আগেই একটি বিষয় বলে রাখি। আমি কোনো কাল্পনিক ব্যক্তি নই। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বাস্তবতাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। কানে কানে কিছু বলতে খুব অপছন্দ করি। তাই আজ আরো একটি বাস্তবতা তোমার সামনে তুলে ধরি! আচ্ছা বল তো বন্ধু! ব্যক্তিগত মূল্যবোধ বলতে তুমি কি বুঝ? তুমি কীভাবেই বা নিজেকে মূল্যায়ন কর?
আপনি যেহেতো একটি কিছু বলতে চাচ্ছেন তো আপনিই বলুন! আমি শুনি। আপনার অভিমতটি শুনতে তো কোনো বাধা নেই। ও তাই নাকি! ঠিক আছে।
শোনো আব্দুল্লাহ! এ ব্যাপারে আমার নিজস্ব কোনো অভিমত নেই তারপরও যেটোকু বলছি এর পুরোটাই আমার একান্ত আন্তরিক বিশ্বাস, তাই সেটিকে তুমি হুট করেই আমার ধর্মীয় বিশ্বাস বলতে যেও না। কারণ সেখানে নাতিদীর্ঘ আলোচনার যথেষ্ট পরিমার অবকাশ রয়েছে। এখানে আর একটি কথাও বলব না, অন্যথায় আলোচনা ভিন্নদিকে মোঁড় নিবে। এখন এসো ফিরে যাই ব্যক্তিগত মূল্যবোধের পরিচয়ের দিকে। ব্যক্তিগত মূল্যবোধের পরিচয়টি যদি অতি সহজেই আমি তোমাকে বুঝাতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে এ কথাই বলল যে, তোমার ব্যক্তিগত মূল্যবোধের অর্থ হল, তোমার তিনটি কাজ করা। অর্থ্যাৎ তোমার জীবনকে তিনটি দিক দিয়ে সফলতা মুন্ডিত করা। সে সফলতার জন্য যে প্রক্রিয়া-প্রদ্ধতি গ্রহণ করার প্রয়োজন সাধ্যমত সেটিই গ্রহণ করা।
প্রথমত: হৃদয়ের দাবিগুলোকে মূল্যায়ন করা। সাধ্যের সবটুকু ব্যয় করে হলেও হৃদয়কে প্রশান্তিতে রাখার চেষ্টা করা।
দ্বিতীয়ত: পারিবারিকভাবেও নিজের মূল্যবোধ অটুট রাখা। পরিবারের মাঝেও নিজেকে আরামদায়ক অবস্থানে রাখা।
তৃতীয়ত: সামাজিকভাবেও নিজেকে শান্তিতে রাখার জন্য নিজেকে শান্তিপূর্ণ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া।
তবে তোমার সাথে আজ আমার বুঝ পরামর্শ হলো প্রথমটি নিয়ে। কারণ তুমি জানো ও বিশ্বাস কর দিত্বীয় ও তৃতীয়টি যদিও স্বাতন্ত্র দুটিভাগে বিভক্ত হয়েছে। কিন্তু এ দুটো মূলত প্রথমটিরই শাখা বিশেষ। তারপরও গুরুত্বের দিক বিবেচনা করা হলে কোনোটিই কিন্তু অপরটির চেয়ে খাটো নয়। এখন এসো প্রথমটি নিয়ে আলোচনা করি। এজন্য সরাসরি ‘বিশ্ব-শান্তি ও ইসলাম’ গ্রন্থের কিছু বিষয় তোমার সামনে তুলে ধরছি।
“ব্যক্তি-মন যেখানে শান্তি উপভোগ করতে পারে না, সেখানে কোনো শান্তি নেই। শান্তি সম্পর্কে এটিই ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী। যখন সুদৃঢ়ভিত্তির উপর শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হয়, সর্বপ্রথম তা হৃদয়ের গভীরে প্রতিষ্ঠা করতে হয়”।
“আবেগ-অনুভূতি আর হৃদয়ের মৌলিখ আশা-আকাঙ্খার সুবিন্যাসের ফলে শান্তির অস্তিত্ব লাভ হয়; জোর-জবরদস্তী, বলপ্রয়োগ ছল-চাতুরি আর কলা-কৌশলের ফলে নয়। আর হৃদয়ের এ শান্তি ব্যক্তির অস্তিত্ব, আবেগ-অনুভূতি ও আশা-আকাঙ্খার মর্যদা দেয়”।
আব্দুল্লাহ! তুমি জানতে পারলে একজন ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত মূল্যবোধ তখনই রক্ষা করতে পারে, যখন সে ব্যক্তি নিজ হৃদয়কে সার্বিকভাবে প্রশান্তিতে রাখতে সক্ষম হয়। হৃদয়ের হাতজোর দাবিগুলো যদি কি না সে ব্যক্তি পূর্ণ করতে সফল হয়। তবে তখন একটি বিষয়ের প্রতি তোমাকে খুব খেয়াল রাখতে হবে, ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ধরতে গিয়ে, তুমি কোনো কুপ্রবিত্তির পেছনে পড়ছ না তো? এর বৈধ পথসমূহ ছেড়ে কোনো অবৈধ পথ বেঁচে নিচ্ছো না তো? যদি এসব দিকগুলোর সবকটিই তুমি ঠিকঠাক রাখতে পার, তবেই মনে করবে যে, তুমি সঠিক পথে আছ। তোমার ব্যক্তিগত মূল্যবোধকে রক্ষা করতে পারছ। তখন তুমি আশা করতে পার, ‘অচিরেই তুমি সফলতার মুখ দেখবে’।
আব্দুল্লাহ! এখন এসো আমাদের বন্ধুত্বের দিকে। আমরা দেখব আমাদের সত্যিকার বন্ধুত্ব সত্যই আমাদের ব্যক্তিগত মূল্যবোধের পর্যায় পরে কিনা? জীবনকে আলোকিত করতে হলে যে ভালোবাসা-বন্ধুত্বের মূল্যায়ন আমাদের জন্য অনেক অনেক জরুরি।
আব্দুল্লাহ! আমার মনে হয় এটি তোমাকে আমার বুঝাতে হবে না যে, ভালোবাসা-বন্ধুত্বের প্রয়োজন তুমি সর্বদায় অনুভব করছ, যেমনই কাউকে না কাউকে বন্ধু বলে ভালোবেসেই যাচ্ছ। শুধু আমাকে বন্ধু বলে ভালোবাসতেই তো একটু হিমশিম খাচ্ছ; কিংবা সত্যিকার ভালোবাসা-বন্ধুত্ব বুঝতে হয়তো ভুল করছ। যাক! এখন আমি তোমার সে ভালোবাসা লুফে-লুটে নিতে চাই না। জানোই তো ভালোবাসা হাতিয়ে নেওয়ার কিছু নয়। কারণ তা হলো এক প্রকার হৃদয়ের প্রশান্তি, যা লোন্ঠনের জিনিস নয়। ভালোবাসা-বন্ধুত্ব কোনো সরকারি সম্পদও নয়, যা তুমি যথেচ্ছায় বিতরণ কর এবং অবশেষে রয়ে যাওয়া একটি বিরাট অংশ, এ বলে দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও, ‘সারকারি মাল দরিয়া ম্য ঢাল’। কারণ দেখ, তুমি আমাকে ভালো না বাসলেও কিন্তু আমি তোমাকে ভালো বেসেই যাব। শোনো! তোমার ভালোবাসায় আমি সততার পরিচয় দিতে গিয়ে তোমাকে আমার পাশে থাকতে হবে না। তোমার ভালোবাসাকে সংরক্ষণ করতেও আমাকে কোনো ধরনের বেগ পেতে হবে না। জানোই তো, আমার হৃদয় তোমার ভালোবাসাকে আগলে রাখতে সর্বদায় প্রস্তুত। তাতে তোমার ভালোবাসা সংরক্ষণ করতে যথেষ্ট পরিমান জায়গাও আছে। বেশ নিরাপদ জায়গাই। তেমন কোনো কিছুর ভয় নেই। আর সেখানে তা পঁচবেও না।
আব্দুল্লাহ! হয়তো তুমি অনেককেই ভালোবাস, ভাল কথা। ‘আরে বাবা’এ জন্য আমার কোনো অক্ষেপ নেই। আমি ঈর্ষাণ্বীতও নই। শোনো! আমি আক্ষেপ করছি শুধু এজন্যই যে, “তুমি সত্যিকার কোনো বন্ধু পেয়েছ কিনা? তারা তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করছে কিনা? শুধু শুধুই তারা তোমার সময় নষ্ট করছে না তো? শোনো! আজ কিন্তু আমার অবস্থা মোটামুটি ভালোই গিয়েছে। এই তো, সে দিনও তোমার কথা মনে হলে ভেতরটা কেমন যেন করত। কষ্টের; অতিশয্যায় হৃদয় আমার তোমায় শুধু ডাকত!! কিন্তু আজকের অবস্থা অনেক ভালোই গিয়েছে। মনে রেখ! সত্যিকার ভালোবাসা-বন্ধুত্বে কোনো নিরাশা নেই। আমার বিশ্বাস সত্যিকার ভালোবাসা-বন্ধুত্বের ফল একটু দেরিতেই ফলে। তবে যখন আসে স্থায়ীভাবেই আসে, তেমন কোনো সময় ধরে নয়। শোনো! আমি যদি অবিচল থাকি, তবে তুমি ছাড়া অনেকেই আমাকে ভালোবাসবে। বন্ধু বলে কাছে টেনে নিবে। তথাপিও কেউ কেউ হয়তো একটু কটাক্ষও করবে। করুক তাতে আমার কি আসে যায় বরং এতে আমি আরো বেশি আনন্দিতই হবো। কারণ তখন আমি পরিষ্কার বুঝতে পারব, এ পৃথিবীতে আমিই সত্যিকার ভালোবাসা-বন্ধুত্বের জয়তন্ত্রী। এটি খুশির বিষয়। আর অনেকেই হয়তো তখন আমাকে পাগল বলবে, তাতেও আমি বেজার নই। কারণ আমি জানি সত্যই যে পাগল তাকে কটাক্ষ করে কেউ পাগল বলে না। সুস্থ মানুষকেই কটাক্ষ করে পাগল বলে ডাকা হয়। তাহলে অর্থ দাঁড়ায়, আমি সুস্থ কিন্তু ওরা আমাকে এজন্যই পাগল বলছে যেন এখন আমি তাদের কথায় অতিকষ্টের ধরুণ পাগল হয়ে যাই।
শোনো! এখন হয়তো অনেক নির্বোধ বন্ধু আমার ব্যাপারে তোমার কাছে অনেক কিছুই বলবে। কিংবা চিঠি পাঠিয়ে আমার অনেক কিছুই তোমাকে জানাবে। ঠিক আছে, তারা বলতে পারে আর তোমারও যেহেতু কান আছে, তুমিও তাদের কথা শুনতে পার। আমিও তোমায় দুটো কথা বলে রাখি। শোনো! তারা ভালোবাসার মাপকাটিতে অবশ্যই চরম ভুল কারী। পবিত্র ভালোবাসাকে তারাই তো আজ কলষিত করছেন। সত্যিকার বন্ধুর চেহারায় তারাই তো আজ কলঙ্কের কালিমা লাগিয়ে দিচ্ছেন। ভালোবাসা-বন্ধুত্বের মৌলিখ নীতিমালায় প্রতিনিয়তই মনমত পরিবর্তন আনছেন। তাই তো তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে, তারা ভালোবাসার ‘ভ’ র শুদ্ধ উচ্ছারণটিও হয়তো করতে পারবে না, তবোও ভালোবাসা ভালোবাসা খৈ সর্দায় তাদের হাড়িতে (মুখে) ফুটতে থাকে। তারা কীভাবে যে; কীভাবে যে; ভালোবাসে তা বলতেও লজ্জা করে। আরে জানো না? (...................................)
আমার মন বলছে, তুমি জানতে চাচ্ছ কেন আমি বার বার ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ জিগির জপছি? শোনো! আমার দৃষ্টিতে একজনকে আগে ভালোবাসতে হয়, অতপর জীবনপথের পাথেয় হিসেবে বন্ধু বলে বরণ করে নিতে হয়। জীবন নামক সংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্যে একনিষ্ঠ বন্ধুত্ব কুঁড়িয়ে নিতে হয়। ন্যায়-নীতির আদর্শ ইসলামকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তোমার বন্ধুত্ব যে আমার একান্তই প্রয়োজন, তুমি কি তা জানো? শোন! সত্যিকার বন্ধুত্বের বাহুবলই এ পৃথিবীকে সোনালী যুগ উপহার দিয়েছিল। সত্যিকার বন্ধুর বন্ধত্বই দুর্গম গীরি, কান্তার মরূ, আর অতই দরিয়া তীরে এ দ্বীনের মুজাহিদদের একাকিত্ত্ব দূর করেছিল। তাহলে বুঝতে পারলে, কিছু না ভেবে আগেই বন্ধুত্ব নয় বরং আগে ভালোবাসা তারপর বন্ধুত। আর তাই আমি ‘আল কায়দা তোমার জন্যে আন্তরিক ভালোবাসা-বন্ধুত্ব নিয়ে আজও অপেক্ষমান। আগামী কালও তোমার বন্ধুত্বের জন্যে তোমারি পথপানে আগুয়ান। তোমার অমৃত্যুই তোমার জন্যে জিহাদের ময়দানে দন্ডায়মান। এসো বন্ধু চলে এসো। দুজাহানের সফলতা ও মুক্তির তরে জিহাদের পথে চলে এসো!
যেদিন আরশের ছাঁয়া ছাড়া আর কোনো ছাঁয়া থাকবে না সেদিন আল্লাহ তায়ালা সাত শ্রেণীর লোককে আরশের নিচে ছাঁয়া দিবেন তাদের একটি শ্রেণী হলো ঐ দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে একে অপরকে মহাব্বৎ করতো। আর এজন্যে তারা মাঝে মধ্যে একত্রিত হত আবার পৃথক হয়ে যেত। (বুখারী, মুসলিম)
Comment