Announcement

Collapse
No announcement yet.

কোরআনের আলো||২||তাফসিরে সূরা মুহাম্মদ ||সাইয়েদ কুতুব শহীদ রহ.||১ম পর্ব

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কোরআনের আলো||২||তাফসিরে সূরা মুহাম্মদ ||সাইয়েদ কুতুব শহীদ রহ.||১ম পর্ব

    কোরআনের আলো।
    প্রথম পর্ব।

    তাফসীর ফী যিলালিলনকুরআন-আল্লামা সাইয়েদ কুতুব শহীদ রহ.।

    সূরা মুহাম্মদ। আয়াত ৩৮। রুকু ৪।

    মদিনায় অবতীর্ণ।



    1. الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ أَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ.

    যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে, আল্লাহ তাদের সকল কর্ম ব্যার্থ করে দেন।*

    2.*وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَآمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَهُوَ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ كَفَّرَ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَأَصْلَحَ بَالَهُمْ.

    আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে মুহাম্মদের প্রতি অবতীর্ণ সত্যে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দেন।**

    3. ذَلِكَ بِأَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا اتَّبَعُوا الْبَاطِلَ وَأَنَّ الَّذِينَ آمَنُوا اتَّبَعُوا الْحَقَّ مِن رَّبِّهِمْ كَذَلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ لِلنَّاسِ أَمْثَالَهُمْ.

    এটা এ কারণে যে, যারা কাফের, তারা বাতিলের অনুসরণ করে এবং যারা বিশ্বাসী, তারা তাদের পালনকর্তার নিকট থেকে আগত সত্যের অনুসরণ করে। এমনিভাবে আল্লাহ মানুষের জন্যে তাদের দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন।*

    4.*فَإِذا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا فَضَرْبَ الرِّقَابِ حَتَّى إِذَا أَثْخَنتُمُوهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَ فَإِمَّا مَنًّا بَعْدُ وَإِمَّا فِدَاء حَتَّى تَضَعَ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا ذَلِكَ وَلَوْ يَشَاء اللَّهُ لَانتَصَرَ مِنْهُمْ وَلَكِن لِّيَبْلُوَ بَعْضَكُم بِبَعْضٍ وَالَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَلَن يُضِلَّ أَعْمَالَهُمْ.

    অতঃপর যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের গর্দানে মার, অবশেষে যখন তাদেরকে পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করবে! আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের কতককে কতকের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান। যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়, আল্লাহ কখনই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না।

    5.**سَيَهْدِيهِمْ وَيُصْلِحُ بَالَهُمْ.

    তিনি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করবেন।**
    6.وَيُدْخِلُهُمُ الْجَنَّة
    َ عَرَّفَهَا لَهُمْ.

    অতঃপর তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যা তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।*

    7.*يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ.

    হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।*
    *8.وَالَّذِينَ كَفَرُوا فَتَعْسًا لَّهُمْ وَأَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ.

    আর যারা কাফের, তাদের জন্যে আছে দুর্গতি এবং তিনি তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দিবেন।

    *9.*ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ.

    এটা এজন্যে যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তারা তা পছন্দ করে না। অতএব, আল্লাহ তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিবেন।**

    10.أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْض
    ِفَيَنظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ دَمَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَلِلْكَافِرِينَ أَمْثَالُهَا.

    তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি অতঃপর দেখেনি যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে? আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং কাফেরদের অবস্থা এরূপই হবে।**

    11.ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ مَوْلَى الَّذِين
    َ آمَنُوا وَأَنَّ الْكَافِرِينَ لَا مَوْلَى لَهُمْ.

    এটা এজন্যে যে, আল্লাহ মুমিনদের হিতৈষী বন্ধু এবং কাফেরদের কোন হিতৈষী বন্ধু নাই।**

    12.إِنَّ اللَّهَ يُدْخِلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ.

    যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার নিম্নদেশে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আর যারা কাফের, তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুস্পদ জন্তুর মত আহার করে। তাদের বাসস্থান জাহান্নাম।*

    *13.وَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ هِيَ أَشَدُّ قُوَّةً مِّن قَرْيَتِكَ الَّتِي أَخْرَجَتْكَ أَهْلَكْنَاهُمْ فَلَا نَاصِرَ لَهُمْ.

    যে জনপদ আপনাকে বহিস্কার করেছে, তদপেক্ষা কত শক্তিশালী জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি, অতঃপর তাদেরকে সাহায্য করার কেউ ছিল না।*

    14.أَفَمَن كَانَ عَلَى بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّهِ كَمَن زُيِّنَ لَهُ سُوءُ عَمَلِهِ وَاتَّبَعُوا أَهْوَاءهُمْ.

    যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত নিদর্শন অনুসরণ করে, সে কি তার সমান, যার কাছে তার মন্দ কর্ম শোভনীয় করা হয়েছে এবং যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে।*

    15.مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاء غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى وَلَهُمْ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ كَمَنْ هُوَ خَالِدٌ فِي النَّارِ وَسُقُوا مَاء حَمِيمًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءهُم.

    পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর; যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের পালনকর্তার ক্ষমা। পরহেযগাররা কি তাদের সমান, যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে?

    **16.وَمِنْهُم مَّن يَسْتَمِعُ إِلَيْكَ حَتَّى إِذَا خَرَجُوا مِنْ عِندِكَ قَالُوا لِلَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مَاذَا قَالَ آنِفًا أُوْلَئِكَ الَّذِينَ طَبَعَ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ وَاتَّبَعُوا أَهْوَاءهُمْ.

    তাদের মধ্যে কতক আপনার দিকে কান পাতে (ও শুনে), অতঃপর যখন আপনার কাছ থেকে বাইরে যায়, তখন যারা শিক্ষিত, তাদেরকে বলেঃ এইমাত্র তিনি কি বললেন ? এদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে।**

    17.وَالَّذِين
    َ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَآتَاهُمْ تَقْواهُمْ.

    যারা সৎপথপ্রাপ্ত হয়েছে, তাদের সৎপথপ্রাপ্তি আরও বেড়ে যায় এবং আল্লাহ তাদেরকে তাকওয়া দান করেন।


    18.فَهَل يَنظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَن تَأْتِيَهُم بَغْتَةً فَقَدْ جَاء أَشْرَاطُهَا فَأَنَّى لَهُمْ إِذَا جَاءتْهُمْ ذِكْرَاهُمْ.

    তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে, কেয়ামত অকস্মাৎ তাদের কাছে এসে পড়ুক। বস্তুতঃ কেয়ামতের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং কেয়ামত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে ?*
    19.*فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّه
    ُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ.

    জেনে রাখুন, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমাপ্রার্থনা করুন, আপনার ক্রটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ, তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত।*

    20.*وَيَقُولُ الَّذِينَ آمَنُوا لَوْلَا نُزِّلَتْ سُورَةٌ فَإِذَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ مُّحْكَمَةٌ وَذُكِرَ فِيهَا الْقِتَالُ رَأَيْتَ الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ يَنظُرُونَ إِلَيْكَ نَظَرَ الْمَغْشِيِّ عَلَيْهِ مِنَ الْمَوْتِ فَأَوْلَى لَهُمْ.

    যারা মুমিন, তারা বলেঃ একটি সূরা নাযিল হয় না কেন? অতঃপর যখন কোন দ্ব্যর্থহীন সূরা নাযিল হয় এবং তাতে জেহাদের উল্লেখ করা হয়, তখন যাদের অন্তরে রোগ আছে, আপনি তাদেরকে মৃত্যুভয়ে মূর্ছাপ্রাপ্ত মানুষের মত আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখবেন। সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্যে।

    21.*طَاعَةٌ وَقَوْلٌ مَّعْرُوفٌ فَإِذَا عَزَمَ الْأَمْرُ فَلَوْ صَدَقُوا اللَّهَ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ.

    তাদের আনুগত্য ও মিষ্ট বাক্য জানা আছে। অতএব, জেহাদের সিন্ধান্ত হলে যদি তারা আল্লাহর প্রতি পদত্ত অংগীকার পূর্ণ করে, তবে তাদের জন্যে তা মঙ্গলজনক হবে।*

    22.*فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِن تَوَلَّيْتُمْ أَن تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ.

    ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্নীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে।*

    23.*أُوْلَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُم
    ُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ.

    এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।

    24.*أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا.

    তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?

    25.**إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَى لَهُمْ.

    নিশ্চয় যারা সোজা পথ ব্যক্ত হওয়ার পর তৎপ্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে, শয়তান তাদের জন্যে তাদের কাজকে সুন্দর করে দেখায় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশা দেয়।*

    26.*ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا لِلَّذِينَ كَرِهُوا مَا نَزَّلَ اللَّهُ سَنُطِيعُكُمْ فِي بَعْضِ الْأَمْرِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِسْرَارَهُمْ.

    এটা এজন্য যে, তারা তাদেরকে বলে, যারা আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব অপছন্দ করেঃ আমরা কোন কোন ব্যাপারে তোমাদের কথা মান্য করব। আল্লাহ তাদের গোপন পরামর্শ অবগত আছেন।

    27.**فَكَيْفَ إِذَا تَوَفَّتْهُمْ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ.

    ফেরেশতা যখন তাদের মুখমন্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের অবস্থা কেমন হবে?*

    28.*ذَلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَط الله,َ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ.

    এটা এজন্যে যে, তারা সেই বিষয়ের অনুসরণ করে, যা আল্লাহর অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অপছন্দ করে। ফলে তিনি তাদের কর্মসমূহ ব্যর্থ করে দেন।**

    29.أَمْ حَسِبَ الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ أَن لَّن يُخْرِجَ اللَّهُ أَضْغَانَهُم.ْ

    যাদের অন্তরে রোগ আছে, তারা কি মনে করে যে, আল্লাহ তাদের অন্তরের বিদ্বেষ প্রকাশ করে দেবেন না?*

    30.*وَلَوْ نَشَاء لَأَرَيْنَاكَهُمْ فَلَعَرَفْتَهُم بِسِيمَاهُمْ وَلَتَعْرِفَنَّهُمْ فِي لَحْنِ الْقَوْلِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ أَعْمَالَكُمْ.

    আমি ইচ্ছা করলে আপনাকে তাদের সাথে পরিচিত করে দিতাম। তখন আপনি তাদের চেহারা দেখে তাদেরকে চিনতে পারতেন এবং আপনি অবশ্যই কথার ভঙ্গিতে তাদেরকে চিনতে পারবেন। আল্লাহ তোমাদের কর্মসমূহের খবর রাখেন।

    31.ولنبلونكم حتي نعلم المجاهدين منكم والصابرين و نبلو اخباركم.

    আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যে পর্যন্ত না ফুটিয়ে তুলি তোমাদের জেহাদকারীদেরকে এবং সবরকারীদেরকে এবং যতক্ষণ না আমি তোমাদের অবস্থান সমূহ যাচাই করি।*

    32.*إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَشَاقُّوا الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الهُدَى لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْئًا وَسَيُحْبِطُ أَعْمَالَهُمْ.

    নিশ্চয় যারা কাফের এবং আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে এবং নিজেদের জন্যে সৎপথ ব্যক্ত হওয়ার পর রসূলের (সঃ) বিরোধিতা করে, তারা আল্লাহর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না এবং তিনি ব্যর্থ করে দিবেন তাদের কর্মসমূহকে।*

    33.*يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ.

    হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।*

    34.*إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ مَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَن يَغْفِرَ اللَّهُ لَهُمْ.

    নিশ্চয় যারা কাফের এবং আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে, অতঃপর কাফের অবস্থায় মারা যায়, আল্লাহ কখনই তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।

    *35.*فَلَا تَهِنُوا وَتَدْعُوا إِلَى السَّلْمِ وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ وَاللَّهُ مَعَكُمْ وَلَن يَتِرَكُمْ أَعْمَالَكُمْ.

    অতএব, তোমরা হীনবল হয়ো না এবং সন্ধির আহবান জানিও না, তোমরাই হবে প্রবল। আল্লাহই তোমাদের সাথে আছেন। তিনি কখনও তোমাদের কর্ম হ্রাস করবেন না।
    36. إِنَّمَا الحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَإِن تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا يُؤْتِكُمْ أُجُورَكُمْ وَلَا يَسْأَلْكُمْ أَمْوَالَكُمْ.

    পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধুলা, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও এবং সংযম অবলম্বন কর, আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিদান দেবেন এবং তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ চাইবেন না।**

    37.إِن يَسْأَلْكُمُوهَا فَيُحْفِكُمْ تَبْخَلُوا وَيُخْرِجْ أَضْغَانَكُمْ.

    তিনি তোমাদের কাছে ধন-সম্পদ চাইলে অতঃপর তোমাদেরকে অতিষ্ঠ করলে তোমরা কার্পণ্য করবে এবং তিনি তোমাদের মনের সংকীর্ণতা প্রকাশ করে দেবেন।

    *38.*هَاأَنتُمْ هَؤُلَاء تُدْعَوْنَ لِتُنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَمِنكُم مَّن يَبْخَلُ وَمَن يَبْخَلْ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَن نَّفْسِهِ وَاللَّهُ الْغَنِيُّ وَأَنتُمُ الْفُقَرَاء وَإِن تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُم.

    শুন, তোমরাই তো তারা, যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহবান জানানো হচ্ছে, অতঃপর তোমাদের কেউ কেউ কৃপণতা করছে। যারা কৃপণতা করছে, তারা নিজেদের প্রতিই কৃপণতা করছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্থ। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, এরপর তারা তোমাদের মত হবে না।*


    সংক্ষিপ্ত আলোচনা
    এই সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ। এ সূরার আরেক নাম সূরা 'আল কিতাল'। এই নামটিই সূরার আসল নাম। কারন এর আলোচ্য বিষয় যে যুদ্ধ তা এর সূচনা থেকেই স্পষ্ট। আক্রমণাত্মক ভাষায় কাফেরদের পরিচয় দান এবং সম্মানজনক ভাষায় মুমিনদের পরিচয় দানের মাধ্যমে সূরার শুরুতেই কাফেরদেরকে আল্লাহর দুশমন ও মুমিনদেরকে আল্লাহর বন্ধু হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। এভাবে সূরার শুরু থেকেই পুঁজি দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহর মূল্যায়নে উভয় গোষ্ঠীর পরিচয় হচ্ছে চিরন্তন ও শাশ্বত। অন্য কথায় বলা চলে যে, সূরার প্রথম শব্দ থেকেই আল্লাহর পক্ষ থেকে তার ও ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, 'যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়েছে, আল্লাহ তা'আলা তাদের সমস্ত সৎ কাজগুলোকে বিনষ্ট করে দিয়েছেন। আর যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে এবং বিশেষত যা কিছু নাজিল হয়েছে, তার প্রতি ঈমান এনেছে- কেননা তা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত সত্য, আল্লাহ তা'আলা তাদের সকল পাপ মোচন করে দিয়েছেন এবং তাদের মনকে পরিশুদ্ধ করে দিয়েছেন।
    কারণ কাফেররা বাতিলের অনুসারী আর মুমিন রা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত সত্যের অনুসারী। আল্লাহ তা'আলা মানুষের কাছে তাদের অবস্থা বর্ণনা করে থাকেন। '(আয়াত 1 - 3)

    কাফেরদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পক্ষ থেকে যুদ্ধ ঘোষণার পর মুমিনদের দ্ব্যর্থহীন ভাবে আদেশ দেওয়া হয়েছে, কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য।এই আদেশ দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত সুললিত ও স্পস্ট শব্দে।
    রণাঙ্গনে সর্বাত্মক লড়াই ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর আটক বন্দীদের ব্যাপারে কী করণীয় সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, 'যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে,তখন তাদেরকে হত্যা করবে যখন তোমরা তাদেরকে পুরোপুরি পরাভূত করবে তখন তাদেরকে শক্তভাবে বেঁধে ফেলবে তারপর হয় তাদেরকে অনুগ্রহ দেখাবে অথবা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিবে যতক্ষণ না যুদ্ধবিরতি হয। এ আদেশ অবশ্যই মেনে চলতে হবে।....( আয়াত ৭)

    এই সাথে কাফেরদেরকে কঠোর হুমকি দেওয়া হয়েছে, আর মুমিনদের জন্য ঘোষিত হয়েছে আল্লাহর সর্বাত্মক সাহায্য ও অভিভাবকত্বের আশ্বাস। আরো ঘোষিত হয়েছে যে কাফেরদেরকে চরম লাঞ্চনা ও অসহায় অবস্থায় নিক্ষেপ করা হবে, 'তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? করলে দেখতে পেতো তাদের পূর্ববর্তী কাফেরদের কি পরিনতি হয়েছে, তাদেরকে আল্লাহ তাআলা বিধ্বস্ত করে ছেড়েছেন। সকলের জন্য অনুরূপ পরিণতি অপেক্ষা করছে। কারণ আল্লাহ তাআলা মুমিনদের অভিভাবক, আর কাফেরদের কোনো অভিভাবক নেই।'

    অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মক্কা নগরী বহিষ্কার করেছিল তাকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে, 'যে নগরী তোমাকে বহিষ্কার করেছিলো,তার চেয়েও শক্তিশালী অনেক নগরী ছিলো। আমি সেগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছি।সেগুলো কোন সাহায্যকারী ছিলো না। (আয়াত- 13)

    এরপর ঈমান ও কুফর সম্পর্কে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে কাফেরদের অবস্থা সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের আলোচনার মধ্য দিয়ে উল্লিখিত উচ্চারণ এরপর আলোচনা সামনে এগিয়ে চলে। পবিত্র হালাল জীবিকা উপভোগ করা ও কাফেরের পশুর মত নানান রকমের মজাদার খাদ্য খাওয়ার মধ্যে বিরাট পার্থক্য, সেটাও উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'আল্লাহ তা'আলা ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন,যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহমান।আর কাফেররা কেবল ভোগ করে এবং পশুর মত খাওয়া দাওয়া করে। জাহান্নামই তাদের বাসস্থান।'.... (আয়াত 12)
    তারপর মুমিনরা জান্নাতে যে সকল মজাদার খাদ্য ও পানীয় উপভোগ করবে, তা বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে খাঁটি ও নির্মল পানীয়, স্বাদ বিকৃত হয়নি এমন দুধ,মজাদার মদ এবং স্বচ্ছ মধু। আর এসব তারা বহমান নদী খালের আকারে পাবে। সেই সাথে তারা উপভোগ করবে রকমারি ফলমূল এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমার নেই মহাদানও। এসব বলার পর জিজ্ঞেস করা হয়েছে,
    ' যেসব মুমিন ও সৎকর্মশীল এসব নেয়ামত উপভোগ করবে তারা কি দুচোখে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থানকারী ও দোযখের গরম পানি খেয়ে নাড়িভুঁড়ি চিহ্ন হয়ে যাওয়া কাফেরদের মতো?'...(আয়াত নং ১৫.)

    কাফের ও মুমিনদের সম্পর্কে এই সুস্পষ্ট বিবরণ দেওয়ার পর মুনাফিকদের নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। এসব মুনাফিকরা মদিনায় নবগঠিত ইসলামী সমাজের জন্য এমন হুমকি হয়ে বিরাজ করছিলো যে, তা একই সময়ে মক্কা ও তার আশপাশে অবস্থানকারী মুশরিকদের হুমকির চেয়ে কোন অংশেই কম ছিলো না। উল্লেখিত বিভিন্ন ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে,এই সূরার সময়কাল ছিলো বদর যুদ্ধের পরে ও খন্দক যুদ্ধের আগে--- যখন ইহুদীদের শক্তি ও প্রতাপ ক্রমে খর্ব ও মুনাফিকদের কেন্দ্র ক্রমে দুর্বল হয়ে আসছিলো।
    এ সূরায় মুনাফিকদের সম্পর্কে যা কিছু আলোচনা করা হয়েছে, তাতে প্রথম থেকেই যুদ্ধ আক্রমণের দামামা বাজানো হয়েছে, কাফেররা কিভাবে
    রাসুল সাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কথা শোনা এড়িয়ে চলতো, মোনাফেকরা তাঁর মজলিসে বসে ও তাঁর কথা একাগ্রতার সাথে শুনতে ও বুঝতে চেষ্টা করতো না---তা এ আলোচনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, সবশেষে বলা হয়েছে, তাদের বিপদগামিতা ও কুফরীর কারণে তাদের মনের উপর সিল মেরে দেওয়া হয়েছে,' তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও আছে যে তোমার কথা শুনে কিন্তু তোমার কাজ থেকে বের হয়েই জ্ঞানীজনদেরকে জিজ্ঞেস করে, মোহাম্মদ এই মাত্র কি বললো? আসলে আল্লাহ তা'আলা তাদের হৃদয়ের উপর সিল মেরে দিয়েছেন এবং তারা অনুসরন করে থাকে।'( আয়াত ১৬)

    এরপর তাদেরকে কেয়ামতের হুশিয়ারী জানানো হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, সেদিন তাদের সম্বিত ফিরে আসার কোনই সম্ভাবনা থাকবে না। 'তবে কি তারা কিয়ামতের অপেক্ষায় রয়েছে যা তাদের কাছে হঠাৎ এসে পড়বে? তার আলামতগুলো তো এসেই গেছে। কেয়ামত এসে গেলে তাদের আর উপদেশ গ্রহনের সুযোগ কোথায়?
    এরপর মোনাফেক ও ও দুর্বল মুমিনদের সেই কাপুরুষতা ও অস্থিরতার বিবরণ দেয়া হয়েছে, যে দুর্বলতা যুদ্ধের আদেশ দেয়ার সময় কিছু কিছু দেখিয়েছিলো,
    'মুমিনরা' বলে থাকে একটা সূরা নাযিল হয় না কেন?কিন্তু যখনই একটা অকাট্য সূরা নাযিল হয় এবং তাতে যুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়, অমনি তুমি দেখতে পাও যে, যাদের মনে মুনাফেকীর ব্যাধি রয়েছে, তারা তোমার দিকে মৃত্যুর ভয়ে সংজ্ঞা হারানো লোকের মতো তাকায়।.....(আয়াত নং ২০)

    এরপর পরবর্তী তিনটি আয়াতে তাদেরকে আল্লাহর অনুগত হওয়া,সত্যাশ্রয়ী হওয়া ও ঈমানের ওপর স্হিতিশীল হওয়ার জন্যে উপদেশ দেয়া হয়েছে,তাদের হীনতা ও নীচতার নিন্দা করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে ও অভিসম্পাত দেয়া হয়েছে, 'অতএব তাদের জন্য উত্তম হলো আনুগত্য ও ভালো কথা বলা। যখন জিহাদের ফায়সালা করা হয়, তখন তারা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান এর সত্যতার প্রমাণ দিতো,তবে তা তাদের জন্য কল্যাণকর হতো অতএব তোমরা যদি ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হও, তবে কি তোমাদের পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার সম্ভাবনা রয়েছে আর তোমরা কি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে তাদেরকে আল্লাহ তাআলার দিয়েছেন এবং বধির ও অন্ধ করে দিয়েছেন। (আয়াত ২১-২৩)

    এরপর তাদের শয়তানের বন্ধুত্ব গ্রহণ ও ইহুদীদের সাথে দহরম-মহরম মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবার কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। তারা যে মুসলিম সমাজের সাথে নিজেদেরকে জড়িয়ে রাখে, অথচ তারা সমাজের সদস্য নয়। সেই সমাজের সামনে তাদের প্রত্যেককে পৃথক পৃথকভাবে অপমানিত করে দেয়া এবং সেই অবস্থায় মৃত্যু বরন পড়ানোর হুমকিও দেয়া হয়েছে। এই সমাজে বসবাস করেও তারা শুধু সেই সমাজের সদস্য নয়, তাই নয়-- বরং তারা সেই সমাজের বিরুদ্ধে চক্রান্তেও লিপ্ত। একথাই বলা হয়েছে 25 থেকে 31 নং আয়াতে,
    'নিশ্চয় যারা নিজেদের কাছে সত্য পথ পরিষ্কার হওয়ার পরও তা থেকে পিছিয়ে যায়, শয়তান তাদেরকে করে দেখায় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়।....'
    তৃতীয় ও শেষ পর্বে কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের আলোচিত হয়েছে এবং কঠোর নিন্দা করা হয়েছে, 'সত্য পথের সন্ধান পাওয়ার পর যারা কুফরী করেছে, অন্যদেরকে সত্য গ্রহণে বাধা দিয়েছে এবং রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছে, তারা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তিনি তাদের সৎকর্মকে বাতিল করে দিবেন।'

    এ পর্বে মুমিনদের কে সতর্ক করা হয়েছে যে, তাদের ভুল ভাঙতে কারণে তাদের উপরও যেন তাদের শত্রুদের উপরে আপতিত শাস্তির মত শাস্তি নেমে না বলা হয়েছে, হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের কৃত সৎকর্মগুলোকে নষ্ট করো না।' সেই সাথে অমুসলিমদের আক্রমণ ষড়যন্ত্রের মুখে নিজেদের ঈমানের দৃঢ়তা বহাল রাখার জন্যে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তোমরা ভগ্নহৃদয় হয়ো না। গায়ে পড়ে কাফেরদের সাথে আপোষ করতে যেও না। কেননা শেষ পর্যন্ত তোমরাই বিজয়ী হবে এবং আল্লাহ তা'আলা তোমাদের সাথেই রয়েছেন। আর আল্লাহ তা'আলা কখনোই তোমাদের সৎকর্ম গুলোকে নষ্ট করবেন না।'

    এই অংশে আরও একটা বিষয় আলোচিত হয়েছে এবং তা হচ্ছে ,দুনিয়ার জীবন আখেরাতের তুলনায় খুবই তুচ্ছ এবং দুনিয়ার উপর সব সময় আখিরাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে দুনিয়ার সকল সহায়-সম্পদ কে বর্জন করতে হবে সে কথা বলা হয়নি।
    সূরার শেষ আয়াতে এই বলে মুসলমানদেরকে হুমকি দেয়া হয়েছে যে, তারা যদি আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয়ে কার্পণ্য করে, তিনি তাদের জায়গায় অন্য কোন জাতির উথান ঘটাবেন।
    'তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।কিন্তু তোমাদের অনেক এই কার্পন্য করে। যে ব্যক্তি কার্পন্য করে, সে নিজের ক্ষতি সাধনের জন্যেই কার্পণ্য করে। আল্লাহ তাআলা ধনী, তোমরা দরিদ্র। তোমরা যদি করতে না চাও, তাহলে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের পরিবর্তে অন্য কোন জাতিকে নিয়ে আসবেন। তারা তোমাদের মত হবে না।'
    এভাবে সূরার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক নাগাড়ে কেবল যুদ্ধের দামামা বেজে চলেছে। এর সর্বত্রই যুদ্ধের পরিবেশ,ছায়া বিস্তার করে রেখেছে। এর প্রত্যেকটা আয়াতেই

    বলতে গেলে যুদ্ধের ছাপ পরিলক্ষিত হয়। সূরার শুরু থেকেই আয়াতের শেষে এমনভাবে শব্দ চয়ন করা হয়েছে যেন প্রত্যেকটাই একটা ভারী ক্ষেপণাস্ত্র। যেমন --
    আ'মালাহুম,বা'লাহুম,আমছালাহুম,আহওয়াআহুম,আখবারা কুম। এমনকি আয়াত শেষের যে শব্দগুলো অপেক্ষাকৃত হালকা সেগুলোও শূন্যে ঝুলিয়ে রাখা তরবারির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যেমন আকফালুহা,আমছালুহা। তাছাড়া এখানে শব্দের ঝংকারে যে ধরনের কঠোরতা রয়েছে, শব্দ দ্বারা যে চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে,তাহলো, 'তোমরা যখন কাফেরদের মোকাবেলায় আসবে তখন তাদের গর্দানে আঘাত করবে।'আর হত্যা ও গ্রেফতারি কেউ ভয়াবহ করে চিত্রিত করা হয়েছে, 'যখন তোমরা ভালো মতো তাদের রক্তপাত সম্পন্ন করবে তখন শক্ত করে তাদের বেঁধে ফেলো।' অনুরূপভাবে কাফেরদের বিরুদ্ধে যে বদ দোয়া করা হয়েছে তাও করা হয়েছে ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা বোধক শব্দ দিয়ে । যেমন, যারা কুফরী করেছে তারা নিপাত যাক এবং তাদের সৎ কাজ গুলো হয়ে যাক।' অতীতের কাফেরদের ধ্বংসের হয়েছে এমন ভাষায় ও উভয় দিক দিয়েই ভয়াবহ।
    যেমন,'আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ধ্বংস করে দিন এবং কাফেরদের জন্য অনুরূপ।'আর জাহান্নামের আজাবের চিত্রটা এখানে কিভাবে তুলে ধরা হয়েছে দেখুন, 'তাদেরকে গরম পানি খাওয়ানো হবে। তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলবে।'মুনাফিকদের ভীরুতা ও কাপুরুষতা দৃশ্য দেখানো হয়েছে এভাবে,'তারা তোমার দিকে তাকায় মৃত্যুর ভয়ে বেহুশ হয়ে যাওয়া ব্যক্তির মতো।' এমনকি জিহাদ থেকে পিঠটান দেয়ার বিরুদ্ধে মুমিনদেরকে প্রদত্ত হুঁশিয়ারিও এসেছে কঠোরতম ও চূড়ান্ত ভাষায় 'যদি তোমরা পিঠটান দাও, তাহলে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের পরিবর্তে এমন এক জাতিকে আনবেন, যারা তোমাদের মতো হবে না।' (আয়াত 38)
    এভাবেই সূরাটির আলোচ্য বিষয়,তার দৃশ্য ও ছবি, তার প্রেক্ষাপট ও পরিবেশ এবং তার সুর ও ঝংকার ছবি পরস্পরের সাথে সুসমন্বিত ও সঙ্গতিপূর্ণ।


    পাঠিয়েছেন→
    হাসান জামিল।

  • #2
    মাশা আল্লাহ।
    والیتلطف ولا یشعرن بکم احدا٠انهم ان یظهروا علیکم یرجموکم او یعیدو کم فی ملتهم ولن تفلحو اذا ابدا

    Comment


    • #3
      জাযাকুমল্লাহ

      Comment


      • #4
        সম্মানিত ভাই! এটা কি আপনাদের অনুবাদ করা নাকি সংগ্রহীত? জানালে ভালো হত...

        Comment

        Working...
        X