১০ নং মহাবিপদ সংকেত: (আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসে বিশ্বাসী প্রতিটি মুমিনেরই এটা খুব মনোযোগ সহকারে পড়া উচিত।) বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সমগ্র বিশ্ব আজ অস্থির ও দিকভ্রান্ত। সকলের মাথায়ই কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে, ইমাম মাহদীর আগমন কি অত্যাসন্ন? খুব শীঘ্রই কি দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে? প্রশ্নটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ এর প্রামাণ্য পর্যালোচনার। এককথায় উত্তর দিতে হলে বলবো, হ্যাঁ ভাই, খুবই অত্যাসন্ন, একেবারেই নিকটে; এতো নিকটে যে, গভীরভাবে একটু কান পাতলেই আমরা এর পদধ্বনি শুনতে পাবো। বিষয়টি নিয়ে অনেকে কিছু লেখালেখি করলেও প্রামাণ্য হাদীস ও সঠিক তথ্যসূত্র সহকারে আলোচনা না করায় তা ঘোলাটে রূপ ধারণ করেছে। তাই আমি এ বিষয়ে তথ্যবহুল এমন কিছু আলোচনা পেশ করার ইচ্ছা পোষণ করেছি, যদ্বারা আপনি বিস্ময়াভূত না হয়ে পারবেন না। আজ শুধু একটি হাদীস ও এর প্রেক্ষাপটে একটি ঘটনা শোনাবো আপনাদের। এক: ইমাম নুআঈম বিন হাম্মাদ রহ. (মৃত্যু: 228 হি.) তাঁর ‘আল ফিতান’ গ্রন্থে বলেন:حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، عَنْ صَدَقَةَ بْنِ خَالِدٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ حُمَيْدٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ تُبَيْعٍ، قَالَ: سَيَعُوذُ بِمَكَّةَ عَائِذٌ فَيُقْتَلُ، ثُمَّ يَمْكُثُ النَّاسُ بُرْهَةً مِنْ دَهْرِهِمْ، ثُمَّ يَعُوذُ عَائِذٌ آخَرُ، فَإِنْ أَدْرَكْتَهُ فَلَا تَغْزُوَنَّهُ، فَإِنَّهُ جَيْشُ الْخَسْفِ অর্থাৎ তুবাঈ রহ. বলেন, সত্ত্বরই মক্কায় এক আশ্রয়প্রার্থী আশ্রয় নিবে।অতঃপর তাকে হত্যা করা হবে। এরপর লোকেরা কিছুকাল অতিক্রান্ত করতে না করতেই দ্বিতীয় আরেকজন আশ্রয়প্রার্থী (মক্কায়) আশ্রয় নিবে। সুতরাং তুমি যদি তাঁর যুগ পাও তাহলে তাঁর বিরূদ্ধে যুদ্ধে যেও না। কেননা, তারা হবে ভুমিধসে ধ্বংসপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী। (আল ফিতান, নুআঈম বিন হাম্মাদ: 1/327 হাদীস নং 935) হাদীসটির বিশ্লেষণ: এটা প্রখ্যাত তাবেয়ী তুবাঈ বিন আমের হুমাইরী রহ. এর বর্ণিত হাদীস, যাকে হাদীসের পরিভাষায় হাদীসে মাকতূ’ বলা হয়। রাসূল সা. এর যুগ পেলেও তিনি আবু বকর রাযি. এর খেলাফত আমলে ইসলাম গ্রহণ করেছেন । তিনি বিখ্যাত তাবেয়ী কা’বে আহবার রহ. এর স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান। তিনি আবু দারদা রাযি., কা’বে আহবার রহ. প্রমূখ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর তাঁর থেকে আতা রহ., মুজাহিদ রহ. সহ বিখ্যাত তাবেয়ীগণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি সাহাবীদের মাঝে খুবই গ্রহণযোগ্য ও বিজ্ঞ আলেম হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সর্বাধিক হাদীস সংরক্ষণকারী আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাযি. এর মতো জলীলুল কদর সাহাবী পর্যন্ত তাকে শামের সবচে জ্ঞানী বলে সম্বোধন করেছেন এবং তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞাসা করতেন। (দেখুন, তাহযীবুল কামাল: 4/316 জীবনী নং 796) তাই এটা মাকতু’ হাদীস হলেও যথেষ্ঠ মানসম্পন্ন ও শক্তিশালী একটি বর্ণনা। এ হাদীসটির বর্ণনাকারীদের সবাই নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত হলেও শুধুমাত্র অলীদ বিন মুসলিম নামক একজন বর্ণনাকারী মুদাল্লিস হওয়ায় বর্ণনায় একটু দুর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনার দ্বারা এ দুর্বলতা অনেকটাই দূর হয়ে যায়। মুসলিম শরীফের বর্ণনাটি হলো: فَقَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَعُوذُ عَائِذٌ بِالْبَيْتِ، فَيُبْعَثُ إِلَيْهِ بَعْثٌ، فَإِذَا كَانُوا بِبَيْدَاءَ مِنَ الْأَرْضِ خُسِفَ بِهِمْ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ فَكَيْفَ بِمَنْ كَانَ كَارِهًا؟ قَالَ: يُخْسَفُ بِهِ مَعَهُمْ، وَلَكِنَّهُ يُبْعَثُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى نِيَّتِهِ অর্থাৎ উম্মে সালামা রাযি. বলেন, নবী করীম সা. বলেছেন, কাবা ঘরের পাশে একজন লোক আশ্রয় নিবে। তাঁর বিরুদ্ধে একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন বায়দা নামক স্থানে পৌঁছবে তখন তাদেরকে নিয়ে যমিন ধসে যাবে। উম্মে সালামা রাযি. বলেন, আমি রাসূল সা.-কে জিজ্ঞেস করলাম, অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে যারা তাদের সাথে যাবে তাদের কী অবস্থা হবে? উত্তরে নবী করীম সা. বললেন, তাকে সহ যমিন ধসে যাবে। তবে কিয়ামতের দিন সে আপন নিয়তের উপরে পুনরুত্থিত হবে। (সহীহ মুসলিম: 4/2208, হাদীস নং 2882) তাই সর্বদিক বিবেচনায় উপরোক্ত হাদীসটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের বলা যায়। হাদীসটির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা: এ হাদীসে বাইতুল্লাহ শরীফে যিনি আশ্রয়প্রার্থী হবেন বলা হয়েছে, তিনি হলেন মাহদী। তবে এখানে দু’জন মাহদী আসবে। প্রথমজন হবে মিথ্যুক ও ভণ্ড, যার বিরূদ্ধে সৈন্যবাহিনী পাঠানো হলে সৈন্যবাহিনী ধ্বংস হবে না; বরং সে নিজেই নিহত হয়ে যাবে। আর দ্বিতীয় ব্যক্তিটি হবেন সত্যিকার মাহদী, যার বিরূদ্ধে প্রেরিত বাহিনী ভুমিধসে সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে। হাদীসে বলা হয়েছে, সত্য ও মিথ্যা মাহদীর মাঝের ব্যবধান হবে কিছুকাল। হাদীসে بُرْهَةً শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষায় এর অর্থ হলো, কিছু সময়। উলামায়ে কেরামের মতে এ 'কিছু সময়' বলতে 30 থেকে 40 বছর, কারো মতে 50 বছর এবং কারো মতে 90 বছর উদ্দেশ্য। তবে সবচে বিশুদ্ধ মত হলো, এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কোনো বছর নির্ধারণ করার কোনো সুযোগ নেই। সেটা 40 বছর পরও হতে পারে, 50 বছর পরও হতে পারে, 90 বছরেও হতে পারে আবার এর কিছু আগেপরেও হতে পারে। আল্লাহই ভালো জানেন। তবে এটা নিশ্চিত যে, মিথ্যা মাহদীর মৃত্যুর কিছুকালের মধ্যেই সত্য ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ ঘটবে। মিথ্য মাহদীর আত্মপ্রকাশ: 20 নভেম্বর 1979 সালে ফজরের সময় জুহাইমান আল ওতাইবী নামক একব্যক্তি অস্ত্র ও লোকবল নিয়ে আকস্মিকভাবে বাইতুল্লাহর দখল নিয়ে নেয়। তারপর মাইক হাতে সৌদি সরকারের বিভিন্ন দূর্নীতি ও দুঃশাসনের বিবরণ দিয়ে ঘোষণা করলো যে, এখন এ থেকে মুক্তির সময় এসে গেছে। রাসূল সা. হাদীসে যে মাহদীর কথা বলেছিলেন সে মাহদী এখানে উপস্থিত। তারপর সে লোকদের মধ্য হতে একব্যক্তিকে সামনে আসতে বললো। লোকটি ধীরগতিতে উঠে এসে রুকনে ইয়ামানী ও মাকামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়ালো। এরপর জুহাইমান বললো, এই হলো সে প্রতিশ্রুত মাহদী। দেখো, এর নাম মুহাম্মাদ, পিতার নাম আব্দুল্লাহ। সে কুরাইশের কাহতান বংশের লোক। রাসূল সা. এর ভবিষ্যত বাণী অনুযায়ী কুরাইশ বংশীয় মাহদী এই স্থানেই বাইয়াত গ্রহণ করবে। অতএব তোমরা সবাই তার হাতে বাইআত হয়ে যাও। লোকেরা ভয়ে সবাই তার হাতে বাইআত গ্রহণ করে। জুহাইমিন কাবা শরীফের বিভিন্ন কক্ষে আগে থেকেই গোপনে এবং জানাযাবাহী খাটিয়ায় করে অনেক অস্ত্র মজুদ করে রেখেছিলো। সে টেলিফোনসহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিলো। তারপর তিনদিন পর্যন্ত কাবা দখল করে থাকলো। অবশেষে সৌদি সেনাবাহিনী ফ্রান্স ও পাকিস্তানের স্পেশাল ফোর্সের সাহায্যে তাদের বিরূদ্ধে অভিযান শুরু করে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর তারা কাবা শরীফকে মিথ্যা মাহদীর দখলমুক্ত করতে সক্ষম হয়। এতে 127 জন সেনা ও পুলিশ নিহত এবং 451 জন আহত হয়। তাদের 260 জন নিহত হয় এবং জুহাইমান সহ তার 70 জন সহচর গ্রেফতার হয়। তিনদিন পর তাদের 63 জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় এবং বাকীদের সাজা দেয়া হয়। ঘটনাটির লিংক: (ভিডিও ইংরেজি) https://www.youtube.com/watch?v=HItn3u02RwU (ভিডিও বাংলা) https://www.youtube.com/watch?v=eiXVCmxN-LQ (বিবিসি বাংলা) http://www.bbc.com/bengali/news-42124824 উপরের ঘটনার আলোকে দেখা যাচ্ছে, কাবা শরীফে মিথ্যা মাহদীর আত্মপ্রকাশ অলরেডি ঘটে গেছে। আর হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী তার কিছুকাল পর তথা 40 বা 50 বা 90 বছর কিংবা এর কিছু আগেপরে সত্যিকার মাহদী আত্মপ্রকাশ করবেন। এখন 2018 সাল। ইতিমধ্যে ঘটনার 39 বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। জানি না, দু‘এক বছর বা আট, দশ বছরের মধ্যে কিংবা আমাদের জীবদ্দশায়ই সত্য মাহদীর আত্মপ্রকাশ ঘটে কিনা? প্রবল সম্ভাবনা মনে হচ্ছে। আল্লাহই ভালো জানেন। তবে এর চেয়েও আশ্চর্য আরেকটি ঘটনা আমাদেরকে 99% প্রায় দৃঢ়বিশ্বাসই করিয়ে দিচ্ছে যে, ইমাম মাহদী দু’একবছরের মধ্যেই সম্ভবত আত্মপ্রকাশ করবেন। সে ঘটনা আজ না হয় থাক। আল্লাহ চাহে তো পরবর্তীতে এর বিশদ বিবরণ হাদীসের আলোকে পর্যালোচনা করে দেখাবো।
(সংগ্র*হিত)
(সংগ্র*হিত)
Comment