ভারতের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে সে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সংযোগ বা ‘কানেক্টিভিটি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ভারতের অর্থনৈতিক সংবাদপত্র দ্য বিজনেস লাইনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করেছেন দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি।
হাই কমিশনারকে উদ্ধৃত করে বিজনেস লাইন জানিয়েছে, “হ্যাঁ, বাংলাদেশ (এই কানেক্টিভিটি) দিয়েছে। তবে এটা বাস্তবায়নের জন্য গ্রাউন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা অবকাঠামো এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। নেপাল ও ভুটানও চায় তাদের পণ্য চলাচলের কিছুটা (কলকাতা বন্দরে থেকে) চট্টগ্রামে সরিয়ে আনতে। যদিও এর সূক্ষ্ম বিষয়গুলো এখনও স্থির করা হয়নি।”
বস্তুত বাংলাদেশের প্রধান বন্দর চট্টগ্রামকে যাতে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহার করতে পারে, ঢাকার কাছে দিল্লি এই দাবি জানিয়ে আসছে বহু বছর ধরে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮-র গোড়াতে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারত চট্টগ্রাম বন্দরে অ্যাকসেস পাওয়ার বিষযটি নিয়ে কথাবার্তা চালাচ্ছে। তাতে যে অবশেষে কাজ হয়েছে, রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলির বক্তব্যে তারই সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মিলল।
এই মুহুর্তে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন করতে হলে পূর্ব ভারতের কলকাতা-হলদিয়া কিংবা পারাদ্বীপ বন্দরে সে মাল খালাস করে সড়কপথে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তা নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ভারত যদি চট্টগ্রামের কানেক্টিভিটি পায়, তাহলে সে পথ অনেক কমে যাবে। কলকাতা থেকে ট্রাকে যে মাল শিলচর-কোহিমা-আগরতলায় নিয়ে যেতে আট-দশদিন লেগে যায়, চট্ট্রগ্রাম বন্দর থেকে সেই একই গন্তব্য মাত্র এক-দেড়দিনের ভেতর নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
ফলে চট্টগ্রামে কানেক্টিভিটি পাওয়ার জন্য ভারত কেন এতদিন ধরে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিল, সেটা বোঝা আদৌ কষ্টকর নয়।
বস্তুত নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়া বা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যে বাংলাদেশের জন্যও একটা গুরুত্বপূর্ণ ‘বাণিজ্যিক হিন্টারল্যান্ডে’ পরিণত হতে চলেছে, সাক্ষাৎকারে হাইকমিশনার সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও যা যা বলেছেন তার মূল কথা হল:
১) উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে বাংলাদেশ সরকার খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। ১৯৬৫-র যুদ্ধর আগে ভারত আর তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে মোট ছটি রেল রুট ছিল, সেই পথে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সব পুরনো রেলপথের সবগুলোকেই আবার চালু করতে আগ্রহী।
২) উত্তর-পূর্ব ভারতের বাজারের সঙ্গে তাদের যে ভৌগোলিক নৈকট্য, বাংলাদেশ সেটাকেই কাজে লাগাতে যায়। ভারতের এই অঞ্চলটা সে দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে, কিন্তু তুলনায় বাংলাদেশের অনেক কাছে। পরম্পরাগতভাবেই বাংলাদেশের অর্থনীতির সঙ্গে তারা বেশি যুক্ত। ফলে ওই অঞ্চলের চাহিদা যদি বাংলাদেশ মেটাতে পারে তাহলে তাতে দুপক্ষই লাভবান হবে।
৩) বস্তুত উত্তর-পূর্ব ভারতের এই বাজারকে লক্ষ্য করেই বহুজাতিক সংস্থা হোন্ডা বাংলাদেশে একটি মোটরসাইকেল কারখানা তৈরি করতে চলেছে। বাংলাদেশ চায় এই ধরনের বিনিয়োগ সে দেশে আরও আসুক।
৪) বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভূটান-ইন্ডিয়া-নেপাল) মোটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্ট-এর স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর এ বছরের মধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে বাংলাদেশ আশা করছে, যা বদলে দেবে এই পুরো অঞ্চলে সড়ক পরিবহনের চিত্র। ইতিমধ্যেই ভারত ও বাংলাদেশ তাদের সীমান্তে তিনটি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট চালু করে দিয়েছে, আরও একটি খুব শিগগিরই চালু হবে।
ভারতীয় বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন উত্তর-পূর্ব ভারত চট্টগ্রাম বন্দরে সত্যিই যখন কানেক্টিভিটি পাবে, তা হবে ওই অঞ্চলের জন্য বিরাট এক ‘গেমচেঞ্জার’ বা পালাবদলের পদক্ষেপ।
দিল্লিতে একাধিক স্ট্র্যাটেজিক এক্সপার্ট বাংলা ট্রিবিউনকে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের কল্যাণে উত্তর-পূর্ব ভারতে জঙ্গি সমস্যা বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতায় রাশ টানা সম্ভব হয়েছে – এখন কানেক্টেভিটি পাওয়ার ফলে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাদের আত্মীকরণের (অ্যাসিমিলেশন) প্রক্রিয়াও অনেক সহজ হবে।”
রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি-র ওই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকারের লিঙ্ক দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন তাদের ফেসবুক পেজেও পোস্ট করেছে।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জল সিরিয়া থেকে গড়িয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত চলে এসেছে
হাই কমিশনারকে উদ্ধৃত করে বিজনেস লাইন জানিয়েছে, “হ্যাঁ, বাংলাদেশ (এই কানেক্টিভিটি) দিয়েছে। তবে এটা বাস্তবায়নের জন্য গ্রাউন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা অবকাঠামো এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। নেপাল ও ভুটানও চায় তাদের পণ্য চলাচলের কিছুটা (কলকাতা বন্দরে থেকে) চট্টগ্রামে সরিয়ে আনতে। যদিও এর সূক্ষ্ম বিষয়গুলো এখনও স্থির করা হয়নি।”
বস্তুত বাংলাদেশের প্রধান বন্দর চট্টগ্রামকে যাতে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহার করতে পারে, ঢাকার কাছে দিল্লি এই দাবি জানিয়ে আসছে বহু বছর ধরে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮-র গোড়াতে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারত চট্টগ্রাম বন্দরে অ্যাকসেস পাওয়ার বিষযটি নিয়ে কথাবার্তা চালাচ্ছে। তাতে যে অবশেষে কাজ হয়েছে, রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলির বক্তব্যে তারই সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মিলল।
এই মুহুর্তে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন করতে হলে পূর্ব ভারতের কলকাতা-হলদিয়া কিংবা পারাদ্বীপ বন্দরে সে মাল খালাস করে সড়কপথে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তা নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ভারত যদি চট্টগ্রামের কানেক্টিভিটি পায়, তাহলে সে পথ অনেক কমে যাবে। কলকাতা থেকে ট্রাকে যে মাল শিলচর-কোহিমা-আগরতলায় নিয়ে যেতে আট-দশদিন লেগে যায়, চট্ট্রগ্রাম বন্দর থেকে সেই একই গন্তব্য মাত্র এক-দেড়দিনের ভেতর নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
ফলে চট্টগ্রামে কানেক্টিভিটি পাওয়ার জন্য ভারত কেন এতদিন ধরে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিল, সেটা বোঝা আদৌ কষ্টকর নয়।
বস্তুত নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়া বা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যে বাংলাদেশের জন্যও একটা গুরুত্বপূর্ণ ‘বাণিজ্যিক হিন্টারল্যান্ডে’ পরিণত হতে চলেছে, সাক্ষাৎকারে হাইকমিশনার সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও যা যা বলেছেন তার মূল কথা হল:
১) উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে বাংলাদেশ সরকার খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। ১৯৬৫-র যুদ্ধর আগে ভারত আর তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে মোট ছটি রেল রুট ছিল, সেই পথে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সব পুরনো রেলপথের সবগুলোকেই আবার চালু করতে আগ্রহী।
২) উত্তর-পূর্ব ভারতের বাজারের সঙ্গে তাদের যে ভৌগোলিক নৈকট্য, বাংলাদেশ সেটাকেই কাজে লাগাতে যায়। ভারতের এই অঞ্চলটা সে দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে, কিন্তু তুলনায় বাংলাদেশের অনেক কাছে। পরম্পরাগতভাবেই বাংলাদেশের অর্থনীতির সঙ্গে তারা বেশি যুক্ত। ফলে ওই অঞ্চলের চাহিদা যদি বাংলাদেশ মেটাতে পারে তাহলে তাতে দুপক্ষই লাভবান হবে।
৩) বস্তুত উত্তর-পূর্ব ভারতের এই বাজারকে লক্ষ্য করেই বহুজাতিক সংস্থা হোন্ডা বাংলাদেশে একটি মোটরসাইকেল কারখানা তৈরি করতে চলেছে। বাংলাদেশ চায় এই ধরনের বিনিয়োগ সে দেশে আরও আসুক।
৪) বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভূটান-ইন্ডিয়া-নেপাল) মোটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্ট-এর স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর এ বছরের মধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে বাংলাদেশ আশা করছে, যা বদলে দেবে এই পুরো অঞ্চলে সড়ক পরিবহনের চিত্র। ইতিমধ্যেই ভারত ও বাংলাদেশ তাদের সীমান্তে তিনটি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট চালু করে দিয়েছে, আরও একটি খুব শিগগিরই চালু হবে।
ভারতীয় বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন উত্তর-পূর্ব ভারত চট্টগ্রাম বন্দরে সত্যিই যখন কানেক্টিভিটি পাবে, তা হবে ওই অঞ্চলের জন্য বিরাট এক ‘গেমচেঞ্জার’ বা পালাবদলের পদক্ষেপ।
দিল্লিতে একাধিক স্ট্র্যাটেজিক এক্সপার্ট বাংলা ট্রিবিউনকে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের কল্যাণে উত্তর-পূর্ব ভারতে জঙ্গি সমস্যা বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতায় রাশ টানা সম্ভব হয়েছে – এখন কানেক্টেভিটি পাওয়ার ফলে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাদের আত্মীকরণের (অ্যাসিমিলেশন) প্রক্রিয়াও অনেক সহজ হবে।”
রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি-র ওই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকারের লিঙ্ক দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন তাদের ফেসবুক পেজেও পোস্ট করেছে।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জল সিরিয়া থেকে গড়িয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত চলে এসেছে
Comment