সূরা আল ইমরানের ১৩৯ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
উক্ত আয়াতটিই আমাদের সময়ের স্লোগান হওয়া উচিত।
কিছু পশ্চিমা দা’ঈ তাদের লেকচারে হুদায়বিয়ার সন্ধি, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাক্কী জীবন এসব নিয়ে এমনভাবে কথা বলেন যাতে মনে হয় মুসলিম উম্মাহর চলমান অধঃপতিত ও দুর্বল অবস্থাকেই যেন তারা নিজেদের নিয়তি হিসাবে মেনে নিয়েছেন। এমন একটা ভাব যেন এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আমাদের কিছুই করার নেই। এই চিন্তাধারাটি আমাকে ক্ষুব্ধ করে। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ICNA এর এক কনভেশনে একজন দা’ঈ ইসলামের কিছু স্পর্শকাতর বিষয় উল্লেখ করে মন্তব্য করলেন, “এককালে আমরা এইসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারতাম!”। সাথে সাথে তিনি ও উপস্থিত অন্যান্যরা উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন।
আমি দর্শকসারিতে বসে আনমনে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ভাবছিলাম, “আশ্চর্য! আপনি আপনার লেকচারেইসলামের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারছেন না এতে হাসির কী আছে! এর থেকে দুঃখজনক ব্যাপার আর কী হতে পারে যে, ইসলামের একজন দা’ঈ হয়েও আপনি আজকে একজন অনুগত ভৃত্যে পরিণত হয়েছেন?” তখন এই আয়াতটি আমার কানে বাজছিল।
কিন্তু এই আয়াতটিই কেন? কারণ উহুদের যুদ্ধের এক ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত মুহূর্তে এই আয়াতটি নাযিল হয়। সাহাবীদের অনেকেই তখন মনোবল হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন। তাদের মনে লুকিয়ে থাকা ভয় এবং দুর্বলতা- এই দুটি সহজাত অনুভূতির দিকে নির্দেশ করে এই আয়াতটি বলছে, ভীত হয়ো না, ভেঙে পড়ো না। এই আয়াত শিক্ষা দিচ্ছে ঈমানের উপর দৃঢ় থাকাটাই প্রকৃত বিজয়, যুদ্ধক্ষেত্রের পরাজয় তো বাহ্যিক পরাজয়, এটি সাময়িক ব্যাপার। কাজেই মু’মিনদের হতাশ বা দুঃখিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বা নিজেদের দুর্বল ভাবার কোনো অবকাশ নেই।
আজকের দিনেও এই আয়াতটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আয়াতটি আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, আমাদের বর্তমান বিশৃঙ্খল অবস্থা এবং শক্তিহীনতা সত্ত্বেও আমাদের নিজেদেরকে দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই। কেননা সত্যিকারের যুদ্ধ হল মনস্তাত্ত্বিক। মন এবং মগজই হচ্ছে যুদ্ধের আসল ক্ষেত্র। যতদিন পর্যন্ত আমাদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে বিশুদ্ধ ও ত্রুটিমুক্ত ঈমানধারী মুসলিম আছে ততদিন আমরা দুর্বল নই। বাহ্যিকভাবে আমাদের পরিস্থিতি যতই নড়বড়ে হোক না কেন।
যদি কোনো ব্যাক্তি, সমাজ, জাতি অথবা উম্মাহ বৈষয়িক দিক থেকে নিরাপদ ও সমৃদ্ধশালী হয় অথচ তার নিজস্ব চেতনা বা ঈমান-আক্বীদার সাথে আপস করে ফেলে, তবে সে বাহ্যিক সফলতা নিরর্থক। আবার, বাহ্যিক সাফল্যের পরোয়ানা করে যদি ঈমানের ব্যাপারে আপসহীন থাকাযায়,তখনও বাহ্যিক সাফল্য গৌণ হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে বলা হয়ে থাকে, যখনই কোনো সাম্রাজ্য তার নিজস্ব চেতনা ও মূল্যবোধের সাথে প্রতারণা করে তখনই তার পতন ঘটে। আর তাই উহুদে সামরিকভাবে পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও মুসলিমদেরকে আল্লাহ জয়ী বলেছেন, কেননা তারা নিজেদের চেতনা ও বিশ্বাসের উপর ছিলেন বলীয়ান। তাই, আজকে মুসলমানদের সবচেয়ে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ যে যুদ্ধে লড়তে হচ্ছে তা হল মতাদর্শের যুদ্ধ, মনস্তাত্ত্বিক জগতের হৃদয় ও মননের যুদ্ধ (battle for hearts and mind)।
আজকে মুসলিম উম্মাহকে পরাজিত করার লক্ষে কুফ্ফাররা আমাদের মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছে। তারা দিনে রাতে কাজ করে চলেছে ইসলামের জীবনীশক্তি, আমাদের শক্তির আসল উৎস, “ঈমান” কে আমাদের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে, যে ঈমান পশ্চিমাদের দাসত্বের কলুষতা থেকে মুক্ত। তারাচায় আমরা যেন নিজেদের দুর্বলতাকে নিয়তি ভেবে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিই। এভাবে তারা আমাদের কেবল বাহ্যিকভাবে নয়, বরং অন্তরকেও সাম্রাজ্যবাদী দাসত্বের শেকলে আবদ্ধ করতে চায়। আমাদের উচিত আমাদের এই দুর্বল জায়গাগুলো সারিয়ে তোলা। আমাদের মনে রাখতে হবে, গোলামির কলুষতা থেকে মুক্ত ঈমান বুকে ধারণ করার কারণেই আল্লাহ সাহাবিদের সম্মানিত করেছেন, যদিও দুনিয়াবী শক্তির বিবেচনায় তারা ছিলেন দুর্বল। আজকেও আমরা একইভাবে সম্মানিত হব, যদি আমরা পশ্চিমাদের দাসত্বের মনস্তাত্ত্বিক বেড়াজাল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসতে পারি।
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের মনে এই বিষয়টি দৃঢ়ভাবে গেঁথে দিতে চান যে, বস্তুগতভাবে আমরা যতই দুর্বল হই না কেন, আমাদের হৃদয়ে জেঁকে বসা ঔপনিবেশিক দাসসুলভ মানসিকতার (mental colonialism) কারণসমূহ চিহ্নিত করতে পারলে এবং আমাদের হৃদয় ও মনকে এই হীনমন্যতা থেকে বিশুদ্ধ রাখতে পারলে আমরাও সম্মানিত হব। এই আদর্শিক যুদ্ধজয় তখন অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
জেলখানাতে আমার কয়েক সেলপাশে 'জো' নামে এক মাদকব্যবসায়ী ছিল। কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেফতারের আগে সে কেমন করে তার মাদক ব্যবসা চালিয়েছিল, সে সম্বন্ধে আমাকে জো অনেক গল্প বলেছিল।
গল্পের শেষে জো দুঃখের সাথে বলেছিল, “এখন সরকার আমাদের সাথে ইচ্ছামত যা খুশী করতে পারে।”
আমি তাকে বলেছিলাম, “জো, তোমাকে একটা প্রশ্ন করি, 'তুমি কি তোমার স্ত্রীকে ভালবাসো?'।” সে উত্তর দিল, “অবশ্যই, আমি তাকে ভালবাসি।”
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “মনে কর কর্তৃপক্ষ তোমার উপর অনেক শারীরিক নির্যাতন চালালো। তারা কি তোমার মুখ থেকে এ কথা বের করতে পারবে, 'আমি আমার স্ত্রীকে ঘৃণা করি।'?”
সে বলল, “পারতেও পারে।”
আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম, “কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি তোমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলোকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে তারপরও কি তারা পারবে তোমার হৃদয়ের গভীর থেকে স্ত্রীর প্রতি তোমারভালবাসাকে মুছে ফেলতে?” জো উত্তর দিল, “কখনোই না।”
আমি শেষে বলেছিলাম, “এজন্যই আসলে তারা যা খুশী তা করতে পারে না। কারণ তোমার হৃদয় তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।”
আল্লাহ বলেন,
“তোমরা হীনবল ও দুঃখিত হয়ো না, বস্তুতঃ তোমরাই জয়ী থাকবে যদি তোমরা মু'মিন হও।” (সুরা আল-ইমরান আয়াত ১৩৫)
সুতরাং, বাহ্যিক দুর্বলতা সত্ত্বেও সর্বদা অগ্রগামিতা ধরে রাখা সম্ভব। কাজেই দা’ঈদের আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে বারবার ‘মাক্কী জীবন’ আর ‘হুদাইবিয়াহ’র তুলনা দিয়ে দুর্বলতা আর হতাশাকে স্বাভাবিক হিসাবে মেনে নেওয়ার বোধ তৈরি করে দেওয়া মোটেই উচিত নয়। বরং তাদের উচিত ভিন্ন আঙ্গিকে আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিকে উপস্থাপন করা। যেভাবে কুরআনের এই আয়াতে আল্লাহ মুসলিমদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন যে বাহ্যিক দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও মুসলিমরাই হবে শ্রেষ্ঠ, যদি তারা হীনমন্য না হয়ে ঈমানের উপর দৃঢ় থাকার ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখে। তাই, উক্ত আয়াতটি আমাদের আজকেরদিনের স্লোগান হওয়া উচিত। আমাদের মানসিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলার এই একটি আয়াতই যথেষ্ট।
এ বিষয়ে আরও পড়তে চাইলেঃ
• সায়্যিদ ক্বুতুবের লেখা “Milestones” বইয়ের “The Faith Triumphant” অধ্যায়।
• RAND কর্পোরেশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘সিভিল ডেমোক্রেটিক ইসলাম’ [Amazon.com:Civil Democratic Islam: Partners, Resources, and Strategies…]
طارقمهنا
তারিক্ব মেহান্না
প্লাইমাউথ কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি
আইসোলেসন ইউনিট- সেল#১০৮
“আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।”
উক্ত আয়াতটিই আমাদের সময়ের স্লোগান হওয়া উচিত।
কিছু পশ্চিমা দা’ঈ তাদের লেকচারে হুদায়বিয়ার সন্ধি, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মাক্কী জীবন এসব নিয়ে এমনভাবে কথা বলেন যাতে মনে হয় মুসলিম উম্মাহর চলমান অধঃপতিত ও দুর্বল অবস্থাকেই যেন তারা নিজেদের নিয়তি হিসাবে মেনে নিয়েছেন। এমন একটা ভাব যেন এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আমাদের কিছুই করার নেই। এই চিন্তাধারাটি আমাকে ক্ষুব্ধ করে। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ICNA এর এক কনভেশনে একজন দা’ঈ ইসলামের কিছু স্পর্শকাতর বিষয় উল্লেখ করে মন্তব্য করলেন, “এককালে আমরা এইসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারতাম!”। সাথে সাথে তিনি ও উপস্থিত অন্যান্যরা উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন।
আমি দর্শকসারিতে বসে আনমনে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ভাবছিলাম, “আশ্চর্য! আপনি আপনার লেকচারেইসলামের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারছেন না এতে হাসির কী আছে! এর থেকে দুঃখজনক ব্যাপার আর কী হতে পারে যে, ইসলামের একজন দা’ঈ হয়েও আপনি আজকে একজন অনুগত ভৃত্যে পরিণত হয়েছেন?” তখন এই আয়াতটি আমার কানে বাজছিল।
কিন্তু এই আয়াতটিই কেন? কারণ উহুদের যুদ্ধের এক ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত মুহূর্তে এই আয়াতটি নাযিল হয়। সাহাবীদের অনেকেই তখন মনোবল হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন। তাদের মনে লুকিয়ে থাকা ভয় এবং দুর্বলতা- এই দুটি সহজাত অনুভূতির দিকে নির্দেশ করে এই আয়াতটি বলছে, ভীত হয়ো না, ভেঙে পড়ো না। এই আয়াত শিক্ষা দিচ্ছে ঈমানের উপর দৃঢ় থাকাটাই প্রকৃত বিজয়, যুদ্ধক্ষেত্রের পরাজয় তো বাহ্যিক পরাজয়, এটি সাময়িক ব্যাপার। কাজেই মু’মিনদের হতাশ বা দুঃখিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বা নিজেদের দুর্বল ভাবার কোনো অবকাশ নেই।
আজকের দিনেও এই আয়াতটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আয়াতটি আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, আমাদের বর্তমান বিশৃঙ্খল অবস্থা এবং শক্তিহীনতা সত্ত্বেও আমাদের নিজেদেরকে দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই। কেননা সত্যিকারের যুদ্ধ হল মনস্তাত্ত্বিক। মন এবং মগজই হচ্ছে যুদ্ধের আসল ক্ষেত্র। যতদিন পর্যন্ত আমাদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে বিশুদ্ধ ও ত্রুটিমুক্ত ঈমানধারী মুসলিম আছে ততদিন আমরা দুর্বল নই। বাহ্যিকভাবে আমাদের পরিস্থিতি যতই নড়বড়ে হোক না কেন।
যদি কোনো ব্যাক্তি, সমাজ, জাতি অথবা উম্মাহ বৈষয়িক দিক থেকে নিরাপদ ও সমৃদ্ধশালী হয় অথচ তার নিজস্ব চেতনা বা ঈমান-আক্বীদার সাথে আপস করে ফেলে, তবে সে বাহ্যিক সফলতা নিরর্থক। আবার, বাহ্যিক সাফল্যের পরোয়ানা করে যদি ঈমানের ব্যাপারে আপসহীন থাকাযায়,তখনও বাহ্যিক সাফল্য গৌণ হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে বলা হয়ে থাকে, যখনই কোনো সাম্রাজ্য তার নিজস্ব চেতনা ও মূল্যবোধের সাথে প্রতারণা করে তখনই তার পতন ঘটে। আর তাই উহুদে সামরিকভাবে পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও মুসলিমদেরকে আল্লাহ জয়ী বলেছেন, কেননা তারা নিজেদের চেতনা ও বিশ্বাসের উপর ছিলেন বলীয়ান। তাই, আজকে মুসলমানদের সবচেয়ে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ যে যুদ্ধে লড়তে হচ্ছে তা হল মতাদর্শের যুদ্ধ, মনস্তাত্ত্বিক জগতের হৃদয় ও মননের যুদ্ধ (battle for hearts and mind)।
আজকে মুসলিম উম্মাহকে পরাজিত করার লক্ষে কুফ্ফাররা আমাদের মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছে। তারা দিনে রাতে কাজ করে চলেছে ইসলামের জীবনীশক্তি, আমাদের শক্তির আসল উৎস, “ঈমান” কে আমাদের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে, যে ঈমান পশ্চিমাদের দাসত্বের কলুষতা থেকে মুক্ত। তারাচায় আমরা যেন নিজেদের দুর্বলতাকে নিয়তি ভেবে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিই। এভাবে তারা আমাদের কেবল বাহ্যিকভাবে নয়, বরং অন্তরকেও সাম্রাজ্যবাদী দাসত্বের শেকলে আবদ্ধ করতে চায়। আমাদের উচিত আমাদের এই দুর্বল জায়গাগুলো সারিয়ে তোলা। আমাদের মনে রাখতে হবে, গোলামির কলুষতা থেকে মুক্ত ঈমান বুকে ধারণ করার কারণেই আল্লাহ সাহাবিদের সম্মানিত করেছেন, যদিও দুনিয়াবী শক্তির বিবেচনায় তারা ছিলেন দুর্বল। আজকেও আমরা একইভাবে সম্মানিত হব, যদি আমরা পশ্চিমাদের দাসত্বের মনস্তাত্ত্বিক বেড়াজাল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসতে পারি।
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের মনে এই বিষয়টি দৃঢ়ভাবে গেঁথে দিতে চান যে, বস্তুগতভাবে আমরা যতই দুর্বল হই না কেন, আমাদের হৃদয়ে জেঁকে বসা ঔপনিবেশিক দাসসুলভ মানসিকতার (mental colonialism) কারণসমূহ চিহ্নিত করতে পারলে এবং আমাদের হৃদয় ও মনকে এই হীনমন্যতা থেকে বিশুদ্ধ রাখতে পারলে আমরাও সম্মানিত হব। এই আদর্শিক যুদ্ধজয় তখন অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
জেলখানাতে আমার কয়েক সেলপাশে 'জো' নামে এক মাদকব্যবসায়ী ছিল। কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেফতারের আগে সে কেমন করে তার মাদক ব্যবসা চালিয়েছিল, সে সম্বন্ধে আমাকে জো অনেক গল্প বলেছিল।
গল্পের শেষে জো দুঃখের সাথে বলেছিল, “এখন সরকার আমাদের সাথে ইচ্ছামত যা খুশী করতে পারে।”
আমি তাকে বলেছিলাম, “জো, তোমাকে একটা প্রশ্ন করি, 'তুমি কি তোমার স্ত্রীকে ভালবাসো?'।” সে উত্তর দিল, “অবশ্যই, আমি তাকে ভালবাসি।”
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “মনে কর কর্তৃপক্ষ তোমার উপর অনেক শারীরিক নির্যাতন চালালো। তারা কি তোমার মুখ থেকে এ কথা বের করতে পারবে, 'আমি আমার স্ত্রীকে ঘৃণা করি।'?”
সে বলল, “পারতেও পারে।”
আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম, “কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি তোমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলোকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে তারপরও কি তারা পারবে তোমার হৃদয়ের গভীর থেকে স্ত্রীর প্রতি তোমারভালবাসাকে মুছে ফেলতে?” জো উত্তর দিল, “কখনোই না।”
আমি শেষে বলেছিলাম, “এজন্যই আসলে তারা যা খুশী তা করতে পারে না। কারণ তোমার হৃদয় তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।”
আল্লাহ বলেন,
“তোমরা হীনবল ও দুঃখিত হয়ো না, বস্তুতঃ তোমরাই জয়ী থাকবে যদি তোমরা মু'মিন হও।” (সুরা আল-ইমরান আয়াত ১৩৫)
সুতরাং, বাহ্যিক দুর্বলতা সত্ত্বেও সর্বদা অগ্রগামিতা ধরে রাখা সম্ভব। কাজেই দা’ঈদের আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে বারবার ‘মাক্কী জীবন’ আর ‘হুদাইবিয়াহ’র তুলনা দিয়ে দুর্বলতা আর হতাশাকে স্বাভাবিক হিসাবে মেনে নেওয়ার বোধ তৈরি করে দেওয়া মোটেই উচিত নয়। বরং তাদের উচিত ভিন্ন আঙ্গিকে আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিকে উপস্থাপন করা। যেভাবে কুরআনের এই আয়াতে আল্লাহ মুসলিমদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন যে বাহ্যিক দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও মুসলিমরাই হবে শ্রেষ্ঠ, যদি তারা হীনমন্য না হয়ে ঈমানের উপর দৃঢ় থাকার ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখে। তাই, উক্ত আয়াতটি আমাদের আজকেরদিনের স্লোগান হওয়া উচিত। আমাদের মানসিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলার এই একটি আয়াতই যথেষ্ট।
এ বিষয়ে আরও পড়তে চাইলেঃ
• সায়্যিদ ক্বুতুবের লেখা “Milestones” বইয়ের “The Faith Triumphant” অধ্যায়।
• RAND কর্পোরেশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘সিভিল ডেমোক্রেটিক ইসলাম’ [Amazon.com:Civil Democratic Islam: Partners, Resources, and Strategies…]
طارقمهنا
তারিক্ব মেহান্না
প্লাইমাউথ কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি
আইসোলেসন ইউনিট- সেল#১০৮
Comment