করেছেন।’
সে বলল, ‘তার বিরুদ্ধে আরবরা কি যুদ্ধ করেছে?’
আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ।’
সে বলল, ‘তিনি তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন?’
আমরা বললাম, ‘তিনি তার পার্শ¦বর্তী আরবদের ওপর বিজয় লাভ করেছেন এবং তারা তাঁর অনুগত হয়ে গেছে।’
সে বলল, ‘এমনই হবে।’
আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ।’
সে বলল, ‘তাঁর আনুগত্য করাই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক। আচ্ছা, এবার আমি আমার অবস্থা বর্ণনা করছি, আমি ‘মসিহ দাজ্জাল’। অদূর ভবিষ্যতে আমাকে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হবে। আমি বের হয়ে সমগ্র পৃথিবীতে বিচরণ করব, শুধু মক্কা-মদিনা ব্যতীত। চল্লিশ দিনের মধ্যে পৃথিবীর সব স্থানে গমন করব। কিন্তু মক্কা-মদিনায় প্রবেশ আমার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যখনই আমি তার কোনো একটিতে প্রবেশের ইচ্ছা করব, তখন ফেরেশতা উন্মুক্ত তরবারি হাতে আমাকে বাধা প্রদান করবে। বস্তুত তার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতা পাহারারত রয়েছে।’
বর্ণনাকারী বলেন, এ পর্যন্ত বর্ণনা করে রাসুল আপন লাঠি দ্বারা মিম্বরে টোকা দিয়ে তিনবার বললেন, ‘এটাই মদিনা, এটাই মদিনা, এটাই মদিনা।’
তারপর তিনি বললেন, ‘আমি কি ইতোপূর্বে তোমাদেরকে এ হাদিসটি বর্ণনা করিনি?’
লোকেরা বলল, ‘জি হ্যাঁ।’
তারপর তিনি বললেন, ‘দাজ্জাল সিরিয়ার কোনো এক সাগরে অথবা ইয়েমেনের কোনো এক সাগরে রয়েছে। পরে বললেন, বরং সে পূর্ব দিক থেকে আগমন করবে। এই বলে তিনি হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারা করলেন।’ (সহিহ মুসলিম)
সি অব গ্যালিলি;
‘তাবরিয়া উপসাগর’ শুকিয়ে যাচ্ছে!
দাজ্জালসংক্রান্ত তামিম দারির হাদিসে দাজ্জালের আগমনের যেসব আলামতের কথা উল্লেখিত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ‘তাবরিয়া উপসাগর’, ‘বিসানের খেজুর বাগান’ এবং ‘আল-জুর ঝর্ণা’। এছাড়া হায়কলে সোলায়মানিকেও ইয়াহুদিধর্ম বিশ্বাসীরা দাজ্জাল আগমনের উপলক্ষ বলে মনে করে থাকে। এই পর্বে আমরা ভূ-তাত্ত্বিক এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
ইসরইলের সর্ববৃহৎ উষ্ণপানির লেক হচ্ছে, ‘সি অব গ্যালিলি’ যাকে আরবিতে বলা হয়েছে, ‘বাহরিয়ায়ে তাবরিয়া’। ৫৩ কিলোমিটার পরিধির এই হ্রদটি লম্বায় ২১ কিলোমিটার এবং প্রস্থে প্রায় ১৩ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ গভীরতা ৪৩ মিটার বা ১৪১ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০৫ ফুট নি¤œ এই হ্রদটি মৃতসাগরের পরে পৃথিবীর সর্বনি¤œ হ্রদ। সুমিষ্ট পানি এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এটি উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। ‘তাবরিয়া উপসাগরের’ অবস্থান হচ্ছে পূর্ব ইসরাইল জর্দান সীমান্তের সন্নিকটে। এ সময় পর্যন্ত তাতে নানা প্রজাতির সাধু পানির মাছ পাওয়া যায়।
‘তাবরিয়া উপসাগর’ ইসরাইল মিষ্টি পানির সবচেয়ে বড় আধার। এই উপসাগরের পানির প্রধান উৎস হল জর্দান নদী। নদীটি গোলান মালভূমির জাবালুশ-শায়খ চূড়া থেকে নেমে এসেছে। ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের ‘আরব-ইসরঈল যুদ্ধে’ ইসরঈলি ইয়াহুদিরা সিরিয়ার নিকট থেকে গোলান মালভূমি জবরদখল করে। যা অদ্যবধি তাদের মজবুত কব্জার মধ্যে রয়েছে। জাবালুশ-শায়খ গোলানের পাহাড়ি ধারার সবচেয়ে উঁচু চূড়া। এর উচ্চতা ৯২৩২ ফুট। যার এদিকে রয়েছে ‘বায়তুল মাকদিস’ আর অন্যদিকে সিরিয়ার রাজধানী ‘দামেস্ক’।
ইসরঈল জাবালুশ-শায়খ থেকে নেমে আসা তাবরিয়া উপসাগরের গতি ঘুরিয়ে নিজের দিকে নিয়ে গেছে। ইসরাইল পানির বেশির ভাগ চাহিদা পূরণ হয় তাবরিয়া দরিয়ার মাধ্যমে। এখান থেকে বছরে প্রায় ৪০ কোটি কিউবিক লিটার পানি পুরো ইসরঈলে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ইসরাইল মিনারেল ওয়াটারের (সুপেয় পানি) বিরাট উৎস এই তাবরিয়া উপসাগর। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এ অঞ্চলের মুসলমানদেরকে পানি থেকে বঞ্চিত করার জন্যে নিজের চাহিদা পূরণের পর ইসরঈল অবশিষ্ট পানি মরুভূমিতে নিয়ে ফেলছে। এতে একদিকে জর্দানের ভূমি বন্ধ্যা হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অন্যদিকে তাবরিয়া উপসাগরও শুকিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ইসরাইল কিছু সচেতন মানুষ ‘সেভ সি অব গ্যালিলি’ নামে ইন্টারনেট ও বিভিন্ন সামাজিক ফোরামে প্রচারণা শুরু করেছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াটার স্ট্যাটিস্টিকের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ইসরাইল বর্তমান ওয়াটার প্লান চালু থাকলে ২০২০ সালের মধ্যে সি অব গ্যালিলি বা তাবরিয়া উপসাগর শুকিয়ে যেতে পারে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইয়াহুদিদের ‘মেগডের’ মাঠ আর খৃস্টানদের ‘আরমাগেদনের’ প্রান্তর এই তাবরিয়া উপসাগরের কাছাকাছি পশ্চিমে অবস্থিত। এছাড়া হাদিসে দাজ্জাল কর্তৃক মুসলমানদের অবরোধ করে রাখার যে ‘আফিক’ ঘাঁটির কথা বলা হয়েছে, সেই স্থানটির অবস্থানও এই উপসাগরের দক্ষিণে।
বাকি অংশ নিচে.......
জসীমউদ্দীন আহমদ
দাজ্জাল তৈরি?
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘নিশ্চয় দাজ্জালের আর্বিভাবের পূর্বে ধোঁকাবাজির বেশ কিছু বছর অতিক্রান্ত হবে। তখন মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী আর সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করা হবে। বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে খেয়ানতকারী আর খেয়ানতকারীকে বিশ্বস্ত আখ্যায়িত করা হবে।’
ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.) এর ঘোষককে ঘোষণা দিতে শুনলাম, ‘সালাতের জন্য মসজিদে যাও।’ ঘোষণা শুনে আমি মসজিদে গেলাম এবং রাসুল (সা.) এর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে তিনি মিম্বরে উঠে বসলেন এবং মৃদু হেসে বললেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ সালাতের স্থানে বসে থাক।’
তারপর বললেন, ‘তোমরা কি জান, আমি তোমাদেরকে কেন একত্র করেছি?’
সাহাবিগণ বললেন, ‘আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-ই ভাল জানেন।’
তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের কিছু দেওয়ার জন্য বা কোনো ভীতি প্রদর্শনের জন্য সমবেত করিনি, বরং তামিম দারির একটি ঘটনা শোনানোর জন্য তোমাদেরকে একত্র করেছি। তামিম দারি ছিল খৃস্টান। সে আমার নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করেছে। সে আমাকে এমন একটি ঘটনা শুনিয়েছে, তা ওই কথার সঙ্গে মিল রাখে, যা দাজ্জাল সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে বলেছিলাম।’
সে বলল, ‘একদা সে ‘লাখাম’ ও ‘জুজাম’ গোত্রের ত্রিশজন লোকের সঙ্গে একটি সামুদ্রিক জাহাজে সফরে বের হয়েছিল। সমুদ্রের তরঙ্গমালা একমাস পর্যন্ত তাদের অজনা পথে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। তারপর সূর্যাস্তের সময় তারা একটি দ্বীপে নোঙ্গর করল। জাহাজের সঙ্গে বেঁধে রাখা ছোট নৌকায় করে তারা ওই দ্বীপে অবতরণ করল। তখন অস্বাভাবিক লোমবিশিষ্ট একটি প্রাণীর সাক্ষাৎ মিলল, যার লোমের আধিক্যের কারণে আগ-পিছ বোঝা যাচ্ছিল না। প্রাণীটি তাদের সঙ্গে কথা বলল। তারা অবাক হয়ে গেল, মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণী কীভাবে কথা বলতে পারে?
তারা ওই প্রাণীটিকে লক্ষ্য করে বলল, ‘তোর অমঙ্গল হোক, তুই কে?’
প্রাণীটি বলল, ‘আমি জাসসাসা।’
তারা বলল, ‘জাসসাসা’ কী?
সে বলল, আমি ‘গুপ্তসংবাদ’ অন্বেষণকারী। প্রাণীটি তাদের বলল, ‘ওই যে গির্জা দেখা যাচ্ছে, সেখানে একজন লোককে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সে তোমাদের খবর জানতে উদগ্রীব।’
তামিম দারি বলেন, ‘প্রাণীটির নিকট লোকটির কথা শুনে আমাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার হল, আমরা ভাবলাম, সে কি তবে শয়তান? তখন আমরা দ্রুত সেখানে গেলাম এবং ওই গির্জায় প্রবেশ করলাম। সেখানে বিশালাকৃতির এক লোককে দুই হাত ঘাড়ের সঙ্গে পেচিয়ে পায়ের গোছা ও গোড়ালির মাঝ দিয়ে বুক পর্যন্তÍ শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।’
আমরা তাকে দেখে বললাম, ‘ছি, তোর একি অবস্থা?’
লোকটি বলল, ‘তোমরা আমার খবর জানতে পারবে। আগে বল, তোমরা কারা?’
আমরা বললাম, ‘আমরা আরবের লোক। একটি সামুদ্রিক যানে আমরা সফর করছিলাম। হঠাৎ সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গমালার মধ্যে পড়ে গেলাম। সেই তরঙ্গ আমাদেরকে ক্রমাগত একমাস ভাসিয়ে নিয়ে চলল। তারপর আমরা এই দ্বীপে নোঙ্গর করলাম এবং ছোট নৌকায় করে এখানে অবতরণ করলাম। এখানে আমরা বহুলোম বিশিষ্ট এক প্রাণীর সাক্ষাৎ পেলাম, লোমের আধিক্যে যার অগ্র-পশ্চাৎ চেনা যায় না। সে বলল, সে জাসসাসা। সে আমাদেরকে, তোমার সংবাদ বলল।’
লোকটি বলল, ‘বিসানের খেজুর বাগানের কী অবস্থা। তা কি এখনো ফল দেয়?’ (বিসান ফিলিস্তিনের একটি অঞ্চল)
আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ, এখনো ফল দেয়।’
সে বলল, ‘শোন, শীঘ্রই তা ফল দেবে না।’
সে বলল, ‘তাবরিয়া’ (সি অব গ্যলিলি) সাগরের অবস্থা কী? তা কি শুকিয়ে গেছে?’
আমরা বললাম, ‘না তা শুকায়নি।’
সে বলল, ‘শীঘ্রই তা পানিশূন্য হয়ে যাবে।’
এরপর সে বলল, ‘তোমরা আমাকে ‘জুর’ ঝর্ণার খবর দাও। তাতে কি পানি আছে?’ (জুর সিরিয়ার একটি অঞ্চল)
আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ, তাতে প্রচুর পানি আছে। মানুষ ওই পানি দিয়ে চাষাবাদ করে।’
সে বলল, ‘তোমরা আমাকে উম্মি নবির খবর বল। তিনি কি করছেন?’
আমরা বললাম, ‘তিনি মক্কায় আর্বিভূত হয়েছেন। এবং সঙ্গীদের নিয়ে মদীনায় হিজরত করেছেন।’
সে বলল, ‘তার বিরুদ্ধে আরবরা কি যুদ্ধ করেছে?’
আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ।’
সে বলল, ‘তিনি তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন?’
আমরা বললাম, ‘তিনি তার পার্শ¦বর্তী আরবদের ওপর বিজয় লাভ করেছেন এবং তারা তাঁর অনুগত হয়ে গেছে।’
সে বলল, ‘এমনই হবে।’
আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ।’
সে বলল, ‘তাঁর আনুগত্য করাই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক। আচ্ছা, এবার আমি আমার অবস্থা বর্ণনা করছি, আমি ‘মসিহ দাজ্জাল’। অদূর ভবিষ্যতে আমাকে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হবে। আমি বের হয়ে সমগ্র পৃথিবীতে বিচরণ করব, শুধু মক্কা-মদিনা ব্যতীত। চল্লিশ দিনের মধ্যে পৃথিবীর সব স্থানে গমন করব। কিন্তু মক্কা-মদিনায় প্রবেশ আমার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যখনই আমি তার কোনো একটিতে প্রবেশের ইচ্ছা করব, তখন ফেরেশতা উন্মুক্ত তরবারি হাতে আমাকে বাধা প্রদান করবে। বস্তুত তার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতা পাহারারত রয়েছে।’
বর্ণনাকারী বলেন, এ পর্যন্ত বর্ণনা করে রাসুল আপন লাঠি দ্বারা মিম্বরে টোকা দিয়ে তিনবার বললেন, ‘এটাই মদিনা, এটাই মদিনা, এটাই মদিনা।’
তারপর তিনি বললেন, ‘আমি কি ইতোপূর্বে তোমাদেরকে এ হাদিসটি বর্ণনা করিনি?’
লোকেরা বলল, ‘জি হ্যাঁ।’
তারপর তিনি বললেন, ‘দাজ্জাল সিরিয়ার কোনো এক সাগরে অথবা ইয়েমেনের কোনো এক সাগরে রয়েছে। পরে বললেন, বরং সে পূর্ব দিক থেকে আগমন করবে। এই বলে তিনি হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারা করলেন।’ (সহিহ মুসলিম)
সি অব গ্যালিলি;
‘তাবরিয়া উপসাগর’ শুকিয়ে যাচ্ছে!
দাজ্জালসংক্রান্ত তামিম দারির হাদিসে দাজ্জালের আগমনের যেসব আলামতের কথা উল্লেখিত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ‘তাবরিয়া উপসাগর’, ‘বিসানের খেজুর বাগান’ এবং ‘আল-জুর ঝর্ণা’। এছাড়া হায়কলে সোলায়মানিকেও ইয়াহুদিধর্ম বিশ্বাসীরা দাজ্জাল আগমনের উপলক্ষ বলে মনে করে থাকে। এই পর্বে আমরা ভূ-তাত্ত্বিক এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
ইসরইলের সর্ববৃহৎ উষ্ণপানির লেক হচ্ছে, ‘সি অব গ্যালিলি’ যাকে আরবিতে বলা হয়েছে, ‘বাহরিয়ায়ে তাবরিয়া’। ৫৩ কিলোমিটার পরিধির এই হ্রদটি লম্বায় ২১ কিলোমিটার এবং প্রস্থে প্রায় ১৩ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ গভীরতা ৪৩ মিটার বা ১৪১ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০৫ ফুট নি¤œ এই হ্রদটি মৃতসাগরের পরে পৃথিবীর সর্বনি¤œ হ্রদ। সুমিষ্ট পানি এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এটি উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। ‘তাবরিয়া উপসাগরের’ অবস্থান হচ্ছে পূর্ব ইসরাইল জর্দান সীমান্তের সন্নিকটে। এ সময় পর্যন্ত তাতে নানা প্রজাতির সাধু পানির মাছ পাওয়া যায়।
‘তাবরিয়া উপসাগর’ ইসরাইল মিষ্টি পানির সবচেয়ে বড় আধার। এই উপসাগরের পানির প্রধান উৎস হল জর্দান নদী। নদীটি গোলান মালভূমির জাবালুশ-শায়খ চূড়া থেকে নেমে এসেছে। ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের ‘আরব-ইসরঈল যুদ্ধে’ ইসরঈলি ইয়াহুদিরা সিরিয়ার নিকট থেকে গোলান মালভূমি জবরদখল করে। যা অদ্যবধি তাদের মজবুত কব্জার মধ্যে রয়েছে। জাবালুশ-শায়খ গোলানের পাহাড়ি ধারার সবচেয়ে উঁচু চূড়া। এর উচ্চতা ৯২৩২ ফুট। যার এদিকে রয়েছে ‘বায়তুল মাকদিস’ আর অন্যদিকে সিরিয়ার রাজধানী ‘দামেস্ক’।
ইসরঈল জাবালুশ-শায়খ থেকে নেমে আসা তাবরিয়া উপসাগরের গতি ঘুরিয়ে নিজের দিকে নিয়ে গেছে। ইসরাইল পানির বেশির ভাগ চাহিদা পূরণ হয় তাবরিয়া দরিয়ার মাধ্যমে। এখান থেকে বছরে প্রায় ৪০ কোটি কিউবিক লিটার পানি পুরো ইসরঈলে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ইসরাইল মিনারেল ওয়াটারের (সুপেয় পানি) বিরাট উৎস এই তাবরিয়া উপসাগর। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এ অঞ্চলের মুসলমানদেরকে পানি থেকে বঞ্চিত করার জন্যে নিজের চাহিদা পূরণের পর ইসরঈল অবশিষ্ট পানি মরুভূমিতে নিয়ে ফেলছে। এতে একদিকে জর্দানের ভূমি বন্ধ্যা হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অন্যদিকে তাবরিয়া উপসাগরও শুকিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ইসরাইল কিছু সচেতন মানুষ ‘সেভ সি অব গ্যালিলি’ নামে ইন্টারনেট ও বিভিন্ন সামাজিক ফোরামে প্রচারণা শুরু করেছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াটার স্ট্যাটিস্টিকের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ইসরাইল বর্তমান ওয়াটার প্লান চালু থাকলে ২০২০ সালের মধ্যে সি অব গ্যালিলি বা তাবরিয়া উপসাগর শুকিয়ে যেতে পারে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইয়াহুদিদের ‘মেগডের’ মাঠ আর খৃস্টানদের ‘আরমাগেদনের’ প্রান্তর এই তাবরিয়া উপসাগরের কাছাকাছি পশ্চিমে অবস্থিত। এছাড়া হাদিসে দাজ্জাল কর্তৃক মুসলমানদের অবরোধ করে রাখার যে ‘আফিক’ ঘাঁটির কথা বলা হয়েছে, সেই স্থানটির অবস্থানও এই উপসাগরের দক্ষিণে।
বাকি অংশ নিচে.......
Comment