(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
সাদ্দামের ক্ষমতায় আসাটা ইসরাইল শুরু থেকেই মেনে নিতে পারে নি। ইসরাইলের সাথে সাদ্দামের ছিল সাপে নেউলে সম্পর্ক। ঝামেলা আরো গভীর হয়, যখন সাদ্দাম নিউক্লিয়ার বোমা তৈরির দিকে ঝোঁক দেন। সাদ্দামের নিউক্লিয়ার ইচ্ছা পুরনে এগিয়ে আসে ফ্রান্স। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জ্যাক সিরাক সাদ্দামকে প্যারিসে আমন্ত্রন জানান। এখানে গোপনীয়তার কিছু ছিলো না। প্রকাশ্যেই সাদ্দাম নিউক্লিয়ার রিয়াকটর বানানোর জন্য ফ্রান্সের সাথে চুক্তি করে। নগদ ক্যাশে চুক্তি বাস্তবায়ন হয়। সমগ্র টাকাটা ফ্রান্স অগ্রীম দাবি করে।
যাই হোক, শুরু হয় ইরাকের নিউক্লিয়ার রিয়াকটর তৈরির কাজ এবং ফ্রান্সের টেকনিশিয়ানরা ইরাকিদের সাথে নিয়ে বাগদাদের মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে ওসিরাকে এই নিউক্লিয়ার রিয়াকটর তৈরির কাজ শুরু করে।
আমেরিকা এতে সমর্থনও দেয় নি। নিষেধও করে নি। কারণ সাদ্দামকে তখন আমেরিকার ভীষণ দরকার। সাদ্দামের সব চাহিদায় আমেরিকা তখন মিটিয়ে দিচ্ছে। তার ইচ্ছা মত অস্ত্র দিচ্ছে ইরানকে মারার জন্য। সেই সাথে আমেরিকার ট্রাকটর ও কৃষি-যন্ত্রপাতি, সেইসাথে ফোর্ড আর ক্যাডিলাক গাড়ির বিশাল বাজারে পরিনত হয়েছে ইরাক। লাভ আর লাভ।
কিন্তু ইসরাইলে এটা অস্তিত্বের প্রশ্ন। যদিও আমেরিকা দাবি করে সাদ্দাম তাদের কনট্রোলে আছে, কিন্তু ইসরাইল কোনো ধরণের রিক্স নিয়ে চায় না। সে ইরাকের নিউক্লিয়ার বোমার কার্যক্রম একেবারে বন্ধ করে দিতে চায়। ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট তখন মনোহম বেগিন। ইউরোপ আমেরিকা জুড়ে সে লবিং শুরু করে। পলিটিক্যালি সমাধান করার চেষ্টা করে।
ওদিকে ইসরাইলের কুখ্যাত গোয়েন্দাবাহিনী মোসাদ বসে নেই। পলিটিক্যাল সমাধান না হলে বিকল্প ব্যবস্থায় জন্য তৈরি থাকতে বলা হয় মোসাদকে।
সেই সময় ইরাকের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে হরহামেশা ইসরাইল ধ্বংসের ডাক দেয়া হত এবং সাদ্দামও আরব বিশ্বে হ্যাডম হবার জন্য ইসরাইল কে আচ্ছামত গালাগালি করতো মিডিয়ার সামনে। ইসরাইল ধ্বংসের বাসনা প্রকাশ করতো।
এটাই ইসরাইলের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইসরাইল সরকার তার ডিপ্লোমেসি চালাতে থাকে। মোসাদের উপর দায়িত্ব পড়ে সাদ্দামের পারমানবিক বোমার কার্যক্রম দূর্বল করে দিতে। মোসাদ সেটা করে তাদের নিজেস্ব নিয়মেই।
যেমন ফ্রান্স থেকে সেন্ট্রিফিউজ আনার জন্য ফ্রেন্স বন্দরের যে গোডাউনে সেগুলো রাখা হত জাহাজে তোলার আগে, সেই গোডাউনে স্যাবোটাজ করে মোসাদ। উড়িয়ে দেয় সেটা। ব্যস, ছয় মাসের জন্য বিলম্বিত হয়ে যায় সাপ্লাই।
ফ্রান্সের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের এক মিশরীয় বিজ্ঞানীকে টার্গেট করে মোসাদ। তার চারিত্রিক দুর্বলতার সুযোগ নেয় মোসাদ। তার নারী ও টাকার প্রতি দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ক্লাসিক এসপিওন্যাজ করে তার কাছ থেকে ইরাকে তৈরি হতে থাকা নিউক্লিয়ার রিয়াকটরের গোটা মডেল হাতে পেয়ে যায় মোসাদ। লোকটি টেরও পায় নি। কিন্তু এই বিজ্ঞানী কাজ করতে ছিলেন সাদ্দামের গোয়েন্দাবাহিনীর পক্ষে হয়ে। তিনি যখনই বুঝতে পারেন, মোসাদ তাকে ফাঁদে ফেলেছে, তখনই তিনি কো-অপারেশন বন্ধ করেন ছদ্মবেশী মোসাদ স্পাইদের সাথে।
ব্যস, ১৪ই জুন, ১৯৮০, বিজ্ঞানী Yahya El Mashad কে খুন করে মোসাদ। ফ্রান্সের একটা নামকরা হোটেলে তিনি একজন প্রস্টিটিউটকে অর্ডার করেন। কিন্তু সেদিন যে প্রস্টিটিউট তাকে যৌনসেবা দিতে গিয়ে ছিলো, ধারনা করা হয় সে ছিলো মোসাদের এজেন্ট। যাই হোক, তার গলাকাঁটা লাশ পাওয়া যায়।
মোসাদের খুনো-খুনি চলতেই থাকে। নেক্সট তিন মাসে ইরাকের নিউক্লিয়ার রিয়াকটর তৈরির সাথে যুক্ত এক ডজনের বেশি বিজ্ঞানী খুন হয়, না হয় গায়েব হয়ে যায়। বিশ্বমিডিয়াতে তখন ব্যাপকভাবে মোসাদের সমালোচনা শুরু হয়। এমনিতেই মোসাদের রেপুটেশন ভয়াবহ। রীতিমত ভয়ঙ্কর।
কিন্তু এতো খুনো-খুনী করেও লাভের লাভ কিছুই হয় নি। সাদ্দাম তার নিউক্লিয়ার বোমা বানিয়েই ছাড়বেন। ফলাফল, মোসাদ এবার ঠিক করে ব্যাপারটা ইসরাইলি বিমান বাহিনীর হাতে ছেড়ে দিতে। ইরাকে গোয়েন্দাগিরি শুরু করে মোসাদ। পারমানবিক রিয়াকটরের স্পেসিফিক অবস্থান, সেখানে কারাকারা কাজ করে, কখন করে এবং সব কিছুর খবর যোগাড় করে ইসরাইলি বিমান বাহিনীর হাতে ছেড়ে দেয় ব্যাপারটা।
জেনারেল ডেভিভ ইরভি ছিলেন অপারেশন ব্যাবিলনের কমান্ডার। মোট আটটি F-16 বিমানকে সিলেক্ট করা হয়। এগুলো কিছুটা মডিফাইড করে ইসরাইল।
৭ই জুন, ১৯৮১। আটটি F-16 বিমান উড়ে আসে ইরাকে। তারা ঠিক জর্ডানের সীমান্ত ঘেঁষে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছে। এরপর সৌদি আরবের অরক্ষিত মরু অঞ্চল, অর্থাৎ জর্ডান সৌদি সীমান্তের কাছ দিয়ে ইরাকে ঢুকেছে। ইরাকে ঢুকে তারা বিমান উড়িয়েছে মাত্র ৩০ মিটার উপর দিয়ে। এতো নিচু দিয়ে বিমান উড়ানোর কারণে ইরাকী এয়ারডিফেন্স এদের ধরতে পারে নি। আর যে সময়ে তারা ইরাকে প্রবেশ করেছে বোমা মেরেছে, সেসময় নিউক্লিয়ার রিয়াকটরে কর্মীদের কাজের সিফট চেঞ্জ হচ্ছে। অর্থাৎ পারফেক্ট টাইমিং। এ কারণে বোমা হামলায় গোটা রিয়াকটর’টি ধ্বংস হয়েছে এবং মাত্র আটজন ইরাকি আর একজন ফ্রেন্স গবেষক মারা গেছেন।
ইরাকের আন্টিএয়ায় গানশিপগুলো গোলাগুলি করেছে অন্ধের মত। ইসরাইলি বিমানের Infrared Decoy Flare সহজেই বোকা বানিয়েছে সাদ্দামের বাহিনীকে। কোনো ধরণের ক্ষয়-ক্ষতি ছাড়াই বোমা মেরে নিউক্লিয়ার রিয়াকটর গুড়িয়ে দিয়ে, ইসরাইলি বিমান বাহিনী ফিরে এসেছে সেই একই পথ দিয়ে। এই বিমানবাহিনীর অপারেশনের পাইলট ছিলেন Ilan Ramon. যাই হোক, সাদ্দামের পারমানবিক বোমার স্বপ্ন এভাবেই শেষ করে দিয়েছিলো ইসরাইল।
এই বোমা হামলায় ফ্রান্সের তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি। কারণ রিয়াক্টর বানানোর গোটা অর্থটা শুরুতেই সে আদায় করে নিয়েছিলো। ব্যাপারটা অনেকটা ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্টের ওয়ারেন্টির মত। আপনি টাকা দিয়ে টিভি কিনেছেন। সেই টিভি যদি পড়ে গিয়ে ফিজিক্যালি ড্যামেজ হয়, সেক্ষেত্রে বিক্রেতার তো কিছুই যায় আসে না। সে তো টাকা পেয়েই গেছে। বুঝলেন তো ব্যাপারটা।
আমেরিকা ব্যাপক চিল্লাপাল্লা শুরু করে। ইসরাইলের ব্যাপক নিন্দা করে এবং বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক Sanction আরোপের কথাও বলে। এসব ছিলো মুখের বুলি। কারণে পর্দার আড়ালে ঠিকই প্রেসিডেন্ট রিগ্যান ইসরাইলি ফাইটার পাইলটদের প্রশংসা করে। তার ভাষায়, - Boys Will Always Be Boys.
যাই হোক, আশির দশকের শেষদিকে সাদ্দাম এক সময় আমেরিকার বিরুদ্ধে চলে যায়। সে সব ইতিহাস তো সবারই জানা। ১৯৯১ সালে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে মার্কিন বাহিনী সহজেই ইরাককে হারিয়ে দেয়। সৌদি আরবের ঘাটি স্থাপন করে তখন থেকেই। সেই যুদ্ধে সাদ্দাম অন্ধের মত ইসরাইলে কিছু স্কাড মিসাইল নিক্ষেপ করে। ইসরাইল চুপ করে বসে ছিলো। আমেরিকা সাদ্দামকে গুড়িয়ে দেয় সেই যুদ্ধে।
এই যুদ্ধের পর আমেরিকান রাষ্ট্রদুত ইসরাইলকে ধন্যবাদ জানায়। আফটার অল, ১০ বছর আগে যদি ইসরাইল সাদ্দামকে নিউক্লিয়ার বোমা তৈরিতে না বাধা দিতো, তাহলে ইতিহাস হয়ত অন্য রকম হতো।
সাদ্দামের ক্ষমতায় আসাটা ইসরাইল শুরু থেকেই মেনে নিতে পারে নি। ইসরাইলের সাথে সাদ্দামের ছিল সাপে নেউলে সম্পর্ক। ঝামেলা আরো গভীর হয়, যখন সাদ্দাম নিউক্লিয়ার বোমা তৈরির দিকে ঝোঁক দেন। সাদ্দামের নিউক্লিয়ার ইচ্ছা পুরনে এগিয়ে আসে ফ্রান্স। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জ্যাক সিরাক সাদ্দামকে প্যারিসে আমন্ত্রন জানান। এখানে গোপনীয়তার কিছু ছিলো না। প্রকাশ্যেই সাদ্দাম নিউক্লিয়ার রিয়াকটর বানানোর জন্য ফ্রান্সের সাথে চুক্তি করে। নগদ ক্যাশে চুক্তি বাস্তবায়ন হয়। সমগ্র টাকাটা ফ্রান্স অগ্রীম দাবি করে।
যাই হোক, শুরু হয় ইরাকের নিউক্লিয়ার রিয়াকটর তৈরির কাজ এবং ফ্রান্সের টেকনিশিয়ানরা ইরাকিদের সাথে নিয়ে বাগদাদের মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে ওসিরাকে এই নিউক্লিয়ার রিয়াকটর তৈরির কাজ শুরু করে।
আমেরিকা এতে সমর্থনও দেয় নি। নিষেধও করে নি। কারণ সাদ্দামকে তখন আমেরিকার ভীষণ দরকার। সাদ্দামের সব চাহিদায় আমেরিকা তখন মিটিয়ে দিচ্ছে। তার ইচ্ছা মত অস্ত্র দিচ্ছে ইরানকে মারার জন্য। সেই সাথে আমেরিকার ট্রাকটর ও কৃষি-যন্ত্রপাতি, সেইসাথে ফোর্ড আর ক্যাডিলাক গাড়ির বিশাল বাজারে পরিনত হয়েছে ইরাক। লাভ আর লাভ।
কিন্তু ইসরাইলে এটা অস্তিত্বের প্রশ্ন। যদিও আমেরিকা দাবি করে সাদ্দাম তাদের কনট্রোলে আছে, কিন্তু ইসরাইল কোনো ধরণের রিক্স নিয়ে চায় না। সে ইরাকের নিউক্লিয়ার বোমার কার্যক্রম একেবারে বন্ধ করে দিতে চায়। ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট তখন মনোহম বেগিন। ইউরোপ আমেরিকা জুড়ে সে লবিং শুরু করে। পলিটিক্যালি সমাধান করার চেষ্টা করে।
ওদিকে ইসরাইলের কুখ্যাত গোয়েন্দাবাহিনী মোসাদ বসে নেই। পলিটিক্যাল সমাধান না হলে বিকল্প ব্যবস্থায় জন্য তৈরি থাকতে বলা হয় মোসাদকে।
সেই সময় ইরাকের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে হরহামেশা ইসরাইল ধ্বংসের ডাক দেয়া হত এবং সাদ্দামও আরব বিশ্বে হ্যাডম হবার জন্য ইসরাইল কে আচ্ছামত গালাগালি করতো মিডিয়ার সামনে। ইসরাইল ধ্বংসের বাসনা প্রকাশ করতো।
এটাই ইসরাইলের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইসরাইল সরকার তার ডিপ্লোমেসি চালাতে থাকে। মোসাদের উপর দায়িত্ব পড়ে সাদ্দামের পারমানবিক বোমার কার্যক্রম দূর্বল করে দিতে। মোসাদ সেটা করে তাদের নিজেস্ব নিয়মেই।
যেমন ফ্রান্স থেকে সেন্ট্রিফিউজ আনার জন্য ফ্রেন্স বন্দরের যে গোডাউনে সেগুলো রাখা হত জাহাজে তোলার আগে, সেই গোডাউনে স্যাবোটাজ করে মোসাদ। উড়িয়ে দেয় সেটা। ব্যস, ছয় মাসের জন্য বিলম্বিত হয়ে যায় সাপ্লাই।
ফ্রান্সের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের এক মিশরীয় বিজ্ঞানীকে টার্গেট করে মোসাদ। তার চারিত্রিক দুর্বলতার সুযোগ নেয় মোসাদ। তার নারী ও টাকার প্রতি দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ক্লাসিক এসপিওন্যাজ করে তার কাছ থেকে ইরাকে তৈরি হতে থাকা নিউক্লিয়ার রিয়াকটরের গোটা মডেল হাতে পেয়ে যায় মোসাদ। লোকটি টেরও পায় নি। কিন্তু এই বিজ্ঞানী কাজ করতে ছিলেন সাদ্দামের গোয়েন্দাবাহিনীর পক্ষে হয়ে। তিনি যখনই বুঝতে পারেন, মোসাদ তাকে ফাঁদে ফেলেছে, তখনই তিনি কো-অপারেশন বন্ধ করেন ছদ্মবেশী মোসাদ স্পাইদের সাথে।
ব্যস, ১৪ই জুন, ১৯৮০, বিজ্ঞানী Yahya El Mashad কে খুন করে মোসাদ। ফ্রান্সের একটা নামকরা হোটেলে তিনি একজন প্রস্টিটিউটকে অর্ডার করেন। কিন্তু সেদিন যে প্রস্টিটিউট তাকে যৌনসেবা দিতে গিয়ে ছিলো, ধারনা করা হয় সে ছিলো মোসাদের এজেন্ট। যাই হোক, তার গলাকাঁটা লাশ পাওয়া যায়।
মোসাদের খুনো-খুনি চলতেই থাকে। নেক্সট তিন মাসে ইরাকের নিউক্লিয়ার রিয়াকটর তৈরির সাথে যুক্ত এক ডজনের বেশি বিজ্ঞানী খুন হয়, না হয় গায়েব হয়ে যায়। বিশ্বমিডিয়াতে তখন ব্যাপকভাবে মোসাদের সমালোচনা শুরু হয়। এমনিতেই মোসাদের রেপুটেশন ভয়াবহ। রীতিমত ভয়ঙ্কর।
কিন্তু এতো খুনো-খুনী করেও লাভের লাভ কিছুই হয় নি। সাদ্দাম তার নিউক্লিয়ার বোমা বানিয়েই ছাড়বেন। ফলাফল, মোসাদ এবার ঠিক করে ব্যাপারটা ইসরাইলি বিমান বাহিনীর হাতে ছেড়ে দিতে। ইরাকে গোয়েন্দাগিরি শুরু করে মোসাদ। পারমানবিক রিয়াকটরের স্পেসিফিক অবস্থান, সেখানে কারাকারা কাজ করে, কখন করে এবং সব কিছুর খবর যোগাড় করে ইসরাইলি বিমান বাহিনীর হাতে ছেড়ে দেয় ব্যাপারটা।
জেনারেল ডেভিভ ইরভি ছিলেন অপারেশন ব্যাবিলনের কমান্ডার। মোট আটটি F-16 বিমানকে সিলেক্ট করা হয়। এগুলো কিছুটা মডিফাইড করে ইসরাইল।
৭ই জুন, ১৯৮১। আটটি F-16 বিমান উড়ে আসে ইরাকে। তারা ঠিক জর্ডানের সীমান্ত ঘেঁষে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছে। এরপর সৌদি আরবের অরক্ষিত মরু অঞ্চল, অর্থাৎ জর্ডান সৌদি সীমান্তের কাছ দিয়ে ইরাকে ঢুকেছে। ইরাকে ঢুকে তারা বিমান উড়িয়েছে মাত্র ৩০ মিটার উপর দিয়ে। এতো নিচু দিয়ে বিমান উড়ানোর কারণে ইরাকী এয়ারডিফেন্স এদের ধরতে পারে নি। আর যে সময়ে তারা ইরাকে প্রবেশ করেছে বোমা মেরেছে, সেসময় নিউক্লিয়ার রিয়াকটরে কর্মীদের কাজের সিফট চেঞ্জ হচ্ছে। অর্থাৎ পারফেক্ট টাইমিং। এ কারণে বোমা হামলায় গোটা রিয়াকটর’টি ধ্বংস হয়েছে এবং মাত্র আটজন ইরাকি আর একজন ফ্রেন্স গবেষক মারা গেছেন।
ইরাকের আন্টিএয়ায় গানশিপগুলো গোলাগুলি করেছে অন্ধের মত। ইসরাইলি বিমানের Infrared Decoy Flare সহজেই বোকা বানিয়েছে সাদ্দামের বাহিনীকে। কোনো ধরণের ক্ষয়-ক্ষতি ছাড়াই বোমা মেরে নিউক্লিয়ার রিয়াকটর গুড়িয়ে দিয়ে, ইসরাইলি বিমান বাহিনী ফিরে এসেছে সেই একই পথ দিয়ে। এই বিমানবাহিনীর অপারেশনের পাইলট ছিলেন Ilan Ramon. যাই হোক, সাদ্দামের পারমানবিক বোমার স্বপ্ন এভাবেই শেষ করে দিয়েছিলো ইসরাইল।
এই বোমা হামলায় ফ্রান্সের তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি। কারণ রিয়াক্টর বানানোর গোটা অর্থটা শুরুতেই সে আদায় করে নিয়েছিলো। ব্যাপারটা অনেকটা ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্টের ওয়ারেন্টির মত। আপনি টাকা দিয়ে টিভি কিনেছেন। সেই টিভি যদি পড়ে গিয়ে ফিজিক্যালি ড্যামেজ হয়, সেক্ষেত্রে বিক্রেতার তো কিছুই যায় আসে না। সে তো টাকা পেয়েই গেছে। বুঝলেন তো ব্যাপারটা।
আমেরিকা ব্যাপক চিল্লাপাল্লা শুরু করে। ইসরাইলের ব্যাপক নিন্দা করে এবং বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক Sanction আরোপের কথাও বলে। এসব ছিলো মুখের বুলি। কারণে পর্দার আড়ালে ঠিকই প্রেসিডেন্ট রিগ্যান ইসরাইলি ফাইটার পাইলটদের প্রশংসা করে। তার ভাষায়, - Boys Will Always Be Boys.
যাই হোক, আশির দশকের শেষদিকে সাদ্দাম এক সময় আমেরিকার বিরুদ্ধে চলে যায়। সে সব ইতিহাস তো সবারই জানা। ১৯৯১ সালে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে মার্কিন বাহিনী সহজেই ইরাককে হারিয়ে দেয়। সৌদি আরবের ঘাটি স্থাপন করে তখন থেকেই। সেই যুদ্ধে সাদ্দাম অন্ধের মত ইসরাইলে কিছু স্কাড মিসাইল নিক্ষেপ করে। ইসরাইল চুপ করে বসে ছিলো। আমেরিকা সাদ্দামকে গুড়িয়ে দেয় সেই যুদ্ধে।
এই যুদ্ধের পর আমেরিকান রাষ্ট্রদুত ইসরাইলকে ধন্যবাদ জানায়। আফটার অল, ১০ বছর আগে যদি ইসরাইল সাদ্দামকে নিউক্লিয়ার বোমা তৈরিতে না বাধা দিতো, তাহলে ইতিহাস হয়ত অন্য রকম হতো।
Comment