ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ
ঈমান অর্থ্ বিশ্বাস। আর এই ঈমানই আমাদের মূল জিনিস কারণ ঈমান ছাড়া কো ইবাদতই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য না। সূরা আসরের প্রথম আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সকল মানুষকেই প্রথমে ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন। কিন্তু পরের আয়াতেই ৪টি গুণ সম্পন্ন মানুষদেরকে এই ক্ষতির বাইরে রেখেছেন। আর এই ৪টি গুণের প্রথমটিই হচ্ছে ঈমান।
আর বিনষ্টকারী বলতে এমন কিছুকে বুঝায়, যার অস্তিত্বের কারণে অন্য কোনো জিনিস বিনষ্ট বা বাতিল হয়ে যায়। এ কথা অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন যে, সালাত বিনষ্ট বা বাতিল হওয়ার যেমন কিছু কারণ ও বিষয় আছে, ঠিক তেমনিভাবে ঈমান বিনষ্টকারী কিছু কারণ ও বিষয় আছে। যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি সালাতরত (নামাজরত) অবস্থায় সালাত বিনষ্টকারী বিষয়গুলোর যে কোনো একটি, যেমন সালাতের মধ্যে শব্দ করে হাঁসলে, কিছু খেলে অথবা কিছু পান করলে তার সালাত যেমন বাতিল হয়ে যাবে, ঠিক তেমনি ঈমান বিনষ্টকারী কিছু বিষয় আছে, যার মধ্যে বান্দা পতিত হলে তার ঈমান বিনষ্ট হয়ে যাবে। ফলে সে কাফের-মুশরিক হিসেবে গণ্য হবে।
ঈমান বিনষ্টকারী বেশ কিছু কারণ আছে। ইমাম ইবনুল কাইউম রহ. ও ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ.সহ অন্যান্য বিদ্বান এরকম ১০টি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। যদিও কারণগুলো ১০ এর ভিতর সীমাবদ্ধ নয়। আরও বেশ কিছু ঈমান ভঙ্গের কারণ আছে। ইনশাআল্লাহ, আমরা এই প্রবন্ধে প্রধান প্রধান ১২ টি ঈমান বিনষ্টকারী বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করতে যাচ্ছি।
ঈমান বিনষ্টকারী প্রধান বারটি বিষয় নিম্নে দেয়া হলো:
১। আল্লাহর সাথে শরীক করা: আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং রাসূল সা. কে উদ্দেশ্য করে বলেন:
অর্থ্:
“নিশ্চয়ই তুমি যদি আল্লাহর সাথে শরীক কর, তোমার সকল আমল নিস্ফল হয়ে যাবে এবং অবশ্যই তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্থ।” [সূরা যুমার: ৬৫]
রাসুল সা. যখন শিরক করলে ছাড় পেতেন না, তখন তাঁর উম্মাত শিরক করলে ছাড় পাবার কোন সম্ভাবনাই আর বাকি থাকল না। এই শিরক এমন এক গুনাহ, যার থেকে মৃত্যুর আলামত প্রকাশ পাবার আগে তওবা করে যেতে না পারলে চিরকাল জাহান্নামে থাকতে হবে। আল্লাহ আরও বলেন:
অর্থ্:
“কেউ আল্লাহর সাথে শিরক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম।”
[সুরা মায়েদা:৭২]
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনা করা, সাহায্য চাওয়া, কাউকে ভয় করা, অন্যের উপর ভরসা করা, অন্যের উদ্দেশ্যে মানত-মানসা করা, অন্যকে উপকার ও অপকারের মালিক মনে করা, আল্লাহর যেমন ক্ষমতা, অন্য কারো এরূপ ক্ষমতা রয়েছে বিশ্বাস করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবাহ করা, মাজারে সিজদাহ করা, আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আইন বিধানদাতা মানা, মানব রচিত আইনের কাছে বিচার ফয়সালা চাওয়া ইত্যাদি সবই শিরক; যা একজন মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
২। আল্লাহ এবং বান্দার মাঝখানে এমন মাধ্যম বানানো যার কাছে বান্দা সুপারিশ কামনা করে এবং তার ওপর তাওয়াক্কুল করে:
মহান আল্লাহ বলেন: অর্থ্:
“তারা আল্লাহকে ছেড়ে এমন অন্যদের ইবাদত করে, যারা না পারে তাদের ক্ষতি করতে আর না পারে কোন ভাল করতে। তারা বলে, এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। বল(হে মুহাম্মদ)! তোমরা কি আল্লাহকে আসমান ও জমিনের মধ্যকার ঐ জিনিসের ব্যাপারে সংবাদ দিতে চাও, যা তিনি জানেন না। তারা যে সমস্ত শির্ক করছে আল্লাহ পাক এর থেকে পবিত্র ও উচ্চ।”
[সূরা ইউনুস:18]
এটা হচ্ছে আউলিয়া এবং নেককার লোকদের কবরে যারা যায়, তাদের অধিকাংশের অবস্থা। তারা সেখানে গিয়ে কবরবাসীকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন ইবাদতে লিপ্ত হয়। কবরবাসী আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে পারবে এ বিশ্বাসে তাদের কাছে দোয়া করে। তাদের উদ্দেশ্যে মানত করে। পশু যবাই করে। তাদের কাছে সাহায্য কামনা করে এবং কবরের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। এসব কাজ কুফর ও শিরক যা কিনা ঈমান ভঙ্গের কারণ।
মক্কার কাফিররা নবী-রাসুল ও ওলী-আউলিয়াদের আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম মনে করে তাদের মূর্তি বানিয়ে তাদের পূঁজা করত। আর তারা বলত:
অর্থ্: “আমরা তাদের ইবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।” [সুরা যুমার:৩]
আর এদের সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা বলেন:
অর্থ্: “নিশ্চয়ই আল্লাহ হেদাআত করেন না তাকে যে মিথ্যাবাদী কট্টর কাফের।”
[সূরা যুমার:৩]
এই আয়াতে আল্লাহ তাদের শুধু কাফির না, কট্টরপন্থী কাফির বলেছেন। অথচ তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের আনুগত্য করে, শুধুমাত্র এ জন্যই করে যাতে তারা আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারে। কিন্তু এই কারণেই তারা আল্লাহর নিকটবর্তী না হয়ে বরং মুশরিক ও কট্টরপন্থী কাফিরে পরিণত হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, রাসূলগণ আল্লাহ ও বান্দাদের মধ্যে মাধ্যম বটে, কিন্তু এর অর্থ্ শুধু সংবাদ পৌঁছানের মাধ্যম।
৩। মুশরিকদেরকে কাফির মনে না করা অথবা তাদের কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা অথবা তাদের কুফরী মতবাদতকে সঠিক মনে করা: মহান আল্লাহ বলেন:
অর্থ্: “নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন হলো ইসলাম।” [আল ইমরান: ১৯]
অন্যত্র তিনি বলেন,
অর্থ্: “কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায়, তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” [সুরা আলে ইমরান:৮৫]
এখানে সন্দেহ দ্বারা বুঝানো হচ্ছে যে, মুসলিম উম্মাহ যার কাফের হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষন করে; তার কুফরীর ব্যাপারে কোনো মুসলিমের সন্দেহ পোষণ করা।
যেমন ইহুদী, নাসারা, মাজুসি (অগ্নি পুজারি), বৌদ্ধ, জৈন, মূর্তি পূজারী হিন্দু, পৌত্তলিকদের শিরক ও কুফরীর ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর কোনো দ্বিমত নেই। তাই কোনো মুসলমান এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করতে পারবে না। করলে সেও ইজমার দলীল দ্বারা কুফরী মতবাদে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
এ দৃষ্টিকোন থেকে জাহেলি যুগের মুশরিক যারা নিজেদের মুশরিক হওয়ার ব্যাপারে নিজেরাই স্বাক্ষ্য প্রদান করেছিলো, আর বর্তমান যুগের মুশরিক যারা ইসলাম ও ঈমানের দাবী করে অথচ আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট হককে গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করে, এই দুই ধরণের মুশরিকদের মধ্যে কোন পার্থ্ক্য নেই। আল্লাহ বলেন: অর্থ্: হে ঈমানদারগণ নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র।” [সূরা তওবা: ২৮]
আজকাল অনেক নামধারী মুসলিমদের দেখা যায়, ইসলামের পাশাপাশি বিধর্মীদের ধর্ম্ বিশ্বাসকেও সঠিক মনে করে থাকে আর বলে, যে যে ধর্ম্ আছে সে সে ধর্মে থেকে জান্নাতে যেতে পারবে। এই আকীদাহ রাখা মাত্রই একজন মুসলিম দাবীদার কাফিরে পরিণত হয়ে যাবে। নেতা-নেত্রীদের অনেককেই দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় সমাবেশে গিয়ে বিধর্মীদের আকীদার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়ে থাকে। এদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই; পায়ুপথ থেকে বায়ূ বের হওয়ার সাথে সাথে যেমন অজু ভেঙ্গে যায়, ঠিক তেমনি এইরূপ কুফরী আকীদা করার সাথে সাথে ঈমান ভেঙ্গে যায়।
৪। রাসূল সা. কর্তৃক আনীত দ্বীন, অথবা (পূণ্য কাজের) সওয়াব অথবা (পাপের জন্য) শাস্তি এবং দ্বীনের যে কোনো বিষয়ে রং-তামাশা, বিদ্রুপ করা:
আল্লাহ তায়ালা বলেন: অর্থ্: “আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল! তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসূলের সাথে বিদ্রূপ করছিলে? তোমরা কোন ওজর পেশ করো না। নিশ্চয় ঈমানের পর তোমরা কুফরি করেছ।।” [সূরা তাওবা: 65-66]
আমাদের দেশসহ বিভিন্ন দেশে অনেক নাট্যানুষ্ঠানে ও সিনেমায় খারাপ চরিত্রের অভিনয়ের জন্যে দাঁড়ি, টুপি ও ইসলামী পোষাককে প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আল-কুরআনের কোন শব্দ বা আয়াত, কোন ঘটনা প্রসঙ্গে বিশেষ কোনো নবীর নাম, কেউ কেউ এমন বিকৃতভাবে উচ্চারণ করেন যাতে বিদ্রুপ বুঝা যায়। এ ধরনের বিদ্রুপ উদ্দেশ্যমূলক হোক বা হাসি ঠাট্টামূলক হোক, সবই কুফুরী। আবার রাসুল সা. এর ব্যাঙ্গ কার্টুন প্রতিযোগিতা করা হয়। যা শুধু ঈমান ধ্বংসের কারণই নয় বরং এই কাজের কারণে তাদেরকে হত্যা করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
আল্লাহর রাসূল সা. এর অপমানকারীরা, ব্যাঙ্গকারীরা, বিদ্রুপকারীরা অতীতেও তওবা ও ক্ষমার সুযোগ পায়নি, ইনশাআল্লাহ আজও পাবে না।
আউস গোত্রের সাহাবী কর্তৃক কাব বিন আশরাফকে হত্যা, খাযরায গোত্রের সাহাবী কর্তৃক আবু রাফেকে হত্যা, কাবা ঘরের গিলাফ ধরে থাকা ইবনে খতালকে হত্যা এবং যে সকল মহিলা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে খারাপ কবিতা পড়েছিল তারা দাসী এবং মহিলা হওয়া সত্বেও তাদেরকে ক্ষমা না করে হত্যা করার ঘটনাগুলো কিয়ামত পর্য্ন্ত আমাদের জন্য দলিল হয়ে থাকবে।
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন:
“আল্লাহ এই কিতাবের মাধ্যমে তোমাদের উপর আদেশ করছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর কোন আয়াতকে অস্বীকার করা হচ্ছে এবং তার সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হচ্ছে, তখন তোমরা তাদের সাথে ততক্ষণ পর্য্ন্ত বসবে না যতক্ষণ পর্য্ন্ত তারা অন্য আলোচনায় লিপ্ত হয়। (এমনটি করলে) তোমরা তো তাদের মতই হয়ে গেলে। আল্লাহ তা‘আলা সব কাফির ও মুনাফিকদের জাহান্নামে একত্রিত করবেন।” [সূরা নিসা:140]
আবু বকর সিদ্দীক
মাসিক: আত্-তাহরীদ জুন/২০১২
[বাকি ৮টি ইনশাআল্লাহ পরবর্তীতে পোষ্ট করা হবে]
ঈমান অর্থ্ বিশ্বাস। আর এই ঈমানই আমাদের মূল জিনিস কারণ ঈমান ছাড়া কো ইবাদতই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য না। সূরা আসরের প্রথম আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সকল মানুষকেই প্রথমে ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন। কিন্তু পরের আয়াতেই ৪টি গুণ সম্পন্ন মানুষদেরকে এই ক্ষতির বাইরে রেখেছেন। আর এই ৪টি গুণের প্রথমটিই হচ্ছে ঈমান।
আর বিনষ্টকারী বলতে এমন কিছুকে বুঝায়, যার অস্তিত্বের কারণে অন্য কোনো জিনিস বিনষ্ট বা বাতিল হয়ে যায়। এ কথা অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন যে, সালাত বিনষ্ট বা বাতিল হওয়ার যেমন কিছু কারণ ও বিষয় আছে, ঠিক তেমনিভাবে ঈমান বিনষ্টকারী কিছু কারণ ও বিষয় আছে। যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি সালাতরত (নামাজরত) অবস্থায় সালাত বিনষ্টকারী বিষয়গুলোর যে কোনো একটি, যেমন সালাতের মধ্যে শব্দ করে হাঁসলে, কিছু খেলে অথবা কিছু পান করলে তার সালাত যেমন বাতিল হয়ে যাবে, ঠিক তেমনি ঈমান বিনষ্টকারী কিছু বিষয় আছে, যার মধ্যে বান্দা পতিত হলে তার ঈমান বিনষ্ট হয়ে যাবে। ফলে সে কাফের-মুশরিক হিসেবে গণ্য হবে।
ঈমান বিনষ্টকারী বেশ কিছু কারণ আছে। ইমাম ইবনুল কাইউম রহ. ও ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ.সহ অন্যান্য বিদ্বান এরকম ১০টি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। যদিও কারণগুলো ১০ এর ভিতর সীমাবদ্ধ নয়। আরও বেশ কিছু ঈমান ভঙ্গের কারণ আছে। ইনশাআল্লাহ, আমরা এই প্রবন্ধে প্রধান প্রধান ১২ টি ঈমান বিনষ্টকারী বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করতে যাচ্ছি।
ঈমান বিনষ্টকারী প্রধান বারটি বিষয় নিম্নে দেয়া হলো:
১। আল্লাহর সাথে শরীক করা: আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং রাসূল সা. কে উদ্দেশ্য করে বলেন:
অর্থ্:
“নিশ্চয়ই তুমি যদি আল্লাহর সাথে শরীক কর, তোমার সকল আমল নিস্ফল হয়ে যাবে এবং অবশ্যই তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্থ।” [সূরা যুমার: ৬৫]
রাসুল সা. যখন শিরক করলে ছাড় পেতেন না, তখন তাঁর উম্মাত শিরক করলে ছাড় পাবার কোন সম্ভাবনাই আর বাকি থাকল না। এই শিরক এমন এক গুনাহ, যার থেকে মৃত্যুর আলামত প্রকাশ পাবার আগে তওবা করে যেতে না পারলে চিরকাল জাহান্নামে থাকতে হবে। আল্লাহ আরও বলেন:
অর্থ্:
“কেউ আল্লাহর সাথে শিরক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম।”
[সুরা মায়েদা:৭২]
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনা করা, সাহায্য চাওয়া, কাউকে ভয় করা, অন্যের উপর ভরসা করা, অন্যের উদ্দেশ্যে মানত-মানসা করা, অন্যকে উপকার ও অপকারের মালিক মনে করা, আল্লাহর যেমন ক্ষমতা, অন্য কারো এরূপ ক্ষমতা রয়েছে বিশ্বাস করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবাহ করা, মাজারে সিজদাহ করা, আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আইন বিধানদাতা মানা, মানব রচিত আইনের কাছে বিচার ফয়সালা চাওয়া ইত্যাদি সবই শিরক; যা একজন মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
২। আল্লাহ এবং বান্দার মাঝখানে এমন মাধ্যম বানানো যার কাছে বান্দা সুপারিশ কামনা করে এবং তার ওপর তাওয়াক্কুল করে:
মহান আল্লাহ বলেন: অর্থ্:
“তারা আল্লাহকে ছেড়ে এমন অন্যদের ইবাদত করে, যারা না পারে তাদের ক্ষতি করতে আর না পারে কোন ভাল করতে। তারা বলে, এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। বল(হে মুহাম্মদ)! তোমরা কি আল্লাহকে আসমান ও জমিনের মধ্যকার ঐ জিনিসের ব্যাপারে সংবাদ দিতে চাও, যা তিনি জানেন না। তারা যে সমস্ত শির্ক করছে আল্লাহ পাক এর থেকে পবিত্র ও উচ্চ।”
[সূরা ইউনুস:18]
এটা হচ্ছে আউলিয়া এবং নেককার লোকদের কবরে যারা যায়, তাদের অধিকাংশের অবস্থা। তারা সেখানে গিয়ে কবরবাসীকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন ইবাদতে লিপ্ত হয়। কবরবাসী আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে পারবে এ বিশ্বাসে তাদের কাছে দোয়া করে। তাদের উদ্দেশ্যে মানত করে। পশু যবাই করে। তাদের কাছে সাহায্য কামনা করে এবং কবরের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। এসব কাজ কুফর ও শিরক যা কিনা ঈমান ভঙ্গের কারণ।
মক্কার কাফিররা নবী-রাসুল ও ওলী-আউলিয়াদের আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম মনে করে তাদের মূর্তি বানিয়ে তাদের পূঁজা করত। আর তারা বলত:
অর্থ্: “আমরা তাদের ইবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।” [সুরা যুমার:৩]
আর এদের সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা বলেন:
অর্থ্: “নিশ্চয়ই আল্লাহ হেদাআত করেন না তাকে যে মিথ্যাবাদী কট্টর কাফের।”
[সূরা যুমার:৩]
এই আয়াতে আল্লাহ তাদের শুধু কাফির না, কট্টরপন্থী কাফির বলেছেন। অথচ তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের আনুগত্য করে, শুধুমাত্র এ জন্যই করে যাতে তারা আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারে। কিন্তু এই কারণেই তারা আল্লাহর নিকটবর্তী না হয়ে বরং মুশরিক ও কট্টরপন্থী কাফিরে পরিণত হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, রাসূলগণ আল্লাহ ও বান্দাদের মধ্যে মাধ্যম বটে, কিন্তু এর অর্থ্ শুধু সংবাদ পৌঁছানের মাধ্যম।
৩। মুশরিকদেরকে কাফির মনে না করা অথবা তাদের কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা অথবা তাদের কুফরী মতবাদতকে সঠিক মনে করা: মহান আল্লাহ বলেন:
অর্থ্: “নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন হলো ইসলাম।” [আল ইমরান: ১৯]
অন্যত্র তিনি বলেন,
অর্থ্: “কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায়, তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” [সুরা আলে ইমরান:৮৫]
এখানে সন্দেহ দ্বারা বুঝানো হচ্ছে যে, মুসলিম উম্মাহ যার কাফের হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষন করে; তার কুফরীর ব্যাপারে কোনো মুসলিমের সন্দেহ পোষণ করা।
যেমন ইহুদী, নাসারা, মাজুসি (অগ্নি পুজারি), বৌদ্ধ, জৈন, মূর্তি পূজারী হিন্দু, পৌত্তলিকদের শিরক ও কুফরীর ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর কোনো দ্বিমত নেই। তাই কোনো মুসলমান এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করতে পারবে না। করলে সেও ইজমার দলীল দ্বারা কুফরী মতবাদে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
এ দৃষ্টিকোন থেকে জাহেলি যুগের মুশরিক যারা নিজেদের মুশরিক হওয়ার ব্যাপারে নিজেরাই স্বাক্ষ্য প্রদান করেছিলো, আর বর্তমান যুগের মুশরিক যারা ইসলাম ও ঈমানের দাবী করে অথচ আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট হককে গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করে, এই দুই ধরণের মুশরিকদের মধ্যে কোন পার্থ্ক্য নেই। আল্লাহ বলেন: অর্থ্: হে ঈমানদারগণ নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র।” [সূরা তওবা: ২৮]
আজকাল অনেক নামধারী মুসলিমদের দেখা যায়, ইসলামের পাশাপাশি বিধর্মীদের ধর্ম্ বিশ্বাসকেও সঠিক মনে করে থাকে আর বলে, যে যে ধর্ম্ আছে সে সে ধর্মে থেকে জান্নাতে যেতে পারবে। এই আকীদাহ রাখা মাত্রই একজন মুসলিম দাবীদার কাফিরে পরিণত হয়ে যাবে। নেতা-নেত্রীদের অনেককেই দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় সমাবেশে গিয়ে বিধর্মীদের আকীদার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়ে থাকে। এদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই; পায়ুপথ থেকে বায়ূ বের হওয়ার সাথে সাথে যেমন অজু ভেঙ্গে যায়, ঠিক তেমনি এইরূপ কুফরী আকীদা করার সাথে সাথে ঈমান ভেঙ্গে যায়।
৪। রাসূল সা. কর্তৃক আনীত দ্বীন, অথবা (পূণ্য কাজের) সওয়াব অথবা (পাপের জন্য) শাস্তি এবং দ্বীনের যে কোনো বিষয়ে রং-তামাশা, বিদ্রুপ করা:
আল্লাহ তায়ালা বলেন: অর্থ্: “আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল! তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসূলের সাথে বিদ্রূপ করছিলে? তোমরা কোন ওজর পেশ করো না। নিশ্চয় ঈমানের পর তোমরা কুফরি করেছ।।” [সূরা তাওবা: 65-66]
আমাদের দেশসহ বিভিন্ন দেশে অনেক নাট্যানুষ্ঠানে ও সিনেমায় খারাপ চরিত্রের অভিনয়ের জন্যে দাঁড়ি, টুপি ও ইসলামী পোষাককে প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আল-কুরআনের কোন শব্দ বা আয়াত, কোন ঘটনা প্রসঙ্গে বিশেষ কোনো নবীর নাম, কেউ কেউ এমন বিকৃতভাবে উচ্চারণ করেন যাতে বিদ্রুপ বুঝা যায়। এ ধরনের বিদ্রুপ উদ্দেশ্যমূলক হোক বা হাসি ঠাট্টামূলক হোক, সবই কুফুরী। আবার রাসুল সা. এর ব্যাঙ্গ কার্টুন প্রতিযোগিতা করা হয়। যা শুধু ঈমান ধ্বংসের কারণই নয় বরং এই কাজের কারণে তাদেরকে হত্যা করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
আল্লাহর রাসূল সা. এর অপমানকারীরা, ব্যাঙ্গকারীরা, বিদ্রুপকারীরা অতীতেও তওবা ও ক্ষমার সুযোগ পায়নি, ইনশাআল্লাহ আজও পাবে না।
আউস গোত্রের সাহাবী কর্তৃক কাব বিন আশরাফকে হত্যা, খাযরায গোত্রের সাহাবী কর্তৃক আবু রাফেকে হত্যা, কাবা ঘরের গিলাফ ধরে থাকা ইবনে খতালকে হত্যা এবং যে সকল মহিলা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে খারাপ কবিতা পড়েছিল তারা দাসী এবং মহিলা হওয়া সত্বেও তাদেরকে ক্ষমা না করে হত্যা করার ঘটনাগুলো কিয়ামত পর্য্ন্ত আমাদের জন্য দলিল হয়ে থাকবে।
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন:
“আল্লাহ এই কিতাবের মাধ্যমে তোমাদের উপর আদেশ করছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর কোন আয়াতকে অস্বীকার করা হচ্ছে এবং তার সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হচ্ছে, তখন তোমরা তাদের সাথে ততক্ষণ পর্য্ন্ত বসবে না যতক্ষণ পর্য্ন্ত তারা অন্য আলোচনায় লিপ্ত হয়। (এমনটি করলে) তোমরা তো তাদের মতই হয়ে গেলে। আল্লাহ তা‘আলা সব কাফির ও মুনাফিকদের জাহান্নামে একত্রিত করবেন।” [সূরা নিসা:140]
আবু বকর সিদ্দীক
মাসিক: আত্-তাহরীদ জুন/২০১২
[বাকি ৮টি ইনশাআল্লাহ পরবর্তীতে পোষ্ট করা হবে]
Comment