আসুন, রমযানে বেশি বেশি ইবাদতের মাধ্যমে জিহাদের ইমানী প্রস্তুতি গ্রহণ করি।
إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُمْ بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ التَّائِبُونَ الْعَابِدُونَ الْحَامِدُونَ السَّائِحُونَ الرَّاكِعُونَ السَّاجِدُونَ الْآمِرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّاهُونَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَالْحَافِظُونَ لِحُدُودِ اللَّهِ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
উপরোক্ত আয়াতসমূহে প্রথমে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের থেকে তাদের জানমাল কিনে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে, তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করবে, মারবে ও মরবে, তাওরাত, ইন্জীল ও কুরআনে (তাদের সাথে এই) অঙ্গীকার করা হয়েছে’। … এরপর আল্লাহ তায়ালা মুজাহিদদের কিছু গুণাবলী উল্লেখ করেছেন যে, ‘তারা তাওবাকারী, ইবাদতগুজার, (আল্লাহ তায়ালার) প্রশংসাকারী, (জিহাদ, ইলম অর্জন ইত্যাদি দ্বীনি কাজে) সফরকারী, রুকু ও সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশকারী, অসৎকাজ হতে নিষেধকারী, আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ পালনকারী। আপনি (এমন) মুমিনদের (দুনিয়াতে বিজয় ও আখেরাতে সওয়াবের) সুসংবাদ দেন’। (সুরা তাওবা, আয়াত, ১১১-১১২) আয়াত থেকে আমরা বিজয়ের সুসংবাদপ্রাপ্ত মুজাহিদদের কিছু গুনাবলী জানতে পারলাম, যার মধ্যে কয়েকটি গুণ হলো,
১. الْعَابِدُونَ ইবাদতগুজার, অর্থাৎ মুজাহিদগণ বেশি বেশি ইবাদত করবেন।
২. الرَّاكِعُونَ السَّاجِدُونَ রুকু ও সিজদাকারী, অর্থাৎ মুজাহিদগণ সর্বোত্তম ইবাদত নামাযের প্রতি যত্নবান হবেন, ওয়াক্ত মত জামাতের সাথে নামায পড়বেন, বেশি বেশি নফল নামায পড়বেন এবং কিয়ামুল লাইলে অভ্যস্ত হবেন।
৩. الْحَامِدُونَ আল্লাহ তায়ালা প্রশংসাকারী, অর্থাৎ তারা তাসবীহ-তাহমিদের মাধ্যমে বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালার যিকির করবেন, আর সর্বোত্তম যিকির তো কুরআন তেলাওয়াত।
সুতরাং রমযান মাসে এ গুণাবলী অর্জন করার জন্য আমাদের সচেষ্ট হওয়া উচিত, শাইখ আব্দুল কাদের العمدة في إعداد العدة কিতাবে ইবনুল কাইয়িম রহিমাহুল্লাহর উদ্ধতি দিয়ে বলেছেন, ‘মুমিনরা যে কখনো কখনো যুদ্ধে পরাজিত হয় এর কারণ হলো তারা যুদ্ধের শর্ত ইমানী বা আসকারী অর্থাৎ আধ্যাত্মিক বা সামরিক প্রস্তুতিতে ক্রটি করেছে, যদি এর কোন একটিতে ক্রটি না হয় তাহলে আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা অনুযায়ী মুমিনরা কখনোই পরাজিত হবে না’। আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَأَنْتُمْ الأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা (পূর্ণাঙ্গ) মুমিন হও (এবং ইমানের তাকাযা অনুযায়ী সামরিক ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি পূর্ণরুপে গ্রহণ করো)। -সুরা আলে ইমরান, আয়াত, ১৩৯
উহুদ যুদ্ধে গুনাহের কারণেই মুমিনদের পরাজয় হয়েছিলো, আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمْ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا
দুই বাহিনী সম্মুখীন হবার দিন যারা পলায়ন করেছে, শয়তান তাদেরকে তাদের কিছু গুনাহের কারণেই পদস্খলিত করেছে। -সুরা আলে ইমরান, আয়াত, ১৫৫।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
أَوَلَمَّا أَصَابَتْكُمْ مُصِيبَةٌ قَدْ أَصَبْتُمْ مِثْلَيْهَا قُلْتُمْ أَنَّى هَذَا قُلْ هُوَ مِنْ عِنْدِ أَنْفُسِكُمْ
যখন তোমাদের উপর এমন আঘাত আসলো যার দ্বিগুন আঘাত তোমরা করেছিলে, তখন তোমরা বলে উঠলে, এটা কেন হলো? (অর্থাৎ আল্লাহ তো আমাদের বিজয়ের ওয়াদা করেছেন, তাহলে আমরা কেন পরাজিত হলাম?) হে রাসূল আপনি বলুন, এটা তোমাদের নিজেদের কৃতকর্মের কারণে। (অর্থাৎ তোমরা রাসূলের আদেশ অমান্য করে যে অন্যায় করেছো, এর কারণেই তোমরা পরাজিত হয়েছো, নতুবা প্রথম অবস্থায় তো আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করেছিলেন এবং তোমাদের বিজয় দান করেছিলেন, যেমনটা আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেছেন, وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللَّهُ وَعْدَهُ إِذْ تَحُسُّونَهُمْ بِإِذْنِهِ حَتَّى إِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِي الْأَمْرِ وَعَصَيْتُمْ আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করেছেন, যখন তোমরা কাফেরদের হত্যা করছিলে, অতপর যখন তোমরা মতভেদ করে দূর্বল হয়ে পড়লে এবং (রাসূলের আদেশ অমান্য করে) গুনাহে লিপ্ত হলে (তখন যুদ্ধের ঘুটি পাল্টে গেল)
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য শায়েখ আব্দুল কাদের রচিত আলউমদাহ গ্রন্থের الأصول الخمسة لتحقق سنة النصر أو تخلفها এই অধ্যায়টি (পৃ: ২১৫-২৩৬ পৃষ্ঠা) দেখতে পারেন। এখানে শায়েখ ইমানী প্রস্তুতির গুরুত্বের ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে খুবই সুন্দর আলোচনা করেছেন।
অধিকন্তু জিহাদের মতো একটি কষ্টকর ইবাদত পালন করার জন্য যথেষ্ট আধ্যাত্মিক শক্তির প্রয়োজন। আর এই আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন হয় বেশি বেশি ইবাদত, বিশেষকরে দীর্ঘ কিয়ামুল লাইলের মাধ্যমে। শায়েখ আবু মুহাম্মদ আলমাকদিসী বলেন,
ولن يستطيع العبد مواجهة الشرك وأهله ولن يقوى على التبرؤ منهم وإظهار العداوة لباطلهم إلا بعبادة الله حق عبادته، ولقد أمر الله عز وجل نبيه محمداً صلى الله عليه وسلم بتلاوة القرآن وقيام الليل في مكة وأعلمه بأن ذلك هو الزاد الذي يعينه على تحمل أعباء الدعوة الثقيلة وذلك قبل قوله: {إنا سنلقي عليك قولاً ثقيلاً} [المزمل: 5]، فقال: {يا أيها المزمل قم الليل إلا قليلا، نصفه أو انقص منه قليلاً أو زد عليه ورتل القرآن ترتيلاً} [المزمل: 1 - 4]، فقام صلوات الله وسلامه عليه وقام معه أصحابه حتى تفطرت أقدامهم .. إلى أن أنزل سبحانه التخفيف في آخر الآيات.
وإن هذا القيام بتلاوة آيات الله عز وجل وتدبر كلامه .. لخير زاد ومعين للداعي، يثبته ويعينه على مشاق الدعوة وعقباتها
..وإن هذا القيام بتلاوة آيات الله عز وجل وتدبر كلامه .. لخير زاد ومعين للداعي، يثبته ويعينه على مشاق الدعوة وعقباتها
বান্দা কখনোই শিরক ও মুশরিকদের মোকাবেলা করতে পারবে না, এবং তাদের থেকে বারাআত করতে পারবে না, যতক্ষণ না সে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত যথাযথভাবে করবে, আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মক্বায় তাহাজ্জুদে কুরআন তেলাওয়াতের আদেশ দিয়েছিলেন, এবং তাকে জানিয়েছিলেন যে, এই ইবাদত দাওয়াতের গুরুদ্বায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তার জন্য সহায়ক হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ওহে চাদর আবৃত (রাসূল) আপনি রাতের কিছু অংশ ব্যতীত (পুরো সময়) ইবাদত করুন। অর্ধ রাত কিংবা তার চেয়ে কিছু কম বা বেশি (সময় ইবাদত করুন) (এরপর আল্লাহ তায়ালা এই আদেশের কারণস্বরুপ বলেন) নিশ্চয়ই আমি আপনার উপর এক ভারী কথা (অর্থাৎ কুরআন) অবতীর্ণ করবো। সুরা মু্যযাম্মিল, আয়াত, ১-৫
তাহাজ্জুদে কুরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহর আয়াত নিয়ে তাদাব্বুর করা হলো দায়ীদের জন্য সর্বোত্তম পাথেয় যা তাদেরকে দাওয়াতের পথে অবিচল রাখবে এবং দাওয়াতের কষ্টক্লেশ ও প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিতে তাদের সহায়ক হবে। -মিল্লাতু ইবরাহীম, পৃ: ১৫
মুহাম্মদ কুতুব রহিমাহুল্লাহ (মৃ: হি.) ও مفاهيم ينبغي أن تصحح কিতাবে দ্বীন কায়েমের পথে পাথেয় হিসেবে ইবাদতের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জনের আলোচনা করেছেন। (পৃ: ২১৪-২১৫) তাই আমাদের জন্য ইবাদতের মৌসুম এই রমযানে বেশি বেশি ইবাদত করে জিহাদের জন্য ইমানী প্রস্তুতি গ্রহণ করা আবশ্যক। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Comment