শয়তানের চক্রান্ত নিতান্তই দুর্বল
মুমিনগণ আল্লাহর পথে লড়াই করে। তারা আল্লাহর সৈনিক। তাদের সহায়তা করেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। পক্ষান্তরে কাফেররা লড়াই করে শয়তানের পথে। তারা শয়তানের বাহিনি। তাদের সহায়তা করে শয়তান। আর আল্লাহ তাআলার কৌশলের সামনে শয়তানের চক্রান্ত নিতান্তই বেকার। অতএব, হে মুমিনগণ! ভয় কিসের? আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন। শয়তানের বাহিনির বিরুদ্ধে নেমে পড়। আল্লাহ তাআলা শয়তানের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেবেন। তোমাদের সাহায্য করবেন। বিজয় দান করবেন।
***
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا (75) الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُوا أَوْلِيَاءَ الشَّيْطَانِ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا (76)- النساء
“৭৫. তোমাদের কী হলো! তোমরা কিতাল করছো না আল্লাহর রাস্তায় এবং অসহায় নর-নারী ও শিশুদের (উদ্ধারের) জন্য? যারা বলে, ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে বের করে নিন এ জনপদ থেকে, যার অধিবাসীরা যালিম। আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে কোনো অভিভাবক নির্ধারণ করে দিন এবং নিযুক্ত করে দিন আপনার পক্ষ থেকে কোনো সাহায্যকারী।৭৬. যারা ঈমানদার তারা লড়াই করে আল্লাহর রাহে (অতএব, তিনি তাদের বন্ধু এবং তিনি তাদের নুসরত করবেন)। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পথে (এবং শয়তানের শক্তিতে)। সুতরাং (হে ঈমানদারগণ!) তোমরা লড়াই কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে (আল্লাহর শক্তিবলে তোমরাই বিজয়ী হবে)। (আর) শয়তানের চক্রান্ত তো নিতান্তই দুর্বল (আল্লাহর কৌশলের সামনে যার কোনো পাত্তাই নেই)।” –নিসা।
***
৭৫ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা জিহাদ আবশ্যক হওয়ার পক্ষে দু’টি কারণ দর্শিয়েছেন:
এক. আল্লাহ তাআলার দ্বীনের বুলন্দি। যেন দুনিয়ার প্রতিটি কাফের হয়তো মুসলমান হয়ে যায়, নয়তো ইসলামী শাসনের অধীনে চলে আসে।
দুই. অসহায়, নির্যাতিত ও বন্দী মুসলমানদের উদ্ধার।
এ দু’টি বিষয়ের প্রত্যেকটিই জিহাদ ফরয হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এতদসত্বেও জিহাদ না করে বসে থাকবে যারা, আল্লাহ তাআলা তাদের তিরস্কার করেছেন। দুনিয়াবি ও পরকালীন বিভিন্ন আযাব-গজব, শাস্তি ও লাঞ্চনার ঘোষণা দিয়েছেন।
***
আমরা আয়াতে কারীমাটি আবার লক্ষ করি,
الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُوا أَوْلِيَاءَ الشَّيْطَانِ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا
“যারা ঈমানদার তারা লড়াই করে আল্লাহর রাহে (অতএব, তিনি তাদের বন্ধু এবং তিনি তাদের নুসরত করবেন)। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পথে (এবং শয়তানের শক্তিতে)। সুতরাং (হে ঈমানদারগণ!) তোমরা লড়াই কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে (আল্লাহর শক্তিবলে তোমরাই বিজয়ী হবে)। (আর) শয়তানের চক্রান্ত তো নিতান্তই দুর্বল (আল্লাহর কৌশলের সামনে যার কোনো পাত্তাই নেই)।”
প্রথমে বলা হয়েছে, ‘যারা ঈমানদার তারা লড়াই করে আল্লাহর রাহে’।
অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমাদের লড়াই তো হবে আমার দ্বীনের বুলন্দির জন্য। আমার শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য। শয়তানের রাজত্ব খতম করে যমিনে আমার জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য। আর যারা আমার রাস্তায় নিজেদের জান-মাল বিলিয়ে দেবে তারা আমার দোস্ত। আমার বন্ধু। আমার আপনজন।
আল্লাহর রাস্তায় জান-মাল উৎস্বর্গকারীরা কেনইবা আল্লাহর বন্ধু হবে না, অথচ দুনিয়াতে আমরা তো দেখি কেউ কারো প্রতি আন্তরিক থাকলেই, তার প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ালেই তাকে বন্ধু গণ্য করা হয়। তাহলে যারা আল্লাহর জন্য নিজেদের জান-মাল সব বিলিয়ে দেবে তারা আল্লাহর বন্ধু না হয়ে পারে কিভাবে? আয়াতের পরের অংশেই এ বাস্তবতাটি তুলে ধরেছেন,
‘যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। সুতরাং (হে ঈমানদারগণ!) তোমরা লড়াই কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে’।
যারা তাগুতের পথে তথা শয়তানের পথে লড়াই করে তাদেরকে শয়তানের বন্ধু আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাহলে যারা আল্লাহর পথে লড়াই করবে, তারা কেনো আল্লাহর বন্ধু হবে না?!
রাগিব ইস্পাহানি রহ. (৫০২হি.) বলেন,
نبّه أن من قاتل في سبيل الله فهو وليّه. ومن قاتل في سبيل الطاغوت فهو ولي الشيطان. اهـ
“আল্লাহ তাআলা বুঝাতে চেয়েছেন, যে আল্লাহর পথে কিতাল করে সে আল্লাহর অলী (বন্ধু) আর যে তাগুতের পথে কিতাল করে সে শয়তানের অলী (বন্ধু)।” –তাফসিরে রাগিব আস্পাহানি ১৩২৬
তাহলে যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা আল্লাহর অলী, আল্লাহর বন্ধু। আর যারা শয়তানের পথে লড়াই করে তারা শয়তানের অলী, শয়তানের বন্ধু। আর বন্ধুর দায়িত্ব বন্ধুকে সহায়তা করা। অতএব, আল্লাহর বাহিনিকে নুসরত করার দায়িত্ব আল্লাহ তাআলার আর শয়তানের বাহিনিকে সহায়তা করবে শয়তান।
এবার তাহলে দু’টি পক্ষ হয়ে গেল:
- এক পক্ষে আল্লাহ তাআলা ও তার বাহিনি।
- অপর পক্ষে শয়তান ও তার বাহিনি।
আয়াতে এ বাস্তবতাটিই আল্লাহ তাআলা তার বন্ধুদের সামনে তুলে ধরেছেন। তার বন্ধুদের বলছেন, তোমরা আমার বন্ধু। তোমাদের কোনো ভয় নেই। আমি তোমাদের সাথে আছি। আমি তোমাদের নুসরত করবো। তোমাদের নুসরত করার দায়িত্ব স্বয়ং আমার। যেমনটা অন্য একাধিক আয়াতে স্পষ্ট এসেছে,
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ
“মুমিনদের নুসরত করা আমার আবশ্যকীয় দায়িত্ব।” –রূম ৪৭
“মুমিনদের নুসরত করা আমার আবশ্যকীয় দায়িত্ব।” –রূম ৪৭
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহবশত নিজের উপর অবশ্য কর্তব্য স্থির করে নিয়েছেন যে, তিনি তার মুমিন বান্দাদের নুসরত করবেন। আর আল্লাহ তাআলা তার কর্তব্যের বিপরীত করবেন না কিছুতেই।
অন্য আয়াতে বলেন,
قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ
“তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদের আযাব দেবেন। তাদেরকে অপদস্থ করবেন। তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে নুসরত করবেন এবং মুমিন কওমের অন্তর জুড়িয়ে দেবেন।” –তাওবা ১৪
আল্লাহ তাআলা তার বন্ধুদের নুসরতে আশ্বস্ত করলেন। আশ্বস্ত করলেন, তিনি তাদের সাথে আছেন। অতএব, ভয়ের কিছু নেই।
***
এবার রয়ে গেল শয়তান। শয়তান তো তার বন্ধুদের নুসরতে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। যত রকমের কৌশল করা যায় সবই সে করবে। ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর ষড়যন্ত্র পাকাবে। যা দেখে মুমিনের হিম্মতে ভাটা পড়তে পারে। চতু্র্মুখী ষড়যন্ত্রের মুখে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে পারে। শয়তানের বাহিনি সব সময়ই বড় হয়ে থাকে। বাহ্যিক চাকচিক্য আর সরঞ্জামাদিও থাকে অনেক বেশি। তাদের রয়েছে এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যার সামনে গোটা দুনিয়া যেন তুচ্ছ হয়ে পড়েছে। পাহাড়-পর্বতে থাকি: আমরা যেন তাদের হাতের মুটোয়। সমূদ্রের তলদেশও যেন তাদের আওতার বাহিরে নয়। যেমটা আল্লাহ তাআলা জানিয়েছেন,
وَإِنْ كَانَ مَكْرُهُمْ لِتَزُولَ مِنْهُ الْجِبَالُ
“আর তাদের চক্রান্ত (ও কৌশল) তো এমন (ভয়ানক) যে, তাতে পাহাড়-পর্বতও টলে যায়।” –ইব্রাহীম ৪৬
এ ভয়ানক পরিস্থিতির মুখে মুমিন কিভাবে নিজেকে টিকিয়ে রাখবে?
আল্লাহ তাআলা অভয় দিচ্ছেন, কোনো ভয় নেই। যত ভয়ানক চক্রান্তই তারা করুক-
إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا
“কোনো সন্দেহ নেই, (আল্লাহর কৌশলের সামনে) শয়তানের চক্রান্ত নিতান্তই দুর্বল।”
“কোনো সন্দেহ নেই, (আল্লাহর কৌশলের সামনে) শয়তানের চক্রান্ত নিতান্তই দুর্বল।”
আমার শক্তির সামনে, আমার কৌশলের সামনে তাদের এসবের কোনোই মূল্য নেই। আমি এদের সব কিছুকে বানচাল করে দেবো। নাস্তানুবাদ করে দেবো। শেষে ফলাফল দাঁড়াবে এমন, যেমনটা আল্লাহ তাআলার চিরাচরিত সুন্নত-
قَدْ مَكَرَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَأَتَى اللَّهُ بُنْيَانَهُمْ مِنَ الْقَوَاعِدِ فَخَرَّ عَلَيْهِمُ السَّقْفُ مِنْ فَوْقِهِمْ وَأَتَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُونَ
“নিশ্চয় তাদের পূর্ববর্তীরাও চক্রান্তের জাল বুনেছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাদের চক্রান্তের প্রাসাদের ভিত্তিমূলে আঘাত করলেন। এরপর তাদের মাথায় ছাদ ধ্বসে পড়ল তাদের উপর দিক থেকে এবং তাদের উপর আযাব এসে পড়লে এমন স্থান থেকে, যার কল্পনাও তারা করেনি।” –নাহল ২৬
***
এখানে লক্ষণীয় যে, শয়তানের চক্রান্তের অসাড়তা বুঝাতে আল্লাহ তাআলা দু’টি তাকিদ ব্যবহার করেছেন,
এক.إِنَّ
দুই. كَانَ
إِنَّ শব্দটি এমন স্থানে ব্যবহার হয়, যেখানে কোনো সন্দেহ-সংশয় হতে পারে। উক্ত সংশয় দূর করে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য إِنَّ ব্যবহার হয়।
আয়াতে إِنَّ ব্যবহার করে আল্লাহ তাআলা বুঝিয়েছন, শয়তানের চক্রান্ত যে দুর্বল এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আর আল্লাহর ভাষায় যাকে সন্দেহাতিত দুর্বল বলা হয়েছে, তাতে সন্দেহ করার কোনোই অবকাশ নেই। অতএব, শয়তানের বাহিনির প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, তাদের দলবল যতই বড় হোক, এমনকি সমূদ্রের তলদেশও যদি তাদের আয়ত্বাধীন থাকে- তথাপি কোনো সন্দেহ নেই এবং সন্দেহের কোনো অবকাশও নেই যে, তাদের কৌশল, তাদের শক্তি, তাদের প্রযুক্তি আল্লাহর শক্তি ও কৌশলের সামনে নিতান্তই দুর্বল, একান্ত তুচ্ছ এবং একেবারেই মূল্যহীন।
আর كَانَ শব্দটি ব্যবহার হয় লুযুম ও দাওয়াম বুঝানোর জন্য। অর্থাৎ শয়তানের চক্রান্ত ও কৌশলের সাথে দুর্বলতার সিফাতটি এমনভাবে সার্বক্ষণিক জড়িত যে, তা থেকে তা মুক্ত ছিল না কোনো দিন আর হবেও না। অর্থাৎ শয়তানের মাঝে চক্রান্ত নামক সিফাতটি যেদিন থেকে সৃষ্টি হয়েছে সেদিন থেকেই তা দুর্বল। দুর্বল অবস্থায়ই তার সৃষ্টি আর দুর্বলতাই তার চিরন্তন বৈশিষ্ট্য, যা থেকে কোনো দিন তা মুক্ত হতে পারবে না। শয়তান যেদিন থেকে বনী আদমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে শুরু করেছে সেদিন থেকে নিয়ে কিয়ামত অবধি তার সকল ষড়যন্ত্র আল্লাহ তাআলার সামনে নিতান্তই দুর্বল। এর কোনো মূল্যই আল্লাহ তাআলার সামনে নেই। আল্লাহ তাআলা মূহুর্তে তা বানচাল করে দিতে পারেন। এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনোই অবকাশ নেই।
অতএব, আয়াতের অর্থ দাঁড়াবে,
‘এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই এবং সন্দেহের কোনো অবকাশও নেই যে, আল্লাহ তাআলার কৌশলের সামনে শয়তানের সকল যামানার সর্বসময়ের সর্বপ্রকার চক্রান্ত, সর্বপ্রকার কৌশল ও প্রচেষ্টা নিতান্তই নগণ্য ও তুচ্ছ। আল্লাহ তাআলা তার মুমিন বান্দাদের নুসরতে শয়তানের যাবতীয় প্রচেষ্টা মূহুর্তে বেকার ও নাস্তানুবাদ করে দিতে পারেন’।
ইবনে আশূর রহ. (১৩৯৩হি.) বলেন,
أكد الجملة بمؤكدين (إن) (وكان) الزائدة الدالة على تقرر وصف الضعف لكيد الشيطان. اهـ
“জুমলা তথা বাক্যটিকে দু’টি তাকিদ এনে জোরদার করা হয়েছে। একটি হলো إِنَّ। আরেকটি كَانَ, যা বুঝাচ্ছে, দুর্বলতা শয়তানের চক্রান্তের এমনই একটি বৈশিষ্ট্য যা তার মাঝে সার্বক্ষণিক বিদ্যমান।” –আততাহরির ওয়াততানবির ৫/১২৪
ইবনে আতিয়্যাহ রহ. (৫৪২হি.) বলেন,
ودخلت كان دالة على لزوم الصفة. اهـ
“كَانَ ব্যবহার হয়েছে এ কথা বুঝানোর জন্য যে, দুর্বলতার গুণটি শয়তানের চক্রান্তের সাথে আবশ্যকীয়ভাবেই জড়িত (যা থেকে তা কখনও মুক্ত হতে পারে না)।” –তাফসিরে ইবনে আতিয়্যাহ ২/৭৯
আবু হাইয়্যান আন্দালুসি রহ. (৭৪৫হি.) বলেন,
ودخلت كان في قوله: كان ضعيفا إشعارا بأن هذا الوصف سابق لكيد الشيطان، وأنه لم يزل ضعيفا. اهـ
“كَانَ ব্যবহার হয়েছে এ কথা বুঝানোর জন্য যে, শয়তানের চক্রান্ত আদিকাল থেকেই দুর্বল আর তা চিরন্তন দুর্বলই চলে আসছে।”- আলবাহরুল মুহিত ৩/৭১২
আবুস সাউদ রহ. (৯৮২হি.) বলেন,
{الذين آمنوا يقاتلون فِى سَبِيلِ الله}
كلامٌ مبتدأٌ سيق لترغيب المؤمنين في القتال وتشجيعِهم ببيان كمالِ قوتِهم بإمداد الله تعالى ونُصرتِه وغايةِ ضعفِ أعدائِهم أي المؤمنون إنما يقاتلون في دين الله الحقِّ الموصِلِ لهم إلى الله عزَّ وجلَّ وفي إعلاء كلمتِه فهو وليُّهم وناصرُهم لا محالة
...
{إِنَّ كَيْدَ الشيطان كَانَ ضَعِيفاً}
أي في حد ذاتِه فكيف بالقياس إلى قُدرةِ الله تعالى ولم يتعرّضْ لبيان قوةِ جنابِه تعالى إيذاناً بظهورها قالوا فائدةُ إدخالِ كان في أمثالِ هذهِ المواقعِ التأكيدُ ببيان أنه منذ كان كان كذلك فالمعنى أن كيدَ الشيطانِ منذ كان موصوفاً بالضعف. اهـ
كلامٌ مبتدأٌ سيق لترغيب المؤمنين في القتال وتشجيعِهم ببيان كمالِ قوتِهم بإمداد الله تعالى ونُصرتِه وغايةِ ضعفِ أعدائِهم أي المؤمنون إنما يقاتلون في دين الله الحقِّ الموصِلِ لهم إلى الله عزَّ وجلَّ وفي إعلاء كلمتِه فهو وليُّهم وناصرُهم لا محالة
...
{إِنَّ كَيْدَ الشيطان كَانَ ضَعِيفاً}
أي في حد ذاتِه فكيف بالقياس إلى قُدرةِ الله تعالى ولم يتعرّضْ لبيان قوةِ جنابِه تعالى إيذاناً بظهورها قالوا فائدةُ إدخالِ كان في أمثالِ هذهِ المواقعِ التأكيدُ ببيان أنه منذ كان كان كذلك فالمعنى أن كيدَ الشيطانِ منذ كان موصوفاً بالضعف. اهـ
“আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘যারা ঈমানদার তারা লড়াই করে আল্লাহর রাহে’- এ কথাটি বলা হয়েছে মুমিনদেরকে কিতালে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এবং হিম্মত যুগানোর জন্য। তা এভাবে যে, তাদের বুঝানো হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার মদদ ও নুসরতে তারা পরিপূর্ণ শক্তিমত্তার অধিকারী। পক্ষান্তরে তাদের শত্রুরা নেহায়েত দুর্বল। অর্থাৎ মুমিনরা তো কিতাল করবে আল্লাহ তাআলার হক দ্বীনের জন্য এবং তার কালিমা বুলন্দ করার জন্য, যা তাদেরকে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। অতএব, কোনো সন্দেহ নেই যে, তিনি তাদের বন্ধু এবং তিনি তাদের নুসরত করবেন। ...
আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘নিশ্চয়ই শয়তানের চক্রান্ত নিতান্ত দুর্বল’- অর্থাৎ শয়তানের চক্রান্ত তো এমনিতেই দুর্বল। আর আল্লাহ তাআলার কুদরতের সামনে তো তার কোনো পাত্তাই নেই। আর আল্লাহ তাআলার শক্তি যে কেমন (অতুলনীয়) তার বিবরণ এখানে দেওয়া হয়নি। কারণ, তা একেবারেই স্পষ্ট।
মুফাসসিরিনে কেরাম বলেন, এ ধরনের স্থানে كَانَ ব্যবহার করা হয় তাকিদের জন্য। এ কথা বুঝনোর জন্য যে, বিষয়টি তার সূচনালগ্ন থেকে এমনই ছিল। তাহলে অর্থ দাঁড়াবে, ‘শয়তানের চক্রান্ত যেদিন থেকে শুরু, সেদিন থেকেই তা দুর্বল’।” –তাফসিরে আবুস সাউদ ২/২০২-২০৩
সারকথা
যারা আল্লাহর রাস্তায় কিতাল করবে তারা আল্লাহর বন্ধু। আল্লাহ তাআলা তার বন্ধুদের নুসরত করবেন। আল্লাহ তাআলার নুসরতে তারা বিজয়ী হবে। পক্ষান্তরে যারা তাগুতের পথে কিতাল করবে তারা শয়তানের বন্ধু। শয়তান তাদের সাহায্য করবে আর মুমিনদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত পাকাবে। তবে তারা যত ভয়ানক চক্রান্তই করুক মুমিনদের কোনো ভয় নেই। কারণ, শয়তানের চক্রান্ত বাহ্যত যত ভয়ংকরই মনে হোক তা নিতান্তই দুর্বল। আল্লাহ তাআলার শক্তি ও কৌশলের সামনে এর কোনোই *মূল্য নেই। মুমিন বান্দাদের নুসরতে আল্লাহ তাআলা এসব চক্রান্ত ধূলিস্যাৎ করে দেবেন। নাস্তানুবাদ করে দেবেন। অতএব, হে মুমিনগণ! আল্লাহর নুসরত সঙ্গে নিয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করে শয়তানের বাহিনির বিরুদ্ধে তোমরা নেমে পড়। বিইযনিল্লাহ বিজয় তোমাদের নিশ্চিত।
***
Comment