সেদিন বন্ধুরা একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে তবে মুত্তাকীগণ ছাড়া। (যোখরূফ: ৬৭)
হে আমার হৃদয়ের বন্ধু! কেমন আছ তুমি? ভালোই তো যাচ্ছে তোমার দিনকাল? হয়তো অনেক সুখেই তুমি দিন কাটাচ্ছ, তাই না? তোমার সুখ আরো দীর্ঘ হোক! তোমার জন্য বয়ে আনুক আরো বেশি অনাবিল সুখ-সমৃদ্ধি, এ কামনাই করি। আর আমার বিষয়টি কিন্তু একটু হলেও মাঝে মধ্যে মাথায় নিও! আমি কিন্তু ভালো নই। বেশি ভালো নই। উষ্ঠাগত প্রাণ নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি। কারণ দুঃখ-কষ্ট সর্বদায় আমার প্রতি হাতছানি দিয়েই রাখে। যদ্দরুণ কখনও সেই কাঙ্খিত সুখ আমি পাইনি। অতীত? আরে তা তো ছিল আমার দুখেরই একটি স্বর্গরাজ্য। যাক ভবিষ্যৎ নিয়েও এখন আমি বেশি চিন্তিত নই। কারণ আমার আগের হাল যেমন ছিল ভবিষ্যৎ হয়তো তেমনি হবে। আমাকে নিয়ে বিধাতার খেলা হয়তো এমনটিই। তাই, আমি এখন হারদম তাঁর ফায়সালার উপর একদম সন্তষ্ট।
হে আমার হৃদয়ের বন্ধু! তুমি আমার কারণে কষ্ট অনুভব করবে না। আমি তোমাকে যা বলেছি তা একান্ত তোমাকেই আমার বলার বিষয়। বল আমি তোমাকে ছাড়া ওসব আর কাকেই বা বলব? হে প্রিয় বন্ধ আমার! তুমি হয়তো শুনে খুশি হবে, আমি এখন আর দুখি মানুষ বলে রইনি। কারণ দুঃখ কষ্ট এখন আর আমাকে পিষতে পারে না। আমাকে ভারাক্রান্ত করতে পারে না। জানো কেন দুঃখ কষ্ট আমাকে এখন পেরেশান করতে পারে না?
শোনো, হৃদয়ের কান দিয়ে শোনো! জানো? এখন আমি সবধরণের দুঃখ যাতনাই ষয়ে নিতে পারি। যা শুরুতে আমি পারতাম না। দুঃখকেই সুখ বলে বরণ করে নিতে পারি। শুরুতে যা আমি পারতাম না। জানো, তখন সামান্য কষ্ট আমার কাছে বিরাট কষ্ট বলে অনুভব হত। আর জীবনটাও তখন খুব বেশি সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি লালায়িত ছিল। কেমন যেন আমার জীবন সুখ-সমৃদ্ধিকেই নিজ জীবনের সফরসঙ্গী মনে করত। কিন্তু বহুদিন পরে হলেও আমার হৃদয় এখন বুঝতে পেরেছে, ‘এ ধরণীর সুখের হাওয়ার বিন্দু মাত্রও তার জন্য বয়নি’। ‘শান্তির সুশীতল ছাঁয়ার সামান্যও তার ভাগ্যে আর রয়নি’। সুতরাং আমার জন্য তুমি কোনো কষ্ট পেও না। কারণ আমি এখন নিজেকে সার্বিকভাবে বুঝাতে পেরেছি।
হে প্রিয় বন্ধু আমার! শোনো, আমি এখন আর কোনো কিছুরই প্রয়োজন অনুভব করি না। কারণ কোনো কিছু পাওয়া আর না পাওয়া উভয়টি এখন আমার কাছে বরাবর। কিছু পেলেও আমার কিছু আসে যায় না। কিছু না পেলেও এখন আমার কিছু রয়ে যায় না। কিন্তু তারপরও এখন আমি শুধু একটি জিনিষের প্রয়োজন অনুভব করি। অতীভ প্রয়োজন অনুভব করি। সেটির শূন্যতাই এখন আমায় প্রতিমূহুর্তে ভাবিয়ে তুলে। দিবানিশি অশ্রু ঝড়াতে বাধ্য করে। যেটির শূন্যতাই এখন আমার দুঃখ। তুমি জানো এখন আমি কোন জিনিষের প্রয়োজন অনুভব করি? শোনো! এখন আমি তোমার সেই সত্যিকার বন্ধত্বেরই প্রয়োজন অনুভব করি। কারণ আমি জানি তোমার বন্ধুত্বই আমার অতীতের সব কিছুকে লাগব করবে। আমার ভবিষ্যৎ জীবনের পতিত বাগডোর আমার হাতে তুলে দিবে। এটি তুমিই পারবে। কারণ আমি জানি তোমার ভালোবাসা-বন্ধুত্ব সত্যই স্বচ্ছ। যাতে কৃত্রিমতার কিছুই নেই এবং যার পুরোটাই আন্তরিকতায় পূর্ণ। এমন বন্ধুত্বই এখন আমার জীবনের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন। কারণ তুমি জানো ‘না’ ‘আমার জীবনের চালিকাশক্তি এখন একদম নিভে গেছে। এর প্রতিটি চাকাই এখন অচল হয়ে গেছে। আমার জীবনডিঙ্গীর পাল এখন একেবারেই ছিঁড়ে গেছে। এর প্রতিটি জোড়াতালিই এখন লক্কর-জক্করে পরিণত হয়েছে। এর একটি টুকরো কাঠও উইপোকা থেকে রক্ষা পাইনি। তাই আমার জীবন এখন অথই দরিয়াই ভাসমান, যা এখন প্রতিমূহুর্ত তোমার বন্ধুত্বকেই হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সত্যসংগ্রাম জিহাদের পথে তোমার আসার প্রতিটি প্রহর অকপটে গুনছে। আসবে? এসো! আর কালক্ষেপন করো না।
Comment