ভারতের অন্যতম ডানপন্থী ও উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন হলো রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)। এই সংগঠনকেই বলা হয়ে থাকে বিজেপির আঁতুড়ঘর। অর্থাৎ আরএসএসের কল্যাণেই জন্ম হয়েছে বিজেপির। তবে আরএসএসের অধীনে একটি নয়, আছে আরও অনেকগুলো সংগঠন। আলাদা আলাদা ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করে এসব সংগঠন। এদের সামগ্রিকভাবে বলা হয় সংঘ পরিবার। বিজেপি সরকারকে আদতে চালাচ্ছে এই আরএসএস ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলো। দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে এসব সংগঠনের প্রত্যক্ষ পরামর্শে।
আরএসএস ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলো কিছু ক্ষেত্রে রীতিমতো সরকারবিরোধী আন্দোলন করে সরকারকে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য করেছে! এই সংগঠনগুলো এক অর্থে বিজেপির জন্য ‘চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর তাদের চাপেই বিভিন্ন সরকারি নীতিতে পরিবর্তন আনছে বিজেপি। রাজনৈতিক দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব প্রায়ই বৈঠক করছে আরএসএস ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে। আর এরই ফলে ভারতের শিক্ষা, শ্রম, বাণিজ্য থেকে শুরু করে পররাষ্ট্রনীতিও বদলে যাচ্ছে।
আরএসএস কী?
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস একটি কট্টরপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন। ব্রিটিশ শাসনের অবসান হওয়ার আগেই এর জন্ম। ১৯২৫ সালে নাগপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় আরএসএস। কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা। মূলত হিন্দু সংস্কৃতি ও গোঁড়া ধর্মীয় জাতীয়তাবাদই এর মূল ভিত্তি। ওই সময়টায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে কংগ্রেসের ছিল একাধিপত্য। শুরুতে তেমন সাড়াও ফেলতে পারেনি এই সংগঠন।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভারতে স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সংগতি রেখে জাতীয় জীবনকে পুনর্গঠন করার একটি বড় সুযোগ ছিল। কিন্তু তৎকালীন শাসকেরা সেই সুযোগ হেলায় নষ্ট করেছে। ভারতে বর্তমানে যেসব সমস্যা রয়েছে, তার বেশির ভাগই সৃষ্টি হয়েছে একটি প্রকৃত ‘আদর্শবাদ’-এর অভাবে। আরএসএস মনে করে, এর বিপরীতে হিন্দু মাতৃভূমি গঠন করতে হবে এবং হাজার বছরের প্রাচীন হিন্দু সংস্কৃতিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ছাড়া উগ্র জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের প্রসারও আরএসএসের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা।
বিশ্লেষকদের মতে, নিজেদের নীতি ও ধ্যানধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে সহিংস পন্থা অবলম্বন করতে দ্বিধা নেই আরএসএসের।
নিজেদের ওয়েবসাইটে আরএসএস বলেছে, যেকোনো ‘হিন্দু’ পুরুষ তাদের সংগঠনের সদস্য হতে পারবে। ভারতের খ্রিষ্টান ও মুসলিমদের ধর্মীয় অস্তিত্ব এক অর্থে স্বীকারই করে না এই সংগঠন। তারা বলে থাকে, দেশটির খ্রিষ্টান ও মুসলিমরাও নাকি বৃহত্তর অর্থে ‘হিন্দু’। আবার হিন্দু পুরুষদের সদস্য করার ক্ষেত্রে সংগঠন যতটা আগ্রহী, নারীদের ক্ষেত্রে ঠিক ততটা নয়। নারীদের জন্য রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি নামে আলাদা সংগঠন আছে আরএসএসের।
প্রকাশ্যেই মুসলিম ও খ্রিষ্টান বিরোধিতার কথা বলে আরএসএস। তাদের দাবি, ভারতে হিন্দু আধিপত্য ও হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। বহুত্ববাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা এই সংগঠনের কাছে নেই। আরএসএস মনে করে, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ভারতের অখণ্ডতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে দেশের ‘অর্থনৈতিক ও নৈতিক দেউলিয়াত্ব’ ঘটেছে।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস একটি কট্টরপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন। নিজেদের নীতি ও ধ্যানধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে সহিংস পন্থা অবলম্বন করতে দ্বিধা নেই আরএসএসের। আরএসএসের সদস্যদের সাংগঠনিক পোশাক হলো সাদা শার্ট ও খাকি হাফ প্যান্ট। ছবি: এএফপিসমালোচকদের মতে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ একটি সাম্প্রদায়িক বিভক্তি সৃষ্টিকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী। এটি হিন্দুত্ববাদের আধিপত্য বিস্তারের নামে অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে থাকে। আর বারংবার প্রাচীন ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার কথা বললেও আরএসএসের সদস্যদের সাংগঠনিক পোশাক হলো পাশ্চাত্য ঢঙের! তা হলো সাদা শার্ট ও খাকি হাফপ্যান্ট।
যেভাবে ছড়ি ঘোরায় আরএসএস
গত শতাব্দীর শেষ দশক থেকে ধীরে ধীরে শক্তিশালী হতে থাকে আরএসএস ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলো। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে মোদিকে প্রধানমন্ত্রী পদে দলীয় প্রার্থী ঘোষণায় মুখ্য ভূমিকা রাখে সংঘ পরিবার। এর প্রতিদানও দিচ্ছেন মোদি। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে পর্দার অন্তরাল থেকে বের হয়ে আসে সংগঠনটি।
সংঘ পরিবারের ছাতার নিচে আছে অনেকগুলো সংগঠন। এগুলো কৃষক, শ্রমিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও ছাত্রসংগঠনও আছে আরএসএসের। এসব অঙ্গ-সংগঠনের মধ্যে রয়েছে, স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ (এসজিএম), ভারতীয় মজদুর সংঘ (বিএমএস), ভারতীয় কিষান সংঘ (বিকেএস), লঘু উদ্যোগ ভারতী (এলইউবি), অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি), শিক্ষা সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস (এসএসইউএন), গ্রাহক পঞ্চায়েত (জিপি) প্রভৃতি।
, ভারতের দেশি শিল্পক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে—এই যুক্তি দেখিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা এর মতো বহুপক্ষীয় সংস্থায় যোগ দেওয়ার কাজটি ঠেকিয়ে রাখতে বিজেপি সরকারকে বাধ্য করেছে স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। অন্যদিকে, শ্রমবাজর সংস্কার ও বেসরকারিকরণের সরকারি সিদ্ধান্ত আটকে দিয়েছে ভারতীয় মজদুর সংঘ। ভারতীয় কিষান সংঘও বা কম যায় কিসে! জিনগত প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি বিশেষায়িত শস্যের (জিএম) পরীক্ষামূলক চাষ করার সরকারি উদ্যোগ সফলভাবে থামিয়ে দিয়েছে তারা।
বর্তমানে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে চলছে সংঘ পরিবার। যদিও আরএসএস নেতাদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যে তাঁদের কথায় গুরুত্ব দেয় না বিজেপি। ছবি: রয়টার্সসরকারের পররাষ্ট্রনীতিতেও হস্তক্ষেপ করছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। প্রতিবেশীদের মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হলো চীন। সংঘ পরিবারের বক্তব্য হলো, চীন ভারতের বন্ধু নয়। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের (এসজিএম) নেতা কাশ্মীরি লাল ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সরকার আমাদের বলেছিল, একবিংশ শতাব্দী হবে ভারত ও চীনের। কিন্তু আমরা সরকারকে বুঝিয়েছি যে চীন আমাদের বন্ধু নয়।’ সংঘ পরিবার এখন ভারতজুড়ে চীনা পণ্যের প্রসার বন্ধে প্রচার চালাচ্ছে। তাতে সায় দিয়ে সরকারও চীন থেকে স্বল্পমূল্যের পণ্য আমদানি কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর জন্য গত সেপ্টেম্বরে আমদানির ক্ষেত্রে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। এতে করে ভারতে চীনের কমদামি পণ্য আমদানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। অথচ কিছুদিন আগেও ভারতের পাঁচ হাজার কোটি রুপির খেলনার বাজারের ৭০ শতাংশ ছিল চীনের দখলে।
ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় হস্তক্ষেপে আরএসএস বেশি মনোযোগ দিয়েছে। এবং এটিই কৌশলগত দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কচি মাথায় হিন্দুত্ববাদ ঢুকিয়ে দেওয়ার চেয়ে বড় কিছু আর হয় না! এ ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করছে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) ও শিক্ষা সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস (এসএসইউএন)। ২০১৬ সালে টি এস আর সুব্রামানিয়ামের করা খসড়া শিক্ষানীতি বাতিল করায় এবিভিপি। এরপর এর পছন্দসই নতুন শিক্ষানীতি প্রণীত হয়। তাতে প্রাচীন মূল্যবোধ ও সংস্কৃত ভাষা সম্পর্কে জানার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংস্কৃত ভাষার ওপর কোর্স চালু করার বিষয়টি সংঘ পরিবারের অন্যতম এজেন্ডা। ২০১৬ সাল থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাসে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের ওপর কোর্স চালুর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আইআইটি কানপুরে তথাকথিত সংস্কৃত ও হিন্দু সাহিত্য সম্পর্কিত কোর্স চালুও হয়ে গেছে!
আসলে তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ভারত মুসলিমশূন্য করে রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা।যার ঘোষণা তারা প্রকাশ্য ভাবেই দিচ্ছে। তাই আমাদেরকেও তাদের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
আরএসএস ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলো কিছু ক্ষেত্রে রীতিমতো সরকারবিরোধী আন্দোলন করে সরকারকে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য করেছে! এই সংগঠনগুলো এক অর্থে বিজেপির জন্য ‘চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর তাদের চাপেই বিভিন্ন সরকারি নীতিতে পরিবর্তন আনছে বিজেপি। রাজনৈতিক দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব প্রায়ই বৈঠক করছে আরএসএস ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে। আর এরই ফলে ভারতের শিক্ষা, শ্রম, বাণিজ্য থেকে শুরু করে পররাষ্ট্রনীতিও বদলে যাচ্ছে।
আরএসএস কী?
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস একটি কট্টরপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন। ব্রিটিশ শাসনের অবসান হওয়ার আগেই এর জন্ম। ১৯২৫ সালে নাগপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় আরএসএস। কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা। মূলত হিন্দু সংস্কৃতি ও গোঁড়া ধর্মীয় জাতীয়তাবাদই এর মূল ভিত্তি। ওই সময়টায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে কংগ্রেসের ছিল একাধিপত্য। শুরুতে তেমন সাড়াও ফেলতে পারেনি এই সংগঠন।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভারতে স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সংগতি রেখে জাতীয় জীবনকে পুনর্গঠন করার একটি বড় সুযোগ ছিল। কিন্তু তৎকালীন শাসকেরা সেই সুযোগ হেলায় নষ্ট করেছে। ভারতে বর্তমানে যেসব সমস্যা রয়েছে, তার বেশির ভাগই সৃষ্টি হয়েছে একটি প্রকৃত ‘আদর্শবাদ’-এর অভাবে। আরএসএস মনে করে, এর বিপরীতে হিন্দু মাতৃভূমি গঠন করতে হবে এবং হাজার বছরের প্রাচীন হিন্দু সংস্কৃতিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ছাড়া উগ্র জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের প্রসারও আরএসএসের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা।
বিশ্লেষকদের মতে, নিজেদের নীতি ও ধ্যানধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে সহিংস পন্থা অবলম্বন করতে দ্বিধা নেই আরএসএসের।
নিজেদের ওয়েবসাইটে আরএসএস বলেছে, যেকোনো ‘হিন্দু’ পুরুষ তাদের সংগঠনের সদস্য হতে পারবে। ভারতের খ্রিষ্টান ও মুসলিমদের ধর্মীয় অস্তিত্ব এক অর্থে স্বীকারই করে না এই সংগঠন। তারা বলে থাকে, দেশটির খ্রিষ্টান ও মুসলিমরাও নাকি বৃহত্তর অর্থে ‘হিন্দু’। আবার হিন্দু পুরুষদের সদস্য করার ক্ষেত্রে সংগঠন যতটা আগ্রহী, নারীদের ক্ষেত্রে ঠিক ততটা নয়। নারীদের জন্য রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি নামে আলাদা সংগঠন আছে আরএসএসের।
প্রকাশ্যেই মুসলিম ও খ্রিষ্টান বিরোধিতার কথা বলে আরএসএস। তাদের দাবি, ভারতে হিন্দু আধিপত্য ও হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। বহুত্ববাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা এই সংগঠনের কাছে নেই। আরএসএস মনে করে, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ভারতের অখণ্ডতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে দেশের ‘অর্থনৈতিক ও নৈতিক দেউলিয়াত্ব’ ঘটেছে।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস একটি কট্টরপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন। নিজেদের নীতি ও ধ্যানধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে সহিংস পন্থা অবলম্বন করতে দ্বিধা নেই আরএসএসের। আরএসএসের সদস্যদের সাংগঠনিক পোশাক হলো সাদা শার্ট ও খাকি হাফ প্যান্ট। ছবি: এএফপিসমালোচকদের মতে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ একটি সাম্প্রদায়িক বিভক্তি সৃষ্টিকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী। এটি হিন্দুত্ববাদের আধিপত্য বিস্তারের নামে অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে থাকে। আর বারংবার প্রাচীন ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার কথা বললেও আরএসএসের সদস্যদের সাংগঠনিক পোশাক হলো পাশ্চাত্য ঢঙের! তা হলো সাদা শার্ট ও খাকি হাফপ্যান্ট।
যেভাবে ছড়ি ঘোরায় আরএসএস
গত শতাব্দীর শেষ দশক থেকে ধীরে ধীরে শক্তিশালী হতে থাকে আরএসএস ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলো। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে মোদিকে প্রধানমন্ত্রী পদে দলীয় প্রার্থী ঘোষণায় মুখ্য ভূমিকা রাখে সংঘ পরিবার। এর প্রতিদানও দিচ্ছেন মোদি। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে পর্দার অন্তরাল থেকে বের হয়ে আসে সংগঠনটি।
সংঘ পরিবারের ছাতার নিচে আছে অনেকগুলো সংগঠন। এগুলো কৃষক, শ্রমিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও ছাত্রসংগঠনও আছে আরএসএসের। এসব অঙ্গ-সংগঠনের মধ্যে রয়েছে, স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ (এসজিএম), ভারতীয় মজদুর সংঘ (বিএমএস), ভারতীয় কিষান সংঘ (বিকেএস), লঘু উদ্যোগ ভারতী (এলইউবি), অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি), শিক্ষা সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস (এসএসইউএন), গ্রাহক পঞ্চায়েত (জিপি) প্রভৃতি।
, ভারতের দেশি শিল্পক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে—এই যুক্তি দেখিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা এর মতো বহুপক্ষীয় সংস্থায় যোগ দেওয়ার কাজটি ঠেকিয়ে রাখতে বিজেপি সরকারকে বাধ্য করেছে স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। অন্যদিকে, শ্রমবাজর সংস্কার ও বেসরকারিকরণের সরকারি সিদ্ধান্ত আটকে দিয়েছে ভারতীয় মজদুর সংঘ। ভারতীয় কিষান সংঘও বা কম যায় কিসে! জিনগত প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি বিশেষায়িত শস্যের (জিএম) পরীক্ষামূলক চাষ করার সরকারি উদ্যোগ সফলভাবে থামিয়ে দিয়েছে তারা।
বর্তমানে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে চলছে সংঘ পরিবার। যদিও আরএসএস নেতাদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যে তাঁদের কথায় গুরুত্ব দেয় না বিজেপি। ছবি: রয়টার্সসরকারের পররাষ্ট্রনীতিতেও হস্তক্ষেপ করছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। প্রতিবেশীদের মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হলো চীন। সংঘ পরিবারের বক্তব্য হলো, চীন ভারতের বন্ধু নয়। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের (এসজিএম) নেতা কাশ্মীরি লাল ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সরকার আমাদের বলেছিল, একবিংশ শতাব্দী হবে ভারত ও চীনের। কিন্তু আমরা সরকারকে বুঝিয়েছি যে চীন আমাদের বন্ধু নয়।’ সংঘ পরিবার এখন ভারতজুড়ে চীনা পণ্যের প্রসার বন্ধে প্রচার চালাচ্ছে। তাতে সায় দিয়ে সরকারও চীন থেকে স্বল্পমূল্যের পণ্য আমদানি কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর জন্য গত সেপ্টেম্বরে আমদানির ক্ষেত্রে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। এতে করে ভারতে চীনের কমদামি পণ্য আমদানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। অথচ কিছুদিন আগেও ভারতের পাঁচ হাজার কোটি রুপির খেলনার বাজারের ৭০ শতাংশ ছিল চীনের দখলে।
ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় হস্তক্ষেপে আরএসএস বেশি মনোযোগ দিয়েছে। এবং এটিই কৌশলগত দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কচি মাথায় হিন্দুত্ববাদ ঢুকিয়ে দেওয়ার চেয়ে বড় কিছু আর হয় না! এ ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করছে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) ও শিক্ষা সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস (এসএসইউএন)। ২০১৬ সালে টি এস আর সুব্রামানিয়ামের করা খসড়া শিক্ষানীতি বাতিল করায় এবিভিপি। এরপর এর পছন্দসই নতুন শিক্ষানীতি প্রণীত হয়। তাতে প্রাচীন মূল্যবোধ ও সংস্কৃত ভাষা সম্পর্কে জানার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংস্কৃত ভাষার ওপর কোর্স চালু করার বিষয়টি সংঘ পরিবারের অন্যতম এজেন্ডা। ২০১৬ সাল থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাসে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের ওপর কোর্স চালুর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আইআইটি কানপুরে তথাকথিত সংস্কৃত ও হিন্দু সাহিত্য সম্পর্কিত কোর্স চালুও হয়ে গেছে!
আসলে তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ভারত মুসলিমশূন্য করে রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা।যার ঘোষণা তারা প্রকাশ্য ভাবেই দিচ্ছে। তাই আমাদেরকেও তাদের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
Comment