কুরআন ও বাস্তবতাঃ ফেরাউনের রাজনীতি
আল্লাহ তায়ালা কুরআন নাজিল করেছেন এবং সেখানে তা নাজিলের কারণ বর্ননা করেছেন। সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছেঃ (যেন তারা এর আয়াতগুলো সন্বন্ধে ভাবতে পারে, আর বুদ্ধিশুদ্ধি থাকা লোকেরা যেন উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। সাদ-২৯) যাতে করে মানুষ কুরআন নিয়ে ভাবে, বুঝে ও উপদেশ অর্জন করে, তা থেকে ফায়দা গ্রহন করে এবং সঠিক ভাবে তা বাস্তবায়ন করবে।
কুরআনের তাফসির ভিবিন্ন প্রকারে বিভক্ত। সাহাবী ও তাবেয়ীদের বানী থেকে সংগ্রহিত আসারের মাধ্যমে তাফসির, অভিধানিক তাফসির, ফিকহী তাফসির, বাস্তবতা ভিত্তিক তাফসির, আবার কিছু আছে সহজ তাফসির বা বিষয় ভিত্তিক তাফসির।
বাস্তবতা ভিত্তিক গবেষনামূলক তাফসিরগুলো সালাফদের সময় থেকেই চলে আসছে। এগুলো দ্বারা যামানার সমসাময়িক অবস্থার ক্ষেত্রে কুরআনের আয়াতের প্রয়োগের মাধ্যমে বাস্তব চিন্তাশীল উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করা হয়। এই ধরনের তাফসিরের ফায়দা হচ্ছে প্রত্যেক সময়ের বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত উপদেশ, আহকাম ও নির্দেশনা উদ্ঘটিত করা যায়। বাস্তবতার জ্ঞান অর্জিত হয় এবং সফল কার্যক্রম পরিচালিত করা যায়। ইহার গুরুত্ব আল্লাহ তায়ালার আয়াত থেকে বুঝা যায়ঃ (যিনি তোমার প্রত্যাদেশসমূহ তাদের কাছে পড়ে শোনাবেন, আর তাদের শেখাবেন ধর্মগ্রন্থ ও জ্ঞান-বিজ্ঞান, আর তাদের পবিত্র করবেন। বাক্বারাহ-১২৯) সুতরাং কিতাবুল্লাহ থেকে উদ্ধ্যেশ্য হল হিকমাহ ও তাজকিয়াহ শিখা যা বাস্তবতা ভিত্তিক গবেষনামূলক তাফসিরের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
জেনে রাখা আবশ্যক, কুরআন যেমন আকীদা,ইবাদাহ,আহকাম,আখলাক ও উপদেশ মালা দিয়ে সজ্জ্বিত। সেই সাথে বাস্তবতার ফিকির, ব্যাক্ষ্যা, নীতি ও মহাজাগতিক রীতির আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যেক মুসলিমের মাঝে সয়ংসম্পুর্ন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। উদাহারনত, আল্লাহ তায়ালার রীতিসমূহের মধ্যে রয়েছে প্রতিহত করণের নীতি, হাক্বকে সর্বশেষ বিজয়ীকরণের নীতি, সত্যপন্থীদের কম হওয়ার নীতি, মতপার্থক্য ও সে ক্ষেত্রে আচরণের নীতি, বিপদ দ্বারা পরিক্ষার নীতি, সাহায্য, পরাজয়, আসবাব ও মাধ্যম গ্রহনের নীতি। ঠিক তেমনি ভাবে কুরআনে রয়েছে জালেমদের চক্রান্ত ও তার সাথে আচরণের নীতি।
কুরআনে প্রত্যেক যামানার জালেমদের কলাকৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাস্তবতার বুঝ ও কুরআন নিয়ে চিন্তার মাধ্যমে এই সমস্ত চক্রান্তের ব্যপারে কুরআনের গভীর নির্দেশনা স্পষ্ট হয়ে উঠে। আর ইহা করা হয়েছে ঘটনার মাধ্যেমে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে মুসা আলাইহিস সালামের যামানায় ফেরাউনের ঘটনা।
ইহা বললে বাড়াবাড়ি হবে না যে, ফেরাউনের ঘটনার মধ্যে বাস্তবতা বুঝার জন্যে যে গভীর চিন্তা রয়েছে তা জানার জন্যে প্রত্যেকটা বাক্যের নিচের হাজার লাইন করে লিখা উচিত। এবং কুরআনের একেকটা আয়াতে প্রত্যেক সিয়াসাত বা রাজনীতির ব্যপারে যে অসংখ্য নির্দেশনা রয়েছে, গভীর চিন্তা-ভাবনা ছাড়া সেই সিয়াসাত বুঝা সম্ভব নয়। যেহেতু বর্তমানে বিশ্বে অনেক ফেরাউন আধিপত্ব করছে তাই আমাদের ফেরাউনের ঘটনা আলোচনা করব।
ফেরাউনের রাজনীতি
এখানে আমরা কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে ফেরাউনের কলা কৌশোলের ব্যপারে আলোচনা করব যাতে আমরা সেগুলোর সমাধান খুজে পাই।
(নিঃসন্দেহ ফিরআউন যমিনে খুব উদ্ধত হয়েছিল, কাসাস-৪) (ফিরআউনের কাছে যাও, নিঃসন্দেহ সে সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, ত্বাহা-২৪) (সে তার সম্প্রদায়কে বোকা বানিয়ে দিল, যুখরুফ-৫৪) এই আয়তগুলো প্রমান বহন করে ফেরাউনের জবরদস্তি ও অহংকারী ক্ষমতার যার দ্বারা সে সর্বত্র জুলুম ও ধ্বংস করা এবং জনগনের স্বাধীনতা, অধিকার ও রক্তকে অপদস্ত করছিল। এটাকে মূলত ফেরাউনের নীতি হিসেবে ততটা গণ্য করা হয় না বরং এগুলো ছিল তার নিজের ও জাতির দৃষ্টিভঙ্গি। জুলুম তাদের সত্বার সাথে মিশে গিয়েছিল, তারা এটাকে নিজদের অধিকার মনে করত।
(সে দেশবাসীকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের একটি দলকে দূর্বল করে দিয়েছিল। কাসাস-৪) এই আয়াতটা তার “ডিভাইড এন্ড রোল” অর্থাৎ “যুদ্ধ বাধাও এবং শাষন কর” নীতির স্পষ্ট প্রমান বহন করে। প্রত্যেক স্বেচ্ছাচারী শাষক জনগনের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং তাদেরকে বিভিন্ন দল ও সংগঠনে ভাগ করে ফেলে। এবং গোষ্ঠী, জাতি, দল, লীগ বা সংঘঠনের নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে একটা অংশকে শক্তিশালী করে তুলে। অপর দিকে একটা দলকে দুর্বল করে ফেলে। কিন্তু স্বেচ্ছাচারী জালেম এই দুর্বল দলের উন্নত চিন্তা, সংকল্পের দৃঢ়তা, বীরত্ব এবং ন্যায়-ইনসাফ ও সত্যকে আকড়ে ধরার শক্তিকে প্রচন্ড ভয়। এবং তাদেরকে আরো দুর্বল করে ফেলে কারণ তারাই তার ধ্বংস, জুলুমের পরিসমাপ্তি ও জবরদস্তি বন্ধের ছক আঁকছে।
(সে তাদের পুত্র-সন্তানদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। নিশ্চয় সে ছিল অনর্থ সৃষ্টিকারী। কাসাস-৪) (তোমাদিগকে কঠিন শাস্তি দান করত; তোমাদের পুত্রসন্তানদেরকে জবাই করত এবং তোমাদের স্ত্রীদিগকে অব্যাহতি দিত। বস্তুতঃ তাতে পরীক্ষা ছিল তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে, মহা পরীক্ষা। বাকারা-৪৯) এই সমস্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা জালেমের পক্ষ থেকে সেই ছোট দলটিকে দুর্বল করার পদ্ধতি বর্ননা করছেন। যা করা হয়েছিল সবচেয়ে নিকৃষ্ট ধরনের শাস্তি প্রয়োগ, হত্যা ও দেশান্তরের মাধ্যমে। ফেরাউনের এই সমস্ত কাজকে আল্লাহ তায়ালাই অপরাধ বলছেন। (নিশ্চয় সে ছিল ফাসাদ সৃষ্টিকারী। কাসাস-৪) অর্থাৎ এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে সমাজে বিশাল পরিমানে জুলুম শুরু করেছে। (বস্তুতঃ তাতে পরীক্ষা ছিল তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে, মহা পরীক্ষা।)
(আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের ধর্ম পরিবর্তন করে দেবে অথবা সে দেশময় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। গাফির-২৬) (তুমি সেই-তোমরা অপরাধ যা করবার করেছ। তুমি হলে কৃতঘ্ন। শু’য়ারা-১৯) (তুমি তো পৃথিবীতে স্বৈরাচারী হতে চাচ্ছ। কাসাস-১৯) এই আয়াত সমূহে স্বৈরাচারী ফেরাউনী জঘন্য অপরাধ সমূহকে ধামাচাপা দিয়ে ছোট ভুলগুলোকে বড় করার নীতির আলোচনা করা হয়েছে। যেই ফেরাউন গনহত্যা ও নির্যাতন করত সে তার সমস্ত অপরাধকে ঢেকে ফেলছে। এবং তার জাতিকে মুসার ব্যাপারে সতর্ক করছে যে, এই ব্যক্তি জুলুম এবং ফাসাদ সৃষ্টি করছে। এবং মুসা আঃ কতৃক অনিচ্ছাকৃত এক ব্যক্তিকে মেরে ফেলাটাকে অনেক জঘন্য অপরাধ হিসেবে প্রচার করছে। (তুমি সেই-তোমরা অপরাধ যা করবার করেছ)। যার ফলে সমস্ত দয়া ও অনুগ্রহের অস্বীকারকারী বানিয়ে ফেলেছে। অন্য আরেকটা ঘটনায় ফেরাউনের এক লোক মুসা আঃকে সম্বোধন করে বলছেঃ (তুমি তো পৃথিবীতে স্বৈরাচারী হতে চাচ্ছ। কাসাস-১৯) এখানের প্রত্যেকটা কাজ বর্তমানেও যে কোন জিনিসকে অপরাধী সাব্যস্তের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এবং নিকৃষ্ট মিডিয়ার মাধ্যমে বারবার প্রচার করা হয় যাতে করে তারা বাস্তবেই অপরাধী সাব্যস্ত হয়।
(আমি তোমাদেরকে মঙ্গলের পথই দেখাই। গাফির-২৯) (তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা রহিত করতে চায়। ত্বাহা-৬৩) (আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের ধর্ম পরিবর্তন করে দেবে অথবা সে দেশময় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। গাফির-২৬) (এটা প্রতারণা,যা তোমরা এ নগরীতে প্রদর্শন করলে। যাতে করে এ শহরের অধিবাসীদিগকে শহর থেকে বের করে দিতে পার। আ’রাফ-১২৩) (এটা মিথ্যা বৈ নয়, যা তিনি উদ্ভাবন করেছেন এবং অন্য লোকেরা তাঁকে সাহায্য করেছে। ফুরকান-৪) এই আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্ট হয় যে, সৈরাচারী জালেম সমাজে জুলুম এবং ফাসাদের ব্যপারে ভীত এবং সভ্যতা, দ্বীন ও ইনসাফের রক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে। অধিনস্তদের ব্যপারে হেদায়াত ও সঠিক পথের আগ্রহী দাবী করে। আর এই সবই হয়ে থাকে মিডিয়া ও চাটুকারদের মাধ্যমে।
ফেরাউন মুসা আ;কে দ্বীন বিক্রি ও তা থেকে বিচ্যুতির অপবাদ দিয়েছে, (সে তোমাদের ধর্ম পরিবর্তন করে দেবে)। চক্রান্তকারী, ধোকাবাজ ও মিথ্যুক অপবাদ দিয়েছে (এটা প্রতারণা) (এটা মিথ্যা বৈ নয়)। দেশের ক্ষতির ইচ্ছা এবং অন্য দেশের সাথে আতাত করা অথবা বৈশ্বিক কোন গোষ্ঠি যারা এই পরিকল্পনা করছে তাদের সাথে মিলিত হওয়ার দাবী করেছে, (অন্য লোকেরা তাঁকে সাহায্য করেছে)। জালেমদের এই সমস্ত অপবাদের কারণ হচ্ছে পার্থিব স্বার্থ রক্ষা করা। অন্যদিকে আমরা সমস্ত নবীদেরকে দেখি পার্থিব কোন প্রতিদানের চাহিদাই তাদের ছিল না, (আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না, সাদ-৮৬) কেননা আল্লাহ তায়ালা মুসা আ; কে প্রেরন করেছেন ফেরাউনের সৈরাচারকে বন্ধ করা ও দুর্বলদেরকে প্রতিষ্টিত করার জন্য। (দেশে যাদেরকে দূর্বল করা হয়েছিল, আমার ইচ্ছা হল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, কাসাস-৫)
(এটা মিথ্যা বৈ নয়, যা তিনি উদ্ভাবন করেছেন) (এটা প্রতারণা) (নিশ্চত সে স্পষ্ট যাদুকর) (এই দুইজন নিশ্চিতই যাদুকর,তারা তাদের যাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বহিস্কার করতে চায়, ত্বাহা-৬৩) (হে মূসা, তুমি কি যাদুর জোরে আমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করার জন্যে আগমন করেছ? ত্বাহা-৫৭) এই সমস্ত আয়াতগুলো মুসা আলাইহিস সালামের উপর ফেরাউনী নিকৃষ্ট প্রচার মাধ্যমের হামলার ব্যপারে স্পষ্ট ধারনা দেয়। যাতে জনগনের মধ্যে তার অবস্থান সন্দেহযুক্ত হয়ে পড়ে ও অনুসারী হওয়া থেকে বিরত থাকে। আর এই প্রোপাগান্ডা চালানো হয় যাদু, চক্রান্ত, প্রতারনা, মিথ্যা বলা, দ্বীন পরিবর্তন, জমিন থেকে বিতারনের চক্রান্ত, সন্ত্রাস, দ্বীন বিক্রি ও ফাসাদ সৃষ্টি অপবাদ ও অভিযোগের মাধ্যমে। যাতে তাকে হত্যা করা সহজ হয়। এবং জগনকে আস্বস্ত করার জন্যে মুসা আলাইহিস সালামের ব্যপারে সমস্ত নীতিকে উপেক্ষা করা হয়।
(আমরাও তোমার মোকাবেলায় তোমার নিকট অনুরূপ যাদু উপস্থিত করব। সুতরাং আমাদের ও তোমার মধ্যে একটি ওয়াদার দিন ঠিক কর, যার খেলাফ করব না, ত্বাহা-৫৮) (অতঃপর ফেরাউন প্রস্থান করল এবং তার সব কলাকৌশল জমা করল অতঃপর উপস্থিত হল। ত্বাহা-৬০) (তোমরা তোমাদের কলাকৌশল সুসংহত কর, অতঃপর সারিবদ্ধ হয়ে আস। ত্বাহা-৬৪) (আমাদের জন্যে কি কোন পারিশ্রমিক নির্ধারিত আছে, সে বলল, হ্যাঁ এবং অবশ্যই তোমরা আমার নিকটবর্তী লোক হয়ে যাবে। আ’রাফ-১১৩-১১৪) জালেম হক্বের বিরোধী সেনাদের মাধ্যমে ভিবিন্ন ভাবে সাহায্য নিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের মাধ্যমেই একই ধরনের কাজ আঞ্জাম দিয়ে থাকে। (আমরাও তোমার মোকাবেলায় তোমার নিকট অনুরূপ যাদু উপস্থিত করব।) কেননা এক মতাদর্শকে সমজাতীয় মতাদর্শ ও বিশ্বাস দ্বারা প্রতিহত করা হয়। ফেরাউনের সাথে যারা সারিবদ্ধ ভাবে যুদ্ধ করবে তাদের জন্যে নিকটবর্তী অবস্থান, উচু মর্যাদা, বিশেষ সম্পদ ও মিডিয়ায় পরিচিতি থাকবে। অথচ বিপরীত দিকে হক্বের অনুসারীরা সত্য প্রকাশের সুবিধা তো পাবেই না বরং তাদেরকে বিরোদ্ধে বিরাট প্রপাগান্ডা চালনো হবে।
(ফেরাউন বলল; তোমরা আমাকে ছাড়,মূসাকে হত্যা করতে দাও, গাফির-২৬) ফেরাউন এখানে শব্দ ব্যবহার করেছে “আমাকে ছাড়া”। যাতে করে জনগনকে স্বীদ্ধান্ত গ্রহনের স্বাধিনতার ধোকা দিতে পারে। কেমন যেন সে জনগনের ইচ্ছাই বাস্তবায়ন করবে। তবে সেই এইটা বলেছে মুসাকে হত্যার ব্যপারে নিজের উপর বৈধতা দেয়ার পর। কেননা ততক্ষনে ব্যপকভাবে মিডিয়ার নিকৃষ্ট আক্রমনের ফলে জনগনের চোখে তিনি অপরাধী, ফাসাদ সৃষ্টিকারী, জংগি ও সন্ত্রাসী হিসেবে গণ্য হয়েছেন। যিনি শুধু অবৈধ কাজ করেন, জাতীকে নিয়ে চক্রান্ত করেন এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক হীন স্বার্থ বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন।
(ফেরাউনের সম্প্রদায়ের র্সদাররা বলল, তুমি কি এমনি ছেড়ে দেবে মূসা ও তার সম্প্রদায়কে। দেশময় হৈ-চৈ করার জন্য এবং তোমাকে ও তোমার দেব-দেবীকে বাতিল করে দেবার জন্য। সে বলল, আমি এখনি হত্যা করব তাদের পুত্র সন্তানদিগকে; আর জীবিত রাখব মেয়েদেরকে। বস্তুতঃ আমরা তাদের উপর প্রবল। মূসা বললেন তার কওমকে, সাহায্য প্রার্থনা কর আল্লাহর নিকট এবং ধৈর্য্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই এ পৃথিবী আল্লাহর। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন এবং শেষ কল্যাণ মুত্তাকীদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে। তারা বলল, আমাদের কষ্ট ছিল তোমার আসার পূর্বে এবং তোমার আসার পরে। তিনি বললেন, তোমাদের পরওয়ারদেগার শীঘ্রই তোমাদের শক্রদের ধ্বংস করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দেশে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন। তারপর দেখবেন, তোমরা কেমন কাজ কর। আ’রাফ-১২৭-১২৯) এখানে ধারাবাহিক অপরাধ ও চক্রান্তের ব্যপারে ফেরাউনের দৃঢ়তা প্রকাশ পাচ্ছে। যাতে করে দুর্বলদের অন্তরে বিজয় ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ব্যপারে হতাশা সৃষ্টি হয়ে যায়,যারা সত্য গ্রহনের আগে ও পরে নির্যাতিত হচ্ছে। এমতাবস্থাতেও মুসা আঃ তাদেরকে আরো বেশি ধৈর্য ও আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার কথা বলছেন। এবং তাদের জন্যে বিজয়, খিলাফাহ ও মুত্তাকীদের ভাল ফলাফলের ওয়াদা দিচ্ছেন।
(আমি পাকড়াও করেছি-ফেরাউনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে এবং ফল ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে যাতে করে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। আ’রাফ-১৩০) (যখন শুভদিন ফিরে আসে, তখন তারা বলতে আরম্ভ করে যে, এটাই আমাদের জন্য উপযোগী। আর যদি অকল্যাণ এসে উপস্থিত হয় তবে তাতে মূসার এবং তাঁর সঙ্গীদের অলক্ষণ বলে অভিহিত করে। আ’রাফ-১৩১)। আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনকে অর্থনৈতিক ভাবে পর্যুদস্ত করে দিলেন এবং জীবনযাপন কঠিন করে দিলেন যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে। কিন্তু তারা আরো বাড়াবড়ি করতে লাগল। এখানে ফেরাউন ও তার অনুসারীরা যে কৌশল প্রয়োগ করছিল তা ছিল, (যদি অকল্যাণ এসে উপস্থিত হয় তবে তাতে মূসার এবং তাঁর সঙ্গীদের অলক্ষণ বলে অভিহিত করে।) তাদের উপর আরোপিত বিপদের জন্যে মুমিনদেরকে তিরষ্কার করতে লাগল। যেমনটা আমরা বর্তমানেও দেখে থাকি যে স্বৈরাচারীরা প্রত্যেক সমস্যাকে নির্দিষ্ট চিন্তাধারার ব্যক্তিদের উপর বর্তায় যাদেরকে তারা অপরাধী দাবী করে। অথচ তখন সেই বিপদের কারণ ছিল সেই জালেমই।
ফায়দা ও গুরুত্বপূর্ন বিষয়
১/ ব্যপকভাবে স্বৈরাচারীদের নীতিতে ও বিষেশভাবে হাক্কপন্থীদের বিরোধীতায় তিনটা বিষয়ে পার্থক্য দেখা যায়ঃ
> সব পারষ্পরিক সম্পর্কযুক্ত, একতাপূর্ন, এক মতাদর্শের।
> এত বেশি সংখ্যক যা অগনিত
> একে অপরের সাথে মিশ্রিত ও অনুপ্রবিষ্ট
২/ এই নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয় যে মিডিয়া কর্মীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে, অপরাধকে ধামাচাপা না দিলে অথবা বৈধতা না দিলে ফেরাউনের সব অথবা কিছু অপরাধ জনগন বুঝতে সক্ষম হত। বরং এখানে সয়ং জনগনই অপরাধে সম্পৃক্ত ও জিজ্ঞাসিত হবে। কেননা তাদের উপর উপর বাস্তবতা অনুসন্ধান করা অথবা অন্তত পক্ষে অপরাধের ক্ষেত্রে ফেরাউনের আনুগত্য ও সমর্থন না দেয়া আবশ্যক ছিল। (অতঃপর সে তার সম্প্রদায়কে বোকা বানিয়ে দিল, ফলে তারা তার কথা মেনে নিল। নিশ্চয় তারা ছিল পাপাচারী সম্প্রদায়। যুখরুফ-৫৪)
৩/ স্বৈরাচারীর গুরুত্বপূর্ন টার্গেট থাকে মানুষের অন্তরে হতাশা সৃষ্টি করা।
৪/ জালেমের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে মিডিয়া।
ফেরাউনের দেশে সৎ ব্যক্তিদের কাজ
ফেরাউনের রাষ্ট্রে উত্তম ব্যক্তিদের কাজের ব্যপারে ঘটনাতেই আলোচিত দুইটা উদাহারন থেকে বুঝা যায়ঃ
প্রথমতঃ মুসা ও হারুন আলাইহিমুস সালাম সমস্ত জুলুমকে অস্বীকার এবং কথা, কাজ ও দাওয়াতের মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের আহ্ববান এবং মাজলুমদের বিজয়ের পরিকল্পনা করছিলেন।
দ্বিতিয়তঃ ফেরাউনের বংশের মুমিনের ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ (ফেরাউন গোত্রের এক মুমিন ব্যক্তি, যে তার ঈমান গোপন রাখত, সে বলল, তোমরা কি একজনকে এজন্যে হত্যা করবে যে, সে বলে, আমার পালনকর্তা আল্লাহ, অথচ সে তোমাদের পালনকর্তার নিকট থেকে স্পষ্ট প্রমাণসহ তোমাদের নিকট আগমন করেছে? যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার মিথ্যাবাদিতা তার উপরই চাপবে, আর যদি সে সত্যবাদী হয়, তবে সে যে শাস্তির কথা বলছে, তার কিছু না কিছু তোমাদের উপর পড়বেই। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালংঘনকারী, মিথ্যাবাদীকে পথ প্রদর্শন করেন না। গাফির-২৮) সে মিডিয়ার নিকৃষ্ট হামলাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল। আর এই দ্বায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে সত্য ও ইনসাফের দিকে আহ্ববান করা,যাতে করে তারা ধোকায় পরে নিরপরাধকে অপরাধী মনে করা এবং মিথ্যায় ও অপবাদে বিশ্বাস না করে বাস্তব জ্ঞানের মাধ্যমে চিন্তা করতে পারে।
সফল সমাপ্তির গুরুত্ব
বিষয়টা এখানেই শেষ হওয়া উচিত নয়। যত ছোট বা বড়ই হোক এই ঘটনার একটা ফলাফল থাকা আবশ্যক। আর এই সফল সমাপ্তি হতাশার মুহুর্ত পার করা ছাড়া আসে না। স্বৈরাচারী জালেম জনগনের হতাশার সৃষ্টি করে, তবে সে নিজেই নিজের কবর খনন করে এবং তার ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। (এমনকি যখন পয়গম্বরগণ নৈরাশ্যে পতিত হয়ে যেতেন, এমনকি এরূপ ধারণা করতে শুরু করতেন যে, তাদের অনুমান বুঝি মিথ্যায় পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখন তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌছে। অতঃপর আমি যাদের চেয়েছি তারা উদ্ধার পেয়েছে। আমার শাস্তি অপরাধী সম্প্রদায় থেকে প্রতিহত হয় না। ইউসুফ-১১০)
যে ব্যক্তি গভীর দৃষ্টি ও সঠিক চিন্তা করার শক্তি রাখে না সে ধারনা করবে, আজকের শাষকের চেয়ারে উপবিষ্ট স্বৈরাচারী তার আসনেই টিকে থাকবে। যে জালেম শিশুদেরকে হত্যা, বন্দিদেরকে ফাঁসী, জনগনকে নির্যাতন ও দুর্বলদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে সে আপন হালতেই বাকি থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে “সে দাফনের জন্যে কবরও পাবে না” যেমনটা শাইখ আব্দুল হামীদ কিশক গাদ্দাফীকে সতর্ক করেছিলেন।
এত এত নির্যাতন ও চক্রান্তের পরেও মুসা যাদুকরে পরিনত হন নি অথবা ফেরাউন পবিত্র ইলাহে পরিনত হয় নি যে তার জনগনকে রক্ষা করবে। বরং মুসা আলাইহিস সালাম জুলুম ও স্বৈরাচারের বিরোদ্ধে মুজাহিদ ও দুর্বলদের মুক্তিকামী নবী হিসেবেই বাকি ছিলেন। এবং ফেরাউন জালেম, স্বৈরাচার ও গর্দভ ত্বাগুত হিসেবেই ধ্বংস হয়েছিল।
(মূসা ও তাঁর সংগীদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিলাম। শু’আরা-৬৫) এভাবেই আল্লাহ তায়ালা সমাপ্তির ঘোষনা করছেন। সেই সাথে এটা নতুন একটি বিষয়ের সূচনাও করে দিচ্ছেন, (তারপর তিনি দেখবেন, তোমরা কেমন কাজ কর)। সুতরাং আপনি নির্যাতিত হোন অথবা বিজয়ী প্রতিষ্ঠিত হোন ... সর্বাবস্থায় আপনি পরিক্ষার্থী এবং জিজ্ঞাসিত।
Comment