Announcement

Collapse
No announcement yet.

নিয়ত বনাম ইমেজ সচেতনতা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • নিয়ত বনাম ইমেজ সচেতনতা

    আল্লাহ তা’আলা সূরাহ আলে-ইমরানের ১৮৮ তম আয়াতে বলেছেনঃ

    "তুমি মনে করো না, যারা নিজেদের কৃতকর্মের উপর আনন্দিত হয় এবং নিজেরা যা করেনি, তার জন্যেও প্রশংসিত হতে ভালবাসে, তুমি কখনো ভেবো না এরা (বুঝি) আল্লাহর আযাব থেকে অব্যাহতি পেয়ে গেছে। বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।'

    আবু সাঈদ খুদরী (রা) এই আয়াতের পটভূমি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন জিহাদের উদ্দেশ্যে রওনা হতেন, তখন এক দল মুনাফিক পেছনে পড়ে থাকতো আর জিহাদে শামিল হওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেছে ভেবে খুব প্রফুল্ল বোধ করতো। যেই না রাসূলুল্লাহ ﷺ লড়াই শেষে ফিরে আসতেন, এই মুনাফিকের দল যার যার কৈফিয়ত নিয়ে তাঁর সামনে হাজির হত। ইসলামের জন্য নিজের আন্তরিকতা প্রমাণে তখন তারা ব্যতিব্যস্ত। এদিকে মদীনাবাসীরা ভাবতো তারা হয়তো জিহাদে গেছে, তাই তারা এই লোকগুলোর প্রশংসা করতো। মুনাফিকরা নিজেদের গুণগান শোনার জন্যে মুখিয়ে থাকতো, তারা আবার প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে কী না! অথচ যে কাজের জন্য তাদের তারিফ করা হচ্ছে, তারা সে কাজটি পর্যন্ত করে নি।

    যদিও আয়াতটি একটি ইবাদতের ব্যাপারে (জিহাদ) নাযিল হয়, আমাদের সামাজিক জীবনের জন্য খুব অসামান্য একটি শিক্ষা এ আয়াতের মাঝে লুকিয়ে আছে।
    আমরা চাইলে শিক্ষণীয় সেই নির্যাসটুকু বের করে নিজেদের চরিত্র গঠনের কাজে লাগাতে পারি। আমাদের সময়ে এই শিক্ষাটির গুরুত্ব অনেক বেশি, কেননা আজ আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে নিজেদের "ইমেজ" বা ভাবমূর্তি নিয়ে সবাই প্রয়োজনের চাইতে বেশি সচেতন। "অমুক আমাকে নিয়ে কী ভাবলো, তমুক আমাকে নিয়ে কী চিন্তা করলো, সমাজ আমাকে নিয়ে কী মনে করলো!" - এই চিন্তায় সবাই অস্থির। কখনো কখনো সেই অস্থিরতা এতোটাই বেশি লাগামছাড়া হয় যে অন্যের প্রশংসা লাভের আশায়, আমরা নিজেরা যা নই তা প্রমাণ করার জন্য, নিজেকে জাহির করার জন্য আমরা তৎপর হয়ে পড়ি। প্রতিযোগিতায় পূর্ণ এ দুনিয়ায় মেকি চেহারা আর মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে হলেও অন্যের সম্মান আর প্রশংসা কুড়োনোর প্রবণতাটা যেন বেড়েই চলেছে। এই আয়াত আমাদেরকে কৃত্রিমতার খোলস থেকে বের হয়ে আসার শিক্ষা দেয় এবং সেসব মুনাফিক্বদের মুখোশ উন্মোচন করে, যারা কিনা নিজেরা যতোটা না তারিফের যোগ্য, তারচেয়েও বেশি গুণকীর্তন খুঁজে বেড়াতো।

    একজন মুসলিমের নিজের উপর ততটুকু আত্মবিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন যতটা হলে সে নিজেকে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে দেখানোর প্রয়োজন বোধ করবে না। ইমাম আহমাদকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিলো যে তিনি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জ্ঞানার্জন করেন কি না, উত্তরে তিনি যা বললেন সেখানে নিজেকে বড় দেখানো তো দূরে থাক, আল্লাহর জন্য বিশাল কিছু একটা করে ফেলছেন সেই ভাবটুকু পর্যন্ত ছিল না! তিনি কেবলই বিনয়ভরে বলেছিলেন, "আসলে আমার কাছে হাদীসগুলো ভালো লেগেছিলো, তাই আমি সেগুলি সংগ্রহ করতে শুরু করেছিলাম, এই আর কী!" আবু বকর আস-সিদ্দীক্ব (রা) কে কেউ প্রশংসা করলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে দু’আ করতেনঃ "হে আল্লাহ! তারা আমাকে যা মনে করে, আমাকে তারচেয়েও উত্তম হওয়ার তাওফিক্ব দান করুন এবং তারা আমার সম্পর্কে যা জানে না, সে জন্যে আমাকে ক্ষমা করে দিন।" অথচ নবী-রাসূলদের পরে দুনিয়ার বুকে জন্ম নেয়া মানুষগুলোর মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ! সুতরাং প্রমাণিত হচ্ছে এটিই যে সালাফগণ মানুষের কাছে নিজেদেরকে খুব বড় মাপের কিছু প্রমাণে মোটেও ব্যস্ত ছিলেন না। সত্যি বলতে কী, তারা এই "ইমেজ" বা ভাবমূর্তি নিয়ে কোন চিন্তাই করতেন না। তারা ছিলেন বাস্তব জগতের নিতান্তই কিছু সাদাসিধে বাসিন্দা, মাটির মানুষ, মানুষকে দেখানোর ব্যাপারে অনাগ্রহী, শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে তটস্থ।

    আপনি যদি এই মানুষগুলোর মতো হতে চান তাহলে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না, শুধু আপনি যাদেরকে অভিভূত করার সংগ্রামে লিপ্ত, সেই মানুষগুলোকে তাদের সত্যিকার আসনে বসিয়ে দিলেই চলবে! হ্যাঁ, আমি বুঝাতে চাচ্ছি যে তারাও ঠিক আপনার মতোই রক্ত-মাংসের মানুষ, বীর্য ও ডিম্বাণু থেকে যাদের জন্ম, দুর্বল, অসহায়, সীমাবদ্ধ, এবং ত্রুটিপূর্ণ। এ সুবিশাল বিশ্ব চরাচরে তারা কতই না তুচ্ছ! আর তাদের তুলনায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কতো বেশি শক্তিশালী, কতটা ক্ষমতাধর, সেটা নিয়ে কখনো ভেবে দেখেছেন? তবে কে আপনার সময়, শ্রম ও মনোযোগ পাওয়ার অধিকতর দাবীদার? একবার যদি আপনার অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভয় ও শ্রদ্ধা স্থান পায়, তাহলে দেখবেন, আস্তে আস্তে অন্যরা কে কী ভাবলো সেটা নিয়ে আপনি কম মাথা ঘামাচ্ছেন। তখন একমাত্র আল্লাহ তা’আলার দিকে আপনি অধিক মনোযোগী হয়ে উঠবেন। সত্যি বলতে কী, আপনি যদি এমনটি করতে পারেন, কিছু-না-চাইতেই দেখবেন যে মানুষের চোখে আপনি মহৎ একজন হয়ে গেছেন, সবার অন্তরে স্থান করে নিয়েছেন। মানুষ সাধারণত খাঁটি ব্যক্তিত্বদের প্রতি আকৃষ্ট হয়, যারা লোকের প্রশংসা কুড়োতে মরিয়া নয়, তারা যেমন, তেমনই থাকে। আপনি লক্ষ করবেনঃ এ মানুষগুলো নিজের ব্যক্তিত্বের কারণেই লোকের সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হয়। লোকেরা তাকে এই-সেটা ভাবুক এটা তার চাওয়া নয় এ কারণেই তাকে কোন আলগা ভাব নিতে হয় না।

    এখানে প্রথম ব্যাপারটি জুড়ে ছিল এই "ইমেজ সচেতনতা" অন্যদের উপর কী প্রভাব বিস্তার করতে পারে সে আলোচনা। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, এই নিন্দনীয় স্বভাবটি স্বয়ং আপনার উপর কী প্রভাব ফেলে তা বোঝার চেষ্টা করা। আপনি যখন দেখবেন মানুষ আপনাকে যা মনে করেছে আপনি আসলে তা নন, তখন নিজের ভেতর মারাত্মক অশান্তি আর বিশৃঙ্খলা বোধ করবেন, অনেকটা নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করার মতো। বিশ্বের নামকড়া সেলিব্রিটিদের মধ্যে হতাশা, মাদকাসক্তি এবং আত্মহত্যার আধিক্যের দিকে খেয়াল করুন! তারা যখন আবিষ্কার করে বাহিরের জগতের সামনে তার যে সেলিব্রেটি রুপ উপস্থাপন করা হয়, তার সাথে তাদের একান্ত ব্যাক্তিগত জীবনের বিস্তর ফারাক আছে, তখনই একরাশ বিষণ্ণতা তাদের উপর জেঁকে বসে। তারা যে মেকি জীবন যাপনের ভান করছে, সেটি কেবল-ই একটি মিথ্যে ছলনা, একটি অলীক অভিনয় - সেই তেঁতো অনুভূতি তাদেরকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। এই ব্যাপারটি আরেকটু ছোট পরিসরে ঘটে তাদের সাথেও, যারা নিজেরা বাস্তবে যা নয়, তারচেয়েও বড় করে নিজেকে মানুষের সামনে হাজির করতে চায়।

    আপনি হয়তো ভাবছেন যে মানুষকে বোকা বানাতে পেরে, নিজেদেরকে জাহির করে এ লোকগুলো খুব আনন্দবোধ করে। কিন্তু ২০১০ সালের জুন মাসে 'সাইকোলজিকাল সায়েন্স" নামক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি রিসার্চ অনুযায়ী তার উল্টোটাই প্রমাণিত হয়। এখানে একদল নারীর উপর অনুসন্ধান করা হয়, তাদের প্রত্যেককে দেয়া হয় একটি করে ব্র্যান্ডের সানগ্লাস (ক্লো ব্র্যান্ডের সানগ্লাস), যার মূল্য ৩০০ ডলার। কিছু কিছু স্বেচ্ছাসেবীকে বলা হয় তারা যে সানগ্লাসটি পরেছে, তা আসল ব্র্যান্ডের চশমা, আর অন্যদেরকে বলা হয় এগুলো আসলে নকল। এরপর তাদের সবাইকে একটি গণিত কুইজ দেয়া হলো, সেখানে জিতলে ১০ ডলার পুরস্কার, আর তারা নিজেরা নিজেদের কুইজ মার্কিং করবে। দেখা গেলো, যারা জানতো তারা আসল ব্র্যান্ডের চশমা পরেছে, তাদের মাঝে মাত্র ৩০ ভাগ নিজেদের নম্বর প্রদানে জালিয়াতি করেছে, আর যারা ভেবেছিল তারা নকল চশমা পরেছে, তাদের শতকরা ৭০ জনই মিথ্যের আশ্রয় নেয়।

    পরিসংখ্যানের দ্বিতীয় পর্যায়ে আরেকটি কাজ দেয়া হয়ঃ কম্পিউটার স্ক্রিনের ভেতর কিছু বিন্দু গণনা করা; কে কোন বিন্দু পর্যন্ত গুনেছে আছে তা নির্ধারণ করবে সে কতো ডলার পুরস্কার পাবে। এখানেও দেখা গেলো, যারা নকল সানগ্লাস পরে আছে বলে ভেবেছে, তারা গণণাকৃত বিন্দুর অবস্থান নিয়ে অনেক বেশি মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছে, অথচ যারা ভেবেছে তাদের সানগ্লাস আসল তারা এতোটা করে নি। তৃতীয় অংশ ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব যেখানে তাদেরকে নৈতিকতা, সততা প্রভৃতি বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়। এখানেও প্রকাশ পেলো যারা জানতো তারা নকল জিনিস পরিহিত, তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্যদের ব্যাপারেও একই রকম ধারণা পোষণ করে, অন্যদেরকে অসৎ ও নীতিহীন মনে করে। চতুর্থ ভাগে তাদেরকে এমন কিছু প্রশ্ন করা হয় যার মাধ্যমে বোঝা যায় একজন নিজের থেকে কতোখানি দূরত্ব বোধ করছে। এখানেও একই ব্যাপার! যারা জানতো তাদের মাঝে নকল কিছু নেই, তাদের তুলনায় যারা ভেবেছে নকল গ্লাস পরেছে, তারা নিজেদের থেকে বেশি দূরত্ব বোধ করছিল।

    চমকপ্রদ এই পরিসংখ্যানটিও এ উপসংহার টানে যে, নকল জিনিসপত্র পরে একজন মানুষ কাজেকর্মে এবং মনের দিক থেকেও তিক্ততা অনুভব করে, অন্যদিকে যারা জানে তারা আসলটাই পরেছে, তারা হয় অধিক সৎ, নীতিবান ও পরিতৃপ্ত।

    طارق مهنا
    তারিক মেহান্না
    প্লাইমাউথ কারেকশনাল ফ্যাসিলিটি
    আইসোলেশন ইউনিট - সেল নম্বর # ১০৮


  • #2
    ভাল লেগেছে

    Comment


    • #3
      খুব ভাল লেগেছে
      দ্বীনকে আপন করে ভালোবেসেছে যারা,
      জীবনের বিনিময়ে জান্নাত কিনেছে তারা।

      Comment


      • #4
        খুবই ভাল লেগেছে।
        জাঝাকাল্লাহ
        সত্যের পথে মৃত্যুর এক অদম্য বাসনা আমাদের থামতে দেই না।

        Comment

        Working...
        X