“নিজের কাছে ক্রমাগত পেশ করা নিজেরই বুঝ- ক্ষমতার চক্র হতে মুক্ত হয়ে কোনদিনও মুক্ত হতে পারবে না মানুষ, তবু প্রকৃত প্রগতিশীলের কাজ ক্ষমতার বৈধতাকে ক্রমাগত আক্রমন করে যাওয়া, কিংবা এখন এসমাজকে নিয়ে আর কিছুই করবার নেই কেবল বিদ্রুপ করা ছাড়া”
উল্লিখিত বিষয়বস্তুটাকে চলমান পৃথিবীর একটি বাস্তবতা হিসাবে আমরা গ্রহণ করতে পারি। যে বাস্তবার প্রভাব আমরা আজ আমাদের জীবনের প্রতিটি মোড়ে মোড়েই দেখতে পাচ্ছি। আমরা জানি, বাস্তবতা মানেই বিশেষ এক প্রকার প্রতিপাদ্য বা পাটভূমির নাম, যা কোনদিন কিছুতেই পরিবর্তন হয় না। আধাঁর রাত্রির ঝোছনা, নদীর কলতানের ন্যায় যা অবিরত বয়ে যায়। কালের প্রক্কালে অবান্তর বিষয়গুলো বাস্তবতার উপর চেপে বসলেও রাতের আকাশে মিটিমিটি তারকারাজির ন্যায় তা জ্বলতে থাকে। তবুও বাস্তবতার প্রভাব কবু আমাদের জীবন চরিত্র থেকে একমুহুর্তের জন্যেও বিলুপ্ত হয় না।
এপৃথিবীতে চলমান বিচরণক্ষণে আমাদের অনেক পরিচয় ও অভিসম্ভাষণ আমরা খুঁজে পেয়েছি। যেগুলোর মাধ্যমেই আজ আমরা একে অপরের সাথে পরিচিত। আমাদের অনেকই আজ শিক্ষিত। তাই শিক্ষার বিভিন্ন সেক্টর ও বিভাগের দিকে সম্মন্ধ করে আজ আমাদের ডাকা হয়। সেই শিক্ষা-সেক্টরের মধ্যে অনেক ভাগ-বিভাজনও রয়েছে। আমাদের শিক্ষাক্ষেত্র মৌলিখভাবে জাগতিক শিক্ষা ও পরজাগতিক শিক্ষা বলয়ে বিভক্ত। এখন যদি আমরা লক্ষ করি তাহলে দেখতে পাব, প্রতিটি শ্রেণীরই বিশেষ যোগ্যতা ও দায়-দায়িত্ব রয়েছে। একজন ডাক্তারের কাজ হলো রোগিকে সেবা দেওয়া। একজন ইন্জিনিয়ারের কাজ হলো রাস্তা-ঘাট, দালান-কোটা তৈরি করার প্লান করা। এগুলো সবই জাগতিক শিক্ষার উদাহরণ।
অপরাপর পরজাগতিক শিক্ষাকেত্রেও রয়েছে নানা রকম স্তর ও বিন্যাস। তাঁদের অনেকেই যেহেতু কোরআন নিয়ে গবেষণা করেন তাই আমরা তাঁদেরকে মুফাসসীর বলি। তাঁদের অনেকেই যেহেতু ফিকহ নিয়ে গবেষণা করেন তাই আমরা তাঁদের মুফতি বলি। আর যারা হাদিস নিয়ে গবেষণা করেন আমরা তাঁদেরকে মুহাদ্দিস বলে থাকি। আর উল্লিখিত সবকটি হলো আমাদের সামাজিক পরিভাষা। এককথায়, পরজাগতিক শিক্ষাকেত্রের যে বিন্যাস আমরা জেনেছি এগুলো হলো আমাদের সামাজিক পরিভাষাসমূহ। আল্লাহ তা’লার ভাষায় তারা হলেন ‘আলিম’ বা জ্ঞাণী। উল্লিখিত স্তর ও শ্রেণী বিন্যাসের প্রত্যেকটিই যেহেতু ধর্মীয় বিষয়াবলির সাথে সম্পৃক্ত তাই তাদের সকলকেই আমরা আলিম বলতে পারি। কিংবা তাদের সকলকেই আমাদের আলিম বলতে হয়। যেহেতু তাদের সকলেই দ্বীন-ধর্মীয় বিষয় নিয়েই গবেষণা করেন।
আর আলিমগণ হলেন ইসলামের বিশেষ একটি শ্রেণী। যারা কোরআনের ভাষায় পরহেজগার ও মুত্তাকি। যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উত্তরসূরী। দ্বীন ও ইসলামের কান্ডারী, রাহবার। যারা সকল মুসলমানদের অনুসরণ-অনুকরণ, ভালোবাসার পাত্র। যাদের দায়িত্ব মানবজাতিকে আল্লাহর বাণীসমূহ পড়ে পড়ে বুঝানো। আল্লাহর রাহে সকল মানবজাতিকে আহবান করা। সকল মানবজাতির সামনে আল্লাহর ইচ্ছা-অভিপায়ের কথা তুলে ধরা। একমাত্র আল্লাহর বিধানের ছাঁয়া তলেই জীবন ধারণের কথা সমগ্র মানবজাতির সামনে খুলে বলা। যাদের চেষ্টা-প্রচেষ্টার অন্যতম হলো, এপুরো পৃথিবীকে ইমানের আলোক রশ্মিতে আলোকিত করা। এপৃথিবীর প্রতিটি কাঁচা পাকা আবাস্তল থেকে কুফুরের অন্ধকার দূর করার সর্বাত্রক চেষ্টা অব্যহত রাখা। কুফুরের অন্ধকারে অতিষ্ট মানবজাতিকে টেনে হেঁচড়ে হলেও ইমানের আলোর দিকে নিয়ে আসা। জুলুমের জাতাকলে পিষ্ট মানবজাতির দূরবিষহ জীবনের হাল ধরা। আল্লাহ কর্তৃত মানবতাকে বসবাসের জন্যে দান করা এপৃথিবীতে প্রতিটি অনাত আশ্রয়হীন মানুষের বসবাসের নিশ্চয়তা বিধান করা। দুঃস্থ সম্ভলহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানো। অন্য বস্ত্র ভিটে মাটিহীন মানুষের জন্যে অন্য বস্ত্রের ব্যবস্থা করা।
আর এসব দায়িত্বের কোনোটিই কিন্তু উল্লিখি শ্রেণীসমূহের পক্ষ থেকে আলিম সমাজের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। বরং আল্লাহ তায়ালাই কোরআনুল কারীমের পাতা পাতায় আলিম সমাজের দায়িত্ব-কর্তব্যের বিষয়টি পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছেন। কোরআনের মর্ম বাণী বুঝতে সক্ষম আলিমদের কাছে এগুলো পরিস্কার বিষয়। আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারীমে নবী-রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য কী আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং নবী-রাসূলদের অবর্তমানে তাঁদের উত্তরসূরী উলামাদের কাজ কী হবে? তা এখানে পরিস্কার। কোরআনের ভাষায় মুসলিম জাতি যেহেতু সমগ্র মানবজাতির জন্যে কল্যাণকামী। সমগ্র মানবজাতির হিতাকাঙ্খী। সুতরাং এখানেও আলিমদের ভূমিকা, দায়-দায়িত্বের একাধিক দিক সুস্পষ্ট।
(তাই সম্মানিত মোল্লাজীদেরকে এবিষয়টি জানিযে দিব যে, হুজরাখানা আর তেহখানায় নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর দিন শেষ। এখন থেকে আপনাদের জন্যে উচিত আপনাদের উপর অর্পিত ঐশ্বরিক দায়-দায়িত্বটুক বুঝে নেওয়া। অন্যথায় কাল হাশরের দিন আপনার সকল মানবজাতির সামনে অপমানিত হবেন।)
এখন আমরা একটি বিষয় পরিস্কার বুঝে নিতে চেষ্টা করব। বিষয়টি হলো আল্লাহ তায়ালার “সুন্নাহ” এর বিভিন্ন সমীকরণ। আল্লাহ তা’লার “সুন্নাহ” এর বিভিন্ন স্তর। আমরা জানি মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। জাত-পাত নির্বিশেষে সকল সৃষ্টিজীবের মধ্যে তারাই শেষ্ঠ। মানুষ যে সকল সৃষ্টিজীবের মধ্যে শেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল কুরআনই আমাদের মাঝে তা ঘোষণা করেছে। পবিত্র কুরআনেই মানবজাতির শেষ্ঠত্ত্বের কারণসমূহ বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও সকল মানুষই কী পরকালে নাজাত লাভ করবে? মানবতার শেষ্ঠত্ব দেখিয়ে সব মানুষই কী দুনিয়াতে সমান তালে চলতে পারবে? পারবে না। কারণ আল্লাহ তা’লা পবিত্র কুরআনুল কারীমে মানুষ ছাড়া আরও যত সব সৃষ্টিজীব রয়েছে সেগুলোর উপর মানবজাতিকে শেষ্ঠত্ব প্রদাণ করে, তাদের পারস্পারিক শেষ্ঠত্ত্বের বিচারে খোদ মানবজাতির মধ্যে আবার ভাগ-বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। যে ভাগ ও বিভাজনের মাধ্যমে সম্মান-মর্যাদার অধিকারী শুধু মুমিনদেরকেই সাব্যস্ত করেছেন। তাছাড়া লাঞ্ছনা আর গঞ্জনার জোয়াল কাফিরদের কাঁধেই জুলিয়ে দিয়েছেন। টেক্স আর খাজনার বোঝা তাদের উপরই আরোপিত হয়েছে। যা তাদের কৃতকর্মেরই পুরুস্কার। খেলাফতকালে যে টেক্স আর খাজনার পরিমাণ ছিল মুসলমানদের খাজাঞ্জিখানার দুই তৃতীয়াংশ। এসব ইতিহাস কি মুছে ফেলা যাবে?
এখানে আমরা কী দেখতে পেলাম? শুধু মানুষত্ত্ব্যের পরিচয় লাভ করার কারণে জাত-পাত নির্বিশেষে সকল মানুষকেই আল্লাহ তায়ালা মানুষ ছাড়া আরো যত সব সৃষ্টিজীব রয়েছে তাদের উপর শেষ্ঠত্ব দিলেন। অতপর মানুষের পারস্পারিক শেষ্ঠত্বের বিচারে শুধু মুমিন আর মুসলামনদেরকেই শেষ্ঠত্ব আর সম্মানের অধিকারী করলেন। এটি হলো আল্লাহ তায়ালার “সুন্নাহ” এর বিভিন্ন সমীকরণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোরআনে এমন দৃষ্টান্ত আরো অনেক রয়েছে।
আসমানী জীবন বিধান দিয়ে আল্লাহ তা’লা অগণিত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। নবী-রাসূলদের অবর্তমানে নবী-রাসূলদের আনিত দ্বীন ও শরীয়তের যথাযথ তদারকি করার জন্যে আল্লাহ তায়ালা তাঁদের অনুসারীদের মধ্য হতে বিশেষ একটি শ্রেণী তৈরি করেছেন। যারা যুগে যুগে বিভিন্ন নামে পরিচিত হলেও তাঁদের কাজ অভিন্ন ছিল। তাঁদের কাজ ছিলো নবী-রাসূলদের অবর্তমানে তাঁদের আনীত দ্বীন ও শরীয়তকে সার্বিকভাবে সংরক্ষণ করা। মানুষের মনগড়া ব্যাখা ও রদবদল হতে হেফাজত করা। মানুষের স্বাভাবিক ভাষা ও রুচিবোধর প্রতি লক্ষ করে হযরত মূসা আ: এর যুগে এ শ্রেণীটি মানুষের মাঝে ‘নাকিব’ নামে পরিচিত ছিলো। হযরত ইসা আ: এর যুগে তাঁদেরকে আহবার নামে ডাকা হত। আর আখিরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সা: এর উম্মতের মাঝে নবী-রাসূলদের উত্তরসূরী এ শ্রেণীকে আলিম বলা হয়।
আল্লাহর প্রেরীত প্রত্যেক নবী-রাসূল যেমন আল্লাহর কাছে সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। ঠিক তদ্রুপ নবী-রাসূলদের সুযোগ্য উত্তরসূরী আলিমগণও আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। হোক তাঁরা মূসা নবীর দ্বীন ও শরীয়তের আলিম ‘নাকিবগণ’ ইসা নবীর দ্বীন ও শরীয়তের আলিম ‘আহবারগণ’ কিংবা আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দ্বীন ও শরীয়তের উত্তরসূরী সুযোগ্য আলিমগণ। তাঁদের সকলের সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহর কাছে একই মাপকাঠির মাধ্যমে পরিমাপ যোগ্য। প্রত্যেক নবী-রাসূল এর উম্মতের মধ্যে তাঁদের এই সম্মানি পদবি শুধু তাদের দায়-দায়িত্ব আর কর্তব্যবোধের জন্যেই। তাঁদের উপর আল্লাহর পক্ষ হতে অর্পিত জিম্মাদারী আদায়ের নিমিত্তেই। কিন্তু, পার্থিব স্বার্থের পেছনে পড়ে যখনি তাঁরা আল্লাহর অর্পিত দায়-দায়িত্ব, আর কর্তব্যবোধের কথা ভুলে গিয়েছেন। আল্লাহর প্রদত্ত ‘নাকিব’ ‘আহবার’ ‘রুহবান’ ‘রাব্বানী’ প্রভৃতি পরিচয় পত্রসমূহ ছিড়ে ফেলেছেন। ইমান আর কুফুরের মাঝে অন্তরায় পর্দাকে ছিড়ে-ফেরে সমকালীন শক্তি, প্রতিষ্ঠীত সরকার ব্যবস্থা আর সামরিক প্রভুদের সাথে আতাত করতে শুরু করেছেন। প্রতিষ্ঠীত শক্তির অনুকুল্লতা অর্জনের লক্ষ্যে আল্লাহর বর্ণিত হালালকে হারাম আর হারামকে হালাল করেছেনে। তখনি আল্লাহ তা’লা সে সকল নাকিব, আহবার, রুহবান, আর রাব্বানীদের আসল হালত মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। তাঁদের স্বার্থান্বেষী মন-মানষিকতার দিক মানুষকে বলে দিয়েছেন। ওহী প্রেরণের মাধ্যমে তাঁদের কৃতকর্মের নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁদেরকে তিরস্কার করেছেন। তাঁদেরকে ধিক্কার জানিয়েছেন। পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাবান আল্লাহ তাঁদের ক্ষেত্রে বিদ্রুপের পথ বেঁচে নিয়েছেন। আগত উম্মার নিন্দা আর ধিক্কার জ্ঞাপনয়ার্থে এ সবকিছু মহাগ্রন্থ আল কোরআনে তুলে দিয়েছেন। যা কিয়ামত তক মানুষ পড়বে আর তাঁদেরকে ধিক্কার জানাবে।
আমাদের দেশে আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যা মূলত কুফুরের জাকজমক আর আড়ম্ভড়তার এক দৃশ্য। গনতন্ত্র নামক বেশশা ব্যবস্থার এক ভরা যৌবন। শ্রাবণ-বর্ষায় প্লাবিত কুফুর আর নিফাকের থইথই ভরা জোয়ার। যে নির্বাচন কুফুর ও কুফুরি মতবাদের প্রতি লালন করা প্রেম-প্রীতি আর ভালোবাসার বহির প্রকাশের এক অশুভ কাল। সুতরাং মুহাম্মাদে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মার প্রতিটি নওযোয়ান ভাইদের প্রতি এক উদাত্ত আহবান, কোনো ভাবেই আপনারা এই কুফুরি সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নিবেন না। বরং নিজ নিরাপত্তার দিক মাথায় রেখে এ নির্বাচনকে বানচাল করার সবকিছু করবেন। আর উলামায়ে কেরামদের কাছে বিশেষ অনুরোধ, আপনারা কোনো ভাবেই এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন না। তারপরও যে সকল উলামায়ে কেরামগণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে অংশ গ্রহণ করছেন। কিংবা যে সকল উলামায়ে কেরামগণ আল্লাহদ্রোহী সেকুলার কোনো দল বা পার্টিকে ভোট দেওয়ার জন্যে মনস্থির করছেন। কিংবা তাদেরকে যে কোনো ভাবে সাহায্য সহযোগিতা বা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আপনাদের *কৃতকর্মের নিন্দা জানাচ্ছি। আপনাদেরকে তিরস্কার করছি। আপনাদেরকে ধিক্কার জানাচ্ছি। আপনারা তওবা করুন। খিলাফত প্রতিষ্ঠার নির্বেজাল প্রদ্ধতি জিহাদকে আঁকড়ে ধরুন। কুফুরের বাধ ভাঙ্গা এ প্লাবনে ভেসে যাওয়া হতে নিজে বাঁচুন! উম্মাহকে বাঁচান।
উল্লিখিত বিষয়বস্তুটাকে চলমান পৃথিবীর একটি বাস্তবতা হিসাবে আমরা গ্রহণ করতে পারি। যে বাস্তবার প্রভাব আমরা আজ আমাদের জীবনের প্রতিটি মোড়ে মোড়েই দেখতে পাচ্ছি। আমরা জানি, বাস্তবতা মানেই বিশেষ এক প্রকার প্রতিপাদ্য বা পাটভূমির নাম, যা কোনদিন কিছুতেই পরিবর্তন হয় না। আধাঁর রাত্রির ঝোছনা, নদীর কলতানের ন্যায় যা অবিরত বয়ে যায়। কালের প্রক্কালে অবান্তর বিষয়গুলো বাস্তবতার উপর চেপে বসলেও রাতের আকাশে মিটিমিটি তারকারাজির ন্যায় তা জ্বলতে থাকে। তবুও বাস্তবতার প্রভাব কবু আমাদের জীবন চরিত্র থেকে একমুহুর্তের জন্যেও বিলুপ্ত হয় না।
এপৃথিবীতে চলমান বিচরণক্ষণে আমাদের অনেক পরিচয় ও অভিসম্ভাষণ আমরা খুঁজে পেয়েছি। যেগুলোর মাধ্যমেই আজ আমরা একে অপরের সাথে পরিচিত। আমাদের অনেকই আজ শিক্ষিত। তাই শিক্ষার বিভিন্ন সেক্টর ও বিভাগের দিকে সম্মন্ধ করে আজ আমাদের ডাকা হয়। সেই শিক্ষা-সেক্টরের মধ্যে অনেক ভাগ-বিভাজনও রয়েছে। আমাদের শিক্ষাক্ষেত্র মৌলিখভাবে জাগতিক শিক্ষা ও পরজাগতিক শিক্ষা বলয়ে বিভক্ত। এখন যদি আমরা লক্ষ করি তাহলে দেখতে পাব, প্রতিটি শ্রেণীরই বিশেষ যোগ্যতা ও দায়-দায়িত্ব রয়েছে। একজন ডাক্তারের কাজ হলো রোগিকে সেবা দেওয়া। একজন ইন্জিনিয়ারের কাজ হলো রাস্তা-ঘাট, দালান-কোটা তৈরি করার প্লান করা। এগুলো সবই জাগতিক শিক্ষার উদাহরণ।
অপরাপর পরজাগতিক শিক্ষাকেত্রেও রয়েছে নানা রকম স্তর ও বিন্যাস। তাঁদের অনেকেই যেহেতু কোরআন নিয়ে গবেষণা করেন তাই আমরা তাঁদেরকে মুফাসসীর বলি। তাঁদের অনেকেই যেহেতু ফিকহ নিয়ে গবেষণা করেন তাই আমরা তাঁদের মুফতি বলি। আর যারা হাদিস নিয়ে গবেষণা করেন আমরা তাঁদেরকে মুহাদ্দিস বলে থাকি। আর উল্লিখিত সবকটি হলো আমাদের সামাজিক পরিভাষা। এককথায়, পরজাগতিক শিক্ষাকেত্রের যে বিন্যাস আমরা জেনেছি এগুলো হলো আমাদের সামাজিক পরিভাষাসমূহ। আল্লাহ তা’লার ভাষায় তারা হলেন ‘আলিম’ বা জ্ঞাণী। উল্লিখিত স্তর ও শ্রেণী বিন্যাসের প্রত্যেকটিই যেহেতু ধর্মীয় বিষয়াবলির সাথে সম্পৃক্ত তাই তাদের সকলকেই আমরা আলিম বলতে পারি। কিংবা তাদের সকলকেই আমাদের আলিম বলতে হয়। যেহেতু তাদের সকলেই দ্বীন-ধর্মীয় বিষয় নিয়েই গবেষণা করেন।
আর আলিমগণ হলেন ইসলামের বিশেষ একটি শ্রেণী। যারা কোরআনের ভাষায় পরহেজগার ও মুত্তাকি। যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উত্তরসূরী। দ্বীন ও ইসলামের কান্ডারী, রাহবার। যারা সকল মুসলমানদের অনুসরণ-অনুকরণ, ভালোবাসার পাত্র। যাদের দায়িত্ব মানবজাতিকে আল্লাহর বাণীসমূহ পড়ে পড়ে বুঝানো। আল্লাহর রাহে সকল মানবজাতিকে আহবান করা। সকল মানবজাতির সামনে আল্লাহর ইচ্ছা-অভিপায়ের কথা তুলে ধরা। একমাত্র আল্লাহর বিধানের ছাঁয়া তলেই জীবন ধারণের কথা সমগ্র মানবজাতির সামনে খুলে বলা। যাদের চেষ্টা-প্রচেষ্টার অন্যতম হলো, এপুরো পৃথিবীকে ইমানের আলোক রশ্মিতে আলোকিত করা। এপৃথিবীর প্রতিটি কাঁচা পাকা আবাস্তল থেকে কুফুরের অন্ধকার দূর করার সর্বাত্রক চেষ্টা অব্যহত রাখা। কুফুরের অন্ধকারে অতিষ্ট মানবজাতিকে টেনে হেঁচড়ে হলেও ইমানের আলোর দিকে নিয়ে আসা। জুলুমের জাতাকলে পিষ্ট মানবজাতির দূরবিষহ জীবনের হাল ধরা। আল্লাহ কর্তৃত মানবতাকে বসবাসের জন্যে দান করা এপৃথিবীতে প্রতিটি অনাত আশ্রয়হীন মানুষের বসবাসের নিশ্চয়তা বিধান করা। দুঃস্থ সম্ভলহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানো। অন্য বস্ত্র ভিটে মাটিহীন মানুষের জন্যে অন্য বস্ত্রের ব্যবস্থা করা।
আর এসব দায়িত্বের কোনোটিই কিন্তু উল্লিখি শ্রেণীসমূহের পক্ষ থেকে আলিম সমাজের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। বরং আল্লাহ তায়ালাই কোরআনুল কারীমের পাতা পাতায় আলিম সমাজের দায়িত্ব-কর্তব্যের বিষয়টি পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছেন। কোরআনের মর্ম বাণী বুঝতে সক্ষম আলিমদের কাছে এগুলো পরিস্কার বিষয়। আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারীমে নবী-রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য কী আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং নবী-রাসূলদের অবর্তমানে তাঁদের উত্তরসূরী উলামাদের কাজ কী হবে? তা এখানে পরিস্কার। কোরআনের ভাষায় মুসলিম জাতি যেহেতু সমগ্র মানবজাতির জন্যে কল্যাণকামী। সমগ্র মানবজাতির হিতাকাঙ্খী। সুতরাং এখানেও আলিমদের ভূমিকা, দায়-দায়িত্বের একাধিক দিক সুস্পষ্ট।
(তাই সম্মানিত মোল্লাজীদেরকে এবিষয়টি জানিযে দিব যে, হুজরাখানা আর তেহখানায় নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর দিন শেষ। এখন থেকে আপনাদের জন্যে উচিত আপনাদের উপর অর্পিত ঐশ্বরিক দায়-দায়িত্বটুক বুঝে নেওয়া। অন্যথায় কাল হাশরের দিন আপনার সকল মানবজাতির সামনে অপমানিত হবেন।)
এখন আমরা একটি বিষয় পরিস্কার বুঝে নিতে চেষ্টা করব। বিষয়টি হলো আল্লাহ তায়ালার “সুন্নাহ” এর বিভিন্ন সমীকরণ। আল্লাহ তা’লার “সুন্নাহ” এর বিভিন্ন স্তর। আমরা জানি মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। জাত-পাত নির্বিশেষে সকল সৃষ্টিজীবের মধ্যে তারাই শেষ্ঠ। মানুষ যে সকল সৃষ্টিজীবের মধ্যে শেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল কুরআনই আমাদের মাঝে তা ঘোষণা করেছে। পবিত্র কুরআনেই মানবজাতির শেষ্ঠত্ত্বের কারণসমূহ বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও সকল মানুষই কী পরকালে নাজাত লাভ করবে? মানবতার শেষ্ঠত্ব দেখিয়ে সব মানুষই কী দুনিয়াতে সমান তালে চলতে পারবে? পারবে না। কারণ আল্লাহ তা’লা পবিত্র কুরআনুল কারীমে মানুষ ছাড়া আরও যত সব সৃষ্টিজীব রয়েছে সেগুলোর উপর মানবজাতিকে শেষ্ঠত্ব প্রদাণ করে, তাদের পারস্পারিক শেষ্ঠত্ত্বের বিচারে খোদ মানবজাতির মধ্যে আবার ভাগ-বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। যে ভাগ ও বিভাজনের মাধ্যমে সম্মান-মর্যাদার অধিকারী শুধু মুমিনদেরকেই সাব্যস্ত করেছেন। তাছাড়া লাঞ্ছনা আর গঞ্জনার জোয়াল কাফিরদের কাঁধেই জুলিয়ে দিয়েছেন। টেক্স আর খাজনার বোঝা তাদের উপরই আরোপিত হয়েছে। যা তাদের কৃতকর্মেরই পুরুস্কার। খেলাফতকালে যে টেক্স আর খাজনার পরিমাণ ছিল মুসলমানদের খাজাঞ্জিখানার দুই তৃতীয়াংশ। এসব ইতিহাস কি মুছে ফেলা যাবে?
এখানে আমরা কী দেখতে পেলাম? শুধু মানুষত্ত্ব্যের পরিচয় লাভ করার কারণে জাত-পাত নির্বিশেষে সকল মানুষকেই আল্লাহ তায়ালা মানুষ ছাড়া আরো যত সব সৃষ্টিজীব রয়েছে তাদের উপর শেষ্ঠত্ব দিলেন। অতপর মানুষের পারস্পারিক শেষ্ঠত্বের বিচারে শুধু মুমিন আর মুসলামনদেরকেই শেষ্ঠত্ব আর সম্মানের অধিকারী করলেন। এটি হলো আল্লাহ তায়ালার “সুন্নাহ” এর বিভিন্ন সমীকরণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কোরআনে এমন দৃষ্টান্ত আরো অনেক রয়েছে।
আসমানী জীবন বিধান দিয়ে আল্লাহ তা’লা অগণিত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। নবী-রাসূলদের অবর্তমানে নবী-রাসূলদের আনিত দ্বীন ও শরীয়তের যথাযথ তদারকি করার জন্যে আল্লাহ তায়ালা তাঁদের অনুসারীদের মধ্য হতে বিশেষ একটি শ্রেণী তৈরি করেছেন। যারা যুগে যুগে বিভিন্ন নামে পরিচিত হলেও তাঁদের কাজ অভিন্ন ছিল। তাঁদের কাজ ছিলো নবী-রাসূলদের অবর্তমানে তাঁদের আনীত দ্বীন ও শরীয়তকে সার্বিকভাবে সংরক্ষণ করা। মানুষের মনগড়া ব্যাখা ও রদবদল হতে হেফাজত করা। মানুষের স্বাভাবিক ভাষা ও রুচিবোধর প্রতি লক্ষ করে হযরত মূসা আ: এর যুগে এ শ্রেণীটি মানুষের মাঝে ‘নাকিব’ নামে পরিচিত ছিলো। হযরত ইসা আ: এর যুগে তাঁদেরকে আহবার নামে ডাকা হত। আর আখিরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সা: এর উম্মতের মাঝে নবী-রাসূলদের উত্তরসূরী এ শ্রেণীকে আলিম বলা হয়।
আল্লাহর প্রেরীত প্রত্যেক নবী-রাসূল যেমন আল্লাহর কাছে সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। ঠিক তদ্রুপ নবী-রাসূলদের সুযোগ্য উত্তরসূরী আলিমগণও আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। হোক তাঁরা মূসা নবীর দ্বীন ও শরীয়তের আলিম ‘নাকিবগণ’ ইসা নবীর দ্বীন ও শরীয়তের আলিম ‘আহবারগণ’ কিংবা আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দ্বীন ও শরীয়তের উত্তরসূরী সুযোগ্য আলিমগণ। তাঁদের সকলের সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহর কাছে একই মাপকাঠির মাধ্যমে পরিমাপ যোগ্য। প্রত্যেক নবী-রাসূল এর উম্মতের মধ্যে তাঁদের এই সম্মানি পদবি শুধু তাদের দায়-দায়িত্ব আর কর্তব্যবোধের জন্যেই। তাঁদের উপর আল্লাহর পক্ষ হতে অর্পিত জিম্মাদারী আদায়ের নিমিত্তেই। কিন্তু, পার্থিব স্বার্থের পেছনে পড়ে যখনি তাঁরা আল্লাহর অর্পিত দায়-দায়িত্ব, আর কর্তব্যবোধের কথা ভুলে গিয়েছেন। আল্লাহর প্রদত্ত ‘নাকিব’ ‘আহবার’ ‘রুহবান’ ‘রাব্বানী’ প্রভৃতি পরিচয় পত্রসমূহ ছিড়ে ফেলেছেন। ইমান আর কুফুরের মাঝে অন্তরায় পর্দাকে ছিড়ে-ফেরে সমকালীন শক্তি, প্রতিষ্ঠীত সরকার ব্যবস্থা আর সামরিক প্রভুদের সাথে আতাত করতে শুরু করেছেন। প্রতিষ্ঠীত শক্তির অনুকুল্লতা অর্জনের লক্ষ্যে আল্লাহর বর্ণিত হালালকে হারাম আর হারামকে হালাল করেছেনে। তখনি আল্লাহ তা’লা সে সকল নাকিব, আহবার, রুহবান, আর রাব্বানীদের আসল হালত মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। তাঁদের স্বার্থান্বেষী মন-মানষিকতার দিক মানুষকে বলে দিয়েছেন। ওহী প্রেরণের মাধ্যমে তাঁদের কৃতকর্মের নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁদেরকে তিরস্কার করেছেন। তাঁদেরকে ধিক্কার জানিয়েছেন। পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাবান আল্লাহ তাঁদের ক্ষেত্রে বিদ্রুপের পথ বেঁচে নিয়েছেন। আগত উম্মার নিন্দা আর ধিক্কার জ্ঞাপনয়ার্থে এ সবকিছু মহাগ্রন্থ আল কোরআনে তুলে দিয়েছেন। যা কিয়ামত তক মানুষ পড়বে আর তাঁদেরকে ধিক্কার জানাবে।
আমাদের দেশে আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যা মূলত কুফুরের জাকজমক আর আড়ম্ভড়তার এক দৃশ্য। গনতন্ত্র নামক বেশশা ব্যবস্থার এক ভরা যৌবন। শ্রাবণ-বর্ষায় প্লাবিত কুফুর আর নিফাকের থইথই ভরা জোয়ার। যে নির্বাচন কুফুর ও কুফুরি মতবাদের প্রতি লালন করা প্রেম-প্রীতি আর ভালোবাসার বহির প্রকাশের এক অশুভ কাল। সুতরাং মুহাম্মাদে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মার প্রতিটি নওযোয়ান ভাইদের প্রতি এক উদাত্ত আহবান, কোনো ভাবেই আপনারা এই কুফুরি সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নিবেন না। বরং নিজ নিরাপত্তার দিক মাথায় রেখে এ নির্বাচনকে বানচাল করার সবকিছু করবেন। আর উলামায়ে কেরামদের কাছে বিশেষ অনুরোধ, আপনারা কোনো ভাবেই এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন না। তারপরও যে সকল উলামায়ে কেরামগণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে অংশ গ্রহণ করছেন। কিংবা যে সকল উলামায়ে কেরামগণ আল্লাহদ্রোহী সেকুলার কোনো দল বা পার্টিকে ভোট দেওয়ার জন্যে মনস্থির করছেন। কিংবা তাদেরকে যে কোনো ভাবে সাহায্য সহযোগিতা বা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আপনাদের *কৃতকর্মের নিন্দা জানাচ্ছি। আপনাদেরকে তিরস্কার করছি। আপনাদেরকে ধিক্কার জানাচ্ছি। আপনারা তওবা করুন। খিলাফত প্রতিষ্ঠার নির্বেজাল প্রদ্ধতি জিহাদকে আঁকড়ে ধরুন। কুফুরের বাধ ভাঙ্গা এ প্লাবনে ভেসে যাওয়া হতে নিজে বাঁচুন! উম্মাহকে বাঁচান।
Comment