বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
সূরাহ আলে ‘ইমরানের ১০৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ
“এবং তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো, এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর বিভক্ত হয়ে যেও না…”
একতাবদ্ধ থাকা এবং এর গুরুত্ব নিয়ে কিছু নিজস্ব চিন্তাঃ একবার কয়েকজন ভাই মিলে এক বিশাল লেকে বেড়াতে গেছি, উদ্দেশ্য ভেলায় চড়ব (rafting)। সব মিলিয়ে মোট চারটি ভেলা, দুইজনের জন্য একটি করে। সকলের গন্তব্য এক, লেকের শেষ পাড়ে পৌঁছানো, তবে যাত্রাপথ হবে ভিন্ন। আমাদের কিছু ভাই ব্যাপারটিকে হেলাফেলা করল, দেখা গেলো তাদের কিছু বৈঠা মাঝপথেই পানিতে পড়ে গেছে। শেষমেষ অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে, কয়েকটি ভেলা কেবল একটি বৈঠার উপর ভরসা করে ভেসে চলেছে।
কিন্তু হঠাৎ আবহাওয়া একেবারে বদলে গেলো। ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করল, চারপাশ হিমশীতল হয়ে গেল। এরই মাঝে আবার একটি ভেলায় ফুটো হয়ে গেছে, বরফের চেয়েও ঠাণ্ডা পানি গলগল করে ভেতরে ঢুকে পড়তে শুরু করল। সবার টালমাটাল অবস্থা! প্রতিটি ভেলা যে-যার-মতো করে তীরের একটি বিশেষ অংশে ফিরে যাবার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত, সেখান থেকে মূল বেইসে অর্থাৎ যাত্রাস্থলে হেঁটে ফিরে যাবার একটি ফাঁকা পথ আছে। কিন্তু বাতাসের প্রচণ্ড ঝাঁপটায় কোনভাবেই সেখানে পৌঁছতে পারছি না, একবার এদিকে ঠেলে নিচ্ছে তো আরেকবার ওদিকে। আর একটামাত্র বৈঠার শক্তি দিয়ে এই বাতাসের সাথে পেরে ওঠা অসম্ভব ব্যাপার!
প্রায় তিন ঘণ্টা এভাবেই কেটে গেল। সবাই লেকের ভিন্ন ভিন্ন কিনারায় বাজেভাবে আটকা পড়েছি। তীরের এক এক কোণা থেকে ডাক ছেড়ে একে অপরের উদ্দেশ্যে চিৎকার করতে লাগলাম। আমাদের মাঝের এক বুদ্ধিদীপ্ত ভাই বলে উঠলোঃ “যদি আমরা একা একা তীরে পৌঁছতে না পারি, তাহলে আসো সবাই মিলে একসাথে চেষ্টা করি!” যেই বলা সেই কাজ! আমরা সবাই তার প্ল্যানমাফিক লেকের মাঝামাঝি একটা স্থানে ভেলাগুলোকে নিয়ে আসলাম, একটির সাথে আরেকটি লাগিয়ে একটি ছোট্ট কাফেলার মতো তৈরি করলাম, আর তারপর যাদের কাছে বৈঠা ছিল তারা সবাই ঐকতানে বৈঠা বাইতে শুরু করলো। পনেরো মিনিটের মাথায় আমাদের সেই চার-ভেলার কাফেলা একটি একক ভেলা হিসেবে তীরে যেয়ে ঠেকলো। আলহামদুলিল্লাহ! আমরা সবাই এই শিক্ষাগ্রহণ করলামঃ
আমরা যখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলাম, তখন বাতাসের প্রবল বেগ সহজেই আমাদেরকে কাবু করে রেখেছে, তীরে পৌঁছানোর জন্য নিদেনপক্ষে যে শক্তিটুকু দরকার তাও আমাদের মধ্যে অবশিষ্ট রাখে নি। কিন্তু যেই না আমরা পরস্পর সংযুক্ত হলাম, আমাদের প্রত্যেকের সম্মিলিত শক্তি কে দমকা হাওয়া ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। যখন ভেলাগুলো পরস্পর আলাদা ছিল, তখন সেগুলোর সাথে ছিল একটি বৈঠা, এক কথায় সেগুলো কোন কাজেই আসে নি। কিন্তু আমরা একসাথে জড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি বৈঠা একটি বড় কাফেলার একটি অংশে পরিণত হলো, আর সেগুলো একতালে চালনার মাধ্যমে আমরা গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম, যা একা একা একটি ভেলা দিয়ে করা সম্ভব হয় নি।
যদি আমরা একসাথে মিলিত না হতাম, তাহলে জনমানবহীন সেই বিশাল লেকে বাতাসের তোড়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে কে কোথায় পড়ে থাকতাম! তীরে ভিড়তে পারতাম না। সত্যের উপর ঐক্যবদ্ধ না থাকলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোটা এমনই দুঃসাধ্য। তাই দ্বীনের জন্য থাকা চাই ঐক্য।
طارق مهنا
তারিক মেহান্না
প্লাইমাউথ কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি
আইসোলেশন ইউনিট #১০৮
সূরাহ আলে ‘ইমরানের ১০৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ
“এবং তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো, এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর বিভক্ত হয়ে যেও না…”
একতাবদ্ধ থাকা এবং এর গুরুত্ব নিয়ে কিছু নিজস্ব চিন্তাঃ একবার কয়েকজন ভাই মিলে এক বিশাল লেকে বেড়াতে গেছি, উদ্দেশ্য ভেলায় চড়ব (rafting)। সব মিলিয়ে মোট চারটি ভেলা, দুইজনের জন্য একটি করে। সকলের গন্তব্য এক, লেকের শেষ পাড়ে পৌঁছানো, তবে যাত্রাপথ হবে ভিন্ন। আমাদের কিছু ভাই ব্যাপারটিকে হেলাফেলা করল, দেখা গেলো তাদের কিছু বৈঠা মাঝপথেই পানিতে পড়ে গেছে। শেষমেষ অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে, কয়েকটি ভেলা কেবল একটি বৈঠার উপর ভরসা করে ভেসে চলেছে।
কিন্তু হঠাৎ আবহাওয়া একেবারে বদলে গেলো। ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করল, চারপাশ হিমশীতল হয়ে গেল। এরই মাঝে আবার একটি ভেলায় ফুটো হয়ে গেছে, বরফের চেয়েও ঠাণ্ডা পানি গলগল করে ভেতরে ঢুকে পড়তে শুরু করল। সবার টালমাটাল অবস্থা! প্রতিটি ভেলা যে-যার-মতো করে তীরের একটি বিশেষ অংশে ফিরে যাবার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত, সেখান থেকে মূল বেইসে অর্থাৎ যাত্রাস্থলে হেঁটে ফিরে যাবার একটি ফাঁকা পথ আছে। কিন্তু বাতাসের প্রচণ্ড ঝাঁপটায় কোনভাবেই সেখানে পৌঁছতে পারছি না, একবার এদিকে ঠেলে নিচ্ছে তো আরেকবার ওদিকে। আর একটামাত্র বৈঠার শক্তি দিয়ে এই বাতাসের সাথে পেরে ওঠা অসম্ভব ব্যাপার!
প্রায় তিন ঘণ্টা এভাবেই কেটে গেল। সবাই লেকের ভিন্ন ভিন্ন কিনারায় বাজেভাবে আটকা পড়েছি। তীরের এক এক কোণা থেকে ডাক ছেড়ে একে অপরের উদ্দেশ্যে চিৎকার করতে লাগলাম। আমাদের মাঝের এক বুদ্ধিদীপ্ত ভাই বলে উঠলোঃ “যদি আমরা একা একা তীরে পৌঁছতে না পারি, তাহলে আসো সবাই মিলে একসাথে চেষ্টা করি!” যেই বলা সেই কাজ! আমরা সবাই তার প্ল্যানমাফিক লেকের মাঝামাঝি একটা স্থানে ভেলাগুলোকে নিয়ে আসলাম, একটির সাথে আরেকটি লাগিয়ে একটি ছোট্ট কাফেলার মতো তৈরি করলাম, আর তারপর যাদের কাছে বৈঠা ছিল তারা সবাই ঐকতানে বৈঠা বাইতে শুরু করলো। পনেরো মিনিটের মাথায় আমাদের সেই চার-ভেলার কাফেলা একটি একক ভেলা হিসেবে তীরে যেয়ে ঠেকলো। আলহামদুলিল্লাহ! আমরা সবাই এই শিক্ষাগ্রহণ করলামঃ
আমরা যখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলাম, তখন বাতাসের প্রবল বেগ সহজেই আমাদেরকে কাবু করে রেখেছে, তীরে পৌঁছানোর জন্য নিদেনপক্ষে যে শক্তিটুকু দরকার তাও আমাদের মধ্যে অবশিষ্ট রাখে নি। কিন্তু যেই না আমরা পরস্পর সংযুক্ত হলাম, আমাদের প্রত্যেকের সম্মিলিত শক্তি কে দমকা হাওয়া ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। যখন ভেলাগুলো পরস্পর আলাদা ছিল, তখন সেগুলোর সাথে ছিল একটি বৈঠা, এক কথায় সেগুলো কোন কাজেই আসে নি। কিন্তু আমরা একসাথে জড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি বৈঠা একটি বড় কাফেলার একটি অংশে পরিণত হলো, আর সেগুলো একতালে চালনার মাধ্যমে আমরা গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম, যা একা একা একটি ভেলা দিয়ে করা সম্ভব হয় নি।
যদি আমরা একসাথে মিলিত না হতাম, তাহলে জনমানবহীন সেই বিশাল লেকে বাতাসের তোড়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে কে কোথায় পড়ে থাকতাম! তীরে ভিড়তে পারতাম না। সত্যের উপর ঐক্যবদ্ধ না থাকলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোটা এমনই দুঃসাধ্য। তাই দ্বীনের জন্য থাকা চাই ঐক্য।
طارق مهنا
তারিক মেহান্না
প্লাইমাউথ কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি
আইসোলেশন ইউনিট #১০৮
Comment