একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলের চূড়ান্ত প্রার্থীদের চিঠি দিয়েছে বিএনপি। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মুফতি মুনির হোসেন (খেলাফত মজলিস), যশোর-৫ আসনে মুফতি ওয়াক্কাস, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, হবিগঞ্জ-২ আসনে মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ ও সিলেট-৫ আসনে মাওলানা উবাইদুল্লাহ ফারুক (জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম) কে চূড়ান্ত চিঠি দেয়া হয়।(ইনকিলাব)
একজন হাক্কানী আলমে তাওহীদ গ্রহণ করার এবং তাগুত বা মিথ্যা ইলাহসমূহ পরিত্যাগ করার দাওয়াত দিবেন
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
সকল নবী রাসুলদের প্রধান দায়িত্ব ছিল মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহবান জানানো এবং সকল মিথ্যা ইলাহকে (তাগুত) বর্জন করার ঘোষণা দেওয়া। এখন কোন আলেম যদি তাওহীদের বিস্তারিত আলোচনা না করেন এবং মিথ্যা ইলাহ (তাগুত) সম্পর্কে সকলকে সচেতন না করেন, তবে পরিস্কার বিষয় যে, তিনি নবী রাসুলগণকে সঠিকভাবে অনুসরণ করেননি। তাহলে তিনি কিভাবে নবী রাসুলগণের উত্তরাধিকারী হবেন? তাছাড়া তার নিজেরই যদি তাওহীদ ও তাগুত সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকে, তবে তিনি কিভাবে আলেম হবেন? যদি আলেম নামধারী কেউ নিজেই শিরক্-কুফর এর রক্ষক হয় তখন তার অবস্থাটা কি হবে? যদি কেউ কোন মাজারে সেজদা দেয়ার অনুমতি দেয় কিংবা কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী মানবরচিত বিধানের পক্ষে কথা বলে, তাহলে তো তিনি মুসলমানই থাকতে পারবেন না। আলেম হওয়া তো অনেক দূরের কথা। কিংবা একজন আলিম যদি কোনো কুফুরি কর্ম বা প্রদ্ধতি থেকে সর্ব প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করা ব্যতীত উল্টো সেই কুফুরি কর্ম বা প্রদ্ধতির পক্ষপাতি হয় তাহলে তারা কিভাবে আলিম হওয়ার দাবী করবেন? কিংবা কোনো আলিম যদি কুফুরালয়ে (সংসদ) গিয়ে কাফের মুরতাদদের সাথে আড়াআড়ি করে বসার জন্যে চেষ্টা তদবির চালায়, তো কুরআনের ভাষায় তার উক্ত কাজটি কেমন হবে?
একজন আলেমের সাথে বাতিল ইলাহদের (তাগুতদের) ও তাদের সমর্থকদের শত্রতা থাকবে:
প্রত্যেক নবীর বিরুদ্ধেই সমকালীন তাগুতরা এবং তাগুতের অনুসারী, সমর্থকরা শত্রুতা করেছে। কোন নবী আল্লাহর এই সুন্নাহর বাইরে ছিলেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
হজরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম যখন তার জাতির তাগুতদের সাথে প্রকাশ্যে শত্রুতা ও ঘৃণার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই কথার মধ্যে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে বলে আহকামুল হাকিমীন আল্লাহ উল্লেখ্য করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
শেষ *পর্যন্ত আমাদের জাতির পিতা হজরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের সাথে তাগুতের ইবাদতকারী ও রক্ষাকারীদের শত্রুতা এই পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে, তারা উনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
একই শত্রুতার কারণে নূহ আলাইহিস সালামের মতো ধৈর্য্যশীল নবীও ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিলেন :
তাদেরকে শুনিয়ে দাও নূহের অবস্থা যখন সে স্বীয় সম্প্রাদয়কে বলল, হে আমার সম্প্রাদয়, যদি তোমাদের মাঝে আমার অবস্থান করা এবং আল্লাহর আয়াতসমূহের মাধ্যমে নসীহত করা কষ্টকর বলে মনে হয়ে থাকে, তবে আমি আল্লাহর উপর ভরসা করছি। অতএব তোমরা সবাই মিলে নিজেরদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর এবং এতে তোমাদের শরীকদেরকে সমবেত করে নাও, যাতে তোমাদের মাঝে নিজেদের কাজের ব্যাপারে কোন সন্দেহ-সংশয় না থাকে। অতঃপর আমার সম্পর্কে যা কিছু করার করে ফেল এবং আমাকে অব্যাহতি দিও না। (সূরা ইউনূস ১০: ৭১)
একই কারণে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাহমাতুলি¬ল আলামীন হবার পরও উনার সাথে তৎকালীন তাগুতের উপাসকদের শত্রুতা এই পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজে বলেছেন:
আমাদের জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম, আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং অন্যান্য সকল নবী রাসুলদের মতোই তাঁদের উত্তরাধিকারী হিসেবে একজন আলেমের সাথে বর্তমান যুগের তাগুতগোষ্টী, ফেরাউন নমরুদের উত্তরসূরী ও তাদের সাথী সমর্থকদের সাথে আল্লাহর দ্বীনের কারণেই শত্রুতা থাকবে। যতক্ষণ না তারা কাফির ও মুশরিকদের অনৈসলামিক কর্মকান্ড জীবনযাত্রা ও মতাদর্শকে পরিত্যাগ করে। যারা মিথ্যা ইলাহদের ইবাদত করে তিনি তাদের সাথে শত্রুতা করবেন।
আমাদের যুগের কোন আলেমই নিজেকে নূহ আলাইহিস সালাম থেকে অধিক ধৈর্য্যশীল দাবী করতে পারবেন না। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম থেকে নিজেকে বেশী বুদ্ধিমান ও হিকমাতের অধিকারী দাবী করতে পারবেন না। অথবা নিজেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও বেশী রহমতের অধিকারী দাবী করতে পারবেন না।
উপরুক্ত আম্বিয়াদের দাওয়াতী জীবন ও ইসলামের খেদমত যদি তাগুতগোষ্টী ও তাদের সাথী-সমর্থকদের সাথে শত্রুতা ব্যতীত সম্ভব না হয়ে থাকে, তাহলে তাঁদের যোগ্য অনুসারীদের দাওয়াতী জীবন ও ইসলামের খেদমত কিভাবে এই শত্রুতা ছাড়া সম্ভব হতে পারে?
যে আলেমের এই বৈশিষ্ট্যটি নেই, তিনি নবী রাসুলদের যথাযথ উত্তরাধিকারী নন। তার থেকে দ্বীন শিক্ষা করা বিপদজনক হতে পারে।
একজন আলেম নিজের ও নিজের অনুসারীদের অজ্ঞাতসারে শিরকের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
স্মরণ কর, ইব্রাহীম যখন বলেছিল, “হে আমার রব! তুমি এ নগরীকে নিরাপদ কর আর আমাকে আর আমার সন্তানদেরকে প্রতিমা পূজা থেকে রক্ষা কর।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৫)
আল্লাহ আরো বলেন :
“হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে রাজত্ব দান করেছ, আর আমাকে বিভিন্ন কথার ব্যাখ্যা শিখিয়েছ। আসমান যমীনের সৃষ্টিকর্তা! তুমিই দুনিয়ায় আর আখিরাতে আমার অভিভাবক, তুমি মুসলমান অবস্থায় আমার মৃত্যু দান করো এবং সৎকর্মশীলদের মধ্যে আমাকে অন্তর্ভুক্ত করো।” (সূরা ইউসুফ ১২:১০১)
হাদিসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ বলেছেন :
“হে আদম সন্তান, যদি তোমরা আমার সাথে শিরক না করে পৃথিবী সমপরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার সাথে সাক্ষাত করো, আমি এর সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সাথে সাক্ষাত করবো।” (সুনান তিরমিযী-৩৫৪০)
একজন আলেম সর্বদা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর মতো নিজেকে শিরকে পতিত হওয়া থেকে সতর্ক থাকবেন এবং সর্বদা আল্লাহর সাহায্য কামনা করবেন। তিনি যেন একজন মুসলমান হিসেবে মৃত্যুবরণ করতে পারেন সেজন্য চেষ্টারত থাকবেন, যেমনটা দোয়া করেছিলেন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম। তিনি কখনোই নিজের ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন না, নিরাপদবোধ করবেন না, অন্যদের জান্নাতে যাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া তো অনেক দূরের কথা। অথচ কত আফসোস ও আক্ষেপের বিষয় এই যে, আজ পীর নামধারী একশ্রেণীর লোক এমন আচরণ করছে যে, তারা নিজেরা তো জান্নাতের সার্টিফিকেট পেয়েই গেছে, এখন যে মুরীদ তাকে যত বেশী টাকা দিবে তাকে জান্নাতের তত উপরের টিকেট দিয়ে দিবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী (রাঃ) কে নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেছিলেনঃ
“কোন ছবি প্রতিকৃতিকে নিশ্চিহ্ন না করে এবং উঁচু কবরকে সমান না করে ছাড়বে না।” (সহীহ মুসলিম ৯৬৯, সুনান নাসায়ী ২০৩১, মুসনাদে আহমাদ ৭৪১, সুনান তিরমিযী ১০৪৯, সুনান আবু দাউদ৩২১৮, মুসতাদরাক হাকিম ১৩৬৬)
এখন কেউ যদি নিজেই কোন মাজার কিংবা পাকা কবরের রক্ষক হয়, কিংবা মাজার-কবর কেন্দ্রিক কোন উরস কিংবা টিভি অনুষ্ঠানের আয়োজক হয় সে কি আলেম হতে পারে? অন্য আরেক দল আলেম আছেন, যারা মনে করেন শিরক শুধু হিন্দুদের মূর্তিপূজা কিংবা খ্রীষ্টানদের ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর সমকক্ষ করে নেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তারা মুসলিম সমাজে প্রচলিত কোন শিরকের ব্যাপারে মুখ খুলতে চান না। অথচ হাদিস অনুযায়ী এই উম্মত ইহুদী-খ্রীষ্টানদেরকে পদে পদে অনুসরণ করবে, তাই এই উম্মতের এক দল লোকও শিরক করবে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের মতোই। তাহলে সেই শিরকগুলো কি যা অনেক মুসলমানও করে বেড়াবে? সেগুলো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা জররী।
একজন আলেম আল্লাহর শত্রুদেরকে ভয় করবেন না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
যদি আল্লাহর ঘর কাবার রক্ষণাবেক্ষণ এবং হেফাজতের জন্য এমন লোকের প্রয়োজন হয়, যারা আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না, তবে আল্লাহর পুরো দ্বীনের হেফাজতের দায়িত্বে নিয়োজিত আলেমরা যদি এলাকার মানুষের ভয়, সামাজিক-রাজনৈতিক নেতার ভয়, পেছনে ‘লোকে কিছু বলে কি না’ এর ভয়, চাকুরী হারানো কিংবা সামাজিক প্রতিপত্তি হারানোর ভয় ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকারের ভয়ে জর্জরিত থাকেন, তবে কি আল্লাহর দ্বীনের হেফাজত এবং সেটাকে বিজয়ী করার কাজে নেতৃত্ব দিতে তারা সক্ষম হবেন?
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
একমাত্র শয়তানই; তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়, তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও। (সূরা আলে-ইমরান ৩:১৭৫)
আল্লাহ আরো বলেন:
একজন আলেম যদি আল্লাহর শত্রুদের ভয়ে ভীত থাকেন, তাহলে তিনি কোন না কোনভাবে আল্লাহর দ্বীনের সাথে আপোষ করবেন। কিন্তু একজন ভালো আলেম চরম অত্যাচার ও নির্যাতনের মুখোমুখি হলেও কখনোও ইসলামের কোন বিধানের সাথে আপোষ করবেন না। পক্ষান্তরে তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইসলামকে বিকৃত করার পরিবর্তে সকল অত্যাচার-যুলুমকে হাসিমুখে গ্রহণ করে নিবেন। ঠিক যেভাবে, মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ের যাদুকরগণ পরবর্তীতে ঈমান আনার পর ফিরাউনের বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে, শুলে চড়ানোর শাস্তিকেও ভয় পাননি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
তারা বলল, “আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তার উপর আমরা তোমাকে কক্ষনো প্রাধান্য দেব না। কাজেই তুমি যা করতে চাও তাই কর। কেননা তুমি কেবল এ পার্থিব জীবনেই কর্তৃত্ব খাটাতে পার। আমরা আমাদের প্রতিপালকের উপর ঈমান এনেছি যাতে তিনি আমাদের অপরাধ ক্ষমা করেন আর যে যাদু করতে তুমি আমাদেরকে বাধ্য করেছ তাও (ক্ষমা করেন), আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী।”(সূরা ত্বহা ২০:৭২-৭৩)
মানুষকে ভয় পেয়ে আল্লাহর হুকুম পালন হতে বিরত থাকা কিংবা কোন হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া হচ্ছে দূষনীয়। সুতরাং একজন আলেম মানুষের ভয়ে কোন হারাম, বিদয়াত ইত্যাদিতে জড়িয়ে যাবেন না। এলাকার লোকজন মন খারাপ করবে, মসজিদ কমিটির লোকজন রাগ করবে, পরবর্তী টিভি অনুষ্ঠানে আর ডাকবে না এসব চিন্তা কখনো শিরকের বিরোধিতা, কুফরীর প্রকাশ্য সমালোচনা, বিদয়াতের বিরোধিতা, সমাজের অন্যান্য হারাম কাজের বিরোধিতা বন্ধ করবেন না। কারণ এগুলির বিরোধিতা করা তার উপর ফরজ। এই দ্বীনের হেফাজত করা তার উপর ফরজ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
আমি তওরাত অবর্তীর্ন করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে ফয়সালা দিতেন। কেননা, তাদেরকে এ খোদায়ী গ্রন্থের দেখাশোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তাঁরা এর রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াত সমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্যে গ্রহণ করো না, যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের। (সূরা মায়েদা ৫ : ৪৪)
এই আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আলেমদেরকে বিশেষভাবে বলছেন, 'তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াত সমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্যে গ্রহণ কর না'।
ঠিক যেভাবে, মূসা আলাইহিস সালাম অত্যাচারী ফেরাউনের সামনে সুস্পষ্টভাবে হক্বের দাওয়াত দিতে ভয় পাননি, ঠিক যেভাবে ইব্রাহীম আলাহিস সালাম তৎকালীন তাগুত নমরুদ ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাই অবস্থান নিতে ভয় পাননি, ঠিক যেভাবে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার শাসকগোষ্টীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে এবং তৎকালীন দুই পরাশক্তি পারস্য ও রুমের শাসকদেরকে সুস্পষ্টভাবে ইসলামে দাখিল হবার দাওয়াত দিতে ভয় পাননি, নবীগণের যথাযথ ওয়ারিস আলেমগণও একইভাবে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করবেন না। ভীতু ও কাপুরূষরা কখনো আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামদের উত্তারাধিকারী হতে পারে না।
একজন আলেম উপদেশ দেয়া বা সতর্ক করা ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে শাসকদের কাছে যাবেন না।
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“শাসকদের দরজার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। যেই শাসকদের নিকট গমন করে, সেই পরীক্ষার মধ্যে পতিত হয়।” (আবু দাউদ, নং-২৮৫৯, সুনান তিরমিযী নং-২২৫৬)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন: “একজন ব্যক্তি যে তার দ্বীনকে সাথে নিয়ে কোন শাসকের নিকট যায়, সে (শাসকের কাছ থেকে) বের হয়ে আসে তার সাথে কোন কিছু না নিয়েই।” (অর্থাৎ দ্বীন রেখে আসে) (ইমাম বুখারী (রা.) কর্তৃক সংগৃহীত ‘তারিখ’ গ্রন্থে হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) বলেন:
“তোমরা ফিতনার বিষয়গুলো থেকে সতর্ক থাকো।” বলা হলোঃ “সেটা কি?” তিনি বললেনঃ “শাসকদের দরজা। তোমাদের কেউ শাসকদের কাছে যাবে, তার মিথ্যা কথাকে সত্যায়ন করবে, তারপর বলবে, এটাতে কোন সমস্যা নেই।”
তিনি আরো বলেন: “অবশ্যই তোমরা কখনোও শাসকদের দিকে এক বিঘত পরিমাণও অগ্রসর হয়ো না।” (ইবনে আবী শাইবাহ কর্তৃক সংগৃহীত)ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রঃ) বলেন,
“যখনই তুমি কোন আলেমকে দেখবে শাসকদের কাছে গমন করতে, জেনে রাখো, সে হচ্ছে একজন চোর। আর যদি তাকে ধনী লোকদের কাছে আনাগোনা করতে দেখো, তাহলে জেনে রেখো, যে মানুষকে দেখানোর জন্য কাজ করে।” (শুয়াবুল ঈমান: ৪৯৭২, জামি লি আখলাকির রাওয়ী ওয়া আদাবীস সামী, পৃ. ১৪।
ইমাম যাহাবী (র.) এর সনদকে সহীহ বলেছেন। দেখুন সিয়ারাল আলামুন নুবালা ১৩/৫৮৬। এছাড়াও সালিম হিলালী সহীহ বলেছেন। একই রকম কথা আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত একটি মারফু হাদিসে রয়েছে)
ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেছেন: “যদি কোন আলেমকে নিয়মিত খলিফার দরবারে যেতে দেখো, তবে তার দ্বীন নিয়ে সন্দেহ করো।”
ইমাম সূফীয়ান সাওরী (র.) বলেন :
একজন আলেম শাসকদের দরজায় প্রবেশ করবেন না। এটা তাঁদের জন্য ফিতনাহ (পরিক্ষা) স্বরূপ। এটা সাহাবীদের এবং সালাফে সালেহীনদের উপদেশ। শুধুমাত্র উপদেশ দেওয়ার বা সতর্ক করার উদ্দেশ্যে কেউ শাসকদের নিকট যেতে পারে, তবে তাঁকে তখন অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করার জন্য মানসিকভাবে তৈরি থাকতে হবে।আমরা কি সেসব আলেমদের নিকট দ্বীন শিক্ষা করতে যাবো যারা শাসকদের দরজায় আনন্দচিত্তে যায় আর আনন্দচিত্তে বের হয়ে আসে? অথবা শাসকদের প্রদত্ত বেতনের উপর বেঁচে থাকে এবং দ্বীনের বিভিন্ন বিধান পরিবর্তন করে?
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, আমরা ইসলাম নামক একটি ধর্মের অনুসারী। যে ধর্মের মোদ্দা কথা হলো অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। অদৃশ্য কর্মবিধায়ক মহান আল্লাহ আমাদের সার্বিক সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছেন। আর আমাদের কৃতকর্মের ফলাফল তার থেকে নির্ধারণ হবে। সুতরাং কর্মবিধায়ক মহান আল্লাহর নীতি আদর্শকে আঁকড়ে ধরা ছাড়া আমাদের মুক্তির দ্বিতীয় আর কোনো পথ নেই। ইহকালীন ও পরকালিন সফলতার লক্ষ্যে আল্লাহর সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা ছাড়া আর কোনো উপায় অন্ত নেই। কিন্তু গনতন্ত্রীয় পথ ও পদ্ধতির সাথে ইসলামের কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই। গনতন্ত্রীয় পথ ও পদ্ধতিতে কোনো মুক্তি নেই। সফলতার একমাত্র পথ হলো ইসলাম। মুক্তির একমাত্র পদ্ধতি হলো জিহাদ।
একজন হাক্কানী আলমে তাওহীদ গ্রহণ করার এবং তাগুত বা মিথ্যা ইলাহসমূহ পরিত্যাগ করার দাওয়াত দিবেন
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ فَمِنْهُمْ مَنْ هَدَى اللَّهُ وَمِنْهُمْ مَنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ
প্রত্যেক জাতির কাছে আমি রসূল পাঠিয়েছি (এ সংবাদ দিয়ে) যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর আর তাগুতকে বর্জন কর। অতঃপর আল্লাহ তাদের মধ্যে কতককে সৎপথ দেখিয়েছেন, আর কতকের উপর অবধারিত হয়েছে গুমরাহী, অতএব যমীনে ভ্রমণ করে দেখ, সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণতি কী ঘটেছিল! (সূরা নাহল ১৬: ৩৬) وعن أَبي عبدِ الله طارِق بن أشَيْم رضي الله عنه قَالَ: سَمِعْتُ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم يقول :مَنْ قالَ لاَ إلهَ إلاَّ الله، وَكَفَرَ بمَا يُعْبَدُ مِنْ دُونِ اللهِ، حَرُمَ مَالُه وَدَمُهُ، وَحِسَابُهُ عَلَى الله تَعَالَى. أخرجه: مسلم.
রাসুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি বললো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করা হয় তাদেরকে অস্বীকার করলো, তার ধন-সম্পদ ও জীবন নিরাপদ হয়ে যায়, তার হিসাব আল্লাহর কাছে হবে।” (সহীহ মুসলিম ২৩, ২৭)সকল নবী রাসুলদের প্রধান দায়িত্ব ছিল মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহবান জানানো এবং সকল মিথ্যা ইলাহকে (তাগুত) বর্জন করার ঘোষণা দেওয়া। এখন কোন আলেম যদি তাওহীদের বিস্তারিত আলোচনা না করেন এবং মিথ্যা ইলাহ (তাগুত) সম্পর্কে সকলকে সচেতন না করেন, তবে পরিস্কার বিষয় যে, তিনি নবী রাসুলগণকে সঠিকভাবে অনুসরণ করেননি। তাহলে তিনি কিভাবে নবী রাসুলগণের উত্তরাধিকারী হবেন? তাছাড়া তার নিজেরই যদি তাওহীদ ও তাগুত সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকে, তবে তিনি কিভাবে আলেম হবেন? যদি আলেম নামধারী কেউ নিজেই শিরক্-কুফর এর রক্ষক হয় তখন তার অবস্থাটা কি হবে? যদি কেউ কোন মাজারে সেজদা দেয়ার অনুমতি দেয় কিংবা কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী মানবরচিত বিধানের পক্ষে কথা বলে, তাহলে তো তিনি মুসলমানই থাকতে পারবেন না। আলেম হওয়া তো অনেক দূরের কথা। কিংবা একজন আলিম যদি কোনো কুফুরি কর্ম বা প্রদ্ধতি থেকে সর্ব প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করা ব্যতীত উল্টো সেই কুফুরি কর্ম বা প্রদ্ধতির পক্ষপাতি হয় তাহলে তারা কিভাবে আলিম হওয়ার দাবী করবেন? কিংবা কোনো আলিম যদি কুফুরালয়ে (সংসদ) গিয়ে কাফের মুরতাদদের সাথে আড়াআড়ি করে বসার জন্যে চেষ্টা তদবির চালায়, তো কুরআনের ভাষায় তার উক্ত কাজটি কেমন হবে?
একজন আলেমের সাথে বাতিল ইলাহদের (তাগুতদের) ও তাদের সমর্থকদের শত্রতা থাকবে:
প্রত্যেক নবীর বিরুদ্ধেই সমকালীন তাগুতরা এবং তাগুতের অনুসারী, সমর্থকরা শত্রুতা করেছে। কোন নবী আল্লাহর এই সুন্নাহর বাইরে ছিলেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نِبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا وَلَوْ شَاء رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُونَ
এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্রু করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে। তারা ধোঁকা দেয়ার জন্যে একে অপরকে কারুকার্য খচিত কথাবার্তা শিক্ষা দেয়। যদি আপনার পালনকর্তা চাইতেন, তবে তারা এ কাজ করত না। (সূরা আনআম ৬ : ১১২)হজরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম যখন তার জাতির তাগুতদের সাথে প্রকাশ্যে শত্রুতা ও ঘৃণার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই কথার মধ্যে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে বলে আহকামুল হাকিমীন আল্লাহ উল্লেখ্য করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ
ইব্রাহীম ও তার সঙ্গী-সাথীদের মধ্যে তোমাদের জন্য আছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলেন “তোমাদের সঙ্গে আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের ইবাদত কর তাদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের আর তোমাদের মাঝে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ শুর হয়ে গেছে যতক্ষণ তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনবে।(সুরা-মুমতাহিনা ৬০:৪)শেষ *পর্যন্ত আমাদের জাতির পিতা হজরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের সাথে তাগুতের ইবাদতকারী ও রক্ষাকারীদের শত্রুতা এই পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে, তারা উনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِ إِلَّا أَن قَالُوا اقْتُلُوهُ أَوْ حَرِّقُوهُ فَأَنجَاهُ اللَّهُ مِنَ النَّارِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
তখন ইব্রাহীমের সম্প্রাদয়ের এছাড়া কোন জবাব ছিল না যে তারা বলল, তাকে হত্যা কর অথবা অগ্নিদগ্ধ কর। অত:পর আল্লাহ তাকে অগ্নি থেকে রক্ষা করলেন। নিশ্চয় এতে বিশ্বাসী লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা আনকাবুত ২৯: ২৪)একই শত্রুতার কারণে নূহ আলাইহিস সালামের মতো ধৈর্য্যশীল নবীও ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিলেন :
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ نُوحٍ إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ إِن كَانَ كَبُرَ عَلَيْكُم مَّقَامِي وَتَذْكِيرِي بِآيَاتِ اللّهِ فَعَلَى اللّهِ تَوَكَّلْتُ فَأَجْمِعُواْ أَمْرَكُمْ وَشُرَكَاءكُمْ ثُمَّ لاَ يَكُنْ أَمْرُكُمْ عَلَيْكُمْ غُمَّةً ثُمَّ اقْضُواْ إِلَيَّ وَلاَ تُنظِرُونِ
তাদেরকে শুনিয়ে দাও নূহের অবস্থা যখন সে স্বীয় সম্প্রাদয়কে বলল, হে আমার সম্প্রাদয়, যদি তোমাদের মাঝে আমার অবস্থান করা এবং আল্লাহর আয়াতসমূহের মাধ্যমে নসীহত করা কষ্টকর বলে মনে হয়ে থাকে, তবে আমি আল্লাহর উপর ভরসা করছি। অতএব তোমরা সবাই মিলে নিজেরদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর এবং এতে তোমাদের শরীকদেরকে সমবেত করে নাও, যাতে তোমাদের মাঝে নিজেদের কাজের ব্যাপারে কোন সন্দেহ-সংশয় না থাকে। অতঃপর আমার সম্পর্কে যা কিছু করার করে ফেল এবং আমাকে অব্যাহতি দিও না। (সূরা ইউনূস ১০: ৭১)
একই কারণে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাহমাতুলি¬ল আলামীন হবার পরও উনার সাথে তৎকালীন তাগুতের উপাসকদের শত্রুতা এই পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজে বলেছেন:
قُلِ ادْعُواْ شُرَكَاءكُمْ ثُمَّ كِيدُونِ فَلاَ تُنظِرُونِ
বলে দাও, তোমরা ডাক তোমাদের শরীকদেরকে, অতঃপর আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পণা কর এবং আমাকে অবকাশ দিও না। (সূরা আরাফ ৭: ১৯৫)আমাদের জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম, আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং অন্যান্য সকল নবী রাসুলদের মতোই তাঁদের উত্তরাধিকারী হিসেবে একজন আলেমের সাথে বর্তমান যুগের তাগুতগোষ্টী, ফেরাউন নমরুদের উত্তরসূরী ও তাদের সাথী সমর্থকদের সাথে আল্লাহর দ্বীনের কারণেই শত্রুতা থাকবে। যতক্ষণ না তারা কাফির ও মুশরিকদের অনৈসলামিক কর্মকান্ড জীবনযাত্রা ও মতাদর্শকে পরিত্যাগ করে। যারা মিথ্যা ইলাহদের ইবাদত করে তিনি তাদের সাথে শত্রুতা করবেন।
আমাদের যুগের কোন আলেমই নিজেকে নূহ আলাইহিস সালাম থেকে অধিক ধৈর্য্যশীল দাবী করতে পারবেন না। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম থেকে নিজেকে বেশী বুদ্ধিমান ও হিকমাতের অধিকারী দাবী করতে পারবেন না। অথবা নিজেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও বেশী রহমতের অধিকারী দাবী করতে পারবেন না।
উপরুক্ত আম্বিয়াদের দাওয়াতী জীবন ও ইসলামের খেদমত যদি তাগুতগোষ্টী ও তাদের সাথী-সমর্থকদের সাথে শত্রুতা ব্যতীত সম্ভব না হয়ে থাকে, তাহলে তাঁদের যোগ্য অনুসারীদের দাওয়াতী জীবন ও ইসলামের খেদমত কিভাবে এই শত্রুতা ছাড়া সম্ভব হতে পারে?
যে আলেমের এই বৈশিষ্ট্যটি নেই, তিনি নবী রাসুলদের যথাযথ উত্তরাধিকারী নন। তার থেকে দ্বীন শিক্ষা করা বিপদজনক হতে পারে।
একজন আলেম নিজের ও নিজের অনুসারীদের অজ্ঞাতসারে শিরকের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ
স্মরণ কর, ইব্রাহীম যখন বলেছিল, “হে আমার রব! তুমি এ নগরীকে নিরাপদ কর আর আমাকে আর আমার সন্তানদেরকে প্রতিমা পূজা থেকে রক্ষা কর।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৫)
আল্লাহ আরো বলেন :
رَبِّ قَدْ آتَيْتَنِي مِنَ الْمُلْكِ وَعَلَّمْتَنِي مِنْ تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ أَنْتَ وَلِيِّي فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ
“হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে রাজত্ব দান করেছ, আর আমাকে বিভিন্ন কথার ব্যাখ্যা শিখিয়েছ। আসমান যমীনের সৃষ্টিকর্তা! তুমিই দুনিয়ায় আর আখিরাতে আমার অভিভাবক, তুমি মুসলমান অবস্থায় আমার মৃত্যু দান করো এবং সৎকর্মশীলদের মধ্যে আমাকে অন্তর্ভুক্ত করো।” (সূরা ইউসুফ ১২:১০১)
হাদিসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ বলেছেন :
عن أنس رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى عليه وسلم يقول: قال الله تعالى يا ابن آدم إنك لو أتيتني بقراب الأرض خطايا ثم لقيتني لا تشرك بي شيئا لأتيتك بقرابها مغفرة) رواه الترمذي قال ابن رجب في جامع العلوم والحكم:২/৪০০ -إسناده لا بأس به قال ابن القيم في أعلام الموقعين:১/২০৪ -صحيح
“হে আদম সন্তান, যদি তোমরা আমার সাথে শিরক না করে পৃথিবী সমপরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার সাথে সাক্ষাত করো, আমি এর সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সাথে সাক্ষাত করবো।” (সুনান তিরমিযী-৩৫৪০)
একজন আলেম সর্বদা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর মতো নিজেকে শিরকে পতিত হওয়া থেকে সতর্ক থাকবেন এবং সর্বদা আল্লাহর সাহায্য কামনা করবেন। তিনি যেন একজন মুসলমান হিসেবে মৃত্যুবরণ করতে পারেন সেজন্য চেষ্টারত থাকবেন, যেমনটা দোয়া করেছিলেন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম। তিনি কখনোই নিজের ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন না, নিরাপদবোধ করবেন না, অন্যদের জান্নাতে যাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া তো অনেক দূরের কথা। অথচ কত আফসোস ও আক্ষেপের বিষয় এই যে, আজ পীর নামধারী একশ্রেণীর লোক এমন আচরণ করছে যে, তারা নিজেরা তো জান্নাতের সার্টিফিকেট পেয়েই গেছে, এখন যে মুরীদ তাকে যত বেশী টাকা দিবে তাকে জান্নাতের তত উপরের টিকেট দিয়ে দিবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী (রাঃ) কে নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেছিলেনঃ
“কোন ছবি প্রতিকৃতিকে নিশ্চিহ্ন না করে এবং উঁচু কবরকে সমান না করে ছাড়বে না।” (সহীহ মুসলিম ৯৬৯, সুনান নাসায়ী ২০৩১, মুসনাদে আহমাদ ৭৪১, সুনান তিরমিযী ১০৪৯, সুনান আবু দাউদ৩২১৮, মুসতাদরাক হাকিম ১৩৬৬)
এখন কেউ যদি নিজেই কোন মাজার কিংবা পাকা কবরের রক্ষক হয়, কিংবা মাজার-কবর কেন্দ্রিক কোন উরস কিংবা টিভি অনুষ্ঠানের আয়োজক হয় সে কি আলেম হতে পারে? অন্য আরেক দল আলেম আছেন, যারা মনে করেন শিরক শুধু হিন্দুদের মূর্তিপূজা কিংবা খ্রীষ্টানদের ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর সমকক্ষ করে নেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তারা মুসলিম সমাজে প্রচলিত কোন শিরকের ব্যাপারে মুখ খুলতে চান না। অথচ হাদিস অনুযায়ী এই উম্মত ইহুদী-খ্রীষ্টানদেরকে পদে পদে অনুসরণ করবে, তাই এই উম্মতের এক দল লোকও শিরক করবে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের মতোই। তাহলে সেই শিরকগুলো কি যা অনেক মুসলমানও করে বেড়াবে? সেগুলো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা জররী।
একজন আলেম আল্লাহর শত্রুদেরকে ভয় করবেন না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّهَ فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ
আল্লাহর মাসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ তো তারাই করবে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, তারাই হবে সঠিক পথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা তাওবাহ ৯:১৮)যদি আল্লাহর ঘর কাবার রক্ষণাবেক্ষণ এবং হেফাজতের জন্য এমন লোকের প্রয়োজন হয়, যারা আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না, তবে আল্লাহর পুরো দ্বীনের হেফাজতের দায়িত্বে নিয়োজিত আলেমরা যদি এলাকার মানুষের ভয়, সামাজিক-রাজনৈতিক নেতার ভয়, পেছনে ‘লোকে কিছু বলে কি না’ এর ভয়, চাকুরী হারানো কিংবা সামাজিক প্রতিপত্তি হারানোর ভয় ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকারের ভয়ে জর্জরিত থাকেন, তবে কি আল্লাহর দ্বীনের হেফাজত এবং সেটাকে বিজয়ী করার কাজে নেতৃত্ব দিতে তারা সক্ষম হবেন?
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
إِنَّمَا ذَلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
একমাত্র শয়তানই; তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়, তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও। (সূরা আলে-ইমরান ৩:১৭৫)
আল্লাহ আরো বলেন:
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ فَإِذَا أُوذِيَ فِي اللَّهِ جَعَلَ فِتْنَةَ النَّاسِ كَعَذَابِ اللَّهِ
মানুষের মধ্যে কতক আছে যারা বলে “আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। অতঃপর তাদেরকে যখন আল্লাহর পথে কষ্ট দেয়া হয়, তখন তারা মানুষের উৎপীড়নকে আল্লাহর আযাবের মত মনে করে। (সূরা আনকাবূত ২৯:১০)একজন আলেম যদি আল্লাহর শত্রুদের ভয়ে ভীত থাকেন, তাহলে তিনি কোন না কোনভাবে আল্লাহর দ্বীনের সাথে আপোষ করবেন। কিন্তু একজন ভালো আলেম চরম অত্যাচার ও নির্যাতনের মুখোমুখি হলেও কখনোও ইসলামের কোন বিধানের সাথে আপোষ করবেন না। পক্ষান্তরে তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইসলামকে বিকৃত করার পরিবর্তে সকল অত্যাচার-যুলুমকে হাসিমুখে গ্রহণ করে নিবেন। ঠিক যেভাবে, মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ের যাদুকরগণ পরবর্তীতে ঈমান আনার পর ফিরাউনের বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে, শুলে চড়ানোর শাস্তিকেও ভয় পাননি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
قَالُوا لَنْ نُؤْثِرَكَ عَلَى مَا جَاءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِي فَطَرَنَا فَاقْضِ مَا أَنْتَ قَاضٍ إِنَّمَا تَقْضِي هَذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا . إِنَّا آمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَا أَكْرَهْتَنَا عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِ وَاللَّهُ خَيْرٌ وَأَبْقَى
তারা বলল, “আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তার উপর আমরা তোমাকে কক্ষনো প্রাধান্য দেব না। কাজেই তুমি যা করতে চাও তাই কর। কেননা তুমি কেবল এ পার্থিব জীবনেই কর্তৃত্ব খাটাতে পার। আমরা আমাদের প্রতিপালকের উপর ঈমান এনেছি যাতে তিনি আমাদের অপরাধ ক্ষমা করেন আর যে যাদু করতে তুমি আমাদেরকে বাধ্য করেছ তাও (ক্ষমা করেন), আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী।”(সূরা ত্বহা ২০:৭২-৭৩)
মানুষকে ভয় পেয়ে আল্লাহর হুকুম পালন হতে বিরত থাকা কিংবা কোন হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া হচ্ছে দূষনীয়। সুতরাং একজন আলেম মানুষের ভয়ে কোন হারাম, বিদয়াত ইত্যাদিতে জড়িয়ে যাবেন না। এলাকার লোকজন মন খারাপ করবে, মসজিদ কমিটির লোকজন রাগ করবে, পরবর্তী টিভি অনুষ্ঠানে আর ডাকবে না এসব চিন্তা কখনো শিরকের বিরোধিতা, কুফরীর প্রকাশ্য সমালোচনা, বিদয়াতের বিরোধিতা, সমাজের অন্যান্য হারাম কাজের বিরোধিতা বন্ধ করবেন না। কারণ এগুলির বিরোধিতা করা তার উপর ফরজ। এই দ্বীনের হেফাজত করা তার উপর ফরজ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
إِنَّا أَنزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُواْ لِلَّذِينَ هَادُواْ وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالأَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُواْ مِن كِتَابِ اللّهِ وَكَانُواْ عَلَيْهِ شُهَدَاء فَلاَ تَخْشَوُاْ النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلاَ تَشْتَرُواْ بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلاً وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
আমি তওরাত অবর্তীর্ন করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে ফয়সালা দিতেন। কেননা, তাদেরকে এ খোদায়ী গ্রন্থের দেখাশোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তাঁরা এর রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াত সমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্যে গ্রহণ করো না, যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের। (সূরা মায়েদা ৫ : ৪৪)
এই আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আলেমদেরকে বিশেষভাবে বলছেন, 'তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াত সমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্যে গ্রহণ কর না'।
ঠিক যেভাবে, মূসা আলাইহিস সালাম অত্যাচারী ফেরাউনের সামনে সুস্পষ্টভাবে হক্বের দাওয়াত দিতে ভয় পাননি, ঠিক যেভাবে ইব্রাহীম আলাহিস সালাম তৎকালীন তাগুত নমরুদ ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাই অবস্থান নিতে ভয় পাননি, ঠিক যেভাবে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার শাসকগোষ্টীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে এবং তৎকালীন দুই পরাশক্তি পারস্য ও রুমের শাসকদেরকে সুস্পষ্টভাবে ইসলামে দাখিল হবার দাওয়াত দিতে ভয় পাননি, নবীগণের যথাযথ ওয়ারিস আলেমগণও একইভাবে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করবেন না। ভীতু ও কাপুরূষরা কখনো আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামদের উত্তারাধিকারী হতে পারে না।
একজন আলেম উপদেশ দেয়া বা সতর্ক করা ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে শাসকদের কাছে যাবেন না।
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
إياكم وابواب السلطان؛ فإنه قد أصبح صعبا هبوطا قال الهيثمي في مجمع الزوائد
:৫/২৪৯ -رجاله رجال الصحيح قال السيوطي في الجامع الصغير:২৮৯৮ -حسن
“শাসকদের দরজার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। যেই শাসকদের নিকট গমন করে, সেই পরীক্ষার মধ্যে পতিত হয়।” (আবু দাউদ, নং-২৮৫৯, সুনান তিরমিযী নং-২২৫৬)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন: “একজন ব্যক্তি যে তার দ্বীনকে সাথে নিয়ে কোন শাসকের নিকট যায়, সে (শাসকের কাছ থেকে) বের হয়ে আসে তার সাথে কোন কিছু না নিয়েই।” (অর্থাৎ দ্বীন রেখে আসে) (ইমাম বুখারী (রা.) কর্তৃক সংগৃহীত ‘তারিখ’ গ্রন্থে হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) বলেন:
قال حذيفة رضى الله عنه : إياكم ومواقف الفتن . قيل : وما هي ؟ قال : أبواب الأمراء ، يدخل أحدكم على الأمير فيصدقه بالكذب ، ويقول ما ليس فيه
“তোমরা ফিতনার বিষয়গুলো থেকে সতর্ক থাকো।” বলা হলোঃ “সেটা কি?” তিনি বললেনঃ “শাসকদের দরজা। তোমাদের কেউ শাসকদের কাছে যাবে, তার মিথ্যা কথাকে সত্যায়ন করবে, তারপর বলবে, এটাতে কোন সমস্যা নেই।”
তিনি আরো বলেন: “অবশ্যই তোমরা কখনোও শাসকদের দিকে এক বিঘত পরিমাণও অগ্রসর হয়ো না।” (ইবনে আবী শাইবাহ কর্তৃক সংগৃহীত)ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রঃ) বলেন,
قَالَ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ: " إِذَا رَأَيْتَ الْقَارِئَ يَلُوذُ بِالسُّلْطَانِ فَاعْلَمْ أَنَّهُ لِصٌّ وَإِذَا رَأَيْتَهُ يَلُوذُ بِالْأَغْنِياءِ فَاعْلَمْ أَنَّهُ مُرَاءٍ
“যখনই তুমি কোন আলেমকে দেখবে শাসকদের কাছে গমন করতে, জেনে রাখো, সে হচ্ছে একজন চোর। আর যদি তাকে ধনী লোকদের কাছে আনাগোনা করতে দেখো, তাহলে জেনে রেখো, যে মানুষকে দেখানোর জন্য কাজ করে।” (শুয়াবুল ঈমান: ৪৯৭২, জামি লি আখলাকির রাওয়ী ওয়া আদাবীস সামী, পৃ. ১৪।
ইমাম যাহাবী (র.) এর সনদকে সহীহ বলেছেন। দেখুন সিয়ারাল আলামুন নুবালা ১৩/৫৮৬। এছাড়াও সালিম হিলালী সহীহ বলেছেন। একই রকম কথা আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত একটি মারফু হাদিসে রয়েছে)
ইমাম আবু হানিফা (র.) বলেছেন: “যদি কোন আলেমকে নিয়মিত খলিফার দরবারে যেতে দেখো, তবে তার দ্বীন নিয়ে সন্দেহ করো।”
ইমাম সূফীয়ান সাওরী (র.) বলেন :
إِنْ دَعَوْكَ أَنْ تَقْرَأَ عَلَيْهِمْ: قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ , فَلَا تَأْنَفْهُمْ
“তোমরা সেখানে যেও না, এমনকি তারা যদি তোমাদেরকে শুধুমাত্র ‘কুল-হুয়াল্লাহু আহাদ’ পাঠ করার জন্যও ডাকে।” (শুয়াবুল ঈমান-৮৯৭১ ইমাম বাইহাকী)একজন আলেম শাসকদের দরজায় প্রবেশ করবেন না। এটা তাঁদের জন্য ফিতনাহ (পরিক্ষা) স্বরূপ। এটা সাহাবীদের এবং সালাফে সালেহীনদের উপদেশ। শুধুমাত্র উপদেশ দেওয়ার বা সতর্ক করার উদ্দেশ্যে কেউ শাসকদের নিকট যেতে পারে, তবে তাঁকে তখন অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করার জন্য মানসিকভাবে তৈরি থাকতে হবে।আমরা কি সেসব আলেমদের নিকট দ্বীন শিক্ষা করতে যাবো যারা শাসকদের দরজায় আনন্দচিত্তে যায় আর আনন্দচিত্তে বের হয়ে আসে? অথবা শাসকদের প্রদত্ত বেতনের উপর বেঁচে থাকে এবং দ্বীনের বিভিন্ন বিধান পরিবর্তন করে?
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, আমরা ইসলাম নামক একটি ধর্মের অনুসারী। যে ধর্মের মোদ্দা কথা হলো অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। অদৃশ্য কর্মবিধায়ক মহান আল্লাহ আমাদের সার্বিক সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছেন। আর আমাদের কৃতকর্মের ফলাফল তার থেকে নির্ধারণ হবে। সুতরাং কর্মবিধায়ক মহান আল্লাহর নীতি আদর্শকে আঁকড়ে ধরা ছাড়া আমাদের মুক্তির দ্বিতীয় আর কোনো পথ নেই। ইহকালীন ও পরকালিন সফলতার লক্ষ্যে আল্লাহর সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা ছাড়া আর কোনো উপায় অন্ত নেই। কিন্তু গনতন্ত্রীয় পথ ও পদ্ধতির সাথে ইসলামের কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই। গনতন্ত্রীয় পথ ও পদ্ধতিতে কোনো মুক্তি নেই। সফলতার একমাত্র পথ হলো ইসলাম। মুক্তির একমাত্র পদ্ধতি হলো জিহাদ।
Comment